অভিমান হাজারো পর্বঃ১৯

0
2004

অভিমান হাজারো পর্বঃ১৯
আফসানা মিমি

অরুনিমা থমকে গেল। বৌমণি এটা কিভাবে বুঝতে পারলো! আমি তো তার সামনে এমন কিছুই করিনি যার জন্য সে টের পাবে যে আমি সামির ভাইকে ভালবাসি। তাহলে কিভাবে সিউর হয়ে বললো এটা? নিজের মনের সাথে কথা বলে চলেছে অরুনিমা।
—“আমি কী ঠিক বলেছি প্রাণপ্রিয়া ননদিনী?”
অরুনিমা এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো অস্থিরভাবে। এতো তাড়াতাড়ি এভাবে ধরা পড়ে যাবে সে ভাবতেও পারেনি।
—“আচ্ছা আমি বোধহয় ভুল বলেছি। তোমাকে আমি একেবারেই বুঝতে পারি না।” মন খারাপের ভঙ্গিতে বললো আফরা।
অরুনিমা বাধা দিয়ে বললো
—“না না বৌমণি তুমি ঠিকই বলেছো।” বলেই জিহ্বায় কামড় মারলো। লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিল। আর আফরা মুচকি হাসতে লাগলো।
—“তা কতদিন যাবৎ চলছে এসব হুম?” টেনে টেনে কথাটা বললো আফরা।
লজ্জা পেয়ে মুখ ঢেকে ফেললো অরুনিমা। হাতদুটো সরিয়ে আফরা বললো
—“আরে আরে ননদিনী দেখি লজ্জা পাচ্ছে। একেবারে লাল হয়ে গেছো দেখছি। বললে না কতদিন ধরে চলছে?”
—“উফফ্ বৌমণি! তুমি কিন্তু ইচ্ছে করেই আমাকে এভাবে লজ্জা দিচ্ছো।”
—“আচ্ছা আচ্ছা। এবার বলো। একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলবা।” হাসতে হাসতে বললো আফরা
—“কি বলবো?” লজ্জাবনত হয়েই বললো অরুনিমা।
—“এই যে আমার ভাইকে কবে থেকে তুমি তোমার মনের রাজ্যের রাজা বানিয়ে সেখানে স্থান দিয়েছো? এর শুরু কোথায়?”
—“বেশ কয়েক মাস আগেই উনাকে দেখেছিলাম এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেদিনের সেই আচমকা বৃষ্টির মতো আমিও ভেসে গিয়েছিলাম উনার অতল ভালবাসার গহ্বরে। ডুবে গিয়েছিলাম উনার ঘোলা চোখের মায়ায়। মুগ্ধ হয়েছিলাম উনার ব্যবহারে। মন কেড়ে নিয়েছিল উনার মানবিকতা। ব্যস এটুকুই। সেই যে ডুবেছি এখনো সাঁতরে তীরে উঠতে পারিনি। প্রতিনিয়ত ডুবেই মরছি উনার ভালবাসায় বৌমণি। কিন্তু আমি বোধহয় অপাত্রে আমার ভালবাসা ঢালছি। তবুও জানো! জেনেশুনেও অপাত্রে ভালবাসা ঢালতে বরং ভালোই লাগছে। কি করবো বলো! ভালবাসা জিনিসটাই যে এমন।” শেষের কথাগুলো কেমন যেন বিষাদময় লাগলো আফরার কাছে। তাই বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে জানতে চায়লো
—“অপাত্রে ঢালছো মানে? বুঝলাম না।”
—“কিছু কথা না জানা-ই ভালো বৌমণি। থাকুক না পড়ে হৃদয়ের এক কোণে। সযত্নে পুঞ্জিভূত করে রাখি ভালবাসার মানুষটার ভালোর কথা ভেবে।” বলেই বেদনাদায়ক হাসি হেসে চোখের কার্নিশের অবাধ্য অশ্রুকণা আলগোছে মুছে নিল। তারপর কথা কাটাতে বললো
—“জানো বৌমণি! যখন ইন্টার পরীক্ষা দিব তার কয়েক মাস আগে আমার এক ফ্রেন্ড এক ক্লাস ফাইভের মেয়ের প্রেমে পড়ে। মেয়েটা তখন মাত্র পিএইচসি পরীক্ষা দিবে। তো আমাদের তখন টেস্ট পরীক্ষা চলে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ঐ পিচ্চি মেয়ে আমার ফ্রেন্ডরে ফোন দিয়া বলে ‘বাবুতা শুনো, তুমি কিন্তু ভালভাবে পরীক্ষা দিবা। একদম কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবা না। সবসময় মাথা নিচু করে রাখবা। এমনকি রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ও কারো দিকে তাকাবা না। যদি শুনসি যে কোন মেয়ের দিকে তাকাইসো তাহলে কিন্তু আমি সুইসাইড করবো। আর যদি দেখসি যে পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করসো তাহলে কি যে করবো সেটা বললাম না।’ তো হলো কী ওর পিচ্চি গার্লফ্রেন্ড তো ওরে মাথানিচু করে হাঁটতে বলছে। সেও মাথানিচু করে হাঁটতে যেয়ে এক্সিডেন্ট করছে। তো সেদিনের পরীক্ষা খুব খারাপ হইছে তার। রেজাল্ট বের হওয়ার পর সেকি কান্নাকাটি ঐ মেয়ের! তার নাকি মান সম্মান সব ধূলোয় মিশে গেছে। সেদিনই ব্রেক-আপ করলো ফ্রেন্ডের সাথে। আমি বুঝে পাই না মেয়ে পড়ে ফাইভে। আর সে কিনা শাসন করে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া এক পোলারে! তার নিজের পরীক্ষার চিন্তা না করে চিন্তা করে বয়ফ্রেন্ডরে নিয়া। ভাবা যায় এগুলা!” বলেই আবারো একচোট হাসলো অরুনিমা। কিন্তু এই হাসির মাঝেও কেমন একটা বিষাদের ছায়া দেখতে পাচ্ছে আফরা। উপর দেখে বুঝার উপায় নেই ভিতরে কি চলছে। এতো অল্প বয়সেই যেন অনেকটা ম্যাচিউরড অরুনিমা। নিজের দুঃখ-কষ্টগুলো লুকিয়ে কী সুন্দর করে হাসছে! ওর এই হাসিই বলে দিচ্ছে ভিতরে ভিতরে সে কতটা কষ্টে আছে। অথচ কাউকেই বুঝতে দিচ্ছে না তার ভিতরটা। আল্লাহ্ সবার মাঝে এ গুণটা দেন না। কিন্তু অরুনিমার মাঝে দিয়েছে। নিজেকে আড়াল করার গুণটা দিয়েছে আল্লাহ্ ওর মাঝে।

আজ অয়ন নিজেদের বাসার গ্রাউন্ড ফ্লোরে রিসেপশন রেখেছে। নিজেদের সম্পর্কটাকে, আফরাকে সামাজিক ভাবে স্বীকৃতি দিতেই এই আয়োজন। তাদের দাম্পত্যজীবন শুরু করতে চায় বড়দের দোয়ায়। আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে আজ উপস্থিত হয়েছে শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে সামির, তার মা-বাবা, অতশী, স্পন্দন, লাবণ্য, অদিতি, স্পন্দনের বাবা-মা, ইরিন, রিমন সবাই এসেছে। সিঙ্গাপুর থেকে অয়নের বড় বোন সিমলা, তার স্বামী মিরাজ, তাদের তিন বছরের মেয়ে সিমি এসেছে গতকাল রাতে। তারা সেখানেই সেটেলড। মিরাজ বেশ কয়েকদিন আগে একবার দেশে এসেছিল। তখন অয়নের বাবার শরীর বেশ খারাপ ছিল। এখন আগের চেয়ে অনেকটাই ব্যাটার। আরো একজন এসেছে। সে হলো ড. ইমতিয়াজ আহমেদ অপূর্ব।

লাবণ্যর বেশ অস্বস্তি হচ্ছে এখানে আসার পর থেকেই। বিশেষ করে সামিরকে দেখার পর থেকে। সে জানতো না সামির অতশীর বান্ধবীর বড় ভাই। জানলে কখনোই আসতো না। নিজেকে খুব হীন মনে হচ্ছে সামিরের চোখের সামনে থাকতে। কাঁচুমাচু ভঙিতে এক কোণে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে আর এদিক সেদিক অস্থিরভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। তার অবস্থা দেখে অতশী কাছে এসে জানতে চায়লো
—“লাবণ্য! আর য়্যু ওকে! এনি প্রবলেম?”
লাবণ্য মাথা নাড়িয়ে বললো
—“না ভাবী, আমি ঠিক আছি। আসলে অনেক মানুষ তো! তাই কেমন যেন হাসফাঁস লাগছে।”
—“বেশি খারাপ লাগলে রেস্ট নিতে পারো।”
—“ভাবী আমি ঠিক আছি। তুমি ঐদিকটায় যাও। তোমার বান্ধবী তোমাকে খুঁজবে।”
—”সমস্যা হলে কিন্তু আমাকে অবশ্যই বলবে।”
—“আচ্ছা বলবো।”
অতশী সেখান থেকে আফরার কাছে চলে গেল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

অরুনিমা বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ অস্থিরতায় ভুগছে। মানুষটাকে দেখার পর হঠাৎ করেই কেন যেন বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল। প্রচণ্ডগতিতে দৌড়াচ্ছে হার্ট। যেন ফেটে বেরিয়ে আসবে। সে তাকাতে চায়ছে না। তবুও বারবার বেহায়া চোখটা সামিরের দিকেই যাচ্ছে। যতই ভাবছে সামিরের দিকে তাকাবে না। ততই যেন তার মন দ্বিগুণ উৎসাহে তার সাথে নীরব যুদ্ধ লেগে সামিরকে দেখতে লাগলো চোরাচোখে। সে অসহায়বোধ করছে ভীষণ। মানুষটা তার দিকে কেমন একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে অপ্রস্ততভাবে। অরুনিমার অস্থিরতা বোধহয় আফরা কিছুটা টের পেয়েছে। তাকে কাছে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করলো

—“কী হয়েছে তোমার ননদিনী? এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন?”
মুহূর্তেই অরুনিমার চোখদুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে এলো। আফরা এক দৃষ্টিতে অরুনিমার অশ্রুসিক্ত আঁখিযুগলের দিকে তাকিয়ে আছে। কী মায়াবী দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। অথচ ঠোঁটের কোণে কেমন নিষ্প্রাণ লোকদেখানো হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে অরুনিমা জবাব দিল
—“আমার কিছু হয়নি বৌমণি। আ’ম ওকে।”
—“আমাকে মিথ্যে বলবে না। তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুমি মোটেও ঠিক নেই। আমাকে বলতে পারো কী সমস্যা?”
—“আমার চিন্তা বাদ দাও বৌমণি। বললাম তো আমি ঠিক আছি।”
অভিমানী কণ্ঠে আফরা বলে উঠলো
—“বুঝতে পেরেছি। আমি তো তোমার কেউ না। তোমার জন্য চিন্তা করার অধিকার তো আমার নাই। আমাকে শুধুশুধু বলবা কেন!”
অরুনিমা অস্থির হয়ে বাধা দিয়ে বললো
—“ছিঃ বৌমণি! এভাবে বোলো না প্লিজ। আমার কষ্ট হয়। কে বলেছে তুমি আমার কেউ না? তুমি যে আমার কতখানি জায়গা জুড়ে তা তুমি নিজেও হয়তো জানো না।”
—“এতোই যদি আমাকে আপন মনে করো তাহলে বলছো না কী হয়েছে তোমার?”
অদূরে সামিরের দিকে তাকিয়ে উদাস ভঙ্গিতে বললো
—“কী আর হবে! কপালে যা লেখা ছিল সেটাই হচ্ছে।”
অরুনিমার দৃষ্টি অনুসরণ করে আফরা সেদিকে তাকালো। তারপর স্মিতহাস্য হেসে বললো
—“বুঝতে পেরেছি তোমার বিরহের কারণ।”
আফরার কণ্ঠে ঘোর কাটে অরুনিমার। চকিতে তাকিয়ে বলে
—“কী বুঝতে পেরেছো?”
সামিরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো
—“এই যে তোমার এই অস্থিরতার কারণ।”
তারপর আবার অরুনিমার দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো
—“তোমার মনের কথা ভাইয়াকে জানিয়েছো?”
অরুনিমা চমকে উঠে আফরার হঠাৎ এমন কথায়। অতঃপর বেদনাপূর্ণ একপেশে হাসি হেসে বললো
—“ভালবাসলেই যে তাকে জানিয়ে দিতে হবে এমন কোন কথা আছে? থাকুক না কিছু কথা মনের চোরাগলিতে নিগূঢ় হয়ে। সব ভালবাসা পূর্ণতা পায় না। আমার একপাক্ষিক ভালবাসাটাও নাহয় প্রচ্ছন্ন করে রাখি নিজের মাঝে।”
—“তাই বলে কী তুমি একবার বলে দেখবা না! চেষ্টা করে দেখবা না একবার?”
—“কিন্তু তার মনে যে অন্যকারো বসবাস! চেষ্টা করেছিলাম তো একবার। সে আমার প্রথম ভালবাসা হলেও আমি তো তার প্রথম ভালবাসা না। তাই দ্বিতীয়বারের মতো কখনোই তার সামনে দাঁড়াবো না ভালবাসার অধিকার নিয়ে।”
আফরা বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে বললো
—“ভাইয়া অন্যকাউকে ভালবাসে? কে সে? তুমি কিভাবে জানলে?”
—“জেনেছি একভাবে। এখানেই আছে সেই ভাগ্যবতী মেয়েটি। জানো তীব্রভাবে ভালবাসে সে ঐ মেয়েটিকে। এটাই হয়তো সত্যিকারের ভালবাসা। যার জন্য শত অবহেলা, অপমান পাওয়ার পরও ঐ মেয়েটিকেই প্রচণ্ডভাবে ভালবাসে। কপালে থাকতে হয় বৌমণি, কপালে থাকতে হয় এমন একজনের নিঃস্বার্থ ভালবাসা পাওয়া।” টলমল চোখে কথাগুলো বলে সেখান থেকে বিদায় নিল অরুনিমা। আর আফরা স্তব্ধ হয়ে নির্বাক বসে আছে একই জায়গায়।

—“আরে অপূর্ব ভাই! হোয়াট আ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ! ফাইনালি এতো বছর পর নিজের মাতৃভূমিতে পদার্পণ করলে! দেশের মাটি যে এবার ধন্য হলো তবে।” অনেকটা অবাক হয়ে হাসিমুখে এগিয়ে এসে অপূর্বর উদ্দেশ্যে বললো অয়ন। অপূর্ব অয়নের বাবার বন্ধুর ছেলে। তাদের বাসায় ছোটবেলায় বেশ যাতায়াত ছিল। অপূর্ব বয়সে অয়নের সিনিয়র হলেও তাদের মাঝের বন্ডিংটা ছিল অসাধারণ। বেশ কয়েক বছর আগে নিউরোলজি সাবজেক্টে ডাক্তারি পড়তে দেশের বাইরে চলে যায়। আজ এতোদিন বাদে দেশে দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছে অয়ন। অপূর্ব অয়নের পিঠে হালকা চাপড় মেরে বললো
—“কী ছোটভাই! এতো আর্লি বিয়ে করে ফেললা! লাভ ম্যারেজ?”
অয়ন প্রত্যুত্তর না দিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে জানতে চায়লো
—“দেশে আসলা কবে তুমি? দেশের বাইরে গিয়ে কোন যোগাযোগই রাখো নাই। কাজটা কী ভালো করলা বড় ভাই?”
—“আর বলিস না! অনেক প্রবলেম ফেস করতে হয়েছে প্রথম প্রথম। তাই ভালো করে কারো সাথেই যোগাযোগ রাখতে পারি নাই। মনে কষ্ট রাখিস না ভাই।”
অয়ন মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বললো
—“আরে নাহ্। কষ্ট রাখবো কেন? কিন্তু দেশে কবে আসলা তুমি? জানাইলা না তো!”
চারপাশে চোখ বুলিয়ে বললো
—“আসছি আজ চারদিন হলো। আঙ্কেল হঠাৎই পরশুদিন গিয়ে আমাদের বাসায় উঠে। আমাকে দেখে বেশ অবাক হয়। পরে বললো যে তুই নাকি বিয়ে করেছিস। ফাইনালি আঙ্কেলের ইনভাইট পেয়ে এখানে আসলাম। কই তোর বউ কই? দেখাবি না?”
ব্যস্তভঙ্গিতে অয়ন বললো
—“হ্যাঁ হ্যাঁ, আসো আমার সাথে।” বলেই আফরার কাছে নিয়ে গেল। সেখানে স্পন্দন, অতশী, অরুনিমা, লাবণ্যও দাঁড়ানো ছিল। তাদের কাছ থেকে একটু দূরেই অপূর্ব দাঁড়িয়ে পড়লো। হঠাৎই সে টের পেল তার বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে। অজানা কারণে সর্বাঙ্গ তিরতির করে মৃদু কাঁপছে। অস্ফুট স্বরে তার মুখ দিয়ে বের হয়ে এলো ‘সায়রা!’ নামটা সর্বপ্রথম স্পন্দনের কানে বারি খেয়ে ফাটলো বোমার মতো। তড়িৎ গতিতে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো অতশীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একটি সম্পূর্ণ অচেনা ছেলে। তারপর অতশী তাকালো। তাকিয়েই যেন কেমন একটু অপ্রস্তুতবোধ করতে লাগলো। সেই অবস্থাতেই অপূর্বর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলো

—“কেমন আছেন স্যার?”
অতশীর কথায় অপূর্বর ধ্যান ভাঙলো। নিজেকে সামলে কাছে এগিয়ে এসে বললো
—“ভালো। তুমি কেমন আছো সায়রা?”
উপস্থিত সকলে অবাক। অপূর্বর মুখে ‘সায়রা’ নামটা শুনে একবার স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে জবাব দিল
—“আলহামদুলিল্লাহ্ স্যার। আপনি দেশে কবে এসেছেন স্যার?”
—“আমাকে স্যার না ডেকে ভাইয়া ডাকতে পারো সায়রা।”
এতোক্ষণে স্পন্দন মুখ খুললো
—“উনি কে অতশী?”
গমগমে কণ্ঠে অপূর্বই উত্তরটা দিল
—“আই ওয়াজ হার হোম টিউটর।”

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে