#প্রেম_প্রার্থনা
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
[১৯]
-‘হুম অবশ্যই। তবে তুমি যদি ত্যাড়া শাশুড়ী হও তবে আমিও ছ্যাচড়া জামাইয়ের রোল প্লো করতে বাধ্য হবো।’
একথায় জবাব দিলেন না মরিয়ম বেগম থমথমে মুখে বসে রইলেন। আর রুদ্র কাফির খোঁজ নিয়ে সামান্য কিছু খেয়ে উঠে পড়লো। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করা হলো মরিয়ম
বেগম রাতে স্পর্শীকে কাছে থাকবেন আর বড় মা থাকবেন দাদীমার কাছে। রুদ্র ওর বাবাকে ফ্ল্যাটে যেতে বললে উনি গেলেন না বরং পাশের আরেকটা কেবিন এক রাতের জন্য নিয়ে নিলেন। কারণ রুদ্রর কখন জরুরি কল আসে আর সে
কখন হুটহাট করে বেরিয়ে যায় তার ঠিক নেই। তখন চারটা মেয়ে একা একা কী করবে যদি কোনো প্রয়োজন হয় তখন?
আশিক সারাদিন এখানে থেকেছে অনেক কিছু করেছে ওই ছেলেটারও বিশ্রামের প্রয়োজন। সে নিজের ইচ্ছায় যতটুকু করেছে ওইটুকুই ঢের। তাছাড়া বাসার মেয়েদের হসপিটালে রেখে উনি ফ্ল্যাটে ঘুমাতে পারবে না বরং চিন্তায় অস্থির হয়ে
প্রেশার বাড়িয়ে ফেলবেন। তারপর কোনোমতে খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে যে যার বরাদ্দকৃত কেবিনে ঢুকে গেল। রুদ্র দাঁড়াতেই
স্পর্শীর সঙ্গে চোখাচোখি হলেও দু’জনেই নিশ্চুপ। নিজেদের অস্থিরতা নিজেরাই বুঝতে পারছে বোধহয় তাই মুখে কিছুই বলছে না। বিনিময়ে রুদ্র স্পর্শীকে একটুকরো হাসি উপহার দিয়ে কেবিনের সামনের চেয়ারে বসলো। সে যেতেই স্পর্শীর চোখ দিয়ে অঝরে অশ্রু ঝরে গেল। আজকাল তার মনটাও বে/ইমানী করছে।অপ্রিয় মানুষটাকে নিয়ে কেন এত ভাবে , কেন চিন্তা করে? তার অনুপস্থিতি কেন এত পীড়া দিচ্ছে সে বুঝে না। তার অনুপস্থিতি, মলিন মুখ, মলিন হাসি দেখে ওর মনে কেউ তার হৃদপিন্ডে হাজারটা সুঁচ ফুটিয়ে দেয়। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে র/ক্তাক্ত করে দেয় বক্ষপাশ। ভোঁতা অনুভূতি ঘুরঘুর করতে থাকে মনের আনাচে কানাচে। যেমন এই মুহূর্তে তার
মনে হচ্ছে, রুদ্র তার সঙ্গে থাকুক, বকুক, বকতে বকতে তার ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি এঁটে চোখে চোখে কথা বলুক। যতদিন যাচ্ছে সে অনুভব করছে, ছেলেটা তার অজান্তে তার মনের মধ্যে ঢুকে বসে আছে। এত গালি, এত রাগ-অভিমান করেও মনগহীনে তার প্রবেশ আঁটকানো সম্ভব হয় নি।এটা বৈধতার
জোর নাকি কে জানে! কিন্তু রুদ্রর চলে যাওয়া নিজেই সহ্য করতে পারছে না। মন চাচ্ছে চেঁচিয়ে বলতে, ‘ এই রুদ্র এই তুমি এখানেই থাকো। তোমার অনুপস্থিতি আমার অস্বস্তির কারণ । ‘
কিন্তু মুখে ফুটে বলা হলো না। রুদ্রকে চেয়ারে বসতে দেখে
তার বাবা কেবিনে ডাকলেও গেল না। সেখানে বসেই নিজের ভাবনায় মশগুল হয়ে রইল। একটুপরেই ফোন ভাইব্রেট হতে দেখে কল রিসিভ করে কানে ধরল। ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি এমন বলল সে শুনে কথা বলা অবস্থাতেই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল। এতক্ষণ মরিয়ম বেগম অপর পাশের বেডে বসে অস্বত্বিতে ভুগছিলেন। মুখে যত যাই বলুন মেয়ে জামাইকে বাইরে রেখে ঘুমাতে পারবেন না তিনি। দৃষ্টিকটুও লাগছে। তাছাড়া রুদ্রকে উনি ভীষণ ভালোবাসে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্যেই তো তখন রুদ্র আর তার উনার বাকবির্তকতায় কেউ কথা বাড়ায় নি। এসব ভেবে উনি বেশ
অস্বস্থি নিয়ে দরজা খুলতেই দেখেন রুদ্র ফোনে কথা বলতে বলতে দ্রুততার সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে। স্পশীর কাছে থাকতে চেয়ে ভুল কিছু করেন নি।এ ঘটনায় উনার রাগ আরো প্রকট হলো। আজ যদি উনি উপস্থিত না থাকতেন হয়তো স্পর্শীকে একা রেখেই বেরিয়ে যেতো। আজ সকালে যখন হসপিটালে পৌঁছেছিলেন তখনো রুদ্র ছিল না। কাফি আর আশিক বসে ছিল। তারা কেন থাকবে? স্পর্শী কি তাদের বউ নাকি তাদের দাদীমা? তারা থাকতে পারলে রুদ্র কেন থাকতে পারল না?
কিসের কাজ,কীসের রাজনীতি, যে কাজের বাহানায় আপদ বিপদে পাশে পাওয়া যায় না সেই কাজ করার কি দরকার?
আজ যদি স্পর্শী মারাও যেতো তখনো কী রুদ্র কাজে ডুবে থাকত? এর আগে রুদ্র কখনো তার দায়িত্ব পালনে অনিহা দেখায় নি বরং তাকে বলার আগেই প্রয়োজনী /অপ্রয়োজন
বুঝে ফেলতো। সেই প্রয়োজর অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালন করতো। অথচ সেই রুদ্রই বিয়ের পরপর দায়িত্বহীনের মতো কাজ করছে। যেটা মোটেও সুখকর কিছু বয়ে আনবে না।
তারপর মরিয়ম বেগম পুনরায় দরজা আঁটকে মেয়ের শিয়র ঘেষে বসলেন। রুদ্র চলে যাওয়ার পরে স্পর্শীর কান্না উনিও দেখেছেন। স্পর্শী চোখের পানি লুকাতে চোখের উপর হাত রেখে কম্পিত সুরে বলেছে, ‘আম্মু, চোখে খুব আলো লাগছে লাইটটা বন্ধ করে দাও।’ অথচ মেয়েটা অন্ধকার ভয় পায়, লাইট ছাড়া ঘুমাতে পারে না। নিজের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে
মরিয়ম বেগম মেয়ের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে, মাথা হাত বুলিয়ে
আস্তে করে পাশের বেডে শুয়ে পড়লেন। কিন্তু চোখ কেবল
বুজে এসেছে তখনই শুনতে পেলেন স্পর্শীর করুণ স্বর। চট করে উঠে দেখেন পেটের ব্যথায় ছটফট করছে স্পর্শী আর মা! মা! বলে পেট ধরে আর্তনাদ করছে।মেয়ের অবস্থা দেখে
মরিয়ম বেগম দৌড়ে গিয়ে নার্সকে ডেকে আনলেন। ডাক্তার
রিপোর্টে চোখ বুলিয়ে ইনজেকশন পুশ করলেন, দু’মিনিটের মাথায় স্পর্শী ঘুমে তলিয়ে গেল। ডাক্তার তাকে চোখে চোখে রাখতে বলে বেরিয়ে গেলেন আর মরিয়ম শিয়রে বসে আছে সারারাত পার করলেন। ফজরের আজান দিয়েছে কিছুক্ষণ হলো। ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটেছে। নামহীন পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জনমানব নেমে পড়েছে নিজ নিজ কর্মে। মরিয়ম বেগম নামাজ পড়ে দক্ষিণা জানালার পাশে এসে দাঁড়ালেন। কল দিলেন স্পর্শীর বাবার নাম্বারে।
স্পর্শীর বাবা সারারাতে কতবার যে মেয়ের খোঁজ নিয়েছেন তার ইয়াত্তা নেই। উনি যখন নামাজ পড়ছিলেন তখনও কল এসেছিল একবার। মেয়ে যা অবস্থা খোঁজ না পেলে দুঃচিন্তা করবে। কারণ স্পর্শী উনাদের দু’জনের কলিজা, প্রানপাখি।
বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন উনাদের মেয়ে। অথচ এই মেয়েকেই রুদ্র হেলা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। হসপিটালে যার তার ভরসায় রেখে চলে যাচ্ছে। এ ঘটনা নিজের চোখে
না দেখলে বিশ্বাসই করতে না রুদ্র এমন কান্ডজ্ঞানহীন, তার দ্বারা এমন কিছু ঘটতে পারো। এই কাজের জন্য উনি ফিরে গিয়েই একটা ব্যবস্থা করবেন,করবেনই করবেন।
অনেকক্ষণ ধরে এমন নানান চিন্তায় মশগুল মরিয়ম বেগম। একটুপরেই মেয়েকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাবেন। হয়তো রুদ্রর সঙ্গে দেখাও হবে না। তার কাছে কাজ আগে, কাজেই মজে থাকুক সে।উনি যখন নিজের ভাবনায় মশগুল তখন কেউ একজন দরজা নক করল।মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে উনি দ্রুত দরজা খুলতে এগিয়ে গেলেন। নতুবা নক করার শব্দ মেয়েটার ঘুম ভেঙে যেতে পারে। উনিদরজা খুলে দেখেন একজন মাঝ বয়সী মহিলা ঝাঁড়ু হাতে দাঁড়িয়ে আছে
, মূলত কেবিন ঝাঁড়ু দিতে এসেছে। ঘড়িতে তখন সাতটা দুই। মরিয়ম বেগম উনাকে নিঃশব্দে কাজ সারতে বলে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন। রুদ্র নেই, তারমানে সারারাত বাইরে কাটিয়েছি। এবার উনার ভেতর থেকে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে সত্যিই চিন্তা হচ্ছে। একটু বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিতে আরেকটু
সময় নিলে ভালো হতো। এতদিন ভেবেছিলেন রুদ্রর কাছে
সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্পর্শীর স্থান। আর যায় করুক স্পর্শীকে নিয়ে উনাদের আর চিন্তা করতে হবে না। এখন রুদ্র আছে, রুদ্রই সব সামলে নিবে। কিন্তু কে জানত রুদ্রই হবে উনাদের ভাবনা চিন্তার আরেকটা কারণ। যার কাছে সম্পর্কের চেয়ে রাজনীতি বড়। প্রিয় মানুষগুলো ম/রে পঁচে গলে যাক তবুও তার কাজ আগে। কেবিন ঝাঁড়ু দেওয়া হয়ে গেছে। মরিয়ম বেগম নার্সের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন বড় মাও দাদীমার কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন। স্পর্শীর হালচাল জিজ্ঞাসা করলেন। ততক্ষণে রুদ্রর বাবাও সকালের জন্য নাস্তা এনে
খাওয়ার তাগাদা দিলেন। দাদীমাকে সঙ্গে নিয়ে হালকা নাস্তা সারতেই নার্স এসে ওষুধ দিয়ে গেল। স্পর্শী ঘুম থেকে উঠলে উনারা বেরিয়ে পড়বে ঢাকার উদ্দেশ্যে। গতরাতে রুদ্র নিজে উনাদের এয়ার টিকিট কনফার্ম করে রেখেছে। উনারা খেয়ে
টুকটাক জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখলেন। সকাল আটটা বিশে
স্পর্শীর ঘুম ভাঙল। এদিক ওদিক তাকিয়ে একা একা উঠে মুখ ভার করে বসে রইল। মরিয়ম বেগম তাকে ফ্রেশ করিয়ে
নাস্তা খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলেন। তারপর ড্রেস বদলে নতুন একসেট থ্রি-পিস পরিয়ে দিলেন। থ্রি-পিস কোথা থেকে
এলো উনিও জানেন না তবে বেডের উপরেই ছিলো। হয়তো
স্পর্শীর বড় মা রেখে গেছে। এই মুহূর্তে অবান্তর চিন্তাভাবনা না করে উনি যত্ন করে মেয়ের চুল আঁচড়ে বেঁধে দিলেন। এর পর মেয়েকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হলেন। ততক্ষণে রুদ্রর
বাবা হসপিটালের বিল পরিশোধ করে চলে এসেছেন। স্পর্শী
ঘুরে ঘুরে বড়দের মুখে মুখে তাকাচ্ছে কেউ বলছে না কেন রুদ্র কোথায়? সে কি আসবে না? যাওয়ার আগেও দেখতে পাবে না অপ্রিয় মানুষের মুখখানা? ছলছল চোখে সে মাকে আঁকড়ে ধরে লিফটের দিকে পা বাড়াল। বহুকষ্টে তার কান্না আঁটকে রেখে নিচে নামতেই দেখে রুদ্র গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস। পরনে গতরাতের শার্ট প্যান্ট। সে একমণে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মুখ তুলে তাকাল ওদের দিকে। সানগ্লাস থাকায় বোঝা গেল না ঠিক কার মুখপানে তাকিয়ে আছে সে। তারা ধীরে ধীরে পা ফেলে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। রুদ্র গাড়ির দরজা খুলে
দিতেই সকলে একে একে উঠে বসলো। দাদীমা আপনমনে একা একা বকে চলেছে। গাড়ি চলছে এয়ারপোর্টের দিকে।
স্পর্শী তার মায়ের কাঁধে মাথা রেখে অপলক লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে। সারারাতের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে এভাবেই তাকিয়ে থেকে।
তারপর যথাসময়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামতেই
স্বজোরে গাড়ির দরজায় বারি খেলো স্পর্শী। ব্যথার চোটে চোখে পানি এসে গেছে। মরিয়ম বেগম মেয়ের ছটফটানি দেখে রেগে কিছু বলতেই রুদ্র বলল,
-‘তোমরা এগোও আমি ওকে নিয়ে আসছি।’
মরিয়ম বেগম কিছু বলার আগেই বড় মা উনাকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন। বড় বাবাও গেলেন উনাদের পিছু পিছু। রুদ্র গাড়ি লক করে স্পর্শীর দিকে কয়েকপল তাকিয়ে মন কেমন করা স্বরে বলল,
-‘পেট ব্যথা কমেছে?’
-‘কবে ফিরবে তুমি?’
-‘আর ফিরবো বলে মনে হয় না।’
-‘কেন?’
-‘কারণ ফেরার ইচ্ছে নেই।’
-‘ইচ্ছে না থাকলেও তুমি ফিরবে, ফিরতেই হবো।’
-‘কি করতে ফিরবো? তোদের মা মেয়ের রাগ ভাঙাতে? আর কাজ নেই আমার? আগে তুই ছিলি আমার বিপক্ষে এখন তোর মা যুক্ত হয়েছে। এতদিন তুই ঘ্যানর ঘ্যানর করে অন্তর আত্মা কয়লা করে দিয়েছিস এখন তোর মা বসে বসে সেই কয়লাতে বাতাস দিচ্ছে, যাতে ভস করে আগুন জ্বলে উঠে আমাকে ভ্যনিশ করতে পারে। রাগ, ক্ষোভ, মান-অভিমান শুধু তোদেরই আছে, আমার নেই? আমি মানুষ না? কষ্ট হয় না আমার?’
-‘আসলে…!’
-‘আসলে নকলের কৌফিয়ত চাই নি তোর থেকে। বাসায় গিয়ে নিজের খেয়াল রেখো তাহলেই হবে। আর যদি পারো, মাকে বুঝিয়ো উনার জামাতা দায়িত্ব জ্ঞানহীন নয়। দায়িত্ব এড়াতে না চাইলেও পরিস্থিতি সব সময় হাতে থাকে না। সব পরিস্থিতিতে নিজেকে জাহির করাও যায় না। আর গতরাতে
যতক্ষণ না কেবিনের দরজা বন্ধ হচ্ছিল ততক্ষণ সিঁড়ির দোর গোড়াতেই দাঁড়িয়ে ছিল উনার জামাতা। ইচ্ছে করেই আড়ালে ছিল, কারণ উনার জামাতা জানত উনি কি বলতে পারেন। তোর পেট ব্যথার খবর পেয়ে ছুটে এসেছিল তারপর রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটা অবধি কেবিনের সামনে বসে ছিলো তোর মায়ের জামাতা। একটুও চোখের আড়াল করে নি তোদের, দায়িত্ব ভুলে কাজে ডুবে থাকে নি, চিন্তায় অস্থির নির্ঘুম থেকেছি সারারাত। সবসময় মনমতো যুক্তি না বানিয়ে অপর পক্ষকেও কিছু বলার সুযোগ করে দিতে হয়।’
-‘সত্যিই ফিরবে না তুমি? তাহলে আমিও থেকে যাই?’
-‘তুই কেন থাকবি?’
-‘আমার অপ্রিয় কিছু থেকে যাচ্ছে তাই।’
একথা শুনে রুদ্র নির্লিপ্তভাবে তার দিকে তাকিয়ে রইল। ওর তাকানো দেখে স্পর্শী গলার সঙ্গে থুতনী লাগিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। ইশ! বেখেয়ালে মনের কথা মুখ ফঁসকে বলে ফেলেছে। বসেই যখন ফেলেছে কথা ফেরানোর মানেই হয় না।তাই অধির আগ্রহে রুদ্রর জবাব অপেক্ষায় রইল সে। কিন্তু সেকেন্ডের কাঁটা মিনিটের ঘরে পৌঁছালেও রুদ্রর থেকে জবাব না পেয়ে ছলছল করে উঠল তার নেত্রজোড়া। অজস্র অভিমানে ভরে উঠল অবুজ মন।জবাব পাবে না ভেবে যখন
পা বাড়াতে যাবে তখন রুদ্র বলে উঠল,
-‘স্পর্শী!’
-‘হুম।’
-‘পরশুরাতে ফিরবো। ‘
একথা শুনে স্পর্শীর ঠোঁটে হাসি ফুটলেও সে পেছনে ফিরে তাকালো না। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল এয়ারপোর্টের ভেতরে।
রুদ্র দ্রুত এগিয়ে এসে পাশাপাশি হাঁটতে থাকল দু’জন। তবে
কারো মুখে কথা নেই শুধু মনে আছে একটুকরো স্বস্থি। আর একখন্ড বেনামি সুক্ষ অনুভূতি। তারপর স্পর্শীদের বিদায় করে রুদ্র গেল বড় মামাদের নিজস্ব কবরস্থানে। এখানে ওর
মায়ের নিকট আত্নীয়দের দাফন করা হয়। যদিও বড় মামা প্রথমে রুমাকে এখানে দাফন দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন না। রাগে ফেটে পড়ে রুদ্রকে যাচ্ছে তাই বলেছেন। বিনিময়ে রুদ্র তার ফোনটা বের করে কাউকে কল করে বলেছে, ‘চা নাস্তার খরচ বাড়িয়ে দিবো ভিক্টমের যত্ন আত্তি বাড়িয়ে দিন।
এমন অবস্থা করবেন যাতে মা শব্দ উচ্চারণ করার শক্তি না থাকে।’
বড় মামার বুঝতে বাকি নেই ভিক্টম উনার আদরের মেয়েটা।
গতকাল মেয়েকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছেন।চোখ, মুখ, ফুলে আছে, গালে থাপ্পড়ের দাগ, নোংরা জায়গা, কেউ
নাকি একটু পানিও দেয় নি।উড়ো খবরে জেনেছে রুদাশাকে
রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ এসেছে। আর এ খবর শুনে খোঁজ
নিয়ে দেখে রুদাশা পূর্বের স্থানে নেই, তাকে কোথাও পাঠানো হয়েছে, এত সন্ধান করেও রুদাশার হদিস মিলছে না। রুদ্রর কাছে এত অনুরোধ করেও ছেলেটা মুখ খুলছে না। মেয়ের অবস্থার কথা ভেবে পরে বাধ্য হয়েই উনি অনুমতি দিলেন।
তারপর রুমার জানাযা এবং দাফন কার্য সম্পূর্ণ করা হলো।
দলে দলে মানুষরাও চলে গেল। কাফি দুই হাঁটু মুড়ে কবরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভাবছে তার রুমার সুখপূর্ণ খুনশুঁটির কথা। কথা ছিল ওরা কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না
অথচ রুমার করা পাপ রুমাকে ধ্বংস করে দিলো। কাফির কেন জানি খুবই জানতে করছে, ‘রুমা কি তাকে সত্যি সত্যি ভালোবেসেছিল নাকি সেটাও তার নিঁখুত অভিনয় ছিল?’
কাফিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে রুদ্র উঠালোও না কিছু বললোও না। এই পরিস্থিতিতে কারো কোনো বাণীতেই তার হৃদয় শান্ত হবে না, অন্তর জ্বলন কমবে না, যাকে দিয়ে হৃদয় শান্ত হবে, অন্তরের জ্বলাপোড়া কমবে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এরচেয়ে সে কিছুক্ষণ এভাবেই থাকুক, নিজেকে বুঝ দিতে সময় নিক তারপর সামলে উঠুক। অদূরে দাঁড়িয়ে কাফির দিকে তাকিয়ে যখন রুদ্র এসব ভাবছিল। তখন রামু
সেখানে উপস্থিত হলো। কাফির দিকে মায়া মায়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল,
-‘ভাবির জানাযা শ্যাষ হওয়ার সাতে সাতেই মাশুমরে কড়া ডোজের ইনজেকশন মাইরা দিসি। গাড়িতে কাত হইয়া পইড়া আছে। হেরে এখন কি করুম স্যার?’
-‘তুমি ওরে নিয়ে সোজা ওখানে চলে যাও। ঢাকায় ফিরে ওর ব্যবস্থা করা হবে।’
-‘তয় শালারে এইহানে আনলেন ক্যান স্যার? হেই তো পাক্কা
নেশাখোর। ছালা এত মার খাওয়ার পরেও কই, আমারে একটু হিরোইন দে ভাই, তোর পাও ধরি, মরার আগে একটু হিরোইন দে।’ হের নেশার প্যারা উঠছে মার তার গায়ে লাগে না, তার হিরোইন লাগবে।’
-‘মার গায়ে লাগে কী না আমার মুখোমুখি হলেই বুঝবে সে।
এখন তুমিও বেরিয়ে পড়ো আর পৌঁছে জানিও।’
-‘স্যার? অভয় দিলে আরেকখান কথা কইবার চাই।’
-‘বলো।’
-‘আপনার বড় মামা আপনার নানা নানীকে মাইরা ফেলাইছে ম্যাডামরে (রুদ্রর মাকে) কইতাছেন না ক্যান? হেই তো সত্য জানবার লাইগা পাগল হইয়া উঠছে। মারে আন্ধারে রাইখা
কতদিন সত্য লুকাইবেন স্যার? এডা কি ঠিক হইতাছে?আর
ম্যাডাম যেভাবে অপরাধীরে গরু খুঁজা খুঁইজা বেড়ায় সত্য কত্তদিন বা আড়াল করণ যাইবো?’
-‘জায়গা নিরাপদ নয় রামু।’
-‘জ্বে স্যার বুঝছি।’
তারপর রামু প্রস্থান করল। কাফি ততক্ষণে উঠে এসে রুদ্রর পাশে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ কি মনে কাফি বলল,
-‘এমিলি আপনার আর স্পর্শীর পিক ইডিট করে হাজিবাজি ভিডিও বানিয়েছে। আর বলেছে তার লোকদের না ছাড়লে ওইসব ভিডিও ভাইরাল করে দিবে। সামনে ভোট এইকাজ করলে…!”
-‘পৃথিবীতে দুই নারীর জাত ভীষন ভয়ংকর। এক মায়াবতী, দুই ছলনাময়ী। এদের কাজই হচ্ছে পুরুষদের ঘায়েল করা।
তবে এদের পার্থক্যও রয়েছে। জানো কি সেই পার্থক্য? এরা কেউ পুরুষদের হৃদয়ে ঢালে ইস্ক কেউবা ঢালে বিষ।’
To be continue………..!!