অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-৯+১০

0
565

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৯_১০
#বর্ষা

ইলিয়ানার জ্ঞান ফিরতে অবাক হয় সে।চারদেয়ালে ঘেরা সুন্দর রুম।জ্ঞান হারানোর আগে দেখা মানুষটির কথা মনে পড়তেই দ্রুত শয্যা ত্যাগ করে উঠে বসে সে।দশবছর পূর্বের সেই কালো রাত!বর আসছে,বর আসছে এমন টাইপ কিছু কথা।তবে বর আসার পূর্বেই পুলিশ এলো।এলো সাঁই সাঁই করে কয়েকটা বিশাল গাড়ি।সব বদলে গেলো। ইলিয়ানার মাথা ব্যথা করতে থাকে।

দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকায় ইলিয়ানা।ইলিয়ানার চেয়ে বয়সে বেশ যে বড় তা দেখেই আন্দাজ করা যায়।ইলিয়ানাকে বসা দেখে আনন্দ আপ্লুত হয়ে বলে,

—উঠে পড়েছিস ইলিয়ানা।যা ফ্রেশ হয়ে আয়।খেয়ে নে।

ইলিয়ানার অবাক হয়ে সব শুনছে।এত স্বাভাবিক ব্যবহার!কিভাবে সম্ভব!ইলিয়ানার অবাকতা কাঁটার পূর্বেই বাধ্য মেয়ের মতো ফ্রেশ হয়ে আসে সে। একসঙ্গে বেরিয়ে আসে রুমটা থেকে।ডাইনিং স্পেসে এসে অবাক হয়।অতি প্রিয় মুখ।চোখে ইলিয়ানার জল। তাদেরও চোখে জল।ইলিয়ানা ঠাঁই দাঁড়িয়ে তবে সামনে বসা মাঝবয়সী রমনী এসে বুকে জড়িয়ে ধরে ইলিয়ানাকে। চুম্বন করে।

—কেমন আছো সোনা?আপাই ভুলে গেছো!

কান্না মিশ্রিত কন্ঠে ইলমা আপু জিজ্ঞেস করে।ইলিয়ানাকে বেশ ভালো বাসে কিনা।কখনো তুই বলেও বলেছে কিনা তা ইলিয়ানার স্মরণে আসে না। রোবটের মতোই দাঁড়িয়ে সে।মস্তিষ্ক সাড়া দিচ্ছে না।

—এই ইলিয়ানা কথা বলো বোন।চুপ করে আছো কেন?ইলিয়ানা!

ইলমা আপুর স্নেহভরা কন্ঠস্বর ভাসতেই ইলিয়ানা ঢেকুড় তুলে কেঁদে ওঠে।সামনে খেলতে থাকা বাচ্চাগুলোর খেলাও বন্ধ হয়ে যায়।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কান্নারত রমনীর দিকে।ইলিয়ানা বলে,

—আপাই আমি কি খুব খারাপ প্রথমে তোমাদের থেকে দূর হলাম,এখন প্রিয় মানুষদের থেকে দূর হচ্ছি!ও আপাই বলো না আমি কি খুব খারাপ?

বোনের কান্নায় কেঁদে দেয় ইলমা। রায়হান সেখান থেকে সরে পড়েছে। বোনেদের কান্না যে সহ্য হচ্ছে না। রায়হানের স্ত্রী তমা মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে।মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস হয়তো তার নেই। কেননা তার দোষের কারণেই রায়হান ইলিয়ানাকে ভুল বুঝে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলো।আর তখনই সব এলোমেলো হয়ে গেলো।এখনও কেউ বুঝতে পারেনি কি থেকে কি হয়েছে!

—বোন দেখো‌ আপাই এইখানেই আছি।আমায় বলো কে কি বলেছে।ও বোন বলো না?

ইলমা কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করে।ইলিয়ানার ফাঁকা মস্তিষ্কে হঠাৎ মনে পড়ে তার বোন যে তার কষ্ট সহ্য করতে পারে না।সেই ছোট বেলায় মাথা ফেটে রক্ত পড়ায় সে যেখানে চুপ ছিল,সেখানে তার বোনটা অঝোরে কাঁদছিলো।শেষমেশ তো তাকে রেখেই যেতে হলো হসপিটালে ইলিয়ানাকে নিয়ে।ইলিয়ানা অতিরিক্ত প্রচেষ্টায় কান্না থামিয়ে ফেললেও বারবার বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো।আর ঢোক গিচ্ছিলো।

—আপাই নুকতা আর জোয়া কোথায়?

ইলিয়ানার কথায় নুকতা নামক বারো বছর বয়সী এগিয়ে আসে।আর দশ বছর বয়সী ছটফটে জোয়াও এগিয়ে এসে মা ইলমার পেছনে দাঁড়ায়।ইলিয়ানা নুকতাকে কাছে টেনে এনে ইলমার দিকে তাকিয়ে বলে,

—আপাই আমার নুকতা কত বড় হয়ে গেছে?কত ছোট রেখে গিয়েছিলাম।আমার বাবাটার বেড়ে ওঠা আমি দেখতে পারলাম।

ইলিয়ানার চোখ দিয়ে আবারো অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।পনেরোতে পা দেওয়া কিশোরী অবস্থায় তার মনে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণের ভুত চেপে ছিলো,তবে বিয়ে না করতে পারায় মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণের কথাই ওঠে না।তাইতো ভাগ্নেকে নিজের সন্তানের মতো খেয়াল করতো বাসায় আসলেই।আর ভাগ্নি জোয়াকে পেয়ে তো মা হয়ে ওঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে গিয়েছিলো।

—জোয়া মামনি কাছে আসো।আমি তোমাদের ইলিয়ানা মামনি।তোমরা আমায় চেনো না।

ইলিয়ানা নুকতা আর জোয়া দুজনের কপালে চুমু খায়।নুকতা যে লজ্জা পায় তা বোঝাই যায়।তবে ছটফটে জোয়া ইলিয়ানার পাশ ঘেঁষে গল্প করতে বসে।জোয়ার আচরণে ইলিয়ানা মায়ের আচরণ খুঁজে পায়।আম্মু যে বেঁচে নেই।তার জীবন এলোমেলো হওয়ার আগেই ইন্তেকাল করেছেন।

—রাহিদ,রায়দা তোমরা জোয়া আপু আর নুকতা ভাইয়াকে নিয়ে খেতে আসো।

তমা ভাবীর কথায় ইলিয়ানা সেদিকে তাকায়।ইলিয়ানা ভাবী শব্দটাকে ঘৃণা করতে এই রমনীর জন্য।তবে এমেলিকে পেয়ে সে বুঝতে পেরেছিলো ভাবী শব্দটার মাহাত্ম্য কত,ভাবী শব্দটা শুধুমাত্র কোনো শব্দ নয়।ভাবী তো এক অনুভুতি যা সবাই উপলব্ধি করতে পারে না!

বাচ্চারা চলে যেতে নিলেই ইলিয়ানার চোখ যায় আরো দু’টো বাচ্চার দিকে।ইলিয়ানা এদের চেনে না।তবে যতটুকু বুঝলো তাতে বোঝা যায়,এরা ওর ভাইয়ের সন্তান।আদর করে দেয়।ডাকতে বলে,পিপি। বাচ্চাগুলো লজ্জা পেয়ে দ্রুত সরে যায়।তমা ভাবী বাচ্চাদের খাবার দিয়ে এগিয়ে এসে ইলিয়ানার পাশে দাঁড়ায়। ইলিয়ানা সরে বসে। ছোটবেলার ভয় বলে কথা!

ইলিয়ানার এখন অবশ্য সেই স্মৃতিগুলো ধামাচাপা দিয়েছে।কেন রাখবে সে কুৎসিত স্মৃতি!তবে বাইরে সবাই এটা মনে করলেও স্মৃতি তো আর মুছে ফেলা যায় না। তাইতো মাঝেমাঝেই স্মৃতিতে ভাসে কালো সে অতীত।

—ইলিয়ানা ভাবীকে ক্ষমা করবে না!ভাবী তো মায়ের মতো ভাবীকে ক্ষমা করে দেও প্লিজ

তমা ভাবীর কথায় ইলিয়ানা সেদিকে তাকায়।মনে মনে সকলের অগোচরে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

”দয়া করে মা শব্দটা কুলসিত করো না।মা কখনো খারাপ হয়না।আর যারা খারাপ তারা কখনো মা হয় না। তুমি ভাবী হয়েও ভাবী নও। তুমি বদলে গেলেও অনুশোচনায় দগ্ধ হলেও আমার যে কিছুই করার নেই।মন যে বুঝবে না”

সকাল অতিক্রম হয় বোন আর ভাবীর যত্ন-আত্মীতে।এগারোটার দিকে রায়হান আহমেদ বাসায় আসে। বাচ্চাদের হাতে চিপস দিয়ে একটা চিপস হাতে নিয়ে বোনের দিকে এগিয়ে দেয়।রায়হান বেশ জানে তার বোন তার অস্তিত্ব টের পেয়েছে। কেননা সেই ছোট্ট থেকেই বোনটা তার উপস্থিতি টের পেতো।না হোক রক্তের,তবে আত্মা যে জোরানো।

ইলিয়ানা কিছুক্ষণ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে চিপসটা হাতে নেয়।সে উপলব্ধি করেছে তার ভাই আর ভাবীর সম্পর্কটা এতোটা জোড়ালো না।তবে কি এর পেছনেও কোনো ভাবে সে জড়ানো! ইলিয়ানা ভাবতে ভাবতে দেখতে পায় তার ভাবী রাগ দেখাচ্ছে তমা ভাবীকে।কারণ অতিক্ষুদ্র।তমা ভাবী পানি গরমে দিতে ভুলে গেছেন।তাই এই রাগ দেখানো।ইলিয়ানা প্রথমে জড়াতে না চাইলেই মাথা বিগড়ে যায় তার।

—বাচ্চাদের সামনে কি শুরু করছোস ভাইয়া?আর ভাবী নাহয় ভুলে গেছে একটু অপেক্ষা কর।পানি গরম হতে হতে কি বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে নাকি।আর একটা শব্দ যেন না শুনি!

রায়হান চুপ হয়ে যায়।বোনটা কি শেষমেশ তাকে ক্ষমা করলো।আবারো আম্মু থাকাকালীন সময়ের মতো অধিকার দেখিয়ে কথা বলছে। বোনটাকে হয়তো সে ফিরে পাচ্ছে।কালকে রাতে তো রায়হানের হৃৎস্পন্দন থেমেই গিয়েছিলো প্রায়। রাতে বোনকে এগিয়ে আনতেই ঢাকা গিয়েছিলো সে।মাঝরাস্তায় গাড়িতে সমস্যা হওয়ায় ড্রাইভারকে গাড়ি ঠিক করতে বলে রায়হান একটু এদিক ওদিক যায়।তখনই নজরে আসে একটা মেয়ে এলোমেলো আসছে আর পেছনে ট্রাক।ছুটে গিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলতেই মেয়েটা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অস্পষ্ট বলে,”ভাইয়া”

রায়হানের বুকটা ছ্যাত করে ওঠে। কেননা ওর বোনটাই তো ওকে এভাবে ডাকে।জ্ঞান হারাতে দেখেই পাগল প্রায় হয়ে বোনকে তার ফোনসহ কোলে নিয়ে গাড়ি অব্দি আসে।গাড়িও ঠিক হয়ে গেছে।ইলিয়ানার ফোন ইলিয়ানার ফিঙ্গার প্রিন্টে খুলতেই গ্যালারির পরিচয় দিয়ে সেভ করা ফোল্ডারে যেতেই চোখ আটকে যায়।ইলিয়ানা নামটাই বুঝিয়ে দেয় এ আর কেউ না বরং তাদের বোন।মুখের আদলে তাকিয়ে থেকে ইলমা আপু হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।

দুপুরে খাওয়ার টেবিলে ইলিয়ানা সহজ আচরণ করে।যেন কাল তার সাথে কিছুই হয়নি।এমনকি সে যেন এই পরিবারেরই সদস্য হয়ে বেড়ে উঠেছে।ইলিয়ানার সহজ আচরণ সকলের মনে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। বাচ্চাগুলোর সাথেও মিষ্টি এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

—আমি বিকালের দিকে ফিরবো।(ইলিয়ানা)

—কোথায় যাবি তুই?(রায়হান)

—কোথায় যাবে তুমি?(ইলমা)

—আপু আমি তো তোমাদের অতিথি মাত্র।আমাকেও যে ফিরতে হবে।আর আমি অলরেডি রিইউনিয়নে এসে অনেকটা সময় বাইরে কাটিয়েছি।তাই এখন আমাকে যেতে হবে(ইলিয়ানা)

—তুই আমার কাছে থাকতে চাস না এর মানে!

ইলমা আপু কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে।ইলিয়ানা ফেঁসে যায়।সে যে তার বোনটার দুঃখ সহ্য করতে পারে না।তবে হয়তো তার বোনটা তাকে একটু হলেও ভুলতে পেরেছিলো। তাইতো এসেছিলো ভাইয়ের বাড়ি। অবশ্য না আসার কি আছে।ভাইয়ের বাড়ি আসবে এটা তো স্বাভাবিক।আর স্পেন থেকে এখানে ভাইয়ের বাড়িতে এসেছে সে।তবুও ইলিয়ানা ইলমা আপুর মন রক্ষার্থে বলে,

—আপু আমি দুইদিন বাদে তোমাদের সাথে দেখা করতে আসবো।দুইদিন থেকে যাবো তোমাদের সাথে।তবে এখন যে যেতেই হবে।

—ভাইয়ার ওপর এখনো রেগে আছিস?

রায়হান ভাইয়ের কন্ঠে প্রবল আবেগ।ইলিয়ানা কারো ওপরেই রেগে নেই।আল্লাহ যা করেছেন ভালোই করেছেন।তবে খুব মনে পড়ে তার রায়হান ভাই আর ইলমা আপুকে।তারাই তো ইলিয়ানার দুনিয়া ছিলো।তবে এখন ইলিয়ানার দুনিয়া যে তার একমাত্র ভাই ইলিয়াস ভাই আর ডেড জুনায়েদ চৌধুরীকে ঘিরে।

—তোর ওপর রেগে থাকবো কেন ভাইয়া?

ইলমা মুচকি হেসে দেয়।বলে,

—দেখছো রায়হান,আমাদের ইলিয়ানা আবারো আগের মতো হয়ে গেছে। আমাদের ইয়াং মাফিয়া তার বারো বছরের বড় ভাইকে তুই করে বলছে।হি হি হি

স্কুল মাঠে ফিরে চমকায় ইলিয়ানা।চারপাশটা অনেকটা চুপচাপ।সবাই থেকেও যেন কেউ নেই।ইলিয়ানার পাশে কেস জুতো।রায়হান ভাই এনে দিয়েছিলো।কেন কাল রাতে সে খালি পায়ে ছিলো।আর রক্ত ঝড়ছিলো তার পা হতে।তাইতো কেস জুতোয় সুবিধা হবে।ব্যান্ডেজগুলোতে ময়লা যাবে না অন্তত।আর শীতের মাঝে পা ঘামার ব্যাপারটাও হবে না বলেই এই ধারণা।

—কি হয়েছে সবাই এতো চুপচাপ কেন?

ইলিয়ানা মাথা চেপে ধরে চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করে।মাথা ধরেছে তার অনেক। অতিরিক্ত চিন্তা করলে এমন একটু আকটু হয় তার।ইলিয়াস ভাই ভয়ে ইলিয়ানার মাথার চেকআপ করিয়েছিলো দেখতে যে বোন সুস্থ তো।তবে আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যা দেখা মেলেনি।

—কোথায় ছিলিস তুই?জানিস এদিকে কি কি হয়েছে?

মেহেরের কথায় কেয়ারলেস জবাব দেয় ইলিয়ানা।বলে,

—ছিলামই তো না।তাহলে জানবো কি করে!

—আহান স্যার তোকে পাগলের মতো খুঁজছিল।এখন ….(মেহের)

—আমাকে কি আরো‌ দুটো থাপ্পর মাড়তে খুঁজছিলো নাকি?

ইলিয়ানার কন্ঠে তাচ্ছিল্য প্রকাশ্য। হঠাৎ কেউ ইলিয়ানাকে টেনে ঘুরিয়ে নেয়।থাসিয়ে চড় লাগিয়ে দেয় আহান স্যার।ইলিয়ানা পড়ে যায়।পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পায়। ইলিয়ানার তাচ্ছিল্য হাসি প্রশস্ত হয়।

আহান স্যারের রাগ নিভে যায়।বসে হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইলিয়ানাকে।ইলিয়ানা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আহান স্যারকে। তাচ্ছিল্য হাসি বজায় রেখে বলে,

—যেই দেহ থেকে এখনো পরনারীর গন্ধ আসছে তাকে কি করে জড়িয়ে ধরা যায়!

আহান স্যার তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারেন না কথার মানে।তবে একেবারে অবুঝ তিনি নন।তাই মিনিট এক বাদেই বুঝে ফেলেন ইলিয়ানার বলা কথাটা।আহান স্যার ইলিয়ানা হাতটা আঁকড়ে ধরে বলেন,

—একটা মেয়ের ছবি দিয়ে তোমায় বলেছিলাম আগামী মাসে বিয়ে করছি তাও দশ বছর আগে। তুমি বিশ্বাস করে সরে গেলেও ঘন্টাদুয়েক বাদে আবার আমায় ম্যাসেজ দিয়েছিলে,কথা বলেছিলে।সেখানে তোমায় কিন্তু এও বলেছিলাম যে আমি তুমিহীন কোনো নারীর সাথে এতো কথা বলিনি।তাহলে তুমি ভাবলে কি করে যে আমি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করেছি!আরে পাগলী ওইটা আমার ভাগ্নি।তোমাকে জ্বালাতেই দিয়েছিলাম।তবে কাল ও ওর জামাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলো আমার সাথে।আর…

ইলিয়ানা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।লোকটা কি নিখুঁত অভিনেতা!ইলিয়ানার চোখে জল,মুখে হাসি।ইলিয়ানাকে কষ্ট দিয়ে বেশ শান্তি পেতো এই লোকটা তাই না!ইলিয়ানাও একটু শোধ তুলবে।

—জানেন তো মানুষের প্রতি আস্থা চলে গেলে তা আর আসে না। ভালোবাসা থাকলেও আসে না। ফিকে পড়ে যায়!(ইলিয়ানা)

—তোমার ভালোবাসা তো আমি চাই না।আমি তো তোমাকে চাই,চাই তোমার থেকে সময়।চাই তোমার সাথে পথ চলতে।(আহান)

—ভালোবাসাটা অবহেলায় অবহেলায় চাপা পড়েছে।আপনি সরুন আমি তাঁবুতে যাবো।আমার ভালো লাগছে না(ইলিয়ানা)

ইলিয়ানা চলে যায়। আহান স্যার ঠাঁই অসহায় দাঁড়িয়ে থাকে।সে তো তখন একটু সময়ের সন্ধানে চলে গিয়েছিলো।চাইনি প্রেয়সীসহ বাকি কাউকে অশ্রু দেখাতে।ইলিয়ানা তাঁবুতে এসে শুয়ে পড়ে।পাশ ফিরে দেখে অন্তরা শুয়ে শুয়ে ভিডিও কলে ছেলের সাথে গল্প করছে।ইলিয়ানা হাসে।

কিছুক্ষণ বাদেই ইলিয়ানার ফোনটা বেজে ওঠে।ম্যারিও ফোন দিয়েছে।ইলিয়ানার একসময়ের বেষ্ট ফ্রেন্ড তবে এখন আর নেই।ছেলেটা ওকে ভালোবাসে।এটা জানার পর সে আর স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারেনি ম্যারিও এর সাথে।ছেলেটা যে কথায় কথায় ইজহার করে নিজেকে।তবুও বন্ধুত্বের খাতিরে কল রিসিভ করে ইলিয়ানা।

—জেহের একবার কি কল দেওয়া‌ যায় না?(ম্যারিও)

—যায় না।(ইলিয়ানা)

—ইচ্ছে থাকলে সবাই সম্ভব কথাটা তুই বলেছিলি জেহের!(ম্যারিও)

—আমার যে ইচ্ছেটাই নেই।ম্যারিও জাস্ট ম্যারি এনি।সি লাভস ইউ ইয়ার।ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।মূল্যায়ন কর ওকে(ইলিয়ানা)

—আমি যে এনিকে নয় বরং তোকে ভালোবাসি।কি করে ওর ভালোবাসার মূল্যায়ন করবো বল?(ম্যারিও)

—তেমনি আমি তোকে নয় বরং অন্য কাউকে ভালোবাসি ম্যারিও।(ইলিয়ানা)

ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে অন্তরা।ছেলের সাথে কথার মাঝেও সে ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে।ইলিয়ানাও তাকায় অন্তরার দিকে।অন্তরা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। অন্তরা ইলিয়ানার দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব দেখেছে। ভালোবাসা কি মানুষকে অসহায় বানায়? প্রশ্ন জাগে অন্তরার হৃদয়ে!

চলব?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে