অন্যরকম অনুভূতি পর্ব -০৩

0
1711

#অন্যরকম অনুভূতি
#লেখিকা_Amaya Nafshiyat
#পর্ব_০৩

রুমে গিয়ে মাহা বিছানার ওপর পা তুলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে দ আকৃতির মতো বসে থম মেরে রইলো।একদম পাথরের মতো নিস্তব্ধ হয়ে আছে সে।তার মাঝে কোনো অনুভূতি কাজ করছে না।কথায় আছে না ‘অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর’,মাহারও হয়েছে ঐ অবস্থা।সারা বিকাল এবং সন্ধ্যা মাহা এভাবে পাথরের মতো বসেই কাটিয়ে দিলো।নওশিন সন্ধ্যার নাশতা করার জন্য এসে একবার ডেকে গিয়েছিলো মাহাকে,জবাব দেয় নি সে কোনো।দরজা লক করা ছিলো।নওশিনও আর বেশি ঘাটে নি,হয়তো ঘুমিয়ে আছে এটা ভেবে চলে গেল।

রুম থেকে বেরোতে ইচ্ছা করছে না মাহার।তবুও বাধ্য হয়ে রাতের ডিনার করার জন্য সে বেরোলো।যদিও খাওয়ার মুড নেই।তারপরও সবাই সন্দেহ করতে পারে ভেবে যাওয়া আরকি।গিয়ে দেখলো ভাবী তার পিচ্চি মেয়ে জিমিকে কোলে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে নওশিনের সাথে গল্প করছে।নওশিনের কোলে শান্ত ও ভদ্র ছেলের মতো বসে আছে জাওয়াদ।তাদের সাথে ফুলমতিও বসে আছে।বোঝাই যাচ্ছে এরা ব্যতিত বাসায় আর কেউ নেই।

মাহা ধীরপায়ে হেঁটে গিয়ে ড্রয়িং রুমের ভেতর প্রবেশ করে নওশিনের পাশে বসলো।ওর ভাবী ইরার দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দিলো সে।ইরাও প্রতুত্তরে হাসলো।ইরার কোল থেকে জিমিকে নিজের কোলে নিলো মাহা।জিমির বয়স মাত্র ৫ মাস।বাবুটাকে সে চুমু দিতে লাগলো।সারাটাদিন মিস করেছে পিচ্চিটাকে।পিচ্চিটাও কী সুন্দর হাসি মাখা চেহারা নিয়ে তার ফুপ্পির আদর অনুভব করছে।ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে সে মাহার দিকে।মাহা পিচ্চিকে আদর করতে করতে ইরাকে জিজ্ঞেস করল;

মাহা:-তুমি কখন এলে ভাবী?

ইরা:-এইতো,সন্ধ্যার পরপরই চলে এসেছি।তোমার ভাইয়া বললো জলদি করে বাসায় যেতে,ছেলে কান্না করবে।আর জিমিও অশান্তি শুরু করেছিলো ততক্ষণে।তাছাড়া হসপিটালে এত মানুষ থেকেই বা কী লাভ?রোগীর কেবিনে কাউকেই এলাউ করা যাচ্ছে না।

মাহা:-ওহহ,(একটু নিশ্চুপ থেকে)একা এসেছো বুঝি?

ইরা:-নাহ,ড্রাইভার আঙ্কেল নিয়ে এসেছেন।এসে খেয়ে দেয়ে আবার চলে গেছেন ওখানে।

মাহা:-ওহহ,

এবার ইরা উৎফুল্ল কন্ঠে মাহাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে;

ইরা:-কী গো ননদীনি!নুশুমণির কাছ থেকে তো সব শুনলাম তোমার ব্যাপারে।এত টেকনিক কীভাবে খাটালে তুমি মাহা?বাহ,তোমার তো বুদ্ধির তারিফ করতে হয় দেখছি।তুমি এক কাজ করো,তোমার ভাইয়ের স্বপ্ন তোমাকে পূরণ করতে হবে না,তুমি বরং সিআইডি অফিসার হয়ে যাও।ভালো নাম কামাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে গেছে ইরা।মাহা বুঝতে পারলো না এখানে সিআইডির কী করলো সে!যা করেছে তা তো নিজের জন্যই করেছে!
বেশি প্রশংসা করলে মাহার আবার চুলকানি শুরু হয়ে যায়।প্রশংসা জিনিসটা তার মোটেও ভালো লাগে না।মানুষ নিজের ব্যাপারে বাহবা শুনতে খুব পছন্দ করে,কিন্তু মাহা এর বিপরীত।স্বভাবসুলভ সে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেল।

মাহা:-আচ্ছা আরাফাত ভাইয়ার অবস্থা বর্তমানে কেমন ভাবী?মানে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়েছে কী?

মলিন কন্ঠে জবাব দিলো ইরা;

ইরা:-না বোন,কোনোপ্রকার কোনো উন্নতি হয় নি।ইভেন এখনো সেন্সই ফেরে নি।ডক্টর বলেছেন ৩ দিনের মধ্যে সেন্স না ফিরলে কোমায় চলে যেতে পারে।অবস্থা এতটাই বেগতিক।আমেরিকা এবং কানাডা থেকে ভালো দুজন ডক্টরকে আনানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য।বর্তমানে উনাদের তত্ত্বাবধানে আছেন আরাফাত ভাইয়া।আন্টিকে তো কেউ সামলাতে পারছেন না।ছেলের জন্য কান্না করতে করতে ওনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।পরে তোমার ভাই ওনাকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে শান্ত করেছেন।কোন মা-ই বা তার সন্তানকে এমন অবস্থায় দেখে সহ্য করতে পারে!

ইরার কথা শুনে মাহার বুকের ভেতরটা জানি কেমন করে উঠলো।নিজেকে কোনোমতে সামলিয়ে প্রশ্ন করলো সে;

মাহা:-ওই শয়তান্নিটার কোনো খবর পাওয়া গেছে কী?

রাগে ক্রমাগত দাঁত কিড়মিড় করছে মাহা।অনিশ্চিত কন্ঠে জবাব দিলো ইরা;

ইরা:-আমি সঠিক জানি না।ওনারা যখন হসপিটালে এসেছেন আমি তখন বাসার উদ্দেশ্যে ড্রাইভার আঙ্কেলের সাথে বেরিয়ে গেছি।সময়ের অভাবে কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারি নি।রিয়াজ ভাইয়া বা অন্যকেউ বাসায় আসলে তবে বিস্তারিত সবকিছু জানা যাবে।

মাহা:-হু,<অন্যমনস্ক হয়ে>

নওশিন:-আচ্ছা এখন তাহলে চলো,আমরা ডিনারটা সেড়ে ফেলি।অনেক রাত হয়ে গেছে।

ইরা:-হ্যা চলো।

নওশিন ও ইরা বসা থেকে ওঠে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে চলে গেল।ওদের সাথে ফুলমতিও গেল।পিচ্চিটাকে কোলে নিয়ে মাহা একাই বসে রইলো ড্রয়িং রুমে।টেবিলে খাবার বেড়ে মাহাকে ডাকলো নওশিন।খেতে মোটেও ইচ্ছা করছে না তারপরও অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও যেতে হচ্ছে।নাহলে প্রশ্নের ওপর প্রশ্নবাণ ছুঁড়তে থাকবে এরা।জবাবদিহি করার মতো মুড নেই।তাই অল্প একটু খেয়ে নিজের রুমে চলে এলো মাহা।দরজা লক করে বারান্দায় চলে এলো সে।

হঠাৎ করে খুব কান্না পাচ্ছে মাহার।ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার।সারাটাদিন ধরে কীভাবে যে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে তা নিজেও বলতে পারবে না মাহা।সারা বারান্দা একদম থমথমে হয়ে আছে অন্ধকারে।বাইরে জ্বালানো ফ্লাডলাইটের আলো প্রতিফলিত হয়ে তেড়ছাভাবে এসে বারান্দার এক কোণে পড়েছে।রুমের আলোও নেভানো।এত অন্ধকার থাকা সত্ত্বেও মোটেই ভয় পাচ্ছে না মাহা।কোনো ধরনের ভয় কাজ করছে না তার মনে।

মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সে।হেঁচকি তুলে কান্না করছে মাহা।এতক্ষণ সব কষ্ট মনে দলা পাকিয়ে আটকে ছিলো,কান্নার সাথে কষ্ট গুলো উগলে বেরিয়ে আসছে ভেতর থেকে।চাপা আর্তনাদ করে উঠে মাহা।কাউকে একতরফা ভাবে ভালোবাসা এত কষ্ট কেন?কেন এত কষ্টের?মাহা দুহাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে জোরে জোরে কান্না করতে লাগে।আর্তনাদ করে বলে উঠে;

মাহা:-কেন তুমি আমাকে একটিবার ভালোবাসার সুযোগ দিলে না আরাফাত ভাইয়া?আমি তো তোমাকে সেই বাল্যকাল থেকে ভালোবেসে আসছি।কেন তুমি আমার আবেগকে সবসময় হেসে উড়িয়ে দিতে বলো?আমি তো সত্যি সত্যিই তোমাকে নিজের জীবনে চেয়েছি।খুব করে চেয়েছি।এখনো চাই।তুমি অপাত্রে ভালোবাসা দান না করে এরথেকে আমাকে দিতে!তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না তোমার।আমি তোমাকে খুশি দেখতে চাই দেখেই তো তোমার আর লামিয়ার জীবন থেকে সরে এসেছিলাম।তোমাদের জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে থাকতে চাই নি বলেই তো তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু আজ দেখো তুমি ঠকে গেলে।খুব বাজেভাবে ঠকে গেলে তুমি।আমার মন তুমি যেভাবে ভেঙেছিলে আজ লামিয়া সেই একই কাজটা তোমার সাথেও করেছে।

আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লো মাহা।কাঁদতে কাঁদতে অতঃপর দুহাত দিয়ে চোখ মুছে লামিয়াকে অভিশাপ দিতে লাগলো;

মাহা:-তোর কোনোদিনও ভালো হবে না লামিয়া,তোর কোনোদিনই ভালো হবে না।অভিশাপ দিলাম তোকে।তুই আমার কাছ থেকে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে কেঁড়ে নিয়েছিলি না?এবার দেখ তোর সাথে ঠিক কী কী হয়!তুই ভাবতেও পারবি না তোর সাথে কী হতে যাচ্ছে।আরাফাত,আলভি থেকে শুরু করে তোর যত নাগর আছে সব নাগরকে হারিয়ে নিঃস্ব হবি তুই।তুই কীভাবে শান্তিতে থাকিস সেটাও আমি দেখে নেবো।আরাফাত আমার আছে আমারই থাকবে অলয়েজ।আরাফাত একমাত্র আমার।আমার মানে আমার।কেউ তাকে কেঁড়ে নিতে পারবে না।আর মাহা এত সহজে ভেঙে পড়ে না,মাহা ঠিকই নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে নিতে জানে।

প্রতিশোধের আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে মাহা।চোখেমুখে ক্রোধের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে তার।এখন যদি লামিয়াকে পেত তাহলে তাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে খুন করতো।এতটাই ফায়ার হয়ে আছে সে।একটাসময় বারান্দাতেই ছোট সোফাতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাে সে।রাতে আনিশা এত এত কল দিয়েছে একটাও রিসিভ করে নি।সে ভুলেই গিয়েছিল আনিশার কথা।ফোনও সাইলেন্ট ছিলো তাই ফোন এসেছে কীনা বুঝতে পারে নি।

🎲

হসপিটালে,
আরাফাতের বাবা জনাব এরশাদ আরাফাতের কেবিনের সামনে চিন্তিত হয়ে পায়চারি করছেন।আদরের ছেলের এ অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছে ওনার।নেহাৎ পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই তাই চাইলেও তিনি তা করতে পারছেন না।আর ছেলের শোকে ওনার বউয়ের যা অবস্থা তাতে তিনি কী করবেন তাই বুঝতে পারছেন না।মি.এরশাদের এমনতর দুশ্চিন্তা করতে দেখে মাহার বাবা মি.আতিকও অনেক টেনশনে আছেন।প্রাণপ্রিয় বন্ধুর এ অবস্থা দেখে ওনার মনে হচ্ছে যে ছেলের কষ্টে সে নিজেই স্ট্রোক করে মরে যাবে।

রাফি,সাইফ ও রিয়াজ সন্ধ্যার দিকে হসপিটালে এসে মি.এরশাদ ও মি.আতিককে মাহার বলা সব কথা জানিয়ে আবারও রওনা হয়েছে লামিয়া শাঁকচুন্নি ও তার নাগরের ব্যবস্থা করতে।মি.আতিক মনে মনে মেয়ের বুদ্ধির তারিফ করলেন।মেয়েটার এত ছোঁক ছোঁক স্বভাবের কারণেই আজ গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানা গেল।মি.এরশাদ মাহার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ হয়ে আছেন।প্রশংসা করতে চেয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু পারলেন না।এখন প্রশংসা করার মতো মনমানসিকতা ওনার নেই।

ওরা সফল হয়েছে কী না তা নিয়েও বড্ড টেনশনে আছেন মি.এরশাদ।বন্ধুকে শান্তনা দেয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না মি.আতিক।এমন অবস্থায় কীই বা আর শান্তনা দেয়া যায়।মি.আতিকের বড় ছেলে রাহাত আরাফাতের কাছে অন্যান্য ডক্টরদের সাথে তার ট্রিটমেন্ট নিয়ে আলোচনা করছে।আর মিসেস মুমতাহিনার প্রেসার ফল করায় সেলাইন দেয়া হয়েছে।তার পাশে মাহার আম্মু মিসেস মিনারা আর আরাফাতের ছোট টুইন বোনের একজন অর্থাৎ লিসা আছে।অন্য বোন নিসা ও আরাফাতের ভাবী অর্থাৎ সাইফের বউ ইশানী ও ছেলে রিহাদ বাসায় রয়েছে।কারণ বাসা সম্পূর্ণ খালি।

মাহার কথা মতো লামিয়া ও তার নাগরকে ওই বাসায়ই পাওয়া গেল।পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল ওরা সেখানে।লামিয়া ও আলভী পুলিশ দেখে ভয়ের চোটে ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছিলো।ছোটাছুটি করে কোনো লাভ হয়নি অবশ্য কারণ পুলিশ তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেছে।

লামিয়া চিৎকার করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছে।আলভী চুপচাপ হাতকড়া পরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।কারণ জানে এখন চিৎকার করে কোনো লাভ নেই,ওরা প্রমাণ সমেত ওয়ারেন্ট নিয়েই এখানে এসেছে।ভালোবাসা সব জানালা দিয়ে পালিয়ে গেছে ওদের।নিজেদেরকে বাঁচানোর চেষ্টায় মত্ত দুজন।কেউ কারও কথা চিন্তা করছে না।

আলভী ও লামিয়ার ফোন চেক করা হলো।প্রথমে ফোনের এবং গ্যালারি ভল্টের পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরে গালে দু’ঘা কষিয়ে বসাতেই গরগর করে সব বলে দিলো দুজন।

গ্যালারি ভল্টে ওদের দুজনেরই অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থার ছবি,সাথে পাওয়া গেল ফোনে প্রেমালাপের অসংখ্য কলরেকর্ড।তাদের ফোনই এখন তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।আলভীর ফোন থেকে আশফা নামক একটা মেয়েকে কল করলো একজন পুলিশ।ধারণা করা হচ্ছে ওই মেয়েটি তার বর্তমান প্রেমিকা।আশফার সাথে কথা বলে ফোন রাখলেন অফিসার।আলভীর কপালে সুক্ষ্ম ঘাম দেখা দিয়েছে।সাইফ বললো;

সাইফ:-আশা করি আপনি যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন অফিসার।এখন এই কালপ্রিট দুটোকে জেলে ঢোকানোর ব্যবস্থা করুন।আমার ভাই যে কষ্ট পেয়েছে ওরা যেন এর তিনগুণ কষ্টটা ফেরত পায়।এত জলদি যেন জেল থেকে বের না হতে পারে।তার জন্য যা যা লাগবে সব ব্যবস্থা করবেন।

অফিসার:-আপনি চিন্তা করবেন না মি.সাইফ।ওরা প্রেমের নামে যে প্রতারণা করেছে তাতে ওরা এত সহজে জেল থেকে বেরোতে পারবে না।আশফা নামের মেয়েটির সাথে কথা বললাম।সে বললো আলভীর সাথে নাকি তার এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে।ওর কুকীর্তির কথা শুনে বললো সে কালকেই আসছে এর বিহিত করতে।কথা বলে বুঝতে পারলাম মেয়েটা সব জেনে ওর নামে প্রতারণার মামলা ঠুকবে।বড়লোকের মেয়েকে ঠকানোর ফল সে পাবেই।এবং মি.আরাফাতকে ঠকানোর শাস্তি অবশ্যই এই মেয়েটি পাবে।আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন।অপরাধী অপরাধ করে পার পাবে না।

সাইফ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে রাফী ও রিয়াজকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।মামলা,জিডি সব আগেই করে ফেলেছে।কালপ্রিট দুটোকে পুলিশ টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।লামিয়া প্রচুর কান্নাকাটি করছে।তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করছে অনবরত।কিন্তু এতে কারও মন গললো না।তাদের জন্য জেলই একমাত্র উপযুক্ত জায়গা।

ডক্টররা আরাফাতের সেন্স ফেরার অপেক্ষায় আছেন।তবে যতটুকু করা প্রয়োজন তার সবটুকুই করেছেন ডক্টররা।আরাফাতের মাথায় আঘাত পাওয়ায় ওর এত সুন্দর স্টাইলিশ চুলগুলো সব কেটে ফেলতে হয়েছে।মাথার একপাশে সেলাই দিতে হয়েছে ৭ টা।কপালে সেলাই দিতে হয়েছে কয়েকটা।যে স্থান গুলো বেশি জখম হয়েছে সেখানে অনেক সেলাই লেগেছে।এক্সিডেন্টটা অনেক গুরুতর ছিলো।

রাহাত শঙ্কায় আছে আরাফাতকে নিয়ে।কারণ ওর বাঁচার চান্স খুবই কম।যদিও পরিবারের কাউকে এই বিষয়ে কিছু বলে নি ওরা।কারণ এমনিতেই আরাফাতের পরিবারের সবার যা অবস্থা,এমন কথা বললে একযোগে সবাই হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবে।এখন সবই আল্লাহ ভরসা।আল্লাহর হাতে সব।তিনি যদি চান তবে আরাফাত বাঁচবে নয়তো তাদের আর কিছু করার নেই।

🍁

সাইফরা হসপিটালে ফিরে এলো।জনাব এরশাদ ব্যগ্র হয়ে ছুটে এলেন বড় ছেলের নিকট।ওনার পিছনে জনাব আতিকও ছিলেন।একরাশ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানতে চাইলেন;

মি.এরশাদ:-বাবা,কোনো ব্যবস্থা করতে পারলি ওই মেয়েটার?ও শাস্তি পাবে তো?আমার ছেলেটার সাথে করা অন্যায়ের সুবিচার কী পাবো?বল না!

সাইফ তার বাবাকে আশ্বস্ত করতে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।জনাব এরশাদ এত ধকল সহ্য করতে পারছেন না।ওনার মনে হচ্ছে ওনি নিজেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।সাইফ বাবার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো;

সাইফ:-তুমি মোটেও দুশ্চিন্তা করবে না আব্বু।ওই শয়তান মেয়েটা ও তার চ্যালার ব্যবস্থা করেই আমরা এসেছি।পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ওদের।কালকেই চালান করে দেবে।এত সহজে ছাড়া পাবে না ওরা।উপযুক্ত শাস্তি যাতে পায় সেই ব্যবস্থাটাও করা হয়ে গেছে।

মি.এরশাদ:-নিজের হাতে শাস্তি দিতে পারলে তবে মনটায় শান্তি পেতাম বাপ।আমার বাচ্চাটা আজ ওর থেকে প্রতারিত হয়ে মৃত্যুর পথে চলে যাচ্ছে।চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না আমি।এত এত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আজ আমার ছেলেটাকে আমি বাঁচাতে পারছি না।এর থেকে ব্যর্থতা আর কী হতে পারে একজন বাবার জন্য?আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে সাইফ।আমার ছেলেটাকে সুস্থ করে এনে দে না তোরা!আমি যে তাকে না দেখে থাকতে পারছি না।

ছেলের শোকে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলেন জনাব এরশাদ।সারাদিনের কান্না গলায় দলা পাকিয়ে আটকে ছিলো।এখন বড় ছেলের আলিঙ্গনে ভীষণ ভাবে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন তিনি।কষ্টে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে তাঁর।এই দুঃস্বপ্নটা কবে কাটবে?জানা নেই কারও।বাবার কান্না দেখে সাইফ নিজেও কেঁদে দিয়েছে।যদিও তা নিঃশব্দে।আরাফাত পরিবারের সবার বড্ড আদরের ও আহ্লাদের ছেলে।পরিবারের সবার প্রিয়পাত্র আরাফাত।তার হাসিখুশি চেহারাই যথেষ্ট সবার হৃদয় মেল্ট করে দেয়ার জন্য।এবং এই হাসির ওপরই পাগল হয়েছিলো মাহা।এখন ওর এই অবস্থাটা যে কেউই মেনে নিতে পারছে না।

মি.আতিক এসে একপাশ থেকে আগলে নিলেন মি.এরশাদকে।সাইফ বাবার চোখের পানি মুছে দিলো।

সাইফ:-কান্না করো না আব্বু।আল্লাহর কাছে আরাফাতের সুস্থতা কামনা করো বেশি করে।আমার ভাইয়ের কিচ্ছু হবে না।সে খুব জলদি সুস্থ হয়ে যাবে,ইনশাআল্লাহ।

মি.আতিক মি.এরশাদের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন;

মি.আতিক:-কান্না করিস না ভাই।ভাবী অলরেডি অসুস্থ।এখন তুইও যদি এভাবে কান্নাকাটিতে ভেঙে পড়ে অসুস্থ হয়ে যাস,তবে ভাবীকে কী করে সামাল দিবো আমরা?তুই এটলিস্ট নিজেকে সামলে নে ভাই।আল্লাহর রহমতে আমাদের ছেলেটা সুস্থ হয়ে যাবে।তুই টেনশন করিস না।আমরা সবাই মিলে বেশি করে দোয়া করবো।আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের ফিরিয়ে দিবেন না।

রাফি আর রিয়াজ বাইরে গেল খাবার আনতে।সারাদিনে কারও পেটে কোনো দানাপানি পড়ে নি।এভাবে না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে ওরা।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে