অবুঝ_বউ পার্ট: ৯

0
4003

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

আমিও সোহাগীকে জরিয়ে ধরলাম চোখ দুইটা থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে….

পিয়াল আমার হাত ছাড় ব্যাথা লাগছে তো পিয়াল উফফফ ব্যাথা পাচ্ছি (হঠাৎ সোহাগীর বিড়বিড় শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি ওর সব চুল আমার মুখের উপর হাত পা ছড়িয়ে আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে আর পিয়াল পিয়াল বলে বিড়বিড় করছে, তারমানে স্কুলে যা ঘটে তাই সোহাগী ঘুমের ঘুরে বিড়বিড় করে)
–সোহাগী
–হুম
–কি বিড়বিড় করতেছ
–কই কিছু নাতো
–ঠিক আছে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও স্কুলে যেতে হবে তো
–উহু আর একটু ঘুমাই প্লিজ (ঘুম ঘুম চোখে এসব বলেই আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো তারপর আবার ঘুমিয়ে পরলো, আমি ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি আর পিয়ালের কথা ভাবছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, স্কিনে মৌরি নামটা দেখেই রাগ উঠে গেলো তাই কেটে দিলাম কিন্তু ও বার বার কল দিয়েই যাচ্ছে তাই বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–ফোন কেটে দিচ্ছ কেন বার বার
–কেন ফোন দিয়েছ
–আজ অফিসে আসবা না
–তা জেনে তোমার লাভ কি
–বলোনা
–আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি
–মানে কেন
–সোহাগীর পরিক্ষা সামনে ওকে পড়াতে হবে
–এই পিচ্ছির জন্য চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছ তা তোমার পিচ্ছি বউ কোথায়
–আমার বুকে ঘুমাচ্ছে
–হাহাহা এই পিচ্ছিকে বুকে নিয়ে কি সুখ যে পাও
–সুখ পাওয়ার জন্য কি তোমাকে বুকে নিতে হবে নাকি
–চাইলে অবশ্যই পাইবা
–তোমার মতো মেয়েকে নিবো আমার বুকে আর কখনো ফোন করবা না
ফোনটা কেটে দিলাম কেমন অসভ্যের মতো কথা বলে, হঠাৎ দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো সোহাগীর স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে ওকে ডেকে তুলে ফ্রেশ হতে পাঠালাম, এই ফাকে মুমুর থেকে সজিবের ঠিকানাটা নিয়ে আসলাম সোহাগীকে স্কুলে দিয়ে সজিবের বাসায় যাবো

নাশতা করতে করতে আব্বু কে বললাম….
আমি: আব্বু আমি মুমুর জন্য একটা ছেলে পছন্দ করেছি তোমরা যদি অনুমতি দাও কথা আগাই
আব্বু: কিন্তু মুমুর পড়াশুনা
আমি: বিয়ের পর পড়বে সমস্যা কি আর ছেলের পরিবারের সবাই খুব ভালো মানুষ
আম্মু: তুই মুমুর জন্য যে যোগ্য পাত্র ঠিক করবি সে বিশ্বাস আমার আছে তুই কথা বল
আমি: তোমরা ছেলে দেখবা না
আব্বু: দেখার সময় তো আর চলে যাবে না তুই কথা বল আর তোর পছন্দ হলে আমাদেরও পছন্দ হবে
আমি: ঠিক আছে

সোহাগীকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে মুমুর দেওয়া ঠিকানায় গেলাম, অনেক সময় কলিংবেল বাজানোর পর একজন ভদ্রমহিলা দরজা খুলে দিলেন
–আসসালামু আলাইকুম আন্টি
–ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমি কে বাবা
–আন্টি সজিব আছে বাসায়
–হ্যাঁ তুমি ভিতরে এসে বস

কিছুক্ষণ বসার পর একটি ছেলে আসলো এইটা যদি সজিব হয় তাহলে আমার বোনের পছন্দ আছে বলতেই হবে
–আমি সজিব কিন্তু আপনি
–আমি মুমুর ভাইয়া (হাহাহা ছেলে ভালো মতেই টাসকি খাইছে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে)
আন্টি: কিরে সজিব এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আর মুমু কে
আমি: মুমুর কথা বাসায় জানাও নি
সজিব: না ভাইয়া আসলে মুমু নিষেধ করেছিল
আমি: কেন
সজিব: ওর পড়াশুনা শেষ হলে পর আপনারা বিয়ে দিবেন তাই ও নিজে থেকে কিছু করতে চায়নি আপনারা যদি কষ্ট পান
আমি: ঠিক আছে আঙ্কেলকে ডাকো
আন্টি আঙ্কেল কে ডাকতে গেলেন এই ফাকে সজিবের ছোট ভাই জিসান আসলো ওর সাথে পরিচিত হয়ে নিলাম
আমি: আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল
আঙ্কেল: ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমি…
আমি: সজিবের সাথে আমার বোনের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি
আঙ্কেল: তোমার বোন
আমি: হ্যাঁ ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে
আঙ্কেল: সজিব
সজিব: আব্বু মুমু নিষেধ করেছিল তাই তোমাদের জানাই নি
আন্টি: একবার জানিয়ে দেখতি আমরাই সব ব্যবস্থা করতাম তোর কোনো স্বপ্ন তো অপূর্ণ রাখিনি
সজিব: সরি আম্মু
আমি: আপনারা আমার বোনকে আগে দেখুন তারপর নাহয় বাকি কথা হবে
আন্টি: সজিব ভালোবাসে এটাই তো বড় কথা আবার দেখার কি আছে তোমরা বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলো
জিসান: কি বলো আম্মু ভাইয়া যে মেয়েকে ভালোবাসে তাকেই বিয়ে করাবা
–হ্যাঁ সমস্যা কি
–শুন আম্মু যে মেয়ে প্রেম করে সে কখনো ভালো হয় না নষ্টা হয় (জিসানের দিকে তাকালাম ফোন টিপছে আর কথা গুলো বলছে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে এখানেই কবর দিয়ে দেই কিন্তু মুমুর জন্য পারলাম না)
সজিব: জিসান মুখ সামলে কথা বল
আঙ্কেল: কাকে কি বলছিস সজিব যে যেমন সে অন্য মানুষকে তো তাই ভাববে
জিসান: আব্বু তুমি আমাকে অপমান করছ
আঙ্কেল: মেহমান বাসায় নাহলে আজ তোমার খবর ছিল আপাদত তুমি আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাও
(জিসান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেড়িয়ে গেলো)
সজিব: ভাইয়া সরি আসলে…
আঙ্কেল: সজিব কে মানুষ করতে পেরেছি কিন্তু জিসানকে মানুষ করতে পারিনি পড়ালেখা ছেড়ে বখাটে হয়ে গেছে
আমি: বাদ দিন আঙ্কেল শুভ কাজে এসব না বলাই ভালো
আন্টি: হ্যাঁ তাই ভালো
আমি: বিয়ের তারিখ কয়েক মাস পর ঠিক করতে হবে আমার স্ত্রীর পরিক্ষা সামনে
আঙ্কেল: কোনো সমস্যা নেই তুমি সুযোগ বুঝে আমাদের জানিয়
আমি: ঠিক আছে

আরো কিছুক্ষণ সবার সাথে গল্প করে বেড়িয়ে আসলাম ওদের বাসা থেকে সোহাগীকে আনতে যেতে হবে, ড্রাইভ করছি আর ভাবছি পরিবারের সবাই কতো ভালো আর জিসান…. হঠাৎ সোহাগীর স্কুলের সামনে চোখ পড়লো এই দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না, সোহাগী পিয়ালের পাশে বসে হাসছে আর পিয়াল ওকে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে বাহ্ কতো সুন্দর দৃশ্য, এই মেয়েকে আমি যতোই ভালোবাসি ও ততোই প্রশ্রয় পায় কিন্তু আর না

গাড়ি থেকে নেমে সোহাগীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম ও কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ইচ্ছে করছে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় দেই কিন্তু সম্ভব না পরে তো নিজেই কাঁদবো, সোহাগীর হাত ধরে টেনে এনে গাড়িতে বসালাম
–নাহিল রাগ করেছ কেন পিয়াল তো….
–একদম চুপ একটা কথাও বলবা না
–পিয়াল তো…
–চুপ থাকতে বলেছি

বাসায় এসে সোহাগীর সাথে একটা কথাও বলিনি সোহাগীও সারাদিন মুখ গোমরা করে ছিল, রাতের আধারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি সোহাগীকে এভাবে স্বাধীনতা দিলে ও যে…..
–নাহিল (সোহাগীর ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পরলো)
–কিছু বলবে
–তুমি আমার সাথে সারাদিন কথা বলনি কেন জানো আমার খুব খারাপ লাগছে
–সত্যি খারাপ লাগছে
–হ্যাঁ
–কথা বলবো যদি তুমি আমার সব কথা শুনো
–বল
–পিয়ালের সাথে আর কথা বলবা না বললেও অনেক কম কথা বলবা
–পিয়াল তো আমার বন্ধু কথা বললে তুমি রাগ কর কেন
–তুমি বুঝবে না
–ঠিক আছে আর কথা বলবো না
–বলবা কিন্তু খুব কম
–আচ্ছা
–বিয়ের আগে কিন্তু তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে আমার সব কথা শুনবে
–শুনবো তো বল
–এখন থেকে আমি যা যা বলি তাই করবা
–কি করতে হবে
–আমি তোমাকে ভালোবাসা+রোমান্স শিখাবো আর তুমি আমাকে সেভাবে ভালোবাসবে
–রোমান্স কি
–বুঝনা
–উহু
–রুমে চলো রোমান্স কি আজ শিখাবো তোমাকে
সোহাগীকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম, আচমকা এভাবে কোলে তুলে নেওয়াতে পিচ্ছিটা লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো, সোহাগীকে বিছানায় শুয়ে দিয়েই ওর মিষ্টি দুইটা ঠোটে আমার ঠোট ডুবিয়ে দিলাম…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে