Dark Mystery পর্ব-৩০+৩১

0
46

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_29
#Sabrina_Summa

নিচে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো তানিশা ডাবল সোফায় বসে আছে।
তাই সুপ্তি ও মাহির দুইজনে দুইটা সিঙ্গেল সোফায় বসলো।

তানিশা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে বললো, ” এতক্ষণে আসার সময় হলো দুজনের! তোমাদের জন্য আমি ঘুমাতে পারছি না। ”

তানিশার কথা শেষ হতে না হতেই কলিং বেল বাজলো।

সুপ্তি উঠে যেতে নিলে তানিশা বলে উঠলো, ” আমি যাচ্ছি। ”

বলেই দরজা খুলে দিলো। দরজার বাহিরে থাকা মানুষগুলোকে চিনতে পারলো না তানিশা। তাই বলে বসলো, ” আপনি কে? ”

একজন বললো, ” উনি ঘাটাইলের ইউনো। আর আমি তার পিএ। মাহির স্যার এ বাসাতেই আছেন তাই না? ”

তানিশা দরজা থেকে সরে ভিতরে আসতে বললো।

সামনের মানুষটিকে দেখে মাহির দাঁড়িয়ে বললো, ” আরে আরে, ইউনো যে! ”

ইউনো এসে মাহিরের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।

হ্যান্ডশেক করতে দেখে সুপ্তির সম্ভবত সারা শরীর জ্বলে গেল। যদিও সে জানে এই মহিলা ইউনো বিবাহিত এবং ইউনোর বয়স মাহিরের আন্টির বয়সী। তারপরও কেন যেন তার খুব জেলাসি ফিল হচ্ছে।
তারমধ্যে আবার এই ইউনোর জন্য সুপ্তির নিজের সিট ছাড়তে হয়েছে। তাতে তার রাগ আউট ওফ কন্ট্রোলে যাচ্ছে ৷

তবুও কিছুক্ষণ মাহিরের সোফার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কথোপকথন শুনলো।
মাহিরের হাসি মুখে কথা বলা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো ৷
তাই সুপ্তি রেগে রুমে গিয়ে উচ্চ শব্দে দরজা বন্ধ করে দিলো।

” বাব্বাহ কি রাগ! এটাই তো দেখতে চাচ্ছিলাম এতদিন। ” ( মাহির মনে মনে )

এত শব্দে সুপ্তির মা ঘুম থেকে উঠে বাহিরে এসে আরেক দফায় শক খেলেন।
তারপর নাস্তা দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ৷
তার বাসায় আজ এত ভিআইপি গেস্ট দেখে কেন যেন তার মন বড্ড কু ডাকছে । তারমাঝে কিছুক্ষণ আগের সেই ঘটনা তো আছেই।
আজকের রাতটা যেন শেষ হতেই চাচ্ছে না!

সুপ্তি রুমে গিয়ে পুরো দমে চেষ্টা করছে কিছু খোঁজার।
প্রথমেই সে সুপ্তি থেকে মিস সিক্রেট হওয়ার ফুটেজ ডিলিট করলো। তারপর আশেপাশের যত সিসি টিভি আছে সব হ্যাক করলো।
কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটির পর মৃদু স্বরে চিৎকার করে বললো, ” ইয়েস। ”

এরপর নাম্বার ৩ কে কল করে বললো, ” তুমি ঘাটাইল আছো না? ”

অপর পাশ থেকে হ্যাঁ সূচক বার্তা আসতেই মিস সিক্রেট কিছু বললো।

নাম্বার ৩ : ওকে, ম্যাম। আমি তাড়াতাড়ি করছি ৷

মিস সিক্রেট ওকে বলেই কেটে দিলো।

সুপ্তি ড্রয়িং রুম পার হওয়ার সময় মাহির চিন্তিত নয়নে ঘড়ির দিকে তাকালো। সময় ১০ বেজে ৩৫ মিনিট।
সুপ্তি দ্রুত পার্কিং এরিয়ায় গিয়ে কালো রংয়ের গাড়ি নিয়ে নিজের হুডি মাস্ক পড়ে বেরিয়ে গেল ৷

সুপ্তি অরপে মিস সিক্রেট একা একটা রুমে বসে আছে। কিছুক্ষণের মাঝে নাম্বার ৩ একটা বস্তা নিয়ে আসলো।

মিস সিক্রেট : চেয়ারে বসাও।

নাম্বার ৩ ও তাই করলো। বস্তা সরাতেই দেখা গেল একটা মানুষ। বয়স ৫০ এর কাছাকাছি।

মিস সিক্রেট : মুখ খুলে দাও।

নাম্বার ৩ মুখ খুলে দিতেই লোকটা বলা শুরু করলো, ” আমি আপনাদের কি ক্ষতি করেছি? কেন এমন করছেন? ”

মিস সিক্রেট : বাসার নকশা দিলে কেন?

লোকটা কিছুটা আঁতকে উঠলো। তবুও না জানার ভান করে বললো, ” আমি দেই নি। ”

মিস সিক্রেট : একদম মিথ্যে বলবে না। এখন সুপ্তির বাবা-মার কি হবে! তুমি নকশা না দিলে এত সহজে কেউ ঢুকতে পারতো না। কারণ নকশাই করা ওভাবে ৷ নকশা ছাড়া বাসায় কেউ ঢুকলে বার বার ফাঁদে পড়বে।

লোকটা আকুতি করে বললো, ” ম্যাম, প্লিজ ক্ষমা করে দিন। দারোয়ানের চাকরি করে আর কতই পাই। তাই টাকার লোভে পড়ে করে ফেলেছি। ”

মিস সিক্রেট : ৫০ হাজার টাকাও কম মনে হয় ! যদি মনেই হয় তাহলে সুপ্তিকে বলতি।

” প্লিজ ম্যাম, মাফ করে দিন। আমার পরিবার আছে। ”

মিস সিক্রেট : তোর পরিবারই সব। সুপ্তির পরিবার কিছুই না!
নাম্বার ৩ নিরব দর্শক । তবে তার বার বার প্রশ্ন জাগছে তার ম্যাম বার বার কেন সুপ্তিকে টানছে?

লোকটি : প্লিজ, ম্যাম।

মিস সিক্রেট : তোর পরিবারকে আমি দেখবো।
বলেই পায়ের কাছ থেকে গান বের করলো।

লোকটার চোখ ভয়ে বড় বড় হয়ে গেল।

মিস সিক্রেট : আর হ্যাঁ, মরার আগে আমায় দেখবে না তা কি হয়!
বলেই এগিয়ে এসে মাস্ক খুললো ৷

হালকা আলোয় লোকটি মিস সিক্রেটের মুখ দেখে যখনই বলা শুরু করলো ‘স’ তখনই মিস সিক্রেট শুট করলো।

মাস্কটা পড়ে নাম্বার ৩ এর দিকে তাকাতেই দেখলো নাম্বার ৩ ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। হয়তো মিস সিক্রেটকে প্রথম খুন করতে দেখায়।

মিস সিক্রেট : প্রফেশনাল কিলার হয়ে অন্যকে খুন করতে দেখে এত ভয় পাওয়াটা তোমায় সাজে না ।

কয়েক সেকেন্ড সময় দিলো নাম্বার ৩ কে স্বাভাবিক হতে। তারপর বললো, ” যাও এটাকে বস্তায় পুরে উপজেলা গেটের সামনে ফেলে এসো। ”

নাম্বার ৩ : কিন্তু ম্যাম…

সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়ে মিস সিক্রেট বললো, ” আমি কোনো এক্সকিওস শুনতে চাই না। ”

নাম্বার ৩ আর কিছু না বলে বস্তায় পুরে যাওয়া শুরু করলো।

নাম্বার ৩ চলে যেতেই মিস সিক্রেট বললো, ” অনেকদিন পর খুন করলাম। ”

১০ মিনিট পর সেও বের হলো। উপজেলার সামনে দিয়ে আসার সময় একটা বাঁকা হাসি দিলো।
কিছুক্ষণ ড্রাইভ করে মিস সিক্রেট সুপ্তির বাসায় প্রবেশ করলো।

এবার কলিং বেল বাজাতে হলো না। দরজা খোলায় ছিল।
ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই তার চোখ গেল ঘড়ির দিকে। ১০ টা ৫৫ বাজে।

” বাহ, খুব তাড়াতাড়ি কাজ করা শিখে গেছি তো। ” ( নিজের মনে মনে নিজেকেই বাহবা দিলো।)

মিস সিক্রেটকে দেখেই ইউনো এবং মাহির দাঁড়িয়ে পড়লো। ইউনো সালাম দিলে তার উত্তর দিতে দিতে মিস সিক্রেট এগিয়ে আসলো।
ইউনো নিজের সিট ছেড়ে দিলো মিস সিক্রেটের বসার জন্য।

এটা দেখে মিস সিক্রেট তৃপ্তির হাসি হেসে মনে মনে বললো, ” এখন বুঝবে, অন্য কেউ নিজের জায়গা দখল করলে কেমন টা লাগে! ”

কিছুক্ষণ স্বাভাবিকভাবে কুশল বিনিময় করলো। তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো, ” আপনি তো এখানে বসে আছেন ৷ কিন্তু আমি তো দেখে আসলাম উপজেলার সামনে অনেক ভিড়। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে! ”

ইউনো আতঙ্কিত স্বরে বললো, ” এত রাতে কোনো ঝামেলা! ”

মিস সিক্রেট : নিজে গিয়েই দেখে নিন।

ইউনো বিদায় নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল।

মাহির : থ্যাংকস, এতক্ষণে বাঁচলাম।

মিস সিক্রেট কিছু বললো না।

মাহির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো, ” ১১ টা ১০ বাজে। সেই কখন বেড়িযেছে এখনও আসলো না। ”

#চলবে

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_30
#Sabrina_Summa

মাহির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো,
” ১১ টা ১০ বাজে। সেই কখন বেড়িয়েছে এখনও আসলো না। ”

মিস সিক্রেট চলে যেতে যেতে বললো,
” সুপ্তি অনেক আগেই চলে এসেছে। ”

মাহির অবাক হয়ে বললো,
” কোথায়? মানে কখন? আমি তো দেখলাম না! ”

মিস সিক্রেট পিছনে ঘুরে বললো,
” মন অন্য দিকে থাকলে অনেক কিছুই দেখা যায় না। যাইহোক, ডিস্টার্ব করো না। ঘুমিয়ে পড়েছে। ”

তাই মাহির, তানিশা সবাই রুমে চলে গেল। আর সুপ্তির মা তো কিছুক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।

এ সুযোগে মিস সিক্রেট চুপি চুপি সুপ্তির রুমে প্রবেশ করলো।।

সকালে.,.

সকলে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে এখন বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে । সবাই বসে আছে তবে তানিশা এবং সুপ্তি ব্যতিত ।

মাহির হঠাৎ বলে উঠলো, ” আঙ্কেল, আন্টি আমি কিছু বলতে চাই । প্লিজ মাইন্ড করবেন না। ”

সকলের উৎসুক দৃষ্টি মাহিরের দিকে। মাহির বলা শুরু করলো, ” আমি সুপ্তিকে পছন্দ করি। শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে তা নয়। বরং তার থেকে অনেক বেশি! ”

কয়েক সেকেন্ড থেমে আবার বললো, ” মূলত আমি সুপ্তিকে ভালোবাসি। আপনাদের সম্মতি থাকলে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চাই । ”

এতক্ষণ কথাগুলো নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেও এখন সুপ্তির বাবা মার রিয়েকশন দেখার জন্য উপর দিকে তাকালো। দেখলো সবাই তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

সুপ্তির হার্ট বিট বেড়ে গেছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তার খুব অস্বস্তি লাগছে। তারপরও সে যেতে পারছে না কারণ তার বাবা মা যদি আবার ভাবে সে লজ্জা পেয়েছে! তাহলে তার মান ইজ্জত চলে যাবে না?

” তোর মনে তাহলে এই ছিল? তুই ঘাটাইল এর জন্য আসছোস? ” ( তানিশা মনে মনে রাগে ফুঁসছে )

সকলকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হঠাৎই মাহির বলে উঠলো, ” ইনফ্যাক্ট, সুপ্তিও আমাকে পছন্দ করে।
যদি পছন্দ নাই করতো তাহলে আমার দেওয়া রিং কি ওর হাতে থাকতো! ”

সুপ্তি অবাক হয়ে একবার মাহিরের দিকে তাকালো আরেকবার আংটি টার দিকে তাকালো।
সুপ্তির বাবা মার সুপ্তির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সেদিকে চোখ পড়তেই আংটি টা খুলে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো, ” না, না। বিশ্বাস করো আম্মু, ওনি এটা বন্ধুত্বের খাতিরে দিয়েছিলেন। ”

সুপ্তি ভালোই বুঝতে পারছে তার মা তাকে বিশ্বাস করছে না। তাই মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো, ” কেন আপনি মিথ্যে বলছেন? ”
” এর পরিমাণ খুব খারাপ হতে পারে যা আপনার বোধগম্য হচ্ছে না! ” এই কথাটুকু বলতে তার খুব ইচ্ছে করলো কিন্তু বলতে না পারায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

সুপ্তির মা আবারো দিকে তাকালো। যদিও তিনি স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছেন কিন্তু মাহিরের সুপ্তির মার তাকানো মনে ইচ্ছে তার আত্মা এখনই বের হয়ে যাবে।

সুপ্তির মা : এ বিষয়ে আর কথা তুলো না। তোমার বাবা মাকে আসতে বলো তাদের সাথেই কথা হবে। বলে তিনিও উঠে গেলেন।

মাহিরের এতক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। সুপ্তির বাবার সাথে তার যেমন ভালো সখ্যতা হয়েছে সুপ্তির মার সাথে তেমনটা হয় নি। তাই তো তাকে দেখে মাহিরের ভয় লাগে।

মাহির : আঙ্কেল, আমি কিছুক্ষণ পর ঢাকায় ব্যাক করবো। সুপ্তিও তো আজই ঢাকা যাবে তাই না?

সুপ্তির বাবা : হ্যাঁ। কালকে থেকে নাকি আবার বার্সিটিতে জয়েন দিবে।

মাহির : তাহলে একসাথেই ব্যাক করি।

সুপ্তির বাবা : ওকে। ( ভাবলেশহীন ভাবে )

বলে চলে গেল। সুপ্তির বাবা চলে যেতেই তানিশা বললো, ” ওই পাগল ওই । তোর কি বিবেগ বুদ্ধি সব লোভ পাইছে? ”

মাহির : কেন? আমি আবার কি করলাম?

তানিশা : নিজের বিয়ের কথা কেউ নিজে বলে !

মাহির দাঁত কেলিয়ে বললো, ” আমি না বললে কে বলবে। আম্মু আসতে রাজি হতো কিন্তু বাবা জীবনেও না। ”

তানিশা : তাহলে এখন বুঝ। কীভাবে আনবি স্যারকে!

মাহির সিরিয়াস মুখ করার ভান করে নিজের রুম অর্থাৎ গেস্ট রুমের দিকে চলে গেলো।।

চলবে.,.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে