অবেলার_মেঘ পর্ব_৩

0
1993

#অবেলার_মেঘ
#পর্ব_৩
#জীহানুর

স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে যে এই ঘরের ভিতরেই কেউ গিটার বাজাচ্ছে। মার্জিয়া হাত বাড়ায় দরজার দিকে নক করার জন্য। আর অমনি সায়লা এসে হাতটা ধরে বসে।

-আপামণি, কি করেন কি!!
এই ঘরে যাইতে মানা। কেউ যায়না।
-গিটার বাজাচ্ছে কেউ!তাই…আচ্ছা এই ঘরে ঢুকতে বারণ কেন?
-আগে এইহান দিয়া চলেন।

ওর হাত টান দিয়ে ঐ ঘর থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে যায় সায়লা।

-অইডা ছুডো সাহেবের কামড়া। ওইহানে কেউ যায় না।ছুডো সাহেব যেন কেমন জানি!কেউর লগে কতা কয় না, ঘরের ভিত্তে থাহে। কুন সময় ঘরে আহে, আর কুন সময় বাইরায় হেয় ছাড়া আর কেউ কইতে পারেনা। হের ঘরের পাশে কুনো শব্দ করন যায়না। শব্দ হুনলেই সাহেব ভাঙচুর করে। আমনে ওদিকে যাইয়েন না, আপামণি।
-ওহ আচ্ছা। এবার বুঝলাম হিরক আঙ্কেল কার কথা বলেছিল।

ওরা ওখান থেকে চলে আসে। মার্জিয়া ঐ বাড়িতে মিশতে শুরু করেছে। সকালে ভার্সিটি, দুপুরে টিউশনি, বিকেলবেলা বাগানের দেখাশুনা করা।সব মিলিয়ে ভালোই চলছে। তবুও অস্বস্তির কারণ থেকেই যায়। ঐ যে গিটারের সুর, এখনো শোনা যায়।আর প্রায় রাতেই মনে হয় কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এটাকে ও এক প্রকার নিজের কল্পনার ভুল ভেবেই এড়িয়ে যায়।

মাস খানেক হয়ে গেছে অবেলা ম্যানশন এখন অনেকটা সয়ে গেছে ওর। নিরব পরিবেশের সবকিছুই যেন চুপিচুপি কথা বলে।এখানেও তাই। আজ বিকেলবেলা বাগানে এলো মার্জিয়া।গত দুইদিন আসা হয়নি গাছগুলোকে দেখতে। লাল গোলাপের গাছটায় কড়ি এসেছিলো। আজ ফুটে গেছে সবগুলো।আর সন্ধ্যামালতি ফুটবে ফুটবে ভাব। এতো সুন্দর একটা ফুল তার না কি এই অবেলায় এসেই ফুটতে হয়, আর আলোর আগমনেই ঝরে পড়ে। আপনমনে ফুলগুলো দেখছিল ও।তখনি রোজকার মতো আজও সেই গিটারের ধুন এসে ওর কানে লাগলো। ও কিছুটা বিরক্ত হলো এতে।

– রোজ এমন একজন গিটারের বাজাবে ঘরের মধ্যে বসে, আর তাকে নাকি দেখা যাবে না। হুহ!যতসব ঢং! আজ হিরক আঙ্কেল বাড়িতে নেই। আর সায়লাও বাইরে আছে।আমি আজ দেখেই ছাড়বো এই ছোট সাহেবকে।

মার্জিয়া দৌড়ে ভিতরে গিয়ে উপরে চলে যায়। সেই মেঘ বসতীর সামনে দাঁড়িয়ে হাপাতে থাকে।এখনো গিটারের তান চলছে। সজোরে কড়া নাড়ে দরজায়। কড়া নাড়তেই গিটার বাজানো বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কেউ কথা বলে না।ভিতর থেকে কোনো শব্দ না আসাতে ও আবারো কড়া নাড়ে। এবারো কেউ কথা বলে না।তৃতীয়বার দরজায় যেই আঘাত করতে যাবে তখন ভিতর থেকে কেউ বলে-

-অতো জোড়ে আঘাত করোনা,ব্যথা পাবে তুমি!

একটু থমকে যায় মার্জিয়া।হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে ওর। তবুও জিজ্ঞেস করে-

-দরজাটা খোলা যাবে?
-অচেনা কারো সাথে আমি দেখা করি না!
-আমরা পরিচিত হতে পারি।আপনার গিটারের সুর শুনতে আমার ভালো লাগে।তাই দরজা খুলতে বলছি।

দরজাটা খুলে যায়।

মার্জিয়া ধীর পা’য়ে ভিতরের দিকে যায়। অনেক বড় একটা রুম। খুব নিপুণ ভাবে সাজানো গুছানো। এখান থেকে দেখা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জানালার সেই সাদা পর্দা। ডানপাশের দেয়ালে অনেক পেইন্টিং টাঙানো আছে। আর দরজা সোজাসুজি খাটের উপরে গিটার টা আছে। ও গিটারের দিকে এগিয়ে যায়। গিটারটা হাতে নিতেই পিছন থেকে একজন বলে –

-বিনা অনুমতি তে কারো জিনিশ ছুঁতে নেই, জানো না?!

ও চমকে যায় হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বর শুনে।পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ লম্বা, ফর্সা গায়ের রঙ,ঝাঁকড়া চুল তার, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা,স্থির চাহনি, আর মুখে একরাশ নিরবতা।

-সরি।আসলে আনমনেই ধরে বসলাম আপনার গিটার টা..
-এতো বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। মেঘ বসতীর সবকিছুই তুমি ছুঁতে পারো।
-আপনিই সেই ছোট সাহেব?
-আমি মেঘ মেহমেদ। মেঘ বসতীর অধিপতি।তুমি আমাকে মেঘ নামেই ডাকতে পারো।
-আচ্ছা বেশ। তো আপনি এই ঘরে একা একা কেন থাকেন? বাইরে বের হলেই তো পারেন।
-কই! একা থাকি না তো।এই ঘরে আমার সাথে আরো অনেকে থাকে।
-আরো অনেকে???আমি তো শুধু আপনাকেই দেখতে পাচ্ছি।
-আছে আছে।পরে একদিন পরিচয় করিয়ে দেবো।
-আচ্ছা।আমি এখন যাই।কেউ দেখলে রাগ করবে!
-রাগ করবে কেন?
-এই যে আপনার রুমে আসলাম তাই। এ ঘরে না কি আসা বারণ।আপনি নাকি..
-আমি কি?
-না কিছুনা!
-বলতে পারেন। সমস্যা নেই।আমি কিছু মনে করবোনা।
-শুনেছি আপনার ঘরের আশেপাশে শব্দ হলে আপনি ভাঙচুর করেন!
-হাহাহা!!!!(অট্টহাসি দিলো মেঘ)
-হাসছেন কেন?কিছু ভুল বললাম?
-না, তা একটু আধ্য করি।কিন্তু তেমন ভয়ংকর কিছুই না।আপনি ইচ্ছে হলেই এখানে আসতে পারেন।
-আপনিও বের হতে পারেন। আমার সাথে বাগানে গিয়ে হাটবেন।খুব ভালো লাগবে দেখবেন।
-আমি বাগানে যাই না। ওখানে অনেক জীবন্ত লাশের কবর আছে…

#জীহানূর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে