আঁধার পর্ব-০১ | গল্প পোকা নতুন গল্প

0
4159

আঁধার
~ Maria Kabir
১.

সাবলেট বাসা হলেও শান্তি আছে এখানে। মাঝারি আকারের একটা রুম, এটাচড বাথরুম, বেশি বড় না হলেও সুন্দর একটা বারান্দা আছে। বারান্দা দিয়ে ওয়াশিত্ব টাওয়ার স্পষ্ট দেখা যায়। ওয়াশিত্ব টাওয়ারের নিচ তলায় একটা রেস্টুরেন্ট আছে। রংধনু নাম, খুব বেশি বড় না। তবে খাবার ভালো। রাসেল এখানে আসার পর দুইবার নিয়ে গেছিলো। আমাদের বিয়ের দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। এখনো আমি সহজ হতে পারিনি। যতবারই সে আমার কাছে আসে ততবারই আমার দম আটকে আসার উপক্রম হয়। বিশ্রী একটা গন্ধ নাকে আসে। মনে হয় এখনই আমাকে মেরে ফেলবে ও। কিন্তু ও তা করে না। বরংচ কপালে চুমু দিয়ে বলে, ” এখন ঘুমাও। ”
পাশের রুম থেকে কচি একটা মেয়েলী কণ্ঠস্বরের গান শোনা যাচ্ছে। মাই নেম ইজ শীলা গানটা গাচ্ছে। মেয়েটার নাম অনন্যা। আমরা যার সাথে সাবলেটে থাকি তার একমাত্র মেয়ে। স্বামী – স্ত্রী আর এক চার বছরের মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। অনন্যার মায়ের নাম আমিনা। অনন্যার বাবার নাম শাহেদ ভাই। ইশ আবার ভুল হয়ে গেলো। শাহেদ ভাই বলে রাসেল। ওর ডাকা ডাকিতে আমিও ভুলে তার নাম ভাই বানায় দিছি। একা একা হাসলাম। আমিনা ভাবি পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলেন, ” একা একা হাসেন ক্যান ভাবি? ”
আমি পেছন না ফিরেই বললাম, ” আমি আপনার ছোট ভাবী৷ আমাকে নাম ধরে ডাকবেন। ”
” আপনার ভাই বলে আপনাকে সম্মান দিয়ে কথা কইতে । আর আপনি কন আরেক কথা। আপনিই কন আমি কোনডা শুনবো? ”
” ভাইকে বোঝাবেন তাহলে তো হয়। ”
” আপনার ভাইরে বোঝাবো? ওই পরিমাণ ব্রেইন আমার আছে নাকি?”
এরপরে কী বলতে হয় ভাবার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো। আমিনা ভাবী দরজা খুলতে চলে গেলেন। এইসময় শাহেদ ভাই আসেন। রাসেল আসবে দুপুরে খেতে। তারপর আবার বের হয়ে একেবারে সন্ধ্যার আগে আগে আসে। ধরা যায় সারাদিন একা একাই কাটে।
আমার একা সময় কাটানোর জন্য রাসেল একটা কালার টিভি কেনার চিন্তায় আছে। রান্নাঘরের কাজ শেষ করে রুমে চলে এলাম। অনন্যা মেয়েটা এখনো গান গাচ্ছে। হিন্দি গানই গাচ্ছে। এই মেয়েটা সবসময় হিন্দি গান গায়। বাংলায় তো অনেক সুন্দর সুন্দর গান আছে। সেসব গাইলেও তো পারে। সারাক্ষণ ঘরে টিভিতে হিন্দি মিউজিক চ্যানেল ছেড়ে রাখলে। হিন্দিই শিখবে বাংলা শেখার উপায় নাই।
আমার nokia -5310 বাটন সেটটা বিছানার এক কোণায় পড়ে আছে। বারবার লাইট জ্বলছে আর নিভছে। কাছে গিয়ে দেখি রাসেলের নাম্বার। চোখের সামনে বেশ কয়েকবার এভাবে লাইট জ্বলল নিভল। তারপর থেমে গেলো। ফোন সাইলেন্ট করে রাখা। রাসেলের সাথে কথা বলতেও আমার ভালো লাগেনা। কিন্তু ও জানেনা। ও ভাবে আমি খুব পছন্দ করি ওর কথা। এজন্য চুপচাপ তার গল্প শুনি। মানুষ অনেক অদ্ভুত প্রাণী। এরা নিজেরাই নিজেদের মন মতো যুক্তি বানিয়ে নিতে পারে। এমন অনেক কিছু সে নিজ থেকে করে নিয়েছে। আমি তাকে না বলিনা। আবার হ্যাঁও বলিনা। সবসময় সত্যিটা জানতে দিতে নাই।
বারান্দায় বেশ পুরনো রকিং চেয়ার আছে। রাসেল গভীর রাতে এই চেয়ারে বসে এই শহর দেখে। তার খুব শখ ওয়াশিত্ব টাওয়ারের সবচেয়ে উপরের তলার ফ্ল্যাটে থাকার। যেন সে এক নজরে এই পুরো ফরিদপুর শহর দেখতে পারে। আমি ভাবি অন্য কিছু। ওই উঁচু থেকে ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলার স্বপ্ন দেখি। তাহলে প্রতিদিন এই অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতাম।
বারান্দায় অনেক ময়লা জমে আছে। সকালেই ঝাড়ু দিয়েছি। ঝাড়ু হাতে নিয়ে আবার পরিষ্কার করতে শুরু করলাম।
রান্নাঘরে বটি সোজা করে রেখে এসেছি। মনে পড়তেই ঝাড়ু ফেলে দিয়ে রান্নাঘরে এলাম। বটি সোজা করেই রাখা। ভাগ্যিস অনন্যা এখানে আসেনি। মেয়েটা অনেক চঞ্চল। চোখের পলক পড়তেও সময় লাগে কিন্তু এই মেয়ের অকাজ করতে সময় লাগেনা।
ডাইনিং থেকে শাহেদ ভাই ডেকে বললেন,” ভাবী ধানসিঁড়ি হোটেলের স্পেশাল সিঙ্গারা আনছি। খেয়ে যান। ”
” ভাই আমি একটু আগেই নাস্তা করেছি। ”
” বলেন কি ভাবী? একটু আগে তো আপনি রান্নাঘরে ছিলেন। ”
একটু আগে বলতে আমি এক দের ঘণ্টা বুঝাইছি। ব্যাটা গাধা নাকি সেন্স অব হিউমার অনেক বেশি?
” মানে তার আগে ”
” ভাবী একটা সিঙ্গারাই ”
আমিনা ভাবী সাথে যোগ দিলেন, ” অনন্যার বাপ এতো করে বলতেছে। এক পিস না হয় খান। ”
শাহেদ ভাই, আমিনা ভাবী ডাইনিং এ বসে সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। আমিও গিয়ে ডাইনিং এর একটা চেয়ার টেনে বসলাম। সিঙ্গারা নিয়ে কামড় বসানোর পরে মনে হলো এখানে বসাটা ঠিক হয়নি। শাহেদ ভাই খুব বিশ্রী ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হয় এখনই গিলে খাবে আমাকে। আমার উচিৎ ছিলো রুমে চলে যাওয়া। কিন্তু এখন উঠে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নাই। আমিনা ভাবী সালাদ এগিয়ে দিলেন। সালাদের বাটি শাহেদ ভাইয়ের মুখের উপর ছুঁড়ে মারতে পারলে শান্তি পেতাম।
অনন্যা দৌড়ে এসে ওর মা’কে বলল, ” আম্মু, কোকা কোলা খাবো। আর আমি কোকা কোলা হয়ে যাবো। ”
শাহেদ ভাই হাসতে হাসতে বললেন, ” তাহলে তো কোকা কোলা কিনে দেয়া যাবেনা। ”
কথা বলাও শেষ আর অনন্যারও ফ্লোরে গড়াগড়ি খাওয়া শুরু। এখন কাকের স্বরে কানবে আর গড়াগড়ি দিবে। যতক্ষণ না অব্দি তাকে কোকা কোলা কিনে না দেয়া হবে। অনেক জেদী এই মেয়ে। এতটুকু মেয়ের এতো জেদ কীভাবে হয়? আমি এর মা হলে এতদিন গলা টিপে মেরে ফেলতাম।
দুপুরে ঘুমুচ্ছিলাম। ঘুমের ঘোরে মনে হলো একটা শরীর আমাকে জাপটে ধরে আছে। দ্রুত চোখ খুলে দেখি অনন্যা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। এই মেয়েটা কখন আসলো? দরজা কি খোলা ছিলো? দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি খোলা। দরজা খোলা রেখে ঘুমানো ঠিক না। সাবলেট বাসায় তো এই কাজ করা মহা অপরাধ। এই অপরাধ কি মাফ করার মতো?
অনন্যার ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে বুঝলাম। এই মেয়ের চেহারার সাথে শাহেদ ভাইয়ের চেহারার অনেক মিল।
দরজা আটকে বিছানায় ফিরে এলাম। বাহিরে হালকা রোদ। আর এক ঘণ্টা পরেই সন্ধ্যা নামবে। রাসেলও ফিরবে। আর শুরু হবে আমার দম আটকে রাখার মুহূর্ত।
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙলো। অনন্যা এখনো আমার পাশেই ঘুমিয়ে আছে। আমিনা ভাবীর গলা শোনা যাচ্ছে। মনে হয় মেয়ে কোথায় আছে? এই খোঁজেই বের হয়েছেন।
শাড়ী ঠিক করে দরজা খুললাম। আমিনা ভাবী এক গাল হেসে বললেন, ” কিছু মনে করবেন না ভাবী। ওকে আমিই রেখে গেছিলাম। ”
” না না কী মনে করবো। ”
” আসলে অনন্যার বাপের… বুঝেনই তো। তাই আরকি! ”
মহিলা এমন ভাবে হাসলেন যেন মহাকাশ জয় করে এসেছেন।
” ওকে কি এখন নিয়ে যাবেন নাকি ঘুম ভাঙলে?” টপিক চেঞ্জ করার জন্যই প্রশ্নটা করলাম। কেননা উনি এখন স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। আমার এই টপিক পছন্দ না।
” ঘুমে বিরক্ত করা ঠিক হবেনা। ঘুম ভাঙলে নিয়ে যাবানি। ও তো বিছানায় হিশু করে না। তাই এখন না নিলেও সমস্যা হবার কথা না। ”

মারিয়া কবিরের দ্বিতীয় একক উপন্যাস ‘ হলুদ খাম ‘ সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নের যেকোনো অনলাইন বুকশপ থেকে নিতে পারেন।

বইটি অর্ডার করার জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন ।রকমারি

https://www.rokomari.com/book/207068/holud-kham
রাসেল আসলো সন্ধ্যার বেশ পরে। দরজা খুলে দেয়ার সাথে সাথেই বলল, ” উফ আজকে এতো গরম। ”
আমি সরে গিয়ে ভেতরে আসতে দিলাম। ভেতরে ঢুকেই আমার কপালে চুমু দিল। কপালের ওই অংশে যদি আগুন লাগায় দিতে পারতাম তাহলে শান্তি পেতাম৷ কিছু করার নাই। এখান থেকে বের হওয়ারও কোনো পথ নেই৷
” চা বানায় দিব? ” এই প্রশ্ন করাটা এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
” না, আজকে আমরা জুবিলী ট্যাংকের ওইখানে চা খাবো আর গল্প করবো। ” রাসেল খুব হাসিখুশি স্বভাবের মানুষ। সবসময় তার হাসিখুশি থাকতে হবে। হাজার ঝামেলা থাকলেও সে দেখা যাবে মুখে হাসি নিয়ে বসে আছে। আমি তো ভেবে পাইনা কীভাবে পারে!

রাসেল তার রুটিন অনুযায়ী গোসল করে নিল। আর আমাকে বলল, লাল তাঁতের শাড়ীটা পরে রেডি হয়ে নিতে। আমিও লক্ষী বউয়ের মতো রেডি হয়ে নিলাম। অনন্যা এখনো আমাদের বিছানায় ঘুমাচ্ছে৷ রাসেল ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমাদের কবে এমন একটা পুতুল হবে বলোতো মিলা? ”
” আল্লাহ যেদিন দিবেন সেদিন ” চুল বেণী করতে করতে বললাম৷
” তুমি খুব সুন্দর করে বেণী কর‍তে পারো। আমার যদি লম্বা চুল থাকতো। তাহলে রেগুলার তোমাকে দিয়ে বেণী করাতাম। ” রাসেল মুখে হাসি নিয়ে কথাটা বলল।
” আপনার কি মাথা ঠিক আছে? প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক হয়ে যদি চুল বেণী করেন৷ তাহলে তো সবাই আপনাকে হিজলা বলবে। ”
রাসেল আর কথা বাড়ালো না। অনন্যাকে কোলে নিয়ে ওদের রুমে দিয়ে এসে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলাম। আমার রুমে অন্য কেউ আসা আমার পছন্দ না।
আমাদের বাসা থেকে জুবিলী ট্যাংক বেশি একটা দূরে না। আমরা হেঁটেই এখানে চলে আসি। কী দরকার টাকার অপচয় করা।
জুবিলী ট্যাংকে যাওয়ার পথে অনেক স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের দেখা পাওয়া যায়। এই রোডটাতে সবকিছুই আসলে পাওয়া যায়। কোচিং সেন্টার, কিন্ডারগার্টেন স্কুল, হাই স্কুল টিচারদের বাসা, কলেজের টিচারদের বাসাও এই লাইনে বা এই লাইন দিয়ে যাওয়া যায়। সোনালী ব্যাংকের মোড়ে এসে থমকে গেলাম৷ চার রাস্তার মোড়ে আমার কেনো যেন ভয় লাগে। মনে হয় চারদিক থেকে আমাকে জাপটে ধরবে। সারদা সুন্দরীর ড্রেস পরা কয়েকজন মেয়েকে দেখলাম ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছে। সারাদিন ক্লাস, কোচিং-এ দৌড়াতে দৌড়াতে এরা শেষ বেলায় এসে ক্লান্ত হয়ে যায়। আর সায়েন্সের স্টুডেন্ট হলে তো কথাই নাই। এদের আবার ব্যবহারিক ক্লাসের ঝামেলা আছে।
” তুমি তো দেখছি আমাকে আর এই বেচারাকে জেলের ঘানি টানাবা! ” রাসেলের কথায় আমার হুশ হলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা অটোর সামনের চাকা আমার পায়ের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। অটোওয়ালা মহাবিরক্তির চাহনিতে বুঝতে পারলাম। আমি চার রাস্তার মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে আছি। আর এখানেই চিন্তায় বুঁদ হয়ে গেছি।
” আমি আসলে খেয়াল করিনি। ” কথাটা বলে সরে দাঁড়ালাম। রাসেল এবার হাত শক্ত করে ধরে বলল, ” তোমাকে হাত না ধরে রাখা যাবেনা। এত বড় হয়ে গেছ কিন্তু রাস্তা পার হতে পারো না৷ ”
” আমি রাস্তা পার হতে পারি কিন্তু খুব জরুরি চিন্তায় বুঁদ হয়ে ছিলাম। ” কথাটা বলতে গিয়েও বললাম না৷ রাস্তা পার হওয়ার পরের যে আরেকটা রাস্তা। জুয়েলে ফুসকার দোকানে অনেক ভীড়। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। রাসেল একবার নিয়ে এসেছিল আমাকে। কিন্তু ভীড়ের কারণে খেয়ে শান্তি পাইনি।
এই রাস্তাটা আমার ভালো লাগে। সবুজ আর সবুজ এখানে শুধু। বেশি চওড়া রাস্তা না। হাতের দুই সাইডে মানুষ জনের আনাগোনা লেগেই থাকে। সানরাইজ স্কুলের একটা শাখা এই রোডেই। সানরাইজ স্কুলের আগে একটা চিকন গলি আছে। সেই গলির সাথে পুরাতন একটা বিল্ডিং। বেশ আগের মডেলের একতলা বিল্ডিং। দেয়াল আছে, গেটও আছে। কিন্তু গেট সবসময় খোলা থাকে। আমরা জুবিলী ট্যাংকের সেই পুকুরের পাড়ে গিয়ে বসলাম। চটপটি, ফুসকা আর চায়ের ভ্যান রাখা। আর তারাই তাদের কাস্টমারের জন্য চেয়ার, টুলের ব্যবস্থা করেছেন। আর এখন এখানটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এই পাড়ে এখন সরু রাস্তা করে দেয়া হয়েছে ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে। এখন অসম্ভব সুন্দর লাগে এই পাড়। সন্ধ্যার পরে এই জায়গার সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। রাসেল আমার এক হাত তার দুই হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে বসলো।
” কী সুন্দর তাই না?”
” হুম, অনেক সুন্দর। ”
” মিলা, ঠিক তোমার মতো। ”
একটা পুকুরের সৌন্দর্যের সাথে আমার তুলনা দিচ্ছে এই লোক। পাগল নাকি? একটা পুকুরের সাথে আরেকটা পুকুরের সৌন্দর্যের তুলনা করা যায়। কিন্তু মানুষের সাথে করা যায়না। এই লোক সরকারি চাকরি পেলো কীভাবে?
দুই কাপ চা দিয়ে গেলো৷ এখন সে আমার হাত ছাড়লো। যাক কিছু মুহূর্তের জন্য শান্তি!
রাসেল খুব মনোযোগ দিয়ে চা খাচ্ছে। আমি জানি তার এই শুধু চা’তে মন ভরে না। চায়ের সাথে পপ বিস্কুট বা ড্রাই কেক খুব পছন্দ৷ কিন্তু পকেটের কথা চিন্তা করে সে তার ছোট থেকে বড় শখ গুলোকে প্রতিনিয়ত মাটি দেন। বেতন যা পায় সেখান থেকে কিছু টাকা তার বাবা-মাকে পাঠান৷ তারপর কিছু টাকা ফিক্সড ডিপোজিটে রাখেন। তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আর যা বাঁচে তাতে আমাদের খুব টানাটানি হয়ে যায়। এই টানাটানির মধ্যেও সে কত সুন্দর করে হাসে। কত সুন্দর করে প্র‍ত্যেকটা মুহূর্ত সে উপভোগ করে। এইযে সামান্য পাঁচ টাকার চায়ে সে যে তৃপ্তি পাচ্ছে। সেই তৃপ্তি আমি লাখ টাকাতেও পাইনি।
রাসেল তার বাম হাত দিয়ে আমার হাত ধরলো। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। যেন অসম্ভব সুন্দর কোনো পরী তার সামনে বসে আছে! কিন্তু আমার ভালো লাগলো না এই তাকানো।
আমি চায়ের কাপে মন দিলাম। আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে বাধ্য হলাম। আর কতদিন এভাবে কাটাতে হবে? আর কতদিন?

চলবে….

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে