Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রেয়সীর শব্দপ্রেমপ্রেয়সীর শব্দপ্রেম ২ পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

প্রেয়সীর শব্দপ্রেম ২ পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম (দ্বিতীয় খন্ড)
#ফারজানা_মুমু
#অন্তিম_পর্ব

সকাল নয়টা,ঘুম ভেঙে গেলো ঝুমঝুমি’র। ফোনটা হাতে নিয়ে সময়টা দেখে অবাক হলো। ওর তো কখনই ঘুম থেকে উঠতে এত দেরি হয় না। ভোরে উঠার অভ্যাস। গতকাল রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর ফলে সকালে উঠতে পারেনি। মাথাটা ঝিম ধরে আছে এখনও। হালিমা খালা কিংবা ঝিনুক কেউ পাশে নেই। আষাঢ়ের কথা মনে পড়ল। গতকাল রাতে আষাঢ় বলেছিল সকালে বের হতে হবে। লোকজনের আড়ালে লুকিয়ে কাগজপত্র ঠিক করতে বেশ দখল যাচ্ছে ওর। মিডিয়া থেকে শুরু করে সবাই খুব ক্ষ্যাপা ঝুমঝুমির উপর। সন্তপর্নে নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানা থেকে নেমে চোখে-মুখে পানি দেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো। ফ্রেশ হয়ে এসে চোখ পড়লো টেবিলের উপরে রাখা কাগজে। ঝুমঝুমি হাতে নিয়ে কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করলো,
‘আমার তেজপাতা’
ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকতে ইচ্ছে করল না,মায়াবিনী মুখটার মায়ায় পরে। তোমার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আমার একটা গানেই বারবার স্মরণে আসছে, ঘুমিয়ে থাকো গো সজনী, ফুলেরও বিছানায়।

আচ্ছা সবকথা বাদ দরকারি কথা বলছি ওহ সরি লিখছি। আমাকে বের হতে হবে। ঘুম থেকে উঠে আমায় পাবে না। সাবধানে থেকো রুম থেকে বের হবে না আমি বিকেলে চলে আসবো। ফোন দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করবে। সকালের নাস্তা করে আবারও ঘুমিয়ে পড় বাইরে একদম বের হবে না গতকাল রাগ করিনি কিন্তু আজ করব। বুঝেছ? ভালোবাসা আমার ঘুমন্ত মায়াবিনী।

যত্ন নিয়ে লেখাটুকু পরে বিছানার নিচে রেখে দিল ঝুমঝুমি। রুমের বাইরে এসে কিচেন রুমে পা বাড়ালো। হালিমা খালা নিশ্চয় রান্না করছে সেইসাথে ঝিনুক খুব জ্বালাচ্ছে হালিমা খালাকে এসব ভেবে-ভেবে কিচেন রুমে আসলো। কিচেন রুমের অবস্থা দেখে চোখে চড়ক গাছ দেখল। সবজি কে’টে-কু’টে রাখা, রাইসকুকারের সুইচ এখনও বোর্ডে লাগানো। কিচেন রুমের চারদিকে ছন্ন ছাড়া অবস্থা। ভড়কে গেল ঝুমঝুমি এমন তো হবার কথা নয়। খালা বেশ পরিপাটি মানুষ এভাবে অন্যমনস্ক হয়ে কাজ করে না। দু’পা পিছু ফিরতেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল ঝুমঝুমি। পিছনে থাকা মানুষটি আষাঢ় নয়। আষাঢ়ের উপস্থিতি টের পায় ঝুমঝুমি সেই সাথে আরেকজনের উপস্থিতিও সে টের পায়। পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসলো। পিছু ঘুরে মাথা তুলে তাকিয়ে দু’পা সরাতেই লোকটি তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে কর্কশ গলায় বলে উঠল,
-” আমার থেকে দূরে কখনই যেতে পারবি না ঝুমঝুমি। তুই তো আমাকে কুকুরের মত ভাবিস আমি আসলেই কুকুর বুঝলি। কুকুর যেমন ঘ্রাণ শুঁকে পথ খোঁজতে পারে আমিও তোর শরীরের ঘ্রাণ শুঁকে তুই যেখানে থাকিস সেখানে যেতে পারি।

ঝুমঝুমি পিছন থেকে সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করল কিন্তু পারলো না। মেঘ দুহাত চেপে কোমরের সাথে চেপে রেখেছে। মেঘের নিঃশ্বাস পড়ছে ঝুমঝুমির ঘাড়ে। পিছন থেকে লা’থি দিল ঝুমঝুমি তবুও মেঘ ছাড়ল না। চিল্লিয়ে বাঘিনীর মত গর্জে উঠল এবার,
-” মেঘ ভাই ছাড়েন বলছি। ধৈর্য্যরে সীমার বাইরে চলে যাচ্ছেন আজকাল। আমাকে একবার ছেড়ে দেখুন আপনার কি হাল করি আমি।

হিংস্র হাসি দিল মেঘ। ঝুমঝুমিকে ওভাবেই টেনে বসার ঘরে নিয়ে আসলো।

-” তুই ছাড়া পেলে আমায় মা’র’তে পারবি ঝুমঝুমি? তোর শরীরে খুব জোর তাই না? আচ্ছা যা তোকে ছেড়ে দিলাম তুই যদি আমায় মা’র’তে না পারিস তাহলে ঝিনুক ও ওই মহিলার জা’ন আমি যত্ন সহকারে নিবো।

ঝিনুক ও হালিমা খালার কথা শোনে ঝুমঝুমি ভয় পেলো। ভয়ার্ত মুখশ্রী জুড়ে ভয়ভীতি। সে জানে একজন শক্তিমান পুরুষের সাথে সে পারবে না। চাল-চাতুরী ছাড়া খু’ন করা একেবারে অসম্ভব। ভীতু কণ্ঠে বলল,
-” ওরা কোথায়? আপনি এখানে কীভাবে এসেছেন? আপনার তো জানার কথা নয়?

অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ল মেঘ। ঝুমঝুমির ঘাড়ে দুটো কা’ম’ড় দিয়ে বলে উঠল,
-” তোর চাচাকে খু’ন করার সময় তুই ভালোই সতর্ক ছিলি কিন্তু তবুও তোর আশপাশ পর্যবেক্ষণ করা উচিৎ ছিল। ওখানের পাশের এক বিল্ডিংয়ে সিসি ক্যামেরা ছিল। আমিও জানতাম না যদি জানতাম তাহলে তোকে সতর্ক করে দিতাম। আচ্ছা বাদ সেসব কথা। যখন টিভিতে তোর নিউজ দেখতে পাই ছুটে আসি তোদের বাসায় এসে দেখি তুই নেই। পুলিশে ভরে গেছে এলাকা। আমি জানতাম তুই এমপির পোলার সাথে পালিয়েছিস। তারপর থেকে এমপির পোলার বন্ধুদের পিছুন ঘুরি আড়ালে, তোর দুইজন বান্ধবী কি যেন নাম ওহ হ্যাঁ তৃষ্ণা-নীরা ওদের উপর নজর রাখি কিন্তু কিছুতেই তোর ঠিকানা পাই না। কথায় আছে সবুরে মেওয়া ফলে আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আষাঢ় আসে ওর বন্ধুদের সাথে দেখা করতে আমি তখন লুকিয়ে দেখি সব তারপর আষাঢ়ের পিছু নিয়ে এদিকে আসি। এখানে আসার পর বিপত্তি ঘটে আরেকটা। রাস্তার ভিতর দিয়ে মাটির রাস্তায় আষাঢ়কে যেতে দেখি। তখন আষাঢ়ের পিছু নেওয়া আমার জন্য রিস্ক যেকোনো সময় ধরা পড়তে পারি। সময় নিয়ে ঐখানে দাঁড়াই। আষাঢ়ের গাড়ি অনেকদূর যাওয়ার পর আমিও বাইক নিয়ে মাটির রাস্তায় নেমে পড়ি। ভাগ্যর কি লীলাখেলা। মাটির রাস্তায় গাড়ির চাকা ঢেবে থাকায় সহজেই এখানে চলে আসতে পারি। এখানে আসার পর দেখি আরেকটু সঙলীলা। তোর আর আষাঢ়ের ঘনিষ্ঠতা। আচ্ছা দিনের বেলায় যেভাবে চিপকাচিপকি ভাবে জড়িয়ে থাকিস রাতের বেলা তো মনে হয় শরীরে পোশাক রাখতে দিস না।

ঝুমঝুমির কান গরম হলো। কা’ম’ড় বসালো হাতে। মেঘ তখন হাত না সরিয়েই ঝুমঝুমির আবেদনময় স্পর্শকাতর অ’ঙ্গে হাত বুলাতে-বুলাতে বলল,
-” তোর দেওয়া ঘৃণার কা’ম’ড় আমার কাছে লাভ বিটের মত লাগে। দে না আরো কয়েকটি লাভ বিট। আহা চরম মজা লাগে।
-” ঝিনুক, হালিমা খালা কোথায়?

ঝুমঝুমির এমন প্রশ্নে ভাবুক হয়ে কি যেন মনে পড়ল অমন ভঙ্গিমায় মেঘ বলে থাকলো,
-” ওহ সরি ভুলে গেছিলাম। এখানে আসার পর তোদের জড়াজড়ি দেখে আমার সহ্য হলো না। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছিল। তাই বাসায় ফিরে আসি। টার্গেট ছিল সকালে আসার। আসার পথে দড়ি,ক্লো’রো’ফ’র্ম স্প্রে কিনে আনি। মজার ব্যাপার কি জানিস আমি যখন বড় রাস্তায় আসি তখনই দেখি তোর নাগর চলে যাচ্ছে। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি হয়ে গেল। চলে আসি তোদের বাসার কাছে এসে দেখি ঝিনুক বাইরে খেলছে। মেয়েটাকে কোলে নেই । একটু আদর করতে চাই ওমনিই বাঘিনীর মত চিল্লিয়ে বলে, এই কে তুমি আমায় নামাও? তুমি বাচ্চা চোর? অবাক হই খুব আমার মেয়ে কিনা আমায় চোর বলছে? রাগ উঠে খুব। রুমালে মেশানো ছিল ক্লো’রো’ফ’র্ম স্প্রে ঐটাই মুখে চেপে ধরতেই নেতিয়ে পড়ে আমার বেয়াদব মেয়েটা। কোলে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে সোফায় শুইয়ে দিয়ে ওই বুড়ো মহিলার কাছে যাই। এক প্রকার ধস্তাধস্তি শুরু করে বুড়ি। ঐতাকেও অজ্ঞান করি। এখন ওরা দুজনেই পাশের রুমে শুইয়ে আছে।
-” আমি ওদের কাছে যাব?
-” হ্যাঁ তো তোকে নিয়ে যেতে তো হবেই। তুই না গেলে মজা জমবে না।

কথাগুলো বলে ঝুমঝুমিকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে ঝুমঝুমির উপরে বসে গলা থেকে ওড়নাটা কেড়ে নিয়ে দুহাত বেঁ’ধে ফেলে। শক্তি দিয়ে পেরে উঠে না ঝুমঝুমি। মেঘ তখন অনৈতিক এক কাজ করে। ঝুমঝুমির ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে কয়েক মিনিট। ঠোঁট ছেড়ে ঝুমঝুমিকে কাঁধে তুলে পাশের রুমে নিয়ে যায়। হাত-পা বাঁ’ধা অবস্থায় ফ্লোরে অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে আছে ঝিনুক,হালিমা খালা। ঝুমঝুমিকে ফ্লোরে বসিয়ে পাশে থাকা জগ হাতে নিয়ে দুজনের মুখে ছিটাটেই জ্ঞান ফিরে আসে দুজনের। ঝিনুক তখন জোরে-জোরে কাঁদতে থাকে। মেঘ তখন ঝিনুকের কাছে যায়। ওর হাতে ধারালো চা’কু । ঝিনুকের ছোট্ট হাতটা মুঠোয় নিয়ে হিংস্র হাসি দেয়। ঠোঁটে ফুটে অদ্ভুদ হাসি। ঝুমঝুমি সেই হাসি দেখে ঢোক গিলে। বুঝতে পারে মেঘের উদ্দেশ্য। ঝুমঝুমির পা তখন বাঁ’ধা দ’ড়ি দিয়ে। ঝিনুক চা’কু দেখে হাউমাউ করে কাঁদে। হালিমা খালার মুখ বাঁ’ধা কিন্তু ওনার গলা দিয়ে অদ্ভুদ সুর বের হচ্ছে।

মেঘ ঝিনুকের অনামিকা আঙ্গুলের দিকে লক্ষ্য করে। চা’কু রেখে বের করে ব্লে’ড। তারপর ঝুমঝুমির উদ্দেশ্য বলে উঠে,
-” কি করব জানিস? তোর মেয়ের সুন্দর আঙ্গুলটা কে’টে ফেলবো। শুধু একটা নয়, দশটা আঙ্গুলেই কে’টে দিবো। লাস্ট কি কা’ট’বো জানিস? সুন্দর গলাটা।

ঝুমঝুমি চিল্লিয়ে উঠে।

-” না মেঘ ভাই প্লিজ এমন করবেন না। সব দোষ আমার আমাকে মে’রে ফেলুন আমার মেয়েকে কিছু করবেন না।
-” তোকে কেন মা’র’বো? তোকে মা’র’লে আমি কি নিয়ে বাঁচবো? বরং তোর আমার মাঝে তৃতীয় কেউ থাকলে আমি তাকে মে’রে ফেলবো।

ব্লে’ড ঝিনুকের হাতের কাছে ধরতেই আবারও চিৎকার করে ঝুমঝুমি।
-” মেঘ ভাই প্লিজ আমার মেয়ের ক্ষতি করবেন না। আপনি যা বলবেন আমি মেনে নিবো। কিন্তু আমার মেয়ে কিংবা হালিমা খালার ক্ষতি করবেন না। আপনার পায়ে পড়ছি প্লিজ।

ঝিনুকের হাতটা সরিয়ে নিয়ে ঝুমঝুমির কাছে আসে মেঘ। তারপর বলে,
-” তাহলে বল তুই আমায় ভালবাসিস?

ঝুমঝুমি নিরুত্তর। ‘ভালোবাসি’ শব্দটা কন্ঠস্বর থেকে আসছে না। ঝুমঝুমিকে চুপ থাকতে দেখে মেঘ আবারও হিংস্র হয়ে উঠে। আবারও যায় ঝিনুকের কাছে। আঙ্গুলটা ধরতেই ঝুমঝুমি বলে উঠে,
-” আমি আপনাকে ভালোবাসি, প্লিজ আমার মেয়ের ক্ষতি করবেন না।
-” ভালোভাবে বল। আমি আরো শুনতে চাই।

ঝুমঝুমি বার কয়েক “ভালোবাসি” শব্দটা উচ্চারণ করে। মেঘ হেয়ালি করে বলে,
-” শুধু ভালোবাসি? অন্যকিছু হবে না? আমার আবার ডিমান্ড বেশি। শরীর অন্য কিছু চাচ্ছে।

মেঘের বাজে ইশারা বুঝতে পারে ঝুমঝুমি। কিন্তু হাতে কিছু করার নেই। মনে-মনে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছে।

-” কি হলো রাজি তুই?
-” হ্যাঁ রাজি কিন্তু কথা দিতে হবে আমার মেয়ে কিংবা হালিমা খালার ক্ষতি করবেন না।
-” দিলাম কথা।

উঠে দাঁড়ায় মেঘ। ঝুমঝুমিকে কাঁধে তুলে আরেকটি রুমে নিয়ে যায়। বিছানার উপরে ফেলে দিয়ে চোখ বুলায় পুরো শরীরে। লজ্জায়,ঘৃণায় ঝুমঝুমি চোখবন্ধ করে নিজের মৃ’ত্যু কামনা করে। তখনই শুনতে পায় মেঘের অট্টহাসি। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ঝুমঝুমির থেকে অনেকটা দুরত্ব রেখে ফ্লোরে বসেছে সে। উম্মাদের মত লাগছে পুরো। চা’কু তখনও হাতে। দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে চিৎকার করে উঠে। পাগলের মত করে নিজের চুল টানতে থাকে। ভয় পেয়ে যায় ঝুমঝুমি। সে কখনই মেঘকে এই অবস্থায় দেখেনি। আজ মেঘের ভিন্ন রূপ দেখে ভয় পায় খুব। মেঘ তখন দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বলে উঠে,
-” আমায় কেন ভালোবাসলি না ঝুমঝুমি? আমি যে তোকে খুব ভালোবাসি। খুব খুব খুব। আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার ঘাটতি আমি জানি তবুও আমি তোকে খুব ভালোবাসি। তোর মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শোনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি। অবশেষে আজ শুনতে পেলাম যদিও জানি সবটাই মিছে তবুও হৃদয়টাকে শীতল করার জন্য যথেষ্ট। তোকে আমি অন্য ছেলেদের সাথে সহ্য করতে পারি না। ম’রে যেতে ইচ্ছে করে আমার। জানিস তোকে আমি কখন থেকে ভালোবাসি? জানিস না। জানবি কীভাবে আমি তো বলিনি। শোন আজ বলছি তোকে আমি সেই ছোট্ট থেকে ভালোবাসি। তখন আমি ইন্টারে পড়তাম সেই থেকে। আমার মনে দ্বিতীয় কোনো নারীর বসবাস ছিল না। কখনও প্রেম অব্দি হয়নি। কোনো মেয়েকে আমার মনে ধরেনি। ধীরে-ধীরে বড় হলাম তোকে ভেবে-ভেবে কিন্তু কি হলো শেষে? তোর সেই সো কোল্ড কাজিনের হাজব্যান্ড তোকে রে’প করল। কথাটা শোনার পর আমার মাথায় র’ক্ত উঠে গিয়েছিল সেইসাথে তোর প্রতি এক ধরনের ঘৃনা কাজ হলো। তুই কেন ওই লোকটাকে ছুঁতে দিয়েছিলি তোর শরীর? যেটা শুধু আমার নামে থাকার কথা। ভাবছিস পাগলের মত কথা বলছি তাই না? হ্যাঁ আমি তো পাগলই। পাগল না হলে যেখানে তোর পাশে থাকা আমার কর্তব্য ছিল সেখানে আমি তোকে ঘৃনা করি।

দম নিলো মেঘ। কন্ঠস্বর ভারী হয়ে আসছে। দম নিয়ে আবারও বলে থাকলো,
-” আমাদের বাসায় আসলি তোরা। আম্মু তোদের নিয়ে আব্বুর সাথে ঝগড়াঝাঁটি করতো। তোদের বাসা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালালো তখন আমি আটকিয়ে রাখলাম ওদের। আম্মুর বিরুদ্ধে গিয়ে বললাম তোকে বিয়ে করব আম্মু রাজি হলো না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তোকে নিয়ে পালিয়ে যাব। একমাত্র ছেলে আমি পালিয়ে যাওয়ার কথা শোনে আম্মু বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো কিন্তু তুই কিনা আমায় রিজেক্ট করলি? রাগ হয়েছিল খুব। ইগো’তে লেগেছিল কথা। ধ’র্ষি’তা মেয়ে হয়ে আমায়, এই মেঘকে রিজেক্ট করে। তাইতো প্রতিনিয়ত তোকে ভালোবাসার অত্যাচার করতাম,খারাপ কথা বলতাম। অর্থাৎ তোর সামনে আমার ভালোবাসাটা জঘন্যভাবে উপস্থাপন করলাম। তুই আমায় অবহেলা করা শুরু করলি সেই রাগ মেটাতাম ঝর্ণার উপর। কিন্তু বিশ্বাস কর প্রথম বারে আমার সত্যিই হুস ছিল না। কিন্তু পরের বার যা যা করেছি সব তোর উপর রাগ করে। আষাঢ়ের সাথে তোকে দেখলে আমার রাগ হতো এমপির পোলা তাই কিছু করতে বা বলতে পারছিলাম না তখন রাগ বেড়ে দ্বিগুণ হতো সেই রাগ এসে ঝর্ণাকে দিয়ে কন্ট্রোল করাতাম। ধীরে-ধীরে বুঝতে শিখলাম তুই ছাড়া আমি শূন্য তাই আম্মুকে দিয়ে ফুপুর ব্রেন-ওয়াশ করালাম। আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হলো। ভাবলাম সব ঠিকঠাক হবে কিন্তু ফুপুর আ’ত্ম’হ’ত্যা’তে সব ধ্বংস হয়ে গেল। তোরা ভেবেছিলি ফুপুর মা’রা যাওয়াতে আমরা কষ্ট পাইনি কিন্তু বিশ্বাস কর ফুপুর মৃ’ত্যু আমি মেনে নিতে পারিনি। আমার শৈশবে বেড়ে উঠা ফুপুর হাত ধরে। আমার আরেকজন মা ছিলেন ওনি। লুকিয়ে লুকিয়ে কত কাঁদতাম। বুঝতে দিই নি তোদের ওসব।

মেঘের গলা ধরে আসলো। চোখ বেয়ে বন্যা প্লানিত হলো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সত্যিই সে জেসমিন বেগমের জন্য কাতর।

-” ঝড়ের মাঝে আরেকটি ঝড় আসলো। ঝর্ণার প্রেগনেন্সি রিপোর্ট। তোকে হারানোর সর্বোচ্চ ভয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বাচ্চাটাকে মে’রে ফেলবো যদি দরকার হয় ঝর্ণাকেও মে’রে ফেলবো। আমার সব প্রচেষ্টায় পানি ঢেলে তোরা পালিয়ে গেলি। কোথায় গেছিস সে’সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না । পাগলের মত অনেক খোঁজেছি। শেষমেষ মানসিক রোগী হলাম। চুপচাপ থাকতাম রুম থেকে বের হতাম না। সুযোগ পেলেই খোঁজতে যেতাম। হঠাৎ একদিন নিউজে দেখলাম তোর ফুপুর লা’শ তখন সন্দেহ হয়নি। মূলত সন্দেহ হওয়ার মত ছিলাম ই না আমি তখন। তুই রাগী,স্ট্রং তাই বলে খু’ন বিশ্বাস হয়নি আমার সেজন্য ব্যাপারটাকে হাওয়ায় মিলিয়ে দিলাম। তবে দ্বিতীয় বার যখন তোর দুলাভাইকে খু’ন করলি তখনই আমার চোখ-কান সজাগ হলো। সন্দেহ হতে লাগলো তোকে। বেরিয়ে পড়তাম রোজ তোকে খোঁজতে। ভাগ্যবশত একদিন পেয়েও যাই তোকে। বোরখা পড়া থাকলেও তোর অনুভুতি আমি বুঝতে পারি। তোর চোখ দেখেই বুঝতে পারি তুই ঝুমঝুমি। তোর সাথে আষাঢ় ছিল তাই শতভাগ নিশ্চিত তুই ই ঝুমঝুমি। লুকিয়ে ফলো করি তোকে। তোর চাচাকে খু’ন করার দিন তোর সামনে নিজেকে উপস্থাপন করি। তারপর তো সব জানাজানি হয়ে যায়।

ঝুমঝুমি তখন চুপচাপ শোনে যাচ্ছে কথাগুলো। বলার মত কথা খোঁজে পাচ্ছে না। সে এখনো বুঝতে পারছে না মেঘের পরের কথাগুলো কি হবে বা পরে কি হতে চলেছে ওর সাথে।

মেঘ বলল,
-” সকল কিছুর বিনিময়ে সত্য কথাটা কিন্তু তুই অস্বীকার করতে পারিস না ঝুমঝুমি। আমার ভালোবাসা তোর প্রতি এখনও এক বিন্দু কমেনি। তোকে আমার প্রেয়সী বানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আফসোস তুই হলি আষাঢ়ের প্রেয়সী।

ঝুমঝুমি এবার মুখ খুললো

-” আপনার ভালোবাসায় সম্মান ছিল না মেঘ ভাই। ভালোবাসলে আগে ভালোবাসার মানুষটিকে সম্মান দিতে হয়। বুঝতে হয় অপর মানুষটির মনে কি চলছে। আপনি তো কোনদিন আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেননি বরং আমায় অপমান করেছেন,লজ্জা দিয়েছেন।
-” আমার ভুল আমি স্মীকার করলাম। আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার ধরন ছিল ভুল। কিন্তু তুই কেন আমায় শিখিয়ে দিলি না কীভাবে ভালোবাসতে হয়? আমার সাথে অন্যায় তুই করেছিস।

শেষের কথাটুকু অভিমান নিয়ে বলল মেঘ। ঝুমঝুমি কথার পৃষ্টে বলল,
-” আমি কেন শিখিয়ে দিবো? কই আষাঢ়কে তো আমার কিছু শিখাতে হয়নি।

মেঘ প্রসঙ্গ পাল্টালো। আষাঢ়ের নাম শুনতে ওর ভালো লাগছে না। নিজের মাথার চুল আবারও টানলো।

-” জানিস আমি একটা কাজ করে ফেলেছি। তোর কাজ সহজ করে দিয়েছি।

জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালো ঝুমঝুমি। মেঘ নিজে থেকেই বলে উঠল,
-” গতকাল রাতে আমি আমার বাবা-মাকে মে’রে ফেলেছি। ওদের জন্য ই তো আমি তোকে পাইনি। ওদের ব্যাবহারের জন্যই তুই আমায় রিজেক্ট করেছিস। তাই তো আমার ইগো-তে লেগেছে। ভালো হয়েছে না মে’রে ফেলে?

চকচক করছে মেঘের দু-চোখ। ঝুমঝুমি কেঁপে উঠল ভয়ে।

-” মামা-মামীকে মে’রে ফেলেছেন?
-” হ্যাঁ তো। ওরা আমার শিক্ষা দিতে পারে নাই। ওরা আমায় ভালো শিক্ষা দিলে আমিও তোর সাথে ভালো ব্যবহার করতাম তাহলে তো তুই আমার হয়ে যেতি। তোকে পাওয়ার জন্য যেমন আমি সব করতে পারি তেমনই যাদের কারণে তোকে হারিয়েছি তাদের আমি মে’রেও ফেলতে পারি,হোক সে আমার জন্মদাতা কিংবা জন্মদাত্রী। আমার জীবনে তোর চাইতে মূল্যবান কেউ নেই। তুই আমার সব। তবে আজ একটা জিনিষ খেয়াল করলাম আমি হয়তো ঝিনুকের মায়ায় পরে গেছি। যখন ওর আঙ্গুল কা’ট’তে গিয়েছিলাম তখন না আমায় বুক কাঁপছিল। ভাগ্যিস তুই ভালোবাসি শব্দটা বলেছিস তানাহলে তো আমি ওই সুন্দর আঙ্গুল কে’টে ফেলতাম।

ঝুমঝুমি যেন ওর সামনে সাইকো এক প্রেমিক দেখতে পারছে। যার ভালোবাসা ধা’রা’লো অ’স্ত্রে’র মত। ছোঁয়া মাত্রই র’ক্ত ঝড়বে।

ঝুমঝুমিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৃদু হাসলো মেঘ।

-” ওভাবে তাকিয়ে থাকিস না তাহলে ম’র’তে পারব না রে। তোকে ছাড়া থাকতে আমার যেমন কষ্ট হয় তোকে অন্যকারো বুকে মাথা রাখতে দেখলেও আমার কষ্ট হয়। ভেবেছিলাম তোকে নিয়েই ম’র’ব কিন্তু তোকে মা’র’তে যে আমার খুব কষ্ট হবে। আষাঢ়ের মত আমার অত পাওয়ার নেই যে তোকে পুলিশের কাছ থেকে বাঁচাতে পারবো। যদি পারতাম তাহলে বিশ্বাস কর তোকে কখনই অন্য কারো হতে দিতাম না।এখন তোকে বাঁচাতে একমাত্র আষাঢ় পারবে। তাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। একাই ম’র’বো। তাছাড়া আমার বেঁচে থেকে লাভ নেই। আমার সহ্য হবে না তোকে আষাঢ়ের সাথে দেখলে। আষাঢ় তোকে ছুঁয়ে দেখবে ব্যাপারটা আমার জীবিত শরীর মেনে নিবে না।

কথাগুলো বলে মেঘ উঠে দাঁড়ায়। ঝুমঝুমিকে বসিয়ে দিয়ে পুরো মুখে চুমু খায়। চুমু খাওয়া শেষ করে আবারও আগের জায়গাটায় বসে। ধারালো চা’কু’টা হাতে নেয়। ঝুমঝুমি বলে উঠে,
-” এমন করবেন না মেঘ ভাই। আমি চেয়েছিলাম আপনায় খুব কঠিন মৃ’ত্যু দিবো কিন্তু আজ আমার বিবেকে বাঁধছে আপনার মৃ’ত্যু।
-” আমি তো ম’রে’ই গিয়েছি। তোকে ভালোবেসে ম’রে’ছি।

কথাটা বলেই একটা কো’প দেয় ডান পায়ের হাঁটুতে। ঝুমঝুমি চিৎকার করে উঠে। মেঘ তখন আরেকটা কো’প বাঁ পায়ে দিয়ে বলে উঠে,
-” আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ঝুমঝুমি। আমার বুকে খুব ব্যাথা। এই ব্যাথার একমাত্র ওষুধ তুই। আমি তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি। আমার বুকে মাথা রেখে তুই ঘুমাবি। আমার প্রতিদিন সকাল কাটবে তোকে দেখে। ঘুমানোর আগে তোর মুখ দেখে ঘুমাবো। এসব স্বপ্ন তো আর সত্য হলো না তাই আমার মৃ’ত্যু হোক তোকে সামনে দেখে। আমার দুচোখ নিস্তেজ হোক তোকে দেখে।

শেষের কো’প বসালো নিজের বুকে। পরপর কয়েকবার। আহত কণ্ঠেই মেঘ বলে উঠল,
-” আমার মৃ’ত্যু স্বার্থক। প্রেয়সীর মিছে শব্দপ্রেম শোনে আমার হৃদয়ের গভীর ব্যাথাটা কিছুটা কমেছে। তোকে আমি খুব ভালোবাসি ঝুমঝুমি। আমার মত ভালোবাসা আষাঢ় কখনই পারবে না। কষ্ট শুধু একটাই তুই কেন আমায় সত্যি কারের ভালোবাসা বাসলি না।

মেঘের শরীর নি’থ’র হয়। ঝুমঝুমি সেই কখন থেকে কেঁদে চলেছে। কাঁদতে-কাঁদতে চোখের সামনে মেঘকে মা’রা যেতে দেখে সেখানেই জ্ঞান হারায়।

________________

নিঃশ্বাসের গাঢ় শব্দ কানে ভাসে ঝুমঝুমির। পিটপিট করে তাকায়। মুখের সামনে আষাঢ়ের মুখটি ভেসে উঠতেই গলা জড়িয়ে কেঁদে উঠে। শক্তসবল মেয়েটি হঠাৎ হয়ে উঠে বাচ্চাসুলোভ। ঝুমঝুমিকে অনেকবার ফোন দেওয়ার পরেও যখন ফোন ধরছিল না ঝুমঝুমি তখনই ভয় পেয়ে যায় আষাঢ়। ছুটে আসে এখানে আসার পথে ফোন দিয়ে হিরণদের আসতে বলে। ঝুমঝুমি’র কান্নার শব্দ শোনে বাইরে থেকে ছুটে আসে হিরণ,নীরা,মিরাজ,তৃষ্ণা,নাজিম,হালিমা খালা ও ঝুমঝুমি। হালিমা খালার মুখ থেকে শুনেছে কিছু কথা বাকিগুলো ঝুমঝুমি বলে। মেঘের লা’শ হিরণরা মিলে জঙ্গলে পুঁ’তে আসে। র’ক্তা’ক্ত রুমটি পরিষ্কার করতে গিয়ে ঘিনঘিন করে শরীর। তাই ঝুমঝুমিকে অজ্ঞান অবস্থায় আরেকটি রুমে নিয়ে আসে আষাঢ়। সবকিছু শোনে সকলেই হতবিহ্বল। আষাঢ় সব ঘটনা এমপি সাহেবকে বলে। এমপি সাহেব ওদের লুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য বলে।

আষাঢ়ের বাড়িতে সবাই। এখানে আসার পর এক সপ্তাহ কেটে যায়। এই এক সপ্তাহে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও ঝুমঝুমির একটা বড় সমস্যা হয়। সে সব জায়গাতে মেঘকে দেখতে পায়। ভয়ংকর মেঘ, যায় চিহ্ন-ভিন্ন দে’হ, গায়ে র’ক্ত মাখা, চোখে না পাওয়ার যন্ত্রণা। সে বারবার দূর থেকে বলে বেড়ায়
-” ঝুমঝুমি তুই কেন আমার হলি না।

ঝুমঝুমির মানসিক অবস্থা দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমপি সাহেব তাই সিদ্ধান্ত নিলেন আষাঢ়ের সাথে ঝুমঝুমির বিয়ে দিয়ে জাপান পাঠিয়ে ঝুমঝুমির ভালো চিকিৎসা করাবেন। বাংলাদেশে থাকা ওদের জন্য বিপদ। মেঘের বাবা-মায়ের খু’নি হিসেবে ঝুমঝুমিকে সন্দেহ করা হচ্ছে এমনকি মেঘের নিখোঁজ হওয়ার পিছনেও ঝুমঝুমি দায়ী মনে করে পুলিশ কমিটি। ঝুমঝুমির এখন দেশে থাকা খুবই রিস্ক।

_______________

সাদামাটা ভাবে বিয়ে হয় ঝুমঝুমি ও আষাঢ়ের। কিন্তু ঝুমঝুমির অস্বাভাবিক আচরণের জন্য সেদিন রাতেই ফ্লাইট ধরে জাপান চলে আসে আষাঢ়। সাথে অবশ্য ঝিনুক ও হালিমা খালা আসে।

জাপান আসার আজ দুই মাস পূর্ণ হলো। ঝুমঝুমির অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও সে এখনও মেঘকে দেখতে পায়। আষাঢ় আশ্বাস দিয়ে বলেছে ওইটা মেঘ নয় বরং ভ্রম। মৃ ত মানুষ ফিরে আসেনা। ঝুমঝুমি স্ট্রং তাই সহজেই মেনে নেয় আষাঢ়ের কথা। মেঘকে দেখলেও মনে মনে বলে ভ্রম সবই ভ্রম। মেঘ বলে কেউ নেই তোর সামনে। এভাবেই সুস্থ হতে শুরু করে ঝুমঝুমি।
_________
ঝিনক শুয়ে আছে আষাঢ় ঝুমঝুমির মাঝে। ঝিনুকের মাথা আষাঢ়ের বুকে,দু’হাতে গলা জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে মেয়েটি। আষাঢ় এক হাতে মেয়েকে জড়িয়ে নিয়ে ঝুমঝুমিকে ইশারা করে ওর পাশে আসার জন্য। ঝুমঝুমি অন্যপাশে আসে। আষাঢ় অন্যহাতে ঝুমঝুমির কোমর জড়িয়ে ধরে ঠোঁটের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
-” ভালোবাসি।

_____________________

বন্ধু মহলে ভিডিও কলে কথা বলছে ঝুমঝুমি। নীরা প্রেগনেন্ট দুই মাসের। খুশির জোয়ার বন্ধুদের মনে। অন্যদিকে এক সপ্তাহ পর মিরাজ ও তৃষ্ণার বিয়ে। মন অবশ্য একারণে সবারই খানিক খারাপ কারণ বিয়েতে আষাঢ়-ঝুমঝুমি আসতে পারবে না। প্রাণ প্রিয় বান্ধবী,বন্ধু আসতে পারবে না মন খারাপ তো হবেই।
তবে কষ্টের মাঝেও নাজিমের দুষ্টু দুষ্টু কবিতাগুলো সকলের মন খারাপ উধাও করে দিলো।
-” সবারই তো হিল্লে হলো কিন্তু আমি তো দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বিয়ের জন্য যে পাঁচ কেজি ওজন কমালাম সেই ব্যাপারে তোদের নজর আছে?

মিরাজ ফোঁড়ন কেটে বলল, আমাদের নাতি-নাতনি তোর জন্য রেখে দিবো হা হা হা।
-” বা**ল বকিস না। তোরা হানিমুন কইরা হানি খাবি আর আমি খামু বুইড়া বয়সে হানি? তখন তো আর হানি না পানি হইয়া যাইবো সব। তোগো নাতি-নাতনী আমারে বুইড়া নানা বইল্লা হাসবো।

নাজিমের কথা শুনে সবাই হেসে উঠল ফোনের ওপাশ থেকে। তৃষ্ণা তখন চেয়ারে বসা ছিল। ওর পিছনে নারী অবকয় দেখা দিল। উত্তেজিত হয়ে নাজিম বলল,
-” তোমার পিছনের মেয়েটা কে তৃষ্ণা?
-” চাচাতো বোন।
-” বুকিং নাকি খালি?
-” আপনার মত অবিবাহিত দেবদাসী।

নাজিমের মন তখন বাক-বাকুম-বাকুম করতে শুরু করল। তৃষ্ণার উদ্দেশ্য বলল,
-” ওহে আমার প্রিয় ভাবী
তোমার বোনের উপর নাজিমের দাবী।

তৃষ্ণা বলল,
-“সমস্যা নাই ওর ফোন নাম্বার দিচ্ছি কথা বলে দেখুন। ও কিন্তু আগে থেকেই আপনাকে পছন্দ করে। ফোনে ছবি দেখছিল।

নাজিব তো তৃষ্ণার কথা শোনে লজ্জায় মুখ ডাকে। প্রেমের ফুল ফুটলো নাজিমের। শেষমেষ নাজিমের একটা গতি হলো । সুন্দর মুহুর্তগুলো তাড়াতাড়ি চলে যায়। কথাবার্তা শেষ করে আষাঢ়ের কাঁধে মাথা রাখলো ঝুমঝুমি। আষাঢ় জড়িয়ে ধরলো অন্য হাতে। দুজনের মধ্যে বেশকিছুক্ষণ আলাপ চলল। আষাঢ় সময় নিয়ে চুম্বন করল ঝুমঝুমিকে। মেঘকে এখন বেশি দেখে না ঝুমঝুমি। কন্ট্রোল করা শিখে গেছে মনকে। আষাঢ় ঝুমঝুমিকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নাক ডুবলো গলদেশে। ঝুমঝুমি আকড়ে ধরলো আষাঢ়ের পিঠ। ঠিক সেই মুহূর্তে ঝুমঝুমির কানে বাজতে লাগলো,
-” অন্য পুরষের সাথে তোর ঘনিষ্টতা আমার সহ্য হচ্ছে না ঝুমঝুমি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ তুই আমার হয়ে যা। তোকে ছুঁয়ে দেখব না, দূর থেকে ভালোবাসবো প্লিজ তুই আমায় কষ্ট দিস না। আষাঢ় তোর খুব কাছে আমার সহ্য হচ্ছে না। মৃ’ত আমি তবুও আমার আবারও ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে।

ঝুমঝুমি পাত্তা দিল না। ভ্রম ভেবে মনে মনে বলল,
-” কেউ নেই তোর আশেপাশে। এখন শুধু আষাঢ় তোর পাশে। মেঘ ভ্রম শুধুই ভ্রম। ভ্রমকে পাত্তা দিস না। তোর স্বামী আষাঢ়,তোর মেয়ে ঝিনুকের বাবা সে। কষ্ট দিস না। মনোযোগ দে স্বামীর ভালোবাসায়।

মনের কথা শুনলো ঝুমঝুমি। আষাঢ়ের চাওয়াতে সায় দিয়ে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো। হারিয়ে গেল ভালোবাসার নীড়ে। ভালোবাসায় মত্ত দুজন মানুষ। দীর্ঘ দিনের আক্ষেপ, হারানো সুর,বিষাদের ছায়া দূর হলো। ঝুমঝুমিকে নিজের জীবনে পেয়ে আষাঢ় হারিয়ে গেলো অন্য এক জগতে। আষাঢ় আচমকা বলে উঠল,
-” ওগো প্রেয়সী,
কী উপমা দেব তোমায়?

স্নিগ্ধতায় ভরা হাসিমুখ
এলোচুলের নিশানায়
চোখের চাহনির কামুকতায়-
আমি যে কপোকাত!

দেখছি শুধু মুগ্ধতায়
চোখে চোখ
হাতে হাত
এই আহ্বানে আমি সাড়া দিতে চাই বারংবার
ভিজবো ভালোবাসায়।(কালেক্টেড)

ঝুমঝুমি বলল, খুব ভালোবাসি। লিখে কিংবা বলে প্রকাশ করা যাবে না। আপনাকে আমি আমার নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসি আষাঢ়।

প্রেয়সীর মুখ থেকে শব্দপ্রেমের বাক্য শোনে শীতল হলো আষাঢ়ের হৃদয়। গভীর সমুদ্রে ডুব দিলো দুজনে, এক হয়ে উঠল প্রেমে উন্মাদনা।

##সমাপ্ত
কেমন হলো জানাবেন। আমার পাশে থাকার জন্য আপনাদের অনেক অনেক ভালোবাসা ও ধন্যবাদ। অনেক বড় হওয়াতে রি চেইক করতে সমস্যা হয়েছে। 🖤

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ