ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠা পর্ব-০৯

0
32

#ডায়েরির_শেষ_পৃষ্ঠা
#পর্ব_৯
#সমৃদ্ধি_রিধী

আহির আর সাইফার বিয়ে, রিসেপশনের সব পার্ট গতকালের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অহমি আগামীকালই মাহিদের বাসায় চলে যাবে। আপাতত আফরোজা বেগমের বাসায়ই আছে। মাহিদ, ফিরোজা বেগম আর মুগ্ধ গায়ে হলুদের দিন বিকলে এসেছিলেন। ফিরোজা বেগম, মুগ্ধ গতকালই রিসেপশনের অনুষ্ঠান শেষেই ফিরে গেছেন। কেবল অহমি আর মাহিদ আফরোজা বেগমের অনেক জোরাজোরি করায় থেকে যায়।

তখন সময় রাত এগারোটার মতো। অহমি ও মাহিদ মাত্রই ডিনার করে রুমে এসেছে। অহমির বাসায় তিনটা রুম। অনেক আত্মীয় স্বজন থাকার কারণে আহির আর সাইফাকে একটা রুম দিয়ে মহিলারা একরুমে ছিল, আর পুরুষরা আরেক রুমে ছিল। আজকে সকালেই ওদের সকল আত্মীয়রা নিজেদের বাসায় চলে যায়। এতে অহমি আবারও নিজের রুমটা ফিরে পায়। মাহিদ সকলে চলে যাওয়ার পর থেকেই বলছিল ‘রুমটা নিট এন্ড ক্লিন করে রাখো। এমনিতেও অনেকের সাথে একসাথে থাকার কারণে ঘুম হয়নি।’ অহমিও করবে করবে করে আর করেনি।

রুম দেখেই মাহিদের ভ্রু কুচকে যায়। বিরক্তিকর দৃষ্টিতে অহমির দিকে তাকায়। অহমি আমতাআমতা করে বলে, “আচ্ছা গুছিয়ে নিচ্ছি রুম। এভাবে তাকানোর কি আছে?”

“তোমার এই রুম কি কখনোই আমি ভালো অবস্থায় দেখবো না?”

অহমি বিছানার চাদর চেঞ্জ করতে করতে বলে, “এইবারই দেখছেন অগোছালো। এর আগে ছিলো না এমন।”

মাহিদ দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দরজার সাথেই হেলান দিয়ে বলে, “শুরু থেকেই এমন। যখন পড়তে আসতাম তখন মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখতাম তো রুমের অবস্থা। ”

“এই আপনি একটা মেয়ের রুমের দিকে আড়চোখে দেখতেন? ছিহঃ।”

“যাস্ট সাট আপ। তোমার ভাইয়ের রুমে ঢুকতেই তোমার রুম সামনে পড়ে৷ চোখ তো একবার দুইবার পড়তেই পারে না?”

” আমি তো রুমের দরজা লাগিয়ে রাখতাম।”

“হুম, তুমি যে কেয়ালফুল, সবসময় দরজা লাগিয়েই রাখতে।” ব্যঙ্গ করে বলে।

অহমি মাহিদের দিকে একবার ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফটাফট রুমটা গুছিয়ে ফেললো। মাহিদ বিছানায় বসে অহমির উদ্দেশ্যে বলে, “যাও, ঔষধের বক্সটা নিয়ে আসো।”

অহমির চোখ বড় বড় হয়ে যায়। শিট! ও তো ঠিকঠাক ঔষধ খায়নি। এবার!

“কি হলো নিয়ে আসো?”

“আমি খেয়ে নিবো তো।”

“আমাকে বক্সটা এনে দিতে সমস্যা?”

“আরেহ সমস্যা কেনো হবে? আমি খেয়ে নিচ্ছি।”

মাহিদের খটকা লাগে। মেয়েটাকে আগাগোড়া চিনে গেছে ও।

“অহমিকা। শুনবে না আমার কথা?” অত্যন্ত কড়া কণ্ঠে বলে।

মাহিদ সেই থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অহমির দিকে তাকিয়েই আছে। আর অহমি কাচুমাচু করে একবার মাহিদের দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে ফেলছে। অহমির ভয়ই হয় মাহিদের এহেন তাকানো দেখলে। এমন একবার দেখেছিল গাজীপুরের রিসোর্ট’টায়। এরপর সৌভাগ্যবশত দেখা হয়নি। আজ আবার এই রোষানল দৃষ্টির সম্মুখে পড়তে হচ্ছে।

মাহিদ অহমির দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবার ঔষধের পাতাগুলোর দিকে তাকায়। মাহিদ একসাথে বারোদিনের ঔষধ অহমির সাথে করে দিয়ে দিয়েছিল। সেখান থেকে ও মাত্র পাঁচদিনের ঔষধ খেয়েছে। এই ঔষধগুলোর ব্যাপারে সর্তক থাকতে হতো। কিন্তু মেয়েটার এই বিষয়ে অবহেলা ওর সহ্য হচ্ছে না। নেহাৎ-ই মেয়েটা মাহিদের ভীষণ প্রিয়, তাই কড়াভাবে কিছু বলতে পারছে না।

“যা ইচ্ছে তাই করো।”

মাহিদ জেদের বশে হাতে থাকা ঔষধগুলো দূরে সরিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। অহমি কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে রুমে লাইটটা নিভিয়ে দিলো। মাহিদ ওর দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে ছিলো। অহমি পিছন থেকে মাহিদের টি-শার্ট টানতে টানতে বলে, ” ঐ আর করবো না তো!”

মাহিদ অহমির হাত সরিয়ে দিলো। অহমি আরো কয়েকবার এমন হাত ধরে টানলো। নিজের দিকে ফিরানোর প্রয়াশ করলো। কিন্তু পুরুষের শক্তির কাছে কি পারা যায়? এবার অহমি মাহিদকে পিছন থেকে ঝাঁপটে ধরে পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বলে, “এই আতহার! আর করবো না! প্লিজ। এবার থেকে যা যা বলতে তাই তাই করবো।”

মাহিদ শক্ত কণ্ঠে বলে, “ছাড়ো, ঘুমাতে দাও।”

অহমির কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। কম্পিত কণ্ঠে বলে, “প্লিজ আতহার! এভাবের মতো! লাস্ট!এরপর থেকে সব মেনে চলবো।”

“তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো অহমিকা।”

আসলেই অহমি ওকে মিথ্যা বলেছে। প্রতিদিন রাতে মাহিদ ওকে ঔষধ খাওয়ানোর কথা মনে করিয়ে দিতো। প্রথম এক-দুইদিন নিয়মিত খেতোও। এমন হয়েছে যখন একেবারে ডিনার সেরে বিছানায় শুয়ে পড়ছে, তখন মাহিদ ওকে মনে করালেও আলসেমিতে খেতো না। এভাবেই অহমি ফাঁকিবাজিটা করতো।

“ওইটা তো যাতে বকা না শুনতে হয় তাই বলেছি।”

মাহিদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর আসে না। অহমি মিনমিন করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে “আলসি লাগাতেই তো খেতাম না। আর মিস দিবো না। পাক্কা। ”

“তুমি হচ্ছো যে ‘যে কদু, সেই লাউ’ টাইপের মেয়ে।”

“না না! আমি সত্যি বলছি আর কখনোই আপনার কথার অবাধ্য হবো না। ”

“আচ্ছা, ঘুমাও এখন।”

“আপনি আমার দিকে ফিরুন আগে।”

মাহিদ এই মেয়ের সাথে বেশিক্ষণ রেগে থাকতেই পারে না। অহমির দিকে ফিরলেো। অহমি মাহিদকে জড়িয়ে ধরলেও মাহিদ ধরেনি। অহমি মাহিদের হাতটা নিজের পিঠে রেখে বলে, ” সরি বললাম না! আর করবো না।”

“আচ্ছা।”

“আপনার রাগ কমেনি না?”

“নাহ।”

এভাবে মুখের উপর কে বলে? বেশি বেশি সবসময়।

“আজব এমন মেয়েদের মতো রাগ করেন কেনো?”

এটা বলায় মাহিদ যেন আরো চটে গেল। অহমিকে ছেড়ে অন্যদিকে ফিরতে গেলে অহমি আবারও শক্ত করে ঝাঁপটে ধরে। নিচু কণ্ঠে বলে, “কি করতে হবে বলুন রাগ কমাতে?”

“যা বলবো তাই করবে?”

অন্যরকম স্বর। অহমি বুঝে এই টোনে কথা বলার অর্থ। পুরো রুম অন্ধকার থাকলেও অহমি মাহিদের গভীর চাহুনিও বুঝলো। ধীর কণ্ঠে কেবল বললো, “হুম।”

__________________________

সময় যেন এক অদৃশ্য চিত্রকর। মানুষের হাসি, কান্না, ভালোলাগা, বিচ্ছেদ সকলকিছুকে একত্রে ধারণ করে বয়ে চলে। বাস্তবতা, স্বপনের মিশেলে গল্প বুনতে থাকে। অহমির জীবন থেকেও এভাবে বছর দুয়েক কেটে গেছে। অহমির অর্নাস, মাসটার্স শেষ। সংসার জীবনেও পরিপক্বতা লাভ করেছে। প্রানোজ্জ্বল ভাবে দিন কাটাতে পারছে। এখন অহমি সবসময় ও সবকিছু ভুল করে এমন প্রবণতা থেকেও বেরিয়ে আসছে। ফিরোজা বেগমের সাথে থাকতে থাকতে অনেক কিছু শিখেছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা শিখেছে। মাহিদের রুমও এখন সবসময় গুছানো থাকে। মোদ্দা কথা অহমির প্রতি কারো অভিযোগ করার সুযোগ থাকে না।

অহমি গতকালকে ও আজকে ভার্সিটির কাগজপত্র তুলতে হবে এমন মিথ্যে অযুহাত দিয়ে বাইরে একটা কাজে গিয়েছিল। সেই যে আটটায় বের হয়েছিল বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে বারোটা বেজে যায়। মাহিদের বোন মুনতাহা ও ওনার পাঁচ বছরের মেয়ে মেহাও অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এসেছে এই দেড় মাস হবে। ওনার হাসবেন্ড এসেছিলেন, তিনি একমাসের মতো থেকে আবার অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন। এবার মুনতাহা চলে যাওয়ার সময় ফিরোজা বেগমকেও সাথে নিয়ে যাবে। ফিরোজা বেগম টুরিস্ট ভিসায় ঘুরে আসবেন। মেয়ের সাথে লম্বা একটা সময় থাকা হবে।

এক্সট্রা চাবি দিয়ে বাসায় ঢুকেই মুগ্ধকে দেখে অবাক হলো। কিছুদিন পরই ওর মেডিকেল এডমিশন। এখন তো আসার কথা ছিল না! আগে থেকে বলা থাকলে তো জানতে পারতো। মেহা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে। অহমি মুগ্ধর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো, “মুগ্ধ তুমি এখন বাসায়?”

মুগ্ধর চোখ-মুখ বসে গেছে। গ্লাসে পানি ঢেলে খেলো। অহমির আবারও প্রশ্ন করলো, “তোমার কি শরীর খারাপ? কি হয়েছে?”

মুগ্ধ মাথা নিচু করে রুমের দিকে যেতে যেতে বলে, “তুমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে নিও।”

অহমি অনেকটাই অবাক হলো। মুগ্ধ ওকে কখনোই ইগনোর করে না। তাহলে আজ এমন করলো কেনো? এতক্ষণে মেহা অহমির গলা পেয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। অহমি মেহার দিকে তাকাতেই মেহা অহমিকে জড়িয়ে ধরে। বলে, “মামিমণি খিদে পেয়েছে।”

বিদেশী বাচ্চাগুলোর কথা শুনতেও কিউট লাগে। কিভাবে যেন ভুলভাল আধভাঙ্গা উচ্চারণে বাংলা বলে। তবে অবাক হলো মেহার তো এতোক্ষণ না খেয়ে থাকার কথা না।

“মাম্মা খাইয়ে দেয়নি?”

“নাহ। নানুমণি আর মাম্মা শুধু কান্না করে।”

অহমির ভ্রু কুচকে গেলো। মুগ্ধর চোখ মুখের এমন অবস্থা। আম্মি আর মুনতাহা আপুই বা কাঁদে কেনো? মেহাকে এই বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না।

মেহার গালে হাত দিয়ে বলে, “মেহা তাহলে এখন কি খাবে?”

মেহা গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভাবার ভঙ্গিতে কি কি যেনো চিন্তা করে। তারপর এক গাল হেসে বলে, “ইন্সটেন্ট নুডলস।”

অহমি মুচকি হাসি দিয়ে আর রুমে না গিয়ে ড্রয়িংরুমের সাথে লাগোয়া কমন ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুঁয়ে আসে। বাইরের পরিধেয় পোশাক পড়েই মেহাকে নুডলস রান্না করে দেয়। মেহাও টিভি দেখতে দেখতে নুডলস খেতে থাকে।

মুনতাহারা আসার পর থেকে ফিরোজা বেগমের সাথেই থাকেন। তাই অহমি ফিরোজা বেগমের রুমের দিকে গেলো। সেখানকার চিত্রও বড় অদ্ভুত। ফিরোজা বেগম নিরবে জানলার বাইরে তাকিয়ে আছেন। মুনতাহা ফিরোজা বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পর শরীরটা কেঁপে উঠলো। বুঝাই যাচ্ছে কাঁদছে।

“আম্মি আসবো?”

অহমির কণ্ঠস্বর শুনে মুনতাহা উঠে বসে। ফিরোজা বেগম অনুমতি দিতেই অহমি রুমে ঢুকে বলে, “কোনো সমস্যা আম্মি? আপনি, আপু, মুগ্ধ সকলের অবস্থা এমন কেনো? কিছু হয়েছে?”

ফিরোজা বেগম কাঁদেননি, তবে উনি যেন অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন। অহমি এবার মুনতাহার উদ্দেশ্যে বলে, “আপু ভাইয়া ঠিক আছে?”

মুনতাহা জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে, “হুম। তুমি মাহিদের কাছে যাও।”

অহমির খারাপ লাগে। ওকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না কেনো? বিস্ময়ের সুরে বলে, “উনি বাসায়?”

“হুম যাও রুমে আছে।”

অহমি কিছু না বলে রুমে আসে। মাহিদের শরীর খারাপ করলো কিনা! রুমে আসার পর অবাকই হয়েছে। মাহিদ ফ্লোরে খাটের সাথে হেলান দিয়ে হাঁটুর উপর রাখা দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে বসে আছে। অহমি আঁতকে উঠে। সকলের এই অবস্থা কেনো?

অহমি মাহিদের সামনে গিয়ে ওর মুখটা উঁচু করে ধরে। চুলটা এলোমেলো হয়ে আছে।

“এই আতহার! কি হয়েছে? এমন করছেন কেনো সকলে?”

মাহিদ অহমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ওর কাঁধে মুখ গুজে রাখে। অহমির বড্ড ভয় হয়। চাকরিক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়েছে? বলছে না কেনো? ওর তো সবাইকে একটা খবর দেওয়ার আছে।

“এই বলেন না কি হয়েছে? এমন করছেন কেনো?”

মাহিদের গলা কাঁপে। অহমি মাহিদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

” প্লিজ আতহার কিছু বলুন না! আমার সত্যিই খুব ভয় লাগছে।”

” আজকে আমরা চারজন আমাদের জীবনের এমন একজনকে হারিয়েছি যাকে আমরা খুব ভালোবাসতাম। কিন্তু তিনি আমাদের মূল্য দেননি। তাকে মনে মনে প্রচন্ড ঘৃণা করলেও আজ আমি ঘৃণা করতে পারছি না! পারছি না! আমার খুব খারাপ লাগছে অহমিকা। এমন আমার কখনো মনে হয়নি। ওনার জানাজায়ও আমরা যেতে পারিনি। অথচ ওখানে আমার আর মুগ্ধর অধিকার ছিলো সবচেয়ে বেশি।”

অহমি কয়েক মুহুর্তের জন্য নিশ্চুপ হয়ে যায়। ধীর কণ্ঠে বলে, “আপনার বাবা?”

মাহিদ ওকে আরো শক্ত করে ধরে। অহমি কিছুক্ষণ মাহিদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “কিভাবে মারা গেলেন?”

মাহিদ সেসবের উত্তর দিলো না। নিজের মতো প্রলাপ বকতে লাগলো।

“আমি স্বীকার না করলেও তাকে খুব ভালোবাসতাম। আজকে যখন হসপিটালে রক্তমাখা লাশটা দেখলাম বিশ্বাস করো দুনিয়ায় সবচেয়ে অসহায় লাগছিলো নিজেকে। ওনার সেকেন্ড ওয়াইফ, অবৈধ বাচ্চা সবাই ছিলো শুধু আমার, মুগ্ধর সামনে যাওয়ার অধিকার ছিল না।”

অহমি অস্পষ্ট কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “মুগ্ধ? ”

“উনার অবৈধ ছেলে মুগ্ধর সাথেই পড়ে। ওই ছেলের থেকেই মুগ্ধ প্রথমে খবর পায়। তারপর মুগ্ধ আমাকে কল করে জানায়। এবং কাকতালীয়ভাবে আমার হসপিটালের সামনেই এক্সিডেন্টটা হয় এবং কয়েকজন ওনাকে নিয়ে আসে। প্রায় আধা ঘন্টার মতো নাকি বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে পড়ে ছিলো। আমার বায়োলজিকাল ফাদার নাকি বেওয়ারিশ লাশ! হাহ।”

মাহিদ আর কথা বলতে পারে না। সকালে হসপিটালের করিডরে এমন অবস্থা দেখবে কল্পনাও করতে পারেনি। এক্সিডেন্টে স্পটেই মারা গেছেন। অহমি কখনো বাবাকে অনুভব করতে পারেনি। হয়তো দেখলে, তার সান্নিধ্য পেলে কিছুটা অনুভব করতো। তাই বাবাকে মিস করে কিনা ও বলতে পারে না। কিন্তু মাহিদের যে বাবার প্রতি অনেক ভালোবাসা ছিল তা বোঝাই যাচ্ছে।

“মাহমুদ হুসাইন ওয়াজ আ কাওয়ার্ড। হি লেফ্ট আস। বাবা হওয়ার মতো কেনো যোগ্যতাই উনার ছিলো না। উনি জীবিত অবস্থায়ও আমাদেয় শান্তি দেননি, মরে গিয়েও দিচ্ছেন না।”

অহমি মাহিদের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে, “মৃত মানুষকে নিয়ে এইসব বলতে নেই। বাদ দিন।”

অহমি কেবল মাহিদের মাথায় বুলিয়ে দিতে থাকে। মাহিদ অহমিকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে। দু’হাতে মুখ ভালোভাবে মুছে। বলে, “আম্মি আপুর কাছে যাওয়া উচিত। ওনার জন্য কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। ওনার মতো বাবা করো না হউক। কারো অবস্থাও আমাদের মতো যেন না হয়।”

অহমি মাহিদের হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে, “উনার মতো কেউ হবে না। আপনিও খুব শিঘ্রই একজন চমৎকার বাবা হবেন। আমাদের সন্তানের অবস্থা আপনাদের মতো হবে না।”

“হুম,,, কি বললে?”

অহমি মাথা উঁচু নিচু করে হ্যাঁ বোঝালো। মাহিদ নিজের হাতটা অহমির পেটে ছুঁইয়ে বলে, “তুমি সিউর?”

“হুম টেস্ট করিয়ে এসেছি। সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, তাই বলিনি।”

মাহিদ অহমির দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত স্বরে বলে, “আমি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছি না।”

অহমি মাহিদকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বলে, “অনুভূতি প্রকাশ করতে হবে না। এমনভাবে ভালোবাসলেই হবে।”

“আমি তোমায় ভালোবাসি না। বাবাও নাকি আম্মিকে ভালোবাসতো। যে ভালোবাসায় ছাড়ার ক্ষমতা থাকে আমি তা করি না।

আমি তোমায় ভালোবাসি না। তবে অনুভব করি। তুমি আমার ভীষণ যত্নের একজন। তুমি আমার ভীষণ প্রিয় একজন।”

একটু থেমে বলে, “তুমি, তোমরা আমার ভীষণ প্রিয়।”

চলমান……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে