অমানিশায় সেই তুমিই পর্ব-২৩+২৪+২৫

0
5

#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা

২৩.

বিকেলে বৃষ্টি হওয়ার ফলে পরিবেশটা স্যাতস্যাতে হয়ে আছে। তবুও এক সজীবতা জুরে আছে চাঁদহীন আকাশ ও গাছের সবুজ পাতায়। মেঘালয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছে ভেজা প্রকৃতি। কিছুক্ষণ আগে গোসল করায় চুলগুলো ভেজা। ছড়িয়ে দেয়া পিঠে। মৃদূমন্দ বাতাসে উড়ছে তা। আজকাল তার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। অল্পতেই হাপিয়ে ওঠে। মাথাটা ঝিমঝিম করে, কখনও কখনও চারদিক অন্ধকার হয়ে ঘুরে ওঠে মাথা।

এডমিশন কোচিংয়ে ভর্তি করিয়েছে ইরাজ তাকে। প্রথম কিছুদিন নিয়মিত ক্লাস করলেও ক’দিন শরীরের এমন দুর্বলতাকে কেন্দ্র করে আর নিয়মিত কোচিংয়েও যাওয়া হয় না। তবে পড়ালেখা যথাসম্ভব, খুব বেশিই করছে মেঘালয়া। সঙ্গে ইরাজ আছে দিন রাত পড়তে বসার তাগাদা দেয়ার জন্য। মেঘালয়ার কাছে জীবনটা আবারও রঙিন লাগতে শুরু করেছে। ইরাজের ঘাঁড় ত্যাড়ামির কাছে দিন দিন তার দুর্বলতা কেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে! ইরাজকে হারানোর কথা ভাবলেও বুক মুচড়ে ওঠে। ইরাজকে নতুনভাবে চিনছে, জানছে। ইরাজের ছায়াতলে মেঘালয়া আজকাল আবারও বড়ো আহ্লাদি হয়ে উঠেছে যেন!

ভেবেই মুচকি হাসল। ইরাজের ত্যাড়া কথা, বেপরোয়া চলন, রাগী মেজাজ আবার অদ্ভুত এক শীতলতা, কখনও কখনও যত্নশীল মন-মাতানো এক প্রেমিক হয়ে উঠতে ইরাজের জুরি নেই। সেখানে আর কোন পুরুষকে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। খুব অনুতাপ হয় মাঝেমধ্যে মেঘালয়ার— এই পাগল ছেলেটাকে ঠুকরে সে নিজের সিদ্ধান্তে চলতে গিয়েছিল! হাহ! নিজের ওপর তাচ্ছিল্য করে ওঠে। কিছুদিনের মাঝে তাদের সম্পর্ক, ইরাজের চালচলন, মেঘালয়ার মনের অবস্থা; সবকিছুতেই অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে।

বারান্দা থেকে রুমে চলে এলো। দাঁড়িয়ে থাকতে শরীর সায় দিচ্ছে না। গতকাল হেলাল সাহেব এসেছিলেন মেয়েকে দেখতে। সঙ্গে এনেছিলেন মেঘালয়ার পছন্দসই বহু খাবার। দুপুরে খাওয়া হয়নি তার। খাওয়ার কথা ভাবলেও বমি ঠেলে আসছে। এখন ভাবল, কিছু খাবে। অথচ রুচিতে আসল না। এতক্ষণের ফুরফুরে মনটা হুট করে বিষন্ন হয়ে পড়ল। আর কিছুই ভালো লাগছে না তার আশেপাশের। দেহে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করেছে।

সাড়ে নয়টার দিকে ইরাজ এলো। তার এই আজব পরিবর্তন। আজকাল বাড়ি ফিরতে দশটাও বাজে না তার। রুমে ঢুকেই প্রথম মেঘালয়ার দিকে নজর গেল। বিষন্ন চিত্তে মনমরা হয়ে বসে আছে সোফার কাছে মেঝেতে। চঞ্চল পায়ে হেঁটে গিয়ে বসল মেঘালয়ার সম্মুখে। একহাত মেঘালয়ার কপালে ঠেকিয়ে অপর হাতে হালকা বন্ধনে জড়িয়ে নিল মেঘালয়াকে। অশান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,

“এভাবে বসে আছিস কেন? কী হয়েছে, কেমন লাগছে? এবার ইচ্ছে কী করছে জানিস? ঠাস করে একটা চড় মেরে দাঁতগুলো নড়িয়ে দেই। কতদিন ধরে বলছি, চল ডাক্তারের কাছে। মাতব্বর হয়ে গেছিস?ʼʼ

মেঘালয়া চোখ তুলে তাকাল এতক্ষণে ইরাজের দিকে। একটু নড়েচড়ে বসে ইরাজের শার্টের বোতামগুলো আলগা করতে লাগল। ইরাজ ভ্রু কুঁচকে তা দেখছে কেবল। মেঘালয়া শান্তস্বরে বলল আস্তে করে, “এখন আপাতত ফ্রেস হয়ে আসুন। আর সবকিছুতে উত্তেজিত হতে নেই।ʼʼ

ইরাজ ভ্রু কুঁচকে বলল, “জ্ঞান দিচ্ছিস, পুচকি মেয়ে!ʼʼ

মেঘালয়া শার্টটা খুলে তা হাতের কনুইতে রেখে, চোখ তুলে তাকিয়ে বলল, “সে আপনি যতই হাত-পা ওয়ালা লম্বা, বয়সে বড়ো হন না কেন, মেনে তো চলতে হবে আপনাকে এই পুচকির কথাই!ʼʼ

ইরাজ কপালটা জড়িয়ে ঘাঁড় বাঁকাল, সন্তর্পণে সামান্য হাসল। উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করল, “আম্মা কোথায় রে? আর তোর হয়েছে কী সে ব্যাপারে তুই খেয়াল করবি নাকি আমাকে করতে হবে? আমি করলে কিন্ত ওভার হয়ে যাবে, তুই নিতে পারবি না।ʼʼ

বলে হাতটা বাড়িয়ে দিল মেঘালয়ার দিকে। মেঘালয়া ইরাজের হাতটা চেপে ধরে উঠে দাঁড়াল টলমলে পায়ে। ক্ষীণ স্বরে বলল, “মামনি বোনের বাড়ি গিয়েছে। আমি খাবার দিচ্ছি চলুন।ʼʼ

ইরাজ ক্ষেপা নজরে তাকাল এবার। একহাতে জড়িয়ে নিল মেঘালয়াকে। মুখ ভেঙচিয়ে বলল, “আমি খাবার দিচ্ছি চলুন!ʼʼ

এরপর ধমকে বলল, “চল ডাক্তারের কাছে। শরীরে তো মশার অতখানি জোরও নেই। এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে তোর বাপ আবার আমার বদনাম করে বেড়াবে?ʼʼ

“এছাড়া, আপনার কিছু না?ʼʼ—বিছানায় বসে বলল কথাটা মেঘালয়া।

ইরাজ ওকে বসিয়ে দিয়ে টান হয়ে দাঁড়াল। গায়ের স্যান্ডো গেঞ্জিটা খুলে মেঘালয়ার কোলে ছুড়ে মারল। একটু ঝুঁকে দাঁড়াল মেঘালয়ার দিকে। নিচু আওয়াজে বলল, “আমি বউহারা হয়ে যাব। এর চেয়ে চিন্তার আর কী আছে?ʼʼ

মেঘালয়া নাক ফুলিয়ে চেয়ে রইল দুষ্ট হাসি ছড়িয়ে থাকা ঠোঁটের দিকে। হঠাৎ ইরাজ সিরিয়াস হয়ে বলল, “মেঘ! আমরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। ‘না’ বললে, কানটা গরম হয়ে যাবে।ʼʼ

বলেই বাথরুমের দিকে চলে গেল ইরাজ। মেঘালয়া সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শিক্ষিত মেয়ে সে। শরীরের অবস্থা সম্বন্ধে যথেষ্ট বুঝ ও ধারণা রয়েছে তার। এই বদমেজাজি, একরোখা লোককে কী করে বোঝাবে সেসব!

ইরাজ বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল, মেঘালয়া খাবার নিয়ে বসে আছে। মাথা গরম হয়ে উঠল। ভারী পায়ে হেঁটে গিয়ে বলল, “আমার কথায় মন লাগে না তোর? শরীরের দিকে মনোযোগ দিতে ব্যাথা পাস? বললাম না ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি আজ ফাইনাল! সিঁড়ি ভেঙে নেমে খাবার আনতে চলে গিয়েছিস! এত কর্তব্যপরা..

মেঘালয়া ইরাজের হাত টেনে ধরে বসাল সামনে। যথাসম্ভব তেজী গলায় বলল, “আর একটাও কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নিন। আমার শরীরের ব্যাপারে আমি বুঝি না? এসেছে আমার খেয়াল রাখতে।ʼʼ

মুখের সামনে খাবার ধরল ইরাজের। ইরাজ ভ্রুত কুঁচকে চেয়ে আছে; সবে মাত্র সে তার বউয়ে ধমক খেল। এবং সেই ধমকের আঁছড়ে এবার খাবারটুকুও খেল চুপচাপ। আজকাল মেঘালয়ার কাছে মাঝেমধ্যেই সে এমন ধমক, ধামকি-ধুমকি পায়। এবং চুপচাপ মেনেও নেয়। বউয়ের সামনে নাকি বাহাদুরী চলে না; ইরাজ এ কথা টের পাচ্ছে আজকাল খুব।

মেঘালয়া ইরাজকে খাইয়ে নিজেও সামান্য কিছু খেয়ে নিল। খাবারির প্লেটটা আর রেখে আসার ব্যাপারে শরীর সায় দিল না। বেড-সাইড টেবিলের ওপরে রেখে ওমনি বসে রইল কিছুক্ষণ। এর মাঝে ইরাজ আস্তে করে উঠে যাচ্ছে তার নিত্যকর্মে। মেঘালয়ার দিকে চোখ যেতেই দেখল, সে চোখ ছোটো ছোটো করে চেয়ে আছে। সাফাই গাওয়ার সুরে বলে উঠল,

“আরে, দেখ সারাদিন একটাও টান দেইনি। এখনও না দিলে রাগ করবে তো? একটাই তো, বেশি না। দেখ এ প্যাকেটে আছেও আর একটাই।ʼʼ

“বউয়ের চেয়ে সিগারেটের রাগের প্রাধান্য বেশি?ʼʼ

ইরাজ আস্তে করে বসল বিছানায়। কপট রাগে সিগারেটের প্যাকেটটা ছুড়ে দিল মেঘালয়ার দিকে। মেঘালয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “একদম তাই। কারন যখন বউ ছিল না, সিগারেট ছিল সাথে। এখনও যদি বউ ভাগে, সিগারেট কিন্ত ছেড়ে যাবে না আমায়! বউয়ের আগে সিগারেট এসেছে আমার জীবনে। আমি নতুন কাউকে পেয়ে ওর সাথে বেইমানী করতে পারব না। আফটার অল, আ’ম লয়াল!ʼʼ

মেঘালয়া অতিষ্ট ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। পেটের মধ্যে গুলিয়ে আসছে। আচমকা মাথাটা ঘুরে আসল, পেটের সবকিছু যেন বেরিয়ে আসবে এখনই। মেঘালয়া দ্রুত পায়ে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। বমির করার উপক্রম হলে মুখ চেপে ধরল হাত দ্বারা। ইরাজ দৌড়ে পাশে এসে দাঁড়ায়। ধরে দাঁড় করাল, মেঘালয়া তো শান্ত, অথচ ইরাজ অস্থির হয়ে উঠেছে মুহূর্তের মাঝে। বাথরুমে গিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। বেশ কিছুক্ষণ বমির ভাব হলেও বমি হলো না। ইরাজ ওকে বিছানায় এনে শুইয়ে দিয়ে, প্রস্তত হতে অগ্রসর হয় ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য। মেঘালয়া হাত চেপে ধরল। পাশে বসল ইরাজ, উত্তেজিত হয়ে কিছু বলার আগেই মেঘালয়া বলে,

“এখন ভালো লাগছে। যদি যেতেই হয় কাল সকালে যাব। এখন দরজা লাগিয়ে দিন, আর এসির টেমপারেচার কমান একটু, গরম লাগছে। তারপর ভদ্রলোকের মতো এসে শুয়ে পড়ুন।ʼʼ

ইরাজ কপাল কুঁচকে সন্দিহান কণ্ঠে বলল, “মেঘ! তোর ভাবসাব কিন্ত ভালো না।ʼʼ


সকালে টুকটাক বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ মেঘলা হয়ে আছে। পরিবেশটাও ঠান্ডা। মেঘালয়ার ঘুম ভাঙল নয়টার দিকে। অথচ পাশে তাকিয়ে দেখল, ইরাজ নেই। শরীরটা ওর বহুরূপী হয়ে উঠেছে। এখন বলা চলে, তুলনামূলক ভালো লাগছে। আস্তে করে উঠে, বাথরুমে গেল। হাত-মুখ ধুয়ে বের হয়ে মুখটা মুছলোও না। তোয়ালে ইরাজ কোথায় ছুরে ফেলে গেছে আল্লাহ পাক জানে। এরকম অগোছালো হয় পুরুষ মানুষ, তা অজানা ছিল মেঘালয়া। আব্বুকে সফসময় পরিপাটি দেখেছে সে। অথচ ইরাজ! নিজেকে পরিপাটি রাখলেও তার অভ্যাস বাজে রকমের এলোমেলো। বাইরে থেকে এসে শার্ট খুলে এক প্রান্তে ছুড়ে মারে তো প্যান্ট খুলে অপর প্রান্তে। সেভাবেই এখন তোয়ালে কোথায় রেখেছে, তা খোঁজার ইচ্ছেটুকু হলো না মেঘালয়ার।

নরম পায়ে হেঁটে নেমে এলো বসার রুমে। ইমতিয়াজ সাহেব সোফায় বসে সকাল সকাল টিভি ছেড়ে খবরের চ্যানেল চালু করে রেখছেন। অথচ নজর তার খবরের কাগজে। খবর যখন কাগজেই পড়বে, তাহলে টিভিতে খবরের চ্যানেল চালিয়ে রাখার মানেটা কী? তার চেয়ে বড়ো কথা টিভিটাই চালু করে রাখার মানে কী? মেঘালয়ার মেজাজ আজকাল চরম খিটখিটে। আর এই খিটখিটে মেজাজেই কথাগুলো ভেবে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেল সোফার দিকে।

“বাবাই, তোমার জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে, বেশি করে বুদ্ধি বাড়ার ওষুধ খাবে।ʼʼ

মেঘালয়ার কথায় ইমতিয়াজ সাহেব থমকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ, অতঃপর ফিক করে হেসে ফেললেন। মেঘালয়া তা দেখে কপালটা আরও জড়িয়ে ফেলল।

“হাসছ কেন? জোকস বলেছি?ʼʼ— কথাটা বলেই রিমোটটা হাতে নিয়ে চট করে টিভিটা বন্ধ করে দিল। ইমতিয়াজ সাহেব কৃত্রিম গম্ভীর স্বরে বললেন, “এখনই বাড়ির খরচে সাশ্রয় শুরু করেছিস? ক’দিন পর তো সোফায় বসার ভাড়া আদায় করবি!ʼʼ

মেঘালয়া থমথমে মুখে বলল, “এটা কোন কথা?ʼʼ

ইমতিয়াজ সাহেব মেঘালয়ার এই খিটখিটে রূপে বেশ মজা পাচ্ছেন। মনেমনে হাসলেন, মুখে সিরিয়াস হয়ে বললেন, “তোর শরীর নাকি ভালো যাচ্ছে না, কী হয়েছে মেঘা!ʼʼ

মেঘালয়া সোফায় বসে বলল, “এ খবর কী কাগজে ছাপা হয়েছে নাকি টিভিতে দেখাচ্ছে?ʼʼ

ইমতিয়াজ সাহেব বললেন, “দুটোর কোনটাই না, বরং রাজের মুখে ঘোষিত হয়েছে। আর বুঝলাম, তোর শারীরিক না বরং মেজাজ খিটখিটের রোগ হয়েছে।ʼʼ

মেঘালয়া অতিষ্ট হয়ে বলে ওঠে, “উফফ,বাবাই!ʼʼ

ইমতিয়াজ সাহেব ঢং করে বললেন, “আ’ম হেয়ার, মাই প্রিন্সেস!ʼʼ

মেঘালয়া হেসে ফেলল এবার, “তোমার ক্যাকটাস, থুক্কু ক্যাকটাস আমার। তোমার বাঁদর কই?ʼʼ

“আস্তে বল। আজ বাঁদরের হাতে আমাদের পেট।ʼʼ

“মানে! রান্না করছে? করতে জানে তোমার..

কথা পুরো না করে উঠে গেল রান্নাঘরের দিকে। ইরাজ রান্না করছে। ঘেমে কাহিল অবস্থা তার। চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। মুখটা মাত্রাতিরিক্ত গম্ভীর। ওভাবেই রান্না করছে দাঁড়িয়ে। ঘর্মাক্ত, বিরক্ত, রান্নায় ব্যস্ত ইরাজকে দেখে কোথাও একটা নরম অনুভূতি উঁকি দিল মেঘালয়ার মাঝে। যুবতী মেঘালয়ার সামনে দাঁড়ানো ওই ঘামে সিক্তদেহী পুরুষ কেমন আকর্ষণীয় ঠেকল তার কাছে। আস্তে করে কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “আমায় ডাকতেন, অমি সাহায্য করতাম। একা এভাবে হেনস্তা হওয়ার কী দরকার?ʼʼ

ইরাজ হাত ধুতে ধুতে বলল, “হুম ডাকতাম। তোর বাপে যে ননীর পুতুল মানুষ করে ঘাঁড়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে, তাকে ডাকতাম রান্নার মতো কাজে। রান্না করেছিস জীবনে? খালি তো খেয়েছিস পায়ে পা তুলে। আর তার ওপর শরীর খারাপ, যা এখান থেকে। এখানে গরম, গিয়ে আব্বুর কাছে বস।ʼʼ

মেঘালয়া চোখ-মুখ জড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “আপনি খোঁটা দিচ্ছেন আমায়? একদিন আপনার চেয়ে ভালো রাধুনী হয়ে দেখাব… ওয়েট ওয়েট, আপনি রান্না জানেন? জানেন তো, কীভাবে জানেন?ʼʼ

ইরাজ ঘুরে দাঁড়াল, মেঘালয়ার মুখে মৃদূ একটা থাপড়া মেরে বলল, “তোর মতো ন্যাকারাণী আর আহ্লাদি ছিলাম নাকি আমি? হলে থেকে পড়ালেখা করেছি।ʼʼ

মেঘালয়া মুখে হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে খোঁচা দিয়ে বলল, “হলে আপনি রান্না করতেন? নাকি অন্যকে ভয় দেখিয়ে তাদের দিয়ে রান্না করিয়ে নিয়ে গিলতেন! আপনি যে উন্নত জাতের কাঁটাভরা ক্যাকটাস!ʼʼ

ইরাজ সরু চোখে তাকাল, “চড় খেয়ে ফর্সা গালটায় ছাপ বসাতে না চাইলে ভাগ এখান থেকে।ʼʼ

মেঘালয়া মুখ বাঁকাল, “কোন ইচ্ছে নেই আপনার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে ঝগড়া করার। দরকারে এসেছি।ʼʼ

ইরাজ রান্নায় খুন্তি নাড়তে নাড়তে বলল, “বলে ফেল।ʼʼ

মেঘালয়া একটু কাছে এসে দাঁড়াল, ফিসফিস করে বলল, “বাড়ি ফেরার সময় মনে করে একটা প্রেগন্যান্সি কিট আনবেন।ʼʼ

ইরাজকে থমকানোর সুযোগটুকু দিল না মেঘালয়া। বের হয়ে গেল রান্নাঘর থেকে। ইরাজ কেবল বিষ্ময়ে থমকে, ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়া বুকের ধুকপুকানির সাথে স্থির দাঁড়িয়ে রইল মেঘালয়ার যাওয়ার পথে নজর মেলে।

চলবে..

#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তূজা

২৪.

দুপুরের বেলা গড়িয়ে যায়। ক্লিনিকের ওয়েটিং রুমে বসে থেকে মেঘালয়ার বিরক্তি চরমে পৌঁছেছে। তবুও ইরাজের দেখা নেই। এদিক ওদিক তাকিতুকি করে, তো একবার উঠে দাঁড়ায় আবার বসে। যে কেবিনে ঢুকেছে ইরাজ, সেদিকে তাকিয়ে থাকে আশা নিয়ে— এই বুঝি ইরাজ বেরিয়ে এলো। কেবিনের দরজার ওপরের নেমপ্লেটে লেখা,
‘শারমিন আরা (গাইনি এন্ড অবস)’

সকালে ইরাজকে কিট আনার কথাটা বলার পর থেকে আর এক নতুন ইরাজ আবিষ্কৃত হয় মেঘালয়ার কাছে। পাগল ইরাজ। যার আচরণ একদম পাগলাটে ধরণের। মেঘালয়া শুনেছিল খুশিতে মানুষ পাগল হয়। বিশ্বাসযোগ্য ছিল না কথাটা তার কাছে। অথচ আজ সে দৃঢ় বিশ্বাসী, ইরাজকে দেখে। কিসের কিট, কিসের কী? মেঘালয়াকে টানতে টানতে নিয়ে এসেছে গাইনি ডাক্তারের কাছে। কোনরকম ত্রুটি সে হতে দেবে না। ব্লা ড ও ইউরিন টেস্টের রিপোর্টে প্রেগন্যান্সি পজেটিভ দেখার পর থেকে ইরাজের পাগলামী বেড়েছে বহুগুনে। তখন মেঘালয়া ভাবতে বসেছিল, সন্তানের আগমনীতে বাবারা বুঝি এমনই পাগল হয়ে ওঠে? তাহলে তার আব্বুও নিশ্চয়ই এমন পাগল হয়ে উঠেছিল? হেলাল সাহেবের মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে।

কোনরকম ছটফটানি করতে দিচ্ছে না ইরাজ, ধরে বসাচ্ছে, ধরে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে, তার দৌড়া-দৌড়ি দেখে খুব সহজেই বলা যায়— ইরাজ ম্যারাথনেই বোধহয় নেমেছে আজ। সেই রিপোর্ট নিয়েই ডাক্তার সাহেবা ইরাজকে কেবিনে ডেকেছিলেন। মেঘালয়া যেতে পিছু নিলে, ইরাজ নেয়নি। ইরাজকে নাকি একা ডাকা হয়েছে। তখন থেকে বসে মেয়েটা তেতো হয়ে উঠল।

আরও কিছুক্ষণ সময় পার করে ইরাজ বের হয় কেবিন থেকে। হাতে তার রিপোর্ট। মেঘালয়া ইরাজের দিকে তাকাতেই তার বোধগম্য হলো— ইরাজকে দেখতে যেন অখুশি লাগছে। কোন কিছুতে উদ্বিগ্ন সে। কিছুক্ষণ আগের চঞ্চল, চটপটে উল্লাসিত মুখটা শুকনো লাগে। মেঘালয়ার দিকে চোখ পড়তেই কৃত্রিম এক হাসি মুখে টানল। মেঘালয়া ভ্রুজোড়া কুঁচকে নেয়। কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে, সব ঠিক আছে? কী বলল ডাক্তার?ʼʼ

ইরাজ হাসিমুখে জবাব দেয়, “বিশেষ কিছু না। বলল, এখন থেকে পুচকি বউয়ের সাথে আমাকে জ্বালানোর জন্য আরেক পুচকি আসছে। আমার শরীরে এক্সট্রা এনার্জি লোড করে রাখতে বলল।ʼʼ

মেঘালয়া নাক ফুলিয়ে তাকালে, ইরাজ আবারও হেসে ওঠে।


মেঘালয়ার যত্নের ত্রুটি নেই। হেলাল সাহেব বোঝাই করা জিনিস নিয়ে এসে দেখে গেছেন মেয়েকে। কল্যান প্রার্থনা করেছেন মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে। ইমতিয়াজ সাহেবের খুশি উতলে পড়া দুধের মতো দিগ্বিদিক গড়িয়ে পড়ছে। আনতারা খানম স্বাভাবিক। তবে তার মাঝে পরিবর্তন যা লক্ষ করা যায় তা হলো, তিনি নিঃশব্দে মেঘালয়ার যত্ন নিতে ভোলেন না। সময়মতো মেঘালয়া খাবার খেতে না গেলে খাবার ওপরে পাঠিয়ে দেন, এটা ওটা তৈরী করে রাখেন, গর্ভাবস্থায় একটা মেয়ের যেমন যত্নের প্রয়োজন সবটাই মেঘালয়া পায়, বরং বেশিই পায়। তবে তিনি কথা বলেন না মুখ খুলে। বরং নিরবতা বজায় আছে।

মেঘালয়ার শরীর একটু-আধটু মোটা দেখতে লাগে অবশ্য আজকাল। খুব বেশি না হলেও শরীরে তুলনামূলক পরিবর্তন এসেছে সামান্য।

রাত দশটার মতো বাজে। অথচ ইরাজ বাড়ি আসেনি এখনও। বারান্দার সোফাতে হেলান দিয়ে বসে একমনে চেয়ে আছে মেঘালয়া আকাশের দিকে। আজকাল কিছুসময় ইরাজ কাছে না থাকলে বুকটা খাঁ-খাঁ করে বড়ো। খালি-খালি লাগে নিজেকে। এক অজানা ভয়ে
হাত-পা শিউরে ওঠে। যেমনটা এখন হচ্ছে। মনটা ভীষনভাবে কেবল চাইছে, ইরাজ এসে প্রতিদিনের মতো গা ঘেঁষে বসে কোন ত্যাড়া কথা বলুক, মনটা শীতলতায় ছেঁয়ে যাক। আগে তো এমন হতো না? মোটেও অপেক্ষা করত না মেঘালয়া ওই বদমেজাজি, ঘাঁড় ত্যাড়া ইরাজের। তবে আজ কেন এত অস্থির লাগে ইরাজের দুরত্বে! সে জানে না, হয়ত জানে তবে প্রকাশ করে না। সে জানতে চায়না, বুঝতেও চায়না। কেবল ইরাজকে হারাতে
চায় না— এটুকুই যথেষ্ট! আকাশ দেখতেও ভালো লাগল না। শরীর তো খারাপ, তার সঙ্গে মিশে যায় ক্রমশ মন খারাপগুলো। বড্ড খারাপ অনুভূতি এসে জেকে ধরল মেঘালয়াকে। আসছে না কেন, ক্যাকটাসটা?

আস্তে করে উঠে দাঁড়াল হেঁটে রুমে আসার জন্য। অথচ মাথাটা চক্কর কেটে উঠল। ঝাপসা হয়ে এলো চোখদুটো। সঙ্গে সঙ্গে সোফার হাতল চেপে ধরে বসে পড়ল। আম্মুর চেহারাটা মেঘালয়ার সেভাবে মনে পড়ে না। তবুও মাঝেমধ্যে যখন সেই নারীটির শূন্যতা অনুভব হয়, মেঘালয়ার বুকে আগুন জ্বলে ওঠে। মেঘালয়া নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। এখন এভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলে খারাপ কিছু হতে পারে। সে দেখেছে ইরাজের পাগলামী, সে বুঝেছে আব্বু ও বাবাইয়ের চোখে নাতি আসার আনন্দটুকু। নিজের জন্য না হোক, এই মানুষগুলোর জন্য হলেও তাকে এবং সেই ছোট্ট পুচকির সুস্থ থাকা চাই। আম্মু নেই তো কী হয়েছে? ইরাজ আছে তো?

মেঘালয়া অবাক হয় নিজের ভাবনায় আগে এমন সময় আব্বুর কথা মাথায় আসত। আজ ইরাজের কথা ভেবে ফেলেছে সে। চোখটা বুজে মাথাটা সোফার সঙ্গে এলিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে ফেলল মেঘালয়া। ইরাজ আসলেই নেশালো, ছেলেটা পাগল। যাকে বাহ্যিকভাবে দেখতে কত কঠিন, পাষাণ আর বদমেজাজি মনে হয়। মেঘালয়া সেসব ভেদ করে এক পাগলকে পেয়েছে, যে ইরাজের মতোই দেখতে। তবে সবার দেখা ইরাজের চেয়ে একদম আলাদা।

“মেঘ! মেঘ, কোথায় তুই। মেঘ!ʼʼ

হন্তদন্ত, অস্থিরতার মাঝে এই পুরুষের ডাক। মেঘালয়ার বুকটা শান্ত হয়ে ওঠে। এভাবেই প্রতিরাতে এসে ডেকে ঘর মাথায় তুলে ফেলে, যেন— সে কোন মহামূল্যবান আমানত রেখে বাইরে গিয়েছিল, জান হাতে নিয়ে ফিরেছে তা ফিরিয়ে নিতে। মেঘালয়া ক্ষীণ স্বরে জবাব দেয়। তাতে ইরাজের উত্তেজনা বাড়ল শতগুন। দৌড়ে বারান্দায় এসে পাশে বসে মুখটা হাতের আজলায় তুলে এলোমেলো স্বরে বলল, “এখানে এভাবে বসে আছিস কেন? কেমন লাগছে, কী হয়েছে? এই মেঘ! ঠিক আছিস তুই?ʼʼ

মেঘালয়ার কথা বলার সুযোগ নেই। মেঘালয়া আস্তে করে নিজের মুখে ঠেকিয়ে রাখা ইরাজের হাতের ওপরে হাত রাখল। বলল, “সবসময় এত উত্তেজিত না হলে হয়না? আমি প্রথম মেয়ে নই, যে গর্ভবতী। সকলেরই এ সময় আসে, চলে যায়। এত অস্থির হলে আপনারই যে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে!ʼʼ

“সবারটা জানি না। আমার বউ তো প্রথম গর্ভবতী, আমি প্রথমবার বাপ হব। তুই নিজের খেয়াল রাখবি নয়ত তোর ঘটে শনি আছে।ʼʼ

মেঘালয়া ভ্রু কুঁচকে বলল, “তার মানে এসব কেবল তার জন্য, আমার জন্য না?ʼʼ

ইরাজ জবাব না দিয়ে চট করে মেঘালয়াকে পাঁজাকোলে করে তুলে ফেলল। মেঘালয়া থমকে যায়, সঙ্গে লজ্জায় চোখদুটো খিঁচে বন্ধ করে নিল।

রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দিল। মেঘালয়া শক্ত মুখে প্রশ্ন করে, “এত দেরী হলো কেন আসতে?ʼʼ

ইরাজ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে হেঁটে সোফার কাছে গেল। মেঘালয়া তা অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়। প্রকান্ড বোঝাই করা এক ব্যাগ। কপাল কুঁচকে চেয়ে রইল। ইরাজ তা এনে বিছানায় রেখে পাশে বসে চুলে হাত চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মেঘালয়া ব্যাগ থেকে এক এক করে সব নামাতে লাগল।

বাচ্ছাদের যাবতীয় খেলনা দিয়ে ব্যাগ ভরা। সব বের করে বিছানায় রেখে বিষ্মিত চোখে চেয়ে রইল কেবল। এ ছেলের পাগলামী দিন দিন বাড়ছে কেবল। ব্যাগ এখনও খালি হয়নি। দেখল সেখানে, আচার, চাটনি, খোলা তেঁতুল আর কিছু ওষুধ। মেঘালয়া অবাক চোখে তাকায় ইরাজের দিকে। ইরাজ স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় ভ্রু নাচায়। মেঘালয়া বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয় একটা। বলে, “সবে দু-মাস চলছে। এখন এসবের..

ইরাজ কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল, “যাতে আমার মেয়ে এসে খেলনার জন্য অপেক্ষা না করতে হয়। তখন কিনতে যাব, কতগুলো কিনব? এখন থেকে কিনতে থাকলে অনেক জমবে।ʼʼ

কেমন বাচ্ছা মানুষের মতো কথা ইরাজের। মেঘালয়া হতভম্ব হয়ে চেয় রয় ইরাজের দিকে। আজকাল ইরাজের আচরণ কেমন বোকা-বোকা পাগলাটে লাগে। ভারসাম্যহীন এমন আচরণ ও কথা ইরাজ মাঝেমধ্যেই বলে। এই সেই মানুষ যে কিনা ত্যাগী, বদমেজাজি, বেপরোয়া ইরাজ! আসলেই! মেঘালয়া অভিভূত নজরে চেয়ে ধীরকণ্ঠে প্রশ্ন করল,

“এত সুখী আপনি বাবা হতে পেরে, কই কখনও তো বলেন নি আমায়? সেভাবে কোন ইঙ্গিত পাইনি আমি আপনার কাছে। আমি নিজে কনসিভ করেছিলাম। কেন জানিনা। তবে কোন ধরণের কন্ট্রাসেপটিভ ব্যবহারে মন সায় দেয়নি। আমি যদি কনসিভ না করতাম, আপনি বলতেন করতে?ʼʼ

ইরাজের মুখভঙ্গি হঠাৎ-ই পাল্টে গেল। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল দুর্বোধ্য এক চিলতে হাসি। ওভাবেই বলল,

“কখনোই না। বরং তোকে মুক্ত করে দিতাম। কেবল সংসারে থাকতে বিতৃষ্ণা থাকলেই একটা নারী তার গর্ভাবস্থাকে ত্যাগ করতে পারে। কেবল স্বামীর প্রতি মন না টিকলে তার সন্তানের প্রতি মায়া হারায়। নয়ত কোনক্রমেই সম্ভব নয় কোন নারীর দ্বারা, যে সে তার মা হওয়ার সুযোগকে এড়িয়ে চলে। যেমনটা তুই পারিস নি। এতকিছুর পরেও পারিস নি নিজের নারীত্বের সাধটুকু খোয়াতে। সেদিন প্রমাণিত হয়েছিল, তুই আমার। তোকে পেয়েছি আমি অবশেষে। তোকে জড়িয়ে নিতে আর বাঁধা নেই। তোর পায়ে জড়িয়ে থাকা সুতোটা খুলে দিতাম নিমেষেই, যদি আমার র ক্ত নিজের মধ্যে ধারণ করতে অনীহা দেখাতি সেদিন। জোর করে তোকে হাসিল করার হলে বহু আগে কেঁড়ে নিতাম তোকে তোর কাছ থেকে। ইরাজকে ত্যাগের খেলায় হারানোর সাধ্য কারও নেই, মেঘ!
ইরাজ তো নিজের কলিজাটুকু নিজ হাতে ছিঁড়ে ফেলে বেঁচে থাকার শক্তি রাখে। তুই আমার না হলে নাহয় সেভাবেই বেঁচে থাকতাম।ʼʼ

মেঘালয়ার চোখের কোণে বোধহয় চিকচিক করে উঠল এতক্ষণে, নাকটা লালচে হয়ে উঠল। ইরাজ কিঞ্চিত হাসল তা দেখে। এগিয়ে এসে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরল মেঘালয়াকে বুকের মাঝে। মেঘালয়ার কান্নার বহর বেড়ে যায় এবার। ইরাজ শক্ত করে চেপে ধরে মেঘালয়াকে। কপালের ওপরে একটা গাঢ় চুমু দিয়ে মেঘালয়ার মাথাটা নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরল। অদ্ভূত স্বরে বলল,

“তোর মাঝে নিজেকে সেই প্রথমজীবনে লুটিয়ে দিয়েছিলাম। আজও সে অধিকারবোধ আর মায়া কাটানো সম্ভব হয়নি। আমি গোটাটাই অসম্পূর্ণ তোকে ছাড়া। আমায় খালি করে দূরে যাস না আর, ভেতরে আর জায়গা নেই যন্ত্রণা চাপানোর। আমার বুকের ঝরে যাওয়া র ক্তা ক্ত হাহাকারের মূল্যে কেনা তুই, তোকে হারালে এবার ক্ষয় হয়ে যাব আমি।ʼʼ

মেঘালয়া হিচকি তুলে শব্দ করে কেঁদে ফেলল এবার। বুকে ভাঙচুর শুরু হয়েছে। সে ভাঙচুরে মিশে আছে, অনুতাপ, প্রশান্তি, হারানোর ভয় আরও বহু জটিল অনুভূতি!

চলবে..

[ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।]

#অমানিশায়_সেই_তুমিই
#লেখায়_তেজস্মিতা_মর্তুজা

২৫.

মেঘালয়ার শরীরের অবনতি চোখে পড়ার মতো আজকাল। শরীর বেশ ফুলে উঠেছে, বিশেষ করে পা দুটো। মাথার ব্যথাও কিছুসময় তীব্র থাকে। অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে, রেগে যায়। খাওয়া দাওয়া ছেড়েই দিয়েছে প্রায়।

গতকাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে ছুটেছিল ইরাজ। যখন ডাক্তারের কেবিনে যাওয়া হয়, মেঘালয়াকে বাইরে রাখা হয়। এটা অবশ্য মেঘালয়ার জন্য বিরক্তিকর। তবে কোন ওষুধ দেওয়া হয়নি। ইরাজের যত্ন-আত্তি আর আনতারা খানমের নীরব স্নেহে ভালোই আছে মেঘালয়া। তবুও যেন ইরাজের উদ্বেগের সাগরে বাঁধ ভেঙেছে।
রাতের ঘুমটা একেবারে নেই বললেই চলে মেয়েটার। সে যে একা নির্ঘুম রজনী কাটায়, তা নয়। বরং সে একটু-আধটু ঘুমিয়ে গেলেও জেগে থাকে ইরাজ। বসে কেবল অটল চাহনিতে চেয়ে থাকে মেঘালয়ার মুখের দিকে। এ-প্রাপ্তিতে নজর না লাগুক ইরাজের।

সকালে মেঘালয়ার ঘুম ভেঙে গেলেও ইরাজ ঘুমে অচেতন। শেষ রাতের দিকে শুয়েছে। যেহেতু এসি চলছে, মেঘালয়া পাতলা চাদরটা ইরাজের গায়ে তুলে দেয়। এসি অফ করলেও জেগে উঠবে ইরাজ। মেঘালয়া আস্তে করে উঠে দাঁড়াল। সে বুঝে পায়না, এত অসুস্থ হয়ে পড়ছে কেন দিন-দিন। আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে যেতে অগ্রসর হলে আবারও মাথা ঘুরে উঠল, সঙ্গে পেটে মোচর দিয়ে বমি ঠেলে এলো। সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ল মেঝেতে। জোরে জোরে শ্বাস নিল কয়েকটা। তাতেই যেন ইরাজের কলিজার পানি ছুটে যায় ঘুমন্ত অবস্থাতেই। হন্তদন্ত উঠে এসে মেঘালয়ার পাশে বসে পড়ে। ওকে একহাতে ধরে বুকের সঙ্গে আগলে নেয়। মেঘালয়ার চেয়েও জোরে জোরে শ্বাস নেয় ইরাজ। কিছুক্ষণ পর একটু শান্ত হয়ে মেঝেতে ঠেসে বসে ধপ করে। মেঘালয়া মাথাটা বুক থেকে তুলে অপর হাত থাপ্পর মারার ভঙ্গিতে এগিয়ে নিয়ে কঠিন স্বরে বলল,

“মারব এক থাপ্পর? বলেছি না একা মাতব্বরি করতে যাবি না। আমাকে ডাকতে বলেছিলাম না?ʼʼ— শেষের কথাটা ধমকে বলে ইরাজ।

“কী এমন হয়েছে? এ সময় এরকম একটু হওয়াই বরং স্বাভাবিক।ʼʼ

মেঘালয়ার কথায় ইরাজ আরও ক্ষেপে উঠল, “বেশি বুঝতে শিখেছিস?ʼʼ

মেঘালয়া ইরাজের রাগকে উপেক্ষা করে বলল, “বুঝব না? বাচ্চার মা হতে যাচ্ছি। না বুঝলে বাচ্চাকে বুঝাব কী?ʼʼ

ইরাজ গাল ফুলিয়ে একটা শ্বাস নিলো। নিজের ক্রোধকে সামলে নিল যেন। ইরাজকে দেখতে খুব উদ্বিগ্ন লাগছে। অসুস্থ মেঘালয়া, স্বাভাবিক অসুস্থতা তার। এ-সময় শতভাগ সুস্থ কোন নারীই থাকে না। তবুও ইরাজের চিন্তা বিরামহীন।

দুপুরে মেঘালয়াকে গোসল করিয়ে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দেয় ইরাজ। সকালে মেয়েটা কিছু খায়নি। বমি করে ভাসিয়েছে। আনতারা খানম এলেন খাবার হাতে। ইরাজ মাথা নত করে চুলে হাত গুজে, কপালের দুপাশের চুল মুষ্ঠিবদ্ধ করে চেপে ধরে বসে আছে পাশেই। মেঘালয়া চুলের পানি ঝারছে আস্তে আস্তে। তিনি এসে খাবারটা টি-টেবিলের ওপর রেখে দ্রুত পায়ে গিয়ে ইরাজের পাশে বসলেন। ইরাজের মাথার একপাশে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন, “মাথা ধরেছে? কফি খাবি?ʼʼ

ইরাজ দুদিকে ঘাঁড় নেড়ে মুখ তুলে তাকায়। ক্লান্ত চেহারা, চোখ-মুখ বসে গেছে ছেলেটার। আনতারার ভালো লাগল না ছেলের এমন রূপ দেখে। তিনি জানেন, ইরাজ এখন মেঘালয়াকে খাওয়াতে বসবে। শান্ত স্বরে বললেন, “আমি খাইয়ে দিচ্ছি, মেঘাকে। যা গোসল সেরে আয়।ʼʼ

ইরাজ নীরবে উঠে দাঁড়ায়। মেঘালয়ার দিকে শান্ত নজরে তাকায় একবার। মেঘালয়া চুলে জড়ানো তোয়ালেটা খুলে ইরাজের হাতে দেয়। ইরাজ চলে যায় বাথরুমে। আনতারা খানম খাবারের লোকমা তুলে ধরে মেঘালয়ার সামনে। মেঘালয়ার মাঝে মিশ্র এক অনুভূতি হলো— খারাপ লাগা, ভালো লাগা, চাপা কষ্ট, সংকোচ, বিষ্ময়। সাথে আবারও আম্মুর অভাববোধটা পীড়া দিতে শুরু করল ভেতরে। কান্নাগুলো জড়িয়ে আসে ভেতরে, নাকটা সামান্য লাল হয়ে উঠল খাবারটুকু মুখে নিয়ে। আগের মেঘালয়া হলে নিশ্চিত কেঁদে উঠে আনতারাকে ‘মামনি, মামনি’ বলে জড়িয়ে ধরত। তবে সেই মেঘালয়ার দিন ফুরিয়েছে, সে বিনষ্ট হয়ে সম্মুখে উঠে এসেছে আরেক মেঘালয়া। যে বাস্তবতা ও আঘাতগুলোকে খুব যতনে কোলে পিঠে বয়ে নিয়ে বাঁচতে শিখেছে। আনতারার প্রতি তার ক্ষোভ বা রাগ নেই। তবুও আজকাল চাইলেও আগের মতো আহ্লাদি আর সহজ হয়ে উঠতে পারে না তার সঙ্গে মেঘালয়া। সে একসময় বুঝেছিল, মা তো মা-ই। যা তার নেই। মায়ের মতো বলতে যা বোঝায়, তারা স্বার্থে টান লাগলে রূপ বদলে অচেনা হতে একদম সময় নেয় না।

কঠিন চিত্তে ভেতরকে সামলে ওপরে স্বাভাবিক ভাবে খাবারটুকু শেষ করল। আনতারা খানমও বিশেষ কথা বললেন না। খাওয়ানো শেষ করে বেরিয়ে গেলেন। এর মাঝে দু-একবার অবশ্য পানি খাবে কিনা– এ কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন মেঘালয়াকে। মেঘালয়া কেবল ঘাঁড় নেড়েছে।

ইরাজ গোসল সেরে বের হতে হতে যোহরের আজান শেষ হয়ে যায়। শুক্রবার, জুমার দিন। এমনিতেই তাড়াতাড়ি আজান দেয়। মেঘালয়া তুলনামূলক সুস্থতা বোধ করছে এখন আপাতত। তার শরীর নিয়ে সে নিজেই বিভ্রান্ত। কখন কেমন লাগে, ভালো থাকতে খারাপ হয়ে যায়, বোঝা যায় না। তবে এখন ঠিকঠাকই লাগছে বেশ। ইরাজ মাথা মুছতে মুছতে এসে মেঘালয়ার সামনে দাঁড়ায়। শরীরটা যেমন-তেমন, মেঘালয়ার পা ফুলে উঠেছে বেশ। সঙ্গে মেয়েটা মাঝেমধ্যেই শ্বাস-প্রশ্বাস জোরে নেয়। দেখলেই বোঝা যায়, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তবে তা বুঝতে না দেবার কি নিদারুণ প্রচেষ্টা মেঘালয়ার। ইরাজ এটা ধরতে পেরেছে এতদিনে, মেঘালয়ার যখন শরীর খারাপ লাগে, মুখটা হাসি হাসি রাখার চেষ্টা করে মেঘালয়া, ঘন ঘন হাসে, বেশ চঞ্চলতা দেখাতে চেষ্টা করে। ইরাজ মনে মনে এটা ভেবে হতাশ হয়, পাগলি মেয়ে! ইরাজের সম্মুখে নিজেকে লুকানোর কি বৃথা চেষ্টা! অথচ ইরাজ কিনা মুখস্ত করে রেখেছে বহু আগেই ওই বোকা, পুচকি মেঘালয়াকে।

আচমকা হালকা হাসল ইরাজ, তোয়ালেটা মৃদূ ভাবে ছুঁড়ে মারল মেঘালয়ার মুখের ওপর। মেঘালয়া কটমট করে তাকায়। এ কেমন অগোছালো ব্যাটাছেলে! কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই! ইরাজ তা দেখেও পরোয়া না করে বলে,

“চাবি-টাবি কোথায় রাখিস? যবে থেকে এসেছিস, রুমের স্ট্রাকচারই বদলে ফেলেছিস একদম! এবার একটা পাঞ্জাবী বের করে দে। আয়রন কোথায় রেখেছিস?ʼʼ

মেঘালয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, “পাঞ্জাবী?ʼʼ

“হু, আজ জুমার দিন তো!ʼʼ

মেঘালয়ার অবাক কণ্ঠস্বর, “নামায পড়তে যাবেন? আপনি?ʼʼ

ইরাজ গোমরা মুখে তাকাল, মেঘালয়ার কথা শুনে বলল, “উহ, তোকে পরিয়ে দেব। জুমার নামাযটা সেরে আসবি।ʼʼ

মেঘালয়া চোখ ছোটো ছোটো করে তাকায় ইরাজের দিকে। ইরাজ মুখ ফুলিয়ে একটা শ্বাস ফেলল। এগিয়ে এসে ধপ করে বসল মেঘালয়ার কাছে। সাফাই গাওয়ার মতো করে বলল, “আরেহ! তুই উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করবি, আর আমি উত্তর দিলেই দোষ?ʼʼ

মেঘালয়া নাক ফুলিয়ে বলে, “ইউ নো হোয়াট! আপনার জিহ্বায় সমস্যা আছে। সেখানে সোজা কথা বের হওয়ার ক্যাপাসিটিই নেই। আর জিহবার কি দোষ, যেখানে ঘাঁড়টাই জন্মের ত্যাড়া?ʼʼ

মেঘালয়াকে রেগে যেতে দেখে আকষ্মিক সামান্য হেসে ফেলল ইরাজ। বলল, “তুই যে এখন আমায় টিজ করলি? কেন আমি নামায পড়তে যেতে পারি না? সৃষ্টিকর্তা সব কেড়ে নিয়ে আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। যদিও, এত খুশি কতদিন সইবে ইরাজের কপালে, তা জানি না। তবে শুকরিয়া আদায় না করে যাই কোথায়? সঙ্গে আমার মেয়ের সুস্থতা কামনাও করে আসি এইসাথে।ʼʼ

মেঘালয়া বলে ওঠে, “মেয়ে কেন? ছেলেও হতে পারে। আর তাছাড়া ছেলে হলে আমি খুশি হব।ʼʼ

ইরাজ গম্ভীর হয়ে তাকাল। বলল, “তা কেন?ʼʼ

মেঘালয়ার মুখে মৃদূ মলিন হাসি ফুটে ওঠে, “আমার মেয়েও যদি আমার মতোই ভুল করে বসে জীবনে? ওর জীবনও নিশ্চয়ই আমার মতো দুর্বিসহ হয়ে উঠবে? ছেলেরা ভুল করে না। করলেও তাদের মেয়েদের মতো মূল্য দিতে হয় না। আর যদি এমন হয়, আম্মুর মতো আমিও…

ইরাজ থাবা দিয়ে ধরে মেঘালয়াকে। মেঘালয়া চমকে উঠে তাকায় ইরাজের দিকে। বিক্ষুব্ধ ইরাজকে দেখে ঢোক গিলল একটা। অশান্ত ইরাজ আচমকাই শান্ত নদীর মতো স্রোতহীন বহমান হয়ে উঠল যেন। মেঘালয়ার গালে হাত রাখল। নিভু স্বরে বলল, “ছেলে হলে হতে পারে না কি, সে ইরাজের মতো কোন এক মেঘকে ভালোবেসে ফেলার মতো ভুল করে বসল?ʼʼ

মেঘালয়া আস্তে করে ইরাজের বুকে মাথা রাখে। জড়ানো কণ্ঠে বলে, “আল্লাহর সিদ্ধান্তে খুশি আমি। জীবনের ওপর আর কোন অভিযোগ নেই আমার।ʼʼ

ইরাজ এক ঝটকায় নিজের অভিব্যাক্তি ও প্রসঙ্গ দুটোই বদলে ফেলে, “ভালোই পেকে গেছিস? নিয়মিত হরলিকস খাচ্ছিস নাকি? ক’দিন আগেও তো হাত ধরে রাস্তা পার করতাম। আজকাল আমায় তোর জ্ঞান নিতে হচ্ছে! সবই কপাল!ʼʼ

মেঘালয়া ইরাজকে মৃদূ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মুখ ভেঙ্চি কাটে। ইরাজ চট করে মেঘালয়ার মুখটা দু আঙুলে চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরাল। ঠোঁটের হাসি সরল না তার, ওভাবেই চিবিয়ে বলল, “তোর সাহস বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন?ʼʼ

মেঘালয়া দাঁত শক্ত করে কপাল জড়িয়ে তাকিয়ে আছে। ইরাজ আবার বলে, “এত সাহস কোথায় পাচ্ছিস? এদিকে তাকা, তুই তো খুব সাহসী হয়ে উঠেছিস, চোখে চোখ রাখ এবার।ʼʼ

মেঘালয়া ওভাবেই মুচকি হেসে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে চোখের দৃষ্টি নত করে ফেলল। ইরাজ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মেঘালয়া উঠে যেতে উদ্যেত হলে ইরাজ চেপে ধরল। বলল, “আমি বের করে নিচ্ছি, চাবি কোথায় রেখেছিস?ʼʼ

মেঘালয়া শুনল না। জোর করেই উঠতে যায়। ইরাজের মেজাজ বিগড়ে যায় নিমেষেই। মেঘালয়ার হাতটা চেপে ধরে টেনে বসায় মেঘালয়াকে। চোখ-মুখে ক্ষুব্ধ ভাব স্পষ্ট। মেঘালয়া অবাক হয়, ইরাজের এমন বহুরূপী আচরণে। এই একরকম তো চোখের পলকে পাল্টে অমানুষের পরিণত হয় ইরাজ। ইরাজ তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল, “তোকে নিষেধ করেছি না বেশি লাফালাফি করতে? আমায় কথায় মন লাগে না তোর? বলেছি সবসময় নিজের খেয়াল রেখে চলবি। খুব সাবধানে থাকবি। শরীরে একটু এদিক সেদিক যেন না হয়। আমার বাচ্চার কিছু হয়ে গেলে তোকে কি করব, আমি নিজেও জানি না।ʼʼ

মেঘালয়া বিষ্মিত নয়নে থমকে চমকে একাকার হয়ে চেয়ে রইল কেবল। সহসা ভেতরে একটা কথা খেলে গেল, তার কোন মূল্য নেই ইরাজের কাছে। সবটাই কী তাহলে বাচ্চার জন্য! মেঘালয়ার জন্য কিছুই না। আজও মেঘালয়া কেবল ইরাজের কাছে অপ্রয়োজনীয় এক ত্যাগকৃত বস্তু মাত্র! এ সময় একটু আধটু অসুস্থ তো সকলেই হয়। তাই বসে এত শ্বাসরোধী সাবধানতা কেন? আজকাল ইরাজের বহুমুখী আচরণে মেঘালয়া মাঝেমধ্যেই এই ধারণা করে বসে, ইরাজ মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। মানসিকতা সুস্থ নয় ইরাজের।

নিজেই ভাবনায় নিজেই পেচিয়ে যায় মেঘালয়া। ইরাজ কেন এমন অদ্ভুত! মাঝেমধ্যেই কি হয়ে যায় ইরাজের? এত এত রূপ দেখেছে ইরাজের সে প্রেগন্যান্সির পর থেকে। কখনও বিষন্ন, কখনও খুব আবেগী, কখনও পাগল, কখনও অমানুষের মতো বদমেজাজ আবার কখনও স্বাভাবিক ইরাজ। কী চলছে তার জীবনে? কী ঘটছে! সবকিছু ঠিক আছে? ইরাজ বেরিয়ে যায় নামাযের উদ্দেশ্যে। মেঘালয়া সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল একটা।

চলবে..

[ ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে