অবুঝ দিনের গল্প পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
1600

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_২০(অন্তিম পর্ব)

অরিন: আরে আরে ওই ফুলটা ওদিকে লাগান! হ্যাঁ হ্যাঁ!এবার পারফেক্ট!

অরিনের মা: কি করছিস তুই?

অরিন: এদের ডেকোরেশন লেভেল একদম জিরো মা!তাই বুঝিয়ে দিচ্ছি!

অরিনের মা: আমি স্পষ্ট দেখলাম তুই লাফিয়ে কুদিয়ে বেড়াচ্ছিস!আচ্ছা অরিন বলতো?তুই এখন একজন ডাক্তার!এরকম আচরণ তোকে বানায়!বড় হলি এখনও বুদ্ধি হলো না?

অরিন: উফ মা!

অরিনের মা: সব দোষ আদ্রিয়ানের,তোকেg কেন যে একটু শাসন করে না ও!

আদ্রিয়ান: আমাকে নিয়ে কি কথা হচ্ছে শুনি!

অরিনের মা: দেখো আদ্রিয়ান!সকাল থেকে ওর শরীর খারাপ,তার উপরও ও লাফালাফি করেই যাচ্ছে!তুমি একটু সামলাও তো!আমি যাই!

বলেই হাঁটা লাগালো!

আদ্রিয়ান: অরিন!

অরিন: আজকে তনু , আরু আর সোহার বিয়ে !আমি যদি মজা না করি তাহলে কে করবে?

আদ্রিয়ান অরিনকে কাছে টেনে নিয়ে সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে বললো,”মজা করতে নিষেধ করিনি!শুধু একটু খেয়াল রাখো!সকাল থেকে কয়েকবার বমি করেছো!শরীরটা দুর্বল!একটু খেয়াল রাখো!প্লিজ!”

অরিন: আচ্ছা!আরে আরে ঐদিকে ফুল লাগাতে বলি নী!দেখলেন?ওরা একটাও কাজ ঠিক করে করছে না!আমি যাই!

বলেই কিছুদূর যেতেই ওর মাথা ঘুরে উঠলো!পড়ে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ধরলো।

আদ্রিয়ান: অরিন?ঠিক আছো?

অরিন: হুম!

আদ্রিয়ান: বার বার বলছি সাবধানে! ডক্টর এর কাছে যাবে!

অরিন: সামান্য বিষয়ে ডক্টর লাগবে না হাহ!

আদ্রিয়ান: তুমি এখন আমার সাথে থাকবে!

অরিন: কিন্তু…

আদ্রিয়ান: কোনো কথা না!

সময় স্রোতস্বিনীর মত বয়ে কেটে গেছে আরও পাঁচটা বছর,সেটেল হয়েছে সবাই এখন!অরিন,হৃদি,বিথী,অগ্নি তিনজনই ডাক্তার!সাগর তনয়াকে আরো আগে বিয়ে করতে চাইলেও তনয়ার ইচ্ছে ছিলো সোহা, আরু আর ওর একসাথে বিয়ে হবে!সেই হিসেবে অগ্নি ও সাদের নিজে সেটেল হওয়ার জন্য সবাই অপেক্ষা করেছে!আজ সবাই উপযুক্ত!হৃদি আর অনিকের বিয়ে হয়ে গেছে!লামিয়া আর আদিবের একটা মিষ্টি ছেলে হয়েছে,নাম আদিল! বিথীকেও শ্বশুর বাড়িতে আনা হয়েছে!

বিয়ে সম্পন্ন হলো!সবাই যখন গান বাজনায় ব্যাস্ত তখনই অরিনের মনে হলো ওর চারপাশটা অন্ধকার!জ্ঞান হারালো!এদিকে হুট করে অরিন পরে যাওয়ায় আদিল ভয়ে মিম্মি বলে কান্না করে দিলো!আদ্রিয়ান জলদি এসে ওকে কোলে নিয়ে ঘরে গেলো।আকাশ ডক্টরকে কল দিল!মিনিট খানেকের মাঝেই ডক্টর হাজির!

ডক্টর অনেক্ষণ চেক আপ করে বললো,”সিরিয়াস কিছু হয়েছে উনার”

আদ্রিয়ান ভীতু নয়নে তাকালো,”সিরিয়াস মানে?”

ডক্টর হেসে বললো,”মিষ্টি আনুন,নতুন অতিথি আসতে চলেছে!”

সবাই বিস্মিত!

আদ্রিয়ান: মানে ও…

ডক্টর: উনি মা হতে চলেছেন!

লামিয়া লাফিয়ে উঠে বললো,”সত্যি!”

সবাই ওর কাণ্ডে হাসলো!একে একে সবাই আদ্রিয়ানকে শুভ কামনা দিয়ে বের হয়ে গেলো!
আদ্রিয়ান চুপটি করে অরিনের পাশে বসে ওর হাত নিজের মুঠিতে নিলো।একটু পর খেয়াল করলো অরিন এর জ্ঞান ফিরছে!

অরিন: ইংরেজ বাবু!

আদ্রিয়ান: কেমন লাগছে এখন?

অরিন: ভালো!

আদ্রিয়ান: ধন্যবাদ অরিন!

অরিন: কেনো?

আদ্রিয়ান: আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খুশির কারণ দেয়ার জন্য!

অরিন অবুঝের মত তাকিয়ে রইলো!

আদ্রিয়ান ওর কানের কাছে ফিস ফিস করে বললো,”উই আর গোইং টু বি প্যারেন্টস”

অরিন হটাৎ করে উঠে বসলো।

আদ্রিয়ান: আস্তে!এসময় কেউ এমন করে?

অরিনের হাত নিজের অজান্তেই পেটে চলে গেলো!

অরিন: মানে আমি…

আদ্রিয়ান হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো!অরিন ডক্টর হিসেবে একটু হলেও বুঝেছিল!কিন্তু তাও সিউর ছিল না!এখন কনফার্ম!দু হাতে মুখ চেপে ধরলো!

অরিন: আমি আমি…ইংরেজ বাবু..আমি মা হবো?আমাকেও একে মা ডাকবে?

আদ্রিয়ান হাসলো!অরিন এতটাই খুশি যে কি থেকে কি বলবে বুঝতে পারছে না!….এই মুহূর্ত টা কেবল একজন মা ই বুঝতে পারে,সে যে কতটা খুশি!

_______

গাল ফুলিয়ে বসে আছে অরিন! প্রেগন্যান্সির তিনমাস চলছে…কিন্তু কথা সেটা না।কথা হলো আজ ওদের বিবাহ বার্ষিকী!আর আদ্রিয়ান কাজে গিয়ে বসে আছে!একবার উইশ ও করেনি!আর আজ আর সব দিনের মত সকালে উঠে,”ভালোবাসি অর্ধাঙ্গিনী” টুকুও বলেনি!অভিমান হয়েছে খুব ওর!লোকটা এত বেখেয়ালি হলো কেনো আজ?আর আজকেই কেনো হতে হলো?

এমন সব ভাবনায় বিভোর ছিল তখন হুট করে আদ্রিয়ান আসলো!অরিন ভ্রু কুঁচকালো!এই বিকেল টাইমে তো উনার আসার কথা না!আদ্রিয়ান অরিনকে বললো জলদি রেডী হতে!একটা দাওয়াত আছে!অরিন ভেং’চি কাটলো!দাওয়াত চিনে অথচ বিবাহ বার্ষিক মনে রাখে না!কই এর আগের বার তো ঠিকঠাক সব মনে রেখেছিল!

অরিন রেডী হয়ে নিলো,কালো পাড়ের ধূসর রঙের শাড়ি ,সাথে কালো চুরি আর চুল গুলো ছেড়ে দিল!চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা বেবী পিংক লিপস্টিক! ব্যাস,রেডী ও!হতে পারে সাধারণ সাজ।কিন্তু আদ্রিয়ান এর কাছে এতেই ওকে দারুন লাগছে! আদ্রিয়ানও কালো পাঞ্জাবি পড়ে নিলো!

দুইজন বেরিয়ে গেলো।

অরিন: দাওয়াত টা কিসের?

আদ্রিয়ান আমতা আমতা করে বলল,” একজনের বিবাহ বার্ষিকী”

অরিন বির বির করে বললো,”আর আমাদের বিবাহ বার্ষিকী উনার মনে নাই!”

গাড়ি থামলো সেই চিরচেনা লেকের সামনে!অরিন অবাক হয়ে দেখছে! লেকে মানুষ খুব একটা নেই!কিন্তু সাজানো!বিভিন্ন তারাবাতি দিয়ে ডেকোরেশন টা অসম্ভব সুন্দর!

অরিন: ইংরেজ বাবু!

বলে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকাতেই দেখলো আদ্রিয়ান এর হাতে বড় একটা বোর্ড যাতে লিখা,”হ্যাপী ম্যারেজ এনিভার্সারি ,অরি পাখি”

অরিন লিখাটা পড়ে কিছুক্ষণ থমকে গেলো!হুট করেই মুখে হাসি ফুটলো ওর!

অরিন: আপনি ভুলেননি?

আদ্রিয়ান: যেই দিন এ আমার অর্ধাঙ্গিনী পেয়েছি সেই দিনকে কি করে ভুলি?

অরিন: তো আগে বললেন না কেনো?

আদ্রিয়ান: ভাবলাম একটু ডিফারেন্ট করি এবার !
অরিন চুপটি করে আদ্রিয়ান এর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো!

অরিন: যার আপনার মত একজন আছে না!তার কখনো মন উদাস হতেই পারবেনা!

আদ্রিয়ান: হুশ..এবার ওদিকে আসো!

আদ্রিয়ান অরিন কে নিয়ে একটা টেবিলের কাছে গেলো।অরিন দেখতে পেলো ওখানে ওদের কিছু ছবি আর ফুল দিয়ে ডেকোরেট করা!আদ্রিয়ান ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো!বক্সের মধ্যে একটা পেন্ডেন্ট এগিয়ে দিয়ে বললো,

“রাতগুলো আমার নিষ্প্রভ মুহূর্ত তোমার সাথে !! সুধা পুরের গ্রাম দেখেছি,দেখেছি প্রকৃতির আনন্দ। তোমাকে আমি হঠাৎ পেয়েছি, হারিয়েছি সব ছন্দ। তপ্ত বালুতে ফুটতে দেখেছি রক্ত রঙ্গিন ফুল, হঠাৎ হাওয়ায় উড়তে দেখেছি, তোমার খোলা চুল! ভাঙ্গল আমার ভুল! বৈরাগ্যকে ভালোবেসেছি, ভালোবেসেছি তোমাকে! তোমাকে আমার সবই দিয়েছি, ভালবাসার এক ফাকে… অশান্ত এই মনের কৌটায় রয়েছ তুমি এখনও!নদীর তীরে ভালোবাসার নীড়ে আছো তুমি আজও !আমার অর্ধাঙ্গিনী!আমার সাথী!চিরদিন তোমায় আমার পাশে চাই!থাকবে তো?”

অরিন: জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে থাকবো!যতদিন রবে নিঃশ্বাস,ততদিন থাকবো ইংরেজ বাবু!

আদ্রিয়ান উঠে দাড়ালো!অরিন জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে!

আদ্রিয়ান: হয়তো সারাজীবনের প্রতিশ্রুতি দিতে পারবো না!কিন্তু এটা বলতে পারবো!শেষ নিঃশ্বাস এর আগ অবধি ছেড়ে যাবো না!অরি পাখি!

অরিন: আমার অবেলা দিনের সঙ্গী তুমি,
তুমি অভিমানের গল্প!

আমার আকাশ ভরা তারা তুমি,
তুমিই আমার অবুঝ দিনের গল্প!ভালোবাসি আদ্রিয়ান!ভালোবাসি!

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,”আমিও ভালোবাসি অরি পাখি!”…….

প্রকৃতির এই উৎকণ্ঠা মুহূর্তে আরো একবার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করলো,দুজন দুজনের নিকট!পরিপূর্ণ পাক হাজার মানুষের ভালোবাসা…….

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে