অপ্রিয় প্রিয়জন পর্ব-০৬

0
366

#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-6

শপিং থেকে বেরিয়ে দুজনে রেস্টুরেন্টে গেলো কিছু খাওয়ার জন্য। স্যার এসবের কোনো দরকার ছিলোনা, বিশ্বাস করুন আমার কিছু খাবোনা।

আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি খাবে কিনা? আজ প্রথম আমার সাথে বাইরে এসেছো, তাও আমাকে হেল্প করতে আর আমি কিনা কিছু না খাইয়ে ছেড়ে দেবো? আচ্ছা! তুমি কি এটা চিন্তা করছো যে তুমি খেলে আমার টাকা শেষ হয়ে যাবে। বলেই চোখ টিপ দিলো মেঘ।

নাহ নাহ স্যার, আমি এমন কিছুই ভাবিনি। নিজের নখ খুঁটতে খুঁটতে বললো বৃষ্টি।

নখটা এবার ভেঙ্গে যাবে এমন অত্যাচার করলে ওর উপর, বেচারাকে আর কষ্ট দিওনা। আচ্ছা তুমি কি নখটাকে আমি ভেবে এমন অত্যাচার করছো নাকি? মিটিমিটি করে হেসে বললো মেঘ।

ইশ স্যার আপনি এভাবে বলছেন কেনো, আপনি আমার কাছে কেমন মানুষ সেটা আপনি জানেন না। আমি আপনাকে নিয়ে এসব কথা কল্পনাও করতে পারবোনা জীবনে।

আচ্ছা তাহলে বলো কি ভাবো আমার ব্যাপারে। আমিও একটু শুনি মিস. বৃষ্টি আমার ব্যাপারে কি ভাবে। মেঘের উৎসাহটা বেশিক্ষণ টিকলোনা কারন একজন ওয়েটার এলো খাবার পরিবেশন করতে। দুজনে অনেক গল্প করে খাওয়াটা শেষ করে।________________________

সময় কারোর জন্য থেমে থাকেনা। দেখতে দেখতে আরও দুটো বছর কেটে গেছে। আজ বৃষ্টি নিজের ডিগ্রী হাতে পাবে, যে দিনটার জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করেছে আজ সেই দিনটা এসে গেছে।

আমরা আমাদের কলেজের সবচেয়ে বেশী নম্বরপ্রাপ্ত ছাত্রী ড: বৃষ্টির হাতে ডিগ্রী সনদ তুলে দেওয়ার জন্যে স্টেজে ডেকে নিচ্ছি ড: আহাদ হাসান মেঘকে।

কথাটা শোনার সাথে সাথে বৃষ্টি আস্তে আস্তে স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়, পা গুলো যেনো আজ চলছেইনা। অনেক কষ্টে স্টেজে গিয়ে পৌছায়। ওর সবথেকে বেশি খুশি লাগছে কারন এই মানুষটার হাত থেকে জীবনের এত মূল্যবান জিনিসটা পেয়েছে আজ।

বৃষ্টি আজ কিন্তু শুধু ট্রিট দিলে কাজ চলবেনা, অন্য কিছুও দিতে হবে। মেঘ বৃষ্টির কানে ফিসফিস করে এই কথাটা বলায় বৃষ্টি হেসে দেয়। এই দুটো বছরে মেঘ আর বৃষ্টির খুব সুন্দর বন্ডিং তৈরি হয়েছে। দুজনে দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ডের মত। অবশ্য সবটা মেঘের জন্যই হয়েছে। এতোগুলো দিনে কম জ্বালাতন করেনি বৃষ্টিকে। মাঝে মাঝে হুটহাট করে অচেনা সেজে একদিকে প্রেমিক পুরুষ এর ভূমিকা পালন করেছে তো অপরদিকে সবসময় বন্ধু হয়ে বৃষ্টির পাশে থেকেছে। আজও সরাসরি বলতে পারেনি মেঘ বৃষ্টিকে ভালবাসার কথা। তবে মাঝে মধ্যেই হুটহাট করে নিজের প্রেমিক ইচ্ছে গুলো পুরন করে নিত বৃষ্টির অজান্তে। এখনও বৃষ্টি জানেনা কে বৃষ্টিকে এইভাবে হুটহাট করে বিরক্ত করে। যেহেতু কখনও সে খারাপ কিছু করেনি, বা চেষ্টাও করেনি তাই বৃষ্টিও এটাতে এত গুরুত্ব দেয়নি।

মেঘ বৃষ্টিকে আজ একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। আজকে নিজের মনের কথাগুলো বৃষ্টিকে বলবে বলে ভেবে নিয়েছে, যদিও খুব ভয় হচ্ছে এটা ভেবে যে যদি বৃষ্টির উত্তর না হয় তখন কি করবে। কারন এতগুলো দিনে বৃষ্টিকে যতটুকু চিনেছে ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে বৃষ্টি আর ভালোবাসা থেকে তো অনেকটাই দূরে। তবুও অনেক সাহস করে আজ এসেছে মেঘ।

ভেতরে ঢুকে বৃষ্টি পুরো অবাক, পুরো জায়গাটা খুব সুন্দর করে সাজানো আছে ফুল আর বেলুন দিয়ে, সামনে একটা টেবিলে একগুচ্ছ লাল গোলাপ রাখা আর সাথে টেবিলে ফুলের পাঁপড়ি আর ক্যান্ডেল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। এগুলো দেখে ভীষণ খুশি হয় বৃষ্টি। এতক্ষনে এটা বুঝে গেছে যে এই সবটা মেঘের কাজ। ঘুরে ঘুরে সবজায়গায় দেখতে গিয়ে হটাত করে থেমে যায়, আর চোখ থেকে চুপ করে একফোঁটা পানি পড়ে। বৃষ্টি কখনও ভাবেনি এরকম ভাবে কখনও ফারহানকে দেখতে পাবে ও।

ফারহান একটা টেবিলে খাবার সার্ভ করছিল আর সেই অবস্থায় ফারহানকে দেখে বৃষ্টির পুরোনো ক্ষত তাজা হয়ে গেলো, দৌড়ে ওখান থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসে। বৃষ্টিকে এভাবে আস্তে দেখে মেঘও আসে ওর পিছনে। মেঘ বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে তাই তখনই কিছু না জিজ্ঞাসা করে বৃষ্টিকে গাড়িতে বসিয়ে নদীর ধারের জায়গাটাতে যায়। কারন এই জায়গাটা বৃষ্টির খুব পছন্দের।
তারপর গাড়ি থেকে বৃষ্টিকে নামিয়ে এক হাত ধরে আস্তে অস্তে সামনের একটা বেঞ্চে নিয়ে গিয়ে বসায়। এতোগুলো সময় বৃষ্টি একটা কথাও বলেনি, যেনো পাথরের মূর্তির মত চুপচাপ হয়ে গেছে।

বৃষ্টি! মেঘের ডাকে ওর দিকে তাকায় বৃষ্টি। তারপর বলে কোনো কোনো জায়গা খুঁজে পাননি আপনি? এখানেই কেনো নিয়ে যেতে হলো আপনাকে? যে পুরোনো স্মৃতি গুলোকে ভোলার জন্য আমি আমার জন্মস্থান, নিজের বাড়ি সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছি, আজ পাঁচটা বছর পর আবার সেই পুরোনো আঘার টা তাজা হয়ে গেলো। জানেন কতটা কষ্ট করে আমি স্বাভাবিক হয়েছিলাম?

বৃষ্টি আমি তো তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা। কি বলছো এগুলো? প্লিজ আমাকে সবটা ক্লিয়ার করে বলো। বৃষ্টির হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে ভরসা দিয়ে কথাগুলো বললো মেঘ।

জানেন আমি তখন এস.এস.সি তে পড়ি, আমার পরিচয় হয় ফারহানের সাথে। আমি ছেলেদের সাথে কথা বলা খুব একটা পছন্দ করতাম না। কিন্তু কোনো কারণবসত ফারহানের সঙ্গ আমার খুব ভালো লাগে, ওর কেয়ার ভুল করলে শাসন করা, ভালোবেসে বন্ধুর মত আগলে রাখা সব বিপদ থেকে সব কিছু আমাকে ভিশন মুগ্ধ করে, জানেন কোনোদিন ওর পাশে অন্য কোনো মেয়েকে বসতে দিতোনা, ওই জায়গাটা সবসময় আমার জন্য রাখতো। একবার স্কুলে কানামাছি খেলতে গিয়ে সোহেল আমাকে ধরতে গিয়েছিল আর আমি একদম ছাদের ধারে চলে গিয়েছিলাম, ফারহান দৌড়ে আমাকে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরেছিল। সেদিন আমি বুঝেছিলাম যে এটাই আমার সবথেকে নিরাপদ স্থান, যেখান থেকে কেউ আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা। জানেন সবসময় সবজায়গায় নিজে হেরে গিয়ে আমাকে জিতিয়ে দিতো। একবার আমি সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম ভীষণ, সেলাই দিয়ে হয়েছিল। সেদিন থেকে আর কখনো আমাকে সাইকেল চালাতে দেয়নি।

শূন্যের দিকে তাঁকিয়ে নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করছে বৃষ্টি, আর এদিকে আর একটা মন যে কষ্টে, যন্ত্রনায় ভেঙ্গে যাচ্ছে সেটার কোনো হুস নেই তার। কিছুক্ষন থেমে আবারো প্রথম থেকে সবটা বলে মেঘকে। এবার যেনো নিজেকে কিছুটা হালকা লাগছে মেঘের। কিন্তু রাগ, সাথে ভালোলাগা দুটোই কাজ করছে। রাগ হচ্ছে ফারহানের উপড় কারন বৃষ্টিকে এত কষ্ট দেওয়ার জন্য, আর ভালোলাগছে কারন সেদিন ফারহানের বেইমানির জন্যই আজ সে বৃষ্টির এতটা কাছে।

জানেন আজ ফারহানকে এমন ওয়েটার অবস্থায় দেখে একদমই সহ্য করতে পারিনি আমি তাই চলে এসেছিলাম। জানিনা এমন কি হলো যে আজ ও এই জায়গায়। আমাকে সবটা জানতে হবে স্যার।

আচ্ছা তুমি কি এখনও ভালোবাসো ফারহানকে? এখনও ভুলতে পারোনি ওকে? মেঘের এমন প্রশ্নে এক পলক মেঘের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, ভালোবাসা কি এতটা সহজ? চাইলেই কি ভোলা যায়? আমার প্রথম ভালোবাসা ফারহান। আমি হয়তো কখনও ওকে ভুলতে পারবনা, তবে এখন আর ওকে ভালবাসিনা আমি। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে ভুলে যাওয়া সম্ভব নাহ ওকে, মনের কোথাও না কোথাও ও থেকেই যাবে সারাজীবন #অপ্রিয়_প্রিয়জন হয়ে। বৃষ্টির কথা গুলো শুনে বেশ কিছুটা কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে নেয় মেঘ। আর বৃষ্টিতো ভুল কিছু বলেনি। আর যদি মেঘ বৃষ্টিকে না পায় তাহলে কি ও নিজে পারবে বৃষ্টিকে একেবারে ভুলে যেতে? তাহলে বৃষ্টি কিভাবে ভুলবে?

মেঘ বৃষ্টিকে অনেক বুঝিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়। সারারাত দুজনে দুদিকে নিজেদের চিন্তায় নির্ঘুম রাত পার করে। পরের দিনই বৃষ্টি সৃজাকে ফোন করে। এতোগুলো দিন পরে দুজনে কথা বলায় অনেক কথা বলে, তারপর বৃষ্টি ফারহানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে বলে,

কলেজ লাইফেই দুজনে দুজনের অনেক কাছাকাছি চলে যায়, তাই তন্নী বারবার ফারহানকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। এদিকে ফারহান তখন বেকার তাই বাড়িতেও কিছু জানাতে পারছিলনা। হঠাৎই একদিন…….

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে