অবেলার_মেঘ পর্ব_৬

0
1877

#অবেলার_মেঘ
#পর্ব_৬
#জীহানুর

-আপনি জানেন?
-হ্যা জানি তো। বাগান থেকে ভূত পেত্নিরা এসে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
-হুহ!ফাজলামি করবেন না মোটেই।
-আচ্ছা চলো আমার সাথে।
-এই ভোরবেলায় কোথায় যাবেন?
-চলো তারপর বলছি।

এখনো ঠিকমতো সকাল হয়নি।আকাশ এখনো কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। মার্জিয়া কে নিয়ে মেঘ বাইকে করে বের হয়।
পুরো রাস্তায় কোনো কোলাহল নেই।দুই-একজন মানুষের হাটাচলা কেবল শুরু হয়েছে।কা কা শব্দে মার্জিয়া উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে কাক-পাখিরা ঝাকে ঝাকে উড়ে যাচ্ছে।খাদ্যের সন্ধানেই বেরোতে হচ্ছে।তবুও বেলাশেষে ঠিক ই ঘরে ফিরে যায়।ফিরতে হয়, ওদের প্রিয়জনদের জন্যে।
মেঘ বাইকের স্পিড বাড়ায়।মার্জিয়া ওর কাধ আরো শক্ত করে ধরে বসে।

-এতো জোরে চালাচ্ছেন কেন?
-আমার কোলাহল পছন্দ না। যেখানে যাচ্ছি সেখানে সবার আনাগোনা বেশি হওয়ার আগে যেতে চাচ্ছি।
-তবুও একটু আস্তে চালান।আমার ভয় করছে।

মেঘ কাধ থেকে মার্জিয়ার হাতটা সরিয়ে এনে সামনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

-এখন শক্ত করে ধরে বসো।ভয় নেই, আমি আছি তো।

মার্জিয়ার কি যেন একটা অনুভূত হয়। আগে তো কখনো কোনো ছেলেকে এতোটা বিশ্বাস করা হয়নি।কারো এতো কাছে যাওয়া হয়নি। তাহলে কেন দুদিনের পরিচয়ের একজনকে এতোটা আপন মনে হয়!নিজেকে এসব প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পায় না ও।হঠাৎ মেঘ গাড়ি থামালে ওর চিন্তায় ছেদ পড়ে। একটা টঙ দোকানের সামনে এসে মেঘ ওকে নামতে বলে।আশেপাশে কোনো মানুষ নেই।শুধু চা’এর দোকানে দু’একজন বয়স্ক লোক বসে চা খাচ্ছে। মেঘ দোকানিকে দু’কাপ চা দিতে বলে বেঞ্চে গিয়ে বসে। মার্জিয়াও ওর পাশে গিয়ে বসে।

-জানো মার্জিয়া,কিছুদিন আগে এখানে আমি একটা মেয়েকে দেখেছিলাম।চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল এই দোকানটার পাশে। ছাতি মাথায় আধো ভেজা অবস্থায়। খুব মায়াবী লাগছিল তাকে।আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম।কিন্তু সেই মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতে উঠতে সে চলে গিয়েছিল।
-তারপর আর দেখেননি?

দোকানি দু’কাপ চা দিয়ে যায় ওদের হাতে।

-আমার ইচ্ছেগুলো অদ্ভুতভাবে পূরণ হয়ে যায়।আজ হোক অথবা কাল, ইচ্ছেদের পূরণ হতেই হবে। সেদিন খুব ইচ্ছে করছিল সেই মেয়েটার সাথে এই টঙ দোকানে বসে এক কাপ চা’এর স্বাদ নিতে।কিন্তু তখন হয়নি।দেখো, আজ সেই ইচ্ছেটাও পূরণ হয়ে গেলো।

মার্জিয়া অনেকটা বিস্ময় চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে।

-অবাক হয়ো না।সেদিন এখানে তুমি দাঁড়ানো ছিলে।তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম এখানেই।
-আপনি আগে কেন বলেন নিই??
-সবকিছুর একটা উপযুক্ত সময় আছে। যেমন ধরো সেদিন সময়টা ছিল তোমার মায়ায় জড়ানোর। আর আজ সময় সেই মায়ার কথা প্রকাশ করার।

মার্জিয়া চুপ হয়ে যায় মেঘের মুখে এসব শুনে।ও আর কিছু বলে না।চা খাওয়া শেষে ওরা বাইকে উঠে রওনা দেয় বাড়ির পথে। মার্জিয়া আকাশের দিকে চেয়ে থাকে।অন্ধকার ভাব কেটে যাচ্ছে। আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। হয়তো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আলোয় আলোকিত হয়ে যাবে সব।

অবেলা ম্যানশনে কেটে আরো কিছু দিন।মেঘের সাথে সখ্যতা বাড়তে থাকে মার্জিয়ার। কি যেন একটা আছে যা ওকে মেঘের দিকে টেনে নিয়ে যায়।ওরা প্রায় সময় ই ভোররাতের শেষদিকে হাটতে বের হয়।কোনো কোনো দিন বাইকে চড়ে সেই টং দোকানেও যায়।একসাথে বসে চা খায়, আবার চলে আসে। মেঘের গিটারের সুর ওর প্রতিদিনকার অভ্যাস হয়ে গেছে।মাঝেমাঝে গিটারের সুরে গান গায় মার্জিয়া।মেঘ মন দিয়ে তা শোনে।অবেলা ম্যানশন আর অন্যরকম লাগেনা ওর কাছে। এখন এই বাড়ির সবকিছুই ওর পরিচিত।বাগান থেকে শুরু করে অবেলার মেঘ পর্যন্ত সব ই ওর খুব আপন।

এই ইয়ারের এক্সাম এসে যায় মার্জিয়ার। একটা বই ওর আজ খুব জরুরী লাগবে।কিন্তু সেটা ইশার কাছে। ও আজ ভার্সিটি তে আসেনি।বাড়িতে আছে।ঐ বাড়িতে যেতে খুব অস্বস্তি লাগছে কিন্তু বাধ্য হয়ে ওর সেখানে যেতে হয় যেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল ওকে। রিক্সা থামিয়ে সোজা ওদের রুমে চলে যায়।ওর রুমমেট রা ওকে দেখে খুব খুশি হয়। সবাই অনেক করে বসতে বলে, কিন্তু ও বসে না।বইটা নিয়েই তাড়াতাড়ি করে বের হয় রুম থেকে।মেইন গেটের দিকে যাচ্ছিল তখন পিছন থেকে এক মহিলা ডাক দেয়।ফিরে দেখে বাড়িওয়ালী আন্টি দাঁড়িয়ে আছে।

-আন্টি আমি একটা বই নিতে এসেছিলাম।খুব বেশি সময় থাকিনি। জরুরী ছিল তাই আসতে হলো। এখনি আবার চলে যাচ্ছি। সরি, আন্টি। আর আসবো না।

মহিলা ওর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদোকাঁদো গলায় বলতে থাকে।

-মা তুই যখন ইচ্ছা আসতে পারিস। সেদিনের জন্য ক্ষমা করে দে আমাকে। নিষ্ঠুরের মতো তোকে সেদিন রাতে বের করে দিয়েছিলাম।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে করিনি রে।আমাকে হুমকি দিয়েছিল ওরা।
-কি বলছেন আন্টি এসব!একটু ভালভাবে খুলে বলবেন?
-তোকে যেদিন বাড়ি থেকে নামিয়ে দিই সেদিন সকালে আমার বাসায় এসে একজন লোক হুমকি দিয়ে গিয়েছিল। তোকে নামানোর জন্য বলেছিল আমাকে। আমাকে অনেক টাকা দিচ্ছিল কিন্তু আমি রাজি হইনি।তখন আমার ছেলেকে গায়েব করে দেওয়ার হুমকি দেয়।বাধ্য হয়েই তোকে নামিয়েছিলাম।সেই রাতের মধ্যে তোকে না নামালে যদি আমার ছেলের কিছু করে বসতো, সেজন্য এমন করতে হয়েছিল।

এই বলে মহিলা কেঁদে ফেলে।আর মার্জিয়া এসব শুনে হতবাক হয়ে যায়।কারো সাথে ওর এমন কোনো শত্রুতা নেই যে ওর সাথে এরকম কিছু করতে হবে।

-আন্টি, সে কে ছিল কিছু বলেছে? বা তার নাম ঠিকানা?
-হ্যা, ঘরে ঢুকেই পরিচয়ের খাতিরে তার নাম বলেছিল। হিরক নাম ছিল।

নামটা শুনে ও আরো অবাক হয়ে যায়। সে কেন এমন করতে যাবে? হিরক আঙ্কেলের সাথে কি এমন করলো?আরো অনেক প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ওখান থেকে বাড়িতে চলে আসে ও।

বাসায় এসেই দেখে হিরক কাকে যেন কল করছে বসার ঘরে। তার দিকে এগিয়ে যায় ও।

-হিরক আঙ্কেল, আপনি বাড়িওয়ালী আন্টিকে বলে আমাকে বাসা থেকে নামিয়েছিলেন কেন??

হিরক ওর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

-কথা বলছেন না কেন?আমার প্রশ্নের জবাব দিন।এমন কি ক্ষতি করেছিলাম আপনার যে ঐ রাতেই আমাকে বাসা থেকে নামাতে হলো?

-হিরক কিছু করেনি। ওকে আমি করতে বলেছিলাম।

পিছন ফিরে মার্জিয়া দেখে মেঘ দাঁড়িয়ে।

-তুমি!?

#জীহানূর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে