মায়াবতী বউ ৬ষ্ঠ পার্ট

0
2866

মায়াবতী বউ ৬ষ্ঠ পার্ট

লেখকঃপিচ্চি পোলা
একটু শান্ত হয়ে ওকে আমার দিকে ঘুরিয়ে
বসিয়ে বললাম।আমাকে পরিচয় দেস নাই
কেনো মিতা? (মায়ার আসল নাম মিতা)
কি করে পরিচয় দিতাম বল? ৭ বছর পর যখন
তোর কাছে পৌছলাম তখন তুই অন্য কারো হয়ে
গিয়েছিলি। (মিতা)
এই ৭ বছর কোথায় ছিলি? তোকে কতো
খুঁজেছি কোথাও পাইনি। (আমি)
মিতা বললো সেদিনকার কথা মনে নাই তোর?
বাবা গ্রামের সব জমি বিক্রি করে শহরে চলে
যাচ্ছিলো আমাদের নিয়ে। তখন আমার যাওয়া
দেখে তুই কাঁদছিলি আর আমিও কাঁদছিলাম।
এর কয়েকদিন পর শহর থেকে গ্রামে আসতে
চাইলেও বাবা নিয়ে আসলো না।
আমি রাগ করে সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে
গিয়ে পড়ে যাই। আমাকে হাসপাতালে নেয়া
হয়। আমি সুস্থ হলেও আগের সবকিছু ভুলে যাই।
এই ৭ বছর পর আজ থেকে কয়েকমাস আগে আমি
হঠাৎ করে সবকিছু মনে করতে পারি।
তখন মনে পড়ে তোর কথা। বাবাকে সব খুলে
বললাম যে তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো
না। সেই ছোট থেকেই তুই আর আমি একসাথে
খেলেছি, পড়েছি।
তখন বাবা বললো ঠিক আছে তোকে নিয়ে
যাবো গ্রামে।
গ্রামে এসে সোজা তোদের বাড়িতে আসি।
তোর মা আমাকে দেখে কেঁদে ফেলে।
বলে
তোমার জন্য আমার খোকা অনেক অপেক্ষা
করেছিলো মা।
তখন আমাকে সব খুলে বলে তোর মা। তুই আংকেলের
অফিস দেখতে শহরে এসে পড়াশোনা করিস
আর আংকেলের অফিস দেখাশোনা করিস।
কিছুদিন আগে নাকি একটা মেয়ে তোর
জীবনে আসে এটাও বলেছিলো তোর মা।
আমি বিশ্বাস করিনি। তোর ঠিকানা নিয়ে
শহরে আসলাম।
তোরা যেখানে থাকতি ঐ এলাকার পাশেই
আমার ফুফুর বাসা।
সেখানে থেকে তোকে ফলো করলাম। হা
সত্যিই তুই একটা মেয়ের সাথে জড়িয়ে
গেছিস।
বাবা এই কথা শুনে আমায় নিয়ে যেতে চাইলো
ওখান থেকে। বললো তোকে ভালো সুন্দর
একটা রাজপুত্রের সাথে বিয়ে দেবো।
আমি কেঁদে বুক ভাসালাম আর বললাম আবির
ছাড়া কাউকে আমি কল্পনাও করবো না
জীবনে।
আমি বাবার কথায় চলে যাইনি। তোর ঐ সুমির
সাথে পরিচিত হয়ে বান্ধবী বানালাম।
তুই ওর সাথে আমায় দেখেও চিনতে পারিস নি।
পারার কথাও না। এই ৭ বছরে আমি অনেক
পাল্টে ফেলেছি চেহারা। আর তখন তো
কিশোর বয়স ছিলো আর এখন যৌবনকাল।
তখন আমায় চিনতে পারিস নি বলে খুব কষ্ট
হতো। আমি পরিচয় দেইনি সুমি তোর জীবনে
এসেছিলো বলেই।
আমি চাইনি তোদের মাঝে দেয়াল হয়ে
দাড়াই আমি।
আমি ফুফুর বাসা থেকে ও তোর থেকে দূরে
যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কিন্তু ঐ কয়দিনে সুমির সাথে থেকে আর
তোদের দুজনকে ফলো করে একটা বিষয়
আমাকে কৌতুহলী করে তুললো।
তুই ওকে ভালোবাসলেও তোদের চলাফেরায়
আমার কেমন জানি মনে হলো। ও তোর সাথে
টাইমপাস করছে না তো?
তখন আমি আরো বেশি মিশতে লাগলাম সুমির
সাথে।
একসময় সুমিকে বলেই ফেললাম ছেলেটা তো
তোমায় খুব ভালোবাসে। তা তোমরা বিয়ে
করবে কবে?
কথাটা শুনে ও একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
বললো ও একটা বড় ভুল করেছে।
কৌতুহলী হয়ে বললাম কি ভুল?
ও বললো আবিরকে কোনদিন বিয়ে করতে
পারবো না আমি। কারন আমার বিয়ে ঠিক হয়ে
আছে বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে। আর আমরা
চুটিয়ে প্রেম ও করি। তাইতো আবিরকে আমি
আমার শরীর স্পর্শ করতে দেইনি বা ওকে স্পর্শ
করিনি।
এইটুকু বলে মিতা আমার দিকে চেয়ে বললো।
বিশ্বাস কর আবির সুমির এই কথা শুনে আমি
প্রচন্ড কষ্ট পেলাম তোর কথা ভেবে।
শেষমেশ তুই একটা ভুল মেয়ের প্রেমে
পড়েছিলি এই ভেবে।
যাই হোক তখন ওকে বললাম তাহলে আবির
নামের ছেলেটার জীবন নিয়ে খেলছো
কেনো? ও তো তোমায় সত্যিই ভালোবাসে।
ও বললো হা। খুব সহজ সরল ছেলে আবির। আমি
একটু টাইমপাস করার জন্য ওর পিছে লাগি।
ভালোবাসর প্রস্তাব দেই। কিন্তু ও রাজি হয়নি
প্রথম।
বলেছিলো গ্রামের কোন এক মেয়েকে ও
ভালোবাসে। সে কোথাও হারিয়ে গেছে। ওর
বিশ্বাস সে একদিন ফিরে আসবে।
কিন্তু আমি কেনো জানি ওর প্রতি বেশি
দুর্বল হয়ে গেলাম। ওর মুখে ভালোবাসার কথা
শুনেই ছাড়বো ভাবলাম।
অনেকদিন ওর পিছে ঘুরেও ওর সাড়া না পেয়ে
বললাম তুমি আমায় না ভালোবাসলে আমি
আত্মহত্যা করবো।
এই কথা শুনে ও আমার সাথে সময় দিতে
থাকলো। কারন ও খুব সহজ সরল ছেলে।
আমি এই সরলতার সুযোগ নিয়ে বড় একটা ভুলের
ফাঁদে পা দিয়েছি। না পারছি সত্যটা বলতে,
না পারছি ওর সাথে চলতে।
এই বলে সুমি আমার হাতটা ধরলো। আমায়
একটা বুদ্ধি দাও মায়া। আমি কি করে ওর
থেকে দূরে যাবো?
আমি তখন সুমিকে বললাম খুব বড় ভুল করেছো।
তবে এখনো সময় আছে এই ভুল শোধরানোর।
তুমি
ওর সাথে আর দেখা করোনা। একটা চিঠি
দিয়ে জানিয়ে দাও তোমার বিয়ে হয়ে
গেছে। বলবে তোমাদের ভালোবাসার কথা
তোমার বাবাকে বলার পরও রাজি হয়নি
তিনি।
সুমি বললো ও কি মানবে? ওর যদি কিছু হয় বা
কোন পাগলামি করে?
আমি বললাম যাওতো তুমি তোমার কাজ করো।
আমি দেখবো এদিকটা। আর তুমি যদি এটা না
করে আরো জড়াও ওর সাথে তবে ওর সহজ সরল
জীবনটা নষ্টের মুখে চলে যাবে। তারচেয়ে
এখনই এই সিদ্ধান্ত নাও।
ও আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায় আর তোকে
চিঠি পাঠায়।

চলবে…………………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে