Monday, October 6, 2025







ধূসর রাঙা মেঘ_২ পর্ব-১৩+১৪

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

খাওয়া শেষে মেঘ সমশের চৌধুরী কে ওষুধ দিলো। সমশের চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,

“জীবনের এখনো অনেকটা পথ বাকি তোমার। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা তোমার সকল মনের আশা পূরণ করুক এবং তোমার ভাগ্যকে খুলে দিক।”

“আমিন দাদুভাই আমিন।”

সমশের চৌধুরী চলে গেলেন। আয়মান চৌধুরী আর মেঘ ওপরে চলে যেতে নিল তখন ধূসর বলল,,

“মেঘ!”

মেঘ বলল,,

“জি কিছু বলবেন?”

“তুমি তো খাওয়া শেষ করে ওষুধ খাওনি। এটা খাও ব্যাথা কমে যাবে।”

মেঘ ধূসরের হাত থেকে ওষুধ নিয়ে বলল,,

“শুকরিয়া!”

মেঘ ওষুধ খেয়ে হিরদের নিয়ে ওপরে চলে গেল। হুট করে হির বলল,,

“মেঘ তুই কিছু বলবি নাকি ঘুমাবো?”

‘না কিছু বলবো না। সব তোদের জানা। তোদের দুলাভাই ফোন দেবে তোরা ঘুমিয়ে পর।”

তখন লিয়া বলল,

“ধূসর ভাইয়া ফোন দেবে তোকে বলেছে?”

“না বলেনি তবে মনে হয় দেবে।’

তখনি মেঘের ফোন বেজে উঠলো মেঘ বলল,,

“দ্যাখেন মহাশয়ারা!

সবাই হাসলো মেঘ বেলকনিতে চলে গেল। তারপর ফোন দিয়ে বলল,,

“কিছু বলবেন?”

“ফোন ধরেই এটা কোন কথা হলো নাকি। প্রথমে সালাম দিতে হয় তারপর জিজ্ঞেস করতে হয় কেমন আছেন বা কি খবর তা না ধরেই কিছু বলবেন!”

“ওকে আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন ডক্টর? রাতে খাবার খেয়েছেন? আপনি কি হাসপাতালে নাকি বাড়িতে? ঘুমাবেন কখন?

সব শুনে ধূসর থ বনে গেল আর বলল,,

“মাফ করেন ম্যাডাম আমার ভুল হয়ে গেছে আপনাকে ওগুলো বলেছি বলে । যাই হোক ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

“হুম আমি জানি আপনি কিছু বলার জন্যই ফোন দিয়েছেন। তাই জিজ্ঞেস করলাম?”

“কিছু প্রশ্ন ছিল?”

“হুম করুন!”

“লোকটা তখন বলছিল কাশফিয়া আয়মান মেঘ বেঁচে আছে। এর মানে কি?”

“অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আমার উনি আর আমি দুজন ব্যক্তির অপকর্ম জানতে পারি। তখন পুরোপুরি লয়ার হইনি আমি। আমরা যে তাদের বিরুদ্ধে জেনে গেছি এমনকি পুলিশের কাছে তাদের তথ্য দেব এটা তারা জানতে পারে। তাই আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় আগে। তারপর আমার উনিকে ফোন দেয়। তিনি যেন সকল প্রমান দিয়ে তাদের হাতে দিয়ে আমাকে ফেরত নিয়ে আসে। আমার উনি যায় কিন্তু তারা আমাদের সাথে ছলনা করে । মূলত আমাদের দুজনকে একসাথে মারতে চেয়েছিল। তার সামনে আমাকে আঘাত করে এবং তাকেও আঘাত করে। তারপর একটা ঘরে আটকে রাখে ওরা ভাবে আমরা মরে গেছি। কিন্তু আব্বা আমাদের রক্ষা করে আমি ঠিক থাকলেও আমার উনি!!

এইটুকু বলেই মেঘের চোখ ছলছল করে। কি দৃশ্য ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। যতটা সহজভাবে মেঘ বলল তখনকার বিষয়টা মোটেও সহজ ছিল না। দুজনের শেষ কথা একজন আরেকজনকে নিয়ে বাঁচার আকাংখা। এদিকে সব শুনে ধূসরের মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে মেঘের বলা কথাগুলো ধূসর যেন দেখতে পাচ্ছে কিন্তু আবছা। ধূসর কোন রকমে নিজেকে শান্ত করে বলল,,

“তারমানে তোমার উনির সেখানেই ইতি হয় তাইতো।”

মেঘ ছোট করে বলল,,

“হুম!আপনি ঠিক আছেন ডক্টর?”

“হুম একটু মাথা ব্যথা করছে।”

“তাহলে শুয়ে পড়ুন আজ বেশ ধকল গেছে আপনার।”

“দাড়াও না নিষ্ঠুর মেয়ে আমার কথা শেষ হয় নি!”

“আপনিই তো বললেন আপনার মাথা ব্যাথা করছে।”

“আরে তেমন কিছু না ঐ একটু! তোমার সাথে কথা বললেই ভ্যানিস হয়ে যাবে। তুমি গান চালাতে শিখলে কবে।আর ফাইটিং সেটাও তো দেখলাম প্রফেশনালদের মতো।

“সে শিখেছিলাম কয়েক বছর আগে শখ করে কিন্তু এখন কাজে লেগে গেল আর কি। আসলে আমার ফাইটিং শেখার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই ওটা শখ করে শিখেছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে আব্বার ওপর অ্যাটাক হয় তারপর থেকে গান চালানো শিখেছি।”

“তোমাদের মনে হয় আগে থেকেই শত্রু আছে তাই না।”

“বিজনেস ম্যানদের আর রাজনীতিবিদ দের শত্রু সবসময় থাকে। এরা না চাইতেও এদের শত্রু হয়ে যায় আর কি। আচ্ছা সেসব কথা বাদ দিন। আর ভালো লাগছে না।

“আচ্ছা ঠিক আছে। আজকের চাঁদকে দেখেছো তুমি?”

“না এপাশ থেকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। তবে রাতের আকাশ দেখতে পাচ্ছি। হালকা অন্ধকার থাকলেও চাঁদের আলোয় এক বিশেষ সুন্দরতা দেখা যাচ্ছে।”

“রাত মানেই অদ্ভুত সুন্দর। তুমি কি বেলকনিতে?”

“হুম!”

“সেইজন্যই দেখতে পাচ্ছো না।”

“আর কিছু বলবেন?”

“শুনো মেয়ে খুব বেশি দিন বাকি নেই!
আমি অধিকার নিয়ে তোমার পাশে থাকবো,
তোমার সাথে চন্দ্রবিলাস করবো,
আমার শহরে তখন থাকবে
আমার একান্ত নিষ্ঠুর মেয়েটার বাস।

লাল গোলাপের সমারোহে,
লাল টুকটুকে শাড়ি পরে নবুবধুর বেশে,
সে আসবে আমার দেশে!
একান্ত আমার মেঘবালিকা হয়ে!

এমনি এক চাঁদ উঠার রাতে!
তোমার হাতে হাত রেখে,
এই আমি প্রেমবিলাশ করবো!
শুনো মেয়ে খুব বেশি দিন বাকি নেই!

ধূসরের কবিতায় মেঘের লজ্জা লাগলো। এ কেমন অদ্ভুত ভয়ঙ্কর অনুভূতি। ইচ্ছে করছে এখনই ধূসরের কাছে যেতে। মেঘ বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,,

“অনেক হয়েছে আল্লাহ হাফেজ!”

“আরে শুনো নিষ্ঠুর মেয়ে রাখছো কেন? কবিতাটা কেমন হলো বললে না তো।”

“ভয়ঙ্কর সুন্দর! রাখছি এখন!”

“আরে শুনো তো!”

মেঘ খট করে ফোনটা কেটে দিলো। আরেকটু কথা বললে হয়তো ধূসর ভালোবাসি বলেই দিতো। তাই তো মেঘ থামিয়ে দিল। অনুভূতি কন্ট্রোল করা ওর জন্য কঠিন হয়ে যেতো।মেঘ রুমে এসে দেখলো তার তিন বান্ধবী গালে হাত দিয়ে কিছু ভাবছে তা দেখে মেঘ বলল,,

“কি হয়েছে?”

তখন জাবিন বলল,,

“তুই এসে পরেছিস। আমরা ভাবলাম অর্ধেক রাত কাটিয়ে দিবি।”

“ধূর আমরা কি প্রেমের আলাপ করছিলাম নাকি।’

“প্রেমের আলাপ করো নাই বুঝলাম । কিন্তু ব্লাশিং মুডে কেন তুমি? তোমার মুখ আয়নায় দেখছো।”

মেঘ বুঝতে পারলো এরা ফাজলামো করছে। তবে ও যে সত্যি লজ্জা পেয়েছিল সেটা বুঝতে দেবে না। তাই বলল,

“অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পর এখন! আমিও ঘুমাবো।”

বলেই মেঘ একপাশে শুয়ে পড়লো। লিয়া লাইট বন্ধ করে সব বান্ধবী শুয়ে পড়লো হুট করে হির বলল,,

“আকাশ মাহমুদ আর নয়না নিশ্চয়ই জেনে গেছে মেঘ। তুই বেঁচে আছিস ওরা যদি কিছু করে আবার?”

“এখন কি করবে আমি কি আর একা আছি নাকি তোরা সবাই আছিস তো।’

“তবুও আমার ভয় হচ্ছে।”

“ভয় পাস না কিছু হবে না ঘুমিয়ে পর।”

সবাই ঘুমিয়ে পড়লো কিন্তু মেঘের চোখে ঘুম নেই। আজকের সবকিছু ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যদি ওর আব্বার আঘাত লাগতো। আকাশ মাহমুদ আর নয়নাও জেনে গেছে ও বেঁচে আছে। এখন সবাই ওর পেছনে আর ওর পরিবারের পেছনে লাগবে। তাছাড়া ধূসরের স্মৃতি নেই। এই মুহূর্তে একা সব সামলাবে কিভাবে? ভেবে ভেবেই ও ওর মাথা ধরছে।আজ কেন যেন ভয় ও হচ্ছে যা এতদিন হয় নি। এখন ও পুরোনো ধূসরকে খুব মিস করছে যে কিছু হলেই বলতো, মেঘবালিকা আমি আছি তো কিছুই হবে না আমরা সব সামলে নেব। মেঘ মনে মনে বলল,,

“আপনি ফিরে আসুন ধূসর , আপনার মেঘবালিকার আপনাকে ভিশন দরকার।”
___________________

অতঃপর আরেকটা নতুন দিনের সূচনা মেঘ আজ ফজরের আজান কানে যেতেই ঘুম ভেঙ্গেছে । মেঘ সবাইকে ডেকে ফজরের নামাজ আদায় করে নিল।ভোরে আলো ফুটতেই নিচে এলো। বাগানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলো একটু কথাবার্তা বললো। তারপর ভেতরে যেতেই দেখলো সবাই নিচে চলে এসেছে। মেঘকে দেখে আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“মেঘ আম্মা মুনের শ্বশুরবাড়ি যাবেন তো?”

‘না আব্বা যাবো না। আমার একটা কাজ আছে?”

“আচ্ছা ঠিক আছে। এহসানরাও যাবে না। মনে তো হচ্ছে নীলি কিংবা আপনার তিন বান্ধবীও যাবে না।”

“হ্যা ভালোবাবা আমরাও যাবো না।”

“আচ্ছা!”

মেঘরা ওপরে চলে গেল ব্রেকফাস্ট এর সময় ওরা নিচে নামলো। সবার খাওয়া দাওয়া শেষ যারা মুনের শ্বশুরবাড়ি যাবে না তারা বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছাবে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“এহসান ও বাড়িতে না গেলি। এখানে থেকে যা!”

“নারে সময় হবে না। তুই ধূসরকে বলতে পারিস।

ধূসর লিলিকে নিয়ে বসে আছে। আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“ধূসর তোমার ও কি?”

“আঙ্কেল আমারও কাজ আছে।”

তখনি চৌধুরী বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারে একটা ফোন আসলো। আজান ফোনটা ধরলো তারপর বলল,,

“মেঘ আপু তোমার ফোন ?”

মেঘ অবাক হয়ে বলল,,

“আমার ফোন তো আমার ফোনেই দিতে পারতো তাই না ।”

“তোমার নাম্বার নাকি তার কাছে নেই। কোনরকমে ল্যান্ডলাইন নাম্বার জোগাড় করেছে। তোমার সাথে ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে নাকি তাই বলবে?”

মেঘ ফোন কানে নিয়ে সালাম দিতেই বলল,,

“ইশশশ কতোদিন পর তোর আওয়াজ শুনলাম!”

“নয়না!”

“যাক চিনেছিস তাহলে শোন তোর সাথে কিছু কথা আছে আকাশের ব্যাপারে। বিশ্বাস কর আমি সেদিন কিছু করতে চাই নি সব আকাশ জোর করে কড়িয়েছে। শুনলাম তুই বেঁচে আছিস। আমি জানি তুই আকাশ কে শাস্তি দিতে পারবি। তাই তোকে ওর সববকথা বলে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবো। আমি তোর বাড়ির বাইরে গেটের সামনে আথি।”

“তুই কিভাবে জানলি আমি এখানে?”তাছাড়া আমি যদি না যাই তাহলে।”

“আমার কাছে সেদিনের প্রমান আছে সেগুলো দিতেই তোর কাছে এসেছি। বিশ্বাস কর আমার অন্য কোন মতলব নেই।

মেঘ যাবে কি যাবে না ভাবতে লাগলো। এই সকাল বেলা কিছু করবে বলে তো মনে হয় না আবার বিশ্বাস ও করতে পারছে না। কি করবে মেঘ বলে দিল ও বাইরে যাচ্ছে। মেঘ আয়মান চৌধুরীর কাছে এলো ওনাকে একটু দূরে নিয়ে সব জানালো। তিনি বলল ঠিক আছে তবে এলার্ট থাকতে। কিছু হলে গার্ড আছে বাইরে এখনো। আয়মান চৌধুরী ফোন করে দিলেন তাদের। মেঘ বাইরে চলে গেল মেঘকে যেতে দেখে কিছুক্ষণ পর ধূসর ও দরজার সামনে দাঁড়ালো ওখান থেকে মেঘকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেঘের কথা বলা শেষ হলে ও যাবে ওর সাথে কথা বলতে। ধূসরকে খুব খুশি লাগছে আজ। মেঘ দেখতে পেল গেটের সামনেই নয়না দাঁড়িয়ে আছে। নয়না বলল,,

“থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ তুই এসেছিস। আমি তো ভেবেছিলাম আসবিই না।’

“কি বলবি বল আর কি দিবি দিয়ে তাড়াতাড়ি যা নাহলে ??

মেঘ আর কিছু বলতে পারলো না। তার আগেই কেউ পেছন থেকে মেঘের মাথায় বারি মারলো। মেঘ পেছনে ঘুরতেই দেখলো আকাশ মাহমুদ হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর মেঘ একটু সামনে ঘুরতেই নয়না মেঘের পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে বলল,,

“তুই কিছুই করতে পারবি না। যে কাজটা সেদিন করতে পারি নি সেই কাজ টা আজ করলাম।”

সবকিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটলো যে কেউ কিছু বুঝতেই পারলো না। এই সবকিছুই ধূসর দেখলো প্রথমে বাড়ি মারাটা না দেখলেও ছুড়ি ঢুকানো টা ধূসর দেখেছে এই সিনটা ও আগেও দেখেছিল আজ যেন স্পষ্ট ও নিজের সর্বোচ্চ চিৎকার দিয়ে উঠলো “মেঘ!” তারপরেই দৌড় দিল। ধূসরের চিৎকারে ভেতরে বাহিরে থাকা সকলেই চমকে উঠলো। ততক্ষনে নয়না আরেকটা ছুড়ি বসিয়ে দিয়েছে। ওরা পালাতে যাবে এমন সময় আয়মান চৌধুরীর গার্ড রা ওদের ধরে ফেলল ওরা ভাবতেও পারে নি এভাবে ধরা পরে যাবে। ভেবেছিল বাড়ির বাইরে থেকে মেরেই চলে যাবে‌। কাল রাতে এটাই প্ল্যান করেছিল নিজেরাই মারবে তাই তো দু’জনে বাইক নিয়ে এসেছিল। মেঘ মাটিতে পড়ে গেল মেঘের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে ও নিভু নিভু চোখে দেখলো ধূসর দৌড়ে ওর দিকে আসছে। ধূসর এসেই মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর চিৎকার করে বলল,,

“মেঘ বালিকা কিছু হবে না তোমার। চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করো। কিছু হবে না তোমার আমি এখনি হাসপাতালে যাবো। ভাইয়া গাড়ি বের করো। কে কোথায় আছো কেউ গাড়ি নিয়ে আসো।

ধূসর মেঘকে কোলে তুলে নিলো। আর গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো। ধূসরের চিৎকারে সবাই বেরিয়ে এসেছে আয়মান চৌধুরী মেয়েকে এভাবে দেখে থমকে গেলেন। মেঘ হাত দিয়ে ধূসরের মুখে হাত রাখতেই ধূসর থেমে গেল। তখনি দিশান গাড়ি নিয়ে এলো। হির গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিল। ধূসর ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো হির আর লিয়াও উঠলো। দিশান যত দ্রুত পারছে গাড়ি চালাচ্ছে। মেঘের চোখ নিভু নিভু ও অদ্ভুত দৃষ্টিতে ধূসরকে দেখছে। ধূসর ওকে জড়িয়ে ধরে আছে ধূসর কান্না মাখা কন্ঠে বলল,,

“মেঘবালিকা খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।আরেকটু আমরা হাসপাতালে এসে পরেছি তুমি চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করো।”

মেঘ অনেক চেষ্টার পর ধূসরের মুখে হাত রাখলো। ধূসর ওর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো স্থির ভাবে। মেঘ কষ্ট করে বলল,,

“আপ,পনি সে ্সেদিন জানতে চেয়েছিলেন না আমার উনির এর নাম কি? আমার উনির নাম ধূসর এহসান শুভ্র। আপনি সেই ব্যক্তি ধূসর। আপনার নামে কতগুলো চিঠি আছে ধূসর আমার আলমারিতে ওগুলো পরে নিয়েন ধূসর।”

মেঘ আর কোন কথা বলতে পারলো না ওর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ওর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ধূসর বলল,,
মেঘবালিকা তোমার ধূসর তোমার কিছুই হতে দেবে না।

ততক্ষনে ওরা হাসপাতালে পৌঁছে গেল ধূসর মেঘকে কোলে নিয়ে ছুটলো ভেতরের দিকে‌। মেঘকে ভেতরে নিতেই ধূসর মেঘের প্রাথমিক কাজ ধূসর করলো। ততক্ষনে লেডি ডক্টরকে খুঁজতে বলল হিরদের। কিছুক্ষণ এর মধ্যে লেডি ডক্টর পেলে ধূসর বাইরে চলে আসে এতক্ষন ওর মেঘবালিকা কে দেখে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কিন্তু ওর মেঘবালিকাকেও তো সাপোর্ট দিতে হবে। ধূসর ধপ ওখানে থাকা বেঞ্চে বসে পড়লো দিশান তাড়াতাড়ি করে ভাইয়ের কাছে গেল। ধূসর কোন কথা বলছে না। এক দৃষ্টিতে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি চৌধুরী বাড়ির সকলে আর ধূসরদের পরিবার এলো। আয়মান চৌধুরী ধূসরের কাছে গিয়ে বলল,,

“ধূসর আমার মেয়ে?”

ধূসর এবার মাথা তুলে আয়মান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“চিন্তা করবেন না আব্বা। আপনার মেয়ে অনেক স্ট্রং ওর কিছুই হবে না। আমার মেঘবালিকা আমাকে ছেড়ে যেতেই পারে না।”

বলতে বলতে ধূসরের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। ধূসর আয়মান চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“আব্বা আপনার মেয়ে এত নিষ্ঠুর কেন? দেখেন না আজই আমার সব মনে পড়লো অথচ আপনার মেয়ে আজই আমার থেকে দূরে যেতে চাইছে। জানেন সেদিন ও বিবাহিত জানার পর ওর হাজবেন্ড এর কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম সেদিন ও বলে নি আব্বা। কিন্তু আজ যখন ওকে রক্তাত্ব অবস্থায় নিয়ে আসছিলাম। তখন আমার গালে হাত রেখে বলেছে আব্বা। আমার উনির নাম ধূসর এহসান শুভ্র। সেই ব্যক্তিটা আপনি ও নাকি আমাকে চিঠি লিখেছে কতোগুলো সেগুলো পরতে বলেছে আব্বা। আপনার মেয়েটা এমন কেন আব্বা?”

ধূসর বাচ্চাদের মতো শ্বশুরকে ধরে কেঁদে উঠলো। ধূসরের পরিবার বুঝতে পারল ধূসরের স্মৃতি ফিরে এসেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কেউ খুশি হতে পারছে না। মেঘের পরিবার অবাক তার মানে এই ধূসরই মেঘের হাজবেন্ড। কিন্তু ওদের জানালো না কেন? ধূসর কে কাঁদতে দেখে সকলেই অবাক। আয়মান চৌধুরীর চোখ দিয়ে পানি পরছে।এমনকি কেউ কোনদিন দেখেছে স্ত্রীর জন্য শ্বশুর কে জড়িয়ে ধরে কেউ কাঁদছে। কিন্তু ধূসর কাঁদছে তার অর্ধাঙ্গিনী তার মেঘবালিকার জন্য। আয়মান চৌধুরী ধূসরকে ছাড়িয়ে নিজের চোখ মুছে বলল,,

“তুমি না একটু আগে বললে আমার মেয়ে স্ট্রং ও তোমাকে ছেড়ে যেতেই পারে না। এমনকি আমি বলছি মেঘ ওর আব্বাকে ছেড়ে যেতেই পারে না কিছু হবে না মেঘের দেখো তুমি। আল্লাহ ভরসা। একদম কাঁদবে না। মেঘ সুস্থ হয়ে যখন জানতে পারবে তুমি আর আমি কেঁদেছি তাহলে কিন্তু রেগে যাবে। তুমি তো জানো আমাদের দুঃখ কষ্ট তার সহ্য হয় না।”

আয়মান চৌধুরীর কথা শুনে ধূসর চোখ মুছে ফেললো। এহসান খান ছেলের পাশে বসলেন। ধূসরের কাঁধে হাত রেখে সাহস দিলেন। ধূসর খুব শক্ত করে আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে রাখলো কারন সে জানে তার প্রিয়তমার আব্বার ভেতরে কি চলছে। আয়মান চৌধুরী ধূসরের দিকে তাকালো। দিশান আয়মান চৌধুরীর পাশে বসলো। আয়মান চৌধুরীর এরাই তো ভরসা সবাই যখন হাত ছেড়ে দিয়েছিল এই ওরাই তাকে কাঁধ দিয়েছিল আজ ও তাই। তখন একজন নার্স বলল ,,
মেঘের অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে তাই রক্ত লাগবে। নীলিমার আর মেঘের ব্লাডগ্ৰুপ সেইম তাই নীলি তাড়াতাড়ি করে বলল তার আর মেঘের ব্লাডগ্ৰুপ সেইম সে নার্সের সাথে চলে গেল। অপারেশন শেষ হলে সবার আগে ধূসর গিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়ালো। এতক্ষন সে আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে অপারেশন থিয়েটারের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আর মনে মনে দোয়া করছিল আল্লাহ তায়ালা যেন ওর মেঘবালিকা সুস্থ করে দেয়। আয়মান চৌধুরী ও তাই। বাকিরা এতক্ষন শুধু ওদের দুজনকেই দেখে গেছে। কি অদ্ভুত বন্ধুত্বের মিষ্টি সম্পর্ক এদের। ডক্টর বেরুলেই ধূসর বলল,,

“ডক্টর আমার মেঘ ঠিক আছে তো। ওর জ্ঞান ফিরবে কখন?”

তখন ডক্টর বলল,,

“ডক্টর শুভ্র আপনি নিজেও একজন ডক্টর। অপারেশন সাকসেসফুল কিন্তু আপনি ভালো করেই জানেন এখন পেশেন্টের অবস্থা কিরকম।আমরা কোন মিথ্যা আশা দিতে চাই না। প্রথমত ওনার মাথায় খুব জোড়ে লাঠি টাইপ কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তারপর পেটে পরপর দু’বার ছুড়ি দিয়ে গভীর ভাবে আঘাত করা হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। পেশেন্ট এর অবস্থা ক্রিটিকাল। অপারেশন সাকসেসফুল হলেও যদি ৭২ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফেরে তাহলে আমাদের হাতে কিছুই থাকবে না। এখন আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র ভরসা দোয়া করুন এই ৭২ ঘন্টার মধ্যে যেন পেশেন্টের জ্ঞান ফেরে। এক্সকিউজ মি!

বলেই ডক্টর চলে গেল। ধূসর মাটিতেই ঠপ করে বসে পরলো। আর বিরবির করতে লাগলো,,

‘নিষ্ঠুর মেয়ে তুমি আমকে এভাবে একা রেখে যেতে পারো না। এখনো অনেক পথ বাকি তোমার সাথে চলার। তুমি এভাবে নিষ্ঠুরতার প্রমান দিতে পারো না। তোমাকে ফিরতে হবে মেঘ তোমার ধূসরের কাছে। তোমার ধূসর তোমার অপেক্ষায় নিষ্ঠুর মেয়ে।”

ধূসর এতক্ষন আয়মান চৌধুরীর কাছে ছিল বলে দিলরুবা খানম আর যায় নি। ছেলেকে মেঝেতে বসতে দেখে তিনি গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। ধূসর আবার কেঁদে উঠলো মাকে জড়িয়ে। ভেতরটা হাহাকার করছে। আয়মান চৌধুরী মনে হয় থমকে গেলেন। এহসান খানের কেমন যেন সন্দেহ হলো তিনি আয়মান চৌধুরী কে ধাক্কা দিতেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। সবাই এরকম অবস্থায় হকচকিয়ে উঠলো। ধূসর এ অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি করে উঠে আয়মান চৌধুরী কে চেক করলো। আয়মান চৌধুরীর মাইনর অ্যাটাক হয়েছে । ধূসর তাড়াতাড়ি করে তাকে একটা কেবিনে গিয়ে ডাক্তারি কার্যক্রম শুরু করলো। মাইনর অ্যাটাক ছিল বলে তেমন কিছু হয় নি। ধূসর সেলাইন দিয়ে বের হলো। মুহুর্তেই পরিবেশ টা কেমন গুমোট হয়ে গেল। মেঘের জন্য চৌধুরী পরিবারের তেমন কোন প্রতিক্রিয়া না দেখা গেলেও আয়মান চৌধুরীর জন্য পরিবেশ টা ভারী হয়ে উঠলো। সমশের চৌধুরী আর বাচ্চাদের কে বাড়িতে রেখে আসা হয়েছে জাহানারা চৌধুরীর কাছে। তাছাড়া বাড়ির আর কোন ছেলে আসেনি সবাই বাড়িতেই। তারা এখানে কি হচ্ছে তা সম্পর্কে অবগত নয়। নাহলে নিশ্চয়ই সমশের চৌধুরীর আজ কিছু একটা হয়ে যেত। মায়মুনা চৌধুরী কেঁদে উঠলেন দিলরুবা খানম কাকে রেখে কাকে সামলাবে বুঝতে পারলে না। তবুও তিনি মায়মুনা চৌধুরীর কাছে গেলেন তাকে শান্তনা দিতে। এদিকে মেঘের বান্ধবীদের অবস্থা আরো খারাপ সব কয়টা কেঁদে কেটে অস্থির। একে অপরকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। সবার এতো হাহাকারে হাসপাতাল ভারী হয়ে উঠলো সবাই করুন চোখে মেঘের পরিবারদের দেখেছে হয়তো এর আগে কোন স্বামী এমন ভাবে কাঁদে নি। বা কারো হার্ট অ্যাটাক ও হয় নি। ধূসর আয়মান চৌধুরী কে রেখে বের হওয়ার পর চুপচাপ হয়ে গেছে। ও ডক্টরের সাথে কথা বলল মেঘের সাথে দেখা করতে পারবে কি না। আজকে কাউকে দেখা করতে দেবে না। কিন্তু ধূসরের জোরাজুরিতে রাজি হলো। তবে সেফটি দিয়ে ধূসর জামাকাপড় চেন্জ করে মেঘের কাছে গেল। মাথায় ব্যান্ডেজ হাতে ক্যানেলা স্যালাইন রক্ত দুটোই চলছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক ভারী নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেঘ। ধূসর প্রথমে মেঘের কপালে একটা চুমু খেল আজ আর কোন বাঁধা নেই। মেঘের হাত ধরে ধূসর বলল,,

“জানো মেঘবালিকা তুমি দুজন মানুষের খুব কাছের। যারা তোমাকে ছাড়া তাদের জীবন ভাবতে পারে না। তাদের জীবনে এখন খুব খারাপভাবে তোমাকে চায়। তুমি জানো তোমাকে ছাড়া তোমার আব্বা কতটা অসহায়। আমিও তো অসহায় তুমি জানো তোমার ধূসরের সব মনে পরেছে। এখন আর তোমাকে অভিনয় করতে হবে না অপরিচিত এর মতো। তুমি ফিরে আসো তোমার ধূসরের কাছে। তারপর আমরা আমাদের জীবনের সব ইচ্ছে পূরণ করবো। এবার তো আমাদের বাবুও নিতে হবে। একটা ছোট্ট ধূসর নাহলে ছোট্ট মেঘ আসবে আমাদের জীবনে। কিন্তু আমার তো একটা ছোট্ট মেঘ চাই। তুমি কথা দিয়েছিলে তোমার পড়াশোনা শেষ হলে আমরা বেবি নেব। তোমার কিন্তু পড়াশোনা শেষ এবার আমার ইচ্ছে পূরণ করতে হবে। তুমি কি ভাবছো তোমার ধূসর বোকা তাই না। এই সময় দাঁড়িয়ে কিভাবে এগুলো বলছি। আমি বলছি কারন তুমি ফিরবে আমি জানি তোমার ধূসরের কাছে। তাইতো আগে থাকতেই বলছি।

কথা বলতে বলতেই ধূসরের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। ধূসর নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো তবুও যেন কন্ট্রোল করতে পারছে না। ও কান্না মাখা কন্ঠে বলল,,

“মেঘবালিকা এতো নিষ্ঠুর হইয়ো না। তোমার ধূসর যে তোমার অপেক্ষায়। ফিরে এসো তোমার ধূসরের নীড়ে।”

ধূসর আর সহ্য করতে পারলো না,বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এসে ড্রেসচেন্জ করলো। ওর মনে পড়লো মেঘ চিঠির কথা বলছিল। ও সবাইকে বলে চৌধুরী বাড়িতে গেল কেউ কিছু বলে নি। ধূসর মেঘের রুমে ঢুকলো আলমারিটা লক করা নেই তা দেখে একটু অবাক হলো। আলমারি খুলতেই একটা ব্যাগ দেখতে পেল। ব্যাগের ওপরে লেখা মেঘের ডাকবাক্স । ধূসর ব্যাগটা হাতে নিল তারপর সেটা নিয়ে বেরিয়ে সেই নির্জন লেকের পারে গেল। ব্যাগটা নিয়ে বেঞ্চে বসলো ব্যাগটা খুলতেই প্রায় তিনশ’খানেক চিঠি পেল। চিঠির ওপর নাম্বার লেখা আর তারিখ দেওয়া। ধূসর খুঁজে এক নম্বর চিঠিটা বের করলো। ধূসরের হাত কাঁপছিল ও খুলে পরতে লাগলো,,

প্রিয় একান্ত নিষ্ঠুর পুরুষ,,

প্রিয় বলছি আবার নিষ্ঠুর ও বলছি বলে অবাক হলেন বুঝি। প্রিয় বলছি কারন আপনি সর্বদা আমার প্রিয়ই ছিলেন। আর নিষ্ঠুর পুরুষ বলছি কারন আপনি আপনার নিষ্ঠুরতার প্রমান দিয়েছেন। আচ্ছা বাদ দিন আপনার মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা। না মনে নেই আপনার। এই নিষ্ঠুর মেয়েটাকে মনে নেই ধূসর। এতটা পথচলা আমাদের। আপনি যখন বললেন কে আপনি তখন ইচ্ছে করছিল,গলা কাটা মুরগির ছটফটানি দেখেছেন কখনো ধূসর। এই যে আপনি যে কথাটা আমাকে বললেন সেটা শুনে আমার বুকেও যেন সেইরকম ছটফটানি শুরু হয়েছে। ভেবেছিলাম আপনি সবসময় আমার আব্বার মতো আমার সাথে থাকবেন আপনি কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি আপনার কথা রাখেন নি। আমার হাত ছেড়ে দিয়েছেন। আচ্ছা এবার যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যাই তাহলে কি আপনি বলবেন, মেঘ তুমি ভিশন নিষ্ঠুর। না সেটাও বলবেন না কারণ আপনার তো আমাকে মনেই নেই।

~ইতি আপনার মেঘবালিকা

চিঠিটা পরে ধূসর চোখ বন্ধ করে বলল,,

আমার আজ সব মনে আছে মেঘবালিকা। কিন্তু আজ আমি তোমার হাত আকরে ধরে আছি। তুমি আমায় ছেড়ে যেও না, নিজের নিষ্ঠুরতার প্রমান দিও। সবসময় আমার সাথে থেকো আমার মেঘবালিকা হয়ে। কি বললে আমাদের প্রথম দেখা মনে আছে কি না আমার সব মনে আছে মেঘ। সেই শ্যামবতী মেয়ে শীতের প্রথম বৃষ্টি।

অতীত,,

~চলবে,,

#ধূসর_রাঙা_মেঘ_২
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

ছয় বছর আগে,,

বৃষ্টির ভেতরে শুনশান লেকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি অনুভব করছিল একটা মেয়ে। হুট করে বৃষ্টির ফোঁটা তার ওপর না পরতেই মেয়েটা বুঝতে পারে তার পাশে আলাদা মানুষের অস্তিত্ব। চোখ খুলে ওপর দিকে তাকাতেই দেখতে পায় একটা কালো ছাতা। পাশে তাকাতেই দেখতে পায় একজন সুদর্শন সাদা শার্ট পরিহিত পুরুষ ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা তাকাতেই ছেলেটা হাসলো। হেসে ছেলেটা বলল,,

“শুনশান লেকে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বৃষ্টিবিলাস করছিলেন বুঝি। কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে না। কারন বৃষ্টিবিলাস করলে কেউ হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে থাকে না। হাত মেলে লাফালাফি করে বৃষ্টিকে অনুভব করে।মনে হলো বৃষ্টিবিলাস করছেন না তাই ছাতাটা নিয়ে এলাম। শীতের সিজনের প্রথম বৃষ্টি এখন ভিজলে ঠান্ডা জ্বর আসতে পারে মিস।”

এই প্রথম কোন ছেলের এতটা কাছে দাঁড়িয়ে মেয়েটার অদ্ভুত অনুভূতি হলেও প্রকাশ করলো না। সে ছাতা থেকে বেরিয়ে এসে একটু দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো তারপর বলল,,

“সবার সব অনুভূতি যে একরকম ভাবে প্রকাশ পাবে তেমন টা নয়। সবার একরকম অনুভব হলেও প্রকাশটা আলাদা হতে পারে। বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে হাত মেলে লাফালাফি করলে বুঝি শুধু বৃষ্টি বিলাস হয়। প্রকৃত পক্ষে সেটাকে বৃষ্টি বিলাস বলে না। ওটাকে বৃষ্টির মজা নেওয়া বলে। বৃষ্টি বিলাস মানে হলো বৃষ্টি কে অনুভব করা। বৃষ্টির সতেজতাকে অনুভব করা। সেটা যে বৃষ্টির মধ্যে থেকেই করতে হবে তেমনটা নয়। অনেকে শুধু হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি ছুঁয়েও বৃষ্টিবিলাস করে। সব শেষে বলবো যেখানে একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে সেখানে আপনার আসা মোটেও উচিত হয়নি এবং শুভনীয় দেখাচ্ছে না। এখন আপনি এখান থেকে চলে গেলে আমি খুশি হবো।”

ছেলেটার মেয়েটার প্রথমের কথাগুলো মুগ্ধ করলো। কিন্তু পরের কথা গুলো অন্যরকম অনুভূতি দিল। সত্যিই হয়তো উচিৎ হয় নি। ছেলেটা বলল,,

“আপনার পার্সোনাল স্পেস নষ্ট করার জন্য দুঃখিত। আসলে আমি ডাক্তারি পরি। এই সময় বৃষ্টিতে ভিজলে আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন এটা ভেবে এই জন্যই এসেছি। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো গাড়ি পাচ্ছিলেন না। তাই এভাবে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছেন। সত্যি আমি দুঃখিত।”

মেয়েটা একবার ছেলেটার দিকে চাইলো। না দেখে অন্যকিছু মনে হচ্ছে না। এবং এখন ছেলেটার দৃষ্টিও নত করে রেখেছে যা দেখে মেয়েটার ভালো লাগলো। নিজের দিকে একবার তাকালো বৃষ্টিতে ভিজে বোরকার অবস্থা বেহাল তবুও বাতাসের জন্য একটু পায়ের সাথে বাড়ি খাচ্ছে। মাথায় হিজাব আছে তবে নিকাবটা খুলে রেখেছে। মেয়েটা বলল,,

‘এই টুকু ভেবেছেন শুনে ভালো লাগলো। আপনি যেতে পারেন আমার গাড়ি এখানেই আছে। আমি একটু বৃষ্টিতে ভিজছিলাম।”

“ওহ আচ্ছা আপনার নাম কি?”

নাম জিজ্ঞেস করতেই মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে বলল,,

” আমার নাম জানা কি? আপনার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।”

‘আপনার মতো এমন ব্যাক্তিত্বের মানুষ প্রথম দেখলাম তাই আর কি। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে নামটা বলতে পারেন। আর আপনি না চাইলে না ও বলতে পারেন আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছে।”

ছেলেটার কথা শুনে মেয়েটার অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। মেয়েটা হেসে বলল,,

“আমার নাম কাশফিয়া আয়মান মেঘ!”

‘বাহ মাশাআল্লাহ সুন্দর নাম তো। আপনার নাম মেঘ দেখেই বৃষ্টির সাথে আপনার এতো গভীর সম্পর্ক। আমার নাম ধূসর এহসান শুভ্র। তাহলে আমি আসি। ভেবেছিলাম আপনার ছাতাটা প্রয়োজন হবে। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম প্রয়োজন নেই। আল্লাহ হাফেজ।”

‘আল্লাহ হাফেজ!”

ধূসর চলে গেল। মেঘ একবার তাকিয়ে দেখলো এখন মেঘের ঠান্ডা লাগছে। ও গাড়িতে উঠে বসলো গাড়িটা ও নিজেই ড্রাইভ করে এসেছিল। ধূসর দুপুরবেলা ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরছিল। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে কিছুদূর আসতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি হচ্ছে বলে রাস্তায় তেমন যানবাহন নেই। গাড়ি চালানোর সময় হুট করেই নজর যায় একটা লেকের ভেতর খোলা আকাশের নিচে কালো বোরকা পরিহিত এক মেয়ের দিকে। সে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। ধূসরের মনে হলো এই বৃষ্টির জন্য বোধহয় গাড়ি পাচ্ছে না তাই একটু ভেতর দিকে গিয়ে ওভাবে রাস্তার উল্টোমুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ও একটা ছাতা নিয়ে গেল ভাবলো সাহায্য করবে । ধূসর একটু কাছে যেতেই দেখলো মেয়েটা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে তাই কোন কথা না বলেই তার ওপর ছাতা ধরলো। গাড়ির ভেতর বসে এটাই ভাবছিল। সব ভাবনা শেষ করে ধূসর বলল,,

“অদ্ভুত রহস্যময় একটা চরিত্র মেয়েটা।তবে আলাদা সতেজতা আছে ওনার ভেতর। কি স্নিগ্ধতা ফুটে উঠেছে বৃষ্টির ফোঁটায়। ছাতা ধরলাম অথচ সে ছাতা না নিয়েই ছাতা থেকে বেরিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো। এরকম মানুষ আমি একটাও দেখিনি বৃষ্টির মধ্যে ছাতার ভেতরে না থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে। তাছাড়া ওভাবে বৃষ্টির মধ্যে কে দাঁড়িয়ে থাকে হাত ভাঁজ করে।

আমিও না কি বলছি? উনি তো বললোই সবার সব অনুভূতি যে একরকম ভাবে প্রকাশ পাবে তেমন টা নয়। তবে মেয়েটার কথার গভীরতা বেশ। ব্যক্তিত্বটাও অনেক সুন্দর। আচ্ছা আমি ওনার খুব কাছাকাছি আছি বলেই কি উনি সরে গেলেন। এটাই হবে দেখে মনে হলো বেশ ইসলামিক মাইন্ড এর। আমি একটা ছেলে ওনার কাছাকাছি আছি এটা ওনার পছন্দ হয় নি। আর এটা ঠিক ও নয়। না উনার কাছে উনি ঠিক আছেন আমার উচিত হয় নি ওনার এত কাছাকাছি যাওয়া। এটা ভুলে গেলে চলবে না,,
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বপেক্ষা উত্তম, যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৭৫)।

_____________

মাঝে কেটে গেল বেশ কয়েকটি মাস। মাঝে মাঝে ধূসরের হুট করেই মেঘের মুখটা সামনে আসে। এর কারণ ধূসর জানে না তবে ধূসর খুব করে চায় মেঘের মুখটা যেন না আসে। একদিন ক্লাস শেষ করে বাড়ি যেতেই দেখলো ওর পুরো পরিবার ড্রয়িংরুমে সাথে ওর বাবার পুরোনো বন্ধু ও একটা মেয়ে। ধূসর গিয়ে জিজ্ঞেস করল,,

“এই সময় তোমরা সবাই বাড়িতে?”

তখন এহসান খান বললেন,,

“আয়মান আমাদের পাশের বাড়িতে উঠেছে আজই। দুপুরে আমাদের বাড়িতে আসতে বলেছি। তাই চলে এলাম অফিস থেকে।”

“ওহ আচ্ছা!”

” হুম আর ধূসর ও হচ্ছে মেঘ আয়মানের মেয়ে।”

তখন নীলিমা বলল,,

“আরেকটা পরিচয় আছে ভাইয়া মেঘ হলো বেস্ট ফ্রেন্ড।”

মেঘ শুনেই ধূসর একটু এগিয়ে গেল আর গিয়ে কাঙ্খিত মানুষটাকেই দেখতে পেল। তবে ও বুঝতে দিল না ও মেঘকে চিনতে পেরেছে। ও শুধু বলল,,

“ওহ আচ্ছা! আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি মা খাবার বাড়ো খুব খিদে পেয়েছে।”

ধূসর ওপরে চলে গেল। মেঘ একবার আড় চোখে ধূসরের দিকে তাকিয়েছিল। এখন চুপ করে বসে আছে। নীলিমা মেঘকে কতোকিছু বলছে মেঘ শুধু হু হা করছে। নীলিমা উঠে নোলকের সাথে আর রোহিনীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তখন রোহিনীর নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে আর নীলির একবছর হয়েছে বিয়ে হয়েছে। দিলরুবা খানম কতক্ষন ধরে মেঘকে পর্যবেক্ষন করছিলেন ।মেঘের অস্বস্তি হচ্ছে তাই তিনি বললেন,,

“মেঘ তুমি কি অস্বস্তিবোধ করছো?”

তখন মেঘ হেসে বলল,,

“তেমন কোন ব্যাপার না আন্টি।”

তখন নীলি বলল,,

“আহ হা মা তোমাকে বলেছিলাম না আমার একটা গম্ভীর বান্ধবী আছে। যার সাথে আমি জোর করে সম্পর্ক করেছি সেই খারুস বান্ধবীই হলো মেঘ। কারো সাথে আগ বাড়িয়ে কথা তো বলেই না উল্টো ওর কানের কাছে সারাদিন বকবক করলেও হু হা ছাড়া আর কিছু বলে না।”

দিলরুবা খানম মেঘের কাছে গিয়ে মেঘের গালে হাত রেখে বলল,,

“তোমার ধৈর্য্যের প্রসংসা না করে পারছি না। আমার মেয়ের এতো বকবক সহ্য করো কিভাবে? আমি তো শুনেছি আমার মেয়ের আরো তিনটা বাঁচাল বান্ধবী আছে। আর তুমি এদের চারজনের বকবকই মন দিয়ে শুনো।”

তখন মেঘ মুচকি হেসে বলল,,

“যখন কারো বলার মতো কোন গল্প থাকে না। তখন সামনের মানুষটার গল্প মনোযোগ দিয়ে শোনা ছাড়া আর কোন কাজ থাকে না। তাছাড়া ওদের গল্প শুনতে মন্দ লাগে না। তবে হ্যা আমি বেশ মনোযোগী শ্রোতা এটা বলতে পারি।”

মেঘের এমনকথা শুনে দিলরুবা খানম কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল। এইটুকু একটা মেয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে তার বলার মতো কোন গল্পই কি নেই। তখন আয়মান চৌধুরী বললেন,,

“আম্মা এদিকে আসুন চলুন বাড়ি যাই।”

“হুম আব্বা চলুন। আন্টি আমাদের বাড়িতে যাবেন। ভাবি নোলক আপনাদের সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো আপনারাও যাবেন। আর নীলি তোকে তো আর বলতে হবে না ইচ্ছে হলেই চলে যাস।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

‘আরে আয়মান ভাই দাঁড়ান আমি পায়েস রেঁধেছি। ওটা তো আপনারা তখন খেলেন না এখন খেয়ে যান।”

তখন এহসান খান বললেন,,

‘দিলরুবা যাও পায়েস নিয়ে এসো ওরা বসছে। আর আয়মান তোর ভাবির পায়েস খাসনি মানে তার বেস্ট রান্নাই খাস নি।”

দিলরুবা খানম হেঁসে চলে গেলেন। আয়মান চৌধুরী ও হেসে বসে পড়লেন বন্ধুর পাশে। তখন ধূসর এলো নিচে দিলরুবা খানম মেঘদের ড্রয়িংরুমে পায়েস দিয়ে ছেলের জন্য খাবার বেড়ে দিলেন। ধূসর খাচ্ছে আর আড়চোখে মেঘকে দেখছে। মেঘ খেয়াল করলো। অতঃপর পায়েস খাওয়া শেষ হলে ওরা সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। খাওয়া শেষে ধূসর নীলির পাশে বসে বলল,,

“তোর বান্ধবীকে তো কোনদিন এ বাড়িতে দেখলাম না। কেমন বান্ধবী তুই? যে এখনো বান্ধবীদের বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়াতে পারলি না।”

‘আরে ভাইয়া ওদের সবার আচরণ আলাদা হলেও। কিছুক্ষেত্রে একইরকম আমি কতোবার বলেছি একবার ও আমাদের বাড়িতে আসে নি। এমনকি আমিও কারো বাড়িতে তাই নি। তবে আমাদের বন্ধুত্ব কিন্তু অনেক বছরের।”

“দিশান ভাইয়ার বিয়েতে বলেছিলি?”

‘হ্যা ভাইয়া এসেছিল তো তুমি দেখো নি বিয়ে বাড়িতে বিজি ছিলে। তাছাড়া এলেও তুমি দেখবে কিভাবে? মেঘ তো সবসময় হিজাব নিকাব পড়ে চলাচল করে।”

“কই সেদিন তো নিকাব ছিল না?”

“কি বললে ভাইয়া?”

“কিছু না। আচ্ছা বাবা তোমার বন্ধু তো একজন নাম করা বিজনেস ম্যান। তাহলে আমাদের পাশের বাড়িতে ভাড়ায় কেন উঠলো। উনি তো একটা ফ্ল্যাট কিনতে পারতেন।

তখন এহসান খান বললেন,,

“একটু ঝামেলা হয়েছে বাড়িতে তাই আয়মান চলে এসেছে সাথে মেঘও। কাল রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলল আমার চেনাজানা কোন রেডিমেট বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে কি না? যাতে তাড়াতাড়ি করে ভাড়ায় উঠতে পারবে। আমি আমার বাড়িতেই আসতে বলেছিলাম ওদের কিন্তু আয়মান নাকচ করে দিল। ওকে যেরকম চিনি ও অন্যরকম তাই বলেও লাভ হবে না। পরে মনে পড়লো পাশের বাড়িটা তো অনেকদিন ধরেই ফাঁকা মালেক ভাই বলেছিল ভাড়ায় দিতে পারলে যেন দিয়ে দিই। সবকিছুই আছে বাড়িতে। ওনারা তো বিদেশ থাকে তাই এই বাড়িতেই বললাম। রাতে মালেক ভাইকে আয়মানের কথা জানিয়েছি। উনি আয়মান কে আগে থেকেই চেনে তাই সকালেই কেয়ার টেকার এসে চাবি দিয়ে গেছে। আর সব পরিষ্কার করে রেখেছে সকাল নয়টার মধ্যেই দেখি ওরা হাজির। তাই দুপুরে বলেছি আমাদের বাড়িতে আসতে।

“ওহ আচ্ছা তারমানে রাগ করে চলে এসেছে বাড়ি থেকে।”

“আমি জানি না। তবে আমার মনে হয় আয়মানের সাথে কিছু খারাপ কিছু ঘটেছে। কাল ওদের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান ছিল আয়মানের অনারে। একটা বড় ডিল পেয়েছিল আয়মান তাই। আমাকেও বলেছিল কিন্তু আমি যাই নি একটা কাজের জন্য। কিন্তু হুট করেই আয়মান ফোন দিল ও সব ছেড়ে চলে আসছে। এসব শুনে তো আমি অবাক।”

“তারমানে সত্যিই খারাপ কিছু ঘটেছে। কিন্তু ওনাদের চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই আসলে ওনাদের মাঝে কি চলছে। আঙ্কেল ও হাঁসি মুখেই কথা বললো। তাছাড়া ওনার মেয়েকেও দেখলাম মুচকি হেসে মায়ের সাথে কথা বলতে।”

এহসান খান হেসে বললেন,,

“মানুষ সেটায় দেখতে পায় যেমনটা সামনের মানুষ নিজেকে প্রকাশ করে। তবে আয়মান আর মেঘের এটা একটা আলাদা বিশেষত্ব আছে। এরা বাবা মেয়ে একেঅপরের বেস্ট ফ্রেন্ড। আয়মানের কাছে মেঘের নামে কতো গল্প শুনেছি । মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে আয়মান। তবে আয়মান এটা সবসময় বলে ওর মেয়ে ওর শক্তি, ওর ভরসা, ওর সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু। ওদের বাবা মেয়ের ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করে। সবথেকে বেশি ওদের কথোপকথন কি সুন্দর আপনি বলে সম্বোধন করে। ওদের দেখলে মনে হয় আপনি ডাকটাই সবথেকে কাছের।”

ধূসর মনোযোগ দিয়ে শুনলো তারপর উঠে নিজের রুমে চলে গেল।

বিকেল এ মেঘ ছাদে গেল। বাড়িওয়ালার মালিক বেশ সৌখিন মানুষ সেটা মেঘ এ বাড়িতে ঢুকেই বুঝতে পেরেছে। দুতলা বাড়িটা বেশ সাজানো গোছানো বাড়ির সামনে বাগান। বিভিন্ন ফুলের গাছ সেখানে সেগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করা হয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মেঘ ছাদে উঠেই দেখতে পেল একপাশে ছোট্ট বাগান। তারমধ্যে একটা দোলনা ফুলের সুবাসের সাথে দোল খাওয়া অনুভুতি অদ্ভুত সুন্দর। মেঘ হাত দিয়ে ফুল গুলো ছুয়ে দিল। মুহুর্তেই মেঘের মনটা ভালো হয়ে গেল। মেঘ দোলনায় বসে চোখ বুঝে অনুভব করতে লাগলো। তখন মেঘের পাশের ছাদ থেকে আওয়াজ আসলো,,,

“এই যে মিস প্রতিবেশী! আপনি কি একা থাকলে সবসময় চোখ বুজেই থাকেন নাকি?

মেঘ চোখ তুলে পাশে তাকাতেই দেখলো ধূসর ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ বলল,,

‘মিস প্রতিবেশী মানে?”

“আরে আপনি তো আমার প্রতিবেশী তাই না। আমাদের আশেপাশে থাকা সবাই আমাদের প্রতিবেশী। তাই আপনাকে মিস প্রতিবেশী বলে ডাকলাম।”

“আমার নাম আছে সেটা দিয়ে ডাকতে পারতেন। এমন তো নয় আপনি আমার নাম জানেন না?”

“আমাদের আগেও দেখা হয়েছিল বুঝি! আপনার মনে আছে নাকি?”

“আমি কিছু ভুলি না ধূসর এহসান শুভ্র!”

“আমিও কিছু ভুলিনা মিস কাশফিয়া আয়মান মেঘ। যাক আমায় মনে রেখেছেন তাহলে। আমি তো ভাবলাম আপনার মনেই নেই আমার কথা। আজকে বাসায় এমন একটা ভাব করলেন যেন আজকেই প্রথম দেখলেন আমাকে। যাই হোক আমার মনে আছে আপনার কথা সেই জন্যই তো বললাম আপনি একা থাকলে চোখ বন্ধ করেই থাকেন নাকি। সেদিন ও বৃষ্টির মধ্যে দেখলাম চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি অনুভব করছিলেন। আজ ও চোখ বন্ধ করে ছিলেন। ছাদের প্রকৃতি অনুভব করছিলেন বুঝি। আচ্ছা চোখ বন্ধ করে প্রকৃতি অনুভব করা যায় নাকি?

“হুম যায় তো! আমি চোখ বন্ধ করেই প্রকৃতি অনুভব করছিলাম।”

“তা কিরকম?”

“চোখ খোলা রেখে প্রকৃতি অনুভব করা একটা অনুভূতি। আর চোখ বন্ধ করে প্রকৃতি অনুভব করা অন্যরকম একটা অনুভুতি। আপনি চোখ খুলে সব দেখছেন তা আপনাকে মুগ্ধ করছে সেটা শুধু চোখের তৃপ্তি দিচ্ছে। কিন্তু আপনি চোখ বন্ধ করুন দেখবেন আপনার বাকি ইন্দ্রিয় গুলো বেশি সজাগ থাকছে। আপনার নাকে প্রকৃতির তীব্র সুবাস পাবেন। এমনকি চোখ বন্ধ করলে আপনার শ্রবনশক্তি ও বৃদ্ধি পাবে তখন আপনি দূরের ঐ পাখির আওয়াজ ও ভালোভাবে শুনতে পাবেন যা আপনাকে আলাদা রকম মনের তৃপ্তি দেবে।”

“আপনি তো দেখি সব বিষয়ে পি এইচ ডি করে এসেছেন। যাই হোক নতুন পরিবেশ আর নতুন প্রতিবেশীদের কেমন লাগলো।”

“পরিবেশ তো ভালোই লাগছে কিন্তু প্রতিবেশী দের সাথে এখনো তেমন ভাবে মেশা হয় নি । তাই বলতে পারছি না। যাই হোক আমি নিচে যাচ্ছি।”

ধূসরকে কোন কথা বলতে না দিয়ে মেঘ চলে গেল। ও যেতেই ধূসর বলল,,

“অদ্ভুত মেয়ে একটা। যাই হোক সাদা থ্রিপিস এ মেয়েটাকে অনেক স্নিগ্ধ লাগছিল। মাথায় ওরনাটাও ভালো মতো দেওয়া। মনে হয় আমার মতো আসরের নামাজ পড়েই ওপরে এসেছে। কিন্তু ধূসর তুই কি করছিস একটা মেয়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিস এটা ঠিক না কিন্তু।

বলেই ধূসরও নিচে চলে গেল। মেঘ নিচে গিয়ে দেখলো ওর আব্বা ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তা দেখে মেঘ বলল,,

“আব্বা কিছু ভাবছেন?”

“ভাবলাম এহসান বাড়ির ব্যবস্থা না করে দিলে। আমি আর আপনি এত তাড়াতাড়ি বাড়ি কোথায় পেতাম।”

“হুম তবে সবই আল্লাহর দেওয়া রহমত আলহামদুলিল্লাহ সবকিছুর জন্য। এখন বলুন কাজ নিয়ে কিছু ভাবলেন?”

“আমার একাউন্টে বড় এমাউন্টের টাকা আছে ভাবছি বিজনেস শুরু করবো। তাছাড়া নতুন একটা ব্রাঞ্চ বানানো হয়েছে। সবকিছু রেডি সব ধরনের মেশিন থেকে শুরু করে ইমপ্লোয়ি পর্যন্ত। সেটা এই মাসেই খোলার কথা ছিল ওটা আব্বা আমার নামে করে দিয়েছিলেন ওটার কথা আমি আর আব্বা ছাড়া কেউ জানেনা। ওখান থেকেই শুরু করবো। না নতুন ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না।”

“দাদুভাই যদি আপনার নামে করে দিয়ে থাকে। তাহলে ওখান থেকেই শুরু করুন তবে দাদুভাই এর সাথে আগে কথা বলে নিন।”

“আপনার কি মনে হয় আব্বা আমার সাথে কথা বলবে। উনি কাল সবার সামনে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তাছাড়া ওটা যুক্তিসংগত হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।

“তাহলে কি করবেন? তবে যাই করুন না কেন আমি আপনার পাশে আছি।”

“আপনি থাকতে আমার ভয় কিসের আম্মা। আমি নতুন ভাবেই শুরু করবো। বিজনেস সম্পর্কে বেশ ধারনা আছে ইনশাআল্লাহ সমস্যা হবে না শুধু একটু সময় লাগবে। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। ইনশাআল্লাহ একদিন আমরাও সফল হবো।”

“ইনশাআল্লাহ আব্বা!”

“আমি সবার সাথে কথা বলছি আমার পরিচিতদের সাথে।”

তখনি আয়মান চৌধুরীর কাছে একটা ফোন আসে তিনি ফোনটা রেখেই খুশি হয়ে মেঘকে জানান সমশের চৌধুরী আয়মান চৌধুরীকে নতুন ব্রাঞ্চ দিয়ে দিয়েছে। মেঘ হেঁসে বলল,,

“আল্লাহ তায়ালা যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী।”

আয়মান চৌধুরী শমশের চৌধুরী কে ফোন করলেন। আয়মান চৌধুরী কিছু বলবেন তার আগে উনি নিজেই বললেন,,

“ওটা তোমাকে দিয়েছি বলে এত খুশি হওয়ার কিছু নেই। তুমি যেমনই হও না কেন তুমি আমার সন্তান। তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি ঠিকই তবে আমার এটাও দেখা উচিৎ তুমি কি ভাবে চলবে কারন তোমার সাথে মেঘ আছে। তাই ওটা দিয়েছি এরপর থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবে না রাখছি। আর হ্যা এটা সম্পর্কে কাউকে কিছু বলবেও না। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই সমশের চৌধুরী ফোন কেটে দিলেন। আয়মান চৌধুরী অসহায় চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মেঘ আয়মান চৌধুরীর হাত ধরে বলল,,

“যা হওয়ার তাই হবে আব্বা যেদিন সব সামনে আসবে সেদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। একটু ধৈর্য্য ধরে কঠিন সময়টা কাটিয়ে নিন ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই।”

“ইনশাআল্লাহ আম্মা!”

“রাতে কি খাবেন আব্বা? আমি রান্না করবো!”

“আপনি তো তেমন পাকা রাঁধুনি না আমিও হেল্প করবো আপনাকে। তাহলে আজ আব্বা আর মেয়ে মিলে ভুনা খিচুড়ি আর ডিম ভাজি রান্না করবো। খিচুড়ি আপনি বেস্ট রান্না করেন।”

“আর আপনি ডিম ভাজি!”

বলেই বাবা মেয়ে হাসলো। এই তো তাদের দুজনের সুখের সংসার। নেই কোন জটিলতা আছে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা আর অগাধ বিশ্বাস।

‘ তাহলে যাই আপাতত আজকের জন্য বাজার করে নিয়ে আসি। বাকি যা যা লাগে কাল গিয়ে করে আনবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

______________

পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে নীলি বলল,,

“মা আমার আসতে দেরি হবে। তোমরা চিন্তা করো না।

দিলরুবা খানম বললেন,,

“কেন?”

“আসলে মেঘের কিছু জিনিস কেনার ছিল। ভার্সিটি শেষ করে ওর ভার্সিটিতে যাবো তারপর ওখান থেকে ওকে নিয়ে শপিংমলে যাবো।”

তখন ধূসর বলল,,

“কেন? উনি কি তোর সাথে তোদের ভার্সিটিতে পড়ে না।”

“আমার বান্ধবী উনি করে বলছো কেন তুমি করে বললেই হয়?”

“সময় হোক তারপর বলবো। এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দে? তোরা পাঁচ বান্ধবী একই ভার্সিটিতে পড়িস না।

“না মেঘ আমার ভার্সিটি তে পরে না। ও ‘ল’ নিয়ে পরছে আলাদা ভার্সিটিতে। আমরা পাঁচ বান্ধবী আলাদা আলাদা গ্ৰুপের মতো। আমি আর জাবিন একসাথে একই ডিপার্টমেন্টে পরি। হির আর লিয়া অন্য ডিপার্টমেন্টে পড়ে কিন্তু ভার্সিটি একই শুধু মেঘ আলাদা ভার্সিটিতে পড়ে।”

“বাহ ‘ল’ নিয়ে পরছে। তুই ও তো ‘ল’ নিয়ে পরতে পারতিস। সবাই কে ন্যয় বিচার পায়িয়ে দিতিস।”

“ধূর আমার কি মেঘের মতো ওতো বুদ্ধি আছে নাকি। তাছাড়া আমি তো পড়াশোনা করছি পড়াশোনা করতে হবে তাই। ভাবলাম বিয়ের পর পড়াশোনা আমার থেকে দূরে থাকবে‌। কিন্তু বিয়ের পর দেখলাম তোমাদের থেকে আমার জামাই আরেক লেবেল ওপরে। যাই হয়ে যাক না কেন পড়াশোনা কম্পিলিট করতে হবে।”

“আমরা দেখেই বিয়ে দিয়েছি ছোট আপু।”

দিশানের কথায় নীলি গাল ফুলিয়ে বলল,,

“একদম মজা করবে না বড় ভাইয়া। এখন উঠলাম আমার দেরি হচ্ছে।”

তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করিস সন্ধ্যায় কিন্তু সোহেল আসবে।”

“আমি আগেই বলে রাখছি আমি এক সপ্তাহ আগে কোথাও যাচ্ছি না।”

“আরে তোকে নিতে আসছে না শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসছে। বুঝলি নীলি শ্বশুরবাড়ি রসের হাঁড়ি। কবজি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া।”

“হ্যা বড় ভাইয়া সেই জন্যই তো তুমি শ্বশুরবাড়ি গেলে আর আসতে চাও না। এমনভাবে বললে যেন মা তোমাকে না খায়িয়ে রাখে।”

“বাড়ি খাওয়া আর শ্বশুরবাড়ি খাওয়া এক হলো নাকি। বাড়ির জামাই খেতে বসেছে ব্যাপারটাই আলাদা।”

“দেখেছো ভাবি এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ি গেলে শুধু ডালভাত খেতে দিতে বলবে তোমার মাকে।”

নীলির কথায় রোহিনী লজ্জা পেল। তখন দিলরুবা খানম বললেন,,

“আহ নীলি কি হচ্ছে। এখন তোর দেরি হচ্ছে না।”

“হ্যা হ্যা যাচ্ছি উচিৎ কথার ভাত নাই।”

নীলি গাল ফুলিয়ে চলে গেল। বাকি সবাই হাসলো।
_____________

মেঘ রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু রিক্সা আসছে না। এখন তো আর গাড়ি নেই যে গাড়িতে চলাচল করবে। এখন থেকে অন্য যানবাহনে যাতায়াত করতে হবে। যে পর্যন্ত না আয়মান চৌধুরী বিজনেস ভালোভাবে দাড় করায়। আর একটা গাড়ি না কেনে। আয়মান চৌধুরী সকালেই খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পরেছে মেঘের একটু পর ক্লাস তাই পরে বেরিয়েছে। ধূসর গাড়ি নিয়ে গেট পেরুতেই দেখতে পেল একজন কালো বোরকা, হিজাব নিকাব পড়িহিতা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু বাড়ির সামনেই তাই ও বুঝতে পারল ওটা মেঘ। মেঘকে দেখে ধূসর গাড়ি থামিয়ে বলল,,

” মিস প্রতিবেশী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন বুঝি?”

মেঘ একবার ধূসরের দিকে তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,

“হুম রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছি!”

“আপনার ক্লাস কয়টায়?”

“দশটায়!”

“আরে এখন তো নয়টা চল্লিশ বাজে। কোন ভার্সিটিতে পড়েন আপনি?”

“কেন?”

‘আপনার সব প্রশ্নে উল্টো প্রশ্ন করেন কেন? ”

“**** এই ভার্সিটিতে পড়ি।”

“রিক্সা দিয়ে ভার্সিটিতে যেতে আধ ঘণ্টা সময় লাগবে। তাছাড়া রিক্সা পাবেন কিনা সন্দেহ। আপনার ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে। আপনি বরং আমার গাড়িতে আসুন।”

“আমাকে সাহায্য করার কারন?”

“তেমন কোন কারন নেই। তবে আপনার যদি কারন দরকার হয়। তাহলে প্রথমত আপনি আমার বাবার সব থেকে কাছের বন্ধুর মেয়ে আপনাকে হেল্প করলে বাবা খুশি হবে। দ্বিতীয়ত আপনি আমার বোনের বান্ধবী আপনাকে সাহায্য করলে আমার বোন আমাকে মাথায় করে রাখবে। আর তিন নাম্বার আমরা প্রতিবেশী। প্রতিবেশী হয়ে যদি প্রতিবেশীকে না সাহায্য করলাম তাহলে কিসের প্রতিবেশী।”

“আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন মিস্টার প্রতিবেশী।”

“মিস্টার প্রতিবেশী?”

“তো কি বলবো বলুন? আপনি আমার নাম জানা সত্বেও আমাকে মিস প্রতিবেশী বলেন। তাহলে আমি কেন বলবো না।”

“নামটা খারাপ না আপনার ইচ্ছে হলে বলিয়েন। এখন বলুন যাবেন? সমস্যা নেই আমার পাশে বসতে হবে না। আমি জানি আপনি আমার পাশে বসে অস্বস্তি বোধ করবেন। আপনি পেছনেই বসুন। আমি কিছুই মনে করবো না।”

ধূসরের কথা শুনে মেঘের ভালো লাগলো। তাই বলল,,

“ঠিক আছে। আর আমার দিকটা বোঝার জন্য শুকরিয়া।”

মেঘ পেছনের দরজা খুলে বসে পড়লো। ধূসর গাড়ি স্টার্ট দিলো ওদের ভার্সিটি পৌঁছানোর মাঝে আর একটা কথাও হয় নি। ভার্সিটি আসলে ধূসর গাড়ি থামিয়ে দিল। মেঘ ‘শুকরিয়া’ বলে চলে গেল। ধূসর মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মেয়েটাকে ওপর থেকে কঠিন মনে হলেও মেয়েটায় আচরনে আলাদা নম্রতা আছে।”

~চলবে,,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ