Monday, October 6, 2025







নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব-১৩

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_১৩
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

নিষাদ আনমনে হেসে উঠল সেসব দিনের কথা ভেবে।দিনগুলো সুন্দর ছিল, মুহুর্তগুলো রঙ্গিন ছিল।অতীতের স্মৃতি থেকে বর্তমানে ফিরেই সেতুর দিকে তাকাল।হাত এগিয়ে চিরকুটটা নিয়েই কিয়ৎক্ষন চোখ বুলিয়ে নিল। ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,

” এই অনুভূতিগুলো তোমার কাছে অনেক আগেই প্রকাশ পেয়েছিল সেতু।যখন তুমি কিশোরী তখনই।আশ্চর্যের বিষয় হলো তখন তুমি অবহেলায় মুড়িয়ে অনুভূতিগুলোকে দুমড়ে মুঁছড়ে দিয়েছিলে।আজ এতগুলো দিন পর সেই অনুভূতি গুলো জেনে এত আয়োজন করে ডেকে আনার তো মানে দেখছি না।”

সেতু বাস্তবে ফিরল নিষাদের কথায়।চোখজোড়ার দৃষ্টি নিষাদের দিকে ফেলতেই ঠোঁটের কোণে হাসি চোখে পড়ল।অথচ কন্ঠে শীতল ক্ষোভ।কি সুন্দর হেসে হেসে একঝুড়ি কঠিন কথা শুনিয়ে দিল।সেতু মলিন হেসে বিছানার এককোণায় বসল।ঠোঁট নেড়ে বলে উঠল,

” অনুভূতি গুলো পুরাতন ঠিক তবে এখনও সতেজ!আমি কি ভুল বলছি নিষাদ?”

নিষাদ দৃষ্টি সরু করল।ঝুঁকে গিয়ে বিছানা থেকে সবগুলো চিরকুট তুলে হাতের মুঠোয় মুঁছড়ে ফেলল।শার্টের পকেটে সেই দুমড়ানো, মুঁছড়ানো চিরকুটগুলো গুঁজে নিয়েই বলল,

” এই চিরকুট গুলো তোমায় দিব বলে তখন খামখেয়ালিতে লিখেছিলাম।ড্রয়ারের কোণে পড়ে ছিল তাই আর মনেই পড়েনি এসব ফেলার কথা।ভালোই করেছো বের করেছো।”

সেতু আঘাত পেল।চোখ টলমল করল।নিষাদের থেকে আর যায় হোক এমন কথা আশা করেনি সে।ঠোঁট কাঁমড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে কান্না আটকাল।বলল,

” এই যে এসব বলছেন?নিজের অনুভূতিকেই অপমান করছেন না নিষাদ?আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি এসব ফেলবেন না।ফেলতে পারবে না।তবে এই যে কথাগুলো বললেন, কি প্রমাণ করলেন এসব বলে?”

নিষাদ মৃদু হাসল।ঠোঁট চওড়া করে বলল,

” তুমি আসলেই বুদ্ধিমতী সেতু।”

” বিষয়টা আসলে ভুল নিষাদ।আমি বুদ্ধিমতী নই।তবে আমার প্রতি আপনার দুর্বলতা সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে জানি বলেই আপনার কথোপকোতনের মানে বুঝতে পারি।”

” কি বুঝলে তাহলে?”

সেতু চুপ রইল কিয়ৎক্ষন।ছোট্ট শ্বাস টেনে কিছুটা সময় পর শুধাল,

” আপনি কি বদলে গিয়েছেন নিষাদ?আপনার মাঝে কি খুব বিশাল বদল এসেছে?”

নিষাদ ভ্রু জোড়া কুঁচকে শীতল চাহনীতে চাইল।পকেটের মুঁছড়ে ফেলা কাগজগুলো বের করে পা বাড়িয়ে ড্রয়ারে রাখল।ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ড্রয়ার বন্ধ করতে নিয়েই বলল,

“হঠাৎ এমন প্রশ্ন?এই মাত্র না বললে আমার কথোপকোতনের মানে বুঝো?তোমার প্রতি আমার দুর্বলতা বুঝো?”

” বুঝি, বুঝতাম। কিন্তু আমার বুঝাই যে সঠিক হবে এমন কি কোন মানে আছে নিষাদ?পরীক্ষার খাতায় অনেক সময় কোন একটা অঙ্ক বেশ কনফিডেন্স নিয়ে করে আসি, কিন্তু পরে দেখি সেই অঙ্কেই শূণ্য মিলল!তাই না?”

” আমি তোমার সামনে বরাবরই খুব বেশি সহজ, সরল।পরীক্ষার খাতায় সহজ প্রশ্নেরও কি ভুল উত্তর লিখে দিয়ে আসে সেতু?তবে তো দোষটা তোমার।ভালো করে পড়লে তো এত সহজ প্রশ্ন ভুল লিখে দিয়ে আসতে না।”

সেতু হেসে দিল আড়ালে।মৃদু গলায় বলল,

” এই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ কি জানেন নিষাদ?মানুষের মন বুঝা।এই পৃথিবীতে মানুষের পছন্দ বদলায়, অনুভূতি বদলায়, মনের মানুষ বদলায়।সবকিছুই বদলায়।তাও আবার ক্ষনিকে ক্ষনিকেই।আমি যে ব্যাক্তি নিষাদকে বুঝে বসে আছি,কিংবা বুঝেছিলাম কোন একটা সময় তার মাঝে যে একটুও পরিবর্তন আসবে না বা আসেনি তেমন তো কোন নিশ্চায়তা নেই তাই না?মানুষ বড়ই বিচিত্র প্রাণী!বছরের পর বছর বুঝে উঠেও কোথাও গিয়ে একটা সময় পর টের পাওয়া যায়, আসলে আমরা কিচ্ছু বুঝিনি। ”

নিষাদ মনোযোগ দিয়ে শুনল।বিনিময়ে বলল,

“আমার মাঝে কি কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করলে?”

সেতু চট করেই বলে বসল,

” আপনার অনুভূতি কি আগের মতোই জলজ্ব্যান্ত,সতেজ রয়েছে?একটুও কি বদলায়নি অনুভূতির আস্তরণের ঘনত্ব?”

” সন্দেহ হচ্ছে তোমার? ”

সেতু এবার হাসল।মনে মনে যেন এমন একটা জবাবই চেয়ে বসে ছিল এতক্ষন।হৃদয়ে প্রশান্তি খেলে গেল।ঠোঁট চেপে বলল,

” আপনার কখনো মনে হবে না আপনি ঠকে গেলেন?শুধুমাত্র একঝুড়ি অনুভূতির জন্য আমায় বিয়ে করে বসলেন।পরে কখনো আপসোস হলে?কি করবেন তখন?”

নিষাদ শান্ত কন্ঠে শীতল রাগ ঢেলে বলল,

” আপসোস হলে নিজেকে মেরে ফেলব।যে মনে তোমায় নিয়ে সংকোচ তৈরি হবে সে মনের মৃত্যু কামনা করব।আর কিছু?”

সেতু মুগ্ধ হলো।কিন্তু সে মুগ্ধতা প্রকাশ করল না।বিছানা ছেড়ে উঠে ডানে বামে মাথা নাড়াল।যার অর্থ, না।নিষাদ টানটান মুখ করে কঠিন কন্ঠে শুধাল,

” উত্তর পেয়েছো তোমার?আর কোন প্রশ্ন নেই?”

সেতু মাথা তুলে চাইল।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

” চিরকুটের কথা গুলো আমার আগে থেকেই জানা ছিল নিষাদ।এতগুলো দিন পর একই অনুভূতিগুলো আবারও চোখে পড়তেই কৌতুহল জাগল।কৌতুহল মিটে গেছে।”

” কৌতুহল মিটানোর কি দরকার ছিল?শুধু এইটুকু জানা যে আমি তোমার প্রতি এখনও ততোটাই দুর্বল আছি কিনা?”

” না, কৌতুহল মিটানোর মানে আপনার সহজ সরল স্বীকারোক্তি!”

নিষাদ ভ্রু জোড়া কুুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

” স্বীকারোক্তি আগে পাওনি সেতু?”

সেতু মাথা দুলিয়ে বলল,

” পেয়েছিলাম।বারংবার পেয়েছিলাম।”

” তবে নতুন করে স্বীকারোক্তির কি প্রয়োজন?বাঙ্গালি বউদের মতো যাচাই করলে নাকি আমায়?”

সেতু কথা কাঁটানোর জন্য বলল,

” ছবিগুলো কেন তুলেছেন? আপনার জন্য তো ঘরের ভেতরও ঠিকঠাক মতো চলতে পারব না।কখন না জানি চুরি করে ছবি তুলে নিবেন।”

নিষাদ পাত্তা দিল না কথায়গুলোতে।আয়েশ করে বলল,

” বেশ করেছি।”

“অধিকার দিয়েছি আপনাকে?”

নিষাদের টানটান কঠিন চেহারা এবার মিইয়ে গেল।মুহুর্তের মধ্যেই আঁধার নামল মুখে।সেতু সবটা খেয়াল করল। প্রকাশ্যেই নিঃশব্দে হেসে দিল। নিষাদ শীতল অথচ গহীন চাহনীতে মাথা তুলে তাকিয়ে রইল সেই স্নিগ্ধ হাসিতে।মেয়েটার হাসি মারাত্নক!হৃদয়ে চিনচিনে ব্যাথা ধরিয়ে দেয়।হয়তো হাসিটা মারাত্নক বলেই সচারচর হাসে না সে।যদি সচারচর সবসময় নিষাদের চোখের সামনে হেসে বেড়াত তাহলে কিজানি কি হতো!হয়তো নিষাদ অল্পদিনেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হসপিটালের বেডে গড়াগড়ি খেত।নিষাদ এই সাংঘাতিক ভাবনাটা ভেবেই চাহনী তীক্ষ্ণ করল দ্রুত।কন্ঠ কঠিন করে তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,

” এই মেয়ে, একদম এভাবে হাসবে না।হাসলে চোখের সামনে থেকে দূরে গিয়ে হাসো।দ্রুত যাও।”

সেতু হাসি থামিয়ে তাকাল।চাহনী সরু করে জিজ্ঞেস করল,

” মানে?”

” আবার মানে জিজ্ঞেস করছো?”

সেতু অবাক হয়ে বলল,

” কি করলাম আমি?”

” অন্যায় করেছো।ভারী অন্যায়।আমার এখন কেমন জানি লাগছে।”

সেতুর দৃষ্টি চুপসে গেল।কি করেছে না বুঝেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল কিয়ৎক্ষন।বিছানা থেকে ছবিগুলো গুঁছিয়ে আলমারির ড্রয়ারে রাখতে রাখতেই নিষাদ গমগমে কন্ঠ ভেসে আসল কানে,

” ঐ ড্রয়ারে কাল থেকে তালা ঝুলবে।ড্রয়ারে হাত দিলেই তোমার শাস্তি।”

সেতু মনে মনে হাসল।পা বাড়িয়ে রুম ছেড়ে যেতে যেতে মিহি কন্ঠে শুধাল,

” আপনার ইচ্ছে।”

.

নিষাদ ঘামে ভেজা শার্টটা প্রতিদিনের মতো বিছানায় রাখল।জামাকাপড় বদলে মুখচোখে জল দিল। ফুরফুরে মেজাজে রুম ছেড়ে বের হলো।উঁকিঝুকি মেরে নীরুর রুমে গিয়েই নীরকে ছো মেরে কোলে তুলল।নীরের গাল টিপে বলল,

“বাচ্চাটা আমার, কি করছো তুমি?”

নীরু বসা ছেড়ে উঠল।রাগে নাক ফুলিয়েই বলে উঠল,

” ও আমার কোলে খেলা করছিল।দেখোনি?”

নিষাদ ভ্রু কুঁচকাল।বলল,

” তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি?আমি তো নীরের সাথে কথা বলছি।”

নীরু গাল ফুলিয়ে রাখল।ঠোঁট চেপে শপথ করল আর কোন কথা বলবে না।নিষাদ হালকা হেসে নীরকে কাঁধে চাপাল।হাতজোড়া ধরে বলল,

” নীর?নীরুকে কেমন লাগছে দেখো।গাল ফুলিয়ে একদম কুমড়ো মতো লাগছে না?তুমি এবার থেকে ওকে কুমড়ো বলেই ডাকবে। সুন্দর হবে না?নীরু কুমড়ো!আহ! সুন্দর নাম।”

নীর কিছু বুঝল কি বুঝল না কে জানে।তবে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।নিষাদের কাঁধে চেপে বসেই দুই হাতে আঁকড়ে ধরল নিষাদের ঝাকড়া চুল।আধো আধো স্বরে ঠোঁট উল্টে নীরুর দিকে তাকিয়ে বলল,

” ন্ নী লু!”

নীরু রাগে ফোঁসফাঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে বলল,

” কি শিখাচ্ছো তুমি নীরকে?আমাকে কুমড়ো বলতে শিখাচ্ছো?তুমি কি!আস্ত একটা গরু।সারা দুনিয়া জানে তুমি একটা গরু।লজ্জ্বা করে না আরেকজনকে কুমড়ো বলতে শিখাচ্ছো?”

নিষাদ ত্যাড়া চাহনীতে তাকিয়ে বলল,,

” লজ্জ্বা করবে কেন?যেটা সত্যি সেটাই তো বলেছি।ভুল কিছু বললাম?”

নীরু অন্যদিকে ফিরে চাইল।মুখ ফুলিয়ে বলল,

” না।শুদ্ধ,সঠিক,খাঁটি একটা কথা বলেছো।ভুল কিছু বলতে পারো?যাও এখন তাড়াতাড়ি আমার ঘর ছেড়ে।”

“ছিঃ,নীরু!ওসব শিখিয়েছি তোকে?বড় ভাইকে ঘর থেকে বাইর করে দিচ্ছিস? ছিঃ ছিঃ ছিঃ!”

” ছিঃ ছিঃ না করে বাইর হও তাড়াতাড়ি।”

নিষাদ ঠোঁট গোল করে নিঃশ্বাস ছাড়ল।কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই নীরু বলল,

” ওহে গরু!তোমায় যেতে বলেছি আমি।নীরকে না।ওকে ঘাড় থেকে নামিয়ে দিয়ে রেখে যাও। ওর সাথে কথা আছে আমার।বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কথা!”

নিষাদ পিঁছু ফিরে চাইল।চোখজোড়া সরু করে প্রশ্ন ছুড়ল,

” তোর আবার কিসের গুরুত্বপূর্ণ কথা ওর সাথে?”

“আছে গুরুত্বপূর্ণ কথা।তোমার মাথার চুল সব একে একে ফেলে দেওয়ার শিক্ষা দেব ওকে।বুঝলাম না কিছু, এতগুলো দিন ও তোমার মাথার চুল টেনেই যাচ্ছে।অথচ তোমার চুল আগের মতোই ঝাকড়া, ঘন!

নিষাদ হাসল।হাসি থামিয়ে তীক্ষ্ণ চাহনীতে তাকিয়েই বলল,

” তবে তুইই এসব আজেবাজে শিক্ষা দিস ওকে?আমিও তো বলি, আমি তো ওকে এমনকিছু শিখাইনি।শিখাচ্ছে টা কে!আজ উত্তর পেয়ে গেলাম।”

কথাটা বলে নীরকে আগের মতোই কাঁধে রেখে বেরিয়ে আসল নিষাদ।সোফায় বসেই এদিক সেদিক তাকাল।ঘরে মা নেই।সেতু রান্নাঘরে কোমড়ে আঁচল গুঁজে কিছু করছে।নিষাদ তাকিয়ে রইল সেদিক পানে।কিছুক্ষন পরই চোখাচোখি হলো।নিষাদ অবশ্য দৃষ্টি সরাল না।সেতুই নজর অন্যদিকে সরিয়ে কাজে মন দিল।কিছুটা সময় পর হাতে চায়ের কাপ সমেত এগিয়ে আসল নিষাদের দিকে।চায়ের কাপটা নিষাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নীরকে কোলে তুলল।স্পষ্টভাবে বলে উঠল,

” এভাবে তাকিয়ে থাকেন কেন?তাকিয়ে থাকবেন না।”

নিষাদ চোখ তুলে তাকাল।চায়ের কাপ ঠোঁটে লাগিয়ে চুমুক দিল।প্রশ্ন ছুড়ে বলল,

” তাকালে কি হবে?”

” আমার অস্বস্তি হয়।”

নিষাদ হাসল।আয়েশ করে বলল,

” তাতে আমার কি?আমার তো অস্বস্তি হচ্ছে না।স্বস্তি লাগছে বরং!”

সেতু দৃষ্টি ক্ষীণ করল।কিছুটা সময় স্থির দাঁড়িয়ে থেকেই নীরকে নিয়ে রুমে আসল।বিছানার উপর খেলনা ছড়িয়ে নীরকে বসিয়ে দিয়েই হাসি হাসি মুখে বলল,

” তোমার ক্ষিধে পায়নি বাবা?সারাদিন না খেয়ে থাকলে কি করে হবে।খেতে হবে তো।বড় হতে হবে না তাড়াতাড়ি?আমি খাবার নিয়ে আসলে চুপচাপ খেয়ে নিবে।হুহ?জ্বালাবে না কিন্তু একদম খাবার খাওয়া নিয়ে।”

কথাটা বলে আবারও রান্নাঘরে আসল।হাতে নীরের জন্য খাবার নিয়েই রুমে এসে দেখল নীর ফুরফুরে মেজাজে খুব মন দিয় খেলছে।সেতু পা এগিয়ে গিয়ে তার পাশে বসল।হাত বাড়িয় খাবার মুখে তুলতে নিতেই নীরের ফুরফুরে মেজাজ মুহুর্তেই তেঁতে উঠল।মুখচোখ কুঁচকে দ্রুত সেতুর থেকে দূরত্ব টানল।যার অর্থ সে খাবে না, কোনভাবেই খাবে না।

.

মোবাইলের স্ক্রিনে এক সুদর্শন যুবকের ছবি।ঠোঁটে দুর্দান্ত হাসি।নীরু সেই হাসিতে আকৃষ্ট হলো।ঝাকড়া চুল, হালকা খোঁচা দাঁড়ি। অনেকক্ষন যাবত সেই যুবকের ছবিটা মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল নীরু।ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসেই মস্তিষ্কে হঠাৎ টের পেল এক দুর্দান্ত দুষ্টু বুদ্ধির।বেশ আয়েশ করে খাটের কোণে বসেই ছবিটায় লাভ রিয়েক্ট দিল।কমেন্টবক্সে গিয়ে সুন্দর কমেন্ট করে বসল।

” এই কি বরসাহেব!দুইদিন পর আমার আর তোমার বিয়ে। আর তুমি আমার ম্যাসেজের রিপ্লাই না দিয়ে ফেইসবুকে সুন্দর সুন্দর ছবি আপ্লোড দিয়ে মেয়েদের মন জয় করছো?”

মোবাইলটা উল্টে বিছানায় রাখল তার পরপরই।ফুরফুরে মেজাজে ঠোঁট গোল করে শিষ বাঁজাতে বাঁজাতেই বিছানায় শুঁয়ে চোখ বুঝল।ওপাশের মানুষটা নিশ্চয় এতক্ষনে রেগে গেছে?রাগে, ক্ষোভে নিশ্চয় তার এখন কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে?নীরু খিলখিলিয়ে হাসল।ম্যাসেজের আওয়াজ পেয়েই চোখ বুলাল মোবাইলের স্ক্রিনে।রঙ্গন ম্যাসেজ দিয়েছে।ম্যাসেজে বেশ সুন্দর ভাবে লেখা,

” কি লিখেছিস এসব নীরু?তোকে আসলেই দুই গালে চারটা চ’ড় মারতে ইচ্ছে করছে!”

সেতু ম্যাসেজটা দেখল,পড়ল।তারপর মোবাইলটা আবারও আগের মতো করে রেখে দিল।মনের মধ্যে আনন্দ বইছে।কেন বইছে তা জানে না তবে অজানা কারণেই তার খুশি খুশি লাগছে রঙ্গনকে জ্বালাতে পেরে।ঘন্টাখানেক বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার পরই মোবাইলে কল আসল।নীরু দৃষ্টি সরু করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইল।রঙ্গন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কল করে না তেমন।তবে আজ কল দিল কেন?নীরু কল রিসিভড করল।একদম শান্ত স্বরে ভদ্রভাবে বলল,

” কেমন আছো গাঁধা?”

রঙ্গন জবাব দিল না নীরুর প্রশ্নের।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” তুই আমার ছবিতে কি কমেন্ট করেছিস?”

নীরু একদম না জানার ভান করেই বলল,

” কি কমেন্ট করেছি? আশ্চর্য!”

” জানিস না তুই?”

নীরু আবারও অবাক হওয়ার ভান করল।কন্ঠে বিস্ময় টেনে শুধাল,

‘ সত্যিই বুঝতে পারছি না গাঁধা।ঠিক কিসের কথা বলছো তুমি?আমি তোমার কোন ছবিতে কমেন্ট করলাম?কোথায় করলাম?কখন করলাম?”

রঙ্গন তেঁতে উঠল।মেজাজ খারাপ করে বলে উঠল,

” তোর এসবকিছুর জন্য তোকে কান ধরিয়ে উঠবস করাব নীরু।সবকিছু নিজে করেই আবার না জানার ভান করছিস?তোর জন্য দিয়া ভাবছে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”

দিয়ার নাম শুনেই নীরু দমে গেল।কিয়ৎক্ষন চুপ থাকল।তারপর শুকনো ঢোক গিলে নরম গলায় বলল,

” দাঁড়াও চেইক করে দেখছি বরং!আমার জানামতে তো আমি কোন কমেন্ট করিনি। ”

” মিথ্যে বলবি তো ঠাস করে চ’ড় মারব।ম্যাসেজ দেওয়ার পর সিন করে রেখে দিয়ে কি ভেবেছিস? পার পেয়ে যাবি তুই?”

নীরু কিছুক্ষন চুপ থাকল।কিয়ৎক্ষন পর অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

” ওমাহ!এই কমেন্টটা তো আমি করিনি গাঁধা।তোমার ম্যাসেজও আমি সিন করিনি।একদম সত্যি বলছি গাঁধা।মনে হয় আমার আইডিটা হ্যাক হয়ে গেছে।কি জ্বালা!”

” কালকেই তোর বাসায় যাব। সামনে পেলেই তোর কান মলে দিব।কি নাটকবাজ মেয়ে!”

নীরু চাপা হাসল।পরমুহুর্তেই মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,

“কোন নাটক করিনি।তুমি বিশ্বাস না করলে কি আমার দোষ?মাঝেমাঝে একটু বিশ্বাস করে তো দেখতেই পারো।ঠকবে না।”

” তোকে আমি খুব ভালোভাবেই চিনি।বিশ্বাসের প্রশ্নই আসে না।”

“এমনভাবে বলছো যেন ভালোবাসতে বলেছি।ভালোবাসার কথা তো বলিনি গাঁধা!থাক তোমায় বিশ্বাস করতে হবে না।শুধু এইটুকু জেনে রাখো, মরে গেলেও ঐ কমেন্ট আমি করব না।তোমাকে বিয়ে?ওয়াক থু!আমার জন্য কি ছেলের অভাব পড়েছে?যে তোমার মতো গাঁধাকেই বিয়ে করব?তোমার মতো গাঁধার ছবিতে গিয়ে কমেন্টে বর বর বলে লাফাব?ছিঃ ছিঃ!”

কথাটা বলে কল কাঁটল নীরু।রঙ্গনের আইডিতে ডুকে প্রত্যেকটা ছবিতে গিয়ে একঝুড়ি যত্ন, ভালোবাসা দেখিয়ে কমেন্ট করে করে কমেন্টের বন্যা বইয়ে দিল।নীরুর মনে ফুরফুরে আনন্দ!মিহি কন্ঠে গাইতে লাগল,” আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে….”

#চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ