অদ্ভুত কান্না ১

0
2413

অদ্ভুত কান্না
.
— ‘কে কাঁদে ওখানে, কে ?
হাবিব তুমি কি কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছ ?
হাবিব, এই হাবিব , প্লিজ ঘুম থেকে উঠো, রান্নাঘরের ওদিকে কে জানি কাঁদছে।
হাবিব হাই তুলতে তুলতে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল; ‘ ডাকছো কেন ? এই মাঝরাতে কে আবার কাঁদবে ? বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির শব্দ বোধহয় তোমার কাছে কান্নার শব্দ মনে হচ্ছে, ঘুমাও তো নাদিয়া।’
-নাদিয়া আত্মবিশ্বাসের সাথে আবার বলল, ‘না হাবিব, কান্নার শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙেছে, এখন আর শুনতে পাচ্ছি না, তুমি বাতিটা একটু জ্বালাও প্লিজ, আমার খুব ভয় করছে।’

চোখ কচলাতে কচলাতে হাবিব ঘুম থেকে উঠলো, বাথরুম-রান্নাঘর সবকিছু দেখে এলো, কোথাও কিছু নেই।
– হাবিব নাদিয়ার দিকে একটু মনযোগ দিয়ে তাকালো, ওর চেহারায় প্রচন্ড ভয়ের ছাপ, সে ভেবে পাচ্ছে না বিয়ের দু’সপ্তাহ হলো এরকম আগে কখনো হয়নি, আজ হঠাৎ করে নাদিয়া এরকম করছে কেন! যাইহোক, ওর ভয় দূর করার জন্য রুমের বাতি জ্বেলে কিছুক্ষণ বসে থাকা উচিৎ, হাবিব একটা সিগারেট বের করে আগুন ধরাতে ধরাতে তার মনে হলো নাদিয়ার বাড়ি থেকে একটা ফোন এসেছিলো, এর পর থেকে নাদিয়ার মাঝে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বাড়ি থেকে বড়জোর দুঃসংবাদ আসতে পারে, এতে রাতে কান্না-টান্না শুনার কি আছে ? তাছাড়া বাড়ি থেকে খারাপ সংবাদ এলে তাকে জানানোর কথা। হাবিব সিগারেট টানতে টানতে এসব ভাবছে।
নাদিয়া হঠাৎ করে বিড়বিড় করে বলল, ‘হাবিব, হাবিব, তুমি হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছ! কে জানি বুকে ছাপা কষ্ট নিয়ে হাসছে, এরকম হাসি দেখলে আমার ভয় লাগে হাবিব।’
হাবিব ভ্রু কুচকে তাকালো, নাদিয়ার শরীর ঘেমে গেছে, ধীরে ধীরে ওর চেহারা কেমন যেনো অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে, ভয়ে পেলে এমন হয় নাকি ?
খানিক পরেই কারেন্ট চলে গেলো, বাইরে বাতাসের সাথে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, তাই মনেহয় কারেন্ট চলে গেছে।
কারেন্ট চলে যাবার সাথে সাথে নাদিয়া হাবিবের হাতটা শক্ত করে ধরলো।
-হাবিব নাদিয়াকে বুকের সাথে আগলে নিয়ে বলল, ‘নাদিয়া ওসব কিচ্ছু না, ঘুমাও তো।’
আমি মোমবাতি জ্বালাচ্ছি তুমি ভয় পেওনা, কেমন ? ‘
-নাদিয়া কাপা গলায় বলল, ‘না, না হাবিব, তুমি আমাকে শক্ত করে জরিয়ে থাকো, আমাকে কে জানি ডাকে, তুমি মোমবাতি জ্বালাতে গেলে আমাকে নিয়ে যাবে।’
হাবিব নাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবছে ওর কি হলো, নতুন বউয়ের এই অস্বাভাবিক আচরণ আবার সবাইকে জানানো উচিৎ হবেনা, ওর বাড়িতে একটা ফোন দেবো নাকি ?
ফোন বাজছে, কেউ ধরছে না, বোধহয় এতো রাতে কেউ জেগে নেই, টানা তিনটে ফোন দেবার পরও কেউ ধরলো না।
হঠাৎ করে নাদিয়া হাবিবকে ছেড়ে দিলো, তারপর বিড়বিড় করে বলল, ‘হাবিব তুমি আমার কাছে এসো না, তুমি কাছে আসলে আরও বেশি কাদে, দড়ি হাতে নিয়ে আসে তোমাকে বেধে ফেলতে।’
কিছুক্ষণ পর কারেন্ট এসেছে, অন্ধকার রুম আলোকিত হয়েছে, নাদিয়ার অবস্থা দেখে হাবিব রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলো।
ঘেমে একদম ভিজে গেছে, চুলগুলো এলোমেলো, ওর পরনে কাপড় ঠিকটাক নেই।
ভুতপ্রেতে হাবিব বিশ্বাস করেনা, কিন্তু নাদিয়ার সাথে এসব হচ্ছে কেন ? কার কান্না শুনতে পায় ? সে নাদিয়ার কাছে গেলে আরও বেশি কে কাদে! কেন কাদে ?
– নাদিয়াকে এখন একটু স্বাভাবিক লাগছে দেখে হাবিব জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কাকে দেখতে পাও নাদিয়া, তাকে কি তুমি আগে থেকে চিনতে ?’
– নাদিয়া চমকে গিয়ে বলল, কাকে দেখতে পাবো আবার, তোমার মাথা কি ঠিক আছে ? দাঁড়াও আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসি ?’
– হাবিব আরও অবাক হলো, নাদিয়া খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে, চিরচেনা হাসিখুশি চেহারায় কথা বলছে, মনে হচ্ছে এতক্ষণ যা ঘটেছে সব ভুলে গেছে, না হয় এতক্ষণ মজা করেছে।’
– নাদিয়া চা বানাতে রান্নাঘরে গেলো, হাবিব নাদিয়ার ফোনের প্যাটার্ন জানে, তাই ফোন হাতে নিয়ে কললিস্ট চ্যাক করে দেখলো, লাস্ট দু’টা হিন্দু ছেলেমেয়ের নামে কল এসেছে, একজনের নাম চৈতালী বিশ্বাস, আরেকজনের নাম অনুপম রায়। এদের কাউকে হাবিব চিনে না।
সে নাদিয়ার ফেইসবুকে ঢুকার চেষ্টা করছে, একাউন্ট লগআউট থাকায় ঢুকতে পারলো না, হঠাৎ মনে হল ম্যাসেঞ্জার চ্যাক করা যেতে পারে, ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে দেখলো প্রথম ম্যাসেজটা চৈতালী থেকে এসেছে, শেষ ম্যাসেজটা হলো, ‘জবিদাস আর নেই নাদিয়া।’
নাদিয়া ম্যাসেজটা সিন করেনি, সিন না করায় বোধহয় চৈতালী আবার কল দিয়েছিল।
কিন্তু হিন্দু ছেলে-মেয়েদের সাথে নাদিয়ার সম্পর্ক কি ? আর জবিদাস কে ?
চৈতালীর নাম্বারে কল দিয়ে দেখবো নাকি ? না থাক, রাত অনেক হয়েছে, তারচেয়ে বরং ওর নাম্বার সেভ করে রাখি, হাবিব চৈতালীর নাম্বার সেভ করবে এমন সময় রান্নাঘর থেকে চিৎকার শুনতে পেলো, হাবিব দৌড়ে গিয়ে দেখলো নাদিয়া মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, এরিমধ্যে রান্নাঘরের জানালার আয়না একটা ভেঙে পড়লো, এই আয়না আগেও কিছুটা ভাঙা ছিলো, বাতাসের সাথে টুকরো টুকরো হয়ে আয়না ভেঙে পড়ছে।
হাবিব নাদিয়াকে কোলে করে বিছানায় এনে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো, কিছুক্ষণ পর নাদিয়া চোখ খুলে হাবিবের কলার ধরে টেনে শক্ত করে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বলল, ‘ছাদে কে যেন হাটে, স্বাভাবিক হাটা না, পা টেনে টেনে হাটছিল, আমি বললাম কে ? কে ওখানে হাটে ? সাথে সাথে আয়না ভেঙে পড়লো।’
-নাদিয়ার অবস্থা দেখে হাবিব চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল, ‘এখন ঠিক আছো তুমি ?’
-‘নাদিয়া আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল, ‘হ্যা ঠিক আছি, তুমি আমাকে শক্ত করে ধরো, আরও শক্ত করে।’
ছোট বাচ্চাদের মতো নাদিয়া গুটিশুটি খেয়ে হাবিবের এক হাত শক্ত করে ধরে ঘুমিয়ে গেলো। ঘুমে হাবিবের চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসায় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। খানিক পরে ঘুম ভেঙে গেল নাদিয়ার বিড়বিড় শুনে, লক্ষ করে দেখলো কাকে যেন বলছে, ‘ছেড়ে দিলাম, আমি হাবিবকে ছেড়ে দিলাম।’
খানিকক্ষণ হাবিবের পুরোপুরি ঘুম ভেঙে গেলো, পাশে হাত দিয়ে দেখে নাদিয়া বিছানায় নেই।

অদ্ভুত কান্না ( ১ম পর্ব )
লেখকঃ jobrul islam habib

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে