অপ্রিয় প্রিয়জন পর্ব-০৭

0
348

#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-7

বয়ঃসন্ধিকালের ভালোবাসার মায়ায় জড়িয়ে যে ভুলটা মানুষ সহজেই করে ফেলে সেটাই করে ফেলেছিল তন্নী আর ফারহান। কলেজ লাইফে বাকি অনেকের দেখাদেখি তারাও জড়িয়ে পড়ে শারীরিক মেলামেশায়। প্রথম প্রথম একটু ভয় হলেও পরবর্তীতে সেটা নেশায় পরিণত হয়। এটুকু শুনেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে শুরু করে বৃষ্টির। ভালবাসার মানুষটার এমন লীলাখেলা যেনো মেনে নিতে পারছেনা সে। কিন্তু তাও তাকে সবটা জানতে হবে, সামলাতে হবে নিজেকে। ফারহান যে তার নয়, কোনোভাবেই আর তার নেই। সে এখন অন্য একজনের অস্তিত্বে জড়িয়ে আছে, তার অস্তিত্বেও জড়িয়ে আছে অন্য একজন। আর এটা তারা ভুল করে নয় বরং নিজেদের ইচ্ছেতেই করেছে।

এইভাবে দুটো বছর যাওয়ার পর, আস্তে আস্তে তন্নীর ভয় হওয়া শুরু করে। যদি কখনও ফারহান ওকে ছেড়ে চলে যায়, বা যদি কখনও এসব অস্বীকার করে, এই ভয় থেকে শুরু হয় ওদের মধ্যে ঝামেলা। তন্নী প্রতিদিন ফারহানকে বিয়ের জন্য জোর করতে থাকে, আর এদিকে ফারহান বেকার তাই বাড়িতেও কিছু বলতে পারেনা। হটাৎ একদিন তন্নী ছু/ রি নিয়ে নিজের হাতে চেপে ফারহানকে ভয় দেখায়। আজই বিয়ে না করলে নিজেকে শেষ করে দেবে বলে হুমকি দেয়। ফারহান অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে তাও তন্নীর একটাই কথা এই বিয়ের ব্যাপারে এক্ষণই কাউকে কিছু বলবেনা। তারপর সেদিনই দুজনে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে। সাক্ষী হিসেবে সৃজাও ওদের সাথে ছিলো।

শেষের কথাটা শুনে যেনো থমকে গেলো বৃষ্টি। ফারহান যে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিয়েছে এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। বারবার তার ছিন্নবিচ্ছিন্ন হৃদয়কে প্রশ্ন করছে, ভালোবাসা এমন কেনো? তাকে বপাবনা জেনেও বারবার কেনো তার কাছে ছুটে যায় মনটা? সে অন্য কারোর জেনেও কেনো মেনে নিতে এত কষ্ট হয়? কেনো এতগুলো বছর পরও এতটা কষ্ট হচ্ছে? আচ্ছা এটা কষ্ট নাকি খারাপ লাগা? নিজের মধ্যেই উত্তরগুলো খোঁজার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে গেলো বৃষ্টি। আর বরাবরের মতোই শূন্য হাতে ফিরে এলো।

অনার্স কমপ্লিট করার পর তন্নীর বাড়ি থেকে ওর জন্য বিয়ে ঠিক করে। ওর মামাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবে। এসব শুনে এক রাতে দুজনে পালিয়ে যায়। বেচেঁ থাকার তাগিদেই আজ হয়তো এই অবস্থা ওদের।

••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
সারারাত ছটফট করে কাতরেছে মেঘ। ঠিক যেমন মাছকে জল থেকে ডাঙায় নিয়ে এসে ছেড়ে দিলে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে না পারার কষ্টে ছটফট করে মাঘ। আজ মেঘও ঠিক তেমনি তার বৃষ্টির জন্য কাতরাচ্ছে। একদিকে সে বৃষ্টির কষ্ট মেনে নিতে পারছেনা, আরেকদিকে মেনে নিতে পারছেনা বৃষ্টির চোখে অন্য কারোর জন্য প্রবাহমান বর্ষন। বৃষ্টিকে হারিয়ে ফেলার ভয় জেকে বসেছে মেঘকে। বারবার মাথার মধ্যে ঘুরছে যদি এতগুলো বছর পর ফারহানকে দেখে আবারো বৃষ্টির মনে পুরোনো অনুভূতি। শান্ত, নিরামিষ ছেলেটাকে আমিষ বানিয়েছো তুমি। মেয়েদের থেকে পালিয়ে বেড়ানো ছেলেটাকে করেছো নিজের প্রতি আসক্ত, তোমার নেশায় পড়তে বাধ্য করেছো আমাকে। ভালোবাসায় ছিলো যার ভীতি, তাকে তুমি তোমার মিষ্টতায় ভুলিয়েছো। এখন তার ভালোবাসা থেকে তোমার কোনো মুক্তি নেই, তুমি নিজে থেকে আমার প্রেমে পড়বে বৃষ্টিমনি। শুধু সময়ের অপেক্ষা।

ঠোঁটে ব্যাখ্যা হাসি আর টলমলে চোখে মেঘ তাকিয়ে আছে বৃষ্টির ছবির দিকে। নিজের বেডরুমের একটা বড়ো অংশ জুড়ে শুধু বৃষ্টির ছবিতে ভরিয়ে রেখেছে মেঘ। হাজারও সাদা চামড়ার মেয়ের প্রতিও কখনও একপলক ঘুরেও তাকায়নি কখনও মেঘ অথচ আজ এই শ্যামরঙা মায়াবিনীর জন্য তার হৃদয় পুড়ে ছারখার। ভেবেই হাসি ফুটে ওঠে তার ঠোঁটে।

ড: বৃষ্টির হসপিটালে জইনিংয়ের আজ প্রথম দিন। একজন গাইনি ডক্টর সে। লাঞ্চ টাইমে মেঘ আর বৃষ্টি একসাথে ক্যান্টিনে গিয়ে গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ করে। আর বৃষ্টি মেঘকে এক জায়গায় নিয়ে যেতে চায় সেটাও জানায়। মেঘও হাসি মুখে তার কথা শোনে। তারপর দুজনই দুজনের মত ব্যাস্ত সময় পার করে।

হটাত করে এক পিচ্চি এসে বৃষ্টিকে একটা চিরকুট দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। বৃষ্টি অবাক হয়ে যায় হটাত এমন কাজে। তারপর কৌতূহলবসত কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করে,
বৃষ্টিরানী তুমি কি আমাকে পুরোপুরি পাগল করার ধান্দা করেছো নাকি? তোমাকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে ভীষণ মন খারাপ নিয়েও ছুটে এলাম হসপিটালে, আর এখন তো দেখছি তুমি আমাকে হসপিটালে অ্যাডমিট করার ব্যাবস্থা করছো। কেনো এতো পোড়াচ্ছো বলোতো আমাকে? তুমি তো দেখছি তোমাতেই মেরে দেবে আমাকে। মানলাম আজ প্রথম দিন তোমার তাই বলে এতো সেজেগুজে আসতে কে বলেছে তোমাকে? তুমি কি জানো তোমার ঐ গোলাপী ঠোঁটে জাম রঙটা কতটা মানিয়েছে? তুমি কি জানো তোমার ঐ ডাগর ডাগর চোখে কাজল কতটা মোহনীয় লাগছে?পুরো তুমিটাকেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে আজ। এই তোমার ঐ মেঘের সাথে এত কিসের মেলামেশা? দূরে থাকবে ওর থেকে। পুরোটা পড়ে বৃষ্টির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম, এত আবেগ অনুভূতি মিসৃত লেখা কেই বা লিখতে পারে এসব ভাবতে ভাবতে নিজের কেবিনে ঢুকতেই কেউ কাপড় দিয় চোখ বেঁধে দেয় বৃষ্টির।

মুখের উপর গরম কারোর নিঃশ্বাস পড়ায় বারবার কেপে কেপে উঠছে বৃষ্টি। আর সেই আগন্তুক আপন মনে দেখে যাচ্ছে তার প্রিয়সীকে। বেশ কিছুক্ষন মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করার পর ফু দিয়ে মুখের উপর পড়ে থাকা চুপ গুলো সরিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে সেগুলো কানের পাশে গুঁজে দিলো, এসব কাজে যেনো নিজের খেই হারিয়ে ফেলেছে বৃষ্টি। কোনরকমে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে কোমর জড়িয়ে আরো নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় সেই আগন্তুক। এবার যেনো নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ছে বৃষ্টির জন্য। স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সেই আগন্তুকের বাড়তে থাকা হৃদস্পন্দন আর সেই সাথে অস্থিরতা বাড়ছে তার মধ্যে। তারপর আগন্তুক মানুষটা অনেক চেষ্টা করেও আর নিজেকে আটকাতে পারলনা, নিজের প্রিয়সিতে শেষ পর্যন্ত নিমজ্জিত হয়ে পরলো, একের পর এক ছোট্ট ছোট্ট ঠোঁটের আদরে ভরিয়ে দিতে থাকলো প্রিয়শির ঠোঁটটা। অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো বৃষ্টির, বারবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে শেষে নিজের ঠোঁটটা মুখের মধ্যে পুরে নেয়। এতে যেনো আগন্তুক মানুষটা আরো বেশি মজা পায়। গালের দুদিকে চাপ দিয়ে বের করে আনে তার নেশালো বস্তুটা, তারপর টুপ করে নিজের অধর দিয়ে চেপে ধরে সেটা। বেশ কিছুটা সময় পর ছোট্ট একটা কামড় দিয়ে মুক্ত করে প্রিয়শীর অধর। তারপর কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বেশ জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয় দুজন। বন্ধ দরজার এই ছোট্ট রুমে যেনো দুজনের মাঝে প্রতিযোগিতা চলছে কে কত জোরে শ্বাস নিতে পারে। শুধু দুজনের নিশ্বাস ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছেনা।

আস্তে করে টিস্যু দিয়ে যত্নসহকারে ঠোঁটটা মুছিয়ে দেয় সেই আগন্তুক। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে পরেরবার যদি আবার ঠোঁটে লিপস্টিক দেখি তো এর থেকে বেশী কিছু করে বসবো। তারপর খট করে শব্দ হওয়ায় আর নিজের হাত দুটো মুক্ত পেয়ে তাড়াতাড়ি করে চোখের বাঁধনটা খুলতে লাগে বৃষ্টি। কে এই আগন্তুকটা সেটা তাকে আজ জানতেই হবে, এসব ভাবতে ভাবতে কোনরকমে চোখ থেকে কাপড়টা খুলে বাইরে বেরিয়ে কাউকেই খুজে পায়না। আবারো হতাশ হয়ে নিজের কেবিনে ফিরে এসে বসে বসে ভাবতে থাকে কিছুক্ষন আগে ঘরে যাওয়া ঘটনার কথা। আগের বৃষ্টি হলে এতক্ষনে নিশ্চই কেঁদে ভাসিয়ে দিতো। কিন্তু এই বৃষ্টি তো সহজে কাদেনা। তাই হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

বাইরে এসেই মেঘকে গাড়িতে অপেক্ষা করতে দেখে গাড়িতে বসে পড়ে বৃষ্টি। মিস. বৃষ্টি আপনি কি আজকাল খাবারের বদলে নিজের ঠোঁট খাওয়া শুরু করেছেন নাকি? মেঘের এমন কথার অর্থ বুঝতে পেরে একটু নড়ে চড়ে বসে বৃষ্টি। আয়নাতে নিজের ঠোঁট দেখে নিজেই অবাক হয়, অনেকটাই ফুকে গেছে। ইশ কে ছিলো ওই রাক্ষসটা কে জানে? আমার সুন্দর ঠোঁটটার কি অবস্থা করেছে দেখো। কি জবাব দেবো আমি এখন মেঘকে? সত্যিটা কি বলে দেবো? নাহ নাহ ছি ছি এসব কাউকে বলে নাকি। কি ভাবছি আমি এসব। এমন আকাশ পাতাল চিন্তার মাঝে আবারো মেঘের ডাকে হুস ফেরে বৃষ্টির। আসলে খাওয়ার সময় ভুল করে কামড় দিয়ে ফেলেছিলাম, তাই এমন ফুলে গেছে। বলেই নিজেকে অন্যমনস্ক করতে জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে বৃষ্টি।

চলবে?

#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#বোনাস পর্ব

তুমি কোথায় যাওয়ার কথা বলছিলে না আজ বৃষ্টি! মেঘের কথায় বৃষ্টি বেশ কিছুক্ষন ভেবে বলে, নাহ নাহ আজ থাক কাল যাবো আমরা। আসলে আমার ঠোঁট ত ভীষণ জ্বলছে, এখন আর ভালোলাগছেনা কোথাও যেতে।

সকালের স্নিগ্ধ আলো জানালার শুভ্র পর্দা গলিয়ে প্রবেশ করেছে রুমে। আলোছায়ারা খেলা চলছে পুরো রুমজুড়ে। নাম না জানা কয়েকটি ছোট পাখি, চিকচিক শব্দ তুলে উড়ে বেড়াচ্ছে ভেতর থেকে বাইরে। চতুর্দিকটা যেন আজ শুভ্রতার মায়া জড়ানো! এই শুভ্র পরিবেশে বৃষ্টির খুব ইচ্ছে হলো একটা শুভ্র রঙের কিছু পরার। আলমারি ঘেঁটে একটা শুভ্র রঙের চুড়িদার বের পড়ে পড়ে নিলো। এরই মধ্যে মেঘের কল আসায় সেটা রিসিভ করতে ওদিক থেকে মেঘ বলে,

মিস. বৃষ্টি এই অধম আপনার জন্য নীচে অপেক্ষা করছে, একটু তাড়াতাড়ি আসুন। মেঘের কথা বলার ধরন দেখে হেসে ফেললো বৃষ্টি, তারপর ফোনটা কেটে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লো।

শুভ্ররঙের কামিজ পরিহিতা বৃষ্টিকে আজ মনে হচ্ছে কোন রুপকথার রাজকন্যা! তার আলতো ভেজা দিঘল কালো চুলগুলো কোমড় ছুঁয়ে আছে। সদ্য স্নান করা কন্যার রুপ এতোটাও ঘাতক হবে পারে, তা মাথায়ই ছিল না মেঘের৷ গলা আর মুখের কাছটায় বিন্দু বিন্দু জমে আছে পানির ফোঁটা, মুখে নেই কোনো মেকাপের প্রলেপ।

বৃষ্টি আপনমনে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে চুল ঝাড়া দেয়।আর এতেই তার পিঠটা উন্মুক্ত হয়ে যায়। মেঘ তাড়াতাড়ি নিজের চোখ সরিয়ে নেয়, কিন্তু অজানা অনুভূতি আবার তার চোখকে বাধ্য করে আরেকটিবার তাকাতে তার প্রিয়তমার দিকে। ফর্সা পিঠটা দৃশ্যমান হতেই পরপর কয়েকটা ঢোক গিলল মেঘ। বুকের ভেতরটা তোলপাড় করছে তার৷ সে পিটপিট চোখ করে আবার তাকালো, চুলের পানিতে ভিজে আছে তার পিঠের একাংশ। আর তাকে এই রুপে লাগছে আজ অতিরিক্ত আবেদনময়ী।

সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় মেঘ। বুক ধরফর করা অস্থির অনুভূতি তার সম্পূর্ণ হৃদয়জুড়ে। আনমনেই বিরবিরালো সে,
এমন গলার জামা পড়ার কি দরকার তোমার? একদমই উচিত হয়নি তোমার এমন শুভ্ররঙের জামা পড়ার। পুরো হসপিটালে এতো এতো পুরুষ আর তুমি শুভ্রপরী হয়ে ঘুরবে!
কেন যেন আজ প্রথমবার বৃষ্টির ওপর বড্ড অভিমান হলো আজ তার। কিছু সময় বৃষ্টিকে বকে আবার নিজেকে নিজেই বকতে লাগলো মেঘ। এসবের মাঝে কখন যে বৃষ্টি এসে গাড়িতে বসে গেছে তার খেয়াল নেই। বৃষ্টির গুতা খেয়ে হুস ফিরল মেঘের। তাড়াহুড়ো করে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজেদের গন্তব্যের দিকে রওনা হয়।

দুপুরে লাঞ্চ বিরতিতে দুজনে সবেমাত্র ক্যান্টিনে এসেছে তখনই একটা ইমারজেন্সি কেস এসে পড়ায় বৃষ্টিকে ডাকতে আসে একজন নার্স। ম্যাম পেশেন্টের অবস্থা বেশ খারাপ, 9 মাস কন্টিনিউ চলছিল এই অবস্থায় বাথরুমে পরে গেছেন। প্লীজ তারাতারি আসুন। ঠিক আছে আপনি ওটি রেডি করুন আমি এখনই আসছি। এদিকে পেটে ভীষণ ক্ষিদে থাকায় মেঘের অর্ধেক খাওয়া বার্গারটাতে কামড় দিতে দিতে বেরিয়ে আসে ক্যান্টিন থেকে। বৃষ্টির কর্মকাণ্ডে মেঘ চোঁখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে, কোথা থেকে কি হয়ে গেলো যেনো কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। দৌড়ে বৃষ্টির পিছু নিতে নিতে আনমনেই রাজ্য জয়ের হাসি দেয় মেঘ। বৃষ্টি তার খাওয়া খাবার খেয়েছে ভাবতেই কেমন অন্যরকম এক অনুভূতি গ্রাস করছে তাকে। এদিকে বৃষ্টি ডোন্ট কেয়ার একটা অ্যাটিটিউড নিয়ে রিসেপশনের পাশ থেকে যাওয়ার সময় ভীড় দেখে থেমে যায়। তারপর ভীড় থেকে ভিতরে ঢুকে রিসেপশনিস্ট এর কাছে কি হয়েছে জানতে চাইলে উনি বলেন,
ম্যাম ওনার ওয়াইফ প্রেগনেন্ট আর পড়ে যাওয়ার পরে এখনই ওটিটে নেওয়া হয়েছে, অথছ উনি এখনো পেমেন্টও করেননি। মাত্র 5000 টাকা দিয়েছেন, যেখানে খরচ পুরো 20000 টাকা। আমি শুধু ওনাকে বলছিলাম যে ওনার কাছে যখন টাকা নেই তাহলে এত বড় হসপিটাল কেনো এনেছেন, কোনো সরকারি হসপিটাল নিয়ে যেতে পারতেন। এতক্ষন লোকটা বৃষ্টির দিকে পিছন ঘুরে ছিলো। রিসেপশনিস্ট এর কথা শেষ হতেই উনি সামনে ঘুরে মাথা নিচু করে বৃষ্টির কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করে বললেন, ম্যাম প্লীজ আমার ওয়াইফ আর বাচ্চাটাকে বাঁচান। ওরা ছাড়া আমার আর কেউ নেই। লোকটাকে দেখে কয়েক কদম পিছিয়ে যায় বৃষ্টি। এ কাকে দেখছে সে? ফারহান! সেদিনের আর আজকের ফারহানের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। নিজের সন্তানের জন্য এমন আকুতি। চোখ থেকে কয়েকফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। আর কাপা কাপা কণ্ঠে বলে উঠলো, ফারহান তুই! বলেই পড়ে যেতে নিলে পিছন থেকে মেঘ এসে নিজের বুকে ধরে নিলো বৃষ্টিকে। এদিকে নিজের নাম কারোর মুখে শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে বৃষ্টিকে দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে যায় ফারহান। তারপরও মাথা নিচু করে বলে প্লীজ তন্নী আর আমার বাচ্চাকে বাঁচা, ওরা ছাড়া আমার আর কেউ নেই। সবাইকে ছেড়ে চলে এসেছি আমি।

বৃষ্টির মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে সামলানোর জন্য মেঘ বৃষ্টিকে বললো, মিস. বৃষ্টি আপনি একজন ডক্টর। আর ডক্টরদের এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। গ্রো আপ বৃষ্টি। তুমি পারবে এই মানুষটার ওয়াইফ আর তার বাচ্চাকে সুস্থ করে ফিরিয়ে আনতে। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে তোমর উপর। মেঘের ভরসা দেওয়াতে নিজেকে স্বাভাবিক করে বৃষ্টি। তারপর রিসেপশনিস্ট এর উদ্দেশ্যে বলে, এই বিলটা আমি পেমেন্ট করবো। আপনি বাকি প্রসিডিওর কমপ্লিট করে আমার কেবিনে আসবেন। আপাততো নার্সকে তাড়াতাড়ি ওটি রেডি করতে বলুন।

ওটির সামনে দাঁড়িয়ে আজ প্রথম বারের মতো নিজেকে ভীষণ নার্ভাস লাগছে বৃষ্টির। যদি আজ তন্নীকে না বাঁচাতে পারে সে তাহলে কি মুখ দেখাবে সে ফারহানকে। এসব ভেবে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি। তখনই কাধে একটা ভরসার হাত পেয়ে আর বুঝতে দেরি হলনা এটা কে। পিছন ঘুরে শক্ত করে মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে। মেঘ আপনি প্লীজ আমার সাথে চলুন ওটিতে, আজ আমার আপনাকে ভীষণ দরকার, আপনার ভরসার, সাহসের ভীষণ দরকার আজ। বৃষ্টির মনের অবস্থা বুঝতে পেরে সেও যায় বৃষ্টির সাথে।

বেশ কয়েক ঘন্টা পর ওটির ভেতর থেকে একজন নার্স এসে তোয়ালে পেঁচানো একটা ফুটফুটে মেয়ে শিশু ফারাহানের কোলে দিয়ে যায়। কিছুক্ষন পর বৃষ্টি বেরিয়ে আসে ওটি থেকে আর বলে আপনার ওয়াইফ সুস্থ আছে। কিছুক্ষন পর কেবিনে দেওয়া হবে। আপনি একজন মেয়ে সন্তানের বাবা হয়েছেন। দুআ করবো আপনার মেয়ের সাথে কেউ যেনো এমন না করে যেমনটা আপনি অন্য একজন বাবার মেয়ের সাথে করেছেন। এটুকু বলেই নিজের কেবিনে চলে যায়, মেঘও যায় পিছু পিছু। কারন মেঘ জানে বৃষ্টির মনের উপর দিয়ে এখন কি ঝড় যাচ্ছে।

থ্যাংকস মেঘ। আজ আপনি না থাকলে আমি এতটা ভরসা পেতাম নাহ। সেদিনের পর কিছুদিন তন্নী আর ফারহান ওই হসপিটালে ছিল। তবে একবারের জন্যও বৃষ্টিতে ওদের মুখোমুখি হয়নি। যাওয়ার আগে ফারহান বৃষ্টির কাছ থেকে অনেকবার মাফ চায়, আর শুকরিয়া আদায় করে তাদের এই বিপদে পাশে থাকার জন্য। বৃষ্টি ফারহানের সামনে একটা কথা না বললেও ওরা চলে যাওয়ার পর হাউমাউ করে কাদতে থেকে। ভীষণ কষ্ট হতে থাকে তার ভিতরে, ভিতরটা জলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে যেনো, সেদিন তাড়াতাড়ি করে বাড়ি ফিরে আসে। মেঘকেও বলে আসেনা। ডিউটি শেষে মেঘ বৃষ্টিকে কেবিনে না পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে বৃষ্টি অনেক আগেই বাড়ি চলে গেছে। সাথে সাথে কল করলে ফোন বন্ধ বলে। এবার ভীষণ টেনশন হতে থাকে মেঘের। নিজের মনেই হাজারও রকম উল্টাপাল্টা চিন্তা এসে ভর করে, তাই বারবার বৃষ্টিকে কল করতে থাকে। কিন্তু বরাবরের মত একই উত্তর পায়, আপনার কাঙ্খিত নম্বরটির সাথে এই মুহূর্তে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছেনা।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে