কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-৫১

0
103

#কোনো_এক_শ্রাবণে [তৃতীয় অধ্যায়]
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(৫১)

পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের পরীক্ষা নিয়ে শুভ্রানী খানিকটা দ্বিধায় ছিল।কয়েকটা অধ্যায়ে সে বেশ পটু।অন্য অধ্যায় গুলোতে কিছুটা কাঁচা।কিন্তু সেই তুলনায় তার পরীক্ষা বেশ ভালোই হয়েছে।সে হল থেকে বেরিয়েই কাঙ্ক্ষিত মানুষের খোঁজ করে।আশেপাশে কোথাও তাকে না দেখতেই সে কিছুটা আশাহত হয়।আরশাদের কি জ্বর হলো নাকি?নয়তো সে আসেনি কেন?

একটু সামনে যেতেই টয়োটার সেই কালো গাড়িটা তার সামনে এসে থামল।ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা ছেলেটা গ্লাস নামানোর আগেই শুভ্রা গোল গোল চোখ করে বলল,’আরিশ ভাইয়া! আপনি?’

আরিশ গাড়ির গ্লাস নামিয়ে তাকে দেখল।সাবলীল গলায় বলল,’পরীক্ষা কেমন হয়েছে শুভ্রা?’

‘জ্বী ভাইয়া।আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’

‘তোমার আপাই কে খুঁজছ?’

শুভ্রা নামিয়ে সামান্য লাজুক হয়ে বলল,’জ্বী ভাইয়া।রোজ রোজ আসে তো তাই।’

আরিশ নিজের সিটে বসেই সামনে ঝুকে গাড়ির দরজা খুলে নিরেট স্বরে বলল,’আজকে মনে হয় ভাইয়া আর ভাবি কোথাও গিয়েছে।তুমি গাড়িতে উঠো।আমি তোমায় ড্রপ করে দিচ্ছি।’

শুভ্রা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসল।কিছুক্ষণ খচখচ করার পর শেষে খানিকটা অধৈর্য হয়ে বলল,’আচ্ছা আপাই আর ভাইয়ার মধ্যে কি সব ঠিকঠাক আছে?’

আরিশ তার দিকে না ফিরেই সামনে দেখতে দেখতে নিরুদ্বেগ হয়ে বলল,’ঐ একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল বোধহয়।এখন সব ঠিকই আছে।’

শুভ্রা মাথা নামায়।কতোক্ষণ একদৃষ্টিতে নিজের কোল দেখে।তারপরই অন্যমনস্ক হয়ে বলে,’একটা কথা বলি?’

‘হু।বলো।’

‘লীগের ছেলেরা ইদানিং অতিরিক্ত করছে সবকিছুতে।আরহাম ভাইয়া তাদের সবকিছুতেই চুপচাপ থাকেন।না একটু ধমক দেন,না কিছু বলেন।তারা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে সবকিছুর।আজকেও একটা মেয়ের সাথে খুবই বাজে আচরণ করেছে।ভাইয়ার উচিত তাদের একটু শাসনে রাখা।ভাইয়া তাদের সবকিছুতে এতো ছাড় দিচ্ছেন কেন?’

আরিশ তার গাড়ির গতি কমালো।কমতে কমতে একসময় সেটা শূন্যে নেমে এলো।সে পাশ ফিরে একনজর শুভ্রাকে দেখে অতিশয় শান্ত গলায় বলল,’ভাইয়া একজন পলিটিক্যাল পারসন।অনেক ধরণের প্রটোকল মেনেই তাদের চলতে হয়।আমি জানি ভাইয়া যা করছে সেটা ঠিক না।কিন্তু কি করার আছে বলো?এই পেশায় সার্ভাইব করতে হলে এভাবেই করতে হবে।তুমি নিশ্চয়ই চাও না পরীক্ষায় কিছু কোয়েশচান ছেড়ে তোমার নম্বর কমাতে।তেমন ভাইয়াও চায়না কিছু কর্মী হারিয়ে নিজের দল হালকা করতে।একদম সহজ ইকুয়েশন।’

‘কিন্তু পাবলিকের মধ্যে এসব বিরূপ প্রভাব ফেলছে।ভাইয়া নির্বাচনের আগে বলেছিল যে নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাসে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।সেই কথা ভাইয়া রাখেনি।আমি অন্তত ভাইয়াকে সেরকম ভাবিনি।’

আরিশ একগাল হেসে স্টিয়ারিং ঘুরায়।পুনরায় গাড়ি চালু করতে করতে বলে,’এটা রাজনীতি শুভ্রা।স্বচ্ছ সুন্দর চিন্তাধারার মানুষ এই পেশায় এসে গায়ে কালি মাখায় না।আমার ভাইকে তুমি একটু বেশিই ভালো ভাবো।এতোটাও ভালো সে না।’

***

ইজমার হাতে দুইটা ফ্রেকচার হয়েছে।শুরুতে ব্যথা তেমন টের না পেলেও একটু সময় যেতে ব্যথা টা প্রকট থেকে প্রকটতর হলো।ইজমা সেই অসহনীয় ব্যথায় কতোক্ষণ গোঙাল।পুরো শরীর যন্ত্রনায় ভেঙে যাচ্ছে।মন চাইছে গলা ছেড়ে কতোক্ষণ কাঁদতে।

সে কোনোরকমে বলল,’আমার ফোনটা কি একদম ভেঙে গেছে?একটা কলও কি করা যাবে না?’

ইফাজ তার রিপোর্টে চোখ বুলাতে বুলাতে ছোট করে বলল,’না।আপনাকে যারা হসপিটালে এডমিট করিয়েছে,তারা কেউ আপনার ফোন সাথে আনে নি।’

‘এখন?বাসায় যোগাযোগ করব কীভাবে?’

‘একদিন অপেক্ষা করুন।আমি একটা ব্যবস্থা করছি।নাম কি আপনার?’

মেয়েটা পাংশুটে মুখে জবাব দেয়,’ইজমা বিনতে সাঈদ।’

‘ওয়েল।ইজমা! আপনাকে কিন্তু কিছুদিন হসপিটালেই থাকতে হবে।ইঞ্জুরিটা যথেষ্ট ডিপ।তাই আপাতত খুব জলদি রিলিজ দিতে পারছি না।বুঝছেন তো?’

ইজমা মাথা তুলে অধৈর্য হয়ে বলল,’এখানে থাকা নিয়ে সমস্যা না।কিন্তু আমি কাউকে কিছু জানাইনি।শুধু আম্মু আব্বু জানে।নয়তো দেশে কাউকে ইনফর্ম করিনি।’

‘ব্যাপার না।নম্বর বলুন।আমি যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি।’

ইজমা অতিশয় ক্ষীণ স্বরে জবাব দেয়,’নম্বর মুখস্থ নেই।মোবাইল থাকলে ভালো হতো।’

সে কিছুক্ষণ চুপ থাকে।হঠাৎই ভীষণ চঞ্চল হয়ে বলে,’আচ্ছা আপনি কি আমাকে আপনার ফোনটা একটু দিবেন?আমি আমার ফেসবুকে লগ ইন করে আমার ফ্রেন্ড কে একটা মেসেজ দিব।’

ইফাজ কতোক্ষণ ত্যাড়ছা চোখে তাকে দেখল।তারপরই নিজের মুঠোফোন টা পকেট থেকে বের করে তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নিচু স্বরে বলল,’জ্বী।আপনি লগ ইন করুন।’

___

‘তুমি এমন ফ্যাকাশে মুখ করে রেখেছ কেন?কি হয়েছে তোমার?’

তাসনুভা কদম গাছটার চূড়া থেকে চোখ সরিয়ে পাশ ফিরে।আদি,সে আর জীবন একটু আগে বাগানে এসেছে।তার বাগানে ঘুরাঘুরি করতে ভালো লাগে।প্রকৃতির সান্নিধ্যে মানুষের মন ভালো হয়।এ এক চিরন্তন সত্য।তাসনুভা প্রায় প্রতিদিনই বাগানে এসে এ’মাথা ঐ’মাথা ঘুরে বেড়ায়।অন্যসময় আদি অনেক রকমের কথা বলে তার মন ভালো করে দেয়।অথচ গত কয়েকদিন ধরে সে বেশ চুপচাপ,কিছুটা নির্লিপ্ত।সারাক্ষণ শুধু ফোনে ব্যস্ত।

তাসনুভার কথা কানে যেতেই আদি তার দিকে ফিরল।বিচলিত হয়ে বলল,’আমি একটি বিষয় নিয়ে খুব টেনসড।’

‘কি বিষয়?’

‘ইজমা গত তিনদিন যাবত আমার কল রিসিভ করছে না।আমার চিন্তা হচ্ছে তাকে নিয়ে।ওখানে সব ঠিক আছে নাকি সেটাও জানি না।’

তাসনুভা কপালে ভাঁজ ফেলে জানতে চাইল,’ইজমা কে?’

আদি আশ্চর্য হয়ে উত্তর দেয়,’তুমি জানো না ইজমা কে?ইজমা আমার ফ্রেন্ড।সবচেয়ে কাছের ফ্রেন্ড।উই আর এনগেজড।’

তাসনুভা ধিমি আওয়াজে বলল,’এনগেজড মানে?’

আদি তার কথার ধরন শুনেই একগাল হাসল।একটা হাত তার মাথায় রেখে হাসি হাসি মুখ করে বলল,’আরে বোকা,এনগেজড মানে বিয়ে ঠিক হয়েছে আমাদের।এই যে দেখো,আমাদের এনগেজমেন্ট রিং।’

বলেই সে একহাত উপরে তুলে তার অনামিকা দেখায়।তাসনুভা গোল গোল চোখে তার অনামিকা আঙুলের ভাঁজে থাকা খুবই সিম্পল ডায়মন্ড রিংটা দেখে।অবাক হয়ে বলে,’তার মানে ইজমা তোমার পারমানেন্ট গার্লফ্রেন্ড?’

‘ইসস! মোটেও না।ইজমাকে আমি সেভাবে কখনো দেখিই নাই।ক্যালিফোর্নিয়া তে থাকাকালীন আমরা একই ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট গ্রেডুয়েশন শেষ করেছি।ইজমা আমার দেখা সবচেয়ে সুইট মেয়েদের একজন।তাকে সেরকম গার্লফ্রেন্ড কিংবা টাইমপাসের মানুষ হিসবে আমি কোনোদিন দেখিই নাই।সে খুবই ভালো মেয়ে।কখনো পরিচয় হলে তবে বুঝতে।’

তাসনুভা একমনে তার কথা শুনে।তারপরই গালের নিচে হাত রেখে বলে,’তুমি তো তোমার হবু বউকে খুব পছন্দ করো দেখছি।’

আদি মাথা নামিয়ে স্মিত হাসল।একহাত তুলে নিজের চুলে আঙুল চালাতে চালাতে বলল,’আসলে ইজমার সাথে সেরকম বউ জামাই টাইপ ভাইবস এখনো পাই না।মানে শী ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড।কিন্তু তার সাথে বিয়ে,সংসার এসব ভাবলে আমার নিজেরই হাসি পায়।তার ক্ষেত্রেও সেম।আমরা নিজেরাই এসব নিয়ে খুব হাসাহাসি করি।কিন্তু আমার মনে হয় আমার জন্য ইজমাই পারফেক্ট।যেহেতু ভবিষ্যতে আমেরিকাতেই স্যাটেল হচ্ছি,সেহেতু এই দেশে আর মেয়ে খুঁজে লাভ নাই।সবদিক বিবেচনায় একমাত্র ইজমাই এমন একজন মেয়ে যে আমার সবকিছু সহ্য করে নিতে পারে।’

তাসনুভা অল্প হাসল।অথচ তার মনে হচ্ছে ভেতরে ভেতরে তার সূক্ষ্ম যন্ত্রণা হচ্ছে।কিসের যন্ত্রণা সে নিজেও জানে না।মনের অদ্ভুত অস্থিরতা কে পাত্তা না দিয়ে সে গাঢ় হেসে বলল,’ইজমা আপুর সাথে দেখা করতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার।তুমি যখন বলছ ভালো,তাহলে ভালোই হবে।’
.
.
.
.
ভার্সিটির গেইটে এসেই নিলয় একটা শুকনো ঢোক গিলে।তার ভেতরটা অজানা আতঙ্কে ধুক ধুক করছে।গেইটের সামনে আসলেই তার বুক ফেটে কান্না আসে।মনে হয় দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে।সে দুই হাতে নিজের ব্যাগের ফিতা খাঁমচে ধরে সামনের দিকে পা বাড়ায়।

ক্যাম্পাসের ভেতর কয়েক কদম সামনে যেতেই আপনাআপনি তার পা জোড়া থেমে গেল।তার থেকে সামান্য দূরে লীগের ছেলেপুলে সব দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে।তারা কেউ এখনো নিলয়কে দেখতে পায়নি।তারা ব্যস্ত নিজেদের আড্ডায়।নিলয় সিদ্ধান্ত নিল সে আজ উল্টো রাস্তা দিয়ে তিনগুন ঘুরে তারপর তার ডিপার্টমেন্টে যাবে,তবুও সে এই রাস্তা দিয়ে পার হবে না।সে রাস্তা পরিবর্তন করার জন্য পেছন ফিরতেই দূর থেকে আবির গলা ছেড়ে চেঁচায়,’এ্যাই মফিজ! এদিকে আয় তো।কোথায় যাচ্ছিস তুই?’

নিলয় বাধ্য ছেলের মতো পুনরায় পিঠ ঘুরিয়ে তাদের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।অতিশয় ক্ষীণ কন্ঠে বলে,’আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।’

আবির হাত নেড়ে তাকে নিজের কাছে ডাকল।নিলয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে।আবির তার নাগাল পেতেই তার চুলগুলো টেনে বলে,’বাহ! অনেক মজবুত চুল তো।দেখি তোর গাল মজবুত নাকি?’

কথা শেষ করেই সে ঠাটিয়ে তার গালে পর পর দু’টো চড় বসায়।নিলয় পাথরের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে সেই চড় দু’টো সহ্য করে নেয়।মুখের উপর কিছু বলা বারণ।সহ্য করে নেওয়াই উত্তম।’

দ্বীপ পাশ থেকে উঁচু গলায় বলল,’দেখি আমাদের একটু গান শোনা তো নিলয়।তোর গানের গলা কেমন শুনি?’

নিলয় কাঁপা স্বরে বলল,’আমি গান গাইতে জানি না ভাই।’

‘ঐ শু’য়োর! মুখে মুখে কথা বলিস কেন?যেটা বলেছি ঐটা কর।গা গান।’

নিলয় কাঁপতে থাকা কন্ঠে কোনোরকম একটা গান গায়।দ্বীপ মুখ কুঁচকে বলল,’ধুর।তোর গলা কার্টুনের মতো।মজা পাইনি গান শুনে।আচ্ছা যাক,একটু নেচে দেখা এবার।’

‘ভাই!’ আঁতকে উঠে নিলয়।

জামান আলতো হাতে তার গালে আরেকটা চড় মেরে বলল,’এতো ভাই ভাই করছিস কেন?যেটা বলছি সেটা কর।নয়তো ডোজ আরো বাড়াবো।’

নিলয় মাথা নামিয়ে হাত পা নেড়ে কতোক্ষণ নাচল।লজ্জায় তার মাথা নামতে নামতে মাটির সাথে মিশে যাওয়ার জোগাড়।ক্যাম্পাসের প্রশস্ত রাস্তায় হেঁটে যাওয়া ছেলে মেয়েরা অবাক হয়ে তাকে দেখছে।তাদের চোখে বিস্ময়,আচরণে কিছুটা উপহাস।নিশ্চয়ই নিলয়কে এরা প্রতিবন্ধী ভাবছে।নিলয় টের পেল অপমানে তার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।মন চাইছে এক ছুটে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে।এই বিশ্ববিদ্যালয়,এই ক্যাম্পাস সবকিছু তার এখন অসহ্য লাগে।

সবকিছুর খপ্পর থেকে বেরিয়ে নিজের ডিপার্টমেন্ট পর্যন্ত আসতে তার আরো ঘন্টাখানেক লাগল।প্রথম ক্লাসটা কোনোরকম করার পরেই সে বেরিয়ে এলো।ক্লাসে তার মন বসছে না।একটু পর পর মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।ডিপার্টমেন্ট থেকে একটু সামনেই একটা পুকুর।সে গিয়ে পুকুরের পাশের পাকা জায়গায় বসল।পুকুরের পানির রং সবুজ।আচ্ছা পানি কি কখনো সবুজ হয়?ধুর না।পানি কেমন করে সবুজ হবে?পানিতে গাছের ছায়া পড়লে সেটা সবুজ দেখায়।নিলয় নিজের বুদ্ধিমত্তার উপর নিজেই কিছুক্ষণ হাসে।একটু সময় যেতেই পুনরায় সে হাসি মিলিয়ে যায়।সে বিষন্ন মুখে সামনে দেখে।

‘এ্যাই ছেলে!মন খারাপ?’

রিনরিনে মেয়েলি কন্ঠটি কানে যেতেই নিলয় চকিতে পেছন ফিরে।দেখে তার থেকে একটু দূরে একটা নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পরা মেয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।সে পেছন ফিরতেই মেয়েটা ছোট ছোট সাবধানী পা ফেলে তার দিকে এগিয়ে আসে।চোখ দিয়ে নিলয়ের পাশের জায়গাটা দেখিয়ে উৎসাহ নিয়ে বলে,’বসি আমি?’

নিলয় একটু সরে তার জন্য জায়গা করে দিলো।মেয়েটা জায়গা পেতেই চট করে সেখানে বসল।

‘তোমার মন খারাপ তাই না?’

অন্য পাশ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে মেয়েটা পুনরায় মলিন মুখ করে বলল,’আমি আসার সময় তোমাকে দেখেছি।আমার খুব খারাপ লেগেছে তোমার জন্য।তুমি মন খারাপ করো না।আল্লাহ তাদের বিচার করবে।তুমি তাদের জন্য নিজে কষ্ট পেও না।’

নিলয় মাথা তুলে তাকে দেখল।একটি চরম হতাশার দিনে মেয়েটির সামান্য সহানুভূতি তাকে আকাশ সমান প্রশান্তি এনে দিয়েছে।সে মুখে সামান্য হাসি ফুটিয়ে জানতে চাইল,’নাম কি তোমার?’

‘প্রভাতি রহমান।’

‘ফ্রেশার?’

‘জ্বী।’

‘কোন ডিপার্টমেন্ট?’

‘ইকনোমিক্স।’

‘ওহ।’

প্রভাতি সামান্য ঝুকে জানতে চাইল,’আপনি কি ফ্রেশার নাকি সিনিয়র?’

‘এক বছর সিনিয়র।’

‘সিনিয়র হয়েও এতো র‍্যাগ খাচ্ছেন কেন?’ চটপটে হয়ে জানতে চায় প্রভাতি।

নিলয় মাথা নিচু করেই ম্লান হাসে।উদাস গলায় জবাব দেয়,’আছে।অনেক ঘটনা আছে প্রভাতি।পরে কখনো বলব তোমায়।’
.
.
.
.
নবনীতা বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে শেষ একবার নিজের ব্যাগ চেক করে।নাহ,সবই নিয়েছে সে।যাওয়ার আগে সে পুনরায় তাসনুভার ঘরে উঁকি দেয়।আরশাদ আজকে তাসনুভার ঘরেই ঘুমুচ্ছ।নবনীতা কন্ঠ খাদে নামিয়ে ফিসফিস করে বলল,’তাস! আমি যাচ্ছি।আরশাদের ঘুম ভাঙলে রহিমা খালাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর কথা মনে করিয়ে দিও কেমন?’

তাসনুভা মিষ্টি হেসে একদিকে মাথা কাত করে জানায় সে মনে করিয়ে দিবে।নবনীতা আর দেরি করল না।তাড়াতাড়ি নিজের ভ্যানিটি ব্যাগটা হাতে নিয়ে বড় বড় পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।

____

নামকরা বোডিং স্কুলটা আজ বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট একটা দিনে স্কুল সাজানো হয়।আজ স্কুলের প্যারেন্স টিচার মিটিং।সেই উপলক্ষে পুরো স্কুল,বিশেষ করে অডিটোরিয়ামে ডেকোরেশন করা হয়েছে।

নবনীতার গাড়িটা সেখানে পৌঁছুল সকাল এগারোটার একটু পরে।স্কুলের সামনে আসতেই সে ব্যস্ত পায়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।তার পিছু পিছু দু’জন গার্ড নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায়।নবনীতা পেছন ফিরে একনজর তাদের দেখে,মনে করে নিজের জিপিএস অন করে।তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে হেঁটে যায়।এটা একটা জীবন হতে পারে?এতো রেস্ট্রিকশন,এতো সিকিউরিটি,এতো প্রটোকল! নবনীতা কি কোনো চোর নাকি?নাকি কোনো ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি?তাকে কেন এভাবে প্রতি মুহূর্তে জান হাতে নিয়ে বাঁচতে হবে?সে আর ঐসব নিয়ে ভাবল না।ভাবলে লাভ কিছু হয় না।উল্টো বিরক্ত লাগে।

ভিআইপি শব্দটা সম্ভবত আরহামের খুব প্রিয়।সে নিজেও সব জায়গায় ভিআইপি ট্রিটমেন্ট নেয়,নিজের বাড়ির লোকদেরও সেইরকম সুবিধার মধ্যেই রাখে।আজ যেমন সে নবনীতার জন্য আলাদা আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছে।সব গার্ডিয়ান বসেছে অডিটোরিয়ামে,অথচ নবনীতার জন্য আলাদা একটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রাখা হয়েছে।নবনীতা চুপচাপ সেখানে গিয়ে বসল।একটু পরেই দরজা থেকে রুমের ভেতর উঁকি দিলো একটা ছেলে।

নবনীতা তাকে দেখতেই প্রশস্ত হাসল।হাত নেড়ে বলল,’আরে শাহাদাত।এসো এসো।’

শাহাদাত মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে ভেতরে এলো।নবনীতা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তার কাঁধে একটা হাত রেখে বলল,’কেমন আছো ভাই?’

‘আমি ভালো আছি আপাই।তুমি?’

নবনীতা মুচকি হেসে বলল,’আমিও ভালো আছি।তবে তোমার মুখে শুদ্ধ ভাষা শুনে সেটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।’

শাহাদাত জবাবে কেবল দাঁত বের করে হাসে।তারপরই নিজ থেকে বলে,’সবাই এতো শুদ্ধ বলে এখানে,যে নিজের বলার ধরনটাই ভুলে গেছি।শুরুতে একমাস কষ্ট হয়েছে।এখন পারি সবকিছু গুছিয়ে বলতে।’

‘কিন্তু আমার তো এখন অশুদ্ধ বলা শাহাদাতের কথাই মনে পড়ছে।তোমাকে আর ধমক দিতে পারব না এটা ভেবেই কষ্ট হচ্ছে।’

কথা শেষেই দু’জন সমস্বরে হেসে ফেলল।নবনীতা শাহাদাতকে নিয়ে স্কুলের মাঠে কতোক্ষণ হাঁটলো।তার বোডিং স্কুলের দিনলিপি জানতে চাইলো।বারবার নবনীতা চোখ নামিয়ে ছেলেটার আচরণ পর্যবেক্ষণ করে।কতোটা বদলে গেছে এই ছেলে।কতো সুন্দর গুছিয়ে কথা বলছে! অথচ আগে সে একটা বাক্যেই একশোটা ভুল করত।

শাহাদাত কথার ফাঁকে বলল,’আপু,আমাদের সবার একজন সিনিয়র গাইড থাকে।যারা আমাদের চেয়ে কয়েক বছর বড়।কিন্তু এই বোডিং স্কুলেরই ছাত্র।আমারও একজন সিনিয়র গাইড আছে।তুমি দেখা করবে তার সাথে?’

নবনীতা দ্রুত উপরনিচ মাথা নাড়ে।
‘অবশ্যই দেখা করব।কোথায় তোমার গাইড?’

শাহাদাত তাকে তার থাকার ভবনটিতে নিয়ে গেল।চারতালা পর্যন্ত উঠে একটা দরজায় আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলল,’ভাইয়া দরজা খুলো,আমি শাহাদাত।’

খটখট শব্দে দরজা খুলে একজন কিশোর বাইরে বেরিয়ে এলো।নবনীতা তাকে দেখেই প্রশস্ত হাসল।অথচ কালো সাদা চেকের শার্ট গায়ে জড়ানো ছেলেটা তাকে দেখেই কিছুটা ভড়কে গেল।নবনীতা ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইল,’তোমার নাম কি ভাই?’

ছেলেটা কিছুটা হচকচায়।তারপরই অত্যন্ত নিচু স্বরে জবাব দেয়,’আমার নাম নওফেল।’

‘বাহ! খুব সুন্দর নাম।তুমি নাকি শাহাদাতের গাইড?শাহাদাত কি তোমায় খুব জ্বালায়?’

‘জ্বী না।শাহাদাত খুব ভালো ছেলে।আমার তাকে খুব ভালো লাগে।’

‘শাহাদাতের এতো যত্ন করার জন্য তোমায় ধন্যবাদ নওফেল।’

নবনীতা সৌজন্যসূচক আরো কিছু কথা বলে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল।নওফেল আচমকাই তাকে পিছু ডাকল।নবনীতা ঘুরে দাঁড়াতেই সে দুই কদম এগিয়ে এসে বলল,’আপনার নাম নবনীতা।তাই না?’

নবনীতা খানিকটা বিস্মিত হয়ে জবাব দেয়,’হ্যাঁ।আমিই নবনীতা।কেন বলো তো?’

‘আরহাম ভাই তোমার বর তাই না?’

নবনীতা এবারো হাসল।মাথা নেড়ে বলল,’জ্বী।তোমাদের আরহাম ভাই আমার বর।’

‘আমি কিন্তু নেতা বলে তাকে আমার ভাই বলছি না।’

নবনীতা কপাল কুঁচকায়।
‘তাহলে?’

‘সে সত্যিই আমার ভাই।আমার আর তার মা একজনই।’

নবনীতা চোখ বড় বড় করে তাকে দেখে।কন্ঠ স্বাভাবিক রেখে বলে,’তুমি ফাহাদের চাচাতো ভাই?’

‘জ্বী।আমিই সে যাকে আরহাম ভাই কোনো দোষ না করা স্বত্বেও দুই চোখে দেখতে পারে না।’

‘আর তুমি?তুমি তাকে দেখতে পারো?’

নওফেল আত্মবিশ্বাসী হয়ে জবাব দিলো,’অবশ্যই।আমি কেন তাকে দেখতে পারব না?তার জায়গা থেকে সে ঠিকই আছে।আমার তাকে ভালোই লাগে।সে যদি একটু ভালো করে আমার সাথে কথা বলতো,তাহলে আরো ভালো লাগতো।’

সে থামল।একটু বিরতি নিয়ে পুনরায় বলতে শুরু করল,’আসলে আমার কোনো সিবলিং নেই তো,তাই আমি ছোট থেকেই একা একা বড় হয়েছি।এসব ভাই বোন আমার খুব ভালো লাগে।একেবারে ১০০% আপন না হোক,তবুও তো তারা আমার আপনই।তুমি আরহাম ভাইকে বলবে আমার সাথে রাগ না করতে।আমার তার প্রতি কোনো কষ্ট নেই।’

নবনীতা জবাবে কেবল একগাল হাসল।আরহাম কে সে বলবে,আর আরহাম সে কথা শুনবে।এমনটা কোনোদিন হয়েছে?আর এসব ব্যাপারে তো নবনীতা কিছু বলতেই পারে না।সে বলতে চায়ও না।এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাই ভালো।তবে নওফেলের ব্যাপারটা নিয়ে আসলে বলা যায়।কারণ নওফেলের এদিকে কোনো দোষ নেই।একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবলে যে কেউ বলতে বাধ্য সেও আরহাম,আরিশ আর তাসনুভার মতোই একজন ভুক্তভোগী।কিন্তু সমস্যা হলো আরহাম কোনোকিছু ঠান্ডা মাথায় ভাবে না।

নবনীতা তার ফোনের ডায়াল অপশন চেক করে।কি অদ্ভুত! এখনো কোনো ফোন দেয় নি তাকে?সে নিজে নিজেই বিড়বিড় করল,’করছে টা কি সে?এতোক্ষণে তো অন্তত একবার ফোন দেওয়ার কথা।’
.
.
.
.
ওয়াজিদ র’ক্তচক্ষু মেলে সামনে দেখে চেঁচিয়ে উঠে,’এসব কি আরহাম?অতিরিক্ত করছিস তুই।দোষ টা তামজিদের ছিল।’

আরহাম টিস্যু দিয়ে তার গলার কাছের ঘাম মুছে।দায়সারা হয়ে জবাব দেয়,’কার দোষ সেটা আমার দেখে কাজ কি?আমি কি কোনো বিচারক নাকি?’

রাজনীতির অঙ্গনে এক মুহূর্তের জন্যও ভালো থাকা দায়।এমনকি শান্তিতে যে একটা দিন পার করবে,তারও জো নেই।রোজ রোজ একটা না একটা ঝামেলা হতেই থাকে।আরহামকে অত্যন্ত অনৈতিক উপায়ে সেসব ঝামেলার সমাধান করতে হয়।

আজকের ঘটনা তামজিদকে নিয়ে।সে তার এলাকায় একটা ঝামেলা বাঁধিয়েছে।দোষ মূলত তারই।কিন্তু যেহেতু সে আরহামের অত্যন্ত কাছের,তাই আরহামের পাল্লা তার দিকেই ঝুকল।সে তামজিদকে একটা কটু কথা বলা তো দূর,উল্টা তার অন্যায়কে হাসতে হাসতে লাই দিলো।খামোখা এই ছেলেদের সাথে ঝামেলা বাধিয়ে কোনো লাভ নাই।দিনশেষে এরাই এক ডাকে আরহামের প্রয়োজনে ছুটে আসে।আরহাম নিজের দল হালকা করবে না।সে এতো সৎ হয়ে করবে টা কি?সে সৎ হলেও দেশের যা হবে,না হলেও তাই হবে।এর চেয়ে ভালো নিজের পিঠ বাঁচিয়ে চলা।পাওয়ার,ক্ষমতা,এসবই তো তার চাই।বাদ বাকি যা কিছু হোক,তার কি?সে তো ভালো আছে।এটাই মূল কথা।

ওয়াজিদ তার লাপরোয়া মুখটা দেখল।তারপরই নিজেকে সামলে গাম্ভীর্যপূর্ণ গলায় বলল,’আরহাম তুই যে ক্ষমতায় টিকতে এতো এতো অন্যায় করছিস,এটা যদি নবনীতা জানে?বিয়ের সময় তুই আমাকে বলেছিলি তুই শুধরে যাবি।এই তোর শুধরানোর নমুনা?’

আরহাম তার কথা শুনেই খেঁকিয়ে উঠল,’নবনীতা জানবে মানে?পরীকে এসব কে বলবে?এসব কি পরীর জানার জিনিস?পরী আমার ফ্যামিলি।ফ্যামিলি কে এসবে আনছিস কেন?আর সে জানলেই বা কি?আমি তাকে ভয় পাই নাকি?বিয়ের আগে সে দেখেনি সে কার সাথে বিয়ে করছে?’

‘না দেখেনি।কারণ বিয়ের আগে তোর এমন রূপ তুই তাকে দেখাসনি।ইভেন তুই কখনোই এমন ছিলি না আরহাম।ইউ আর গ্রেজুয়ালি চেঞ্জিং।তুই ইদানিং কেমন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছিস।কেমন পাষাণ পাষাণ।’

‘ভালো।খুব ভালো।আমাকে ভালো না লাগলে তুই আমার সাথে চলিস না।জোর করেছি নাকি তোকে আমি?আমাকে জ্ঞান দিতে আসবি না।তোর চেয়ে এসব আমি ভালোই বুঝি।আর খবরদার! পরীর কানে এসব কিছু ঢুকাবি না।পরীর আর আমার সংসারে ঝামেলা বাধাবি না।’

ওয়াজিদ আশ্চর্য হয়ে সামনে তাকায়।গোল গোল চোখ করে বলে,’হোয়াট?ঝামেলা বাধাবো না মানে?আমি তোর সংসারে ঝামেলা করি?’

‘করিস।তুই সেদিন পরীর কান ভরেছিস কোন মিজান না কি যেন নাম,তার ব্যাপারে।এই কাজ করবি না।এমনিতেও আমার সংসারে ঝামেলার শেষ নাই।তুই নতুন করে ঝামেলা করবি না বলে দিচ্ছি।’

ওয়াজিদ সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।আরহামের সাথে তার চোখাচোখি হতেই সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’তোর ভালোর জন্য বলেছিলাম।শিক্ষা হয়েছে।আর জীবনে তোর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলব না।আর কখনো তোর জীবন নিয়ে মাথা ঘামাবো না।থাক তুই তোর মতো।তোর এই অফিসে যেন আর কোনোদিন আমার পা না পড়ে।’

বলেই সে হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।সে যেতেই আরহাম নিজের মাথার চুল টেনে ধরল।নিজের উপর তার নিজেরই রাগ হচ্ছে।মাঝে মাঝে কথা বলার সময় সে ভুলেই যায় সামনের মানুষটা কে।ওয়াজিদের সাথে সে কোন আক্কেলে এভাবে কথা বলল?

তার ফোনটা সেই কখন থেকে বাজছে।মেজাজ একটু ঠান্ডা হতেই সে ফোনটা হাতে নেয়।বড় বড় করে দু’টো শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে।তারপরই কলটা রিসিভ করে গাঢ় স্বরে বলে,’হ্যালো ম্যাডাম।কাজ শেষ?’

‘জ্বী।মাত্র গাড়িতে উঠলাম।আপনি কি করছেন?’

‘আমি কাজ করছি।এখন একটু অবসর হলাম।’

‘আপনার কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?মন খারাপ?’

আরহাম ক্লান্ত ভঙ্গিতে হাসল।মাথার পেছনে একহাত রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,’হুম একটু খারাপ।বাড়ি এলে তুমি মন ভালো করে দিও।’

নবনীতা মোবাইলটা কানের সাথে চেপেই অল্প হাসে।মাথা নেড়ে বলে,’আমার মনও ভালো না।আমারটা কে ভালো করবে?’

‘অবশ্যই আমি।’
‘পরী।’

‘জ্বী।’

‘মিস করছি।’

‘আমিও।’

‘রাতে কথা হচ্ছে।টাটা।’

‘টাটা।’

আরহাম ফোন রেখে আবারো টেনে টেনে দু’টো শ্বাস নেয়।ধরা যাক তার সমস্ত কুকীর্তি পরী জেনে গেল।এরপর কি হবে?পরী একটু ঘ্যান ঘ্যান করবে।ব্যাপার না।সে সেটা সহ্য করে নিবে।পরীকে খুব সহজে ম্যানিপুলেট করা যায়।কিন্তু তাও যদি এসবে কাজ না হয়?তখন কি পরী তাকে ছেড়ে চলে যাবে?

আরহাম কল্পনা করতেই আঁতকে উঠে।না না,এটা সম্ভব না।পরী তাকে ভালোবাসে ভীষণ।আগে যতোবার পরী তার বিরোধিতা করেছে,তখন তো সে তার ভালোবাসার মানুষ ছিল না।এখন তো সে তার বর।পরী তো তাকে অসম্ভব ভালোবাসে।সে নিশ্চয়ই কোনোদিন তার মুখোমুখি এসে দাঁড়াবে না।এই সংসার,এই ভালোবাসা,এই আদর-যত্ন উপেক্ষা করার সাধ্যি কি পরীর আছে?আরহাম মানুষ হিসেবে না হয় খুব মন্দ।কিন্তু স্বামী হিসেবে তো সে নিজের ভেতর কোনো কমতি রাখে নি।পরী কোনোদিন তাকে কষ্ট দিবে না।দিতেই পারে না।পরী অমন মেয়েই না।সে খুব কোমল হৃদয়ের।আরহাম একবার তাকে জড়িয়ে ধরলেই তার সব রাগ পড়ে যাবে।আরহাম তো তার প্রিয়তম।সে জানে প্রিয়তম’র বিপরীতে এসে দাঁড়ানোর মতো কঠিন মন পরীর নেই।

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে