অবুঝ দিনের গল্প পর্ব-০৮

0
999

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_৮

কেটে গেলো আরো বেশ কিছুদিন।তনয়া আর সোহা চলে গেছে আজ।অরিনের ভীষণ মন খারাপ।কারণ এই কয়দিন আদ্রিয়ান ওর সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনি।আর এখন তনয়া, সোহাও নেই যে একাকিত্ব দূর হবে। আরিফাও স্কুলে থাকে।তারপর কোচিং।আদ্রিয়ান তাও যতটুকু কাজের ফাঁকে থাকে কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে।ওর হটাৎ এমন ইগ্নোর অরিন মানতে পারছেনা।খুব ইচ্ছে হচ্ছে ওর বলতে কেন এমন করছে সে?সে জানে না কষ্ট লাগে?কিন্তু .. কোথাও একটা কিন্তু থাকে।তার ইগ্নোর এ ওর কেনো কষ্ট লাগে?ব্রেক টাইমে অরিন,অগ্নি,বিথী,হৃদি বসে আছে মাঠে গোল হয়ে।বিথী মুখ বেজার করে রেখেছে।

অগ্নি: মুখ এমন কেন তোর?

হৃদি: আকাশের কথা মনে পড়ছে ওর।

অগ্নি: তাহলে কল দে!

বিথী: কল তো রোজ দেই,দেখতে ইচ্ছে করছে ভীষণ!

অগ্নি: এই ব্যাপার তাহলে ভিডিও কল দে।

বিথী: উফ,আমার কি স্মার্টফোন?বাটন ফোন!শুধু সিম চলে।

অগ্নি: তাহলে এক কাজ কর।চোখ বন্ধ কর।দেখবি আকাশ তোর সামনে আছে মনে হবে।

হৃদি: তুই আর তোর বুদ্ধি!

অগ্নি: উহু বুদ্ধি না,আসলে আমরা যাকে ভালোবাসি চোখ বন্ধ করে তাকে অনুভব করতে চাইলে ,তারা ঠিক আমাদের সামনে আছে মনে হয়।

বিথী: এমন হয় নাকি!

অগ্নি: একবার করেই দেখ না।

অরিন: ভালোবাসা কেমন?

সবাই তাকালো অরিনের দিকে।

বিথী মুচকি হেসে বলল,”ভালোবাসা স্বত:স্ফূর্ত এক অনুভূতি। এর প্রকাশ সহজ মনে হলেও ভালোবাসার মধ্যে রয়েছে জটিলতা এবং বহুমাত্রিকতা।ভালোবাসা কেউ পেয়ে হয় আনন্দে মাতোয়ারা আর কেউ হারিয়ে ধরে বোতল না হয় কলম। আবার এ ভালোবাসা কেউ পেয়ে পস্তায়, কেউ হারিয়ে পস্তায় আবার কেউবা পাওয়ার জন্য শতবার পস্তাতে থাকে। তো এ ভালোবাসা নিয়ে কতশত কবি, সাহিত্যিক কতশত গল্প কবিতা রচনা করেছেন। কারো রচনায় ভালোবাসার মধুরতা প্রকাশ পেয়েছে তো অন্যকারো রচনায় ভালোবাসার তিক্ততা। আবার কারও রচনায় আঙুর টক রকমের ভালোবাসার বর্ণনা প্রকাশ পেয়েছে। ।ভালোবাসা অতি ছোট হলেও এর অনুভূতি বিশাল। সারসংক্ষেপ হয়তো এর নেই।যাকে আমরা ভালোবাসি তার দোষ ,গুন সব কিছুতেই ভালো কিছু খুঁজে নেই।তার সাথে থাকলে মনে হয় আর কিছু লাগবে।যাকে এক নজর দেখার জন্য মন উতলা হয়। যার সাথে একটু কথা বলার জন্য মন ছট ফট করে। যার অবহেলা সইতে পারা যায় না,তাকেই আমরা ভালোবাসি।আর তার প্রতি আসা অনুভূতি ই হলো ভালোবাসা”

অগ্নি: ভালোবাসায় পি এইচ ডি প্রাপ্ত আমাদের বিথী!

বিথী: যখন কাউকে ভালবাসবি বুঝবি ..তখন মিলিয়ে নিস।

অগ্নি: হইছে,এবার আমার ট্রিক এপ্লাই কর।

বিথী চোখ বন্ধ করলো, অরিনও কি ভেবে চোখ বন্ধ করলো।চোখের সামনে ভেসে উঠলো প্রথমেই নিজের পরিবার।হাসলো অরিন।এরপর আস্তে আস্তে আদ্রিয়ান!ওর সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো, খুনশুটি সব।মস্তিষ্কে বাঁজছে,”ইংরেজ বাবু”

ঝট করে চোখ খুললো অরিন। নিঃশ্বাস কেমন ভারী হয়ে আসছে ওর।অস্থির লাগছে ওর।এটা কি আদো ভালোবাসা?

অগ্নি: চল ,ক্লাস স্টার্ট হবে।

অরিন আনমনে উঠে দাড়ালো।এদিকে বিথী আকাশের কথা ভাবতে ভাবতে কারো সাথে ধাক্কা খেলো।
বিথী: সরি খেয়াল করিনি!

ছেলেটা: কেন মামনি!কারোর স্বপ্নে বিভোর চলে বুঝি?

ছেলেটার কথার ধরন দেখে নাক ছিটকালো হৃদি।পাশের আরেকটা ছেলে বলে উঠলো।
“তো বেবী কোন ইয়ার তুমি?”

অগ্নি: বিথী চল!

বলেই বিথীকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। পিছে অরিন আর হৃদিও!

ছেলেটা: আরে মামা একাই কি তিন জনকে নিয়ে মজা করবে?আমাদেরও চান্স দেও!

বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।অগ্নি তেড়ে যাবে তার আগেই ছেলেটার গালে সজোরে কেউ থা’প্পড় মারলো।

অরিন: ঘরে মা বোন নেই?মেয়েদের কিভাবে সম্মান করতে হয় শিখায় নি আপনাদের?

ছেলেটা: তোমার এত বড় সাহস!

অরিন: সাহসের কি দেখলেন?এতক্ষণ ঝামেলা চাইনি বলে আমরা চুপচাপ চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনি?উল্টে আরো বাজে কথা বলছেন!

ছেলেটা: তোমায় তো..

অরিনের দিকে তেড়ে যেতে গেলে অগ্নি সামনে আসে।

পাশের ছেলেটি বলে উঠে,”দোস্ত , ছাড়।এমনেই লোক জড়ো হয়ে গেছে।চল!”

ছেলেটা: তোমায় আমি দেখে নিবো।

বলেই চলে গেলো। অরিন ক্লাসের মাঝেও আদ্রিয়ানকে নিয়ে ভাবছিল।ক্লাসে মন দিতে পারছে না বলে,পারমিশন নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেলো মুখে পানির ছিটা দিয়ে।মুখে পানি দিবে এমন সময় কেউ ওর মুখ চেপে ধরে।অরিন ছোটাছুটি করতে থাকে।কিন্তু শক্তির সাথে পেরে উঠে না।একটা ফাঁকা ক্লাসে এনে ওকে ছাড়া হয়।অরিন ওদের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেই ছেলেগুলো।

ছেলেটা: আমাকে থা’প্পড় মারা না?এর ফল কি হয় দেখ!

অরিন জমে গেছে।ওদের ইন্টেনশন কি তার ওই ছোট্ট মস্তিষ্ক বুঝে গেছে।ছেলেগুলো ওর দিকে এগিয়ে।অরিন তবুও দাড়িয়ে।এরকম পরিস্থতিতে কখনো না পড়ায় হিতাহিত জ্ঞান ওর মাঝে নেই।আগে শুধু শুনতো।তখন একটু ভয় পেতো।এখন সামনেই তার সেই ঘটনা।
দরজা খুলার আওয়াজে ছেলে গুলো দরজার দিকে তাকালো।আদ্রিয়ান চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে।ছেলেগুলো ঢোক গিললো। আদ্রিয়ানকে সবাই চিনে।আর এই রকম কিছু শুনে এসে থাকলে ওদের আর আস্ত থাকা হবে না।
আদ্রিয়ান: কি হচ্ছে এখানে?

ছেলেটা: ইয়ে মানে ভাইয়া ,একটু কথা বলছিলাম।

আদ্রিয়ান: একটা মেয়েকে একা ক্লাসে এনে দরজা আটকিয়ে তোরা কথা বলছিস?আমি কি মূর্খ?
আদ্রিয়ান সব জানে,ভেবেই ক্লাসের আরেক দরজা দিয়ে পালালো ওরা।আদ্রিয়ান ওদের পিছু যেতে চাইলো।কিন্তু অরিন কে ওর স্বাভাবিক লাগলো না।ও অরিনের কাছে গেলো।

আদ্রিয়ান: অরিন?

অরিন এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে জ্ঞান হারালো।আদ্রিয়ান ওকে বাহুডোরে আগলে রাখলো।এক জুনিয়র কে বলেছিলো অরিনের খেয়াল রাখতে। ও নতুন।সেই জুনিয়র ই দেখে ওরা অরিন কে এখানে আনছে।সুবিধার মনে হয় নি বলে ও আদ্রিয়ান এর কাছে যায়।সব শুনে আদ্রিয়ান এর রাগ হয়।এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে চলে আসে।ওরা দরজা ভালো ভাবে আটকায় নি।যেই কারণে এক ধাক্কায় খুলে গেছে।জুনিয়র ছেলেটা না দেখলে কি হতো ভাবতেই আদ্রিয়ান এর শিউরে উঠছে।অরিন কে কোলে নিয়ে বাইরে এলো।ক্লাস চলছে।তাই বাইরে তেমন কেউ নেই।এখন ভার্সিটি থেকে গাড়ি বের করতে টাইম লাগবে ,তাই একটা রিক্সা নিলো।অরিন এখনও ওর বুকের মাঝেই আবদ্ধ। আদ্রিয়ান এর একদিকে যেমন ভালো লাগছে ,তেমন টেনশন ও হচ্ছে।মেয়েটার হলো কি?

কাছেই এক ছোটো ডক্টর চেম্বারে নিলো।সব বলার পর ডক্টর বললেন,আকস্মিক ভয়ের কারণে এমন হয়েছে।একটু কেয়ার করলেই ঠিক হবে।অরিনের জ্ঞান ফিরে নী।ভাবলো এখন আর কিছু করবে না।যদি রাস্তায় বেশি ভয় পায় আরো।এই জন্য ওভাবেই বাসায় নিয়ে এলো।
বাসায় অরিনকে এভাবে দেখে মামা মামী চিন্তিত।আদ্রিয়ান ওদের আশ্বস্ত করলো।রুমে ওকে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দিল।পানির ছিটা দিতেই অরিন চোখ খুললো।কিন্তু ভয়ের ছাপ।তরী ঘড়ি উঠে সামনে আদ্রিয়ানকে দেখে ঝাপটে ধরলো।অরিন কাঁদছে।আলাপের শুরু থেকে আজ অব্দি ওকে সবসময় হাসতে দেখেছে।এভাবে কাঁদতে দেখে আদ্রিয়ান এর কষ্ট হচ্ছে।ওকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে!

আদ্রিয়ান: রিল্যাক্স অরি পাখি!কিছু হয় নি!

অরিন: ওরা…

আদ্রিয়ান: কেউ নেই ,তুমি ঘুমাও একটু ।

আদ্রিয়ান অরিন কে শুয়ে দিলো।ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।এক সময় অরিন ঘুমিয়েও গেলো।
আদ্রিয়ান ওর মুখের দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলো।
“যতই ভাবি দূরে থাকবো,ততই কোনো না কোনো ভাবে কাছে এসে পড়ি।আমার অবুঝ মনের ঠিকানায় যে তুমি বাসা বাঁধছো অরি পাখি!সেই বাসাতেই যে একটু একটু গড়ে তুলছো তোমার অবুঝ দিনের গল্প!কি হবে এর পরিণাম?”

অরিনের চোখের পানির কথা মনে পড়তেই আদ্রিয়ান চোখ মুখ শক্ত করলো।

“ওদের আমি ছাড়বো না।তোমাকে কাঁদানোর ফল পাবে ওরা!”

অরিনের কপালে অরিনের অজান্তে ঠোঁটের পরশ দিয়ে বেরিয়ে গেলো ও। এত সহজে ছাড়বে নাকি?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে