অচেনা শহর পর্ব-২০+২১

0
3641

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ২০

সেই একদিন ফোনের কল আর মেসেজের হুমকিতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু অবাক করা বিষয় সারা দিন আর আসে নাই ফোন।
ফোন নিয়ে ভয়ে ভয়ে ছিলাম এই বুঝি ফোন আসবে আর আমাকে চিৎকার করে বকাবকি করবে‌।
কিন্তু সারাদিন কল এলো না। কল না আসায় একটু নিশ্চিত হলাম। এমন ও হতে পারে কেউ রং নাম্বারে ফোন মেসেজ দিয়েছিল পরে বুঝতে পারছে এটা রং নাম্বারে এজন্য আর ফোন দেয় নাই।
বড় একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম,,

মাথাটা ধরে আছে জন্য আগেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখি দুই বার মিসকল।
সাত সকালে আবার কে ফোন দিল নাম্বারটা দেখে আঁতকে ওঠলাম। এটা তো সেই রং নাম্বার। এ আবার ফোন দিয়েছিল কেন?
ফোনটা দেখে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। ফোনে টাকাও নাই যে আমি কল ব্যাক করব। থাকলে হয়তো করে উঠতে পারতাম না।এমন হুমকি-ধমকি দিয়ে দিয়েছে। তারমানে রং নাম্বারে ফোন দিয়েছিল না আমাকে চেনে নাকি। ফোনটা রিসিভ করতে পারলে একটা সুরাহা মিলত।

না না চিন্তা মাঝে উঠে রান্নাঘরে গিয়ে হালকা রান্না করে। ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে গেলাম।
আজকে আগেই যেতে হবে ভার্সিটিতে লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে পড়তে হবে। আগে ভার্সিটিতে পৌছালাম মাঠের বাম পাশে তাকালাম না আজকে কেউ নাই। আমি সোজা লাইব্রেরীতে চলে গেলাম।
লাইব্রেরীতে তেমন কেউ নেই একদম ফাঁকা। আর ভার্সিটিতেও তেমন নেই কয়েকজন ছাড়া। এক ঘন্টা আগে এসেছি‌।কেউ থাকবে বা কি করে সবাই তো আধা ঘণ্টায় আগে আসে।

স্নেহা বই খুঁজছে। কিন্তু ইম্পর্টেন্ট বইটার পাচ্ছি না। বইএকদম দক্ষিণ দিকে চলে গেলাম। ওই খানে না থাকলে নাই। এখানে এসে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো কারণ বইটা পেয়ে গেছি কিন্তু অনেক উঁচুতে। লাফিয়ে লাফিয়ে বইটা নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি এত সহজে ওটা নিতে পারছি না।

থেমে হাপাচ্ছি বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি অস্থির হয়ে গেছি লাফিয়ে। হঠাৎ মনে হল আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। শুধু পেছনে বললে ভুল হবে সে একদম আমার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। তার নিশ্বাস আমার কানের কাছে বাড়ি খাচ্ছে। আচমকা এমনটা হ‌ওয়ায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল মনে হয় মুহূর্তে।পেছনে তাকাতে পারছিনা সে আমাকে পেছন ফিরতে দিচ্ছে না। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,,,

“কে?”

“ফোন ধরনি কেন?”

কথা নেই বার্তা নেই ফোন ধরার কথা বলাতে স্নেহা কিছুটা থমকে গেল। কিসের ফোন ধরার কথা বলছে। কিসের ফোন ধরি নাই? হঠাৎ দুদিন ধরে রং নাম্বারে কথা মনে পড়ল। তাহলে কি আমার পিছনের লোকটা আমাকে ফোন দিয়েছিল।
ওইভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম,সে আমার সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে অসুস্থি ফিল হচ্ছে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তবুও বললাম,

“কিসের ফোন কিসের ফোনের কথা বলছেন? আর কে আপনি এভাবে গা ঘেষে দাড়িয়ে আছেন কেন সরে দাঁড়ান?”

“দুদিন ধরে ফোন দিছি আর এখন বলছে কিসের ফোন। আজকে যদি ফোন না ধরছো তাহলে তোমার কি হাল করবো নিজেও কল্পনা করতে পারবে না।”

“কে আপনি?”

এতক্ষণ সে একদম আমার সাথে ঘেঁষে ছিলো এবার তার উপস্থিতি আমি পাচ্ছি না মনে হচ্ছে কিছুটা দূরে তাই আমি তাড়াতাড়ি সামনে ফিরলাম।

সামনে ফিরে লোকটাকে দেখে আমি ৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম মনে হয়। আপনা আপনি আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,,,
আপনি!

আদ্র পকেট এ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি আমার দিকে। হাজার পরনের সাদা টিশার্ট কালো প্যান্ট। ঠোঁটে বাঁকা হাসি। দেখতে বরাবরের মতই সুন্দর লাগছে।কিন্তু আমার তো সেদিকে খেয়াল নেই আমি তো আদ্র কথা বলা আমার সাথে এতো গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝেই থমকে আছি।

“কি হল ভয় পেয়ে গেলে নাকি?”

“তারমানে আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। ম্যাসেজে ধমক দিয়েছিলেন।”

“তোমার কি মনে হয়?”

“আমার যাই মনে হোক। আপনি বলুন।”

“যদি বলি আমি তাহলে কি করবে?”

“আপনি!আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন কেন? আর আপনি নাম্বার কোথায় পেলেন? আপনি জানেন তিনদিন ধরে আমি এক মিনিটের জন্য ঘুমাতে পারি নাই ভয়ে। কে না কে ফোন দিছে ভেবে ভয়ে ছিলাম।”

“আচ্ছা। তা তুমি এতো ভীতু কেন?”

“কি বললেন আমি ভীতু?”
হালকা রেগে কথাটা বলল স্নেহা।

“অফ কোর্স ভীতু। ভীতু না হলে কি কেউ সামান্য ফোন দেখে ভয় পায়।”

“দেখুন একদম ভীতু বলবেন না আমাকে। আর যেভাবে মেসেজ করেছিলেন এটা যে কেউ দেখলে ভয় পাবে।”

“আচ্ছা তুমি আমাকে ভয় পাও তাই না।”

“অসম্ভব। আমি আপনাকে ভয় পাবো কেন?”

“রিয়েলি ভয় পাও না।”

“একদমই না।”

স্নেহা সত্যি ভয় পায় কিন্তু স্বীকার করছে না। আর করবেও না নিজের দুর্বলতা কেউ স্বীকার করে নাকি। কিন্তু আদ্রর এগিয়ে আসা দেখে ওর ভয় কলিজা শুকিয়ে যায়।
আদ্র কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। স্নেহার কথা শুনে ওর দিকে এগিয়ে আসে।

“কি ব্যাপার আপনি এগিয়ে আসছেন কেন? দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন?”

আদ্র কথা বলছো না। এগিয়ে আসছে স্নেহার দিকে। স্নেহা ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে। আদ্র ঠোঁট কামড়ে আরেক পা আসতেই স্নেহা পেছনে বুকশেলফে মাথায় বাড়ি খায়। সাথে সাথে আহ করে ওঠে,,, চোখমুখ কুঁচকে মাথায় হাত দেয়।
আদ্র তাড়াতাড়ি গিয়ে ওর মাথা ধরে।

“হোয়াটস হ্যাপেন্ড আবার কি হলো? এভাবে কেউ পিছনে যায়। খেলে তো মাথায় ব্যথা কেয়ারলেস একটা।”

কিছুটা চিৎকার করে কথাটা বলে স্নেহার মাথায় ডলে দিতে লাগে। আদ্রর অস্থিরতা দেখে স্নেহা নিজের হাত নামিয়ে ফেলে। অবাক হইয়া তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এতক্ষণ আদ্রর চোখেমুখে দুষ্টুমি ছিল। কিন্তু এখন অস্থিরতা কার জন্য এত অস্থিরতা আমার জন্য।

অবাক হয়ে আদ্র দিকে তাকিয়ে আছি।
আদ্রর চোখ হঠাৎ স্নেহার দিকে পড়ে। ও দেখে স্নেহা হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে চোখে অনেক প্রশ্ন।
এটা দেখে আদ্র স্নেহাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়।

বিস্ময় চোখে স্নেহা তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে।

“একটা সত্যি কথা বলেন তো?”

আদ্র ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

“আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন।”

“নাম্বার পাওয়া কি খুব কঠিন কাজ। অফিস গেলে তো তোমার নাম্বার পাওয়া যায়।শুধু তোমায় কেন যে কারো নাম্বারে পাওয়া যাবে।”

আসলেই তো আমার নাম্বার তো অফিস রুমে ওর দেওয়া আছে। একদম ভুলে গেছিলাম।

“আর আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন ই বা কেন?”

এবার আদ্র ওর মুখটা থমথমে হয়ে গেল।আদ্রর থমথমে মুখ দেখে স্নেহা সন্দেহ চোখে তাকিয়ে থাকে।

“কি হলো বলেন আমাকে কেন ফোন দিয়েছিলেন? আমার যদি আপনার কাজ কি?”

“দেখো তুমি আবার ভেবোনা আমি তোমার সাথে প্রেমালাপ করার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। আমিতো ফোন দিয়েছিলাম….

“কি জন্য দিয়েছিলে সেটা তো জিজ্ঞেস করছি।আমি বলি নাই আপনি আমার সাথে প্রেমালাপ এজন্য ফোন দিছেন।”

“আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি দিয়েছি।এনি প্রবলেম।”

“অবশ্য প্রবলেম। আমাকে ফোন দিবেন অবশ্যই তাতে আমার প্রবলেম আছে। আপনার ইচ্ছে তে আপনি যা ইচ্ছা তাই করুন ।আমাকে ফোন কেন দিবেন?”

“আজকে ফোন দেবো ফোনটা রিসিভ করো।”

“ইম্পসিবল আমি আপনার ফোন রিসিভ করব না।”

“করবে। দশটায় ফোন দিব। রিসিভ না করলে তোমার জন্য সেটা ভালো হবে না।”

কথাটা বলে আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না পেছনে ঘুরে চলে গেল। আমি হা করে তার যাওয়ার পানে
তাকিয়ে র‌ইলাম। আবার হুমকি দিয়ে গেল। যা ভেবেছিলাম রিসিভ করে জানার চেষ্টা করব কে?আজকে এখন তো জেনে গেলাম। অন্য কেউ হলে তাও রিসিভ করার কথা ছিল।কিন্তু এই অসভ্য লোকটা ফোন আমি কিছুতেই রিসিভ করব না। পেয়েছি এটা কি আমাকে ।আমাকে হুমকি দিয়ে নিজের ইচ্ছামত চালাবে।
কিভাবে বলে গেল যেন আমি তার গার্লফ্রেন্ড। ছি ছি কি ভাবছি আমি তার গার্লফ্রেন্ড হতে যাবো কেনো। নিজের কথায় নিজেই রাগ উঠছে। কিন্তু একটা কথা মাথায় আসছে না আমাকে কেন ফোন দিল। আবার না ধরার জন্য ধমকে গেল।

.

ফোন ধরার ইচ্ছা নাই তবুও রাত দশটায় ফোন হাতে বসে রইলাম। কেন বসে রইলাম জানি না। আমি জানি আমি ফোন ধরবো না। বিশেষ করে আদ্রর ফোন জানার পরে তো আরো না।সত্যি সত্যি দশটিয় ফোন এক মিনিট পরেও না এক মিনিট আগেও না। ফোন হাতে বসে আছি কিন্তু ধরছি না কারণ আমি ভেবে রেখেছি ফোন ধরবো না।

এদিকে আদ্র ক্লাবে থেকে সোজা বাসায় আসো 9:30। আদ্র নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে টাউজার আর গেঞ্জি পড়ে নেয়। সবকিছু করতে করতে 25 মিনিট চলে যায়।
করিম চাচার বাসার কাজের লোক। তাকে এক কাপ কফি দিতে বলে। 5 মিনিটের মধ্যেই কফি দিয়ে যায়।আদ্র কফির কাপ নিয়ে আরেক হাতে ফোন টিপতে টিপতে বারান্দায় গিয়ে দোলনায় বসে। শীতকাল হ‌ওয়ায় ঠান্ডা ভালোই।
গায়ে পাতলা গেঞ্জি নিয়ে বসে থাকে ঠান্ডা বাতাস ব‌ইছে। গরম কফি এক চুমু দিয়ে ফোনের দিকে তাকায়। ঠিক দশটা বাজতেই স্নেহার নাম্বারে কল করে। শীতের মাঝে গরম কফি দারুন লাগছে আদ্রর।প্রতিদিন এই কাজটা করে আদ্র। ঘুমানোর আগে এক কাপ কফির না হলে চলে না ওর। আগে বাসায় আসতে আসতে এগারো টা বাজতো। কিন্তু তিন চারদিন ধরে আদ্রর রুটিন চেঞ্জ।
আদ্রর মা তামান্না বাবা আতিক চৌধুরী। ছোট বোন, আলো। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আদ্র এর যৌথ ফ্যামিলি। দাদা নাই।দাদি আছে। দুই চাচা বড় চাচা বিদেশ থাকে ফ্যামিলি সহ আর ছোট চাচা আদ্রদের সাথে থাকেন। তার 2 মেয়ে 1 ছেলে।
আদ্রর বাবা আতিক চৌধুরীর এলাকার এমপি। সাথে বিজনেস ও করে। এমপি হ‌ওয়ায় শত্রুর অভাব নেই এজন্য সব সময় রিক্স থাকে।আদ্রকে নিয়ে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা। আদ্র নিজের সাথে গার্ড রাখেনা। তার একমাত্র ছেলে আদ্র। তার শত্রুরা না জানি কবে আদ্রর কোন ক্ষতি করে বসে।

রিং হয় ফোন কেটে গেছে। আদ্ব ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে রাগের কপালের রগ ফুলে উঠেছে। এত করে বলে আসার পর ফোন রিসিভ করল না। আবার ফোন করলো নিজের রাগ সংযত করে।একই কাহিনী করল ফোন রিং হয়ে কেটে গেল কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। রাগে ওর চোখ লাল হয়ে গেছে। এত রাগ উঠেছে যে ফোন একা আছাড়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলেছে।

চোখমুখের তৃব্য রাগ নিয়ে ভাঙ্গা ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। কাজটা তুমি ঠিক করলে না স্নেহা আমার কথা অমান্য করা। এত করে বলার পরও ফোন রিসিভ করলে না। কাল তোমার কি হাল করি শুধু সেইটা দেখবে।

সারারাত আদ্রর ঘুম হলো না।
ফাস্ট অনুভূতি ফার্স্ট কোনো মেয়ের জন্য ওর মনে নতুন অনুভূতি তৈরি হয়েছে। আর সে কিনা ওকে এভাবে কষ্ট দিলো ও কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। ছোট থেকে আদ্রর রাগ জেদ প্রচুর।
আধার মনের কোঠায় কোনদিন কোন মেয়ে প্রবেশ করতে পারে নাই।অনেক মেয়ে প্রপোজাল পেয়েছে জীবনে। কিন্তু কখনো কারো প্রতি আলাদা টান অনুভব করেনি। সব সময় সবার থেকে দূরে থেকেছে।

স্নেহাকে প্রথমদিন দেখে ওর মনে কোন অনুভূতির জন্ম হয়নি সাধারণ সভার মতোই লেগেছে। ওর প্রতি যে আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হবে সেটা কখনও কল্পনা করিনি। না স্নেহা দেখতে বাড়তি সুন্দরী, না দেখতেই স্মার্ট মর্ডান কোন টাই নয়।কিন্তু তবুও ওর জন্য আমার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে। সেটা সেই দিন যেদিন আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল।প্রথম ওর ওপর এত রাগ হয়েছিল মন চাইছিল ওকে খুন করে ফেলি। আমি হয়তো সেটা করে ফেলতাম যদি না সেদিন আব্বা অসুস্থ হতো।
তবুও সেদিন ভালোবাসাটা বুঝিনি।সেদিন থেকে ওর কথা সারাক্ষণ মনে পড়তো বাসায় এসে আমি একটা কথাই সারাক্ষণ ভেবেছিলাম আমি একটা জিনিসই ভাবছিলাম একটা মেয়ে আমাকে ভার্সিটি সবার সামনে থাপ্পড় মেরে গেল আমি কিছুই বললাম না। তারপর যেদিন ওর মুখে ধোঁয়া দিয়েছিলাম। সেদিন যখন পানিতে পড়ে গেছিল ফাস্ট আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।এতটাই ভয় পেয়েছিলাম পাগলের মত পানি থেকে উদ্ধার করি।ওর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম সেদিন আমি ওই মুখের আলাদা একটা মায়া খুঁজে পায়। আর সেই মায়াবী মুখ আটকা পড়েছিল। এতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম মনে হচ্ছিল আমার খুব প্রিয় কেউ আমার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।সামান্য একটা মেয়ের জন্য সেদিন আমি পাগলামো করছিলাম। চিৎকার করে করছিলাম। আমার ফ্রেন্ডরা সবাই অবাক হয়েছিল আমার ব্যবহারে হসপিটালে নিয়ে যখন শুনলাম। ওর সিগারেটের ধোঁয়াঢ় সমস্যা তখন নিচে খুব খারাপ লাগছিল। ওর নিষ্পাপ মায়া ভরা মুখের দিকে তাকাই সেদিন ভেবেছিলাম আর কখনো সামনে সিগারেট খাব না।

প্রতিদিন লুকিয়ে দেখতাম।প্রতিদিন ভার্সিটিতে আগে এআসতাম ওকে দেখার জন্য। গেটের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। যে আমি সবার শেষে ভার্সিটিতে আসতাম সেই আমি ওর জন্য শুধুমাত্র একবার দেখার জন্য সবার আগে ছুটে আসতাম।
একদিন দেখতে না পারলে আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসতো। একে অনুভূতি আমি তখনো বুঝিনি একে ভালোবাসা বলে। নবীন বরণের দিন আমি ইচ্ছে করে শাড়ির কথা বলেছিলাম আসলে আমার ও কে শাড়িতে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। সাজা অবস্তা দেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু পোড়া কপাল আমার সেদিন এলেনা।ওকে কখনো আমি সেজেগুজে আসতে দেখিনি।সবসময় সিম্পল ভাবে এত সিম্পল ভাবে আসে দেখে আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিল ওর সাজুগুজু মুখটা দেখা লগে কেমন লাগবে। চোখে গারো মোটা কাজল কপালে টিপ ঠোটে লিপস্টিক চুলগুলো ছেড়ে আসবে। আচ্ছা ওর চুল কত বড় এখন ও তো চুল দেখি নাই‌। এজন্য বাড়ির কথা বলেছিলাম কিন্তু আমার আশায় জল ঢেলে দিয়ে আসলো না।প্রচুর রাগ উঠেছিল। অনুষ্ঠানের সবসময় আমি ওর অপেক্ষা করছি চারদিকে তাকিয়ে ওকে খুঁজেছি। যখন রাহাত খবর এনে দিল ও আসে নাই। রাগে আমার চেয়ার শক্ত হয়ে গেছিলো। এর জন্য পরদিন ইচ্ছে করে ওকে দিয়ে কাজ করিয়েছি।

সব সময় ওকে ফলো করি কোথায় যাই কি করে না করে। আমার বাসার দারোয়ানকে আমি টাকা খাইয়ে রেখেছে।যদি ওর কোন দরকার হয় বিপদ হয়। আমাকে যেন সঙ্গী সঙ্গী কল করে। ওরে বাবা অসুস্থ। ও আর ওর বাবা ছাড়া আর কেউ নেই।
ওইদিন সকালে ঘুমের মাঝেই ফোনটা বেজে ওঠে ফোন ধরতে জানতে পারি স্নেহা সাত সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।খবরটা আমাকে দারোয়ান দেয় সে বলে স্নেহার বাবা নাকি অসুস্থ তাই ওষুধ আনতে যাবে।কিন্তু এত সকালে ঔষুধের দোকান খোলা পাবে নিষা সেটা আমি খুব ভাল করেই জানি ।এজন্য আমি হন্তদন্ত হয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।সাতসকালে যদি কোন বিপদ হয়।
দুইদিন ভার্সিটিতে আসেনা স্নেহা। রাহাতকে দিয়ে অন্তরার থেকে জানতি পারি স্নেহা অসুস্থ। স্নেহা অসুস্থ শুনতেই আমার অস্থিরতা বেড়ে যায় এক নজর দেখার জন্য অস্থির হয়ে ওঠি।কিন্তু দেখা করা সম্ভব না।আমি চাইলে ওইখানে গিয়ে দেখা করে আসতে পারি। কিন্তু আশে পাশের এতে ওর সম্পর্কে লোকে খারাপ বলবে তাই ওর নাম্বার জোগাড় করি কথা বলার জন্য। আমি সারারাত ছটফট করি ওর সাথে একবার কথা বলতে ওর কন্ঠ শুনার জন্য।কিন্তু ফোনটা ধরে না।সব সময় আমাকে কষ্ট দেয় না আজকে ফোনটা ধরল না।

চলবে♥️

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ২১

একধ্যানে গেটের দিকে তাকিয়ে আছে আদ্র। যার জন্য তাকিয়ে থাকা তার আসার নাম গন্ধ নাই। বিরক্ত হয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে আছে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকাতেই সামনে এসে দাঁড়ায় মাইশা।
হুট করে সামনে আশাতে কিছুটা রাগ হয় আদ্রর তবুও রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রু নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে কি?
এতেই মাইশা একটা বিরাট বড় হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে।

“আদ্র আমরা সবাই মিলে তো আর কিছুদিন পর ভার্সিটি থেকে চলে যাচ্ছি। এ জন্য ভাবছি তার আগে সবাই মিলে একবার বেড়াতে যাব। তুই কি বলিস কোথায় যাওয়া যায় বলতো।”

বেড়াতে যাওয়ার মতো কথা উঠে গেল আর আমি কিছু জানি না। খানিকটা রেগে আশিকের দিকে তাকালো,,

“আমাকে রেখেই তোরা ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করে ফেলেছিস।”

আশিক আদ্রর রাগী কন্ঠ শুনে থতমত খেয়ে যায়। আদ্র রেগে গেলে আশিক ও কে খুব ভয় পায়।

মাইশা আবার বলে, “তোকে রেখে কোথায় প্ল্যান করলাম কখন থেকেই তো বলছি তুই শুনিস নি। তোর সামনেই তো বলছি।”

আশিকো বলে, “হ্যাঁ তাইতো।”

ওদের কথা শুনে আদ্র নিজেই বোকা বনে যায়। আদ্রর এতক্ষণ স্নেহাকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করছিল কিভাবে ওকে শায়েস্তা করা যায়।
আজকে আগেই ভার্সিটিতে এসেছে আদ্রর। আর এসে থেকেই প্রহর গুনছে স্নেহার।উচিত শিক্ষা না দিলে হবে না এত করে বলার পর ও ফোন ধরেনি। ফোনটা ভেঙে ফেলেছে ওর জন্য। সেই ফোন ভাঙ্গা নিয়ে কত কৈফত দিতে হয়েছে বাসায় ভার্সিটিতে এসে ফ্রেন্ডের কাছেও।
ভাবতে এদিকের কোন কথায় ওর কানে পৌছায় নাই।
নিজেই রাগ দেখাচ্ছিলাম আর এখন নিজে শুনিনি এটা ওদের বলা যায়না।
নিশ্চুপ রইলাম কাউকে আর কিছু বললাম না। স্যাররা নাকি বলেছিল ট্রিপের কথা।‌ক্লাস তো করি না অনেকদিন হলো তাই জানা হয় নাই‌। ইদানিং কথাও হয় না স্যারদের সাথে।
কেউই তেমন ক্লাস করেনা রাইসা আয়রা ক্লাস করে। ওরা নাকি এসে বলেছে কালকে ক্লাসে নাকি বলেছিল ট্রিপের কথা।

ক্লাস ঘন্টা পরতেই আদ্র মাঠে দিকে তাকালো।
ও যা বুঝার বুঝে গেছে তার মানে স্নেহা আজকে ভার্সিটিতে আজকে আসবে না। কতটা ভীতু হলে এমন একটা কাজ করতে পারে। তা আদ্র বুঝে উঠতে পারছে না।

এইখানে না পেলাম তোমাকে তো আজকে আমি ধরেই ছাড়বো মিস স্নেহা। আজকে তুমি আমার হাত থেকে রক্ষা পাবে না।লুকিয়ে যেখানে থাকো তোমাকে আমি খুজে বের করব‌ই।

.

স্নেহা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডী হয়েছিল। বের হওয়ার সময় আদ্রর কথা মনে পড়ে আর ওর থ্রেট সেগুলো মনে পড়ে স্নেহার গলা শুকিয়ে আসে।
কালকে তো খুব সাহসী মনে ফোন না ধরে বসে ছিলাম। কিন্তু আজকে কি করব। ভার্সিটি তে গেলেই তো আদ্রর মুখোমুখি হতে হবে।
আর ও যেভাবে কথা বলেছিল কালকে আমার সাথে কি করবে আল্লাহ জানে।ভয় এতটাই পেল যে স্নেহা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো আজকে ভার্সিটিতে যাবে না।

তাহলে আর আদ্রর মুখোমুখি হতে হবে না ও আমাকে শাস্তি দিতে পারবেনা। একদিন ভার্সিটিতে না গেলে কিছুই হবে না। কালকে অন্তর থেকে নোট নিয়ে নেব তাহলে হবে।

আজকে অনেকদিন পর স্নেহা রায়াদের বাসায় ঢুকলো।
প্রায় 4 দিন পর।রানী আসার পরে রায়া কে খুব একটা রাখতে হয় না রানী আসে যায় আমার আর আসা হয়না। কলিংবেল চাপতেই রানি সে দরজা খুলে আমাকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
সাথে সাথে রায়ান দৌড়ে আসলো।আমাকে দেখে কোলে চড়ার জন্য লাফালাফি করল। ওকে কুলে নিয়ে ভেতরে গেলাম দেখি আপু রান্না করছে। আপুর পাশে গিয়ে দাঁড়াতৈই আপু জিজ্ঞেস করলো,,,

“কিরে স্নেহা আজকে ভার্সিটিতে যাবি না এই সময় এখানে।”

“না আপু আজকে যাব না ভাবছি।”

“ও তুই তো খুব একটা মিস দিস না। আজকে হঠাৎ যাবি না কেন? শরীর ভালো আছে তো। আঙ্কেল ঠিক আছে।”

“বাবা সুস্থ আছে। আমি ঠিক আছে আল্লা রহমতে। এমনিতেই যাব না ভাবছি। তোমার রান্না এত দেরি হল কেন ভাইয়া খেয়ে যায় নাই নাকি।”

“না সে তো না খেয়ে যায় বেশি।”

“ভাইয়া কি খুব লেট করে আসে নাকি কখনো দেখা হয় না ভাই এর সাথে। সকালেও দেখি না কয়েকদিন পেছন থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছি।”

“ওর আর শুক্রবার নাই। প্রতিদিনই অফিস যেতে হয়। আসে রাত 10:00, 10:30 আবার এদিকে ভোর ছয়টায় বেরিয়ে যায়।”

“ও হ। তার মানে আগে তুমি একাই থাকতে সবসময়।”

“ওই আর কি একাই থাকবো।আশে পাশের ফ্লাটের লোকদের সাথে গল্প টল্প করতাম একটু দিনে রাতে একা থাকতে হয়। রানী কে এনে তো আমার উপকার করেছিস ওর সাথে সময় কেটে যায়।”

“রানী তোমার সব কথা শুনে তো।”

“খুব শুনে কাজও করতে আসে। কিন্তু আমি করতে দেয় না। ছোট মানুষ বলি খালি রায়ের সাথে গল্প করবি। ও ঠাণ্ডা থাকলে আমার কাজ করতে কোন সমস্যা নাই।”

কথা বলতে বলতে আপুর রান্না শেষ হয়ে গেল। আপু রান্না করতে করতে কথা বলছিল আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম রায়াকে কোলে নিয়ে।রান্না শেষ হতেই আপু আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। আমার চোখে পরে আপুর বাম গালে।

স্পষ্ট পাঁচ আঙুলের দাগ ফুটে আছে লাল হয়ে।
চমকে সেদিকে তাকিয়ে আছি।

“আপু তোমার গালে কি হয়েছে?”
আতঙ্কিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল স্নেহা!

আমার কথা শুনে আপুর হাসি মুখটা কালো হয়ে গেল। আমার কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে। এটা তো মারে দাগ আপুকে আবার কে মারলো ভাইয়া কিন্তু কেন? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আপুর দিকে।

আপুর মুখে মেকি হাসি এনে মুখে হাত দিয়ে বলল,,
” ওই রায়া আঙুল দিয়ে খেমচি দিছে। কি পাজি হয়েছে মেয়েটা। সকালে আয়না দেখি নাই তো তাই খেয়াল করি নাই।

আপু কথাটা আমার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। খেমচি এমন হওয়ার কথা নয় এটাতে স্পষ্ট থাপ্পরের দাগ।আমার সন্দেহ রয়েই গেল কিন্তু আপুকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। আপু হয়তো এই বিষয়ে কিছু বলতে চায় না।

কিছুক্ষণ কাটিয়ে চলে এলাম আপুর বাসা থেকে। একবার ভাবলাম রানী কে জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু রানী কে জিজ্ঞেস করার সুযোগই পেলাম না বাসায় আসলে জিজ্ঞেস করবো।

যথাসময় টিউশনিতে চলে এলাম।
কিন্তু ঝামেলা বাধলো টিউশনিতে এসে।
আমার স্টুডেন্ট এর এক্সাম। এজন্য নাকি তাদের বেশি পড়াতে হবে এক ঘন্টা। শত বলেও কাজ হলোনা তার এক কথা পড়ালে বেশি পারাতে হবে না হলে মাইনে কেটে রাখবে। কি মুশকিল টাকাগুলো আমার দরকার এখন যদি টাকা থেকে কেটে নেয় মাস চলছে হিমশিম খেয়ে যাব। তারপর আমি একটা মেয়ে মানুষ কিভাবে সন্ধার পর রাস্তায় চলাফেরা করব।এমনিতেই তো সন্ধ্যার একটু আগে কোনো মতো বাসায় পৌছায়। এখন যদি এক ঘন্টা বেশি পরাই তাহলে তো আমার যেতে যেতেই সাতটা বেজে যাবে। তাহলে বাসায় পৌঁছাতে আরো দেরী। তার উপর আমি আবার বাড়তি টাকা নিয়ে আসি নি ভাবছী সময় হেঁটে চলে যাব।
প্রতিদিন আমি এই কাজটাই করি না হেঁটে না গেলে হয়তো সন্ধ্যার অনেক আগেই বাসায় পৌঁছাতে পারতাম কিন্তু আমি হেটে যাই। কারণ সময় থাকে।

আসার সময় গাড়িতে চলে আসি কারণ একটু লেট হল উনিই বকাবকি করে। কালকে যদি বলি দিতো তাহলে আজকে আসার সময় হেটে আসতাম আর যাওয়ার সময় গাড়িতে যেতাম।
দুশ্চিন্তা নেই পড়াতে লাগলাম কারণ উনি আমাকে কিছুতেই ছাড়বে না কালকে ইংরেজি পরীক্ষা।পড়লাম সাঁতটা বাজতেই বিদায় নিয়ে বের হলাম।

গেটের বাইরে এসে ভয়ের নিশ্বাস ছাড়লাম। ঢাকায় এসেছি আজ দুই মাস হল। কিন্তু রাতে খুব কমই বের হয়েছি। হয়নি বলেই চলে। রাতে বের হওয়ার দরকারই পড়ে নাই।

এখন কিভাবে বাসায় পৌঁছাব সেই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।এখানে লাইট আছে তাই রাস্তাটার অন্ধকার নয় কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে হাটতে লাগলাম এরকম আলো থাকলে হেঁটে চলে যাওয়া যাবে।
তবুও অজানা ভয়ে বুক কাঁপছে।

মনে সাহস যুগিয়ে হাঁটা শুরু করলাম মনে মনে আল্লাহকে ডাক ছি। একটা দুইটা গাড়ি শো শো করে চলে যাচ্ছে। কিন্তু রাস্তার মানুষ নেই হাটার মধ্যে মনে হয় আমি একাই হাঁটছি। এখন তো খুব রাতে না কেবল 7:05 বাঁচে। কিছুদূর আসতে ভয় পেয়ে গেলাম আল্লাহ এখানে তো একদম অন্ধকার। ওইখানে লাইট ছিল তাই ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ভয় কম পেয়েছে হাঁটতে
এমন অন্ধকারে হাঁটবো কিভাবে আমার ফোনের লাইট অত ভালো মতো জলে না তবে ফোনের লাইট জ্বালিয়ে হাঁটছি। শীতের কাল বলে সন্ধ্যায় অন্ধকার না হলে আরেকটু আলো থাকতো।

দূরে ল্যাম্পপোস্টের আলো দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অনেক দূরে সেটা। হালকা হালকা আলো আসছে অন্ধকারে একটা ছায়ামূর্তি আমার পাশে পাশে হাঁটছে দেখে ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। ছোটবেলায় অনেক ভূতের গল্প শুনেছি।অন্ধকারের ছায়া দেখে আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।ছায়াটা আমার সাথে সাথে চলছে আমি পেছনে ঘুরার সাহস পাচ্ছিনা।মনে হচ্ছে কেউ আমাকে শক্ত করে সামনের দিকে ধরে রেখেছে পেছনে আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে পারবো না। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না মনে হয় আমি বোবা হয়ে গেছি। এ অন্ধকারে কে আমার পেছনে নিশ্চয়ই ভূত।ভূত কথাটা মনে হতেই আমার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।

আমি আর এগোতে পারছি না থেমে গেছি ছায়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সেও থেমে গেছে। আবার হাটতে লাগলাম এবার ছায়াটা হাটতে লাগল। এই ভূত আমার পিছু নিয়েছে। এখন আমার কি হবে?পেছনে তাকালে আমার মনে হচ্ছে সে আমার ঘাড় মটকাবো। কাঁপা কাঁপা গলায় ভূত ভূত বলতে বলতে আমি লুটিয়ে পড়লাম রাস্তায়।

.

অলি একটা বড় ঢেকুর তোলে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলো। অন্তরা ওর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বকতে বকতে পার্স টেবিলেরওপর রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওড়না খুলতে লাগল।

“আপুরে ছেলেটা কিন্তু সেই ভালো মাঝে মাঝে ওটাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে হবে।”

অলির কথা শুনে উনার পিন খোলা বাদ দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল অন্তরা ওর দিকে।

“কিরে অমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”

দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,”কি বললি তুই মাঝে মাঝে খাবি মানে। তোকের জীবনে কোনদিন রেস্টুরেন্ট দূরের কথা রেস্টুরেন্ট এর আশেপাশে নিয়ে যাবে না।”

“তোকে নিয়ে যেতে বলেছে। আমি তো ওই ভাইয়াটা কি দিয়ে যেতে বলবো?”

ভাইয়া ও তোর ভাইয়া হলো কিভাবে?আর তোর কি লজ্জা শরম কিছুই নাই রাক্ষসের মত গিল্লি। আল্লাহ এতো মানুষ খায় ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুই আমার মান সম্মান সব ডুবালি।

একটু খেয়েছি তাই তুই এভাবে বলতে পারলে আপু। আর আজকে না হয় একটু বেশি খেয়েছি ভালো-মন্দ পেলে কি কেউ কম খায়। তাই জন্য তুই এভাবে কোটা দিলি এটা তুই দিতে পারিস না। কারণ তুই আমাকে খাওয়াস নি খাইয়েছে তো ভাইয়াটা।

অসভ্য ইতর আর কোনদিন বলিস। ছিঃ শুধু তোর জন্য আমি তার সামনে মুখ দেখাতে পারবো না।সে আমাকে কি ভাববে ভাববে আমরা রাক্ষসী কিভাবে খেলি।
আর জীবনে যদি তুই আমাকে এভাবে ব্ল্যাকমেল করিসনা সেদিন তোর একদিন কি আমার একটি বড় বোনের সাথে এই ব্যবহার।

বলে অন্তরা রাগে গজগজ করতে করতে বাথরুমে চলে গেল। আজকে অন্তরা ভার্সিটিতে যায় নাই আজকে অলির আবদার পূরণ করতে গিয়েছিল। অনেক টাকা খরচ করেছে হোলি মে যারা হৃদয়।এটা একদম ঠিক হয়নাই। আমার তার কিছু টাকা ফেরত দেওয়া উচিত।
সবে শয়তান অলিটার জন্য হয়েছে কিনা কি ভাবছে? আমার মান সম্মান সব শেষ।
কিন্তু হৃদয় ছেলেটা একটু বিরক্ত বোধ করে নাই সব হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। এতদিন তার সম্পর্কে সব খারাপ ধারণা আমার মনে হয় একদিনে কেটে গিয়েছে। আজকের জন্য আমি তারপর অনেক মুগ্ধ হয়েছি।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে অলি অনেক খাবার অর্ডার দিয়েছিল সবই একটু একটু সব খাবার খেয়েছে। এত খাবার মানুষ খায় বিল অনেক হয়েছে।আবার কসমেটিক কিনতে গিয়ে বেশি বেশি কিনেছেন শত বলে আমি ওকে থামাতে পারলাম না। শয়তানী একটা। মন চাইছিল ওকে রাস্তায় ধরে পরপর 20 টা থাপ্পর মারি।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখল অলি ঘুমাচ্ছে। জন্মের খাওয়া খাইয়া এখন আমার ঘুম।

বিরক্ত হয় হঠাত হৃদয়ের সাথে কথা বলে ক্ষমা চাইতে মন চায়লো সে নিশ্চয়ই আমাদের ছোটলোক ভাবছে।

ফোনটা নিয়ে হৃদয়ের নাম্বারে কল করলাম দুইবার রিং হতেই রিসিভ হলো। অন্যদিন কথা বলতে আমার কোন রকম লাগে না একটানা বকতে থাকি। কিন্তু আজকে খুব আনইজি লাগছে। লজ্জা করছে কথা বলতে পারতাম তাহলে হ্যালো বললাম।

“হ্যালো, কেমন আছো?”

আমি ভেবেছিলাম আমার সাথে হয়তো খারাপ ব্যবহার করবে। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে সুন্দর ভাবে কথা বলতে দেখি আর অবাক হলাম।
মনে ভেবে নিয়েছি কোন কথা নই আগে ছরি বলবো।

“সরি।”

আচমকা সরি শুনে হৃদয় কিছুটা হতভম্ব হয়ে।

“হোয়াট?”

“আই এ্যাম, এক্সট্রিমলি সরি! আমি সত্যিই দুঃখিত আমার বোনের ব্যবহার। ও বাচ্চা আসলে একটু বেশি চঞ্চল।আমি আপনার টাকা ফেরত দেবো কিন্তু এখন আমার কাছে টাকা নাই এজন্য দিতে পারছি না। কিছুদিন পরে দিয়ে দেবো। প্লিজ আমাদের খারাপ ভাববেন না।আমি আপনার সাথে ঝগড়া করেছি কিন্তু আপনার টাকা নষ্ট করতে চায়না ই।”

“আরে কুল কুল আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি। আর টাকা খরচ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আর তোমার কাছে আমি টাকা চায়নি। সো টাকা দেওয়ার কথা বলবে না। আর আমার একটা মাত্র ছোট শালির তার পেছনে এটুকু টাকা খরচ করতেই পারি। নো প্রবলেম আমি কিছু মনে করিনি।”

“শালী কথাটা শুনে অন্তরা থমকে গেল। এরে আমি বলি আর এ আমায় বলে কি?কিন্তু অদ্ভুত বিষয় আজকে আমার রাগ হচ্ছে না। উল্টো লজ্জা পাচ্ছি‌।”

“কি হলো ম্যাডাম কিছু বলেন?আবার রেগে গেলেন নাকি আমাকে কি বলছ ঝাড়বেন সেগুলো ভাবছেন নাকি?”

কথাটা বলে হৃদয় হা হা করে হাসতে লাগলো।

“না আজকে আর ঝগড়া করবো না।”

“রিয়েল।”

অন্তরা চুপ করে রইলো।

.

আদ্র বিকেল থেকে স্নেহার বের হওয়ার অপেক্ষা করছে কিন্তু স্নেহা যে টাইমে বের হলঝ না। আমি হলো তার এক ঘন্টা পর সাতটার দিকে।
আদ্র দূর থেকে স্নেহাকে লক্ষ্য করছিলো।স্নেহা কি করে না করে। ওর ভয় মাখা মুখ দেখে ওর মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে। তখনই বাইক পার্ক করে রেখে ও স্নেহা পেছনে হাঁটতে লাগে।

উদ্দেশ্য স্নেহাকে ভয় দেখাবে। লাইটের অন্ধকারে স্নেহা ভয়ে আর ভীতু মুখ দেখে মিটি মিটি হাসে আদ্র।স্নেহাকে ভয়ে কাঁপতে দেখে ওর হা হা করে হাসতে ইচ্ছে করেছিল।কিন্তু হাত দিয়ে মুখ চেপে নিজেকে কন্ট্রোল করে। না হলে ধরা পড়ে যাবে।

হঠাৎ স্নেহা ভূত ভূত বলে লুটিয়ে পড়তে নেই রাস্তায়।এতটা হবে আদ্র ভাবেনি ভেবেছিল হালকা ভয় দেখাবে। একদম ভয় অঙান। আদ্র ছুটে স্নেহাকে ধরে পড়ার হাত থেকে বাঁচায়।

সত্যি স্নেহার চোখ বন্ধ।
স্নেহাকে অজ্ঞান হতে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। ডোজটা বেশি হয়ে গেছে। এখন যদি স্নেহার কোন ক্ষতি হয়। কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে স্নেহাকে ডাকতে লাগে কিন্তু সাড়া নেই।
ভয় আরো চড়াও হয়।
আরও কিছুক্ষণ ঢেকে স্নেহা ওঠে না। যে স্নেহাকে হসপিটালে নিয়ে যাবে ভাবে কুলে নিতে যাবে ওমনি স্নেহা ভূত ভূত বলে চেচিয়ে ওঠে,,

চোখ মেলেই স্নেহা দেখতে পায় কেউ কে ধরে রেখেছে।আবছা আলোয় মুখটা দেখতে পেয়ে কিছুটা সাহস পায় এ তো আদ্র। আদ্র কে দেখে ওর কি হয় ও নিজেও জানে না আদ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
এখন আর ওর ঘাড় মটকাতে পারবে না ওর ভূতটা।
ভয়ে এখনো শরীর কাঁপছে স্নেহার। ভুতে প্রচুর ভয় ওর।

কাঁপতে কাঁপতে আদ্র ঢুকে মাথা রেখে বলতে লাগে,,,,”প্লিজ আমাকে বাঁচান এইখানে ভূত আছে। আমাকে একটু বাসায় পৌঁছে দিন প্লিজ প্লিজ। ওই ভূত আমার গার মটকাইয়া রক্ত খেয়ে ফেলবে আমাকে মেরে ফেলবে।”

বলে স্নেহা ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদতে লাগে।করতে আদ্রর কানের তো স্নেহার কোন কথায় যাচ্ছে না। ওত হতভম্ব হয়ে বসে আছি আছে। পৃথিবীর কোন কথার কারণে এখন যাবে না।স্নেহার এত কাছে আছে এভাবে শক্ত করে জড়িয়ে আছে। সবকিছু ওর মনে কাছে স্বপ্ন দেখছে। ভালোবাসারমানুষ এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলে তার ভেতরে কেমন অনুভূতি হতে পারে।অদ্ভুত অনুভূতি অদ্ভুত ভালো লাগা। আদ্র পাথরের মত বসে আছে।সমস্ত আবেগ-অনুভূতি মনে হয় ওকে ঘিরে ধরে আছে আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলবে।

“ছাড় আমাকে।”

গম্ভীর খানিকটা চিৎকার করে কথাটা বলেছে আদ্র নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারছে না।যাকে ভালোবাসে সে এতো কাছে থাকলে নিজের অনুভূতি লুকাতে পারবেনা।
আর এখনই স্নেহাকে কিছু জানাতে চায় না আগে জানতে চায়।স্নেহার মনে ওর জন্য কোন অনুভূতি আছে কিনা।

“না প্লিজ আপনি আগে দেখেন এখানে কোন ভূত আছে কিনা। আমি ভূতে খুব ভয় পায়।”

ভয় সব জ্ঞান লোপ পেয়েছে স্নেহার ও মে একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছে ও বুঝতে পারছে না।

“তোমার লজ্জা করে না একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছো। ছাড়ো বলছি আমাকে। আর কিসের ভূত ভূত করছো এখানে কোন ভূত নেই। আর ভূত বলতে কিছু হয়না এইটুকু কমন সেন্স তোমার নেই ইডিয়েট একটা।”

চলবে♥️
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে