কলঙ্কের দাগ পর্ব-০৫

0
7

গল্প #কলঙ্কের_দাগ [কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ]
পর্ব=৫
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়

অফিসার বললো টয়লেট হাউজে কোনো লা”শ পাওয়া যায়নি।অথচ মহুয়া নিজ হাতে তিনটা লা”শ সেখানে ফেলেছে।এটা কিভাবে সম্ভব?

মহুয়ার মুখ হা করে গেলো।এটা কি করে সম্ভব,সে নিজে হাত পা বেঁধে তিনজনকেই খাদে ফেলেছে।ওরা কি সেখান থেকে পালিয়েছে? সেটা কিভাবে সম্ভব?মহুয়া ঢাকা দেওয়ার পরও ১০ মিনিট সেখানে বসে ছিলো।লা”শ পাওয়া যায়নি এটা কিভাবে হতে পারে!

মহুয়া সে রাতের দৃশ্য মনে করার চেষ্টা করলো।যখন য় মহুয়া আকুতির স্বরে ওদের পা জড়িয়ে ধরে বলেছিলো ” কাউরে বইলেন না,আপনের পায়ে ধরি ”

মজিত ” পা ছাড় মা*,ঘরের বউ হইয়া ভাতাররে মা”ইরা ফালাইছোস “।কথাটা বলে মহুয়াকে লাথি মে”রে সরিয়ে দিলো।

মহুয়া মাটিতেই পরে রইলো।মজিত ফিসফিস করে নওজানের সাথে কি যেন বললো।একটুপর নওজান বললো

” যাহ,কাউরে কমু না।কিন্তু শর্ত ”

মহুয়া চোখের জল মুছে ” কি শর্ত? ”

” তোর মাইয়ার সাথে কয়দিন যা করছি,অহন থাইক্কা প্রতিদিন করুম।হেতে ট্যাহা দিমু না ”

মজিত বললো ” মেয়ের থাইকা তুই বেশী আগুন।মা মাইয়া একসাথে অল্প কিছু দিমুনি যা।যদি রাজি থাকোস ক ”

মহুয়া চোখের জল মুছলো।রোবটের মতো দাঁড়িয়ে বললো ” আমি রাজি ”

মহুয়ায় কথায় দুজনের চোখে মুখে পৈশাচিক আনন্দ।নওজান বললো ” তয় দেরি ক্যান,আইজ থাইকাই শুরু।মা”ল খাইয়া হিট আইছে, চল ঘরে চল ”

মহুয়া ঘরে গেলো।মজিত নওজান বোতলের শেষটুকু এক ঢোকে খেয়ে বিশ্রী শব্দে ঠেকুর তুললো।নেশা ধরেছে,শরীর হেলেদুলে যাচ্ছে।দরজার কপাট ধরে মজিত দাঁড়াতেই গ”লা বরাবর ছু”রির কো!প,সঙ্গে সঙ্গে গোঙ্গানির মতো শব্দ করতে লাগলো মজিত।এই অবস্থা দেখে নওজান পালাবে তারআগেই মহুয়া দৌড়ে তার পিঠে ছু”রি বসিয়ে দিলো।পিঠে আ”ঘাতে যখন শরীর ভাজ করলো তখন বু!ক বরাবর ছু”রিটা বসিয়ে দিলো মহুয়া।

মুহুর্তেই রক্তে ভেসে গেলো আঙ্গিনা।মজিত শেষবারের মতো হাত পা ছটফটিয়ে চির শান্তিতে ঘুমিয়ে পরলো।সমীরকে যেভাবে টেনে খাদে নিয়ে গিয়েছিলো তাদের দুজনকেও সেভাবে মাটি কাঁদা করে বস্তার উপর রেখে টেনে নিয়ে গেলো।ফেললো খাদে!এরলম জখ”ম হওয়ার পরও সেখান থেকে বেঁচে পালানো অসম্ভব।তার উপর ঢাকনা ছিলো কংক্রিটের।

অফিসারের ডাকে মহুয়ার হুশ ফিরলো৷ ” ম্যাডাম,কি ভাবছেন? ”

মহুয়া শুকনো ঠোক দিয়ে ” ন…না ক..কিছুনা ”

” আপনি ধরা পরে গেলেন ”

মহুয়া চুপ করে রইলো।অফিসার বললো ” জানতে চাননা কিভাবে বুঝলাম ওরা খাদে? ”

” কিভাবে ”

” আমি জানিনা।আপনিই জানিয়ে দিলেন।সন্দেহ করেছিলাম ওরা দুজন এখান থেকেই নিখোঁজ হয়েছে।আর আশেপাশের বাড়িতে খবর নিয়ে জানলাম সমীরের সাথে আপনার সম্পর্কটা কয়েকমাস থেকে ভালো যাচ্ছে না।রোজ গভীর রাতে ওরা আপনার কান্নার শব্দ পায়।দুজন নিখোঁজ,তারউপর আপনি মিথ্যা বলেছেন,সন্দেহ প্রবল হলো।তারপর ভাবলাম যদি খু”ন আপনিই করেন তাহলে বেশিদূর লা”শ টেনে নিয়ে যাওয়ার শ”ক্তি আপনার নেই।কাছেই কোথাও লুকানো আছে।টয়লেট হাউজের খাদটায় লুকাতে পারেন,এমনটা অনুমান করেছিলাম।আপনাকে বুঝলাম অনুমান সঠিক ”

কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।মহুয়া চোখে আঁচল টেনে কাঁদছে।অফিসার দুজন সহকারীকে বললো ” কর্পোরেশন থেকে লোক আনুন ”

” গণ্ডগ্রামে কর্পোরেশন কই পাবেন স্যার।মেথর নিয়া আসি ”

” আনো ”

মহুয়া আঙ্গিনায় বসে পরলো।অফিসার ফোন বের করে কি যেন বললো।অতঃপর মহুয়াকে ” আপনার নিকটস্থ আত্নীয় আছে?আপনাকে থানায় যেতে হবে। আত্মীয়র ঠিকানা দিন তাদের কাছে রেখে আসার ব্যবস্থা করবো ”

মহুয়া ভাইকে কল দিলো।২য় বার রিং হয়ে কল ধরে ” ইন্টারেস্টিং একটা বই পড়ছিলাম।এতদিন পর কল দিলি।টুকু কেমন আছে? ”

মহুয়া অশ্রুসিক্ত কন্ঠে “দাদা টুকুকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি।একটু দেখে রেখো ”

কথাটা বলে কল কা”টলো।বাইরে পুলিশের গাড়ি।মহুয়া গাড়িতে বসলো।গ্রামের লোকজনে ভর্তি চারপাশ।সোরগোল পরে গেলো মহুয়া খু”ন করেছে।গ্রামের লোকেরা এমন উৎসাহ নিয়ে দেখছে যেন খু”ন করা একটা উৎসব।সবাই মাতামাতি সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে।

থানায় স্বীকারোক্তি নেওয়া হচ্ছে।মহুয়ার সামনে দুজন আইনের লোক।একজন আরেকজনকে বলে উঠলো

” হাউ কুড সি ডু ড্যাট!ওনাকে দেখে কে বলবে এতো ভয়ঙ্কর কাজটা করতে পারে!লুক এট হার আই,হরিণী চোখ ”

অন্যজন বললো ” হরিণী না।বাঘিনী চোখ।তিনটা মানুষ টপকে দিছে ”

মহুয়া নিলির্প্ত স্বরে ” ওরা মানুষ ছিলো না ”

এই পর্যায়ে ডিউটিরত অফিসার এলো।হাতে চায়ের কাপ।সাথে আরেকজন চা এনে টেবিলে রাখলো।

অফিসার ” চা খান ”

মহুয়া চায়ে চুমুক দিলো।তার সহজ ভঙ্গি।অফিসার ” প্রথম থেকে শুরু করুন।এই পর্যন্ত আমরা তদন্ত করেই এসছি।কাজেই আমাদের অবজারভেশন পাওয়ার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন নিশ্চয়ই।আপনি সত্য মিথ্যা যাই বলবেন আমরা তদন্ত করে সত্যিটা বের করবো।মিথ্যা বলে হয়রানি করাবেন না।সত্য বলবেন।আমি জানি ওরা খারাপ মানুষ,যতসম্ভব শাস্তি কমানোর চেষ্টা করবো ”

মহুয়া চা শেষ করলো।বলতে শুরু করলো ” ৬টা ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিলো গ্লাসে ”

” উহু,আরো প্রথম থেকে।মাস খানেক থেকে আপনাদের মধ্যে কিসের ঝামেলা চলছিলো ”

” মেয়েকে নিয়ে ”

” পাড়ার মাতাল লোকজনদের দিয়ে মেয়ের শরীর ব্যবসা? ”

মহুয়া চোখের জল মুছলো।তার শরীর কাঁপছে।অফিসার চোখ মুখ শক্ত করে ” কে”সটার জন্য আমার সব জানা প্রয়োজন।মা হয়ে বিষয়টা বলা খুবই অপ্রীতিকর বুঝতে পারছি।তবুও,, ওরা আপনার মেসের সাথে রাত কাটাতো? ”

মহুয়া চুপচাপ কাঁদছে।অফিসার ” ওরা টুকুর সাথে শারী”রিক সম্পর্কে লিপ্ত হতো?যা সত্যি তাই বলুন ”

মহুয়া বললো ” না ”

” না?তারমানে সে”ক্সুয়াল হ্যারেজ করেনি?তাহলে খু”নের সিদ্ধান্ত নিলেন কেনো? ”

মহুয়া এখনো চুপ করে রইলো।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে