EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার পর্ব-১

0
5528

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১ম

ক্যাম্পাসে বসে থেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি হঠাৎ রাফি কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে বললোঃ দোস্ কালকের পরের দিন নাকি নীলিমার বিয়ে।( মন খারাপ করে)

আমিঃ হোয়াট কী বলতেছিস এসব?(অবাক হয়ে, দাঁড়িয়ে যায়ে)

রাফি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বললোঃ হ্যাঁ রে দোস্ত।
আমি কিন্তু নিলীমাকে ছাড়া বাঁচবো না।

আমিঃ প্লিজ রাফি তুই শান্ত হ । তোর নীলিমা তোরই থাকবে। প্লিজ শান্ত হ।

তারপরেও রাফি কান্না করতেছে। হয়তোবা সে নীলিমাকে হারানোর ভয় করতেছে।

আমি সিফাতকে বললামঃ সিফাত নীলিমা কলেজে এসেছে কী?

সিফাতঃ হ্যাঁ দেখলাম তো।

আমিঃ তুই আর মিমি যায়ে নীলিমাকে এখানে নিয়ে আয়?

সিফাতঃ ঠিক আছে। আমরা নীলিমাকে এখানে নিয়ে আসতেছি।

এরপরে সিফাত আর মিমি নীলিমাকে আমাদের আড্ডা খানায় নিয়ে আসার জন্য গেল। রাফি এখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছে।
আমি ওকে বললামঃ দোস কান্না করিস না। নিজেকে শক্ত করে। তোর ভালোবাসা তোর হয়েই থাকবে।

রাফি কিছুটা শান্ত হয়ে আমার কাঁধ থেকে মাথা তুলে বললোঃ হুমমম।

এবার আমার পরিচয় দেই, আমি সাহিদ হাসান সাহি। অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আর এতোক্ষণ যাদের কথা বললাম তারা হলো আমার বন্ধু রাফি, সিফাত আর মিমি। রাফির গার্লফ্রেন্ড হলো নীলিমা। তাদের রিলেশন চলতেছে প্রায় একবছর যাবৎ। তারা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু হঠাৎ করেই নীলিমার বিয়ের কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগলো। আমি নাহয় এখন প্রেম প্রিতি থেকে অবসর নিয়েছি, কিন্তু এইসবের আইমিন ছ্যাঁকা খাওয়ার ব্যাথাটা তো বুঝি। হ্যাঁ আমিও ছ্যাঁকা খেয়েছি, যেটার ঝোঁক এখনো সামলাতে না পেরে সবসময় আমি একটা উক্তিই বলে থাকি,,,
” ছ্যাকাই শক্তি ছ্যাকাই বল
যেই খেয়েছে সেই সফল “” ! আমাদের বন্ধু মহলে আরকেটা বেস্ট ক্যাপুল আছে। আর তারা হলো সিফাত আর মিমি। তারাও একে অপরকে প্রচন্ড ভালোবাসে। একজন অন্য জনকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারে না। তাদের রিলেশনের বয়স প্রায় তিন বছর। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে তারা একে অপরকে ভালোবাসতে শুরু করে। তবে এখন তাদের দুজনের পরিবারই ওদের সম্পর্কটা জানে আর তা মেনেও নিয়েছে।
আর নিবেই না বা কেন? সিফাতের মতো ছেলে পাওয়া এই যুগে মুশকিলের ব্যপার। সিফাত সব দিক থেকেই ভালো। আচার আচরণ থেকে শুরু করে ফ্যামিলি পর্যন্ত সবকিছুই ভালো।মিমিও খুব সুন্দর একটা মেয়ে। ঠান্ডা মেজাজের খুব ভদ্র। আমাদের সাথে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে। লেখা পড়াতেও ভালো। অপরদিকে রাফিও তেমনি।কিন্তু রাফির পরিবার একটু আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হওয়ায় নীলিমার বাবা রাফিকে মেনে নিতে পারেনি। তবে আমাদের বন্ধুত্বের শিকল টা বেশ গভীর।

এই পৃথিবীতে সুষ্ঠ ভাবে চলার জন্য বা বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন একটা সঙ্গি। তবে এখানে সঙ্গি বলতে আমি বিপরীত লিঙ্গকে উদ্দেশ্য করে বলিনি। এখানে বেঁচে থাকার জন্য সঙ্গি বলতে বুঝিয়েছি একজন বা একাধিক জন সৎ বন্ধুকে। যে আপনাকে ভালো কাজের পরামর্শ দিবে এবং বিপদ আপদে পড়লে আপনাকে সৎ উপদেশ দিবে। আর এই সঙ্গের মাধ্যমে একটা ভালো ছেলে খারাপ পথে যেতে পারে আবার একটা খারাপ ছেলে সাঙ্গের মাধ্যমে ভালো পথে আসতে পারে। এই সম্পর্কে বিখ্যাত ফার্সি কবি শেখ সাদী বলেছেন ” মন্দ লোকের সাথে যার উঠা বসা, সে কখনোই কল্যাণের মুখ দেখবে না।” সুতরাং, আমাদের উচিত হবে বন্ধু বা সঙ্গি নির্বাচন করার সময় সব দিক বিবেচনা করে তা নির্বাচন করা।
যেমনটা আমার বন্ধুমহল। আমাদের কেউ যদি কোনো প্রকার সমস্যায় পড়ি তাহলে সেই বিষয়ে সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি। তারপরে সবার মতে সেটা সমাধান করি।
যেমন টা আজকে রাফি করলো। নীলিমার বিয়ের কথা শোনার সাথে সাথে আমাদের জানালো।

যাজ্ঞে, অনেক কথাই হলো গল্পে আসি। একটু পরে সিফাত আর মিমি নীলিমাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসলো। নীলিমার মন খারাপ হয়ে আছে।
রাফি কে দেখে নীলিমা বললঃ প্লিজ রাফি তুমি কিছু একটা করো।(করুন সুরে)

রাফি কে কিছু বলতে না দিয়ে আমি নীলিমাকে বললামঃ নীলিমা তুমি কি রাফি কে ভালোবাসো?

নীলিমাঃ হ্যাঁ ভাইয়া আমি ওকে খুব ভালোবাসি।(আমাদের থেকে এক ব্যাচ ছোট হওয়ায় ভাইয়া বলে ডাকে)

আমিঃ কিন্তু তোমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এখন কী করবে?

নীলিমিঃ এখন আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই কারণ আমি রাফি কে ছাড়া বাঁচবো না।(কান্না করতে করতে)

আত্মহত্যা করার কথা শুনে আমার প্রচুর পরিমাণে রাগ উঠলো। আমি নীলিমাকে কষে একটা চড় দিয়ে বললামঃ আত্মহত্যাই কী সকল সমস্যার সমাধানের পথ? তুমি যদি আত্মহত্যা করো তাহলে রাফির কী হবে তা ভেবে দেখেছো একবার?(রেগে)

নীলিমা কান্না করতে করতে বললোঃ এটা ছাড়া যে আর কোনো উপায় নেই ভাইয়া।

আমিঃ কে বললো উপায় নেই। তুমি কি বাসা থেকে পালিয়ে এসে রাফি কে বিয়ে করতে পারবে?

রাফিঃ কি বলেতেছিস এসব তুই?(অবাক হয়ে)

আমিঃ দেখ ভাই এটা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
আর তুই যদি এখন বিয়ে না করিস তাহলে তোরা দুজন একে অন্যকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবি। এখন বল তোরা পারবি কি না?

আমার কথা শুনে নীলিমা কিছুটা চুপ করে থেকে বললোঃ হ্যাঁ ভাইয়া আমি পারবো।

রাফিঃ হ্যা আমিও রাজি।

আমিঃ গুড। তাহলে আজকে তোদের বিয়ে। সিফাত তুই আজকে রাতের জন্য একটা হোস্টেল বা বাসা বুক করে। যেখানে আজকে রাফি আর নীলিমার বিয়ে হবে।

সিফাতঃ আরে বাসা নেওয়ার কি আছে? আমাদের একটা বাসা এখন ফাঁকা আছে। সেখানেই হবে।

আমিঃ ঠিক আছে। আর নীলিমা তুমি সন্ধ্যা সাতটার সময় সিফাত যেই ঠিকানা দিবে সেখানে চলে এসো।

নীলিমাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।

আমিঃ আর আসতে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমাকে জানাবে, আমি যায়ে নিয়ে আসবো।

নীলিমাঃ আচ্ছা ভাইয়া।

আজকে আর কেউ ক্লাস না করে বাসায় চলে আসলাম। কারণ, আজকে রাফি আর নীলিমার বিয়ে। তাই কিছু কাজ আছে সেগুলো করতে হবে।

বাসায় এসে বাইকটা পার্ক করে দরজার কাছে এসে কলিং বেল বাজাতেই মামি এসে খুলে দিলো। মামি আমাকে এই সময় বাসায় আসতে দেখে বললোঃ কী হয়েছে আব্বু তোর? এই সময়ে আসলি যে? কিছু হয়েছে নাকি? ( উত্তেজিত হয়ে)

আমিঃ না মামি আমি ঠিক আছি এতো চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

মামি আমার কপালে চুমু দিয়ে বললোঃ বারে আমার একটা মাত্র ছেলে তার জন্য চিন্তা না করে পারি।

আমিঃ হুমম। দেখি সাইট দেও আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

মামিঃ ঠিক আছে যা।

আমি রুমে এসে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলাম।
আসলে মামির কোনো ছেলে না থাকায় আমাকে নিজের ছেলে হিসেবে দেখে। শুধু মামি নয় মামাও আমাকে তার ছেলের মতোই ভালো বাসে ‌ আর হ্যাঁ আমি আমার মামার বাসায় থেকে লেখাপড়া করি। আমার বাসা নওগাঁ জেলায়। কোনো এক কারণে আজ আমি আমার সেই সোনার শহর ছেড়ে রাজশাহীতে মামার বাসায় পাড়ি জমিয়েছি । তবে এখানে থাকার জন্য যথেষ্ট কারণও আছে।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। একটু পরে যোহরের আযান দিলো। নামাজ পড়ে লাঞ্চ করার জন্য নিচে আসলাম।
নিচে নেমে দেখি মামা আর মামী সোফায় বসে আছে ‌ আমি যায়ে মামা আর মামীর মাঝখানে যায়ে বসলাম।

মামা আমার হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললোঃ আব্বু তোমার লেখা পড়া কেমন হচ্ছে?

আমিঃ ভালো হচ্ছে মামা। মামার তোমার একটা হেল্প লাগবে।
[ আমার মামা হলো এই জেলার ডিসি]

মামাঃ কী হেল্প আব্বু?

আমিঃ আসলে মামা আমার এক ফ্রেন্ড মানে রাফি একটা মেয়েকে ভালবাসে আর মেয়েটাও রাফি কে ভালোবাসে। কিন্তু সমস্যা হলো মেয়েটার বাবা মেয়েটির বিয়ে ঠিক করেছে। আর মেয়েটা মানে নীলিমা যদি রাফি কে না পায় তাহলে আত্মহত্যা করবে।

মামাঃ ওওও,,, তাহলে আমাকে কী করতে হবে?

আমিঃ আমরা ঠিক করেছি আজকে রাফি আর নীলিমার বিয়ে দিয়ে দিবো‌ । আর দেখো বিয়ে যদি না দেই তাহলে দুজন দুজনকে হারিয়ে ফেলবে। এতে কে কখন কী করে বসে তা তো বলা যায় না। আর তোমার কাজ হলো বিয়ে হওয়ার পর যত প্রশাসনিক সমস্যা হবে তা সলভ করা।

মামাঃ সমস্যা নেই আমি এই দিকটা সামলে নিবো। কিন্তু রাফির পরিবার বা রাফি যদি মেয়েটাকে কখনো ছেড়ে দেয় তাহলে কিন্তু সমস্যা হতে পারে।

আমিঃ না না কখনো ছেড়ে দিবে না এটা আমার বিশ্বাস। তারপরেও আমি ভালোভাবে বলবো।

মামাঃ ঠিক আছে।

মামিঃ তো আব্বু কখন বিয়ে হবে ?

আমিঃ রাতে মামি।

মামিঃ ওও আচ্ছা ‌‌। অনেক কথাই হলো। চলো এবার লাঞ্চ করবে।

মামাঃ হুমম চলো।

আমিঃ মামি তিশা এখনো কলেজ থেকে আসে নি?
[ তিশা হলো আমার একমাত্র মামাতো বোন। এবার মেডিকেল সেকেন্ড ইয়ারে]

মামিঃ না এখনো আসেনি। আজকে নাকি আসতে দেরি হবে।

আমিঃ ওওও,,,।

মামিঃ হুমম চলো খাবে।

আমিঃ চলো।

এরপরে মামা আর মামীর সাথে লাঞ্চ করে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে আসরের নামাজ পড়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখি তিশা সোফায় বসে থেকে টিভি দেখতেছে।

আমাকে দেখেই বললোঃ ভাইয়া আজকে নাকি তোর কোনো এক বন্ধুর বিয়ে?

আমিঃ হ্যাঁ রাফির। তো কিছু বলবি?

তিশাঃ বলেছিলাম তুই কবে বিয়ে করবি?

আমিঃ আমার সম্পর্কে তো তুই জানিস। তারপরেও এই কথা জিজ্ঞাসা করতেছিস কেন?

তিশাঃ না এমনি বললাম। আর ‌ তুই আর কত দিন এভাবে থাকবি। না আছে গার্লফ্রেন্ড না আছে বউ? দেখ তোর বন্ধু আজকে রাতে মজা নিবে নি।

আমি তিশার মাথায় একটা চুটকি মেরে বললামঃ বেশি বড় হয়ে গেছিস তাই না? শপিং মলে যাবো তোর কিছু লাগবে?

তিশাঃ না আমার কিছু লাগবে না। শুধু ফুচকা নিয়ে আনিস।

আমিঃ ঠিক আছে ফুচকা পাগলি।

মামিকে বলে বাসা থেকে বের হয়ে বাইকটা নিয়ে সিফাত কে ফোন দিয়ে শপিং মলে আস্তে বললাম।
আসলে তিশার সাথে আমার ভাইবোনের সম্পর্কের থেকে বেস্ট ফ্রেন্ডের সম্পর্ক টা বেশি‌ তাই আমার সাথে যেকোনো বিষয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলে।

শপিং মলে আসার একটু পরে সিফাত আসলো। সিফাত কে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা কাটা করতে লাগলাম। কেনাকাটা বলতে রাফির জন্য একটা শেরওয়ানি আর নীলিমার জন্য একটা শাড়ি । আর বাসর ঘর সাজানোর জন্য যাবতীয় সামগ্রি।

বাজার করতেই সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেলে‌। আমি বাজার গুলো সিফাত কে দিয়ে বললামঃ সিফাত তুই এগুলো তোর বাসায় নিয়ে চল আমি আমার বাসায় থেকে আসতেছি।

সিফাতঃ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস?

আমিঃ ওকে। আর মিমি না আসলে তুই ওকে যায়ে নিয়ে আয়।

সিফাতঃ আচ্ছা।

সিফাত চলে যাওয়ার পর আমিও বাইক নিয়ে বাসায় আসলাম।
বাসায় এসে তিশাকে ওর ফুচকা দিয়ে আমি আমার রুমে যায়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে কিছু টাকা নিয়ে রুম থেকে বের হলাম।

নিচে এসে দেখি মামি বসে আছে। আমি মামিকে বললামঃ মামি আজকে রাতে আমি বাসায় আসতে পারবোনা।

মামিঃ কেন বাবা?

আমিঃ আজকে ওদের বিয়ে তো আর বিয়েটা হচ্ছে সিফাত দের একটা বাসায়। বাসাটা শহরের বাইরে হওয়ায় সেখানে রাতে একাই থাকা সমস্যা। এই জন্য আমি আর কিছু বন্ধু মিলে সেখানে থাকবো।

মামিঃ ঠিক আছে বাবা সাবধানে থেকো।

আমিঃ ওকে মামি।

মামিঃ টাকা আছে তোমার কাছে?

আমিঃ হ্যাঁ মামি আছে আজকে লাগবে না।

মামিঃ আচ্ছা ভালোভাবে যেও।

আমি হ্যাঁ বলে বাইক নিয়ে আরো দুই জন বন্ধুকে নিয়ে রওনা দিলাম সিফাতের বাসার উদ্দেশ্যে।

প্রায় আধাঘণ্টা বাইক চালানোর পর পৌঁছে গেলাম। বাসায় ভিতরে যায়ে দেখি মিমি আর নীলিমার একটা ফ্রেন্ড বসে থেকে গল্প করতেছে। আমি আর বন্ধুরা মিলে রাফির ঘর সাজাতে লাগলাম। আর অন্য দিকে মিমি আর নীলিমার বন্ধু নীলিমাকে বিয়ের জন্য সাজাতে লাগলো।

ঘর সাজানোর পর আমি সিফাত কে বাইকের চাবি দিয়ে কাজী সাহেব কে নিয়ে আসতে পাঠালাম। সিফাত চলে যাওয়ার পরে রাফি কে শেরওয়ানি পড়ে দিয়ে রেডি করে রাখলাম। একটু পরে কাজি সাহেব আসলেন।

আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবেই রাফির আর নীলিমার বিয়ে হয়ে গেল। কাজী সাহেবকে তার প্রাপ্যতা দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।

বিয়ের কাজ শেষ করতে রাত সাড়ে দশটা বেজে গেল। আমি আসার সময় কিছু খাবার এনেছিলাম। সেগুলো সবাই মিলে খেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে রাফি আর নীলিমাকে ওদের রুমে পাঠিয়ে দিলাম। যাওয়ার সময় ওরা দুজনেই আমাকে জড়ায়ে ধরে কান্না করে দোয়া নিয়ে রুমে গেল।

ওদের কে রুমে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে আমার দুই বন্ধু মানে যাদেরকে আমি এখানে আসার সময় নিয়ে এসেছিলাম তারা চলে গেল।

এখন নতুন দাম্পত্যিরা ছাড়া আমরা এখানে আছি মোট চারজন।
আমি, সিফাত, মিমি আর নীলিমার ফ্রেন্ড।আমি আর সিফাত একটা রুমে শুয়ে পড়লাম। আর মিমি আর নীলিমার ফ্রেন্ড একটা রুমে ঘুমাতে গেল।

সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই মিলে একসাথে নাস্তা করতেছি তখন সময় হয়তো সাতটা থেকে সাড়ে সাতটা হবে কলিং বেল বেজে উঠল। ওদের নাস্তা করতে বলে আমি দরজা খুলতে গেলাম। দরজা খুলে দেখে তো আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। কারণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুই জন পুলিশ আর নীলিমার বাবা। নীলিমার বাবার দিকে তাকিয়ে একে বারে চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে। দেখে বুঝা হচ্ছে প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে।

আমাকে গম্ভীর গলায় বললেনঃ আমার মেয়ে কোথায়?

আমি মুচকি হেঁসে বললামঃ আপনার মেয়ে তার স্বামীর সাথে নাস্তা করতেছে।

নীলিমার বাবাঃ হোয়াট??(চিৎকার করে)

আমিঃ হ্যাঁ। আপনার মেয়ে রাফি কে ভালোবাসে। আর আপনি রাফির সাথে আপনার মেয়েকে বিয়ে দিবেন না এই জন্য আমিই ওদের বিয়ে দিয়েছি।

এতক্ষনে নীলিমা, রাফি সহ সকলেই আমাদের কাছে চলে এসেছে।

আমার কথা শুনে নীলিমার বাবা তেড়ে এসে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে বললোঃ তোর সাহস কী করে হয় আমার মেয়েকে একটা ,,,,

বলতেই নীলিমার দিকে তার নজর পড়লো। আমাকে ছেড়ে দিয়ে নীলিমার কাছে যায়ে বললোঃ নীলিমা এই ছেলে যা বলতেছে তা কি সত্যি?

নীলিমাঃ হ্যাঁ বাবা। ( ভয়ে ভয়ে)

নীলিমার কথা শুনে নীলিমার বাবা নীলিমাকে একটা সজোরে চড় মেরে বললোঃ আজ থেকে আমার কোনো মেয়ে নেই। যে ছিল সে মারা গেছে। অফিসার এদের কে থানায় নিয়ে চলুন?

নীলিমার বাবা চলে যাইতে নীলিমা ওর বাবার হাত চেপে ধরে বললোঃ বাবা আমাদের মেনে নাও। আমি রাফি কে ছাড়া বাঁচবো না।(কান্না করতে করতে)

নীলিমার বাবা তার হাত থেকে নীলিমার হাত সরিয়ে নিয়ে আবার চড় মারতে চাইলে আমি তার হাত ধরে বললামঃ অনেক করেছেন মিস্টার নজরুল চৌধুরী(নীলিমার বাবার নাম)। আপনি কোথা থেকে এতো সাহস পেয়েছেন হ্যাঁ? নীলিমা এতোক্ষণ আপনার মেয়ে ছিল কিন্তু এখন আপনি তাকে মেয়ে হিসেবে অস্বীকৃতি প্রদান করেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো সে এখন একজনের স্ত্রী । সো আপনার আর মারার কোনো অধিকার নেই।

নীলিমার বাবা আমার কথাই আরো রেগে গিয়ে পুলিশ অফিসার কে আমাদের থানায় নিয়ে যেতে বললো।

এরপরে আবার কি? আমাদের ছয়জন মানে নীলিমা, রাফি, সিফাত, মিমি, নীলিমার ফ্রেন্ড আর আমাকে পুলিশের গাড়িতে করে থানায় নিয়ে আসলো।

থানায় নিয়ে আসার পর আমাদের কে একটা রুমে ঢুকিয়ে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে কনেস্টেবল চলে গেল।

ওরা সবাই একটা ঘোরের মধ্যে আছে। ওরা ভাবতেছে কী থেকে কী হয়ে গেল। কিন্তু আমার কোন চিন্তা নেই। কারণ মামাকে ফোন দিলে এখান থেকে বের হতে আমার পাঁচ সেকেন্ড লাগবে না। কিন্তু আমি দেখতে চাচ্ছি যে, এখানে কী হয়?

রাফি সহ ওরা সবাই অন্য মনস্ক হয়ে বসে আছে। আর আমি বসে থেকে কানে হেডফোন লাগিয়ে মাথা নিচু করে গান শুনতেছি। আমি রুমের দরজার বিপরীত দিক হয়ে বসে আছি। তবে কেউ যদি রুমে প্রবেশ করে তাহলে সে আমার সামনে না আসা পর্যন্ত আমাকে দেখতে পাবেনা।

হঠাৎ করে রুমের দরজা খুললাম আওয়াজ পেলাম। আমি সেদিকে না তাকিয়ে গান শুনতেছি।

একজন পুলিশ বলতেছেঃ ম্যাম এরা এই কয়জন এই মেয়েটা কে এই ছেলেটির সাথে জোর করে বিয়ে দেয়। আর আমরা এদের সেখান থেকে তুলে নিয়ে এসেছি।

পুলিশ টার কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না। আমি পুলিশ টাকে দেখার জন্য পিছনে মাথা ঘুরাতেই আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম। এই আমি কাকে দেখতেছি? কারণ এটা আর কেউ নয় এটা হলো আমার EX গার্লফ্রেন্ড সামিয়া। যার জন্য আজ আমি নিজের শহর ছেড়ে এখানে চলে এসেছি।

সামিয়াও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পুলিশের মানে কনস্টেবলের ডাকে সামিয়া ঘোর কাটলো।
কনস্টেবলঃম্যাম কোথায় হারিয়ে গেলেন?

সামিয়াঃ না কি মানে বলুন?

কনেস্টেবল আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বললেনঃ এই ছেলে হলো এদের লিডার।

সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ ওও তাহলে এখনো লুচ্চামি শেষ হয়নি।

সামিয়ার কথা শুনে ওরা কিছুটা অবাক হলো। কারণ আমার সম্পর্কে এমন রিপোর্ট একটা পুলিশ অফিসার দিবে তা অবাক হওয়ারই বিষয়।

তবে আমি অবাক না হয়ে বরঞ্চে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পিছনে ঘুরে গান শোনায় মনোযোগ দিলাম।

সামিয়া কনস্টেবল কে আমাকে শাস্তি মানে মারার হুকুম দিয়ে বাহিরে চলে গেল।হা হা হা এখনো আমার প্রতি তোর এতো রাগ। বুঝবি একদিন।

আমার বন্ধুদের অন্য এক রুমে নিয়ে গেল। এই রুমে শুধু আমি একাই আছি। একটুপরে কনস্টেবল একটা রশি নিয়ে এসে আমাকে বাঁধলো। বাধার পরে যেই আমাকে মারতে যাবে, ঠিক তখনি আমার এই রুমে একজনের আগমন। তাকে দেখার পরে কনস্টেবল সাহেব আমাকে মারার জন্য যেই লাঠি হাতে নিয়েছিল তা ফেলে দিয়ে সেই আগন্তুকের কাছে গেলেন। আর সেই আগন্তুক লোকের চোখে মুখে ছিল স্পষ্ট রাগের ছাপ। এর পরে সেই লোকটা ধিরে ধিরে আমার কাছে আসলো। আর তার পিছে পিছে আসতেছিলো সামিয়া সহ এই থানার সকল পুলিশ। সেই লোকটা আর কেউ নয় লোকটা হলো,,,,,

(চলবে)

?? কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট করে জানাবেন ???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে