আঁধার পর্ব-০৭

0
1729

আঁধার

৭.

” মিলা, আমি ইচ্ছা করে তোমাকে থাপ্পড় মারিনি। কীভাবে যেন… প্লিজ মিলা মাফ করো আমাকে। ” রাসেল আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।

” আপনি ঘুমান। আমি একটা থাপ্পড়ে কিছু মনে করিনি। ” রাসেলের রাতেই বলেছিল সে নাকি মেয়েদের পায়ের নিচে ফেলার মতো পুরুষ। তাহলে সে এখন একা থাপ্পড় নিয়ে এতো মাফ চাওয়া চাওয়ি কেনো করছে?

” কিছু মনে না করাটাই খারাপ। আমাকে পছন্দ না হওয়ার কারণটা কি বলা যাবে? ”

” এতো রাতে আমি আলোচনা করতে চাচ্ছি না। ”

” যাস্ট একটা শব্দে বা একটা বাক্যে বলো। পরে না হয় আলোচনা করবো আমরা। ” রাসেল অনুরোধের সুরে বললেন।

” আমার এই দিন দুনিয়ার কিছুই ভালো লাগেনা। আপনি একমাত্র মানুষ না যাকে আমি অপছন্দ করি। আমার এমনকি নিজেকেও পছন্দ হয়না। ”

” কারণ কী মিলা? ”

” আপনি কিন্তু একটু আগেই বলেছেন যে আলোচনা করবেন না। আর আপনার সকালে কাজে যেতে হবে। দয়া করে ঘুমান৷ ” মনে হয় কণ্ঠে বেশি রুক্ষতা প্রকাশ পেয়ে গেল।

” আমি পরশুদিন ঢাকা যাবো। মনে করো এক সপ্তাহের মধ্যে চলে আসবো। তুমি এই ক’টা দিন ভাঙ্গায় কাটাবে। আমি তোমাকে গিয়ে নিয়ে আসবো। ”

” আমি এখানেও একা থাকতে পারবো। আমার সমস্যা হবেনা। ”

” না, একা রাখা যাবেনা। তোমাকে আমার নরমাল মনে হয়না। কী না কী করে বসবা। শেষে আমাকে জেলের ঘানি টানতে হবে। ”

” আমার নামে থানায় একটা জিডি করে রাখতে পারেন। এখন ঘুমান। ”

” তোমার বিয়ের আগে ঠিক কতজনের সাথে সম্পর্ক ছিল? ”

” আপনি একটু আগে ঘুমের জন্য আমাকে থাপ্পড় মারলেন। আর এখন নিজেই ঘুমাচ্ছেন না। ”

” আমার তোমার অতীত নিয়ে অনেক আগ্রহ। ”

” আগ্রহ থাকা ভালো। আমি সবকিছু আপনাকে জানাব কিন্তু এখন ঘুমান। আমার আর ভালো লাগতেছে না আপনার এমন কথাবার্তা। ”

” আচ্ছা সরি মিলা। ”

ঘুম ভাঙলো যখন ঘড়িতে সকাল নয়টা বাজে। ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। রাসেল বিছানায় নেই৷ রাসেলের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে আর এখনো সকালের নাস্তা বানানো হয়নি। বিছানা থেকে উঠতে যাবে আর তখনই রাসেল বাথরুম থেকে বের হলেন৷

” আমি নাস্তা বানিয়ে রেখেছি। তুমি মরার মতো ঘুমাচ্ছিলে তাই আর ডাকিনি। ”

” আপনার কষ্ট হয়ে গেল। আমার এলার্ম ঠিক করে রাখা উচিৎ ছিল। ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
” একসময় মেসে থাকতাম। তখনকার অভ্যাসটা আমৃত্যু থেকে যাবে। সামান্য রুটি আর ভাজিতে আমার কষ্ট হয়না। ”

” আর হবেনা এমন। ”

” সে যাইহোক তুমি তুলসীপাতা দিয়ে চা বানিয়ে খাবে। আমি তুলসীপাতা স্টিলের র‍্যাকের দ্বিতীয় তাকে রেখেছি। ” রাসেল সবুজ রঙের শার্ট গায়ে জড়ানোর সময় বললেন।

আমাকে তার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন, ” আমাকে এভাবে দেখার এতো শখ কী কারণে জাগলো? ”

” এতো কেয়ার করার কারণ? ”

” তুমি মনে হয় খেয়াল করোনি। বিয়ের পর থেকেই আমি কেয়ার করে আসছি। উল্টো তুমিই অন্যমনস্ক হয়ে কাটায় দাও। ”

” হু ” রাসেল চলে যাবার আগে আমার কপালে চুমু দিল। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।

একে দেখে কে বলবে যে, গতকালই রাগে আমাকে থাপ্পড় মেরেছেন? মা বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নাকি স্বভাবে কিছুটা মিল থাকে। এজন্যই মনে হয়, আমরা দু’জনে কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক। সে নিজেই অস্বাভাবিক মানুষ আবার আমাকে বলে !

দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলাম। স্টিলের র‍্যাকে নাস্তা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। তুলসিপাতাও ধুয়ে রাখা।

( রাসেল )

পকেটের মধ্যে মোবাইলের ভাইব্রেশনে টিকে থাকা যাচ্ছে না। এদিকে ক্লাস বাদ দিয়ে কোনো স্যার মোবাইলে কথা বলতে দেখলেই হেডস্যারের কাছে কমপ্লেইন করে বসবেন। পুরো চল্লিশ মিনিট ধরে এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে মোবাইল ভাইব্রেশন করেই যাচ্ছে। বিরক্তির চরম পর্যায়ে চলে গেলাম। ঘণ্টা বাজার সাথে সাথে রুম থেকে বের হলাম। এইসময় মিলার ফোন দেয়ার কথা না। আসলে সে কোনো সময়ই ফোন দেয়না। পাগল ছাগল বিয়ে করার মধ্যে আলাদা শান্তি আছে। মোবাইলের স্ক্রিনে নাম্বারটা দেখে মেজাজ হুট করে নিচে নেমে গেল। ফোন রিসিভ করে শান্ত ভঙ্গিতে বললাম, ” তো ম্যাডামের আমার কথা মনে পড়েছে? ”

” বিয়ের পরে তো আমাকে ভুলেই বসে আছো। ”

” হ্যাঁ, এই কারণেই গতকাল রাতে এতবার ফোন দেয়ার পরও আপনি রিসিভ করেননি। আর দোষটা আমার উপর চেপে বসলো? ”

” তুমি তো জানোই কেনো রিসিভ করিনি। তাই বলে আমার ফোন এতো দেরিতে রিসিভ করবে? ” অপর প্রান্তের রমণীর কণ্ঠে মধু ঝরে পড়েছে। এতো আবেগ আর মধু মিশিয়ে মিলা কথা বলতে জানেনা৷ মা অবশ্য এভাবে কথা বলাকে ষোল কলার সদ্ব্যবহার বলেন।

” আমি ক্লাসে ছিলাম। জানোই তো ক্লাস টাইমে ফোন রিসিভ করা নিষেধ। ”

” সকালেও তো ফোন রিসিভ করলে না। আমার খুব কষ্ট হয় জানো? বুকের ভেতরে অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। তখন মনে হয় তোমাকে বুকের মধ্যে ঠেসে ধরি। ”

” আমার বউ ঘুমাচ্ছিল। ওর ঘুমের ডিস্টার্ব করার ইচ্ছা ছিলো না। ”

” বউয়ের জন্য এতো দরদ? ”

” বউয়ের জন্য হবেনা তো কার জন্য হবে শুনি? ”

” এখন আমাকে তো ভালো লাগবেনা জানি। ” ভেজা-ভেজা কণ্ঠে বলল।

” ওহ হ্যাঁ এইজন্যই তো আমি আগামীকাল ঢাকায় আসতেছি। ভালো লাগেনা বলেই তো তোমার সাথে দেখা করার জন্য আসছি। তাই না? ”

অপর প্রান্ত থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।

” তোমার বউকে তো থাপ্পড়টা মেরেছিলে নাকি ছেড়ে দিয়েছ? ”

” হ্যাঁ, জোরেশোরেই মেরেছিলাম। গাল ফুলে গেছে বেচারির। ”

” তোমার উচিৎ ওকে বেত দিয়ে মারা। সাহস কতো বড় আমার জন্য রিজার্ভ করা সময়ে সে অধিকার বসায়। ”

” তুমি একটা বেত জোগাড় করে রেখো তো। ”

” ঠিকাছে, তো কাল আসতেছ শিওর? ”

” হ্যাঁ, শিওর। ”

চলবে…

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে