অচেনা শহর পর্ব-৪৭+৪৮

0
3035

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৪৭

অন্তরাদের বাসা থেকে কাল চলে এসেছি এই নতুন বাসায়। টিনের একটা বাসায় ছোট দুই হাজার টাকায় এটা দিয়েছে আমি রাজি হয়ে গেছি। আমার কাছে সাথে তার হাজার টাকা আছে 2000 টাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছি বাসাটা একদমই খারাপ অবস্থা। কিন্তু কিছু করার নাই এত কম টাকায় এর থেকে ভালো বাসা পাওয়া যাবে না।রাতে যখন আসেন তখন আরো খারাপ অবস্থা ছিল অনেক কষ্টে দাঁড়ানোর মত অবস্থা করেছি।
ছোট একটা রুম পুরাই ফাঁকা রয়েছে থাকার মত কিছুই নেই না খাট আছে না রুমে আসবাবপত্র শুধু ধুলো-ময়লা ছিলো আর বাড়িওয়ালা এইটা ময়লার পুরনো আসবাব পত্র রাখার জন্য করেছিল। বাসা এইটা পড়েছিল ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য।
একমাস আগে নাকি সব পুরনো আসবাবপত্র সব কিছু বিক্রি করে দিয়েছে জন্য রুমটা খালি পড়ে আছে। রাস্তায় বাড়িওয়ালার সাথে দেখা হয় সে আসলে একটা এক্সিডেন্ট এআঘাত পায় পায় এই সাগরে যাচ্ছিল রিকশা উল্টে পড়ে যায় আমি তাকে সাহায্য করেছি তখন সে আমার বিষয়ে জানতে চাইলে আমি আমার সব কিছু বললে সে আমাকে বলে যে আমার তো বাসা ফাঁকা নাই একটা ময়লা টিনের ঘর আছে। আমি তাতে রাজি হয়ে যায় অন্তরার সাথে আর মার লেগেই থাকে রাগারাগি অন্তর আমাকে বুঝতে না দিল আমি তো সব বুঝেই গেছি এভাবে অন্যের বাসায় পড়ে থাকা ঠিক না তাই রাজি হয়ে যায়।

আদ্র কি এখনো কিছু বলিনাই। ওর সামনে পরীক্ষা এক সপ্তাহ আছে। রিসিভ করি নাই যদি জানতে চাই কোথায় আছি তাই।

আজকে বাসা থেকে বের হয়েছি বাইরে থেকে কিছু কিনে খেয়েছি কাল আজকে কি করবো বুঝতে পারছি না। বাইরে খেলে টাকা ও বেশি লাগে অন্তরা ওর আমাকে কল করেছে রিসিভ করি নি‌।
হাতে দুই হাজার টাকা নিয়ে বসে আছি আর ফোন।
হাঁটতে হাঁটতে আমি একটা পার্ক এ চলে এসেছি এখন দুপুর। না খেয়ে আছি এখন ও ক্লান্ত হয়ে বসে টাকা গুলো গুনে দেখছি। হঠাৎ একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেল একটা কালো চিকন করে ছেলে আমার কাছে দিয়ে দৌড়ে আমার টাকা নিয়ে ভেগে গেল আমি হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ছেলেটা দৌড়ে পালাচ্ছে।
যখন হুশ এলো দাঁড়িয়ে পরলাম এই ছেলে যে আমার সম্বল নিয়ে পালাচ্ছে এই দিন দুপুরে এ মে চুরি হয় আমার জানা ছিলো না আমি ও চিৎকার করে তার পেছনে দৌড়াতে লাগলাম। কিন্তু ছেলেটার সাথে কি আমি পারবো না।

ছেলেটা অনেকটা দুরে চলে গেছে আমি তবু তাকে ধরতে চাইছি চিৎকার করছি দৌড়াচ্ছি। অবাক করা বিষয় আশেপাশে এতো মানুষ আছে কেউ ভ্রুক্ষেপ ও করছেনা।
একবার করে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।এটা গ্ৰাম হলে এতোক্ষণ এ হ‌ইচ‌ই শুরু হয়ে যেত সবাই এগিয়ে আসতো কিন্তু এখানে কেউ আসছে না।

সবার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ছেলেটার দিকে যাচ্ছি হঠাৎ ছেলেটা উধাও কোথাও নাই। আমি দাঁড়িয়ে পরলাম আশেপাশে ছেলেটা নেই তার মানে পালিয়ে গিয়েছে।
থম করে সেখানেই বসে পরলাম এখন কি করবো আমি সব টাকা তো নিয়ে গেল এবার আমার চলবে কি করে।

সারাদিন কিছু খাইনি খিদের জ্বালায় পেট ব্যাথা করছে। সব বিপদ কি আমাকে এসেই ঘিরে ধরে।
রাস্তায় কিনার ঘেঁষে বসে চোখের পানি ফেলছি নিজেকে এতো অসহায় লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ফোন জামার নিচে লুকানো ছিলো এটা অনেক দামি ফোন তাই আগে থেকেই সাবধান এ ছিলাম।
ফোন ধরতে ও ইচ্ছে করছে না তাও বের করলাম ফোনের দিকে তাকিয়ে আদ্রর নাম্বার চোখে পরলো আদ্র কল করছে।

হ্যালো, স্নেহা কোথায় তুমি? দুইদিন ধরে কল কেন রিসিভ করছো না আর আমি আজ অন্তরাদের বাসায় গিয়েছিলাম ওখানে তো তুমি ছিলে না কোথায় আছো তুমি প্লীজ বলো আমি কতো চিন্তায় আছি জানো তুমি।

আমি নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না। ফোন কানে নিয়েই কেঁদে উঠলাম আমার কান্না শুনে আদ্র আর ও ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

কি হয়েছে তোমার বলো আমাকে কাঁদছো কেন? দেখো আমার কিন্তু ভয় করছে বলো কি হয়েছে? আচ্ছা তা বলতে হবে না কোথায় আছো বলো এখন।

আমি কাঁদার জন্য কথা বলতে পারছি না হেঁচকি দিয়ে দিয়ে কাঁদছি। আর ওপাশ থেকে আদ্রর ভয় পাওয়া কন্ঠ কানে আসছে হঠাৎ আদ্র ধমক ধমক শুনে কেঁপে উঠলাম। আমাকে আর সাথে সাথে আমি চুপ করে গেলাম আর বললাম কোথায় আছি। আদ্র ফোন কেটে দিলো।

আমি ওইখানেই বসে র‌ইলাম বিশমিনিট পর আদ্র বাইক নিয়ে এলো আমার কাছে।
বাইক থেকে নেমে আমাকে এই অবস্থায় দেখে দৌড়ে আমার পাশে বসে আমার গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে?

স্নেহা কান্না না করে বলো কি হয়েছে এখানে এভাবে বসে আছো কেন?

আমি আস্তে আস্তে সব খুলে বললাম আদ্রকে সব শুনে আদ্র ঠাস করে আমার গালে চর মারলো।

ইডিয়েট গার্ল এতো কিছু হয়েছে আর তুমি আমাকে কিছু জানাওনি কেন বলো? কতো চিন্তায় ছিলাম এই দুইদিন জানো।

রেগে চিৎকার করে উঠল।
আমি ভয়ে গালে হাত দিয়ে চুপ করে আছি।

কি হলো কথা বলছো না কেন বেশি বেড়ে গেছো তুমি আমাকে এসব জানালে কি হতো না নিজে মাতাব্বরি করতে গিয়েছে।

আমি আপনার দয়া নিতে চায় নাই।

আমার কথা শুনে আদ্র মুখ কঠিন করে ফেলল আরো।

আমি তোকে দয়া করবো কে বলেছে? ভালোবাসি তোকে কেন বুঝিস না।

আপনি তুই তোকানি করছেন।

হ্যা করছি আর কোন দিন কিছু লুকালে মেরে ফেলবো একদম স্টুপিট।

আপনি আমাকে বকছেন কেন?

একশ বার বলবো চলো।

বলেই আদ্র আমার হাত ধরে টেনে দাড় করালো।

কি অবস্থা করেছো নিজের।

কোথায় যাবো? অবাক হয়ে বললাম।

আদ্র বলল,, আমার সাথে আমার বাসায় থাকবে আজ থেকে। অন্যের বাসায় থেকে আর কটু কথা শুনতে হবে তোমার।

না আমি আপনার বাসায় যাব না।

তুমি যাবে।

যাব না বললাম তো।

স্নেহা জেদ করো না আমি যেহেতু বলেছি তোমাকে আমার সাথেই যেতে হবে।

কেন যাব আপনার সাথে। আপনি আমাকে জোর করতে পারেন না আমার উপর আপনার কোন অধিকার নেই। আমি নিজের ব্যবস্থা নিজেই করবো অন্যের দয়ায় থাকবো না আর একদম অধিকার খাটাতে আসবেন না।

রেগে বললাম আদ্রর মা আমাকে সহ্য করতে পারেনা আদ্র‌ই বলেছে এখন আদ্রর সাথে বাসায় গেলে সে আমাকে দেখতে পারবেনা হয়তো আদ্রর সাথে রাগারাগি হবে। এসব ভেবে আদ্রকে এমন করি বললাম।

কি বললে তুমি তোমার উপর আমার অধিকার নেই।
চোখ মুখ শক্ত করে বলল আদ্রর।

হ্যা নেই কে হন আপনি কিছুই না আপনাকে সব কিছু বলে কেন করবো আমি।

তুমি কিন্তু বেশি বলছো।

ছারুন আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।

আদ্র হাত ছারলো না।

কথা শুনছেন না হাত ছারুন কেন আপনার বাসায় গিয়ে কি পরিচয় দেবেন আপনি। আর তারা আমাকে থাকতেই বা দিবে কেন?

পরিচয় দিবে এখন তারপর সেটাই বলবো।

মানে।
অবাক হয়ে বললাম।

তোমার উপর আমার অধিকার সব থেকে বেশি থাকবে আজকের পর থেকে।

শক্ত করে হাত ধরে বলল।

বাইকে উঠো আমি এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না।

যাব না বললাম তো।
.

আমি একদিন ভাবতে গিয়ে আরেকদিক ভুলে গেছিলাম। আদ্র আমার ওই কথায় যে এমন কান্ড করবে ভাবিনি।
আমি হতদম্ব হয়ে সব কিছু দেখছিলাম না করতে পারিনি। আদ্রকে তো আমি ও খুব ভালোবাসি তাকে নিজের করে পাওয়ার বাসনা আমার ও হয়েছিলো তাই চুপ করে আদ্রর কথা মেনে নিয়েছিলাম চুপ।
আদ্র আমাকে জোর করে একটা বাসায় নিয়ে এসে দুতালা বাসা সামনে বিশাল ফুল ফলের বাগান।

আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষন পর অন্তরা হৃদয় আদ্রর ফ্রেন্ড আশিক রাহাত ভাইয়া আসে‌।
অনেকদিন পর রাহাত ভাইয়াকে দেখি সে আমাকে দেখেই শুকনো একটা হাসি দেয় তাকে দেখেই চমকে উঠি কি অবস্থা হয়েছে তার।

ভাইয়া আপনাকে এমন লাগছে অসুস্থ কি আপনি।

ভাইয়া একটা হাসি দিয়ে বলে, তেমন না অনেকদিন পর দেখছো তো তাই এমন লাগছে।

না আপনাকে অসুস্থ লাগছে।

দূর আমি অসুস্থ না চিন্তায় থাকি তো কিছুদিন পর ফাইনাল পরিক্ষা তা তো জানোই।

ওহ।

অন্তরা আমাকে শাড়ি পরিয়ে দেয় না খাওয়া আমি ধরতে পারছি না কিন্তু আদ্রর এক কথা আগে বিয়ে তারপর সব। গম্ভীর হয়ে ছিলো সারাটা সময় আমার কথায় যে কষ্ট পেয়েছে বুঝতে পেরেছি।

শাড়িটা দেখে আমি চমকিয়েছিলাম কারন এটা তো সেই শাড়ি যেটা আমি আদ্রর সাথে শপিং মলে গিয়ে দেখেছিলাম।

এটা আদ্র কোথায় পেল আদ্রকে জিজ্ঞেস করতে হবে অন্তরা আমাকে সাজিয়ে দিলো বাইরে এসে আদ্র কে দেখলাম ও পাঞ্জাবি পরে আছে গোলাপী রং এর শাড়ির সাথে ম্যাচিং এসব কি আগেই করে রেখেছিল নাকি। আদ্র আমার দিকে একবার ও তাকালো নি আমি ই হা করে তাকিয়ে ছিলাম।

আদ্র তাকালো না দেখে মনে মনে কষ্ট ও পেলাম।

কাজি আসতেই বিয়ে পরানো শুরু হলো প্রথমেই একটা কাগজে সাইন করতে হলো তারপর তিনবার কবুল বলে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
কবুল বলার সময় বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল কিন্তু সে তো নেই কোথায় ও নাই এই পৃথিবীতে আর নেই। আমার নিসঙ্গ জীবনে একজন কে পেলাম।

বিকেলে খাওয়া দাওয়া সেখানেই হলো। এটা আদ্রর বাসায় ওই জন্মদিনে নাকি ওর বাবা গিফট করেছে। পরে জানতে পারলাম।

সন্ধ্যায় সবাই বেরিয়ে এলাম বাসায় থেকে এখন আমি আর আদ্র আদ্রদের বাসায় যাব। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। আদ্র বাইকে উঠে আমাকে উঠতে বলল শাড়ি পরে উঠতে কষ্ট হলো।
আদ্র আমার একহাত নিয়ে বলল,,

আর কখনো বলতে পারবে না আমার তোমার উপর অধিকার নেই। আজকে থেকে আমার সব কথা শুনে চলতে তুমি বাধ্য।

আপনার পরিবারের কেউ আমাকে মানবে না।

আই ডোন্ট কেয়ার। আর সেসব তোমার ভাবতে হবে না আমি সব সামলে নেব।

আমার ভয় করছে। আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন।

আদ্র আমার হাতে উল্টো পিঠে চুমু খেলো আমি টেনে হাত ছারিয়ে নিলাম। আদ্র একবার আমার দিকে তাকিয়ে বাইক স্টাট দিলো।
চলবে♥️

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৪৮

জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আদ্রদের ডয়িং রুমে। মিনিট পাঁচেক আগে এখানে এসে পৌঁছেছি আমরা।
তারপর থেকে এভাবেই দাঁড়িয়ে আছি আমি।
একটু আগে আদ্রর মার হাতে আদ্র একটা চর খেয়েছে তারপর থেকে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্র আর তার পাশে আমি‌।
আদ্রর মা নিজের আদরের ছেলেকে মেরে কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।আর আমার দিকে রেগে তাকাচ্ছে।
বাসায় আদ্র মা, চাচি, দাদু, আর ছোট বোন আছে।

আদ্রর বাবা বাসায় খুব কম সময় থাকে রাত করে আসে এখন ও এসে পৌঁছায় নি। এখানে আসার পর আমি হাঁ করে চারপাশ দেখছিলাম কতো বড় বাড়ি আদ্রদের যেন কোন রাজ প্রাসাদ এটা।
বাইরে মনে হয় ফুলের বাগান রাত হলেও আলো ছিলো যাতে দেখেছি। আদ্রর বোনের ফুল পছন্দ এজন্য এই বাগান।

কলিং বেল দেওয়ার সময় আমি শক্ত করে আদ্র হাত ধরে ছিলাম‌। বুকের ভেতর জোরে জোরে লাফাচ্ছিলো হার্টবিট ভয়ে কি হবে? দরজা খুলে দেয় আদ্রর মা। আমাদের এমন বিয়ের পোশাকে দেখে উনি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করে,,,

” এসব কি আদ্র?”

আদ্র র্নিধিদায় বলে উঠে,,,
” আম্মু আমি স্নেহাকে বিয়ে করেছি।”

উনি চিৎকার করে ওঠে শুনে আর ঠাস করে চর মেরে বসে আদ্রর গালে। আমি চমকে উনার দিকে তাকায় উনি অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বকতে লাগলে।
আদ্রর চাচি তাকে নিয়ে সোফায় বসেছে আর আদ্রর বাবাকে কল করে সব বলেছে সে আসছে।

আদ্রর বোন কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে আদ্রর দাদু আমাকে মাথা থেকে পা অবধি দেখছে তারপর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,

“এই ছেরি তোর নাম কি লো?”

উনার কথা শুনে চমকে মাথা উঁচু করলাম আদ্র ওর মার হাতে মার খেয়ে হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবার সে ও আমার দিকে তাকালো। আমি ভয় পেয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।

“দাদু..

আদ্রকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে বলল,,

“দাদুভাই চুপ মার হাতে জীবনের প্রথম মার খেয়ে শিক্ষা হয়নি তোর আবার আমার কাছেও খেতে চাস। এই মেয়ে বল?”

আদ্রর আমাকে চোখের ইশারায় বলতে বললো আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,

“জী, স্নে–হা।”

উনি আরো কিছু বলবে তখন আদ্রর বাবা ও সাথে আরেকটা লোক বাসায় আসলো পেছনে আরেকটা লোক।

গম্ভীর হয়ে আদ্রকে বলল,,

“এসব কি আদ্র? তুমি এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছো?”

“জি, আব্বু আমি ওকে ভালোবাসি।”

উনি কঠিন মুখ করে আমার দিকে তাকালো তারপর আদ্রকে বললো,,

“এই মেয়ের পরিচয় কি এর বাবা কি অনেক প্রভাবশালী লোক।”

আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“জি না ও বাবা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলো গ্ৰামের যিনি বর্তমানে মৃত।”

“হোয়াট?”

চিৎকার করে উঠল,,,

“লো ক্লাসের মেয়েকে বিয়ে করে এনেছো? সাথে এতিম।”

“আব্বু এভাবে বলো না ও আমার স্ত্রী এখন।”

“সো হোয়াট তুমি এমন মেয়েকে কেন বিয়ে করলে আর তোমার তো বিয়ের বয়স‌ই হয় নি এই তোমাকে আমি বিদেশে পাঠাবো ভেবেছি আর তুমি এমন একটা মেয়ে কে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে এসেছো?”

রেগে বলল।

লেগে গেল বাবা ছেলের মাঝে তকাতকি। মাঝে আমি নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে চোখে পানি ফেলছি আচমকা আদ্রর মা এসে বললো,,

“এই মেয়ে তুমি বাসা থেকে বের হ‌ও । এই বাসায় তোমার কোন জায়গা নেই।”

আদ্র ওর বাবার থেকে চোখ সরিয়ে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে বলল,,

” আমার ব‌উ এর জায়গা না হলে আমি ও বাসা থেকে বের হয়ে যাব।”

এবার আদ্রর বাবা মা দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে গেল। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে তারপর বলল,,

“কি সব বলছিস আদ্র এই মেয়েটার জন্য তুই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি।”

“হুম আম্মু। তোমরা ওকে মেনে না নিলে তো যেতেই হবে।”

“এই মেয়েটা ভালো না তুই কেন একে বিয়ে করলি? আমার কথা কানেই নিলি না আর এইভাবে লুকিয়ে কেন ওই মেয়ে তোকে জোর করে বিয়ে করতে বলেছে তাই না।”

“এই মেয়ে এই মেয়ে কেন করছো ওর নাম আছে তো। আর ও জোর করে নি আমি ওকে জোর করেছি।”

“এই মেয়েটা তোমাকে জাদু করেছে আদ্র।”

“আম্মু বাজে কথা বলো না প্লীজ।”

“এই মেয়েকে আমি বাসায় এলাও করবো না ওকে বের হয়ে যেতে বলো। ও তোমার যোগ্য না আদ্র তোমার জন্য আমি উপযুক্ত পরীর মত ব‌উ এনে দেবো।”

“আমার পরীর মতো ব‌উ আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাকে একসেপ্ট করো আম্মু তুমি তো জানো আমি স্নেহাকে কতোটা ভালোবাসি। তুমি এসব কথা করে বলছো আম্মু আব্বু কে বলো না।”

“না আমি কিছু জানি না ওকে বের করে দাও বাসায় থেকে।”

“তুমি কি চাও আমি এই বাসা ছেড়ে চলে যা‌ই।”

“এই মেয়ের জন্য আমাকে তোমার ফ্যামিলি ছেড়ে চলে যাবে।”

অবাক হয়ে বলল।

“আমি এটা করতে চাই না কিন্তু তোমরা করতে বাধ্য করছো।”

আমি হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বিয়েটা করতে আমি রাজি না হলে হতো তাহলে এসব হতো না। আদ্রকে আমার জন্য পরিবার ছারতে হবে ভাবতেই নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। না না এসব হতে দেওয়া যাবে না তারা আমাকে না মানলে আমি একাই বাসা থেকে বেরিয়ে যাব আদ্রকে কিছু তেই নিজের পরিবার ছারতে দেবো না।

আমি ফিসফিসিয়ে বললাম আদ্রকে,,

“আপনি এমন করবেন না প্লীজ।”

আদ্র ভ্রু কুঁচকালো আমার কথায়,,

“আমাকে তারা না মেনে নিলে আমি বাসা থেকে চলে যাব আপনি আসবেন না‌।”

আদ্র রেগে বলল,, ” চুপ করে থাকবা বেশি পাকনামো আমার পছন্দ না।আমি যা করবো শুধু দেখবা।”

আদ্রর কথায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
হঠাৎ দেখি আদ্রর মা বাবা কিছু বলছে তারপর আদ্রর বাবা গম্ভীর মুখে চলে গেল ভেতরে। আদ্রর মা তার শাশুড়ি কে নিয়ে যাওয়ার সময় আদ্রর চাচি কে কিছু ইশারা করে চলে গেল।
.

আদ্রর রুমে নিয়ে এসেছে আমাকে আদ্রর বাবা মা আমাকে না মানলে ও যখন ছেলের চলে যাওয়ার কথা শুনেছে তখন আর কিছু বলতে পারেনি আদ্রকে তারা খুব ভালোবাসে আর আদ্রর জেদ অনেক যা বলে তাই করে এজন্য আর কিছু বলতে পারেনি।

রুমে এসে হাঁ করে চারপাশ দেখছি আদ্রর রুম। রুমে ঢুকেই আমার চোখ পরে পেন্ডিং এর উপর যেখানে আদ্রর একটা ইয়া বড় ছবি টানানো। দাঁত বের করে হাসছে আদ্র দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি সেদিকে বিছানায় বসতেই আবার উঠে গেলাম কি নরম তুলতুলে বিছানা। আদ্রর পড়ার টেবিলে ব‌ই দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
আমার কি আর পড়া হবে?

আদ্র ওয়াশরুমে গিয়েছে বেরিয়ে এসেই বলল,,

” এমন গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

আদ্রর আওয়াজ পেয়ে তার দিকে তাকালাম।

আদ্র তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে বিছানায় রেখে আমার কাছে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বলল,,,

“আব্বু আম্মু কে চিন্তা হচ্ছে তাইনা। চিন্তা করো না আমি আছি তো ঠিক মানিয়ে নিবো।”

“হুম।”

“তোমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখার কতো ইচ্ছে ছিলো জানো।”

“না।”

“জানবে কি করে কখনো বলি নি তো তোমাকে কতোবার আমি কল্পনায় শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখেছি হিসাব নেই কিন্তু বাস্তবে আজকে দ্বিতীয় বার প্রথম বার তো ভালো করে দেখতেই পারিনি তার আগেই। আর আজকে এই ব‌উ সাজে আমার ব‌উ হয়ে গেলে।”

আমি কিছু বললাম না চুপ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। আদ্র আমার দুগালে হাত রেখে বলল,,

“ইশ আমার ব‌উটাকে কি বাজে লাগছে দেখতে এতো কান্না কেউ করে!”

আমার ব‌উ শুনতেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করলো আমি চোখ পিটপিট করে দেখতে লাগলাম আদ্রকে এই লোকটা আজ থেকে আমার শুধু আমার। আদ্র আমার চোখের পানি মুছে দিলো।

আদ্র আমাকে ওর ডেসিং টেবিলের কাছে নিয়ে গেল। তারপর আমার পেছনে থেকে জরিয়ে ধরে বললো,,

“দেখো আমাদের কতো মানিয়েছে। একদম পারফেক্ট কাপেল তাই না ব‌উ।”

আমার এতো লজ্জা লাগলো যে আমি চোখ নিচে দিকে নিলাম। নিজের পায়ের আঙ্গুল দেখতে লাগলাম।

তখন ভাইয়া ভাইয়া করতে করতে আদ্রর বোন এসে উপস্থিত হলো সিটকে দূরে সরে আসলাম।

“হুম বল।”

“ভাইয়া আম্মু তোমাদের খেতে ডাকছে।”

আমি অবাক হলাম এতো কিছুর পর ও।

আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” মিরা তোর একটা জামা দিস তো।”

“কেন ভাইয়া? আমার জামা দিয়ে তুমি কি করবে?”

“তোর ভাবির জন্য কাল শপিং করিয়ে দেব আজ পড়ার জন্য।”

“আমার জামা কি হবে?”

আদ্র বলল এনে দিতে আমার ও মনে হয়না হবে।
একটু পর নিয়ে এলো থ্রি পিস মেয়েটার পরনে ছিলো না এসব তার গায়ে ছিলো স্কাট ফতুয়া।

আমি ওয়াশ রুমে গিয়ে চেঞ্জ করলাম টাইট হয়েছে কিন্তু পড়া গিয়েছে। এইভাবে থাকতে হিমশিম খেতে হবে তাও কিছু করার নেই কাল ওই বাসায় গিয়ে আমার ড্রেস গুলো আনতে হবে আজকে এটা দিয়ে কাজ চালাই।
আদ্র আমার হাত ধরে নিচে এলো খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে আমরা গেলাম সবাই একবার তাকিয়ে খাওয়াতে মন দিলো। আদ্র আমাকে নিয়ে এক চেয়ার এ বসলো।

আদ্রর বাবা তখন বলল,,” পরিক্ষা কি দেবে নি ভেবছো?”

আদ্র মাথা উঁচু করে বলল,,,” পরিক্ষা দেবো না কেন?”

“আমার মনে হচ্ছে দেবে না।”

“এমনটা হ‌ওয়ার কারণ?”

“যা সব করছো পড়া তো হচ্ছেই না শুধু..

“রেজাল্ট দেখে বলো। আমি পড়া নিয়ে গাফিলতি কখনো করি না।”

আমি চুপ করে বসে আছি খেতে কেমন লাগছে আদ্রর মা কেমন গম্ভীর মুখ করে তাকায় দেখেই আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।

আদ্রর দাদুকে দেখলাম না। আসেনি মনে হয়।

“খাচ্ছ না কেন?”

আদ্রর কথায় চমকালাম। সাথে খাবার টেবিলের সবাই খাওয়া অফ করে আমার দিকে তাকালো। সবার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললাম।

“খাবার কি খারাপ হয়েছে?”

আমি মাথা নেড়ে না করলাম।

“খাও।”

হুম বলেই ভাত মুখে দিলাম।কতো খাবার এখানে এতসব আমি মাসে পাইনা আর এরা একদিনে।
একটু খেয়ে আর খেতে পারলাম না হাত ধুয়ে ফেললাম।

আদ্র রেগে বলল,,” হাত ধুলে কেন কিছুই তো খেলে না‌।”

“আমার খাওয়া শেষ।”

আর কিছু বলল না আমি ওইখানেই বসে র‌ইলাম আদ্রর খাওয়া শেষ হলে চলে এলাম আদ্রর সাথে।

“তুমি একটু বসো আমি আসছি।”

আমাকে রুমে রেখে আদ্র চলে গেল। আমি একাই ওর রুম দেখতে লাগলাম।
তখন আদ্রর বোন মিলা এলো। আর আমার সাথে গল্প করতে লাগলো। তাকে দেখে মনে হয় না সে আমাকে দেখে অখুশি বরং চ খুশি হয়ে তার সম্পর্কে বলতে লাগলো।
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরে জানতে পারলাম ‌।আমাকে ও জিজ্ঞেস করলো সব।মেয়েটার সাথে কত্থা বলে ভালো লাগলো এর মাঝে আদ্র চলে এলো আর মিলা চলে গেল।

“কি গল্প করলে এতো?”

“তেমন না আমাকে জিজ্ঞেস করলো সব কিছু আর নিজের সম্পর্কে বলল।”

“আচ্ছা ননদের তাহলে পছন্দ হয়েছে।”

“আপনার এভাবে বিয়ে করাটা ঠিক হয়নাই‌।”

“বাদ দাও এসব। ”

বলে আদ্র আমাকে নিয়ে ওর বেলকনিতে নিয়ে গেল বেলকনিতে ফুল আছে। বসার জন্য সোফা ও আছে সেখানেই বসলাম।

“আজকে আমাদের বাসর রাত।তাই এখন সমস্ত চিন্তাভাবনা আমাকে নিয়ে করো। ঝামেলা তো থাকবেই তাই না সেসব ভেবে এই মুহূর্তটা কেন নষ্ট করবো।”

বলেই আদ্র আমার হাত টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিলো তারপর চুমু খেলো।

আমার কি হলো জানি না টেনে হাত নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।
এতে আদ্র বিস্মিত হলো বিষ্ময় হতদম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।আমি কাঁপছি অদ্ভুত ভাবে।

“তুমি কি ভয় পাচ্ছ আমাকে?”

আমি কিছু বললাম না চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।

আদ্র টেনে আমাকে আবার বসিয়ে দিল ওর পাশে।

তোমার সম্মতি ছাড়া কিছু করবো না তাই ভয় পেয় না।জাস্ট একসাথে জোসনা দেখবো।

বলেই টেনে কাছে বসিয়ে দিলো। আমার কাঁধে নিজের থুতনি রেখে দিলো আমি মনে হয় ফ্রিজ হয়ে গেলাম। হার্ট বিট ঝরের গতিতে লাফাচ্ছে। আদ্র কাছে থাকলে অদ্ভুত অনুভূতি হয় কান গরম হয়ে আসছে। চোখ বুজে একটা শ্বাস ফেললাম দাঁতে দাঁত চেপে শক্তভাবে বসে আছি‌।

আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি জানি। হঠাৎ নরম ছোঁয়া পেলাম ঘাড়ে কি করছে বুঝতে পেরে থমকে গেলাম এভাবে কিছুক্ষণ থাকলে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাব নিশ্চিত।
আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে পরলাম দৌড়ে রুমে চলে এলাম।
চলবে ♥️
Tanjina Akter Misti

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে