কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-৭৫

0
84

#কোনো_এক_শ্রাবণে [তৃতীয় অধ্যায়]
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(৭৫)
[অনেক উদ্ভট একটা পর্ব,টাইপিং মিস্টেকও প্রচুর]

বসার ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।সকাল হতেই পুরো বাড়ি কেমন ঈদ ঈদ আনন্দে মেতে উঠল।নবনীতা সকালে উঠেই রান্নাঘরে ছুটে গেল।রান্নার হাত তার অতো ভালো না,তবে আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে।এখন বেশ অবলীলায় মুখে তোলা যায়।

আফরোজা বেগমের সাথে তার সম্পর্ক স্থবির।খুব একটা উন্নতি হয় নি,আবার অবনতিও হয়নি।দু’জন দু’জনকে দেখামাত্রই মেকি হাসে।এটাই আপাতত তাদের সম্পর্কের সমীকরণ।তবে সারাহ-র সাথে নবনীতার সম্পর্কের কিছুটা উৎকর্ষ হয়েছে।কোনো এক অজানা কারণে মেয়েটা তাকে সম্মান করে।তাসনুভার সাথে তার কথা কাটাকাটি চলতে থাকে,কিন্তু নবনীতার সাথে সে কখনোই ওমন আচরণ করে না।নবনীতার মনে হলো মেয়েটা আসলে খারাপ না,কেবল গায়ে শহরের বাতাস লাগিয়ে নিজের স্বকীয়তা হারিয়েছে এই যা।শহরের চাকচিক্যে এসে মানিয়ে নেওয়ার নাম করে আসল সারাহ হারিয়ে গেছে।এই সারাহ নকল,পুরোটাই লোক দেখানো,এলিট শ্রেণির মানুষদের সাথে মেশার প্রয়োজনে নিজের অস্তিত্ব ছেড়ে বেরিয়ে আসা একটা মেকি চরিত্র।

নবনীতা রান্নাঘরে গিয়েই ক্লাচারের সাহায্য চুল বাঁধতে বাঁধতে বলল,’রোস্ট কি আপনিই করবেন ফুফু?’

আফরোজা বেগম ছোট করে জবাব দিলেন,’হু।’

নবনীতা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে।যাক বাঁচা গেছে।এসব ভারি রান্নার দায়িত্ব নিতে তার ভয় হয়।বাড়ির মানুষ খেলে অবশ্য সে এতোকিছু ভাবতো না।কিন্তু আজ বাড়িতে মেহমান আসছে।সুতরাং আজ এসব কঠিন রান্নায় হাত না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

সে টুকটাক কাজে সাহায্য করে সবার সকালের নাস্তার ব্যবস্থা করল।হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই সে কপাল চাপড়ায়।তারপর আবার ব্যস্ত গিন্নিদের মতো ছুটে যায় নিজের শোয়ার ঘরে।গিয়েই হন্তদন্ত হয়ে ডাকলো,’আরহাম!এ্যাই আরহাম।আপনার না মিটিং আছে সকালে?উঠুন উঠুন।আর কতো ঘুমুবেন?আমি তো ডাক দিতে ভুলেই গিয়েছি।’

আরহাম চোখ ডলতে ডলতে মুখের উপর থেকে চাদর সরালো।বিরক্ত মেজাজে বলল,’বাল আছে।এতো আগে সকাল কেমনে হয়?যাও তুমি।প্লিজ যাও।’
নবনীতা কোমরে হাত রেখে চোখ কটমট করে বলল,’নয়টা বাজে আরহাম।আপনি বলেছিলেন ছয়টায় ডাক দিতে।’

আরহাম ধড়ফড়িয়ে উঠল।নবনীতার দিকে বড় বড় চোখ করে বলল,’কি?কয়টা বাজে?’

‘নয়টা।নাইন ও ক্লক।’

আরহাম সাথে সাথে একটানে চাদর ফেলে তোয়ালে হাতে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো।যেতে যেতে চিৎকার করে উঠল,’তুমি আমায় এতোক্ষণে ডাকছো?আমার মিটিং আটটায় ছিলো।বালের ঘরনী হয়েছো তুমি।একটা কাজ ঠিক মতো পারো না।ধুর ছাতা।’

গোসল করতে করতেও সে মনের আশ মিটিয়ে গালমন্দ করল।বাথরুমের বেসিন থেকে শুরু করে কল,পুশ শাওয়ার,শাওয়ার,টাইলস-কেউ সেই দল থেকে বাদ পড়লো না।নবনীতা চাদর ভাঁজ করতে করতেই খিলখিল করে হেসে ফেলল।চাপা স্বরে বলল,’হয়েছে গালি দেওয়া?এবার দয়া করে গোসল শেষ করে অফিসে যান।’

আরহাম অফিসের জন্য বের হলো এক প্রকার দৌড়ে দৌড়ে।ব্যবসায় ইদানিং সে তার মনোযোগ বাড়িয়েছে।রাজনীতির দিক থেকে ব্যস্ততা সরে এসে সেটা ব্যবসায় গিয়ে যোগ হয়েছে।রোজ রোজ মিটিং,ট্রেইনিং অবজারভেশন,নতুন এম্পয়ি নিয়োগ,টাকা পয়সার হিসেব মেলাতে মেলাতেই তার সময় যায়।সে ব্যস্ত।খুব বেশি ব্যস্ত।যতখানি ব্যস্ত হলে মানুষ নিজের পাঁচ বছরের রাজনৈতিক জীবন বেমালুম ভুলে যায়,সে ঠিক ততখানি ব্যস্ত।

আরহাম বেরিয়ে যেতেই নবনীতা শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে চিত্রার ঘরে গেল।চিত্রা তখন গভীর ঘুমে।চাদরের বাইরে কেবল হাত দু’টো দেখা যাচ্ছে।নবনীতা এসে খাটের এক প্রান্তে বসলো।আলতো করে চিত্রাকে জড়িয়ে ধরে তার মুখের উপর থেকে চাদর টেনে তার গোল গোল গাল দু’টোতে দুইবার করে চুমু খেল।আদুরে স্বরে ডাকলো,’চিত্র! এ্যাই চিত্র।উঠো না পাখি।আজ তো স্কুলেও গেলে না।আর কতো ঘুমুবে?’

চিত্রা টেনে টেনে চোখ মেলার চেষ্টা করল।ঘুমু ঘুমু গলায় বলল,’আপাই! আরেকটু।’

নবনীতা একগাল হাসল।চিত্রাকে ছেড়ে উঠে যেতে নিলেই চিত্র হুড়মুড় করে তাকে জড়িয়ে ধরল।নবনীতার বুকে মুখ লুকাতে লুকাতে বলল,’আপাই! আরেকটু আদর করো।’

নবনীতার ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি খেলা করে।সে চিত্রাকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী হয়ে বলল,’আচ্ছা।করছি আদর।তুমিও আমাকে আদর করো।’

চিত্রা চোখ পাকিয়ে বলল,’আরশু যে তোমাকে এতো আদর করে,তোমার সেটাতে হয় না?’

‘না,হয় না।আমার সবার আদর লাগে।’

চিত্রা লজ্জা পেল কিছুটা।লজ্জায় মুখ নামিয়ে মিনমিন করে বলল,’আরহাম ভাইয়াকে বলো আদর দিতে।’

নবনীতা ফিক করে হেসে ফেলল।চিত্রার গাল টেনে টেনে বলল,’নাহ,আরহাম ভাইয়ার আদর দিয়ে কোনো কাজ হবে না।আমার বাচ্চাদের আদর ভালো লাগে না।বুড়ো মানুষের আদর না।’

‘আরহাম ভাই বুড়ো?’ চিত্র মুখ বাঁকা করে প্রশ্ন করল।

‘হ্যাঁ,বুড়োই তো।দেখলে না কালকে?দু’টো ইয়া বড়ো পাকা চুল পাওয়া গেছে তার মাথায়।’

‘তো পাকা চুল পাওয়া গেলেই বুড়ো হয়ে গেল?কতো সুন্দর আরহাম ভাই! একদম নায়কদের মতো।ঢিশুম ঢিশুম।’

নবনীতার হাসি পেল।সে একহাতে মুখ চেপে ধরল।চিত্রাকে রাগানোর জন্য বলল,’না না।তাকে আমার বুড়াই লাগে।আমি কতো সুন্দর অল্প বয়সী মেয়ে।আমার সাথে তাকে কোনোভাবে যায়?’

চিত্রা চোখ পাকায়,’তুমি অল্পবয়সী?’

নবনীতা মাথা নেড়ে বলল,’অবশ্যই।কোনো সন্দেহ?’

চিত্রা জানতে চাইলো,’তোমায় বয়স কতো?’

নবনীতা একটু ভাব ধরে বলল,’আমার বয়স ষোলো থেকে একটু বেশি।’

চিত্রা নাক ছিটকায়।বিক্ষিপ্ত মেজাজে বিড়বিড় করে,’বালের কথা।’

নবনীতার চোখ কপালে উঠল।সে একহাত মুখে চেপে বলল,’কি?কি বললি তুই?’

চিত্রা চাদর টেনে পুনরায় শুয়ে পড়ল।নবনীতা তখনো স্তব্ধ। হুশ ফিরতেই সাথে সাথে আরহামের নম্বরে ডায়াল করলো সে।আরহাম তখন গাড়িতে।ফোন ধরেই ব্যস্ত গলায় বলল,’হাই সেনোরিটা! কি চাই?’

‘আপনার মাথা চাই।’

‘আচ্ছা।বাড়ি ফিরলে নিয়ে নিও।’

নবনীতা বিরক্ত হলো।চটে যাওয়া মেজাজে বলল,’জানেন আজ কি হয়েছে?চিত্র আজ কি বলেছে জানেন?’

‘না তো।কি বলেছে?’

নবনীতা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,’সে আমার কথা শুনে বলেছে আমার কথা নাকি বালের কথা।চিন্তা করেন একবার।এই বয়সে সে কিসব বলছে।’

নবনীতা থামলো।আরহাম কিছু বলার আগেই পুনরায় নিজ থেকে বলল,’আরো চেঁচান সারা বাড়ি।আরো এমন গালি দেন দিন রাত।কয়দিন পর আরশুও এসবই বলবে।’

আরহাম লটকানো মুখে বলল,’তো এটা কি খারাপ কিছু নাকি?বাল মানে চুল।তোমার মাথায় চুল নাই?’

‘আপনি চুপ থাকেন।আমাকে গালি শেখানোর প্রয়োজন নাই।’

‘এটা কোনো গালি না।এটা আমার নিত্যদিনের সঙ্গী।’

নবনীতা হতাশ হয়ে মাথা নাড়ল।আরহাম অন্যপাশ থেকে তাড়াহুড়ো করে বলল,’অফিসে চলে এসেছি।রাখলাম ফোন।টাটা।লাভ ইউ।উম্মাহ।’

ব্রেক কষতে গিয়েই গাড়িটা অন্য একটা গাড়ির সাথে সামান্য ধাক্কা খেল।ওমনি আরহাম ভেতর থেকে চেঁচিয়ে উঠল,’ধুর বাল! দেখে ড্রাইভ করবে না মোতাহের?’
.
.
.
.
করিমুল সাহেব তীক্ষ্ণ চোখে সামনে থাকা ছেলেটাকে পরোখ করলেন।তার পরনে কালো রঙের শার্ট।সাথে নেভি ব্লুর জিন্স।চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো।হাতে একটা ঘড়ি ঝুলছে।চেহারায় অদ্ভুত রকমের শান্তভাব বিরাজ করছে।তাকে প্রথম দর্শনেই যে কারো পছন্দ হবে।সে নিরেট ভদ্রলোক।এতে কোনো খাঁদ নেই।

করিমুল সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন,’তোমার নাম যেন কি বললে?ভুলে গিয়েছি তো।’

সে দ্রুত জবাব দিলো,’জ্বী আমার নাম ইফাজ।পুরো নাম ইফতেখার আহমেদ ইফাজ।’

করিমুল সাহেব আর কিছু বললেন না।কেবল আস্তে করে দুইবার মাথা নাড়লেন।দুই দিন হয়েছে তারা আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছেন।দেশে আসতে হয়েছে এক প্রকার বাধ্য হয়ে।ছেলে মেয়ে দু’টো এমন খেয়ালখুশি মতো কাজ করবে,সেটা তিনি,তার ওয়াইফ,এমনকি আদির মা বাবা পর্যন্ত বুঝে নি।

আদি আর ইজমা দু’জনকে বিয়ে করবে,এটা মোটামুটি ঠিক করা ছিলো।তাদের এনগেজমেন্টও হয়েছিল।এর মাঝে দু’জন দেশেও এলো।মাঝখানে কি হয়েছে কে জানে,দু’জনই তাদের মত পাল্টে নিল।তারা সিদ্ধান্ত নিল তারা একজন অন্যজনকে বিয়ে করবে না।

এই খবর আমেরিকা পর্যন্ত যেতেই করিমুল সাহেবের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।এসব কেমন ছেলেমানুষী কথাবার্তা?বিয়ে করবে না মানে?বিয়ে কি কোনো ছেলেখেলা?এসব ছেলেমানুষীর বয়স কি আদি আর ইজমার আছে?

সবকিছু ঠিক মতো হজম করার আগেই ইজমা জানালো সে এই দেশের কোনো এক ছেলেকে পছন্দ করে।সে পেশায় একজন চিকিৎসক।ইজমা ঘোষণা দিয়েছে বিয়ে করলে সে ঐ ছেলেকেই করবে।কি আশ্চর্য! এগুলো কেমন ধরনের জেদ করিম সাহেব জানেন না।ঐদিকে আবার আদি ঘোষণা দিয়েছে সে তার বন্ধুর বোনকে বিয়ে করবে।এতোসব ঝামেলার ভেতর দুইজনের পরিবার বাধ্য হয়েছে দেশে ফিরে আসতে।দুই পরিবারই তাদের ছানা পোনাদের উপর ভীষণ রকমের বিরক্ত।

দেশে আসার পরেই করিম সাহেব আর জেসিয়া ইসলাম অস্থির হয়ে উঠলেন ইফাজের সাথে দেখা করার জন্য।আদি যেই মেয়েকে পছন্দ করেছে,ঐ মেয়েটা ভারি মিষ্টি।আদির বাবা মা পরের বিষয়,করিম আর জেসিয়া নিজেরাই প্রথম দেখায় তাকে পছন্দ করে নিয়েছে।এতো আদুরে একটা মেয়ে! জেসিয়া বললেন,’ইশশ! আমার যদি একটা ছেলে থাকতো,তবে এমন একটা বউ আমিও ঘরে তুলতাম।’

মেয়েটা ভারি মিশুক।জেসিয়া আর করিম প্রথম সাক্ষাৎেই তাকে পছন্দ করে নিয়েছে।মেয়েটা পরিপূর্ণ।একটা ত্রুটি অবশ্য আছে।সে নিজ থেকে হাঁটতে পারে না,তবে কেউ ধরে নিলে তারপর আবার অল্প অল্প চলতে পারে। ইদানিং তার অবস্থার ইম্প্রুভমেন্ট হচ্ছে।সে কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজ থেকে দাঁড়াতে পারছে।রাজিয়া তো তাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছে।জেসিয়াকে দেখিয়ে বলেছে,’তুমি জানো?তাসনুভার জন্মের পর আমি তিন নম্বরে তাকে কোলে নিয়েছিলাম?’

আদির জীবনসঙ্গী নিয়ে কারো কোনো আপত্তি বা সমস্যা কিছুই নেই।আদি যাকে বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে,তাকে অপছন্দ করার মতো কিছুই নেই।কিন্তু ইজমার পছন্দ নিয়ে করিম সাহেব তুষ্ট হতে পারলেন না।ইফাজ কে তিনি চেনেন না।ইফাজের হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দিতে তিনি ভরসা পান না।ইজমা তার একমাত্র সন্তান।তাকে নিয়ে তিনি ভীষণ সিরিয়াস।ইফাজকে এখন যথেষ্ট ভদ্রলোক মনে হচ্ছে,কিন্তু আগে গিয়ে সে কি হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।করিম সাহেবের দুশ্চিন্তা সেই জায়গাতেই।

আজ বিকেলে তিনি আর জেসিয়া একটা ক্যাফে তে গিয়েছিলেন ইফাজের সাথে দেখা করতে।ছেলেটা যথেষ্ট ভালো।জেসিয়ার তাকে ভালোই লেগেছে।তার মধ্যে একটা অমায়িক ভাব আছে।যে কোনো মানুষ প্রথম দেখাতে তাকে সুপুরুষ বলে আখ্যা দিবে।

তারা দু’জন আরো নানারকম প্রশ্ন করলেন।জানতে চাইলেন ইফাজের পরিবার সম্পর্কে,তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে।সে সামনে গিয়ে কি করতে চায় সেটাও জিজ্ঞেস করলেন।ইফাজ ভদ্রভাবে সবকিছুর জবাব দিলো।তার মনে হলো ভাইবা বোর্ডে যাওয়ার পরও তার অবস্থা এতো খারাপ হয় না,যতো খারাপ এখন হচ্ছে।ভয়ে,দুশ্চিন্তায় আর অস্থিরতায় তার হাত পা জমে যাচ্ছিল বারবার।

ক্যাফে থেকে বের হওয়ার পরেই সে পকেট থেকে মোবাইল বের করল।ইজমার এগারো টা মিসড কল।পাগল নাকি এই মেয়ে?জানে না ইফাজ এই অবস্থায় ফোন ধরতে পারবে না?সে কল ব্যাক করলো তৎক্ষনাৎ।ইজমা অস্থির হয়ে বলল,’এ্যাই এ্যাই! কি হলো?বাবা কি বলল?মা তোমায় দেখেছে?কথা হয়েছে ঠিক ভাবে?’

ইফাজ ক্লান্ত হয়ে বলল,’হয়েছে বাবা,হয়েছে।আর বেশি কিছু জানি না।’

‘কথা বলে কি মনে হয়েছে?রাজি তো?’

‘এতো কিছু জানি না।ফোন রাখো।’

‘তুমি এমন করে কথা বলছো কেন?বিয়ের আগেই এমন ব্যবহার শুরু করে দিয়েছো?’

ইফাজ হেসে ফেলল হুট করে।হাসতে হাসতেই বলল,’আরে বাবারে! এতো অভিমান নিয়ে থাকো কেমন করে তোমরা?আচ্ছা যাও সরি।’

ইজমা বাচ্চামো করে বলল,’আমাকে একটা চুমু খাও।’

ইফাজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,’কি?চুমু খাবো মানে?মাথার অ্যান্টেনা সব খুলে গেছে নাকি?’

‘হ্যাঁ,খুলে গেছে।তুমি চুমু খেয়ে সব ঠিক করে দাও।’

ইফাজ ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল,’শুনেন ম্যাডাম।আমি সারাজীবন আহাম্মকের মতো বই পড়ে পড়ে বড় হয়েছে।বই খাতার সাথে আমার সম্পর্ক,বন্ধুবান্ধবদের সাথে আমার সম্পর্কের চেয়েও বেশি গাঢ়।ওসব চুমু টুমু আমি বুঝি না।’

‘অদ্ভুত! চুমু টুমু না বুঝলে বিয়ে করছো কেন আমায়?সারাজীবন তাহলে বই খাতা নিয়েই থাকো যত্তোসব!’

ইফাজ হাসি চেপে রেখে বলল,’নাহ,তোমার থেকে শিখবো বলে আর নিজ থেকে শিখিনি।তুমি একটু চুমু দিয়ে দেখাও তো ফোনে কিভাবে চুমু খায়।’

***

আজিজ ভিলায় আজ অনেক অনেক তারার আসর জমেছে।ঐ তারা রা আকাশে থাকে না,বরং ধরণীতে থেকেই ধরণীকে সুন্দর করে দেয়।মরিচ বাতির হলদেটে রোশনাইয়ে পুরো বাড়ি ডুব দিলো ঝলমলে সৌন্দর্যে।বাড়ির আনাচে কানাচে শুধু কৃত্রিম আলোর ঝলকানি।সেই সাথে তাজা গোলাপ আর বেলির সুবাস।অনুষ্ঠানে সাধারনত গোলাপ,রাজনীগন্ধা আর গাদা ফুল দিয়ে বাড়ি সাজানো হয়।কিন্তু এই বাড়ির কর্তা শাহরিয়ার আরহাম বলেছে বাড়ি যেন অবশ্যই অবশ্যই বেলি ফুল দিয়ে সাজানো হয়।বেলি তার বোনের প্রিয় ফুল।বাড়িতে যা কিছু হবে,সব তার বোনের পছন্দ মোতাবেকই হবে।

আজ শেখ তাসনুভার গায়ে হলুদ।হাঁটি হাঁটি পা পা করে দুই ভাইয়ের হাত ধরে বড়ো হওয়া তাসনুভা আগামীকাল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে।এই দুইটা দিন তার জীবনে ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ।বিয়ে নিয়ে তাসনুভার অনেক আগ্রহ আকাঙ্ক্ষা ছিলো।কিন্তু যেই না তার বিয়ের দিন ধার্য করা হলো,অমনি তার মন খারাপ হয়ে গেল।বড় ভাইয়া আর ছোট ভাইয়াকে দেখলেই তার এখন কান্না পায়।কেন পায় সে নিজেও জানে না।

আরহাম সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে একবার তার ঘরে উঁকি দিলো।নবনীতা আর শুভ্রা তখন তাকে টিকলি পরাতে ব্যস্ত।আরহাম ধীর পায়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করল।হাঁটতে গিয়ে টের পেল,পদযুগল বারবার মাটির সাথে গেঁথে যাচ্ছে।সে ভারি গলায় ডাকলো,’তাস!’

মেয়েটা সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখল।তার চোখ আগে দেখেই ভেজা।ভাইয়াকে দেখামাত্র সে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ভেঙে কেঁদে ফেলল।আরহাম দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল।তাসনুভা হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,’করব না আমি বিয়ে।তুমি তাদের মানা করে দাও।’

বলেই সে আবারো দুইবার হেঁচকি তুলল।চিত্রা খাটে বসে মোবাইলে গেমস খেলছিলো।তাসনুভার কান্না শুনতেই সে একহাতে মুখ চেপে বলল,’তাস! তুমি কান্না করো আরশুর মতো?লজ্জা লজ্জা।এতো বড়ো হয়ে কেউ কান্না করে?আমার বিয়ে হলে আমি একদমই কাঁনতাম না।’

নবনীতা চোখ পাকিয়ে বলল,’সেটা কেন করবে তুমি?তুমি তো অকালেই পেকে গেছ।তোমার বিয়েতে তুমি পুরো বাড়ি নেচো,কেমন?’

আরহাম সুর মিলিয়ে বলল,’তোর কাঁনতে হবে না।তোর যা জিহবার জোর,পাত্রপক্ষ এমনিতেই আসর ছেড়ে উঠে পালাবে।বাপরে বাপরে! নূর আহমেদের এন্টিক পিস একটা!’

চিত্র ভেংচি কেটে বলল,’মিথ্যা কথা।আমার বিয়ে কোনো রাজকুমারের সাথেই হবে।’

‘হ্যাঁ হবে।গুলিস্তানের রাজকুমার তোকে বিয়ে করবে চিত্র।’
বলেই আরহাম খ্যাট খ্যাট করে কতোক্ষণ হাসল।

রিমি আর ওয়াজিদ বাড়িতে এলো সন্ধ্যার একটু পর পর।ওয়াজিদের কোলে ওয়াসিফ।চারিদিকের মানুষজনে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই।সে একমনে আঙুল খেয়ে যাচ্ছিল।নবনীতা তাকে দেখতেই এক দৌড়ে তার কাছে গেল।তাকে ছো মেরে নিজের কোলে নিয়ে চটপট দু’টো চুমু খেল।উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,’মাশাআল্লাহ! কি সুন্দর দেখাচ্ছে রে রিমি!চোখ দু’টো একদম ভাইয়ার মতো।’

রিমি মুখ ফুলিয়ে বলল,’চোখ?পুরো মানুষটাই হয়েছে বাবার কার্বন কপি।আমার কিচ্ছু পায়নি রে নবনী।খামোখা নয় মাস পেটে ধরলাম।’

নবনীতা চোখ রাঙিয়ে বলল,’কি ব্যাপার ওয়াসিফ?তুমি নাকি তোমার বাবার মতো হয়েছো দেখতে?এটা একদমই উচিত হয়নি।আমরা সবাই একটা ছোট্ট রিমি চেয়েছিলাম।’

আরহাম পাঞ্জাবির কলার ঠিক করতে করতে এগিয়ে আসলো।ওয়াসিফকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে ওয়াজিদের দিকে আড়চোখে তাকালো।বাঁকা হেসে দুষ্টুমি করে বলল,’তাতে কি হয়েছে?এটা ওয়াজিদের মতো হয়েছে।পরের টা রিমির মতো হবে।তাই না রে ওয়াজিদ?’

রিমি দুই হাত তুলে বলল,’থাক ভাইয়া।মাফ চাই।নয় মাসে যা ভোগান্তি ভুগিয়েছে,আমি আর এসবে নাই।আমার একটাতেই চলবে।’

নবনীতা আচমকাই অন্যমনস্ক হয়ে বলল,’তোর এই নয়মাসের ভোগান্তি আমাকে দিয়ে দে।আমি ভুগতে চাই জানিস।আল্লাহ আমাকে ভোগাচ্ছে না।’

মুহুর্তেই আনন্দমুখর পরিবেশে ভাটা পড়ল।ওয়াজিদ একবার কটমট চোখে রিমির দিকে তাকালো।এর মাথায় ঘিলু বলতে কিচ্ছু নেই।জানে নবনীতা এসব ব্যাপারে খুব সেনসিটিভ।তাহলে কোন আক্কেলে সে তার সামনে এসব কথা বলল?

সে পরিস্থিতি অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টায় গলা খাকারি দিয়ে বলল,’আরে নবনীতা।বিভাকে দেখো।দেখো কতো বড় হয়ে গেছে বিভা।’

নবনীতা চোখ সরাল।বিভা দাঁড়িয়েছিল ওয়াজিদের পাশে,তার একটা হাত ধরে।তাকে দেখতেই নবনীতার মুখ খুশিতে ছেয়ে গেল।কতো উজ্জ্বল হয়েছে বিভার গায়ের রং।কি সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে! পল্টনে সেদিন যেই জীর্ণশীর্ণ মেয়েটার সাথে তার দেখা হয়েছিল,সেই মেয়েটা এখন কতো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়েছে।তাকে আর রাস্তার ধাঁরে পড়ে থাকা এতিম মনে হচ্ছে না,তাকে মনে হচ্ছে আদর যত্নের মাঝে বড়ো হওয়া একটা আহ্লাদী বাচ্চা।

নবনীতা কপাল কুঁচকে বলল,’বিভু! তোর ভাই কোথায়?’

তৎক্ষনাৎ সদর দরজার সামনে থেকে একটা কিশোর নিরেট স্বরে বলল,’এই যে আপু! এখানে আমি।’

নবনীতা চোখ তুলল।দেখল সদর দরজায় শাহাদাত দাঁড়িয়ে আছে।তার পরনে কালো পাঞ্জাবি।গলায় ঝুলছে ক্যাননের একটা দামি ক্যামেরা।আর ঠোঁটে লেপ্টে আছে অমায়িক হাসি।নবনীতা তাকে দেখতেই হা হয়ে গেল।শাহাদাত বড় বড় কদমে তার সামনে আসতেই সে অবাক হয়ে বলল,’শাহাদাত তুই এতো লম্বা হয়েছিস কবে?’

শাহাদাত বিনিময়ে কেবল একগাল হাসল।নবনীতা তার গলায় ঝুলানো ক্যামেরা টা দেখে বলল,’এসব আবার কি?’

শাহাদাত আগের মতোই হেসে বলল,’ক্যামেরা।আমি ফটোগ্রাফি করি,শখ আমার।’

সে একটু থামলো।হাসি মুখে বলল,’আমি একা আসিনি।আমার সাথে আরো একজনকে নিয়ে এসেছি।তোমরা কেউ কিছু মনে করবা না তো?’

নবনীতা মাথা নাড়ল।ব্যস্ত হয়ে বলল,’ছি ছি! কিছু মনে করব কেন?ডাকো না তাকে।বাইরে কেন রেখেছো?’

শাহাদাত পেছন ফিরে গলা উঁচু করে ডাকলো,’নওফেল ভাইয়া! ভেতরে আসো।’

নওফেল ছোট ছোট কদমে সামনে এসে দাঁড়ায়।তার মুখটা ভীষণ উদাস,চোখে নিদারুণ আক্ষেপ।তার কোনো ভাই বোন নাই।বাড়িতে সে একদম একা।অথচ এখানে তার তিনটা ভাই বোন আছে।নওফেল অনেক চাইতো তার সিবলিংস হোক।এই বাড়িতে তার দু’টো ভাই,একটা বোন আছে।নওফেলের খুব ইচ্ছে হয় তাদের সাথে মিশতে।

তাকে দেখতেই নবনীতার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল।সে একটা ঢোক গিলে একবার আরহাম,একবার নওফেলকে দেখে।আরহামের মুখোভঙ্গি বোঝা যাচ্ছে না।তাকে একদমই শান্ত দেখাচ্ছে।নবনীতার বুক ধড়ফড় করে।কখন জানি এই লোক কি করে কে জানে!

আরহাম হাত বাড়িয়ে গম্ভীর গলায় ডাকলো,’নওফেল! এদিকে এসো।’

নওফেল গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো।তার বুক দুরুদুরু করছে।সে কাছে আসতেই আরহাম স্থির চোখে কয়েক পলক তাকে দেখল।তারপর আচমকাই শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরল।

নবনীতা চমকে উঠে সেদিকে তাকায়।দ্রুত নিজের হাতে চিমটি কাটে।সে সি ঠিক দেখছে?আরহাম নওফেলকে জড়িয়ে ধরেছে?তাকে আরো বেশি অবাক করে দিয়ে আরহাম বলল,’শোনো নওফেল।তুমি এই বাড়িতে যখন খুশি আসতে পারো।তোমার আসা নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই আমার।আমার কথা জানি না,কিন্তু তাস তোমাকে খুব পছন্দ করে।তুমি মন চাইলেই এখানে আসতে পারো,আমাদের সাথে কথা বলতে পারো।তোমার পরিবার,বিশেষ করে তোমার মায়ের প্রসঙ্গ ব্যাতীত অন্য যেকোনো প্রসঙ্গে আমরা তোমার সাথে আড্ডা দিতে রাজি আছি।তুমি মন চাইলেই এই বাড়িতে আসতে পারো নওফেল।’

নওফেল প্রথম দুই মিনিট কোনো কথা বলতে পারল না।শেষে একটু ধাতস্থ হয়ে বলল,’আর আমি কি তোমাকে ভাইয়া ডাকতে পারি?’

আরহাম স্মিত হাসল।বলল,’হ্যাঁ,অবশ্যই পারো।’

নওফেল জড়ানো কন্ঠে বলল,’তুমি খুব ভালো।আমি বড় হয়ে তোমার মতো রাজনীতিবিদ হতে চাই।’

আরহাম তার কথা শুনেই শব্দ করে হেসে ফেলল।তাচ্ছিল্যেভরা কন্ঠে বলল,’আমি রাজনীতি করি না।ছেড়ে দিয়েছি আরো আগে।আর আমার মতো রাজনীতিবিদ হতেও যেও না।জেলের ভাত খাওয়া ছাড়া আর কিছুই কপালে জুটবে না।’
.
.
.
.
শুভ্রা কানের দুলটা ঠিকঠাক মতো পড়ার চেষ্টা করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।হঠাৎই কোথা থেকে একটা হাত এক টানে তাকে করিডোরের এক কোণায় নিয়ে আসলো।শুভ্রা চমকে গেলো ভীষণ।চোখ তুলে সামনে দেখতেই কপট রাগ দেখিয়ে বলল,’এসব হচ্ছে টা কি?যেখানে সেখানে এসব কি?’

আরিশ দায়সারাভাবে বলল,’এগুলা প্রেম।লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম।চোরের মতো প্রেম।’

‘আপনাকে কে বলেছে চোর হতে?যান নিচে যান।’

‘উহু এমন করো কেন তুমি?ভাবি ভাইয়ার সাথে এমন করে?’

শুভ্রা কটমট করে বলল,’আমি ভাবি না,আর আপনি ভাইয়া না।’

‘হয়েছে।ঐ একই।’

আরিশ মনোযোগ দিয়ে তার হাতে থাকা দুলটা দেখল।হাত বাড়িয়ে বলল,’দাও।আমি পরিয়ে দেই।’

শুভ্রা আঁতকে উঠে বলল,’পাগল নাকি?সরেন।দূরে যান।’

‘উফফ! তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন?’

‘আমি এমনই।’

‘ধুর ছাই।মুডটাই নষ্ট।’

আরিশ বিক্ষিপ্ত মেজাজে মুখ সরিয়ে নিলো।শুভ্রা কতোক্ষণ তার মুখটা দেখল।তারপর বিরক্ত ভঙ্গিতে তার হাতে থাকা দুলটা আরিশের হাতে গুজে দিয়ে তড়িঘড়ি করে বলল,’নিন,নিন।তাড়াতাড়ি পরিয়ে দিয়ে।পরিয়ে ধন্য করুন আমায়।’

আরিশের মুখে সঙ্গে সঙ্গে হাসি ফুটলো।সে দাঁত কেলিয়ে বলল,’দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল।এজন্যই তো তোমাকে এতো ভালোবাসি।’

***

ইফাজ ভীষণ খচখচ করছিলো।ইজমা তার হাত ধরে টেনে বলল,’আরে চলো না।দাঁড়িয়ে আছো কেন?’

ইফাজ অপ্রস্তুত হয়ে বলল,’আমি না গেলে হয় না?প্লিজ ইজমা।আমার একটু আনকম্ফোর্টেবল লাগে এসব গ্যাদারিং।’

ইজমা বলল,’না হয় না।আসো তুমি আমার সাথে।’

ইফাজ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বাড়ির ভেতর পা রাখলো।বারবার মনে মনে আওড়াচ্ছিল,’নবনীতা যেন সামনে না পড়ে আল্লাহ।প্লিজ।’

তার প্রার্থনা বিফলে গেল।দুই মিনিট যেতে না যেতেই নবনীতার সাথে তার দেখা হয়ে গেল।দু’জন দু’জনকে দেখতেই কেমন থমকে গেল।

নবনীতা অপ্রস্তুত ভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল।ইজমা তাকে আগেই ইফাজের ব্যাপারে জানিয়েছে।দু’জন সামনে বিয়ে করবে।এমন অবস্থায় নবনীতার অস্বস্তি করার মতো কিছুই নেই।ইফাজের সাথে তার চ্যাপ্টার অনেক আগেই ক্লোজড।এখন আর এসব ঘেটে কোনো লাভ নেই।যা হচ্ছে সেটাকে স্বাভাবিক ভাবে হাসি মুখে মানিয়ে নেওয়াই বেটার অপশন।

ইফাজ দ্রুত চোখ নামিয়ে নিল।ইজমা বলল,’তোমাকে যে ছবি দেখিয়েছিলাম না?এটাই ইফাজ।’

নবনীতা জোরপূর্বক সামান্য হাসল।স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,’আসসালামু আলাইকুম ইফাজ।কেমন আছেন আপনি?’

ইফাজ একটা শ্বাস ছেড়ে বলল,’ভালো আছি।’

নবনীতা সেদিকে আর দেখল না।সে দেখল তাদের থেকে কয়েকহাত দূরে রুদ্রমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে।যার চোখে মুখে চূড়ান্ত রকমের রাগ আর ক্রোধ ঠিকরে ঠিকরে পড়ছে।সে তার দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে হনহনিয়ে সিঁড়ির দিকে হেঁটে গেল।নবনীতা ছুটলো তার পিছু পিছু।পেছন ডেকে বলল,’আরহাম,আরহাম।শুনেন আমার কথা।’

সে শুনলো না।গজরাতে গজরাতে বলল,’পারব না শুনতে।তুমি তোমার ইফাজের সাথে কথা বলো।শালা একটা দিন নিজেরা মিলে আনন্দ করতে পারি না।কোথা থেকে তোমার না হওয়া প্রেমিকরা এসে মন মেজাজ সব বিগড়ে দেয়।’

নবনীতা ফিক করে হেসে ফেলল।এক দৌড়ে গিয়ে আরহামকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,’আরহাম! মন খারাপ করে না।চলুন না।আমাদের না আজকে একসঙ্গে নাচ করার কথা?বাচ্চা গুলো কতো আশায় আছে আমাদের নাচ দেখবে বলে।’

***

নিচ তালায় খুব সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে।বাইরের মানুষ তেমন কাউকে ডাকা হয় নি।সব ঘরেরই মানুষ।তাসনুভা বসেছে স্টেজের একদম সামনে।পার্লার থেকে একটা মেয়ে এসে তার হাতে মেহেদি পড়াচ্ছে।

রিমি চটপটে স্বরে বলল,’এ্যাই আরিশ! নবনীতা আর আরহাম ভাইয়া কোথায়?দেখতে পাচ্ছি না কেন?’

আরিশ বলো,’আহা অপেক্ষা করো একটু।’

দশ মিনিট বাদেই বসার ঘরের সমস্ত বাতি নিভিয়ে কেবল ইভেন্ট অরগানাইজার দের আনা হলদে আলোর বাতি গুলো জ্বালানো হলো।স্নিগ্ধ সুন্দর কৃত্রিম আলোয় পুরো ঘর ভরে গেল।

এক দুই তিন।সাউন্ড বক্সে মাঝামাঝি ভলিউমে গান ছাড়া হলো।ঠিক তখন স্টেজে প্রবেশ করলো আরহাম।তার একহাতে চিত্রা,অন্য হাতে আরশাদ।আরিশ আর তাসনুভা তাকে দেখতেই তালি বাজালো।আরিশ শিশ বাজিয়ে বলল,’বড় ভাইয়া জিও।’

তাসনুভা বুকে হাত চেপে সামনের দৃশ্য টুকু দেখে।সে আজ আবদার করেছিল ভাইয়া আর ভাবি যেন তার গায়ে হলুদে একসাথে নাচ করে।আরহাম শুরুতে কতোক্ষন খ্যাক খ্যাক করেছে।পরে অবশ্য অনেক জোরাজুরির পর রাজি হয়েছে।তাসনুভা চাপা কন্ঠে বলল,’আরিশ ভাইয়া! সব ভিডিও করো।আমি পরেও এগুলো দেখতে চাই।’

আরহাম টেনে টেনে পাঞ্জাবি ঠিক করল।স্টেজের এক পাশে একটা টুলের সাথে ঠেস দিয়ে বসে গালের নিচে একহাত রাখল।আরশাদ আর চিত্রাকে বসালো তার দুই পাশে।তারপর গানের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে তাদের দু’জনের দিকে দেখে জিজ্ঞাসু হয়ে বলল,

Mujhko keya hua hein?
kiyu main kho gaya hu?
Pagal tha main pehle?
ya aab ho gaya hu?

ঠিক তখনই নবনীতা স্টেজে এলো।হাঁটু গেড়ে আরহামের মুখোমুখি বসে একহাতে তার চুল এলোমেলো করতে করতে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,’

Behki hein nigahain aur
bikhre hein bal
tumne banaya hain kya apna ya hal?

আরহাম উঠে দাঁড়িয়ে একটানে তাকে টেনে তুলল।নবনীতাকে ঘুরিয়ে এনে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দু’জন সমস্বরে গাইলো,’

koyi mil gaya
mera dil gaya
keya batau yaroon?
main to hil gaya
koyi mil gaya..
mil hi gaya….

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে