অবুঝ দিনের গল্প পর্ব-০৭

0
1064

#অবুঝ_দিনের_গল্প

#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান

#পার্ট_০৭

আস্তে আস্তে কেঁটে গেলো কয়েকটা দিন।এরই মাঝে অরিনের এডমিশন টেস্ট ও শেষ।আর টিকেও গেছে।আজকে ওর কলেজের প্রথম দিন।আদ্রিয়ান ওকে দিয়ে যাবে।

আদ্রিয়ান: তোমাদের কলেজের সামনে যেই ভার্সিটি..আমি ওইটাতেই পড়ি।

অরিন: কিন্তু আপনি তো জব করতেন

আদ্রিয়ান: ওটা পার্ট টাইম জব..অভিজ্ঞতার জন্য।

অরিন: আপনি কোন ইয়ারে পড়েন?

আদ্রিয়ান: লাস্ট ইয়ার!

অরিন: আচ্ছা

আদ্রিয়ান: বিথী,হৃদি জানে তুমি এই কলেজে এসেছো?

অরিন: না.. এডমিশন টেস্টে দেখা হয় নাই।তাই দেখার নো চান্স।

আদ্রিয়ান অরিনকে কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে বললো,”সো,বেস্ট অফ লাক ,ফর ইউর ফার্স্ট ডে।বাই”

অরিন: জি।

আদ্রিয়ান গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির দিকে গেলো।অরিন লম্বা শ্বাস নিয়ে গেটের ভিতরে তাকালো।বেশ নার্ভাস ও।গ্রামে প্রায় সবাইকেই চিনে।তাই তখন এত ভয় কাজ করেনি।নতুন পরিবেশ,নতুন মানুষজনের মাঝে বেশ ভয় করছে ওর।ভিতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না।এখন ওর মনে হচ্ছে বিথী,হৃদি কে জানানো উচিত ছিল।তাহলে কেও তো সঙ্গী থাকতো..আর ও তো এটাও জানে না,আদো ওরা চান্স পেয়েছে কিনা।হাজার কল্পনা জল্পনার মাঝে কেউ বলে উঠলো,”চলো”

পাশ ফিরে আদ্রিয়ানকে দেখে বলে উঠলো,”আপনি?”
আদ্রিয়ান: দেখো ,তোমার প্রথম দিন।তুমি সম্পূর্ণ অপরিচিত এই পরিবেশে।তাই তোমার সঙ্গে যাওয়া টা জরুরি।তো চলো!

অরিন হাসলো।এতক্ষণে একটু হলেও সাহস পেয়েছে।আদ্রিয়ান এর সাথেই পা রাখলো কলেজে।আদ্রিয়ান ওর ক্লাস খুঁজে ওকে নিয়ে যেতে লাগলো।যাওয়ার পথে ওকে সব কিছু চিনিয়ে দিতে লাগলো।

অরিন: আপনি কি আগে এখানে পড়তেন?

আদ্রিয়ান: হটাৎ এই প্রশ্ন?

অরিন: না যেভাবে সব চিনিয়ে দিচ্ছেন মনে হলো তাই ই।

আদ্রিয়ান হাসলো।

আদ্রিয়ান: তেমন কিছু না।আসলে ভার্সিটির সুবাদে সিনিয়র হিসেবে মাঝে মাঝে কাজে আসা হতো।

অরিন: কি কাজ?

আদ্রিয়ান: লাইক কলেজের কেউ ভুল করলে, অস’ভ্যতামি করলে বা টিজিং কমপ্লেইন যেগুলো টিচারদের বলা যায় না,ওরকম কাজ।আবার মাঝে মাঝে মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করতেও।

বলেই অরিন কে চোখ মার’লো।
অরিন: আপনি হেব্বি ফা’জিhল!

আদ্রিয়ান: আর এটা তোমার ক্লাস।

অরিন: ওকে,ধন্যবাদ!
নাক
আদ্রিয়ান: এখনও তেমন কেউ আসে নাই।আমি একটু থাকি,লোকজন কিছু আসলে নাহয় যাবো।

অরিন হাসলো।আদ্রিয়ান নিঃসন্দেহে একজন দায়িত্ববান মানুষ।

অরিন ক্লাসে বসলো।আদ্রিয়ান ও ওর বরাবর বসে আছে।সময়ের তুলনায় বেশ অনেকটা আগে এসেছে।লোকজন আছে তবে এই ক্লাসের লোকজন এখনও আসেনি।

অরিন: আচ্ছা এই মেয়েগুলো তো এই ক্লাসের না।তাহলে এত উকি ঝুঁকি মা’রে কেন।

আদ্রিয়ান: তোমায় কি আমায় কি চোখে পড়ে না?

অরিন: মানে?

আদ্রিয়ান: আরে আমার মত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে তোমার সাথে বসে আছে।সেটা চক্ষে পড়ে না?

অরিন: আবার বলেন!

আদ্রিয়ান: কি?

অরিন: এখন যা বললেন..

আদ্রিয়ান: বললাম আমার মত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে..
ওকে থামিয়ে.

অরিন: এরপরের টা!

আদ্রিয়ান: সেটা তোমার চোখে পড়ে না।

অরিন: উহু আপনি চক্ষে বলছেন!

আদ্রিয়ান ভরকে গেলো।

অরিন: যাক,দা গ্রেট ইংরেজ বাবু কিছুটা খাঁটি বাংলা বলতে শিখেছে।

আদ্রিয়ান হাসলো।এই মেয়ের সাথে থাকলে মুড খারাপ হওয়ার চান্স নেই।ইতো মধ্যে অনেকে এসে পড়ছে।

আদ্রিয়ান: তো..সবাই আসছে।এখন থাকো তুমি।ক্লাস শেষে আমি পিক করবো।বাই

অরিন: ওকে,কিন্তু বাই না..আল্লাহ্ হাফেজ বলুন!

আদ্রিয়ান হেসে বলল,”আল্লাহ্ হাফেজ!”

অরিন: আল্লাহ্ হাফেজ।

আদ্রিয়ান চলে গেলো।অরিন কিছুক্ষণ যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো ।

অরিনের ভালো লাগছে না।অনেকক্ষণ হলো,বিথী আর হৃদির কোনো খবরই নাই।

ক্লাসে হৃদি ঢুকতেই হেসে উঠলো।

বিথী: পাগলের মত হাসছিস কেনো?

হৃদি: অরিনকে এতই মিস করছি যে এখন মনে হচ্ছে ও সামনেই বসে আছে ।

বিথী সামনে তাকিয়ে নিজেও অরিনকে দেখতে পেলো।এদিকে অরিন গালে হাত দিয়ে ওদের কাণ্ড দেখছে আর মজা নিচ্ছে।

বিথী: সত্যি!আমিও ওকে দেখতে পাচ্ছি!

হৃদি: তাই?

বলে দুইজন আবারও সামনে তাকালো ভাবুক ভঙ্গিতে।দুইজনের কি একসঙ্গে ভ্রম হচ্ছে?এবার অরিন ওদের রিয়েকশন দেখে হেসে দিল।

অরিন: কু*ত্তি গুলো আমি সত্যিই আছি!

হৃদি আর বিথী চমকে উঠলো।

হৃদি: বিথী আমাকে চিমটি দে তো!

বিথী: তুই আগে আমায় দে!

দুইজন দুইজনকে চিমটি দিলো।দুইজন এবার বুঝলো এটা সত্যি ।দুইজনই অরিনের দুই পাশে বসে পড়লো।

হৃদি: তুই এখানে?

বিথী: কিভাবে?

হৃদি: বল!

অরিন: শান্ত হো!বলছি!

অরিন সবটা বললো!

হৃদি: তাহলে তুই আমাদের সাথেই পড়বি?

অরিন: হুমম

বিথী: ইয়ে..

বলেই দুজন অরিনকে জড়িয়ে ধরলো।

টিফিন টাইমে তিনজন মিলে ঘুরছে।

হৃদি কথা বলছে আর হাত নাড়াচ্ছে।এরকম পর্যায়ে হুট করেই করো নাকে লাগলো।লোকটি ওমা বলে চেঁচিয়ে উঠলো।বিথী ,অরিন বেশ ভয় পেলো।কলেজের প্রথম দিনে না জানি কি হয়।গ্রামে থাকতে কিছুটা শুনতো শহরের ব্যাপারে।

হৃদি: সরি সরি!

অনিক: চোখ কই থাকে?এত ফড়িং এর মত লাফিয়ে লাফিয়ে কথা বলা লাগে?

হৃদি: আসলে দেখতে পাইনি!

অনিক: আমার নাক!

হৃদি: বেশি লেগেছে?

অনিক: না না!বেশি কেন লাগবে?বেশি লাগলে তো আর ব্যাথা করতো না তাই না?

হৃদি: এইযে?অত জোড়েও লাগেনি যে আপনি চিল্লাচ্ছেন!

অনিক: আসো তোমাকে দিয়ে দেখাই!

হৃদি চট করে অরিন আর বিথীর পিছে গিয়ে দাঁড়ালো।

হৃদি: আমার মত পিচ্ছি মেয়ের হাতের চো’ট খেয়ে আধ ম’রা হয়ে গেলেন।

অনিক: কি বললে?

অরিন: ভাইয়া সরি! ও একটু বেশি লাফায়।ওর হয়ে ক্ষমা চাচ্ছি!

অনিক: আরে অরিন না?

অরিন: জি ভাইয়া!

অনিক: তুমি এখানে?

অরিন: এখানে এডমিশন নিয়েছি।

অনিক: ওহ, তো এই ফড়িং বুঝি তোমার বান্ধবী?

হৃদি: এই ফড়িং কে?আমি হৃদি।একদম উল্টা পাল্টা নাম দিবেন না। পেঁচা মুখো!

অনিক: আজ তাড়া আছে।নয়তো যে কি করতাম!

বলেই হন হন করে চলে গেলো।

হৃদি: নয়তো কি করতাম..(বলেই ভেঙ্গিয়ে দিল)

ওর রিয়েকশন এ অরিন আর বিথী হেসে দিল।

হৃদি: তুই ওকে চিনিস কিভাবে?

অরিন ওকে সব বললো।

“এক্সকিউজ মি”

কথার মাঝে কারো আওয়াজ শুনে তিনজন তাকালো।

বিথী: জি?

“আমি অগ্নি,তোমাদের ক্লাসমেট”

হৃদি: তো আমরা কি করবো?

অগ্নি: না মানে আমি নতুন।আসলে তোমরাই একটু ফ্রী মাইন্ডেড লাগলো।আর সবাই কেমন ভাব দেখায়।তাই ফ্রেন্ডশিপ করতে এলাম।

অরিন: আচ্ছা আচ্ছা!

অগ্নি: হবে ফ্রেন্ড?

অরিন মুচকি হাসলো,

অরিন: আমি অরিন!আমরা সবাই গ্রাম থেকে এসেছি।

অগ্নি: ওহ এইজন্য।গ্রামের মানুষদের মন পিউর থাকে।

অরিন হাসলো।এইভাবেই আড্ডা জমালো চারজন।
কলেজ ছুটিতে আদ্রিয়ান এসে ওকে নিয়ে গেলো।

আদ্রিয়ান: কেমন কাটলো দিন?

অরিন: অনেক সুন্দর!

আদ্রিয়ান: ক্লান্ত বেশি?

অরিন: না,বেশ ফুরফুরে।

আদ্রিয়ান: তো ঘুরতে যাবে?

অরিন: কোথায়?

আদ্রিয়ান: তোমাদের গ্রামে তুমি আমাকে ঘুরিয়েছো।এখন আমি তোমায় শহর ঘুরাবো।

অরিন: তনু,সোহা?

আদ্রিয়ান: ওরাও সেখানেই আছে।

অরিন: তাহলে চলুন!

_________

আদ্রিয়ান: শহরের লেক সাইড এটা।

অরিন এক পাশে খেয়াল করলো তনু,সোহা আর আরিফা লেকের পাশে বসে গল্প করছে। ও ওদের কাছে এলো।আদ্রিয়ান যাবে তখনই ওর ফোন কল এলো রোজের।

রোজ: ঘুরতে যাবি?

আদ্রিয়ান: অলরেডি চলে এসেছি!

রোজ: লেক পারে?

আদ্রিয়ান: হুম

রোজ: ওয়েট আমরা সবাই আসছি।

আদ্রিয়ান: ওকে!

আদ্রিয়ান ওদের কাছে বসলো।

কিছুক্ষণের মাঝেই সবাই চলে আসলো।আদ্রিয়ান ওদের সাথে কথা বলছে ।

রিখিয়া: হাই অরিন!

অরিন সালাম দিল।

রিখি ওর ব্যাবহারে মুগ্ধ হলো।ওরা আলাপ করছে তখন রোজ ও যোগ দিল।ছেলেরা এক টিমে গল্প করছে।আর এদিকে মেয়েরাও।সবাই বেশ মিশে গেলো ইতো মধ্যে।

সন্ধ্যায় ওরা বাড়ি ফিরলো।

তনয়া: আপু!

অরিন: হুমম?

তনয়া: আদ্রিয়ান ভাইয়ার ফ্রেন্ড আছে না?

অরিন: কত ফ্রেন্ড ই তো আছে!

তনয়া: আরে সৌরভ ভাইয়া!

অরিন: হুমম তো কি হয়েছে?

তনয়া: আমি তোমার পাশে বসে দেখেছি।উনি শুধু তোমার দিকে তাকায়।তোমাকে মনে হয় পছন্দ করে।

অরিন: তোর এত নজর যায় কেন?

তনয়া: আরে এভাবে তাকালে যে কেউ ই বুঝবে।

অরিন কিছু বললো না।বাইরে থেকে আদ্রিয়ান সবটা শুনলো। ও নিজেও খেয়াল করেছে।ব্যাপারটা মোটেও ওর ভালো লাগে নি।ওর কেমন রাগ হচ্ছে।কিন্তু কেনো হচ্ছে সেটা বুঝছে না।অরিন ওর ফুফাতো বোন বলে কি এমন?নাকি…আর কিছু ভাবলো না।চোখ মুখ শক্ত করে রুমে গেলো।নিজেকে নিজেই বকলো।যেই জিনিস ওর আগামী দিনের জন্য নিষিদ্ধ সেই জিনিসকে ও প্রশ্রয় দিতে পারবে না।অরিনকে এখন ও এড়িয়ে চলবে ও।সম্পূর্ণ!

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে