অনুভূতি পর্ব ৪৯

0
1722

অনুভূতি
পর্ব ৪৯
মিশু মনি
.
৭৮.
মিশু একটু আগেই ঘুমিয়েছে। কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙায় একটু বিরক্ত হলো। দরজার ফুটো দিয়ে দেখলো মেঘালয় এসেছে। ও দরজা খুলে দিয়েই চোখ কচলাতে কচলাতে বললো, “এত রাতে!”

মেঘালয় আচমকাই কোলে তুলে নিলো মিশুকে। তারপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোজা রুমে চলে এলো। রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েই মিশুকে দরজার উপরেই ঠেস দিয়ে ধরলো দুহাতে। মিশু পরে যাচ্ছিলো বলে ওর কোলে বসেই দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরতে বাধ্য হলো। মেঘালয় ওকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দুহাতে শক্ত করে মাথাটা চেপে ধরে মিশুর নিচের ঠোঁটটা নিজের দুই ঠোঁটের ভেতরে নিয়ে নিলো।

মিশু মেঘালয়ের এমন আকস্মিক আক্রমণে খেই হারিয়ে ফেলেছে। থতমত খেয়ে গেছে একদম। গতকাল থেকে কোনো ফোনও দিলোনা। আজ এমন মাঝরাতে হুট করে এসেই এমন আকস্মিক হামলা করলো যে বাঁধা দেয়ার ও সুযোগ নেই। মিশুর এখনো ঘুমের ঘোরই কাটেনি। ও দুহাতে মেঘালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে রইলো। মেঘালয় একটা হাত ওর কোমরে রেখে খুব জোরে চাপ দিতে লাগলো। আস্তে আস্তে হাতটা একটু একটু করে উপরে তুলছে আর জোরে চেপে ধরছে। এতদিনের সমস্ত অবহেলা আর যন্ত্রণার অবসান এভাবেই ঘটাতে চাইছে ও। সমস্ত কষ্টেরা যেন নির্বাসন নিচ্ছে এই রাগের মধ্য দিয়ে।

মিশু ওর স্পর্শে ক্রমশই অস্থির হয়ে উঠছে। একটানা অনেক্ষণ ধরে চুম্বনের পর মুখটা ছেড়ে দিলো মেঘালয়। মিশু ওর বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে বিড়বিড় করে বললো, “এটা কি হলো? এভাবে এসে…”

মেঘালয় হেসে বললো, “হুট করে ফিরে এসে লুট করে নিয়ে যাবো। বলেছিলাম না একদিন?”
-“যাও দুষ্টুটা।”

মেঘালয় মিশুকে আরো জোরে ঠেস দিয়ে ধরলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, “প্রয়াসের আইডিতে এটা কি দেখলাম?”
-“আমরা সবাই ওনার বার্থডেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই লোকটা একান্ত আমাকেই হাইলাইট করবে আমি ভাবিনি।”

মেঘালয় খুব জোরে মিশুর পেটে চাপ দিয়ে ধরে বললো, “আমার সহ্য হয়না অন্য কাউকে। জানিস না তুই? আজকে তোকে খুন করেই ফেলবো আমি।”

বলেই মিশুকে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর উপর। কিন্তু এরপর মিশু যা করলো সেটার জন্য একদম ই প্রস্তুত ছিলোনা মেঘালয়। মিশু মেঘালয়ের ঘাড়ে জোরে কামড় দিয়ে একেবারে দাগ বসিয়ে দিলো। মেঘালয় মুখ তুলে বললো, “এরকম হিংস্র কামড় দিচ্ছো কেন?”
-“তুমি এত হিংস্র জানোয়ারের মতন বিহ্যাভ কেন করছো?”

মেঘালয় রেগে বললো, “কি বললা তুমি? এতদিন ধরে আমাকে দগ্ধ করতে করতে আজকে আমাকে জানোয়ারের সাথে কম্পেয়ার করছো?”
-“আমি তোমাকে দগ্ধ করিনি কখনো। তুমি অযথাই আমাকে ভূল বুঝলে আমার কিছু করার নেই। এখন আমাকে ছাড়ো তো। এভাবে চেপে ধরলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”

মেঘালয় আরো জোরে মিশুকে চেপে ধরে বললো, “দম বন্ধ হয়ে মরে যাও। আমাকে কেন দূরে রাখো তুমি?”
-“মেরেই ফেলো তো আমাকে। আমি মরলেই যেন তোমার কত শান্তি।”

মেঘালয় হুট করেই ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মিশু সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে এবার। বারবার মেঘালয়কে এভাবে সরিয়ে দেয়ার পরিণাম কতটা ভয়ংকর হবে ভাবতেও পারেনা ও। মেঘালয়কে কি মানুষ মনে হয়না? এটা রীতিমত অপমান। মেঘালয়ের ভেতরটা কিভাবে পুড়ছে সেটা কি ধরতে পারছে না ও? একমাস যাবত এভোয়েড করে দুবার ওকে সরিয়ে দিলো কাছ থেকে। একদিন পস্তাতে হবে এসবের জন্য।

মেঘালয় বিছানা ছেড়ে নেমে এসে বললো, “আর কখনো তোমাকে ছুঁয়েও দেখবো না। সারাক্ষণ ফোন দেই,আমাকে ব্যস্ততা দেখাও। একটা মাস হলো আমাকে নিজে থেকে ফোন দাওনা। আমি যতরাতেই দেই,তুমি টায়ার্ডনেস দেখিয়ে ঘুম দাও। আরে আমি সারাদিন কত ছুটাছুটি করে, পরিশ্রম করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে ওয়েট করি তোমার সাথে একবার কথা বলার জন্য। আর তুমি আমাকে ব্যস্ততা নামক অজুহাত দেখাও। আমার স্পর্শ আজকাল অসহ্য লাগে? সেজন্য কাছে টানলেই আমাকে অপমান করে সরিয়ে দাও? আমাকে তো খুব বিরক্ত লাগছে তাইনা? এই মেঘালয় আর কক্ষনো বিরক্ত করবে না তোমাকে। কক্ষনো বিরক্ত করবে না।”

কথাটা বলেই দ্রুত হেঁটে মেঘালয় বাসা থেকে বেড়িয়ে এলো। মিশু বিছানায় বসে রইলো থ হয়ে। মাঝরাতে কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছে না ও। মেঘালয় এভাবে মন খারাপ করে চলে গেলো! সবকিছু কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগছে ওর। বুকের ভেতর চিনচিন ব্যথা অনুভূত হতে শুরু করলো।

মেঘালয় বাসা থেকে বেড়িয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো খুব জোড়ে। ওর চোখেমুখে আগুন ঝরছে। মিশুর এই আমূল পরিবর্তন মেনে নেয়ার মত নয়। মেঘালয় আর কিছুই করবে না। যে নিজে পরিবর্তন হয়েছে,সে নিজ দায়িত্বেই ঠিক হয়ে যাবে। মেঘালয়কে হারানোটা কত বড় অপ্রাপ্তি ঠিকই বুঝবে ও। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
মিশু অনেক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো। তারপর বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।

৭৯.
সকালে ঘুম ভাঙল অনেক বেলা করে। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে নিলো। আজকে রেডিওতে প্রোগ্রাম নেই। বিকেলে ফটোগ্রাফি এক্সিবিশনের অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতে হবে। এখন কি করা যায় তাহলে? মেঘালয়কে কি একবার কল দেবে? এরপর ই রাতের ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো। মেঘ বুঝি রাগ করেছে খুব। অত গভীর ভাবে কিছু ভাবলো না মিশু। মনেমনে বললো, “মেঘ তো আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবে না। ঠিকই একটু পরেই কল দেবে। জগতের সমস্ত নিয়ম ভেঙে যাবে তবুও মেঘালয় আমাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত থাকতে পারবে না।”

এটা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে ইয়োগা করতে আরম্ভ করলো। মেডিটেশন করলো অনেক্ষণ ধরে। বেশ মানসিক প্রশান্তি লাগছে। মেঘালয় দারুণ একটা জিনিস শিখিয়ে দিয়েছে। টেনশন হলে একবার মেডিটেশনে বসলেই সমস্ত টেনশন উধাও হয়ে যায়। ছেলেটা এত ভালো! মিশু একবার হাসলো মনেমনে। সত্যিই ছেলেটা অনেক ভালো। এত ভালোবাসে কেউ কখনো! মেঝেতে বসেই এসব ভেবে ভেবে হাসছিলো।

ফোন বেজে উঠলো মিশুর। ও স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রয়াস ফোন দিয়েছে। রিসিভ করে বললো, “হ্যালো।”
-“মিশু, গুড মর্নিং।”
-“গুড মর্নিং, কালকে আপনি ক্যাপশনে ওটা কি লিখেছেন? আর আমাকেই কেন এভাবে হাইলাইট করলেন?”
-“উম,রাগ করেছো?”
-“সেটা নয়। আমার ফ্যামিলি মেম্বারের কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হয়েছে।”
-“ওহ, সরি। একটু বুঝিয়ে বলোনা। এটা আর এমন কি ব্যাপার? সবার কমেন্ট গুলো দেখেছো? আমাদের জুটিটাকে নাকি খুব সুন্দর মানিয়েছে।”
-“কিসের জুটি?”
-“হা হা হা। রেগে যাচ্ছো? আরে সবাই ভাবছে আমরা একে অপরকে.. বুঝোই তো। আমার আম্মুর ও নাকি তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। আম্মু বলছে আরেকবার তোমাকে বাসায় নিয়ে আসতে।”
মিশুর মেজাজ চড়ে গেলো। বললো, “আমি ব্যস্ত এখন। ফোন রাখছি।”

ফোন রেখে রাগে ফুঁসতে লাগলো মিশু। প্রয়াসের সাথে ওর সেরকম কোনো সম্পর্ক নেই। কেবলমাত্র কলিগ হিসেবেই দেখে মিশু। কিন্তু লোকটা ওকে খুব পছন্দ করে। একটু একটু স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছে। মিশু জানেনা এসব। ওর বার্থডে তে সব কলিগ মিলে গিয়েছিলো কিন্তু মিশুকে নিয়েই লোকটা এত মাতামাতি করেছে। কয়েকটা ছবি আপলোড দিয়েছে।

মিশু মনেমনে বললো, “আমার পক্ষে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয় কারণ আমি শুধুই মেঘালয়ের। অপরপাশের মানুষটা তাকে নিয়ে কি ভাবছে সেটা না জেনেই এই লোকগুলা এমন মাতামাতি করে যে মেজাজ গরম হয়ে যায়। আমার জগতে মেঘালয় ছাড়া আর কেউ থাকতে পারেনা। আর কক্ষনো কথা বলবো না এই লোকটার সাথে। সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করে দিলো।”

মিশু মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর উঠে শাওয়ার নিয়ে এসে লাঞ্চ সেরে নিলো। দুপুর পেরিয়েছে। একটু পরেই বের হবে এক্সিবিশনে যাওয়ার জন্য। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রেডি হয়ে নিলো। তারপর বেড়িয়ে পড়লো বাসা থেকে।

প্রোগ্রাম খুব ভালোভাবেই শেষ হলো। রাত নয়টার দিকে বাসায় ফিরলো মিশু। বাসায় এসে চেঞ্জ করে শাওয়ার নিলো। তারপর খাবার টেবিলে এসে একটা আপেল নিয়ে কামড়াতে কামড়াতে টিভিটা ছেড়ে দিয়ে বসলো। রৌদ্রময়ী কদিন হলো আলাদা বাসায় উঠেছে। ওর বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে পূর্ব’র সাথে। বাসায় একদম একা মিশু। এই মুহুর্তে হুট করেই খুব একা একা লাগতে শুরু করলো।

হঠাৎ ই মনটা কেমন বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেলো। রাত ১২ টা বেজে গেছে। ফোনের দিকে কয়েকবার তাকালো মিশু। আজ সারাদিনে ফোনটা বারবার বাজলো না কেন? মেঘালয় দিনে কয়েকবার কল দেয়,আজকে একবার ও দিলো না কেন? ফোনটা এখনো বেজে উঠছে না কেন?

মিশু এসে ফোন হাতে নিয়ে মেঘালয়ের নাম্বারে কল দিলো। ফোন আনরিচেবল শুনেই বুকটা ধক করে উঠলো ওর। সারাদিন একবার ও কল দিলোনা এখন আবার বন্ধ! মিশুর বুকটা চিনচিন করে উঠলো। পুরো বাড়িটা একা, আজ রোদও নেই। মেঘালয় ফোনও দিচ্ছেনা,কেমন যেন একাকীত্ব ভর করলো এসে। মিশু একটা টেক্সট পাঠালো মেঘালয়ের নাম্বারে, “phone bondho keno?”

মেসেজ সাকসেস হলোনা। মিশু মেসেজ বক্সের মেসেজ গুলো দেখতে লাগলো। মেঘালয় দুদিন আগে দিয়েছে, “mishu emon behave keno korcho amar sathe?”
“tomar ki hoyeche bolba please?”
“kono karone amar upor rege acho tumi? tomar vetor kichu niye confusion cholche? ki hoiche bolba amk?”

এরকম প্রায় ত্রিশটা মেসেজ যেসবের সারমর্ম হচ্ছে মিশুর কিছু হয়েছে কিনা? মিশু কেন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে? আর মেঘালয়কে কেন কষ্ট দিচ্ছে? প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো মিশু। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো, “আসলেই কি আমি বদলে গেছি?”

আয়না দেখে নিজেই চমকে উঠলো। সত্যিই আয়নায় নিজের যে প্রতিবিম্ব ও দেখছে সেটা সত্যিকার মিশু নয়। এটা নকল মিশু। এই মিশু কৃত্রিম,অনেক রংচং মেখে বানানো। এটা মেঘালয়ের মিশু নয়। মেঘালয়ের কষ্ট পাওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়?

মিশুর বুকের চিনচিন ব্যথাটা আরো বেড়ে গেলো। খুব খারাপ লাগছে ওর। কিন্তু এই পরিবর্তন কিভাবে কোথ থেকে হলো ও কিছুই বুঝতে পারেনি। মনমরা হয়ে আয়নার পাশের সোফায় বসে রইলো অনেক্ষণ। ফোন হাতে নিয়ে কয়েকবার কল দিলো মেঘালয়ের নাম্বারে, কিন্তু বন্ধ পাচ্ছে। কেন যেন একবার সরি বলার প্রয়োজন অনুভব করছে মিশু। কিন্তু ওর নাম্বার তো বন্ধ।

ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো অনেক রাতে।

পরদিন ঘুম ভাংলো অনেক দেরিতে। আজকে সকালেই প্রোগ্রাম আছে। রেডি হয়ে নাস্তা করে কাজে চলে গেলো। কাজের মাঝে কিছু মনে হয়নি। কিন্তু কাজ থেকে বাসায় এসে ফোন নিয়ে দেখলো মেঘালয় একবার ও কল দেয়নি। মিশুর এবার সত্যি সত্যি চিন্তা হচ্ছে। বিকেল হয়ে গেলো, দুদিন ধরে মেঘ কল দিচ্ছেনা। তবে কি সত্যি সত্যিই রাগ করেছে ও?

মিশু চিন্তায় ভেঙে পড়লো। মেঘালয় ফোন দিচ্ছেনা কেন? সত্যিই সেদিন রাতে কষ্ট পেয়েছে? মিশু অনেকবার কল দিয়েও নাম্বার বন্ধ পেলো। তারপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো সেদিন রাতে আসলেই কেমন আচরণ করেছে মেঘালয়ের সাথে। কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করতেই সব স্পষ্ট ভেসে উঠলো চোখের সামনে। সব মনে পড়ে যাচ্ছে আর বুক ফেটে কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইছে।

মিশুর এতদিনের সব অন্যায় আচরণের কথা মনে করে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। মেঘালয় যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। নয়ত নিজের ভূলগুলো বোঝার সাধ্য ওর কখনোই হতোনা। সত্যিই মেঘালয়ের শূন্যতা খুব করে অনুভব করছে ও। মেঘালয়কে ছাড়া একটা দিনও চলবে কি? ও কোথায় এখন? ফোন দিচ্ছেনা কেন?

মিশু মেসেঞ্জার, হোয়াটস এপ সবখানেই মেসেজ পাঠিয়ে রাখলো। চারদিন আগে একটিভ ছিলো। বাসায় তো ওয়াইফাই আছে, মেঘালয় কি তাহলে বাসায় নেই? কিছুই মাথায় আসছে না মিশুর।

থাকতে না পেরে মেঘালয়ের মায়ের নাম্বারে কল দিলো। দুবার রিং হলো কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না। মিশুর বুক ফেটে যাচ্ছে। চার পাঁচদিন আগে আংকেল আন্টি বিয়ের কথা বলেছিলেন। মিশু কিছুদিন সময় চেয়েছিলো বলেই কি ওনারাও রেগে গেছেন? মা ছেলে সবাই মিলে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে বসে আছে। মিশুর এ শহরে আর কে আছে ওনারা ছাড়া? একমাত্র মেঘালয় ছাড়া আর আপন বলতে ওর কেউ নেই। মেঘালয় কোথায়?

মিশু অনেকবার কল দিলো মেঘালয় আর ওর মায়ের নাম্বারে। ওর বাবার নাম্বারে কল দিয়ে দেখলো নাম্বার বন্ধ। টেনশন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। খুবই অসহায় লাগছে নিজেকে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লো মিশু।

৮০.
পরদিন সকালের প্রোগ্রাম শেষ করেই মিশু মেঘালয়ের বাসায় চলে এলো। এসে মেঘালয়ের মাকে দেখেই নিজেকে সামলাতে পারলো না। ছুটে এসে ওনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আম্মু আমাকে মাফ করে দাও। আমাকে মাফ করে দাওনা প্লিজ।”

মিশুর এরকম কান্নার কারণ বুঝতে না পেরে উনি জিজ্ঞেস করলেন, “কি হইছে মিশু?”
মিশু অবাক হয়ে বললো, “আপনি জানেন না কি হয়েছে?”
– “না তো। মেঘ তো কিছুই বলেনি।”
– “রাতে অনেকবার কল দিলাম আপনার নাম্বারে, ধরলেন না কেন তাহলে?”
মা বললেন, “আমার নাম্বার সাইলেন্ট করে ঘুমিয়েছিলাম।”
– “বাবার নাম্বার বন্ধ পেলাম কেন? সবাই আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে বসে আছেন?”
-“আকাশ তো রাতে ফোন বন্ধ করে ঘুমায়। সকালে কল ব্যাক করতে চাইলাম, পরে ভাবলাম তোর তো এই সময়ে প্রোগাম থাকে তাই আর কল দিইনি।”

মিশু ওনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে গেলো, “আম্মু মেঘ আমার সাথে খুব রাগ করেছে। তিনদিন ধরে আমাকে ফোন দেয়না। ওর নাম্বার ও বন্ধ।”
মা মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “আমি জানিনা তোদের মাঝে কি হয়েছে। তবে মেঘালয় যখন এসে বলল বিয়ে ক্যানসেল করে দাও তখনি ভাবলাম হয়ত ব্রেকাপ হয়ে গেছে তোমাদের। মেঘালয় আর কিছুই বলেনি। ওর ফোন রুমে পড়ে আছে। ও কোথায় গেছে কিচ্ছু বলে যায়নি।”

মিশু কান্নায় ভেঙে পড়লো। বিয়ের ব্যাপারটা ডিনাই করার কারণেই মেঘালয় আরো বেশি কষ্ট পেয়েছে। ব্রেকাপ কি করে হবে? স্বামী স্ত্রী’র মাঝে তো ব্রেকাপ হয়না। এটা তো মাকে বলা সম্ভব না। তবে সবমিলিয়ে পাহাড় সমান কষ্ট দিয়ে ফেলেছে মেঘালয়কে। এখন কি হবে? কেউই জানেনা মেঘালয় কোথায় আছে!

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে