অবাধ্য অনুভূতি পর্ব-০৮ | Bangla Emotional love story

0
2329

@অবাধ্য অনুভূতি
#পর্ব_০৮
#লেখিকা_আমিশা_নূর

“প্রেম,মামা আসবে।তখন মামা’র সাথে খেলতে পারবে।”(রাফিয়া)
“হুয়াট?মাহির আসছে?”

মিহুর চিৎকার শুনে রাফিয়া কানে আঙ্গুল দিয়ে কচলাতে কচলাতে বললো,”ইশ রে!কান গেলো।আমার ভাই আসছে এতে তোর কী?”
“ছোট ভাবি,তোমার ভাইয়ের জন্য আমার মনে তো লাড্ডু ফুটে আছে।”
“এ্যাহে হে,লাড্ডু ফুটেছে।তোর কী মনে হয় মাহির সিঙ্গেল?”
“সিঙ্গেল হোক বা মিঙ্গেল হোক।এতে আমার কী?মিহু তো ডিরেক্ট শাদি কারেগা তেরা ভাই কো।আজ মেরা ইয়ার কা শাদি হে,আজ মেরা… ”
“মিহু,তুই এতো ছ্যাচড়া ক্যান?রাফিয়া বারণ করছে তো।”

অধরা’র কথা শুনে তার কথা নকল করে মিহু বললো,
“মিহু তুই ছ্যাঁচড়া ক্যান?নিজে কী হ্যা?কাল রাতে ফিসফিস করে কার সাথে কথা বললি ৩ঘন্টা?”

মিহুর কথায় রাফিয়া’র সামনে অধরা থতমত খেলো।ছোট থেকে অধরা আর রাফিয়া যেনো এক আত্মা এক প্রাণ।অধরা কোনো কিছুই আজ পর্যন্ত রাফিয়া’র থেকে কিছু গোপন করেনি আর না রাফিয়া করেছে।অধরা আমতা আমতা করে বললো,

“আমার ক..কল আসছে গেলাম।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ।কাল রাতের কল হবে আর কী..”
“মিহুওও,” (অধরা)

মিহুকে ধমকে অধরা চলে যেতে চাইলে রাফিয়া তার হাত ধরে ফেললো।অধরা রাফিয়া’র দিকে তাকাতে দেখলো তার মুখটা ভার।কঠিন কন্ঠে রাফিয়া বললো,”আমার থেকে তাহলে সব লুকানো হচ্ছে তাহলে?ছেলেটা কে?”
“ও ছেলেটা,রোদ।প্রেমটেম করিনা।জাস্ট কথা বলি।”
“রোদ মানে সেদিন মার্কেটে যে ছেলেটাকে দেখেছিলাম।তোর নাম্বার কোথায় পেলো?”
“আমার থেকে চেয়ে নিছিলো সেদিন।”
“বাহ বাহ!তলে তলে এতো কিছু আর আমি কিছু জানিনা।”

রাফিয়া আর অধরার কথার আগামাথা মিহু কিছু বুঝছে না।কদিন আগে মার্কেটে অধরা,তিহান, রাফিয়া আর সাথে প্রেম গেছিলো।মিহুর পরিক্ষা থাকায় সে যেতে পারেনি।আর মার্কেটে কি হয়েছে সেটাও মিহু জানেনা।মুখ ফুলিয়ে মিহু বললো,

“তোরা মার্কেটে গিয়ে ফিল্ম তৈরি করে ফেললি আর আমার জন্য কি’না শুধু চকলেট নিয়ে আসলি?আমি কী প্রেম নাকি?তোদের প্রেমকাহিনীও তো শুনতে ইচ্ছে করে।”

মিহুর কথা বলার স্টাইল দেখে অধরার চোখ কৌটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।মিহু প্রতিবার প্রেমের কাছ থেকে চকলেট চুরি করে আর সে কিনা বলছে সে প্রেমের সমান না?

অধরা সোফায় বসে বললো,”সেদিন মার্কেটে প্রেম হারায় গেছিলো আর রোদ খোঁজে এনে দে।এরপর ভাইটু আর রাফিয়া মিলে শপিংমলে ঢুকে যায়।আর রোদের সাথে আমি,প্রেম আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন নাম্বারও আদান-প্রদান হয়।এরপর ফোনে কথা হয়েছে।”
“বাট তোর লজ্জা পাওয়া,লুকিয়ে কথা বলা তো অন্যকিছুর আবাশ দিচ্ছে।”(রাফিয়া)
“আবাশ তাবাশ কি..কিছুনা।”
“অধরা,তোর সময়টা আমি পার করে একটা বাচ্চার মা হয়ে গেলাম।আবার আমার থেকে ফাঁকি দিস?”
“আহা কী আনন্দ!আকাশে বাতাসে,আমার অধু পাখি প্রেমে পড়েছে…ডানা মেলেছে।”
“মিহু,কথায় কথায় গান করবি না।”(অধরা)
“ওকে মিহু,চুপ কর।অধরা রেগে যাচ্ছে।”

মিহুর কথা শুনে রাফিয়া,অধরা স্বজোরে হেসে উঠলো।তিনজন একসাথে আড্ডা দিচ্ছিলো তখন মাহিরের আগমন হলো।


শ্বশুর বাড়ির প্রথম ভাতের লোকমা মুখে তুলতেই সমুদ্র বুঝতে পারলো এটা সূচনার রান্না।সূচনা তার রান্নায় মসলাগুঁড়া বেশি দিয়ে ফেলে যার জন্য আলাদা করে বুঝা যায়।সমুদ্র মুখে দেওয়া ভাত শেষ করে সূচনার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মুখটা শুকিয়ে রেখেছে।এমন অবস্থায় সমুদ্রের কী বলা উচিৎ সেটা জানে না।তাই চুপচাপ খেতে লাগলো।তখন আমিশা আলম বললেন,

“আমি অসুস্থ বলে সব কাজ সূচনা একা হাতে করলো।রান্না কেমন হয়েছে?”
“জ্বী আন্টি ভালো।”

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সমুদ্র রুমে এসে দেখলো ভূমিকা খাতায় কিছু একটা লিখছে।সমুদ্র পেছনে থেকে নিচু হয়ে দেখলো ভূমিকা খাতায় লিখেছে,

“বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান,
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান!!”

এটুকু লিখে ভূমিকা নিচে রবীন্দ্রনাথের নাম দিয়ে দিলো।তখন সে অনুভব করলো কেউ তার গাড়ে উঞ্চ নিঃশ্বাস ফেলছে।ভূমিকা গাবড়ে গিয়ে মাথা ফিরাতেই সমুদ্রের মাথার সাথে লেগে গেলো।সমুদ্র ব্যাথা পেয়ে আহ আহ করতে লাগলো।ভূমিকা নিজের ব্যাথা পাওয়া জায়গায় হাত দিয়ে কচলাতে কচলাতে বললো,”উফ!কী করছিলেন আপনি?”
“আমি কী করছিলাম?তুমি কী করলে এটা?”

ভূমিকা হাত কচলানো থামিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে বিরক্তিকর চেহেরা নিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।ভূমিকা সমুদ্রের ব্যাথা পাওয়া জায়গায় হাত লাগাতে গিয়েও লাগানো না।সে চুপচাপ সরে গেলো।

তখন সমুদ্র জিজ্ঞেস করলো,”রাতে খেলে না কেনো?”
“ইচ্ছে করেনি।”
“ইচ্ছে করেনি বললে হলো?”
“আমার ইচ্ছে না করলে আমি কিছু করিনা।”

সমুদ্র আর কিছু বলার সাহস পেলো না।ভূমিকা টেবিলে বসে উপন্যাসের বই পড়তে লাগলো।সমুদ্র ভূমিকা’কে উদ্দেশ্য করে বললো,”সুটকেস কোথায় রেখেছো?”
“সুটকেস?সুটকেস থেকে তো সব কাপড় বের করে ফেলছি।”
“তুমি বলো সুটকেস কোথায়?”
“এনে দিচ্ছি।”

ভূমিকা আলমারি’র উপর থেকে সুটকেস নামিয়ে দিলো।তখন সমুদ্র কী করবে তা দেখার জন্য দাঁড়িয়ে রইলে সমুদ্র বললো,”নিজের কাজ করো এখন।আমি সুটকেস উপরে তুলে রাখবো।”

সমুদ্রের নির্দেশ পেয়ে ভূমিকা টেবিলে বসে পড়লো।কিন্তু আড়চোখে দেখার চেষ্টা করছে সমুদ্র কী করবে?কিন্তু সমুদ্রের শরীরের আড়ালের জন্য কিছু দেখছে না।

সমুদ্র সুটকেস থেকে কালো রংয়ের ডায়েরি’টা বের করলো।ডায়েরিটা রেখেছিলো সুটকেসের উপরে অংশে যাতে ভূমিকা না দেখে।ভূমিকা’কে আড়াল করে সমুদ্র ডায়েরিটা নিয়ে বেলকোনিতে গেলো।

প্রথম দেখা,
আজ কলেজে একটা রুমে আমি আর উনি আটকে পরি।অদ্ভুত ভাবে উনি আমার অজানা হয়েও সারারাত আমার খেয়াল রেখেছেন।প্রথমে ভয়ে ছিলাম কোনো নরপশু ভেবে।কিন্তু না!উনার কাছে আমি সেইফ।আমার মনে এক অদ্ভুত হাওয়া বইছে।এর নাম কর প্রেমহাওয়া ডায়েরি?

দ্বিতীয় দেখা,
আজ এতিমখানায় বাচ্চাদের জন্য বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে গেছিলাম।আর জানো ডায়েরি?আজ আমি তাকে আবার দেখেছি।সে নিজ হাতে বাচ্চাদের খাইয়ে দিচ্ছিলো।উনার সাথে সেদিন কথা বলার জন্য জানতে পারি তার দাদা’র জন্মবার্ষিকী’র দিন সে এখানে এসে বাচ্চাদের খাওয়ায়।আমিও সেদিন বাচ্চাদের নিজের হাতে খাইয়ে দিলাম।তখন বাচ্চাদের হাসি দেখে মনে হয়েছিলো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ!আমাকে এক আলাদা আনন্দের সাথে দেখা করিয়েছেন উনি।

এবার মনে হয় আমি তার প্রেমের সাগরে ডুব দিলাম ডায়েরি!

তৃতীয় দেখা,
আজ তার অন্যরুপ দেখলাম।ভীষণ রাগী!এতো রাগে কেনো?

একটু নাহয় অসাবধানে পথ চলছিলাম আর ওমনি এসে রাগারাগি শুরু করে দিলো?কিন্তু জানিস ডায়েরি তাকে না আজ আমার বড্ড আপন মনে হয়েছে।একদম তোর মতো আপন!

চতুর্থ দেখা,
প্রায় একমাস পর উনার সাথে দেখা হলো।এতোদিন শুধু একটুখানি দেখা জন্য কতো কী করতাম,কিন্তু দেখা মিলেনি।তাকে না দেখার ব্যাথা আমায় জানান দিচ্ছে এটা কেমন রোগ!

সূচি’র সাথে আজ শপিং করতে আসলাম।আমার মুড ভালো না দেখে সূচিই জোর করে নিয়ে এসেছে।

শপিংমলে এসে হঠাৎ তাকে দেখে ফেললাম।তাকে দেখে কেনো যেনো আমার খুব কান্না পাচ্ছিলে ডায়েরি।তার সামনে কথা বলতে পারছিলাম না।তাই আমি শপিংমল থেকে বেরিয়ে আসি।

আজ আমি অনুভব করছি ডায়েরি আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি!কিন্তু সে কি আমাকে ভালোবাসে?

পঞ্চম দেখা,
আজ আমি সূচি’র বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করেছি।জানিস ছেলেটা কে?আমার সে সূচির ভালোবাসা!

ছোট থেকে সূচি’র আর আমার চয়েস একরকম বলে কী এটাও এমন হবে?খুব কষ্ট হচ্ছে ডায়েরি!মনে হচ্ছে কেউ যেনো আমার ভিতরে হাতুড়ি দিয়ে আঘাড করছে।ভাঙ্গা কাঁচের মতো মনটা যেনো টুকরো টুকরো হয়ে গেছে!কী করবো আমি ডায়েরি?

পারছি না আমি ডায়েরি অনুভূতি আটকাতে।কী করবো?আমার অনুভূতি যে বড্ড অবাধ্যতা করছে!

তারপরের কয়েকটা পেইজ উল্টালো সমুদ্র।সব পেইজই সাদা।তারপর সব শেষের পেইজে লিখা,”পারিনি আমি আমার অনুভূতি আটকাতে।দিন যত গড়াচ্ছে মনে হয় তাকে তত ভালোবেসে ফেলছি।তারপরও আমি সহ্য করে থাকবো।লুকিয়ে রাখবো আমার অবাধ্য অনুভূতি।আজই তাকে নিয়ে আমার শেষ লেখা।আর আসবো না নিজের অনুভূতি নিয়ে তোর কাছে ডায়েরি।”

ভূমিকা তাকে শুরু থেকে ভালোবেসে এসেছে তার সমুদ্র তার বিন্দুমাত্র টের পাইনি।কিন্তু এখন আফসোসের চেয়ে সমুদ্রের আনন্দ হচ্ছে এটা ভেবে যে ভূমিকার সাথেই তার বিয়ে হলো।নাহলে তো একেবারের জন্য হারিয়ে যেতো।সব কিছু নিয়তির খেলা!
.
.
“ইন্না-লিল্লাহ,মাহির কখন আসলে?”
“বিকেলে এসেছি।একটুপরই চলে যাবো।”
“কী বলছো চলে যাবো?থেকে যাও আজ রাতে।”
“না না দুলাভাই।”
“তোমাকে একা বসিয়ে রেখে গেলো কোথায় সব?মিহু,রাফিয়া..”

তিহান উঁচু স্বরে সবাইকে ডাকতে লাগলো।তখন অধরা আর রাফিয়া নিচে আসলো।ওরা আসতেই তিহান বললো,”মাহিরকে প্রেমের সাথে খেলতে দিয়ে তোমরা সবাই কোথায় গেলে?”
“ও প্রেমের সাথে খেলছিলো তাই।” (রাফিয়া)
“মিহুকে দেখছিনা।কোথায় ও?” (তিহান)
“মিহুকে ভূতে ধরেছে।রাতের বেলা ছাঁদে বসে আছে।”(অধরা)
“ইন্না-লিল্লাহ!ভূওওত।”

তিহানের রিয়াকশন দেখে সবাই হেসে উঠলো।মিহুকে ছাড়া ওরা চারজন আড্ডা দিচ্ছিলো।তখন মাহির ওয়াশরুমে যাবে বলে উঠে গেলো।

ছাঁদে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে মিহু চাঁদের দিকে চেয়ে আছে।তাকে এমন গম্ভীর চেহেরায় খুব কম সময় দেখা যায়।তবে যখন এরকম চেহেরা করে তখন সৌন্দর্য নিয়ে চাঁদও তার কাছে হার মানে।

মিহু’র কানে ভেসে আসছে পায়ের আওয়াজ।এই পায়ের আওয়াজটা মিহুর চেনা।সে খুব ভালো করে জানে এখন তার দিকে সে এগিয়ে আসছে।মিহু চোখ বন্ধ করে রইলো।তখন চেনা কন্ঠস্বরে কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,”মাঝরাতে চাঁদ দেখার শখ জাগলো কেনো?”

মিহু সেই অবস্থায় বললো,”তোমার সাথে এক সপ্তাহ পর দেখা হলো।মাহির তুমি কী আমাকে মিস করো না?”

মিহু নিষ্পাপ চাহনিতে মাহিরের দিকে তাকালো।এমন ছলছল চাহনি মাহিরের বুক কাঁপানো জন্য যথেষ্ট।মাহির তার বা’হাত মিহুর গালে রেখে বললো,

“‌কী করবো?এক পেসেন্টের অবস্থা খারাপ ছিলো বিধায় চট্টগ্রাম যেতে হলো।”
“আর আমি?আমি পেসেন্ট না?তুমি আমাকে অসুস্থ করছো।”
“সরি গো!তোমাকে বিয়ে করে সারাজীবনের জন্য নিজের কাছে রেখে দিবো।”
“বিয়ে করো আগে।”
“চলো এখন বিয়ে করবো।”
“না না,আগে অধরা’র বিয়ে হবে তারপর আমার।এতোদিন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করবো।”
“হাহ।”

তারপর দু’জনে রাতের সৌন্দর্যের মালিক চাঁদকে দেখতে লাগলো।চাঁদ নিঃস্বার্থ ভাবে নিজের সবটুকু দিয়ে চারিদিক সুন্দর করে।কেউ কী পারে তার মতো নিঃস্বার্থ হতে?

[চলবে]

বি.দ্রঃভূলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে