অবুঝ দিনের গল্প পর্ব-১৮+১৯

0
1107

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_১৮

নিজের বাবার সামনে দাড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান!ওর মা অরিনের মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। আদ্রিয়ানের বাবা গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে।আদ্রিয়ান বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।অরিন আর আদ্রিয়ান এর মা মিলে মজা নিচ্ছে ব্যাপারটার!

বাবা: তুমি কি নাটক করো?একবার রিখিয়াকে বিয়ে করবে না বললে অরিনের জন্য,বেচারি পালিয়েছে বলে অরিনকে মেনে নিতে আমার সমস্যা নেই।আবার হুট করে বললে অরিনকে বিয়ে করবে না!এখন ওর মাকে যদি এটা বলি আমাদের মান সম্মান কই যাবে?একবার রিজেক্ট করে আবার এপ্লাই করছো?বলি এটা কি তোমার চাকরি?

আদ্রিয়ান মিন মিন গলায় বললো,”বাবা আমি ভুল করেছি,তাই আরকি….”

বাবা: আমি আর ওর মাকে বলতে পারবোনা!ওর মা বলেছে ওকে অন্যত্র বিয়ে দিবে!

আদ্রিয়ান যেনো চমকে গেলো!

আদ্রিয়ান: ও বাবা!এমন করো কেন!তোমার এক মাত্র বড় ছেলে!এই লাস্ট!আর বলবো!এই একটাই বিয়ে করবো আর না!সত্যি!প্লিজ ম্যানেজ করো!

অরিন ভ্রু কুঁচকে বললো,”বিয়ে মানুষ কয়টা করে?”

আদ্রিয়ান: চারটা!

অরিন: আমি কোনো চার সতীনের ঘর করতে চাই না!মামা তুমি মাকে একদম ম্যানেজ করবে না!

আদ্রিয়ান অসহায় হয়ে তাকালো!

আদ্রিয়ান: আরে আমি তো কথার কথা বলেছি!

বাবা: আমি পারবো না!

আদ্রিয়ান: আচ্ছা ,আমি ম্যানেজ করব তুমি শুধু বিয়েটা দিও!

আরিফা: বাবা ভাইয়া বিয়ে পাগল হয়ে গেছে!

আদ্রিয়ান: তুই যা এখান থেকে!

আরিফা: হাহ! ভালো বললেই দোষ!

বাবা: ওর মাকে আমি কিছুই বলবো না!

আদ্রিয়ান: বাবা!

বাবা: আরে ওর মা তো জানেই না তুই বিয়েতে না করেছিস!

আদ্রিয়ান: মানে?

মা: মানে আমরা জানতাম তুই আবার পাল্টি খাবি,তাই বলি নী!

আদ্রিয়ান: তাহলে শুধু শুধু এতক্ষণ আমি কষ্ট করলাম?

অরিন হেসে উঠলো!

আদ্রিয়ান বির বির করে বললো,”সব বিরোধী দল”

সময় বহমান চিরকাল..কখনো এটি থমকে থাকে না…তেমনি চলে গেছে আরও একটি বছর……আজ অরিন আর আদ্রিয়ান এর গায়ে হলুদ!লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি বেশ অনেক লেহেঙ্গার মত করে পড়িয়ে দিয়েছে ওকে!

তনয়া: আপু আমায় কেমন লাগছে?

সোহা: আমাকেও বলো!

অরিন দুই বোনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো!

অরিন দুইজনের গাল টেনে বললো ,”রূপ কথার রাজকন্যা!”

দুইজনই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো!

“আর সেই রূপকথার রাজ্যের প্রাণ ভোমরা তুই” বলতে বলতে লামিয়া ভিতরে আসলো!

তনয়া: বড় রাজকন্যা এসে গেছে!

লামিয়া: আমার বোনটাকে কি মিষ্টি লাগছে!

সোহা: আমাকে বুঝি লাগছে না?

লামিয়া: তোদের পে’ত্নী লাগছে!

তনয়া: আপু..

“তোরা আবার ঝগড়া শুরু করলি?” বলতে বলতে সোহার মা আশা আর অরিনের মা রুহানা ঢুকলো!

সোহা: মা দেখো আপু আমায় পে’ত্নী বলে..

রুহানা ওদের কথা শুনে হাসলো!অরিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কানের নিচে চোখ থেকে কাজল নিয়ে লাগিয়ে দিল!

রুহানা: কারো যেনো নজর না লাগে!

বলতে বলতেই উনার চোখ ছল ছল করে উঠলো!

রুহানা: এত বড় কবে হলি রে মা?

অরিনেরও চোখে পানি এসে পড়ল!

লামিয়া: না না ,আজ নো কান্নাকাটি!তোর সাঁজ নষ্ট হয়ে যাবে প্লিজ!আর তা ছাড়া আমি তো আছি মামনি!তোমার ছেলের বউ হয়ে!একজন গেলে কি হয়েছে আরো দুইটা পাবে!আকাশ ভাইয়ার বউ আর আদিব ভাইয়ার!

সোহা: বাহ,আমাদের এখন থেকেই বিদায় করে দিলে?

তনয়া: ভাইয়ার কাছে বিচার দিবো তুমি আবার তাকে ভাইয়া ডেকেছো!

লামিয়া: যাহ,আমি কি ভয় পাই নাকি?

“কে কাকে ভয় পায় না শুনি?”

ওরা কেউ আসছে না বলে আকাশ আর আদিব উপরে দেখতে এলো!

লামিয়া মেকি হাসি দিয়ে বললো,”কিছু না!”

তনয়া আদিবকে বলতে যাবে তার আগেই লামিয়া বলে উঠলো,”তোর সাজ আমি নষ্ট করে দিবো কিন্তু”

তনয়া চুপ করে গেল!

আকাশ: হট্ট’গোল থামা তোরা!ওকে নিয়ে উঠোনে আয়!

অরিন ওর নিজের বাড়িতে।উঠোনে ছোট আকারে স্টেজ করা হয়েছে।সবাই একে একে ওকে হলুদ লাগালো!

অগ্নি: হিলু আপা!

অরিন: এই তোর আসার সময় হলো?

অগ্নি: আরে ভাই!রাস্তায় জ্যাম প্রচুর।

হৃদি: এই সর সর আমি আগে হলুদ দিবো!

বিথী: আমি ওর ভাবি হই আমি আগে দিবো!

হৃদি: শখ কত!

অগ্নি: তোরা ভাগ আমি দিবো!

অরিন হাসলো!

লামিয়া: তিনজন এক সাথে দে,তাহলেই হয়!

অতঃপর তিনজন একসাথে দিলো! চারজনেরই চোখে পানি!

হৃদি: এই ছেরি!কাঁদলে কাজল লেপ্টে যাবে!

অগ্নি: ওই অরিন!জিজু তোকে আমাদের সাথে দেখা করতে দিবে?তোকে পড়াবে?আমরা না বলেছিলাম একই ভার্সিটিতে পড়ব!

বিথী নিজেকে সামলে বললো,” তোদের মেলো ড্রামা বাদ দে,গান বাজনা হবে না নাকি?”
অরিন কিছু বললো না!আদো কি আদ্রিয়ান ওকে আর পড়ার জন্য বলবে?আর কি ওদের সাথে দেখা হবে এসব ভাবনা ওর মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে!সবার দিকে চোখ বুলালো ও!সবাই কত খুশি!হুট করেই ওর মনে প্রশ্ন জাগলো!এটা তো এক দুই বছরের দূরে যাওয়া নয়!সারাজীবনের দূরে যাওয়া থাকবে কেমনে এদের ছাড়া?বুক কেঁপে উঠলো ওর!মা,তনয়া,সোহা,লামিয়া,আকাশ,আদিব,কাকা কাকী কে ছাড়া ও অদূরে বসত বাড়ি গড়বে!থাকতে পারবে ও?

সোহা: অগ্নি ভাইয়া!

অগ্নি: এই তুমি সব সময় ভাইয়া ভাইয়া করো কেন? সাইয়া বানানোর ইচ্ছা বললেই পারো!

সোহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো!

অগ্নি: বলো কি বলবে?

সোহা: ভাবছিলাম বলবো আদ্রিয়ান ভাইয়ার জুতা চু’রির সময় আপনাকে রাখবো!কিন্তু আপনার কথা শুনে আর ইচ্ছে নেই! হাহ!

বলেই ঘাড় বাঁকিয়ে চলে গেলো!

অগ্নি বির বির করে বললো, “আস্ত একটা চি’জ”

______
আদ্রিয়ান: আরু!আর কত দিবি হলুদ!

আরিফা: যতক্ষণ না তুই ভুত হস!

সাগর: তোরা কি করিস,এরে ভুত বানা!

সবাই মিলে আদ্রিয়ান কে ভুত বানাতে ব্যাস্ত! সাদ ভিডিও করছে!অরিনকে দিবে বলে!

সব শেষে আদ্রিয়ান নিজের রুমে গেলো ফ্রেশ হতে!বেসিনের আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে উঠলো!পুরো মুখে হলুদ ভরা!ভালো করে ধুয়ে উঠিয়ে ফেললো!পাঞ্জাবি খুলবে তখনই অরিনের কথা মনে পড়ায় ফোন হাতে নিয়ে ভিডিও কল দিল সাথে সাথে রিসিভ হলো,যেনো এর আশাতেই বসে ছিল অরিন!অরিন কে দেখে মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান!

আদ্রিয়ান: কি মিসেস ইংরেজ বাবু! কি অবস্থা ওদিকের?

অরিন: হলুদ পর্ব শেষ হলো!আপনার?

আদ্রিয়ান: দেখতেই তো পাচ্ছো ফুল পাঞ্জাবিতে হলুদ কিভাবে লেপ্টে আছে!সব গুলো মিলে ভুত বানিয়েছে।

অরিন হাসলো, “যান ফ্রেশ হয়ে নিন!”

আদ্রিয়ান কিছু না বলে তাকিয়ে আছে অরিনের দিকে!অরিনের কেমন অদ্ভুত লাগল।ওর হাত কাঁপছে!

আদ্রিয়ান: শান্তভাবে মোবাইলটা রাখতে পারো না?এত নড়াও কেনো?দেখতেছো না আমার বউকে দেখছি!

অরিন ভরকে গেল।ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।

আদ্রিয়ান নিশ্চুপ থেকে বললো,”অরি পাখি!”

অরিন: হুমম?

আদ্রিয়ান: হাতে হাত রেখে সারাটাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো।শুধু এই হাতটা ছেড়ে যেও না!তোমার সাথে বুড়ো হতে চাই আমি!থাকবে তো সারাজীবন?

অরিন মৃদু হাসলো,

অরিন: ফ্রেশ হয়ে ঘুমান জনাব!

আদ্রিয়ান: উত্তর?

অরিন: কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না!ঘুমিয়ে পড়ুন!

বলেই কেঁটে দিলো।আকাশের ঐ চাঁদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো!আদ্রিয়ান ও মুচকি হেসে ফ্রেশ হয়ে নিলো!দুইজনই স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেলো!…

সাদ: কি করছো?

আরিফা: না এমনি!হাঁটতে বের হলাম!

সাদ:তারপর!কি অবস্থা সব কিছুর?

আরিফা: ভালোই ,তবে…

সাদ: তবে?

আরিফা: আপনার কথা অরিন আপু অনেক আগে জেনে গেছে!

সাদ: ভাইয়াকে বলেনি!

আরিফা: না..

সাদ: বললে ভালো হতো,অন্তত আমাদেরও বিয়েটা দিয়ে দিত!

আরিফা: জি না!আপনাকে একদম মে’রে হাড় গোর ভেঙ্গে দিতো!

সাদ: হাহ!আমি ভয় পাই নাকি?

আরিফা: ভাইয়া তুমি?

সাদ ভাইয়া শুনতেই উল্টো দিকে ঘুরে দ্রুত হেঁটে রুমে গেলো;

আরিফা ওখানেই হাসতে লাগলো!

আরিফা: নাম শুনেই ভয় পেয়ে গেল।দেখলো ও না আদো আছে কিনা!

_______

হৃদি: ভালোবাসা সুন্দর,তাই না অরিন?

অরিন: হুমম অনেক?

বিথী: আচ্ছা তোর লাইফ পার্টনার কি রকম চাই?

হৃদি: এ আবার কেমন প্রশ্ন?

বিথী: পা’গলী!প্রত্যেক মেয়ে যাকেই ভালোবাসুক না কেনো,তাদেরও ইচ্ছে আছে তার লাইফ পার্টনার একটু অন্যরকম হয়!

অরিন নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,

অরিন: আর সবার মত আমারও হয়তো কিছু ইচ্ছে আছে..প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে…যদিও এগুলো কল্পনায় সুন্দর..নিজের অধিপতির নিকট আর্জি হিসেবেও বলা যায়…আমি এমন একজন চাই যে আমার সব রকমের পাগলামি মেনে নিবে!আমার উদ্ভট উদ্ভট কথাতে প্রশান্তি অনুভব করবে!আমার চরিত্রকে আগলে রাখবে…হুট হাট আমায় নিয়ে পাগলামি করবে!কাউকে তোয়াক্কা না করে হালাল ভাবে আমার কেয়ার করে যাবে…এমন এক অধিপতি যে কোনো এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধায় আমার কাছে আবদার করবে বৃষ্টি বিলাসের জন্য!এমন এক জায়গায় যেই বিলাসের সাক্ষী থাকবে কেবল বৃষ্টির পানি,মেঘ আর প্রকৃতি!কোনো এক পূর্ণিমার রাতে হুট করেই ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলবে,”চলো আজ চন্দ্র বিলাস করি!”যার কাঁধে মাথা রেখে চন্দ্র বিলাস, জোৎস্না বিলাস সব করতে পারবো।
হুট করেই কোনো এক নির্জন রাস্তায় তার বাহু জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে হাঁটতে বলবে!অবশ্যই মধ্যরাত হওয়া উচিত!
কোনো এক হুট তোলা রিকশায় দুইজনে হাজার হাজার খুন শুটিতে শহর ঘুরবো!
কোনো এক নদীর পাড়ে বসে দুজন পা ভিজিয়ে নানান রকম গল্প করবো!
কোনো এক মধ্যাহ্ন সময়ে কুলফি খাবো দুইজনে….সব শেষে এমন একজন হবে সে যে কোনো বিশেষ দিন কে আখ্যায়িত না করেই প্রতিটা সকালেই বলবে,”ভালোবাসি আমার অর্ধাঙ্গিনী”।রাসূল সাঃ এর সুন্নাত অনুযায়ী কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে কাজে যাবে!এগুলো হয়তো কল্পনায় হয়!তাইতো বলে মানুষ!যে,”কল্পনায় রঙিন,বাস্তব যে রঙহীন!কল্পনাতেই মানুষ সুখী!”তাহলে একটু কল্পনা করতে দোষ কোথায়?(~লেখিকার ইচ্ছে~)

হৃদি: বাস্তব জীবন কঠিন!কিন্তু কোথাও না কোথাও প্রশান্তি রয়!সেটা হয় পরিবারের মানুষ নয় প্রিয় মানুষ!

বিথী মুচকি হেসে ফোন কেঁটে সাইডে রাখলো!অরিনের প্রতিটা কথা আদ্রিয়ান শুনেছে!হয়তো ইচ্ছে জানতে নয়তো পূরণ করতে!…কে জানে জীবনটা ঠিক কোন দিকে মোড় নিবে!!অবুঝ দিনের গল্প গুলো এখন বাস্তবের রূপ নিচ্ছে!যদি এটাও নেয়..তবে মন্দ কি?

#চলবে….

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_১৯

বধূ বেশে লাল বেনারসি পরিহিত অরিনকে দেখে দুই ভাইয়েরই বুকে মোচড় দিলো!ভাবতেই অবাক লাগছে..তাদের বোন আজ চলে যাবে!

অরিন: কিরে তোরা দুইজন ওখানে কি করিস?

অরিনের কথা শুনে দুই ভাই চোখ মুছে ওর কাছে গেলো।অরিন মলিন গলায় জিজ্ঞেস করলো,”কাঁদছিলি?”

আকাশ: কাঁদতে যাবো কোন দুঃখে?

অরিন: আমি দেখলাম যে!

আদিব: বেচারা আদ্রিয়ান এর কথা ভেবে খারাপ লাগলো!ওর লাইফটা ঝালা’পালা হয়ে গেলো রে অরিন!

অরিন কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালো!

অরিন: আর তো কিছুক্ষন!এখনও এভাবে প’চা’নি দিবি?

দুইজনের মুখ মলিন হয়ে গেলো!ভাই বোনদের এই সমাহারে অরিন হলো প্রাণ ভোমরা!একে ছাড়া চলবে কিভাবে?

দুই ভাই পরম আবেশে বোনকে জড়িয়ে ধরলো!অরিন বুঝতে পারলো ওরা কাঁদছে!

অরিন: আরে এই ভাইয়া,তোরা কাঁদছিস কেনো?আমি তো আবার আসবো!

বলতে বলতে নিজেই কেঁদে দিল! যতই আসুক না কেন!থাকতে তো হবে এদের ছাড়াই!

______

উঠোনে হই হুল্লোড় পরে গেলো “বর এসেছে” বলে!অরিন চুপটি করে জানালার কাছে দাড়ালো! এখান থেকে আদ্রিয়ানকে দেখতে পাচ্ছে ও!লাল শেরওয়ানি পরিহিত এই যুবকটি ওর অধিপতি হবে ভাবতেই অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেলো।হুট করেই অস্বস্তি হচ্ছে ওর!ভয় করছে!কি হবে না হবে এই ভেবে!অস্বস্তি তে পায়চারি শুরু করে দিয়েছে!

ওদিকে গেট ধরে দাড়িয়ে আছে হৃদি,বিথী,তনয়া,সোহা!
লামিয়া দূরে দাঁড়িয়ে! ওর এখন এসব করলে লোকে কি বলবে?

আদিব: তুই এখানে দাড়িয়ে কেনো?

লামিয়া: দেখছি!

আদিব: যা ওরা তো গেটের টাকা নিবে ,তুই নিবি না!

লামিয়া গাল ফুলিয়ে বললো ,”আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে,এখন কি এসব মানায়?”

আদিব হাসলো!লামিয়ার গাল টেনে বললো,”বিয়ে কোনো বন্দী শিকলে আবদ্ধ কারাগার নয়!এটি একটি মিষ্টি বন্ধন!বিয়ে হয়েছে বলে নিজের আরেক বোনের বিয়েতে মজা করবি না? যা ওদিকে!”

লামিয়া প্রফুল্ল হয়ে বললো,”যাবো?”

আদিব মৃদু হেসে বললো,”যা..”

লামিয়াও ওদিকে গেলো।

হৃদি: এটা কি আদ্রিয়ান ভাইয়া ?আমাদের এত কিউট বান্ধবী কে আপনায় দিচ্ছি!মাত্র পঞ্চাশ হাজার চেয়েছি!

অনিক: ইহ,পঞ্চাশ হাজার কি ম’গের মুল্লুক?

হৃদি: ওই আপনি কেন কথা বলেন?

সাগর: তোমরা আমাদের ভাইকে ফাঁসিয়ে এত টাকা নিবে আমরা কিছু বলবো না?

তনয়া: টাকা দিলে ঢুকবে নাইলে না!

এক প্রকার ঝগড়া বেধে যাচ্ছে।অরিন পায়চারি থামিয়ে ওদের কান্ড দেখছে!

অবশেষে আদ্রিয়ান টাকা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো!যাওয়ার আগে অরিনের রুমের জানালার দিকে তাকালো! থমকে গেলো অরিন!ভয়,লজ্জা সব যেনো একসাথে ঘিরে ধরেছে ওকে…

অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হলো।বিদায় এর সময় ঘনিয়ে এলো!
অরিনের মা: নতুন জীবন তোর সুখের হোক!

লামিয়া: আর একদম কাঁদবি না!পে’ত্নী লাগবে কিন্তু!

সবার চোখেই পানি,সব শেষে ওরা গাড়িতে উঠলো!গাড়ি ছাড়তেই আদ্রিয়ান অরিনের দুই হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,”যখন মন চাইবে,শুধু বলবে।আমি নিজে এসে দিয়ে যাবো!তাও কান্না করবে না!সহ্য হয় না অরি পাখি ,প্লিজ!”

অরিন কিছু না বলে তাকালো!যেনো মানুষটির মুখই বলে দিচ্ছে,ওর চোখের পানি সইতে পারছে না!হাসলো অরিন!লোকটা বড্ড উন্মাদ।

_______

বাসর ঘরে বসে আছে অরিন!তনয়া ওরা সবাই একটু আগেই ওকে বসিয়ে দিয়ে গেছে!ওর বড্ড ভয় করছে! জড়ো সড় হয়ে বসে আছে ও!তখনই ভয়ের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়ে আদ্রিয়ান আসলো!অরিন নিজেকে সামলে সালাম দিল।আদ্রিয়ান ও উত্তর নিলো!

আদ্রিয়ান: চলো!

অরিন ভ্রু কুচকে তাকালো!এখন মধ্য রাত!বিকেলে রওনা দিয়েও বেশ রাত হয়েছে।এই অসময়ে আবার কোথায় যাবে?

অরিন: কোথায়?

আদ্রিয়ান: গেলেই দেখতে পাবে!

আদ্রিয়ান অরিনকে নিয়ে ছাদে গেলো!অরিন আরেকটু অবাক হলো দোলনা দেখে!আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে দোলনায় বসলো!

আদ্রিয়ান: চন্দ্র বিলাস উইথ মেরি অর্ধাঙ্গিনী!

অরিন চমকে উঠলো!না কল্পনা নয়,বাস্তব!

আদ্রিয়ান: নিজের অর্ধাঙ্গিনীর ইচ্ছে না পূরণ করে থাকি কিভাবে?

অরিন নিষ্প্রাণ চোখে তাকালো!পাওয়াটা কি বেশি হয়ে গেলো না!হুমম!একটু বেশি ই!বেশ অনেক্ষণ দুজন একান্তে সময় কাটালো।অরিন এটাও বুঝতে পারলো আদ্রিয়ান ওকে সময় দিয়েছে নিজেকে স্বাভাবিক করার!

ফজরের সময় দুইজন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে ঘুমালো!

______

রিসিপশনের দিন

গাল ফুলিয়ে বসে আছে অরিন!

তনয়া: হয়েছে কি আপু?

অরিন: তিন শয়’তান এখনও আসেনি!

সোহা: আরে তাই বলে এভাবে মুড অফ রাখবে? চলো নিচে!

দুইজন অরিনকে নিয়ে নিচে নামলো!

আদ্রিয়ান: জনাবার মুখ এমন কেন?

তনয়া: অগ্নি ভাইয়া,হৃদি আর বিথী আপু এখনও আসেনি বলে!

আদ্রিয়ান: এসে যাবে!তোমরা থাকো,আমি দেখছি!

আদ্রিয়ান বাইরে গেলো!এরই মাঝে ওরা এসে পড়লো!

তনয়া আর সোহা স্টেজে উঠলো নিজেদের পারফরম্যান্স করবে!উহু,নাচের না!অন্য কিছু!

তনয়া: আপনাদের এক গল্প দেখাবো!সেটাই হবে আমাদের পারফরম্যান্স!

সোহা প্রজেক্টর অন করল!অরিনের গ্রাম!

তনয়া: গ্রামের মিষ্টি মেয়ে অরিন!পরিবারের প্রাণ ভোমরা..হাসি খুশি মেয়েটা দারুন চঞ্চল…সেই চঞ্চল ময়ী রাজকুমারীর রাজ্যে এসে পৌঁছালো রাজকুমার….

সোহা: রাজকুমার আদ্রিয়ান!তার রাজকুমারীকে প্রথমে বিরক্ত মনে করলেও এক কালে খুনসুটির মাঝে হুট করে ভালোবেসে ফেলে!আর রাজকুমারী তার অবুঝ দিনের মাঝেই রাজকুমারকে ভালোবেসে গেলো!বুঝতেও পারেনি!

তনয়া: অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে তারা আজ এক হলো!তাদের অবুঝ দিনের গল্প এখন বাস্তবের রূপ!

সোহা: এখন হবে গল্পের মূল আকর্ষণ!

লাইট অফ হয়ে গেলো… স্টেজ থেকে টিউনের আওয়াজ আসতে লাগলো! ফোকাস লাইট গিয়ে পড়লো আদ্রিয়ান এর উপর!

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে গাইতে লাগলো,”অবুঝ মনে ঠিকানা, তুমি কি হবে
মুগ্ধ আমার প্রেমে, জুড়িয়ে রবে
মুখে বলো না, কে তোমার অনুভবে.. ও প্রিয়…”

অরিন মৃদু হাসলো..সেও তাল মিলালো

“আমার চোখের মাঝে, তুমি যে কালো
স্বপ্ন ভুবন জুড়ে, তোমারি আলো
আমি তোমাকে বেসেছি কত ভাল
ও প্রিয় গো…”

আদ্রিয়ান ওর দিকে হাত বাড়ালো!অরিন সেই হাত ধরলো…আদ্রিয়ান ওকে স্টেজে নিয়ে গেলো!অতঃপর দু জন একসাথে!

“তুমি আমার, তুমি আমার
এ সুখে হবে যে মরণ
বেঁচে আছি এই পৃথিবীতে
একটাই তুমি যে কারণ”

আদ্রিয়ান অরিনের দিকে তাকিয়ে রইলো, অরিনও সেই চোখে চোখ রেখে গেয়ে উঠলো,
“তুমি আমার, তুমি আমার
এ সুখে হবে যে মরণ
বেঁচে আছি এই পৃথিবীতে
একটাই তুমি যে কারণ”

____________

নির্জন রাস্তায় হেঁটে চলেছে আদ্রিয়ান!ওর পাশেই ওর হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে হাঁটছে অরিন!

অরিন: ধন্যবাদ ইংরেজ বাবু!

আদ্রিয়ান: কেনো?

অরিন: আমার জীবনে আসার জন্য!আমায় ভালোবাসার জন্য!আমায় আগলে রাখার জন্য!আমার ইচ্ছে পূরণের জন্য! সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ!

আদ্রিয়ান হাসলো!

অরিন: ভালোবাসি ইংরেজ বাবু!

আদ্রিয়ান থেমে গেলো সেই সাথে অরিনও!এই প্রথম অরিন ওকে ভালোবাসার কথা বললো!মুচকি হেসে বলল,”ভালোবাসি অরি পাখি!”

_____
কয়েকদিন পর আদ্রিয়ান ল্যাপটপে কাজ করছিলো!

অরিন: কি করছেন ইংরেজ বাবু?

আদ্রিয়ান: ভার্সিটি এডমিশনের ফরম ফিল করছি!বাই দা ওয়ে,তুমি পড়াশোনা করছো না কেনো?ভার্সিটির এক্সাম দিবে না নাকি?

অরিন চট জলদি আদ্রিয়ান এর সামনে বসল!

অরিন: আমি ভার্সিটি পড়বো?

আদ্রিয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”সংসারী হওয়ার প্ল্যান করছো?তাহলে বাদ দেও!আগে পড়াশোনা কমপ্লিট করো তারপর বাকি চিন্তা!”

অরিন এখনও বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছেনা!

আদ্রিয়ান: দেখো অরিন,তোমাকে আগে নিজের যোগ্যতা রাখতে হবে,নিজে স্বাবলম্বী হতে হবে!যাতে আমি কখনো না থাকলেও তুমি অসহায় না হয়ে পরো!তোমাকে নিজের অ্যাবিলিটি রাখতে হবে!

অরিন কিছু না বলেই আদ্রিয়ান কে জড়িয়ে ধরলো!

অরিন: সব করবো,সব…কিন্তু এটা বলবেন না আপনি আমার সাথে থাকবেন না!জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আপনাকে চাই!সব করতে রাজি,শুধু আপনি থাকলেই চলবে!আমার আপনাকেই চাই!ইংরেজ বাবু!

আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো!মেয়েটা পাগলীও বটে!ভাবতেই অবাক লাগে!শুরুর দিকে যেই মেয়েকে এতটা বিরক্ত মনে করতো তাকে ছাড়াই এখন ওর চলে না!তাই হয়তো বলে মানুষ পরিবর্তনশীল!তবে ও চায় না ওর আর পরিবর্তন হোক! কখনোই না!

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে