অন্ধকারে এক চিলতে আলো পর্ব-১১

0
1288

#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১১

পরদিন সকালে আলো ঘুম থেকে উঠে খাট থেকে নামতে নিবে ঠিক এমন সময় তানভীর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে হাজির হলো। তানভীর আলোর দিকে তাকিয়ে বলল

– নীলার মৃত্যুর আপডেট বের হয়েছে। তোমার মাকে কারা যেন খুন করেছে গতকাল। সবার ধারণা এটা তুমি করেছো। তোমাকে পুলিশ হন্নে হয়ে খুঁজছে। তোমার কোনো ছবি বাসায় খুঁজে পায়নি তাই প্রচার করতে পারছে না। তুমি দেখতে কেমন সেটাও কেউ বলতে পারছে না। কী যে হবে কে জানে।আর তোমার মাকেই বা কে খুন করলো? আর দুঃখিত তুমি করে বললাম। তুমি আমার বেশ ছোট তাই তুমি করে বলতেছি।

আলো অবাক চোখে তাকাল তানভীরের দিকে।নিজের মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে আলোর বুকটা অস্থির হয়ে গেল। সৎ মা হোক বা যাই করুক মা তো মা এই হয়। একটু কষ্ট অনুভব আলোর হচ্ছে। সে সাথে মাথায় প্রশ্ন জাগছে কে এ কাজটা করল। তার মায়ের শত্রু কে হতে পারে। পরক্ষণেই আবার ভাবলো এত পুরুষের সাথে তার মায়ের চলাফেরা সুতরাং তাদের কেউ হয়তো খুন করেছে। তবে সব বিষয়ে আলো না চাইলেও জড়িয়ে যাচ্ছে। অনিশ্চিত ক্ষীণ আশা নিয়ে আলো এখানে বসে আছে। আলো মৃদু সুরে তানভীরকে বলল

– তুমি করে বলেছেন আমি রাগ করেনি। আমি আপনার ছোট তুমি বলতেই পারেন। তবে সবকিছুতে না চাইতেও আমি জড়িয়ে যাচ্ছি। জানি না মাকে কে খুন করেছে।সবাই সবার কর্মফল পায় মাও পেয়েছে। মায়ের হাতে বাবা খুন হয়েছিল। আর আজকে মাকে অন্য কেউ খুন করেছে। সে যেমন করেছে ঠিক তেমনটায় ফিরে পেয়েছে। তবে সব জায়গায় আমি দোষী প্রমাণিত হচ্ছি। কী করব বুঝতে পারছি না। আলোর নিশানায় ছুটতে গিয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি। একটা কাজ করলে কেমন হয় পুলিশে গিয়ে যদি আমি সব বলি ভালো হবে না?

আলোর কথা শুনে তানভীর তীক্ষ্ণ গলায় বলল

– পাগল হয়ে গেছ নাকি? পুলিশের কাছে এখন গেলে বিষয়টা নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাবে। কিছুদিন যাক।বুদ্ধি বের করি।কী করা যায় ভাবি।তারপর সমস্ত প্রমাণ জোগাড় করে পুলিশে যাব।এর আগে ঘাপটি মেরেই বসে থাকতে হবে। একটু চুপচাপ থাকো আপাতত।আর মায়ের কানে কোনোভাবে কথা গুলো গেলে আর রক্ষা নাই। সুতরাং যা করতে হবে ভেবে চিন্তায়। তাদের কাছে তোমার কোনো ছবি নাই সুতরাং তোমার কাছে তারা সহজে আসতে পারবে না। আর এ সময়ের মধ্যে আমাদের সবকিছু চিন্তা করে বের করে নিতে হবে।সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে হবে।একটু উনিশ বিশ হলে হিতে বিপরীত হবে।

মা আসলে স্বাভাবিক থাকবে একদম।আর বাকি ব্যবস্থা সময় মতো করা হবে। আর আজকে শায়ান আসবে। মা বলেছে দেখা করতে।আমি শায়ানকে তোমার ছবি দিয়েছি আর শায়ানের ছবিও তোমাকে দেখাব।মায়ের সামনে দুজনের আচরণ যেন একদম সাবলীল থাকে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে ধরা পড়ে যাও দুজনে। একদম এমন আচরণ করবে যাতে মা মনে করে তোমরা সত্যি সত্যি ভাই বোন।মনে থাকবে তো?

– জি মনে থাকবে।

– আমি গেলাম এক কাপ কফি খেয়ে আসি। তুমি কী কফি খাবে?

– আমি এসব খাই না।

– এসব মানে কী? যেভাবে বলছো মনে হয় আমি তোমাকে মদ খেতে প্রস্তাব দিয়েছি।

আলো তানভীরের কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত গলায় বলল

– আপনি একটু বেশিই বকেন। যেখানে আমি ছিলাম সেখানে দু মুঠো ভাত গিলতেও আমার কষ্ট হত। সেখানে চা কফি তো পরের ব্যপার। এখন সেগুলো না খেতে খেতে একটা অনীহা চলে এসেছে। তাই ভালো লাগে না।সব কথায় প্যাচাল পারা আপনার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারি বদঅভ্যাস বাঁধিয়েছেন আপনি।

– সে যাইহোক। তুমিও তো কম না।ইস্পাতের মতো তোমার মুখ চলতেই থাকে। কখন কী বলো হিসাব নেই৷ আমি গেলাম। মা আসলে মাকে সামলিও। এমন কিছু করবে না যাতে মা সন্দেহ করে।

– বুঝেছি তো। একথাটা কয়বার বলেছেন বলুন তো।আপনি যান গিয়ে কফি খান। আমার খারাপ লাগছে। জ্বরটা আবার আসবে কী না কে জানে।

– কী বলো। দাঁড়াও আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। নাস্তা খেয়ে এখনি ঔষধ খাবে।

– এখন আমি বসা থেকে দাঁড়াব?

– এ দাঁড়ানো সে দাঁড়ানো না।এত কথা বলো কেন? সবকিছুতে তোমার তর্ক। বসো চুপচাপ আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। শায়ান ও চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে।

বলেই তানভীর রুম থেকে বের হলো। আর আলো নিঃশব্দ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে চুপ করে বসে রইল। এর মধ্যেই তানভীরের মা রুমে প্রবেশ করলো।হাতে কী যেন নিয়ে।আলো তানভীরের মাকে দেখে একটু সোজা হয়ে বসে বলল

– আন্টি আপনি এত সকাল সকাল?

– গতকাল অনেক জ্বর ছিল তোমার। তাই সকাল সকাল দেখতে আসলাম জ্বর কমেছে কী না।এখন তো বেশ সুস্থ লাগছে।তোমার জন্য ডাবের পানি নিয়ে এসেছি। খেলে ভালো লাগবে।

তানভীরের মায়ের এমন মায়া ভরা কন্ঠস্বর শুনে আলো কেঁদে ফেলল।আলোকে কাঁদতে দেখে তানভীরের মা পাশে বসে আলোকে ধরে বলল

– কী হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন? খারাপ কী বেশি লাগছে?

তানভীরের মায়ের এমন সৌহার্দপূর্ণ কথায় আলো আরও জোরে কেঁদে দিল। অনেকদিন পর আলো বুঝতে পারছে মায়ের ভালোবাসা কী।এক মা থেকেও ছিল না। আরেক মাকে বুঝ হওয়ার আগেই হারিয়েছে। সব মিলিয়ে এত ভালোবাসা পেয়ে আলো আবেগ সামলাতে পারলো না।আলোকে কাঁদতে দেখে তানভীরের মা জড়িয়ে ধরে বলল

– কী হয়েছে তোমার।এভাবে কাঁদছো কেন? বেশি খারাপ লাগছে কী?

আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল

– মায়ের কথা অনেক মনে পড়ছে।তাই।

– আহারে কষ্ট পেও না।তোমার ভাই তো আজকে আসবেই।আর মায়ের সাথে কথা বললে আমার মোবাইল দিয়ে কথা বলো ভালো লাগবে।আপাতত ডাবের পানিটা খেয়ে নাও। তানভীর নাস্তা নিয়ে আসবে।তুমি খেয়ে নিও।আমি একটু বিশ্রাম নিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হবো। কেঁদো না কেমন? আমি তো তোমার মায়ের মতো।

আলোকে তারপর নিজের কাছে এনে কপালে আলতো চুমু দিয়ে তানভীরের মা ডাবের পানিটা আলোর হাতে দিয়ে রুম থেকে বের হতে নিতে চাইবে এমন সময় তানভীর নাস্তা নিয়ে আলোর রুমে প্রবেশ করলো। তানভীরের মা তানভীরকে দেখে মৃদু গলায় বলল

– ওর একটু যত্ন নিও। হয়তো বাড়ির কথা মনে পড়ছে।

কথাটা বলেই উনি রুম ত্যাগ করলেন। আলো ডাবের পানিটা খেয়ে নিল। এর মধ্যে তানভীর খাবারটা বাড়িয়ে নিজের জন্য বানানো কফিতে চুমুক দিল। আর আলোকে বলল

– নাস্তাটা খেয়ে নাও

আলো আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ নাস্তাটা খেয়ে নিল। নাস্তা খাওয়া শেষ করতে না করতেই শায়ান আসলো বাসায়। শায়ান এসেই তানভীরকে ডাকতে লাগল। তানভীর আলোকে ইশারা করে বলল

– এখানে চুপচাপ বসো শায়ান এসেছে। মায়ের সামনে এমন ভাব ধরবে তোমরা দুজন দুজনকে চিনো। ঠিক আছে। যাতে বুঝতে না পারে তোমরা অপরিচিত।

বলেই রুম থেকে বের হলো। রুম থেকে বের হয়ে দেখল এতক্ষণে তানভীরের মা জাহানারা সুফিয়া শায়ানকে সোফার রুমে বসিয়ে নিজেও বেসেছে। তারপর শায়ানকে বলছে

– তোমার বোনের মনে হয় মন খারাপ। হয়তো মা, বাবার জন্য হয়তো মন খারাপ করছে।।তুমি একটু ওর কাছে যাও। গিয়ে দেখো কী বলে।

শায়ান মাথা নেড়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল

– আমি এখনি গিয়ে দেখে আসছি।

বলেই তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– আলোর রুমটা কোথায়?

তানভীর আলোর রুমটা দেখিয়ে বলল

– তুই আলোর সাথে গিয়ে কথা বল। আমি কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি তোর জন্য।

বলেই রান্না ঘরের দিকে গেল।আর শায়ান আলোর রুমে এসে আলোর পাশে বসল। আলোকে দেখে সে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।বিকৃত হয়ে গেল। আলোর হাতটা চেপে ধরে বলল

– আমি জানি তানভীর তোমাকে রাস্তা থেকে নিয়ে এসেছে। যদি এখানে থাকতে চাও আমার কথা মতো যা করতে বলি করো। নায়হ আন্টিকে সব বলে দিব।

আলো ভয়ে কাঁপতে লাগল। হাতটা জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল

– কী বলতে চাচ্ছেন আপনি? আর উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবেন না। আমি কিন্তু চিৎকার করব।

– চিৎকার করলে তুমিই ফেঁসে যাবা। শুধু শুধু নিজের বিপদ ডেকে এনো না। তোমাকে ছবিতে দেখেই তোমাকে পাওয়ার একটা বাসনা মনে জেগেছে। একটু জড়িয়ে ধরব শুধু। এখানে কেউ দেখবে না। আমি আর তুমি ছাড়া। আন্টি বাহিরে আর তানভীর রান্না ঘরে। একটু সময়ের ব্যপারেই তো। এটুকু না করলে সব বলে দেবো কিন্তু আন্টিকে।

– আপনি কী আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন? আপনি যে এত কুৎসিত মনের সেটা কী তানভীর ভাই জানে।

– কেউ কিছু জানে না। আর জানবেও না। একটু জড়িয়ে ধরব প্লিজ। শব্দ করলে তোমারেই বিপদ।

বলেই শায়ান আলোকে জড়িয়ে ধরতে নিলে আলো আচমকা চেঁচিয়ে উঠে।।আলোর চেঁচানোতে জাহানারা সুফিয়া আর তানভীর দৌঁড়ে আসে। তানভীর আর জাহানারা সুফিয়াকে দেখে শায়ান একদম চুপ হয়ে বসে রইল। এমন ভাব ধরল সে যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না। এদিকে জাহানারা সুফিয়া আলোকে ভয় পেতে দেখে বেশ জোর গলায় বলল

– কী হয়েছে এভাবে চেঁচিয়ে উঠলে কেন?

আলো আর সত্যিটা লুকাতে পারল না।ঢুক গিলতে গিলতে এই মাত্র ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলল। আলোর কথা শুনে তানভীর বুঝতে পারছে না কী করবে। শায়ান যে এমন মুখোশধারী সে বুঝতেও পারে নি এতদিন। আর তানভীরের মাকে সবটা সত্যি কীভাবে বলবে বা সামলাবে সেটাও বুঝতে পারছে না। এবার আলোর কথা শুনে তানভীরের দিকে জাহানার সুফিরা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে