অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-১৮

0
28

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৮
” সুন্দরী একা একা কোথায় চললে?
ভরদুপুরে কলেজ থেকে ফিরছিলো মান্নাত। দুপুরের টাইমে এই রাস্তাটা ফাঁকা থাকে। থ্রিপিসের ওড়নাটা টেনে আরেকটু ঠিক করে হাঁটতে লাগলো ধীর পায়ে৷
‘একটা ছেলে সামনে এসে বলে,আরেহহহ বাহহহ চাশমিশ চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?
‘মান্নাত নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর বলে প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
‘ছেলেটা সামনে থেকে সরে বলে,যাও বেবিডল।
‘কিছুটা এগোতেই মান্নাতের ওড়না ধরে ফেলে৷ মান্নাত কিছু বলবে তার আগেই একটা কালো রঙের গাড়ি এসে ব্রেক করে তাদের সামনে। গাড়ি থেকে একটা ছেলে বের হয়েই ছেলেগুলোকে মারধর করতে থাকে। বখাটেদের মধ্যে একজন জাহিনের হাতে ছুড়ি দিয়ে পো’চ দেয়। যার ফলে জাহিনের হাত বেশ খানিকটা কেটে যায়।

“এই অন্তর, এদের খোঁজ বের কর তো আমার এলাকায় বসে ইভটিজিং? ওরা হয়তো জানেনা এটা সিংহের গুহা। এখানে শিকারি ভুল করে ঢুকে পড়লেই খালাস।
‘কথা বলার মধ্যে হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা ওড়না ছেঁড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু নতুন কাপড় ছেড়া কি এতোটা সহজ!মেয়েদের মাথায় আসলেই কি ঘিলু কিছুটা কম থাকে নাকি? জাহিন শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে,মিস চার চোখ, আপনার কি মনে হয় এটা কোন সিনেমার শুটিং!
‘মান্নাত ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকায়। লম্বা, ফর্সা , কালো শার্ট, কালো প্যান্ট কি মারাত্মক সুদর্শন যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! এই ছেলে সত্যি কি এই দেশের নাকি পাকিস্তানি?
‘জাহিন শিশ বাজিয়ে বলে,মিস চারচোখ এর আগে কোন ছেলে দেখেননি নাকি? আর শুনুন এটা কোন সিনেমা নয় যে আপনার ওড়না ছিড়ে আমার হাত বেঁধে দিবেন৷ মাথায় কোন বুদ্ধিসুদ্বি নেই নাকি! এই ভরদুপুরে এই রাস্তায় একা একা কোন ঘাস কাটতে এসেছেন?

‘আপনার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে।
‘জাহিন আর কোন কথার উত্তর না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো৷ অন্তরকে বললো, মেয়েটা বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আয়। আজকে রাতে কিন্তু পার্টি হবে মাম্মা।
‘অন্তর মান্নাত কে বললো,নাম কি আপনার?
‘মান্নাত
‘ কোন কলেজ?
‘মান্নাত চুপ করে রইলো।
‘যাতে খালাম্মা আর তালে ব্রিলিয়ান্ট! নিশ্চিত আপনি ক্লাস টপার? এরজন্যই সালার বস্তার মত ড্রেস আর চারচোখ। এতো পড়ে কি হবে?
‘ডাক্তার হবো৷
‘বাসা কই তোমার।
‘সামনের গলিতে৷
‘এমন মিন মিন করে কথা বলো কেন! এভাবে কথা বললে একটাও রোগীও পাবে না৷
‘তোমার বাবা কি করে?
‘ এসিপি।
‘ওহহ চোরদের সরদার? তা এতো কালো টাকা থাকার পরেও তোমার এ হাল কেনো?
‘ মান্নাত চুপ করে রইলো৷
‘তোমার বাসা চলে এসেছে বাসায় ঢুকে উদ্ধার করো মামুনি। অন্তর গেটের সামনে নেইম-প্লেট পড়লো। এসিপি জামাল সরদার।
‘মান্নাত চলে গেলো।
‘কি মেয়েরে বাবা একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলো না!
🌿 মিতা বেগম সেই কখন থেকে জাহিনের অপেক্ষায় আছে। জাহিন গেট দিয়ে ঢুকতেই তার চোখ গেলো জাহিনের হাতের ক্ষতস্থানে। সার্ভেন্টকে বললো, তাড়াতাড়ি ফাস্টএইড বক্স নিয়ে এসো৷

“এসেই মা’রপিট শুরু করে দিয়েছিস!তুই ম্যাচিউর হবি কবে বাবু!
‘তুমিই বলো আম্মু সিংহের সামনে শিকারী চলে আসলে সে কি শিকার ছেড়ে চলে আসে?
‘অতো সব আমি বুঝি না এসব মারামারি করার বয়স তোর নেই।এবার তোকে বিয়ে করিয়ে দেবো।
‘আম্মু এইসব ঝামেলায় আমি নেই৷ বাইদা ওয়ে আমার ভাবি কই?ভাবির জন্য গিফট নিয়ে এসেছি। দেবর ভাবি মিলে তোমার ছেলের চান্দী ফুটো করে দেবো৷

‘মিতা বেগম জাহিনের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বলে,এই ‘বিয়ে টিকবে নাকি কে জানে! তুই ফ্রেশ হয়ে আয় তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দিবো।
‘ইট’স নট ফেয়ার আম্মু!ভাবির সাথে দেখা হলো না! আমি ফ্রেশ হয়ে আসি এরপর তোমার ছেলেকে ধরবো।

🌿জিয়ান নয়নার আর তার রিসেশনের ভিডিও দেখে এতোটাই তাতে ডুবে গেছে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সুনয়না “তোমার নামটা বোধহয় তোমার সরল চোখদুটো দেখেই রাখা হয়েছে! কি আছে তোমার ওই নিষ্পাপ চাহনিতে?আমি কেনো বারবার তোমার আঁখি পল্লবে হারিয়ে যাচ্ছি?
‘এই আপনার আসল রুপ!
‘ইরার কথা শুনে জিয়ানের ধ্যান ভাঙ্গলো। ইরার দিকে তাকিয়ে বলে সমস্যা কি আপনার! বারবার আমার আর আমার বৌয়ের মাঝখানে আসছেন কেনো?
‘আমাকে বোকা মনে হয়? আমি জানি আমার চোখ সুন্দর সবাই অনেক প্রশংসা করে তাই বলে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার চোখ দেখবেন।
‘হোয়াট!এরকম দিবা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।জায়িন চৌধুরীর রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি আপনাকে নোটিশ করবে! আমার দৃষ্টি এক্সপেন্সিভ সে যেখানে সেখানে তার দৃষ্টি স্থীর করে না৷ বলেই পায়ের উপর পা তুলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো৷
‘ইরা বেশ অবাক হলো! একটা ছেলের এতো এটিটিউট?তার পাশে বসা সুন্দরী মেয়ে তাকে নিজে যেচে এটেনশন দিতে চাইছে এরপরে ও ইগনোর করছে! ইরা হুট করে জিয়ান এর হাতের উপর হাত রাখলো।
‘ জিয়ান দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,ডোন্ট টাচ,কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ।
‘প্লিজ এমন করবেন না। আমার খুব ভয় পাচ্ছে আপনার হাতটা একটু ধরতে দিন৷
‘সমস্যা কি আপনার! একা ট্রাভেল করতে এতো সমস্যা তাহলে একা ট্রাভেল করতে কে বলেছে! আমার বৌ খুব ডেঞ্জারাস সে যদি জানে আমাকে কেউ টাচ করেছে তাহলে তার হাত কে’টে দেবে। সাথে আমারটাও। নিজের হাতের প্রতি মায়া দয়া থাকলে এমন ক্রাইম করার চিন্তা করবেন না।
‘মানবতার খাতিরে একটু হেল্প করুন প্লিজ৷
‘জিয়ান নিজের ল্যাপটপ ব্যাগ রাখলো। এখানে হাত রাখুন শক্ত করে ধরে রাখুন।
‘এখানে হাত রাখা আর সিটের হ্যান্ডেলে হাত রাখার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? মানুষ ভয় পেলে একটু সহনশীল আচরণ করতে হয়।
‘এরচেয়ে সহনশীল হওয়া আমার জন্য সম্ভব না। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
🌿
আম্মু আট ঘন্টা হয়ে গেছে আর কতঘন্টা লাগবে?
‘নয়না আমি যতদুর জানি আঠারো /বিশ ঘন্টা লাগে। তুই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যা উঠে দেখবি জামাই নিজে থেকে তোকে কল করেছে।
‘নয়না জাহানারা বেগমের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে নিয়ে বসে পরলো। নাহহ এখানে ভালো লাগছে না আমি নিজের রুমে শোবো। বলে নিজের রুমে চলে আসলো৷ জিয়ানের টিশার্ট নিজের গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পরলো৷ চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ট্রাই করছে। সবে মাত্র তন্দ্রা ভাব এসেছে৷ হঠাৎ মনে হলো কারো গরম নিশ্বাস তার মুখে পরছে, ঘুমঘুম চোখ খুলেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আপনি!
‘জিয়ান নয়নার ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বলে একদম চুপ একটুও কথা বলবে না। তোমার ঠোঁটের নেশায় আমি মাতাল হয়ে গেছি আমার নেশা কাটাতে তোমার ঠোঁট দুটো চাই।
‘নয়না ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো, আওয়াজ করে ডাকলো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আপনি কোথায়? বেড সাইড সুইচ দিয়ে লাইট অন করলো। নাহহহ কোথায় তার অস্তিত্ব নেই৷ জিয়ানের শার্টটা গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,এ কোন রোগে আমাকে আক্রান্ত করে গেলেন!আমি যে আপনার সাথে কথা বলার তৃষ্ণায় কাতরাচ্ছি! একবার আপনার কন্ঠ শুনিয়ে আমার তৃষ্ণা মিটিয়ে দিন। কথা বলার তৃষ্ণা যে বড্ড বাজে তৃষ্ণা।
🌿
এয়ারপোর্ট থেকে অনিকেত সোজা চলে আসলো হাফ মিঙ্গেল নাহিদের বাসায়৷ কোন মেয়েই আজ পর্যন্ত তার মনের ধারে কাছে যেতে পারলো না৷ মনের সাইড ঘেঁষে সব মেয়ে বের হয়ে যায়! মনে বিয়ে করতে না পারার পাহাড় সমান দুঃখ নিয়ে ধপ করে বসলো সোফায়। কোন ভুমিকা ছাড়াই নাহিদকে জিজ্ঞেস করলো, তোর বৌ যে তুই ওয়াশরুমে দুই মিনিট লেট করলেও সন্দেহ করে!এতো প্যারা দেয় কথায় কথায় সন্দেহ তোর বিরক্ত লাগে না?
‘সন্দেহ করে এটা ভালো তাতে আমি বুঝতে পারি। কিন্তু সন্দেহ না করলে বরং আমার বিরক্ত লাগতো টেনশন হতো৷
‘মাথার তার কি আছে না গেছে?
‘ এখনো একটু আছে কবুল বলার পর ততটুকু ও থাকবে নাকি গ্যারান্টি দিতে পারছি না৷
‘এ কেমন ভালোবাসা!
‘না করেছিস বিয়ে আর না করেছিস জীবনে প্রেম তুই এডি বুঝবি না। ও সন্দেহ করে আমাকে অতিরিক্ত ভালোবাসে তাই। ভালোবাসা ফেইক হলে আমি উগান্ডা গেলেও সন্দেহ করতো না৷
‘উপসসস বড্ড ব্যথা পেলুম বুকে। এজন্মে বিয়ে কি জুটবে আমার কপালে! একটা বৌ নাই এই যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যাচ্ছি।
‘নাহিদ হেসে বলে,তুই কাতরাতে থাক। তা হসপিটালে না যেয়ে আমার বাড়িতে কি?
‘আমরা চারজন দুইটা উইকেট পরে গেছে, আরেকটা আউড হওয়ার দারপ্রান্তে, শা’লার আমার উইকেটের পতন কবে হবে! জীবনে লাবিবের মত হতে পারলেই জীবন সুন্দর, ওই শা’লা বন্ধুর প্রেমিকা নিয়া ভাগছে আর আমি বন্ধুর বৌ নিয়া ভাগতাম। ব্যাস মেয়ে খোঁজার ঝামেলা চুকে যেতো।
‘লাবিব কাজটা ঠিক করে নাই।এতো কিছুর পরেও প্লেবয় রয়ে গেছে ওর এক্স সুমাইয়ার সাথে এখনো চ্যাট করে।
‘তুই কেমতে জানলি?
‘আমার হবুর ফ্রেন্ড সুমাইয়া।
‘ভাই তোর বৌটাকে দেখে রাখ আবার তোরটা নিয়ে টানাটানি না শুরু করে?
‘অন্যের টানাটানিতে যে হাত ছেড়ে দেবে তাকে চাই না। ভালোই হইছে রেজার সাথে নীলাঞ্জনার বিয়ে হয়নি৷ তুই বল,মেয়েটাও তো ভালো না? ভালো হলে নিজের প্রেমিকের ফ্রেন্ডের সাথে টু টাইমিং করে!যেমন বারো… মাইয়া তেমন তেরো,, জামাই পাইছে।
‘সে যাহোক আমার বুকে ব্যথা কমানোর ট্রাই করো বাবু।
‘শা’লা তোর কি আমাকে গে মনে হয়!
‘,চুপকর লুচ্চা। আমি কইছি চা- কফির কথা। আমার এ ইজ্জত শুধু মাত্র আমার ভবিষ্যত বৌয়ের জন্য সংরক্ষিত।

#চলবে।
আসসালামু আলাইকুম।নতুন কিছু ক্যারেক্টার যুক্ত হয়েছে। কেমন লাগছে জানাবেন৷

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে