অনুভূতির সংমিশ্রণ পর্ব ২

0
2330

অনুভূতির সংমিশ্রণ?

তৃধা মোহিনী(ছদ্মনাম)

পর্ব দুই

?

বাসায় আসছে নিধি কিন্তু ভিতরটা ধুকপুক করছে ভীষনভাবে কারন মার খেয়েছে বাইরে ঠিকই কিন্তু বাড়ি ত উনারই, আবারো যদি থাপ্পড় মারে??

থাপ্পড়ের কথা মনে হতেই অটোমেটিক গালে হাত চলে গেলো নিধির..কোনরকমে ভিতরে আসলো সে।।

পিছন দিক থেকে দুইটা পিচ্চি হাত নিধির কোমর ধরে বললো,”ফুপি ধরে ফেলেছি”?

নিধি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,”কে এমন দুঃসাহস করলো”?

“আমি এই বাড়ির রাজকন্যা ” বলেই সামনে এসে নিজের দুই হাত কোমরে রেখে বললো।।

নিধি বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে এই পাক দিয়ে বললো,”কেমন আছে আমার রাজকন্যা?? ”

“হুহ??বলবো কেন??সকালে না দেখা দিয়ে তুমি চলে গিয়েছিলেন কেন?” পিচ্চি বলে উঠলো

“সরি পরি!!আমি আসলে যখন তোমার ঘরে যায়,তখন তুমি ঘুমিয়েছিলে..তাই আমি না ডেকে চলে আসি” নিধি মাসুমের মতো মুখ করে বললো।।

“আচ্ছা আচ্ছা থাক আর আমাকে ইমোজির মতো ব্ল্যাকমেইল হবে না” পিচ্চিটা বললো

“ইমোজি আবার কি??” নিধি অবাক হয়ে বলে উঠলো

“ও মা তুমি ইমোজি চিনো না??মা যখন রাগ করে বাবা তখন এইভাবে ইমোজির মতো ব্ল্যাক মেইল করে” পিচ্চি বললো

এতোক্ষনে নিধি বুঝতে পারলো ও কিসের কথা বলছে।।

“মামুনি ওটা ইমোজি না ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল হবে” মাথায় হাত দিয়ে।।

“ওই হলো ব্ল্যাকমেইল আছে ত নাকি” মুখ ভেংচিয়ে বললো পিচ্চি

“মাহিইই” পিছন থেকে ডাক পরলো

পিচ্চি অর্থাৎ মাহি আমার জামার পিছনে লুকিয়ে পরলো আর বললো,
“প্লিজ ফুপি বাচাও?”

সামনে এসে ২৮ বছর বয়সী নারী আসলো..ইনি হলেন ভাবী অর্থাৎ ইমরেতে ভাইয়ারর ভাবী,মেহবুব ভাইয়ার বউ..ইমরেত ভাইয়ারা দুই ভাই..বড়টার বউ হচ্ছে মেহবুব ভাই..মেহবুব ভাইয়ের বউয়ের নাম স্মৃতি ভাবী..ভীষনভাবে ভালো উনি

“এই নিধি মাহিকে কে দেখছো??নুডুলসের প্যাকেট খুলে গার্ডেনে যেয়ে ছড়িয়ে আসছে..আজ ওর একদিন কি আমার একদিন”ভাবী বলে উঠলো

নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ভাবী খপ করে মাহির হাত সামনে টেনে নিয়ে আসলো।।

রাগী চোখে মেয়ের দিকে তাকালে,মাহি টুপ করে তার মায়ের গালে চুমু খেয়ে বললো,” সরি মা”

এরকম কাজ করলে কেও কি আর রেগে থাকতে পারে??স্মৃতি ভাবী ও হেসে দিলো।।

মায়ের হাসি দেখে মাহি এক দৌড় দিলো।।

“আরেহ!!আস্তে বাবা” স্মৃতি বললো।।

নিধি মা মেয়ের মুহূর্ত উপভোগ করছিলো..ইশ সে যখন গ্রামে থাকতো তার মায়ের সাথে কতোই না দুষ্টামি করতো?

“তুমি ওমন গালে হাত দিয়ে আছো কেন??” স্মৃতি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো।।

নিধি কি বলবে বুঝতে পারছে না,ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে আছে আর বলবেই বা কি যা তার গুনধর দেবর সামনে থাপ্পড় মেরেছে??

“ইয়ে মানে আজ র‍্যাগ ছিলো কলেজে,কাকে র‍্যাগ দিছিলো কে জানে থাপ্পড় আমি খেয়েছি” নিধি ইনিয়ে বিনিয়ে বলে উঠলো

স্মৃতি গালের হাত সরিয়ে দেখলো,পাঁচটা আঙ্গুলের দাগ একদম বসে গেছে,ফর্সা মুখে মনে হচ্ছে লাল রক্ত জমাট বেধে গেছে।।

“একি!!কত জোড়ে মেরেছে তোমাকে??পুরা গালের কি অবস্থা” স্মৃতি আতকে উঠে বললো।।

“আজ তোমার ভাইয়া আসুক..কোন বেয়াদবের দল এই হাল করেছে,ভার্সিটি যেয়ে সব কয়টার খবর নিতে বলবো” স্মৃতি ভাবী রেগে গিয়ে কথাগুলো বললো।।

তারপর আমার হাত টানতে টানতে ডাইনিং এর চেয়ারে বসিয়ে আইসপ্যাক ধরে থাকলো..আসলে ভাবী আমাকে প্রচুর ভালোবাসে..আমার সব প্রয়োজন উনি এক নিমিষে বুঝে যান..ক্লাস টেন থেকে আছি এই বাসাই কিন্তু উনি আমার মায়ের মতোন সব জিনিসের খেয়াল রাখে..আসলে মেহবুব ভাইয়া আর ইমরেত ভাইয়ার মা বাবা মারা যাওয়ার পর স্মৃতি ভাবী সংসার টা সামলে রেখেছে..এতো নামীদামি মানুষ হয়েও এক চুল পরিমাণ অহংকার নেই..এমনকি স্মৃতি ভাবীর ফ্যামিলি ও অবেক হাই ক্লাস,কিন্তু তাদের পিতামাতার মন একদম পানির মতো পরিষ্কার কোন ভেজাল নেই।।

রাতেরবেলা,

ইমরেত হসপিটালের ডিউটি সেরে বাসায় আসছে..মেহবুব ভাই ও অফিস থেকে ফিরে এসেছে..মাহি বসে আছে আর সবার জন্য অপেক্ষা করছে।।

ফ্রেশ হয়ে দুই ভাই নামলো..স্মৃতি খাবার সার্ভ করছে,যে যার চেয়ারে অবস্থান করলো।।

“নিধি কই?” মেহবুব দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করে বসলো।।

“নিধির খুব জ্বর,আমি খাবার খাইয়ে ওষুধ খাওয়াইয়ে আসছি” স্মৃতি বললো।।

“সেকি!!জ্বর হলো কিভাবে??” মেহবুক অবাক হয়ে বললো।।

“মার খেয়ে জ্বর আসছে” স্মৃতি বললো

“কে মেরেছে???”মেহবুক একটু মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো।।

” আমি মেরেছি” ইমরেত গম্ভীরমুখে হয়ে বললো

আর কি বলবে দুজন চুপ হয়ে থাকলো..কারন,ইমরেত শাসন করে নিধিকে একটু বেশিই?

“কেন মেরেছো ফুপি কে তুমি??” মাহি চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো

“কারন,তোমার ফুপি ভুল করেছে..এখন কথা না বলে চুপচাপ খাও?” ইমরেত খাবার মুখে গুজে দিয়ে বললো।।

মাহি মুখ ভেঙচি দিয়ে তার মায়ের হাত থেকে খাবার খাচ্ছে।।

গভীর রাতে নিধির মনে হলো তার গালে কেও হাত বুলিয়ে নরম স্পর্শ পাচ্ছে কিন্তু জ্বরের জন্য চোখ খুলতে পারছে না সে..জোর দিয়ে যখন চোখ খুললো অন্ধকার ঘরে কিছুই দেখতে পেলো না..ঘরের দরজা ও ত লক করা কে বা আসবে??

“আপনি খুব খারাপ ইমরেত ভাইয়া..আপনার হাতের মার খাওয়ার জন্য আমি জ্বরে ভুগতেছি দেইখেন আপনার বউ হবে যখন ওর হাতে মার খেয়ে আপনিও জ্বরে ভুগবেন?” নিধি জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় করে বলছে

নিধির জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় বলাটা কারো কানে যেতেই ব্যক্তিটি অন্ধকারে মধ্যেই বাকা হাসি দিলো।।

সকালবেলা,

নিধির ঘুম ভাঙলো বেলা বারোটা জ্বর কমলেও শরীরের দূর্বলতা এখনো যায় নাই..মনে হচ্ছে কতই না চালের বস্তা তুলেছে যে শরীরটা ভার হয়ে আছে।।

ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো..স্মৃতি ভাবী বসে বসে কাজ দেখিয়ে দিচ্ছে নতুন মালীদের,পুরোনো মালি চলে গিয়েছে বয়স হওয়ার কারনে আর পারছে না কাজ করতে এইজন্য।।

“তুমি ডাইনিং যাও, আমি আসছি” স্মৃতি ভাবী বললো

নিধি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।।

কিছুক্ষন বাদে সামনে পরোটা দিলো ভাবী কিন্ত মুখে দিতেই তিতা লাগলো..মনে হয় জ্বরের মুখে এইজন্য..

খেতে পারলাম না তখন ভাবী স্যুপ করে দিলো।।

মাহিও স্কুলে গেছে নইত ওর সাথে মজা করা যেতো।।

কল বাজছে, দেখলাম শামীম ফোন দিয়েছে।।

“বল” নিধি বললো

“আসিস নি যে কলেজ??” শামীম বললো

“জ্বর হয়েছে রে এইজন্য আসে নি” নিধি ক্ষীন কন্ঠে বলে উঠলো

এদিকে একটা আননোন নাম্বার থেকে নিধির ফোনে কল এসেই চলছে..নিধি দেখেও এভোয়েড করলো,যেহেতু চিনে না দেখেও কি হবে।।

বেশকিছুক্ষন কথোপকথন চললো।।

যে ব্যক্তিটি ফোন দিয়ে বারবার ওয়েটিং পাচ্ছিলো সে রাগে স্বজোরে গ্লাস ভেঙে ফেললো।।

সন্ধ্যাবেলা,

নিধি আরামসে শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছে,নিউজফিডে এটা সেটা ফানি ভিডিও দেখছে আর হাসছে একটু পর পর।।

ইমরেত নিধির রুমে এসে যখন দেখলো নিধি ফোনে কি দেখছে আর হাসছে তখন নিধির কাছে এসে ফোনটা নিয়ে স্বজোরে ফেলে টুকরো টুকরো করে দিলো।।

“আল্লাহ আমার ফোন?” নিধি তড়িঘড়ি ফোন তুলতে গেলে ইমরেত হ্যাচকা টান দিলো।।

“যেহেতু কাজের সময় তোমাকে পাওয়া যায় না,ফোন ও তোমার কাছে থাকবে না” ইমরেত দাত চেপে কথাগুলো বলে হনহন করে বেরিয়ে পরলো।।

নিধির চোখে জল এসে গেছে..কেন তাকে দেখতে পারে না এই লোক??কি করেছে সে তার??

ভাঙা ফোন হাতে নিয়ে বসে বসে কাদছে নিধি।।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে