অলৌকিক যাতী

0
640

রাত দশটা ।
কালু তার সিএনজিটাকে ধোঁয়া মোছা করছে । স্ট্যান্ডে আর কোন সিএনজি নেই । কালু বাড়ি ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । হঠাৎ একজন লোক ব্যাগ হাতে এসে দাঁড়ালো ।
– যাবে ?
– না ভাই , এত রাতে যাবো না ।
– আমার বউ খুব অসুস্থ । না গেলে ওকে বাঁচাতে পারবো না । ভাড়া যত টাকা লাগে দিবো ।
একটু ভেবে কালু বলল,”কোথায় যাবেন ?”
– ফুলপুর ।
– আমি তো চিনি না ।
– সমস্যা নেই আমি তোমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবো ।
– ঠিক আছে উঠে বসুন ।
লোকটা সিএনজিতে উঠে বসলো । কালু সিএনজি স্টার্ট দিল ।
রাস্তার দুইপাশে উঁচু উঁচু গাছের সারি । চাঁদটা মেঘে ঢাকা । চারদিকে হালকা কুয়াশা ঘেরা । হেডলাইটের আলোতে সিএনজি এগিয়ে চলছে ।
ঘন্টাদুয়েক পর ওরা অলিপুর এসে পৌঁছালো ।
সিএনজি থামিয়ে কালু বলল,”আর একটু সামনে তো বিশাল শশ্মান । আর তো কোনো গ্রাম নেই ।”
” আরে কে বলছে ? তুমি সামনের দিকে যাও”, পিছনের লোকটি বলল ।
কালু ইতস্তত হয়েই সিএনজি নিয়ে সামনের দিকে এগোলো ।
ও যতদূর জানে সামনে আর কোনো গ্রাম নাই । তবুও লোকটার কথায় ও সিএনজি চালাতে লাগলো ।
হঠাৎ সিএনজির সামনে একটা ছোট ছেলে এসে দাঁড়ালো ।
দ্রুত ব্রেক কষলো কালু । চোখের পলকেই উধাও হয়ে গেল ছেলেটা । একটু অবাক হল ও ।
পিছন থেকে লোকটা বলল,”সামনে যাই কিছু হোক না কেন ? তুমি সিএনজি আর থামাবে না ।”
” কেন ?” কাপাঁ কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো কালু ।
“সব প্রশ্নের উত্তর দিবো সিএনজি থেকে নেমে । তুমি চালাতে থাকো”, রহস্যময় কন্ঠে বলল লোকটা ।
মাথাটা কেমন যেন বনবন করছে কালুর ।
সামনের দিকে এগোতে লাগলো ও ।
হঠাৎ লাইটের আলোয় ও দেখতে বেশ কিছু সাদা কাপড় পরা লাশ রাস্তায় পড়ে আছে । পিছন থেকে লোকটা বলল,”থামবে না । তুমি চালাতে থাকো ।”
কালু সিএনজি চালাতে থাকলো । লাশগুলোর কাছে যেতে সেগুলো উধাও হয়ে গেল । আর একটু সামনে যেতেই কালু দেখতে পেল রাস্তার দুইপাশের গাছে ঝুলছে মৃতদেহ । ও এদিক সেদিক না তাকিয়ে সোজা সিএনজি চালাতে লাগলো । ভয়ে বুক কাঁপছে ওর ।
কিছুক্ষণপর ওরা বিশাল এক বটগাছের কাছে আসলো ।
লোকটা বলল,”এখানেই থামাও । আমি এখানেই নামবো ।”
কালু সিএননজি থামালো । লোকটা নামলো ।
কালু কাঁপা কোনোরকমে জিজ্ঞাসা করলো,”এখানে তো কোন বাড়িঘর নেই । আপনি কোথায় যাবেন ?”
লোকটা বটগাছের দিকে তাকিয়ে বলল,”বিশ বছর আগেই তো বাড়িঘর নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে ।”
” মানে ?” বিস্ফোরিত কন্ঠে বলল কালু ।
“বিশ বছর আগে আমার বাড়িঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । অভাবের তাড়নায় এই বট গাছে আমি আর আমার বউ ফাঁসি দিয়ে মরেছি । “, বিকৃত কন্ঠে বলল লোকটা ।
বাকরুদ্ধ হয়ে গেল কালু ।
লোকটা তখন এক লাফে বট গাছে উঠে ঘন অন্ধকারে হারিয়ে গেল ।
আর সহ্য হল না কালুর । অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল ।
জ্ঞান ফিরতেই দেখলো অলিপুর স্ট্যান্ডে সিএনজির ভিতরে শুয়ে আছে ও ।
সকাল হয়ে গেছে । চারপাশে মানুষের কোলাহল শোনা যাচ্ছে ।
ধীরে ধীরে সবকিছু মনে পড়লো ওর । ও ভাবলো হয়তো কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে । সিএনজি স্টার্ট দিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিল ।
তখনই কালু দেখলো ওর পায়ের কাছে একটা ব্যাগ পড়ে আছে ।
ও ব্যাগটা খুলে দেখলো তাতে অনেক টাকা আর একটা চিরকুট ।
তাতে লেখা –
“আবার হয়তো অলৌকিক যাত্রী হিসাবে দেখা হবে এমনি কোনো এক নির্জন রাতে ।”

“হরর ছোট গল্প”
অলৌকিক যাত্রী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে