অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-২০+২১

0
299

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২০ (স্পেশাল)

“বিবিজান এখনো সিম্পল কিস থেরাপি নিয়েছি। তাও আবার গালে। রাতে স্পেশাল বডি থেরাপি নেবো। এখন না হয় তোলা রইল। তুমি থাকলে সব রাতই আমার জন্য হানিমুন টাইপ। হয়ছে অনেক আদর করছি, যাও গিয়ে এবার আমার জন্যে খাবার আনো।”

স্বামীজান এর দিকে হা হয়ে তাকায় নাজীবা। প্রথমে আবেগে ভাসিয়ে শেষত ভেঙ্গে দিল। এটা কেমন কথা? আফরাজ এর কলার চেপে ধরে বলে,

“ঐ একে তো আবেগে ভাসিয়ে অপরাধ করলেন। তার উপর আবেগ ভেঙ্গে দূরে সরালেন। এমন এক ঘু’ষি দেবো নাহ্ সাত জম্মেও আর বিছানা থেকে উঠতে পারবেন না হুহ্।”

কৌশলে শাড়ির আঁচল ভেদ করে কোমরে হাত রাখল আফরাজ। পিলে চমকে উঠে নাজীবা। তার কোল থেকে নামতে চেয়েও পারল না। এতটা শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরেছে। বিবিজান এর কাঁপান্বিত ওষ্ঠের দিকে চেয়ে আসক্তির কণ্ঠে বলে,

“বিবিজান বুঝি স্বামীর আদর পাওয়ার জন্যে ছটফট করছো হুম?”

নির্লজ্জ লোকটা যে ইচ্ছেকৃত তাকে ফাঁদে ফেলতে চাইছে বেশ বুঝতে পেরেছে নাজীবা। সেও ভান ধরে। হাতজোড়া আফরাজ এর বোতামে রেখে আস্তে করে খুলতে লাগল। বিবিজান এর এহেন কাজে আফরাজ উম্মাদ হতে লাগল। সুখের জোয়ারে কবে ভাসবে সেই আশায় মগ্ন হতে লাগল‌। কিন্তু তার মগ্নতায় একরাশ জল ঢেলে পালিয়ে যায় মেয়েটা। আফরাজ দেখল তার কোল শূন্য হয়ে আছে। বরং সেই একমাত্র বান্দা যে, রুমে একলা বসে আছে‌। মেয়েটা তাকে এত বড় বোকা বানালো ভাবতেই সে রাগে গজগজিয়ে উঠে। রুম থেকে বেরিয়ে তৎক্ষণাৎ রান্নাঘরে গিয়ে মুখ ফসকে বলতে নিয়েও বলল না। ঢোক গিলল উল্টা। কেননা সামনে তার মা জননী দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই শ’য়’তানি হাসা হাসছে নাজীবা। ছেলে-কে অসময়ে রান্নাঘরের চৌকাঠে দেখে ভ্র বাঁকালেন মিসেস ফেরদৌসী। হাতের থেকে গ্লাভস খুলে ছেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

“কিরে ব্যাটা কড়া ঠান্ডায় রান্নাঘরে কি করছিস? তোর না খিদে পেয়েছে? তাই আমি আর বউমা মিলে তোর জন্য মজার খিচুড়ি রান্না করছি সাথে তরকারি হিসেবে মুগ ডাল। তুই রুমে যাহ্। খাবার রান্না শেষে ডাকব কেমন ব্যাটা?”

“আম্মু মানে বলছিলাম কি? আমার না শীত লাগছে কম্বল লাগবে।”

নাজীবা শ্বাশুড়ি মায়ের পিছে ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে আছে‌। বিধেয় তার মজার হাসি তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। আফরাজ সেই হাসি দেখে রাগে গজরাতে থাকে। মিসেস ফেরদৌসী নির্লিপ্ত গলায় বলেন,

“ব্যাটা যার যার রুমে তাদের জন্য কম্বল অনেক আগেই দেওয়া আছে।”

“নাহ্ দেওয়া নেই আম্মু। আমার কম্বল লাগবে এখনই মানে এখনই।”

“কিন্তু এখন কেমনে দেবো বাবা? আমি তো হাতে কাজ নিয়ে আছি। ওহ বউমা তুমি নাহয় যাও গিয়ে আলমারির নিচের ড্রয়ার খুলে দেখো। কম্বল পাবে।”

চোখ বড় করে তাকায় নাজীবা। শ্বাশুড়ির কথা তো আর অমান্য করতে পারবে না সে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে স্বামীর মুখের দিকে তাকায়। তার চোখ-মুখ জুড়ে শ’য়’তানি হাসি বিদ্যমান। ভ্রু নাচিয়ে রুমের দিকে আসতে ইশারা করল। নাজীবা ঠোঁট কামড়ে ঢোক গিলে বলে,

“আম্মা আমারই যেতে হবে? না মানে আমার থেকে তো ডালগুলো ভেজানো পাতিল থেকে নিয়ে অন্য পাতিলে নিতে হবে। না হলে তো….।”

তার কথার সমাপ্তি অব্দি হতে দিল না আফরাজ। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“ঐ কাজটা সহজ সেই কাজটা অবশ্য রহিমা করতে পারবে। আপনি যদি স্বামীর উপর মেহেরবান হোন। তবে রুমে এসে কম্বলটা শরীরে জড়ানোর ব্যবস্থা করে দিন।”

শেষ কথাটি বলে মায়ের চোখের আড়ালে চোখ টিপ মারল বিবিজান-কে। সে তো লাজুকতায় দৌড়ে স্বামীর পাশে কেটে রুমের দিকে ছুটল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) তার যাওয়া দেখে মিসেস ফেরদৌসী মুচকি হাসলেন। তিনি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন ব্যাপারটা। কিন্তু ছেলে আর ছেলের বউকে লজ্জায় ফেলতে চাননি। বিধেয় না বোঝার ভান ধরেই ছেলের বাচ্চার মত কথায় জবাবের উপর জবাব দিলেন। মায়ের দিকে তাকালে তিনিও তাকান। মায়ের মুচকি হাসি দেখে আফরাজ মাথা চুলকে মা-কে ফ্লাইং কিস ছুঁ’ড়ে দিয়ে চলে যায়। রহিমাও তখন রান্নাঘরে আসায় মিসেস ফেরদৌসীর আর কষ্ট করতে হলো না। মেয়েটা সব সামলে নেবে বলে তাকে পাঠিয়ে দিল।
আফরাজ রুমে এসে বিছানায় কম্বলের ভেতর লুকিয়ে বসে থাকা ব্যক্তিকে দেখে ভাবল তার বিবিজান। ফলে সে এসে জট করে জড়িয়ে ধরে। মুখটা বিবিজান এর মুখ বরাবর এনে বলে,

“এবার কেমনে পালাবে বিবিজান? আপনা-কে ধরা দিতেই হতো। তখন ফিলিং জাগিয়ে উধাও হওয়ার শোধ এখন তুলব।”

কোমরে হাত লাগাতে গেলেই পুরুষালী চিৎকারে আফরাজ ঘাবড়ে যায়। আকবর কম্বল সরিয়ে বলে,

“ভাইরে ভাই তুই তো দেখি শরীরের মধ্যে হাত দেওয়া শুরু করছিস! কোচ তো লিহাস কার দোস্তকা। আজকে না থামালে আমার ইজ্জত হরণ করে ফেলতি। তখন আমি আমার হবু সন্তান কে কি জবাব দিতাম? যে তার পিতা, পিতা হওয়ার আগেই হরণ হয়ে গেল। আমার বউটা অকালে স্বামী হরণের দায়ে কান্না করে জীবন কাটিয়ে দিতো? হে আল্লাহ আমি কোথায় মুখ লুকাবে এখন?”

আফরাজ বোবা হয়ে গেল। বউয়ের জায়গায় বন্ধুকে ফাজলামি করতে দেখে ধুমধাম মা’রা শুরু করে। আকবরও পাল্টা মা’র’ল। কিন্তু পারল না উল্টো দৌড়ে রুম থেকে পালালো। রাগে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আফরাজ এর। চোখ-মুখে পানি দিতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। নাজীবা পর্দা সরিয়ে বের হলো। স্বামীর মুখ আয়নার মাধ্যমে দেখতে পেয়েছে সে। অভিমান করল মনে হচ্ছে। হাত কুচলে ভদ্র নম্র হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। যতক্ষণ স্বামীর মুখে হাসি দেখতে পাবে না ততক্ষণ নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবে না নাজীবা। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে স্বচ্ছ কোমল রূপে বিবিজান কে দেখেও কোনো ক্রিয়ালাপ করল না আফরাজ। তোয়ালে মুখ মুছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ব্রাশ করে নেয়। নাজীবা কাঁপা গলায় বলে,

“আপ আপনি কি রাগ করছেন? দেখুন আমি শুধু মজা করছিলাম। ইচ্ছেকৃত কিছু করিনী। আপনি কষ্ট পাবেন যে জানলেন কখনো এমন কাজ করতাম না। কি হলো কথা বলছেন না কেন?”

নিশ্চুপে শার্ট বদলে রুম থেকে বের হতে গেল, নাজীবা রুখে দাঁড়ায়। আফরাজ ফোনের দিকে চোখ সরিয়ে একপলক বিবিজান এর মুখশ্রীর দিকে তাকায়। শান্ত চেহারায় অশান্তের রেশ। মনে মনে হাসি পেল তার। তবুও নিজের দাপট বজায় রেখে নাজীবা-কে সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। নাজীবার ছোট হৃদয় নড়বড়ে কেঁপে উঠল। স্বামীর কাছ থেকে এহেন প্রত্যাখান সহ্য হলো না তার। নিশ্চুপে স্বামীর পিছে পিছে গেল। ডাইনিং রুমে সবাই বসে আছে। জনাব ইসমাইল খিচুড়ির ঘ্রাণ শুঁকে বলেন,

“আহাহা আজ খিচুড়ি খাবো। খিচুড়ি দিয়ে নতুন বছরের আনন্দ শুরু হবে।”

মিসেস ফেরদৌসী মুচকি হাসলেন। খাদিজা বেগম লাঠি হাতে নিয়ে বসে আছেন। কোমল চোখে চেয়ে আছেন পরিবারের দিকে। কেনো জানি তিনি শরীরে অস্বাভাবিক ব্যাধি লক্ষণ করছেন। আজকাল কোনো ঘ্রাণ শুঁকেও বোঝতে পারেন না, দৃষ্টিদ্বয় ঘোলাটে বোঝা যায়। শ্বাশুড়ি কে নীরব দেখে মিসেস ফেরদৌসী গিয়ে আগলে চেয়ার টেনে বসিয়ে দেন। নিজ হাতে খাবারের প্লেটে খিচুড়ি মগ ডাল মেখে বলেন,

“আম্মাকে আজ থেকে আমিই খাওয়ে দেবো।”

খাদিজা বেগম আহ্লাদী হলেন। মাথা নেড়ে সায় দিলেন। কুসুমার হাত ধরে চেয়ারে বসাল আকবর। মেয়েটার শরীর বমি করার কারণে দূর্বল হয়ে পড়েছে। এখনো এক মাস হয়নি অথচ তার বউ বমি করতে করতে নাজেহাল অবস্থা। আকবর এর কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে মিসেস ফেরদৌসী বলেন,

“ব্যাটা বসে পড় তুইও খাঁ বউমারেও খাওয়ানোর চেষ্টা কর। বলি কি শোন আচারও রাখছি আচার মেখে খাওয়া দেখবি বমি আসবে না।”

‘জ্বি আম্মা আমার আচার খেতেই মন চাচ্ছিল।’ খুশির চোটে আকবর-কে চটজলদি আচার দিতে ইশারা করে। মিসেস ফেরদৌসী সবার প্লেটে খাবার দিয়ে নিজেও বসে পড়লেন। আফরাজ এসে চুপচাপ হয়ে নিজমনে খাবার বাড়ছে। নাজীবা তার পাশে বসে পড়ে। আফরাজ খাবার বেড়ে মাখতে লাগল। নাজীবার মন খারাপ হয়ে গেল। কেননা মানুষটা সবসময় নিজ হাতে খাওয়ে দিতো‌। একটু মজার কারণে রেগে খাওয়ে দেবে না? সেও খাবে না ভেবে উঠতে গেলে আফরাজ গম্ভীর গলায় বলে,

“দেখছ যখন খাবার বেড়েছি,তবে না খেয়ে উঠছো কেনো ?”

“না মানে আমি ভাবছি।”

“চুপচাপ বসো।”

নিশ্চুপে স্বামীর পাশে বসে যায়। আফরাজ এক লোকমা মুখের কাছে নিলে নাজীবা তৃপ্তি সহকারে খেতে লাগে। জনাব ইসমাইল দেখে তৃপ্তির হেসে মিসেস ফেরদৌসী কে খোঁচা মারলেন। তিনি ভ্রু কুঁচকে স্বামীর দিকে তাকিয়ে ‘কি’ ইশারা করলেন। জনাব ইসমাইল লাজুক হেসে এক লোকমা ভাত মিসেস ফেরদৌসীর মুখে পুড়ে দিলেন। পরিবেশটা থমথমে গেল। ড্যাব ড্যাব করা সকলের চোখজোড়া দেখে মিসেস ফেরদৌসী লজ্জায় পড়লেন। স্বামীর দিকে চেয়ে চোখ রাঙানির দিলেন। জনাব ইসমাইল ভড়কে যান। গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,

“ওমন আন্ডার মত তাকিয়ে আছিস কেন তোরা? যার যার খাবার খাহ্। তোরা বাপ-মায়ের সামনে বসে প্রেম করতে পারবি! আর আমরা প্রেম করলেই দোষ তাই না?”

সকলে আচমকা হেসে উঠল। খাদিজা বেগমও মুচকি হাসলেন। তৎক্ষণাৎ গম্ভীর হয়ে যায় আফরাজ। নাজীবা হাসলেও স্বামীকে চুপ হতে দেখে খুব খারাপ লাগল তার। সে ভাবল প্রতিবার তো আফরাজ তাকে সারপ্রাইজ করে। আজ নাহয় সে কিছু করুক। এই ভেবে সে আকবর-কে ইশারা করল। ভাবীর আকস্মিক ইশারা দেখে বুঝতে পারল না সে। তবুও সে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় ‘খাওয়ার পর’। নাজীবাও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঠিক আছে বোঝায়। আফরাজ সরু চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে হিংস্র চাহনি ফেলল। দু’জনেই ঘাবড়ে যার যার মত খেতে থাকে।

____

রাত ১১টা বাজে,
মিসেস হিয়া চিন্তায় পায়চারী করছেন। সকাল থেকে স্বামীকে কল দিয়ে পাচ্ছেন না। এখন রাতের বারোটা বাজতে আর একঘণ্টা সময়। মনেও কু ডাকছে। কোনো এক বিপদ নিশ্চয় ঘটতে চলেছে তা বেশ আন্দাজ করতে পারছেন। বাবাকেও জিজ্ঞেস করে ছিল কিন্তু ধমকিয়ে তাড়িয়ে দিলেন। তিনি বুঝেন না যে বাবার জন্য তিনি এতো ত্যাগ করেছেন, সে বাবা কেমনে এতো নিষ্ঠুরতা করতে পারেন। তবুও কোনো একদিন শোধরে যাবে বলে নিজের মনকে খামোখা বোঝ দিলেন। জনাব লিয়াকত আফরাজ এর বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন। তার সাথে দুজন ভাড়াটে লোক। তাদের কে ছবিটা দিয়ে ইশারা করে বেলকনির দিকে‌। শক্ত কণ্ঠে বলেন,

“আফরাজ এর বেলকনিতে ঢিল ছুঁ’ড়ে মারব। তুই গা’র্ন রেডি কর। বু’লে’ট যেন ঠিক কপাল বরাবর লাগে। অনেক টাকা খরচ করে তোদের কে আনছি। যদি নিশানা ভুল হয় তোদের দুইটারেই শ্বশুরের কাছে ছেড়ে দেবো।”

দুই লোক ভয় পেয়ে গেলো। তিনি একটা পাথর নিয়ে ছুঁড়তে গেলেই থেমে যায় হঠাৎ। আফরাজ এর রুম অন্ধকার হয়ে গেছে। তার মানে শুয়ে পড়ল নাকি? এমন ভাবনা আসায় জনাব লিয়াকত কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকল। নাজীবা আকবর-কে পটিয়ে বলেছে আফরাজ-কে রুমে আসা থেকে থামিয়ে রাখতে। সে সারপ্রাইজ রেডি করতে চাই বলেই দু’জনে হাত মেলাল। আকবর লাইব্রেরী রুমে গেল। চশমা পরে বই ঘাঁটতে দেখে আকবর ঢোক গিলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। আফরাজ টু শব্দ করল না। সে গিয়ে হেহে করে হেসে দিল। আফরাজ একপলক তাকিয়ে ব্রত কণ্ঠে শোধায়।

“আমি নিশ্চয় কোনো সার্কাস হলে দাঁড়িয়ে নেই।”

“আরে ভাই জাস্ট মজা করছি ঐ সময়। তুই এটা নিয়ে এখনো রেগে আছিস! দেখ ভাই আইম সরি। এখন আমি কাঁদলে কিন্তু তোর পাপ হবে বলে দিলাম।”

“তবে কি তোর ছবি তুলে ঈদ পালন করব?”
“করলে বলিস। খেতে চলে আসব।”
“তুই মিয়া বাচ্চার বাপ হয়ে যাচ্ছিস। আর আমি এখনো বাচ্চার ব ও করার প্রস্তুতি নিতে পারিনী। তুই শা’লা সবসময় আমার চুমু খাওয়ার মাঝে বাম ঠ্যাং ঢুকিয়ে দিস। বলি কি বাপ তুই বাপ হবি এমন মীর জাফরগিরী করা ছেড়ে দেহ্ বাল।”
“বাহ্ ভাই একটু মজা করলাম আর এতেই এত কথা শোনতে হলো। তুই বন্ধু নামেই কলঙ্কিত। সেদিন আমাকে ফাঁসতে বললি আমি জী-জান লাগিয়ে ফাঁসতে গেলাম। অথচ তুই? না তুই আমার দোস্ত হতে পারিস না। তুই আমার বন্ধুত্বে কলঙ্ক লাগিয়ে দিয়েছিস। ছিঃ ছিঃ।”

আফরাজ কোমরে হাত রেখে রাগী দৃষ্টিতে আকবর এর দিকে তাকিয়ে আছে। তার গলা চেপে ধরে বলে,

“আজ তো তু গেয়া শা’লে। অনেকক্ষণ ধরে তোর বকবক শোনতে ছিলাম। এবার কর বকবক।”

কোনো ব্যথা তো পাচ্ছে না উল্টো মজা লুটতে সে আফরাজ এর পেটে কাতুকুতু দিতে থাকে। বেচারা আকবর এর গলার থেকে হাত সরিয়ে হাসতে লাগল। সেও নাছোড়বান্দা ঠাস করে আকবর এর লুঙ্গি টান দিয়ে পালিয়ে যায়। সে বোকা বনে গেল। তার পরণে একটা শর্ট ট্রাউজার দেখা যাচ্ছে। জনাব ইসমাইল লাইব্রেরী রুমের পাশে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। আকবর-কে কিংবদন্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলেন,

“ছিঃ আকবর তুই যে ফাজিল আগে থেকে জানতাম তাই বলে একলা রুমে নগ্ন দাঁড়িয়ে থাকার মানে বুঝলাম না। এই বাসায় লেডিস ও আছে রে বাবা। নেহাত আমি বাপ দেখছি বলে বলছি। তোর মা দেখলে এই আঙিনায় বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতো। কি রে দামড়া ব্যাটা যাহ্ জলদি।”

লজ্জায় গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে চলে যায় আকবর। মনেমন আফরাজ-কে কয়েক দফা গা’লি দিয়েই ছাড়ল। নিজের রুমের বাহিরে আসতেই তার সামনে কেউ লুঙ্গি ধরল। চট করে লুঙ্গি নিয়ে নেয় আকবর। আফরাজ বাঁকা হেসে বলে,

“কি মুন্না নুইনা দেখিয়ে লজ্জা পেতে কেমন লাগিরো রে? আর করবি ফাজলামি? করলে তোর নুইনা কেটে ফুইনা করে দেবো হুহ্।”

লুঙ্গিটা পরে মুখ ভেটকাল আকবর। রুমের বাহিরে কথার শব্দে দরজা খুলল কুসুমা। একলা আকবর-কে বিরবির করতে দেখে ডেকে উঠে। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শুতে যায়। কুসুমাও বিরক্তবোধ করল। আজ থার্টিফার্স্ট নাইট আর এই বান্দা শুয়ে পড়ল। দাঁতে দাঁত চেপে দরজা লাগিয়ে রাগ করে কুসুমাও শুয়ে পড়ল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
আফরাজ রুমে এসে অবাক হয়ে যায়। পুরো রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। কোনো অঘটন ঘটল ভেবে ভয় পেয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ লাইট জ্বালিয়ে দেয়। আকস্মিক লাইট জ্বালানোর কারণে নাজীবা নিজেও হকচকিয়ে গেল। আফরাজ তো যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে স্তদ্ধ হয়ে গেল। তার চোখজোড়া বিবিজান এর আপাতমস্তক পরিলক্ষণ করায় ব্যস্ত। কাঁচুমাচু করে আঁচলটা সেফটিপিন মে’রে নেয় নাজীবা। সে ডিমলাইটের আলোতে ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পরছিল,সাজবিহীন সে নিজেকে প্রস্তুত করছিল। আজ সে তার স্বামীর সঙ্গে সুখের জোয়ারে ভাসবে। আফরাজ এর ধ্যান ফিরে সে ঢোক গিলে টেবিলের উপর থেকে একমগ পানি খেয়ে শেষ করে নিল। পুনরায় হৃদয়াঙ্গণের দিকে চোখ দিতে পারল না। চট করে বেলকনির দরজা খুলে রেলিং চেপে ধরে ঘনঘন শ্বাস ফেলতে আরম্ভ করে। বাহিরের মৌসুমে শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ঠান্ডা বাতাসেও সে তার শরীরে গরম অনুভব করছে। আকস্মিক বুকের উপর কোমল হাতজোড়া আবদ্ধ হয়ে যায়। আফরাজ নিরুত্তক হয়ে বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নাজীবা স্বামীর নীরবতা আড়চোখে খেয়াল করে ধীরস্থির করে গুটিয়ে স্বামীর বাহু ভেদ করল। তার বুকের কাছে গিয়ে সটান দাঁড়িয়ে যায়। আফরাজ তবুও গোমড়ামুখো হয়ে তাকে সরানোর চেষ্টা করে। নাছোড়বান্দা নাজীবাও সরেনি তার জায়গা থেকে। চাঁদের ঘন আলোতে মানব-মানবীর মনজোয়ারে প্রেমের ছন্দ বইছে। নাজীবার কিশোরী বয়সের পছন্দের হৃদয়পুরুষ। স্বামীর শার্টের পাঁচ বোতাম খুলে বুকটা উম্মুক্ত করে দেয়। ওষ্ঠদ্বয় ছোট হৃদপিন্ডের স্থানে চেপে ফিসফিসিয়ে বলে,

“আপনি আমার আকাশসম ভালোবাসা,
আপনার সঙ্গে আজম্ম বাঁচার স্বপ্ন আমার,
ছেড়ে যেও না কভু,হয়ে থাকতে চাই আপনার অর্ধাঙ্গিণী।”

আফরাজ ব্যালেন্স রাখতে বিবিজান এর কোমর জড়িয়ে ধরে রাখে। তার চোখে উম্মাদনার আগুন জ্বলছে। বিবিজান এর কণ্ঠে বলা বাক্যদ্বয় তার উষ্ণ মাত্রা-কে বাড়িয়ে দিল। স্বজোরে গাল চেপে ধরে ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ আতশবাজি ফোটানোর শব্দ হলো। দুজনের শরীরে মৃদু কাঁপন ধরে। ওষ্ঠদ্বয় ছাড়া পেয়ে দুজনের নজর গিয়ে পড়ে শহরের আনাচে কানাচে থেকে ফানুস উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য। সেই সঙ্গে আতশবাজির রং আলো পুরো শহর-কে মুখরিত করছে। খুশির আমেজ তবুও খারাপ লাগল দু’জন এর। কেননা এসবের কারণে শত পাখি মৃতবরণ করে। বিবিজান এর নিরস মুখশ্রী দেখে চট করে তার গালে চুমু দিয়ে খানিক দূরে সরে যায় আফরাজ। নাজীবা হাত মেলে ধরে রেলিং এ টেস দিয়ে দাঁড়ায়। জোরালো শব্দে বলে,

“আপনাকে অনেক ভালোবাসি স্বামীজান।”

খুশির বলে মুচকি হেসে বিবিজান এর নিকট এগিয়ে যেতে লাগল আফরাজ। নাজীবা তার জায়গায় দাঁড়িয়ে স্বামীর আগমনে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায় চেয়ে রইল। হঠাৎ উচ্চস্বরে এক গুঞ্জন হলো। যার শব্দে আফরাজ এর হাসিমুখ মিটে গিয়ে স্তদ্ধ-তা ভর করে। গালের দুপাশে র’ক্তের ফুটো ছিটকে লেগে গেল। তার ওষ্ঠজোড়া ক্রমশ কেঁপে উঠে। গলার থেকে শব্দ বুঝি খুব নিম্ন হয়ে গেল। কাঁপান্বিত ঠোঁটে বলে উঠে….’বিবিজান’……।

চলবে……..

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২১

হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে নাজীবা। চোখ-মুখে মলিন বিষণ্ণতা। শাড়ির মধ্যে র’ক্ত ছিটিয়ে আছে। তার উপর গরম জ্যাকেট জড়ানো। জনাব ইসমাইল কে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে কান্না করচ্ছেন মিসেস ফেরদৌসী। একমাত্র ছেলের সঙ্গে এই কি হলো? আকবর সকলের বিষণ্ণময় চেহারা দেখে কাউকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করল না। সে একলা হাতে হাসপাতালের যত ফর্মালিটিস আছে সব সামলে নিচ্ছে। কিন্তু সেও মনেমন বন্ধুর অসুস্থ দশার জন্য কষ্টে ভোগছে। কষ্ট দেখানোর সাধ্য নেই বলে ফর্মালিটিস পূর্ণ করার পর এককোণায় দাঁড়িয়ে পরিবারের মলিন চিন্তিত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। থার্টিফার্স্ট নাইট বুঝি বিপদ নিয়ে হাজির হয়েছে। রাতের বোধহয় দুইটার সময় চলছে। অপারেশন থিয়েটারে আফরাজ কে নেওয়া হলো, দু’ঘণ্টা পাড় হয়ে গিয়েছে। অথচ তার অবস্থা সম্বন্ধে এখনো সকলের অজানা রয়ে গেল। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে সকলের দৃষ্টি দরজার দিকে পড়ল। সামনে নার্স কে বের হতে দেখে সকলে আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু নার্স তড়-জড় করে এসেই বলে,

“আপনাদের মধ্যে এ পজেটিভ ব্লাড গ্রুপ কার আছে?”

আকবর সঙ্গে সঙ্গে বলে,’জ্বী সিস আমার ব্লাড গ্রুপ এ পজেটিভ। আমাকে বলুন!’
“দেখুন আপনাদের পেশেন্ট এর কন্ডিশন অনেক ক্রিটিক্যাল। তার দু’ব্যাগ র’ক্ত লাগবে। আসুন আপনি।”

সকলের কৌতুহলী মুখশ্রী পুনরায় মলিন হয়ে গেল। আকবর তাদের দিকে একপলক চেয়ে নার্সের পিছু পিছু গেল। নাজীবা নিঃশব্দে কাঁদছে। যার আওয়াজ কারো কানেও ঠেকছে না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) জনাব ইসমাইল বউমা-র দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে চেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তার বিবেক তাকে বলছে, তার ছেলের এ অবস্থার জন্য একমাত্র এই মেয়েই দায়ী। তাও পুনরায় এই মেয়েই। মিসেস ফেরদৌসী কান্নাময় সুরে বিলাপ করে বলছেন।

“বলছিলাম এই মেয়েটা অপয়া, মুখপুড়ি আমার ছেলে আফরাজ এর সঙ্গে থাকলেই তাকে মে’রে দেবে বলে ছিলাম না আপনাকে? দেখছেন খুশি তো এবার? আমার ছেলেটাকে জীবন-মৃত্যুর মাঝে ঠেলে দিলেন আপনারা। আর আপনি আম্মা আপনি না আপনার নাতিকে বেশি ভালোবাসেন। তাই বুঝি তার গলায় এই অপয়া মেয়ে-রে ঝুলিয়ে মরণের দিন দেখাচ্ছেন।”

বউমা-র কথায় খাদিজা বেগম শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকান। ছেলের অসুস্থতায় মায়ের আর্তনাদ এতবছর পর দেখে হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করছেন তিনি। গম্ভীর মুখ করে নাতবউয়ের দিকে তাকান। নাজীবাও শান্ত নেই সকলের তুচ্ছতাচ্ছিল্যতা তাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছে। সে যত নিজেকে শক্ত করতে চাইছে তত সে দুর্বল হয়ে পড়ছে। না পারতে সে দাদি শ্বাশুড়ি-র দিকে তাকায়। অত্যন্ত এ আশায় তার দাদি শ্বাশুড়ি তার প্রতি সদয় হোক। কিন্তু কিছু মুহূর্ত পর তার আশা নিরাশায় পরিণত হলো। খাদিজা বেগম লাঠি ঠকঠক করে নাজীবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যান। নাজীবা মলিন মুখে দাদি শ্বাশুড়ির দিকে চেয়ে ম্লান কণ্ঠে আওড়ায়।

“প্লিজ দাদি আপনিও‌ আমায় তাড়িয়ে দিয়েন না। আপনার নাতি কে ছাড়া আমি বাঁচব না গো দাদি। খুব ভালোবাসি তাকে। প্লিজ দাদি।”

ফুঁপিয়ে উঠে মেয়েটা। খাদিজা বেগম এর চোখ থেকেও পানি পড়তে লাগল। তবুও তিনি এতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করলেন না। কোমল ভাবে নাজীবার বাহু চেপে ধরে সিটের বসা থেকে দাঁড় করিয়ে নেন। নাজীবা শরীর কান্নার কারণে মৃদু মৃদু কাঁপছে। খাদিজা বেগম কিঞ্চিৎ মুহূর্ত নাতবউকে পরখ করলেন। এই মুখশ্রীর মানবী-কে তিনি নিজ ইচ্ছায় একমাত্র নাতির সঙ্গে বিয়ে করিয়ে ছিলেন। আজ এমনও দিন এলো যে, মেয়েটাকে তার নিজ হাতে বের করে দিতে হচ্ছে। নাজীবা-কে অপারেশন থিয়েটারের রুম থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে এনে বলেন,

“দেখো নাতবু তুমি কয়েকদিনের জন্য আমার ফার্মহাউস এ চলে যাও। ফার্মহাউস এর ঠিকানা সম্পর্কে তোমার চিন্তা করতে হবে না। আমি কল করে ড্রাইভার কে রেডি করে নেবো। সে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে বাহিরেই আছে। তাকে বলব ভালোমত যাতে তোমাকে পৌঁছে দেয়। ওখানে গেলেও অত্যন্ত নিজেকে দূরে রেখে সকলের মনে জায়গা করতে পারবে। আমি জানি স্ত্রী হিসেবে তোমার মনে কি চলছে। কিন্তু এই সময়টা তোমার জন্য খারাপ। তাই কয়েকদিন ফার্মহাউস এ চলে যাও। সব ঠিক হলে তোমাকে নিয়ে আসব।”

দাদি শ্বাশুড়ি-র কথায় নাজীবার হৃদয় থেকে বড় বোঝা নেমে গেল। তৎক্ষণাৎ দাদি-কে জড়িয়ে ধরে বলে,

“দাদি বিশ্বাস করুন আমি নিজেও বুঝিনি ঐসময় আসলে ঘটলটা কি? আমি আর উনি….।”

খাদিজা বেগম তাড়াহুড়ো করে বলেন,

“না নাতবু এখন কিছু বলো না। তোমাকে রাতে ফোন দেবো তখন বলিও। এখন সঠিক টাইম নয়।”

দাদির কথায় নাজীবা বলতে গিয়েও পারল না। সত্যটা জানা যে খুব জরুরী। কিন্তু পরিবেশের প্রতিক্রিয়ায় সেও মানতে বাধ্য। অতএব, দাদির সালাম নিয়ে বেরিয়ে যেতে গিয়েও থেমে যায়। পিছু মোড়ে আড়চোখে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকায়। আফরাজ-কে ছেড়ে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার। পরিস্থিতি আজ পক্ষে হলে অবশ্য সে আফরাজ এর কাছে থাকতো। অবিচ্ছিন্ন মনকে কোনো মতে বুঝ দিয়ে দাদি শ্বাশুড়ির কথা মেনে ফার্মহাউস যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেল। খাদিজা বেগম ঠোঁট কামড়ে চেয়ে রইলেন। চোখ থেকে এক-দুই ফুটো পানি গাল ভেদ করে ঝরে গেল। চোখ মুছে তিনি নাজীবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“আমাকে মাফ করে দিও নাতবু। তোমাকে ভীষণ পছন্দ ছিল আমার। কিন্তু নাতি আমার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী। তার শূন্যতায় তো জায়গাটা খালি রয়ে যাবে। তার যেনো ক্ষতি নাহয় সে ব্যবস্থা করতেই তোমাকে ফার্মহাউস এ পাঠানো। ওখান থেকে তুমি তোমার আসল গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। এরপর আর কারো কোনো অভিযোগ থাকবে না।”

____

“শাবাশ মেরে সের। তোর শুট তো একদম বরাবর হয়েছে। কোনো এপড় ওপড় অব্দি হয়নি। এর জন্য তোদের কে পুরষ্কার দেওয়া উচিৎ।”

জনাব দাহাব এহসান গা’র্ন শুটার দু’জন কে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বললেন। তিনি হেঁটে দেওয়ালের কাছে আসলেন। দেওয়ালে টাঙানো ছু’ড়ি থেকে দুটা ছু’ড়ি হাতে লুকিয়ে নেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)যা কারো চোখে না পড়লেও জনাব লিয়াকত এর চোখে ঠিকই ধরা পড়েছে। মনেমন তিনি আতংক-বোধ করছেন। তার শ্বশুর কি কারণে ছু’ড়ি হাতে নিল তা একটু হলেও আঁচ করতে পেরেছেন। ঢোক গিলে রুমের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ান। দাহাব এহসান আয়নার মধ্যে দুজনের প্রতিফলিত রুপের দিকে চেয়ে হিংস্র হয়ে উঠলেন। দ্রুত এসে দু’জনের শরীরে দাঁত বসিয়ে চেপে ধরে বার কয়েক ছু’ড়ি দিয়ে আঘাত করলেন। একেবারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তারা। তাদের শরীরের র’ক্ত চুষে খেয়ে নেন তিনি‌। জনাব লিয়াকত এরূপ বিবশ দৃশ্য দেখে সহ্য করতে পারলেন না। তৎক্ষণাৎ রুম থেকে বেরিয়ে যান। পাবলিক ওয়াশরুমে ঢুকে বমি করে ফ্রেশ হয়ে নেন। মিসেস হিয়া বাবার রুমের ধারে কাছেও গেলেন না। কেননা লোক দুটার আওয়াজ তিনি ভালোই শুনতে পেয়েছেন। তিনি জানেন, তার বাবা সত্য প্রকাশ্যে না আসার জন্য তাদের খেয়ে ফেলেছেন। তাই তিনি আর নিজেকে দরদী সাজালেন না। স্বামী-কে দেখে চিন্তিত মুখোভঙ্গি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে যান। লিয়াকত স্ত্রীর দিকে ভুরু নাচিয়ে বলেন,

“কি এখন কি লেকচার দিতে আসছো?”

“শুনেন না আজকে সকালে আপনি কল ধর ছিলেন না বলে আমি মনে মনে চিন্তায় পড়ে গিয়ে ছিলাম। আর এখন তাবাসসুমকে কলে পাচ্ছি না। আপনার কল না হয় রিং হয়েছিল কিন্তু তাবাসসুম এর কলে তো রিং-ই হচ্ছে না। আমাদের মেয়েটা-র খোঁজ করে দেখুন না। বাবাকেও বলে লাভ নেই। উনি কখনো আমাদের চিন্তা করেননি। সারাক্ষণ সম্পদ আর কামনা লালসার মাঝে ডুবে মরা পুরুষ তিনি।”

“কি বলছো তাবাসসুম ফোন ধরছে না? কথাটা আগে কেনো জানাওনি? ওহ খোদা না জানি মেয়েটা কোথায় আছে!”

জনাব লিয়াকত তৎক্ষণাৎ শার্ট পরে বাসার থেকে বেরিয়ে যান। মিসেস হিয়া পায়চারী করতে থাকেন। তিনিও ক্লান্ত নিজের বাবার এসব কর্মে। কিন্তু তিনিও বা কি করতে পারবেন? সবটা লোভে পড়ে করলেন এখন প্রায়শ্চিত করতে চাইলেও রেহাই পাচ্ছেন না। হঠাৎ ফোনে কল চলে আসায় তিনি কলটি রিসিভ করেন। অপরপাশের লোকটি বলেন,

“ম্যাম আপনি যে নার্স কে বেঁধে রাখতে বলেছিলেন আম… আমরা বেঁধে রেখে ছিলাম। কিন্তু গত পরশু সেই নার্সকে দাহাব স্যার নিজের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন।”

কথাটি শুনে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলেন মিসেস হিয়া। ‘ঠিক আছে এমাউন্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি’ বলেই তিনি কল রেখে দিলেন। অপরপাশের লোকটি আর এসবের খবর রাখল না। সে তার পাওনা পেল মানে তার কাজ শেষ। মিসেস হিয়া দ্রুত পায়ে হেঁটে বাবার রুমের সামনে আসলেন। ভদ্রতার খাতিরে দরজায় নক করলেন। দাহাব এহসান শব্দ শুনেও অশুনা করলেন। মিসেস হিয়া উত্তর না পেয়ে স্বেচ্ছায় ঢুকে পড়লেন। সামনে দেখে অবাক। তার বাবা ফোনের মধ্যে অস্থির হয়ে কি যেনো টাইপিং করছেন। তিনি স্বচ্ছল পায়ে এগিয়ে সাড়া দেন। দাহাব এহসান টাইপিং শেষে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন। তার হাসিতে যেন অমূল্য রত্ন হাসিল করার মত খুশি উপচে পড়ছে। মিসেস হিয়া বাবার পাগলামীপনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে বলেন,

“আপনার কি হয়েছে বাবা? এভাবে উল্লাস কেন করছেন? এমন ভাব ধরলেন যেনো নাজীবা-কে হাত করতে পেরেছেন।”

শেষ কথায় খুব তাচ্ছিল্যেতা প্রকাশ করলেন তিনি। দাহাব এহসান বুঝতে পারলেন তবুও মুখশ্রী জুড়ে যে হাসি তা বিলীন হতে দিলেন না। তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“আজ যাই বল না কেনো মা! আমি ভীষণ খুশি। মুরগি নিজে আমার খামারে আসবে এর চেয়ে খুশি আর কি হতে পারে আমার জন্য?”

মিসেস হিয়া তার বাবার কথা বুঝলেন না। পুনরায় প্রশ্ন করতে নিলে দাহাব এহসান চোখ রাঙানি দিলেন। রুমের থেকে বেরিয়ে যেতে হাতে ইশারা করলেন। মিসেস হিয়া অপমানিত বোধ করলেন। ক্ষোভ চেপে রুম থেকে বেরিয়ে যান।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে