#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩৪
নয়নার আজকে শেষ এক্সাম ছিলো। হল থেকে বের হয়েছে ঘন্টা খানেক আগে, সবার সাথে শেষবারের মত দেখা করতে গিয়ে কান্না করে দিয়েছে নয়না।সবার চোখেই অশ্রু স্কুল লাইফের দশটা বছর একসাথে কাটানোর পর এই হল থেকে বের হয়ে এরপর কার গন্তব্য কোথায় হবে কারোর জানা নেই। জীবনের স্রোতে চেনা মুখগুলোর সাথে আর কখনো কোন বাঁকে দেখা হবে কিনা তাও জানা নেই! স্কুল লাইফ হয়তো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়৷ এরপরের জীবন কি এতো মধুর হয়!
নয়না তুষির হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।
“তুষি কাঁদছে।
“এই তুষি তুই কাঁদছিস কেনো?তুই কিন্তু হারিয়ে যেতে পারবি না।শোন আমরা একি কলেজে ভর্তি হবো৷ তোর বাসা তো আমার বাসা থেকে মাত্র আধঘন্টার দূরত্ব। তুই কাঁদছিস কেন?”
“তুষি নয়নাকে জড়িয়ে ধরলো। তুষির মনে কিছু একটা চলছে। কিছু কথা বলতে যেয়েও তুষি তা শব্দ রুপে মুখ থেকে বের করতে ব্যর্থ হলো৷”
“তুষির বাচ্চা ভুষি বেশি ঢং করলে তোকে কিন্তু ময়না ফুপির ছেলের বৌ করে ফেলবো৷”
“তুষি মেকি হেসে বলে,নয়না একটা কথা বলবো?”
“একটা? এক হাজারটা বল ভুষি।”
“বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন, তুই হেলায় খেলায় সেটা নষ্ট করিস না। চেষ্টা কর ভাইয়ার সাথে সবকিছু স্বাভাবিক করে নিতে৷ তোর আমাদের ক্লাসের নিতুর কথা মনে আছে?”
“কোন নিতু?”
“ওই যে ওর বাবা ভ্যান চালাতো? অসচ্ছলতার কারনে ওর বাবা ওকে ক্লাস এইটে থাকতে বিয়ে দিয়ে দেয়৷ ওই নিতুর দুইটা ছেলে,মেয়ে। তুই তো ওর চেয়ে বড়। দেখ নয়ন জীবন এতো সহজ না৷ মেয়েদের জীবন তো আরো বেশি কঠিন।”
” তুই এতো গভীর কথা কবে শিখলি! আগে তো আমাকে বলতি উপন্যাস পড়ে পড়ে আমি দাদিআম্মাদের মত জ্ঞান দেই। হঠাৎ তোর কি হলো তুষি?”
“নয়না তুই জানিস বয়স আমাদের কোনদিন বড় করতে পারে না। আমরা তো বড় হই বাস্তব জীবনে হোঁচট খেলে। তখন দেখা যায় ষোল বছর বয়সের ভারও অনেক বেশি মনে হয়।”
“চুপ কর আর আউল ফাউল কথা শুনবো না৷ চোখ বন্ধ কর।”
“তুষি চোখ বন্ধ করতেই নয়না তুষির হাতে একটা ব্রেসলেট পরিয়ে দিলো৷”
” তুষি নয়নাকে জড়িয়ে ধরে বলে,তোকে খুব মিস করবো রে নয়ন৷ নয়ন মনে রাখিস চিরজীবন কেউ পাশে থাকে না। কেউ চলে গেলে ভেঙে পরবি না৷ জীবনে মানুষ আসবে যাবে। আপন মানুষ ও হারাতে হয় আমাদের। ভালো থাকিস নয়ন।”
“নয়নার মনটা কেমন বিষিয়ে উঠলো৷ তুষির কথাগুলো এতো ভারি ছিলো যে নয়নার হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। নয়না তুষি বলে ডাকলো৷
” তুষি পিছু না ফিরে দ্রুত চলে গেলো। নয়না গাড়িতে উঠে বসলো তার মন খারাপ ভিষণ মন খারাপ। তুষিরও কি মন খারাপ ছিলো? আচ্ছা আজ তুষার ভাইয়া তুষির সাথে দেখা করতে কেনো আসলো না! তুষির কি তুষার ভাইয়ার সাথে কোন ঝামেলা হয়েছে! কিন্তু তুষি তো কিছু হলেই আমাকে সবটা বলে৷ আজ এমন অন্য রকম তুষি হলো কি করে? বাসায় এসে ফাইল রেখে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চিৎকার বলে, আম্মু পানি। মোবাইলটা টেবিলে রেখে গিয়েছিলো অলসতা কাটিয়ে উঠে মোবাইল আনলো নিজের রুম থেকে ।
ডাটা অন করে তুষিকে কল করলো৷ ওপাশ থেকে বলছে নাম্বার সুইচড অফ। এরমধ্যেই জিয়ানের কল আসলো, নয়নার এমনিতেই মুড অফ তারওপর জিয়ানের কল দেখে আরো রেগে বোম হয়ে গেলো৷ রিসিভ করে বলে,মেয়েদের লাইনে দেখলেই বুঝি কল করতে ইচ্ছে করে? সারাক্ষণ কি এসবই করেন?
“জিয়ান হেসে বলে,তা মেজাজ এতো হট কেন? এক্সাম ভালো হয়েছে তো রাঙাবৌ?”
“ডোন্ট কল মি বৌ। অনলি সুনয়না৷”
“আরেহহহ বাহহহহ বৌ দেখি ইংরেজিও পারে! আসো বৌ আইসা পরো আমার মনের ঠিকানায়। ধুর কানাডায়।”
“দেখুন আমি একদম মজা করার মুডে নেই। ফোনটা রাখুন আর কখনো কল করবেন না। কলেজে ভর্তি হয়ে কোন নামকরা ভার্সিটির সিনিয়র ছেলেকে বিয়ে করে নেবো।”
“আরেহহহহ বাহহহ শখ তো কম না বাবুটার। তা ম্যাডাম আপনার কয়বার বিয়ে করতে মনচায়?”
“একদম বাজে বকবেন না। আপনার সাথে আমি কোন সম্পর্ক রাখবো না আমি আরেকটা বিয়ে করবো।”
“ছিহহহ ছিহহহ ছিরে ননী ছিহহহ ছিহ রে ছিহহ।এসব বলাও পাপ সুইটু। তুমি জিয়ান রেজা চৌধুরী ওয়াইফ। যতদিন জীবিত আছো তুমি মিসেস চৌধুরী হয়েই বাঁচবা বেব।”
” চুপ একদম চুপ আমার জীবন আমি ডিসাইড করবো আমি কিভাবে বাঁচবো। আমি আরেকটা বিয়ে করবো মানে করবোই।”
“বুঝছি ময়নার মা ভদ্র ভাষায় কইলে তুমি শুনবা না৷”
“ভদ্র অভদ্র আপনার কোন ভাষাই আমি শুনবো না, বিয়ে আমি আরেকটা করবোই।”
“এহনো নাক টিপলে শ্লেষ্মা পড়বে আইছে আবার বিয়ে করবো! ছেমড়ির শখ তো কম না!”
“জিয়ানের কথা শুনে নয়না দাঁতে দাঁত চেপে বলে,একদম উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না।আমি ষোল বছরের হট গার্ল!”
“ছেমড়ি কয় কি! মাথায় ঘীলু আছে নাকি খালি খোলস?এহনো দুধের দাঁত পরে নাই আইছে হটগার্ল!”
“ছেমড়ি আবার কি শব্দ!”
” আমগো দেশের জাতীয় শব্দ বেবি। আমাগো দেশের বুলি তোমগো দেশের গালি।”
“নয়না রাগে ফোন কেটে দিলো। চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছে।
জাহানারা বেগম এসে বলে,”কে মরছে? গরুর মত হাম্মা হাম্মা করছিস কেন?”
“আম্মু আমি বিয়ে করবো আম্মু। আমাকে ভালো একটা সুদর্শন ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও। তুমি না দিলে আমি নিজেই খুঁজে নিবো।”
“এক চড় মেরে চাপার দাঁত সব ফেলে দেবো৷ যাহহ রুমে গিয়ে ব্যাগ গোছা,সন্ধ্যায় বের হবো চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। একটা কথাও মুখ থেকে বের করবি সাথে সাথে মাইর পরবে৷”
“নয়না ধুপধাপ পা ফেলে রুমে চলে আসলো, কত্তবড় সাহস আমারে ছেমড়ি কয়, শ্বশুরের ছেলের বাচ্চা তোরে খালি সামনে পাই তোর কিমা বানিয়ে স্বামী কাবাব যদি না বানিয়েছি তাহলে আমার নাম। বলেই চুপ হয়ে গেলো। ধুর ভাল্লাগে না মায়েরা সব সময় খালি বাহাদুরি দেখায়!”
” জিয়ান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। কতবছর পর কারো সাথে এইভাবে কথা বলল!বৌটা নিজে আধপাগল আমাকে পুরো পাগল করে ছাড়বে। যত রাগ করার করে নাও রাঙা বৌ খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে তোমার সাথে। সব অভিমান ভেঙে দেবো ভালোবাসা দিয়ে৷ পিচ্চি একটা সুইট কিউট বৌ আমার। আজ রাতের ফ্লাইটে ফিরছি আমি সুইটহার্ট। সি ইউ সুন।
🌿
নীলাঞ্জনার পুরো শরীর জুড়ে কালসিটে দাগ। চুলগুলো কেটে ফেলেছে নিজেই৷
“লাবিবের বাাবা এসে বসলো,নীলাঞ্জনার পাশে, মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,জানোই তো ছেলেটা আমার বদমেজাজি ওর কথা শুনে চলবে তো৷
” নীলাঞ্জনা কিছু বলতে যেয়েও চুপ করে রইলো৷ সে এখানে ফিরে এসেছিলো তার অনাগত সন্তানের জন্য। সে চায়নি সন্তানকে বাবা হারা করতে৷
“লাবিব বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে। ইচ্ছে করছে নীলাঞ্জনাকে শেষ করে ফেলতে। এতো নাটক সাজিয়ে ফাঁদে ফেললো। কিন্তু কোন টোপ গিলছে না! সোনার ডিম পারা হাঁস যদি ডিম’ই না দেয় তাহলে তাকে রেখে কি করবো!
🌿
জাহিন তার ফেভারিট খাবার হাঁসের মাংশ আর ভুনা খিচুড়ি খাচ্ছে মনযোগ দিয়ে।
মিতা বেগম জাহিনের পাশে বসে বলে,”তুই কি আমাদের একটা কথাও শুনবি না?”
“আম্মু পছন্দের খাবার খাচ্ছি খেতে দাও তো মনমত।”
“আজ মেহনুর দেশে ফিরবে। তুই ওকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করবি।”
“জাহিন মনে মনে বলে,এক আপদ বিদায় করতে পারিনি এখনো আরেক আপদ এসে হাজির হচ্ছে!”
“কিরে কিছু বল?”
“মেহনুর আমাদের বাসায় কেন আসবে আম্মু!ওর দাদা বাড়িতে যেতে বলো।”
” জাহিন!”
“ওকে পিক করবো। কিন্তু বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না কিন্তু।”
” তুই বিয়ে করবি কি? তোর মত বাউণ্ডুলে ছেলেকে মেহনুরের মত বিয়ে করতে রাজি হবে নাকি? তোর বাবা চায় কারন যেমন দেখতে তেমন তার শিক্ষা।বিজনেস নিয়ে পড়ালেখা করেছে ওদের ব্যবসা এখন ও একা চালায়। তোর মত গুন্ডাগীরি করে এমন ছেলে ও মেয়ে বিয়ে করবে কোন দুঃখে!”
“জাহিন ধীরে ধীরে খাচ্ছে। কারন মিতা বেগম সরলেই প্লেট ফুল করে মান্নাতের জন্য খাবার নিয়ে যাবে৷
” মান্নাত কিছুতেই বলতে চাইছে না তার কালো অতীত। কিন্তু অতীত তো তার পিছু ছাড়ছে না! সেই জঘন্য অতীত কিভাবে রিভিল করবো আমি!
#চলবে