Monday, October 6, 2025







অন্তহীন প্রেম পর্ব-৭+৮

#ধারাবাহিক গল্প
#অন্তহীন প্রেম
পর্ব-সাত
মাহবুবা বিথী

এমনসময় জঙ্গলের ভিতর থেকে কে যেন দাদা বলে ডেকে উঠলো। সেদিকে তাকিয়ে মুহুর্তে জুলকারনাইনের মুখের চেয়াল শক্ত হয়ে গেল। আমাকে ঝটকা মেরে ছেড়ে দিয়ে বললো,
—–কি ব্যাপার আপনি দেখে চলতে পারেন না? এখানে নন্দদুলালী হলে চলবে না।
মুহুর্তে ওর আচরণে আমি অবাক হয়ে গেলাম। ওর উপর আমার খুব রাগ হলো। ওর এরকম রুঢ় আচরণে চোখ দিয়ে অভিমানের জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। মনে মনে ভাবলাম যে আমার কাছ থেকে আমার পরিবার আমার সুন্দর ভবিষ্যত আর আমার ভালবাসাকে কেড়ে নিয়ে অনিশ্চয়তার চোরাবালিতে ডুবিয়ে দিয়েছে তার কাছ থেকে এর থেকে বেশি আর কি আশা করতে পারি। নিজেকে সামলে নিয়ে
দূর থেকে তাকিয়ে দেখলাম ঐ ব্যক্তি হচ্ছে রাজু। যে ব্যক্তি আমাকে ওসপার করে দিতে চেয়েছিলো। ওর দিকে তাকিয়ে আমার শিড়দাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। ও আবার এখানে কেন? কি ফন্দি এঁটেছে কে জানে? জুলকারনাইন ওকে দেখে বললো,
—-কি ব্যাপার রাজু তুমি এসময়?
রাজু আমার দিকে এমনভাবে তাকালো, মনে হলো আমি এক হিংস্র শ্বাপদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার দিক থেকে মুখটা ফিরিয়ে গম্ভীর হয়ে বললো,
—-বস তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছে।
—–ওকে।
এরপর আমার দিকে তাকিয়ে জুলকারনাইন বললো,
——এভাবে যখন তখন কটেজ থেকে বের হতে চাইবেন না। ভুলে যাবেন না আপনি আমাদের বন্দী।
কারো মুখে কোনো কথা নেই। থমথমে পরিবেশে। আমরা তিনজনে কটেজে ফিরে আসলাম। ওরা দু,জন নিচে ডাইনিংএ বসলো। আর আমি কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে আসলাম। কেন যেন মনে হতে লাগলো ঐ রাজু কোনো সংবাদ এনেছে। সেটা জানার জন্য আমি আমার রুমে না আসে সিঁড়ি দিয়ে উঠে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকলাম। রাজু সেসময় জুলকারনাইনকে বলছে,
—–আন্ডারওয়ার্ল্ডে যে কয়জন হিংস্র আর ভয়হীন মানুষ আছে তার মধ্যে তুমি একজন। যে কারনে এই লাইনে অল্পসময়ে তোমার অনেক কদর হয়েছে। ইদানিং তোমার আচরণে আমি বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। ভুলে যেওনা এখানে সবাই তোমাকে সামঝে চললেও তোমার শত্রুর সংখ্যা কিন্তু কম নয়। আর ঐ মেয়েটা কিন্তু আমাদের শত্রুপক্ষের। এ ছাড়া ও তোমার কাছে বসের আমানত। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।
——আমি তো আমার আচরণেকোনো পরিবর্তন দেখছি না।
—–তুমি দেখছো না কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে something wrong.
—–তুমি ভুল বুঝেছো। আসলে রুবাইয়াতের সাথে একটু ভালো ব্যবহার করার একটাই কারণ সেদিন ও আমার ঐ গুলিটা যদি বের না করতো হয়তো পুলিশের হাতে ধরা দিতে হতো। কারণ হাসপাতালে গেলেই পুলিশ খুব সহজেই আমার খোঁজ পেতো। এতোদিনে ক্রসফায়ারে আমার মৃত্যুও হয়ে যেতো। এটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি ধরা পড়লে বসের আন্ডারওয়াল্ডের সব কুকীর্তি ধরা পড়ে যাবে। তার থেকে আমাকে মেরে ফেললে দু,পক্ষের মামলা সলভ হয়ে যাবে। আর ঐ মুহুর্তে গুলিটা যদি বের না করা হতো তাহলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেও আমার মৃত্যু হতে পারতো। আল্লাহ হায়াত রেখেছে বিধায় এখনও বেঁচে আছি। তবে ঐ মেয়েটা গুলিটা বের করতে সাহায্য করেছিলো। সেই কারণে ওকে একটু সমীহ করা। এর বেশি কিছু নয়।
——এর বেশী কিছু না হলেই সবার জন্য মঙ্গল। এখন চলো। আমার সাথে হুন্ডা আছে। বসের কাছে দ্রুত যেতে হবে। বস বিশেষ সুত্রে খবর পেয়েছে ওদেরকে মনে হয় ক্রস ফায়ারে দেওয়া হবে।
——-তাহলে ও।র কি হবে?
—–ওর কথা বাদ দাও। সরকার পক্ষ থেকে তোমার মাথার দাম ধরা হয়েছে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। সেটা নিয়ে এখন ভাবো।
জুলকারনাইন ক্রুর হাসি হেসে বললো,
——-আমার মাথার দাম পঞ্চাশ লক্ষ টাকা।
এ কথা বলে ও আবারও অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
এরপর হাসি থামিয়ে বললো,
—– আর মৃত্যুর কথা বলছো। যে অলরেডী মরে গেছে তাকে মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছো?
এ কথা বলে ও আবারও অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
ওর হাসি দেখে রাজু বলে,
—–এখানে হাসির কি আছে বুঝলাম না। গুলতি জুরকারনাইনের নিশানা কখনও মিস হয় না। সুতরাং যতদিন বেঁচে রবে আন্ডারওয়াল্ডে রাজত্ব করে যাবে। আন্ডারওয়াল্ডের সেনাপতির মাথার মুল্যের দাম এটা হওয়াই তো স্বাভাবিক। সমুখে মৃত্যু দেখেও মানুষের বেঁচে থাকার সাধ হয়। এছাড়া মানুষের জীবন এক জটিল যাত্রাপথ। যে পথের আনাচে কানাচে রহস্য লুকিয়ে থাকে। এই যেমন তুমি? তুমি কি জানতে এভাবে আন্ডারওয়াল্ডে রাজত্ব করবে। তোমার ভবিতব্য তোমাকে এখানে টেনে নিয়ে এসেছে। সামনে তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে কে জানে? এটা শুধু তোমার ক্ষেত্রে নয়। সবার ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য। কেউ জানে না তার ভবিতব্যে কি লেখা আছে। আমাদের হায়াত মৌত রিজিক দৌলত সব আল্লাহপাকের কাছেই বরাদ্দ রয়েছে। চল এবার যাওয়া যাক। বস অপেক্ষায় আছে।
ওরা উঠার আগেই আমি দ্রুত আমার রুমে পৌঁছে গেলাম। একটু পড়েই হুন্ডা স্টার্টের শব্দ পেলাম। রুমে এসে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল। আজকে যা শুনলাম এরপর আমি স্থির থাকতে পারছি না। আব্বু যদি ওদের ক্রসফায়ারে দিয়ে দেয় তাহলে ওরাও তো আমাকে আর আদরে রাখবে না। জানে মেরে ফেলবে। ভাবতেই দুচোখ দিয়ে কান্নার জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আমার তখন মনে হচ্ছিলো হাতে পায়ে কোনো শক্তি নেই। আমি যেন আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। যদিও বিছানায় শুতে ইচ্ছা করছিলো না। কেননা এখানে জুলকারনাইন শুয়েছে। তারপরও নিজেকে সামলাতে না পেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। বালিশটা টেনে মাথায় দেওয়াতে ঐ যন্ত্রটা দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। একবার মনে হলো জুলকারনাইন ইচ্ছে করে রেখে যায়নিতো? তারপরও কাঁপা কাঁপা হাতে আমি মোবাইলটা তুলে নিলাম। মন বলছে, রুবাইয়াত এরকম সুযোগ আর পাবি না। শীঘ্রই সুযোগটা কাজে লাগা। আসলেই এরকম সুযোগ আমি আর পাবো না। আব্বুর মোবাইল নাম্বার আমার মুখস্ত আছে। যেই ফোনটা করতে যাবো অমনি মোবাইল বেজে উঠলো। স্ক্রীণে তাকিয়ে দেখি” বস” নাম উঠেছে। আমি চমকে বিছানায় রেখে দিলাম। কয়েকবার বেজে আবারও বন্ধ হয়ে গেল। আমার দম আটকে আসছে। কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে আবারও মোবাইলটা হাতে নিলাম। নাম্বার টিপতেই আবারও বেজে উঠলো। এবার রাজু নামটা স্ক্রীণে ভেসে উঠলো। একটু অবাক হলাম। রাজু তো ওর সাথেই আছে। তাহলে ওর মোবাইলে রাজু ফোন করবে কেন? আমি মোবাইলটা আবারও বিছানায় রেখে দিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবারও ফোনটা হাতে তুলে নিলাম। এমন সময় দরজায় কে যেন টোকা মারলো। তাড়াতাড়ি ফোনটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখলাম। তারপর দরজা খুলে দেখি কমলা দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে বললো,
——ম্যাডাম টেবিলে খাবার বেড়ে দিয়েছি। খেতে আসেন।
কমলা চলে যাবার পর লাস্ট চান্স হিসাবে আবার মোবাইলটা হাতে নিলাম। সেই মুহুর্তে কটেজের সামনে একটা হুন্ডা এসে থামলো।

চলবে

#ধারাবাহিক গল্প
#অন্তহীন প্রেম
পর্ব-আট
মাহবুবা বিথী

কে আসলো সেটা দেখার জন্য ফোনটা রেখে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং এ চলে আসলাম। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি রাজু আর জুলকারনাইন হন্তদন্ত হয়ে কটেজের ভিতরে চলে আসছে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি ওরা ডাইনিং এ আমাকে দেখে নিজেদের মধ্যে আই কন্টাক্ট করলো। বডিল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হলো ওরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আমিও টেবিলে খেতে বসে ভাবলাম, ওরা মনে হয় ফোনটা নিতে আসছে।আজকে কমলা ডাল ভাত আলুভর্তা আর ডিমভাজি করেছে। এতেই আমি খুশী। এমনিতেই ভয়ঙ্কর পরিবেশে আছি। এর মাঝে যে খেতে পারছি এতেই আল্লাহপাকের কাছে অনেক শোকরিয়া। খেতে খেতে ভাবলাম রাতে আর নীচে ডাইনিং এ খেতে আসবো না। কমলার যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে ওকেই বলবো রুমে খাবারটা পৌঁছে দিতে। এরমধ্যে রাজু আর জুলকারনাইন বের হয়ে হোন্ডায় উঠে বসলো। রাজু চলে যাওয়ার সময় আমার দিকে আবারও হিংস্র শ্বাপদের দৃষ্টিতে তাকালো। আর সাথে সাথে আমারও মেরুদন্ড দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। খাওয়া শেষ করে কমলাকে রাতের খাবার ঘরে পৌঁছে দিতে বলে রুমে চলে আসলাম। যদিও জানি ফোনটা ওরা নিয়ে যাবে তারপরও কৌতুহলবশত বালিশটা সরিয়ে দেখলাম। হ্যাঁ সত্যি ওরা ফোনটা নিয়ে চলে গেছে।
মনে হলো বাঁচার শেষ আশাটাও হাতছাড়া হয়ে গেল। এটা মনে হতেই শরীরটাতে রাজ্যের অবসাদ যেন নেমে আসলো। বুকের ভিতরটা হুহু করে উঠলো। আমি কাঁদছি না কিন্তু চোখ দিয়ে অনবরত বর্ষার জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। বনের ভিতরে সকালের সুর্যের আলো আসতে যেমন দেরী হয় তেমনি বিকালের আগেই অন্ধকার নেমে আসে। তারপর একসময় ঝুপ করে বনান্তর অন্ধকারে ঢেকে যায়। যদিও আমার উঠে বাইরের প্রকৃতি দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না তবুও কাঠ আর টিন দিয়ে তৈরী কটেজে থেকেই আমি বুঝতে পারছি এখানে অন্ধকার নেমে আসছে। সেই সাথে মনে হলো আমার পৃথিবীটাকে অমাবশ্যার অমানিশা গ্রাস করে ফেলছে।
দরজায় টোকা মারার শব্দ হচ্ছে। ভয়ে দরজাটা খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু মনে হলো জুলকারনাইন আমাকে ডাকছে। আমিও সেই ডাকে মোহগ্রস্ত হয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। ও আমাকে দেখে বললো,
——বাইরে খুব সুন্দর জোৎস্না উঠেছে। চলেন একটু হেঁটে আসি।
আমি ওর ডাককে উপেক্ষা করতে পারলাম না। ওর হাত ধরে বাইরে চলে আসলাম। আসার পর মনে হলো না আসলে এতো সুন্দর জোৎস্নায় স্নান করা অরণ্য আমার দেখা হতো না। চারিদিকে শুনসান নিরবতা। কোনো সাড়াশব্দ নেই। চাঁদের আলোতে গাছের ছায়া পড়ার কারণে পরিবেশটা রহস্য ময় হয়ে উঠেছে। দূর থেকে মহুয়া ফুলের খুব মিষ্টি সুবাস ভেসে আসছে। এছাড়াও গাছের সবুজ পাতার সুঘ্রাণ আমাকে মোহিত করে দিলো। আমার প্রাণটা আকুল হয়ে আছে। হঠাৎ অপরিচিত একটা পাখির ডাক ভেসে আসলো। এই রোমাঞ্চিত পরিবেশে জুলকারনাইনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
——আপনার কখনও এই অন্ধকার জগত থেকে বের হয়ে আলোর পানে হাঁটতে ইচ্ছে হয়নি? ভালোবেসে সুখের নীড় বাঁধার স্বপ্ন দেখতে মন চায়নি?
——অন্ধকার জগত আলোরজগতে ফেরার কথা বলছেন? মৃত মানুষের আলো আর অন্ধকার বলে কিছু থাকে না। আমি এমন এক পৃথিবীতে বাস করি সেখান থেকে কখনই ফেরা সম্ভব নয়। এখান থেকে বের হওয়া মাত্রই রাষ্ট্র আমাকে গুলি করে মারবে। নয়তো মাফিয়ারা মেরে ফেলবে। তবে আমি অন্ধকার জগতে হাঁটলেও কিছু নীতি এবং নৈতিকতা বোধ নিয়ে চলি।
এরপর আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
——ভাবছেন,সন্ত্রাসীর আবার নীতি আর নৈতিকতাবোধ? আমি আজ অবধি কখনও কোনো ব্রোথেলে পা মাড়াইনি। কোনো নিরপরাধ মানুষের বুকে অস্ত্র ধরিনি কিংবা খুন করিনি। আমি যাদের মেরেছি তারা সবাই দাগী আসামী। কোনো নারীকে খুন কিংবা অসম্মান করিনি। কি যেন স্বপ্নের কথা বললেন? হা আপনাকে দেখার পর মাঝে মাঝে একটা স্বপ্ন মনের দুয়ারে কড়া নেড়ে বলে জীবনটাকে নিয়ে একটু অন্য রকম ভাবলে ক্ষতি কি?
আমি ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আছি। একটা খুনীর হাসি এতো সুন্দর নিস্পাপ হতে পারে ওর হাসি না দেখলে জানা হতো না। এরপর অবাক করে দিয়ে আমার দিকে দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—–আমার জীবন হচ্ছে এক অথৈ সমুদ্র। এই সমুদ্রের যাত্রাপথ অনিশ্চিত। এখানে কখনও দিনের ঝকঝকে আলো প্রবেশ করে না। রাত্রির অন্ধকারের উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে এই অনিশ্চিত যাত্রাপথ পাড়ি দিতে হয়। এই পথের বাঁকে বাঁকে বিপদ ওঁৎ পেতে থাকে। পারবেন আমার অনিশ্চিত জীবনটার সাথে নিজের জীবনকে জড়িয়ে নিতে?
ওর কথা যতই শুনছি ততই যেন হৃদয়ের তন্ত্রীতে ব্যথার সুর বেজে উঠছে। এই কয়দিনের পরিচয়ে সমাজ সংসার আর রাষ্ট্রের কাছে অবাঞ্চিত এই মানুষটার জন্য মায়া হতে লাগলো। সেই মায়ার টানে কেবলই মনে হতে লাগলো এই মানুষটা ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ। আমি মোহাবিস্টের মতো ওর হাত দুটো শক্ত করে ধরলাম। ও আমাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করতে লাগলো। এমন সময় প্রচন্ড শব্দে রাত্রির নিরবতা খানখান হয়ে ভেঙ্গে পড়লো। ও আমার বুকের পরে লুটিয়ে পড়লো। পুরো শরীর রক্তে রাঙ্গিয়ে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম। এমন সময় বনের ভিতরে সরসর শব্দ হলো। সেদিকে তাকিয়ে দেখি রাজু ওর পান খাওয়া রক্তিম দাঁতগুলো বের করে জান্তব হাসি হেসে পিস্তল হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। পিছনে আরো কিছু ষন্ডা মার্কা মানুষও আসছে। আমি যেন হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেললাম। জুলকারনাইনের শরীরের ভার বইতে না পেরে ওকে জড়িয়ে ধরে মাটিতে বসে পড়লাম। তারপর রাজু আমার দিকে তেড়ে এসে বললো,
—–দেখবো এবার বসের লগে কতো ছিনালী করতে পারিস?
তারপর আমার কাছ থেকে জুলকারনাইনকে কেড়ে নিতে চাইলো। আমি চিৎকার করে ওকে আরো শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললাম,
——না,ওকে আমি তোমাদের হাতে তুলে দিবো না।
রাজু ক্ষেপে গিয়ে বললো,
——ঐ মাগী ছাড় বলছি? বস তরে নিয়া যাবার কইছে। তোর বাপ তো আমাদের লোকগুলারে ক্রসফায়ারে দিছে। এইবার আমরা তোরে ক্রসফায়ারে দিমু। তারআগে কিছু কাম তো বাকি আছে।
একথা বলে খুব বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগলো। ঐ ষন্ডামার্কা লোকগুলোর সাথে আমি পেরে উঠলাম না। ওরা জুলকারনাইনকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে রাজুর দিকে তাকিয়ে বললো,
—–বস, এবার কি করুম?
——এইডা আবার কইতে হইবো? ঐ খালে ফালাইয়া দিবি। জন্তুগুলো কতদিন মানুষের মাংসের স্বাদ পায় না।
আমি ওদের বিভৎসতায় চমকে উঠলাম। এরপর রাজু আমাকে পাঁজা কোলে করে নিয়ে একটা পিকআপে উঠালো। সাথে সাথে ষন্ডামার্কা লোকগুলো জুলকারনাইনকে ফেলে দিয়ে এসে পিকআপের পিছনদিকটায় উঠে বসে উল্লাস করতে লাগলো। গল্পে পড়েছিলাম নরবলি দেওয়ার সময় এভাবে নাকি উল্লাস করতে করতে যায়। মনে হলো গাড়ি গভীর বনের দিকে ছুটে চলছে। ঘন্টাখানিক চালানোর পর বাংলোটাইপের বাড়ির সামনে এসে থামলো। বাড়ি বললে ভুল হবে এযেন একটা রাজপ্রসাদ। পুরোনো আমলের জমিদার বাড়ির আদলে বানানো হয়েছে। রাজু গাড়ি থামিয়ে আমাকে আবার পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। নারীদেহ ছোঁয়ার সুযোগ পেয়েছে সেটার সদ্বব্যবহার করতে রাজু এক মুহুর্ত দেরী করলো না। ওকে দেখা মাত্রই আফ্রিকানদের মতো দেখতে দুটো গার্ড গেট খুলে দিলো।তারপর লন পেরিয়ে বিশাল এক মেহগনি কাঠের দরজা গার্ডরা খুলে দিলো। রাজু আমাকে নিয়ে সে দরজা দিয়ে মার্বেলের মেঝেতে ঠাস করে ফেলে দিলো। ঘরের পরিবেশটা আবছা লাল আর নীলচে আলোয় মাখামাখি। আমার ঠিক সামনে সিংহাসনের মতো ডিভানে রাজার মতো আয়েশী ভঙ্গিতে একজন বসে আছে। তার দুপাশে বাঈজীর মতো সাজ পোশাকে দুজন নারী দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের আলু থালু বেশ দেখে সহজেই অনুমেয় রাজা ওদের কাছে কি সেবা নিয়েছে? ঘরের ভিতর উগ্র পারফিউমের গন্ধে আমার দম বন্ধ হবার যোগাড়। রাজু ঐ বসটাইপের লোকটার দিকে তাকিয়ে বললে,
——বস এই আপনার আমানত নিয়ে এসেছি।
——জানোয়ারটাকে কি করেছিস?
খ্যাক খ্যাক করে হেসে রাজু বললো,
——এক জানোয়ারকে আমি অন্য জানোয়ারদের হাতে তুলে দিয়েছি।
——ঠিক কাজ করেছিস। তোরা এখন সবাই এই রুম থেকে বেড়িয়ে যা। আমি এখন পাগলা ঘোড়াকে বসে আনবো।
——বস আমাকে কিছু নজরানা দিবেন না?
—–পাশের রুমে টেবিলে রাখা আছে। নিয়ে যা।
সবাই বের হয়ে যাবার পর ঐ লোকটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আমি খাঁচায় বন্দীর পাখির মতো ছটফট করতে লাগলাম। এমন সময় জোরে জোরে দরজা নক করার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কাঁদতে কাঁদতে কতক্ষণ ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে?ঘুম ভাঙ্গলে দেখি আমার পুরো শরীর ঘেমে গেছে। এবং স্বপ্নের রেশ তখনও আমার শরীর আর মনে রয়ে গেছে। একদম জীবন্ত মনে হয়েছিলো। ভয়ে দরজা খোলার সাহস হচ্ছিলো না। এখানে আবার কি ঘটবে কে জানে?

চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ