Sunday, October 5, 2025







শক্তিময়ী পর্ব-২৬+২৭

#শক্তিময়ী
২৬ তম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

অসহনীয় কষ্ট। আমার, আমাদের বৃহত্তর পরিবারের সবার। আনন্দ ভাইয়া আমাদের জীবনের সব আনন্দ তাঁর সাথে করে নিয়ে গেছেন। আমরা আর কোনোদিন প্রাণ খুলে হাসতে পারবো না,দল বেঁধে হৈ হৈ করে বেড়াতে যেতে পারবো না, কথায় কথায় পিকনিক করতে পারবো না, কিচ্ছু পারবো না। একসময় সবই হয়তো হবে,দল বেঁধে কোথাও যাওয়া,দেশে হোক বা বিদেশে, কোনো এক বাসার ছাদে রাতভর গল্প,কিন্তু তাতে প্রাণ থাকবে না। আলোচনায় আনন্দ ভাইয়া উঠে আসবেন প্রবল ভাবে কিংবা খুব সচেতন ভাবে তাঁর প্রসঙ্গ ই আনা হবে না। আল্লাহ,আপনার ইচ্ছা বোঝা বড় কঠিন।

আনন্দ ভাই শুয়ে আছেন আমার পুণ্যাত্মা দাদাজান,দাদিজানের পাশে। জানাজায় এতো ভীড় হয়েছিলো! কয়েক গ্রাম মানুষ হাজির হয়েছিলো। তাদের কি তীব্র শোক! আন্তরিক,একেবারে খাঁটি। আমার দাদাজানের একেবারে যোগ্য উত্তরাধিকার ছিলেন আনন্দ ভাইয়া।

কেন এমন হলো? মাত্র আটান্ন বছর বয়স। লম্বা,ছিপছিপে। স্বল্পাহারী, আমুদে, শরীরচর্চা করা মানুষ। কেন এমন ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হলো? উত্তর নেই, পৃথিবীতে অনেক প্রশ্নের জবাব জানা নেই।

সেই রাত ছিলো আমাদের সবার জীবনের ভয়ংকরতম রাত। আমরা যা বোঝার বুঝে গিয়েছিলাম, তবু হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেবের ডিক্লেয়ারেশনের সাথে সাথে শেষ আশাটুকুও বিলীন হয়ে গেলো। আমরা আবার আনন্দ ভাইয়াকে বাড়িতে নিয়ে এলাম। ফুপাকে অবুঝ শিশুর মতো লাগছিলো, কিছুই যেন বুঝতে পারছিলেন না। শুধু আনন্দ ভাইয়ের চুলে,গালে,কপালে অবোধের মতো হাত বুলাচ্ছিলেন। ফুপু জ্ঞান হারাচ্ছিলেন বারবার। তিথি ভাবী মূর্তির মতো বসেছিলেন। অদিতি বাবার পায়ে মাথা রেখে পড়েছিলো।

আনিলা আপা, সমুদ্র আর পরীর জন্য আনন্দ ভাইয়াকে আবার নিয়ে আসা হলো ঢাকায়।হিমাগারে। তিনদিন পরে নিজের নানার বাড়ির দিকে অনন্ত যাত্রা। এই রাস্তা দিয়ে চার দিন আগে আমরা নেচে গেয়ে গল্প করতে করতে আনন্দময় বাস ভ্রমণ করেছি। আনন্দ ভাইয়ের উদ্যোগে।

আনিলা আপা দেশে আসার পর থেকে কেবলই কাঁদেন। এমিলি কত্ত বড় হয়ে গেছে। কি সুন্দর ফুটফুটে। ওর চমৎকার শুদ্ধ বাংলা শুনলে বাঙালিদেরও লজ্জা পাওয়া উচিৎ। সে তার নানা,নানু,মামা,মামী, কাজিনদের সবাইকে খুব ভালো করে চিনে আনিলা আপার সঠিক শিক্ষা আর ভিডিও কলের কারণে।তাছাড়া আনন্দ ভাই তিনবার ঘুরে এসেছেন অস্ট্রেলিয়া, ফুপা-ফুপু দুইবার। তিথি ভাবী আর অদিতি একবার। এমিলি তার মায়ের সাথে এসেছে কয়েকবার। মামার জন্য এমিলিরও কষ্টের শেষ নেই। সে মাকে প্রাণপণে স্বান্তনা দেয়, নানা-নানুকে আদর করে দেয়, চুমু খায়, চোখের পানি মুছিয়ে দেয়, চুপ করে শুয়ে থাকা মামীর চুলে হাত বুলিয়ে দেয়,মামীর মাথা নিজের কোলে নিয়ে বসে থাকে।

অদিতি পাগলের মতো অঝোরে কেঁদেছিলো চার পাঁচ দিন। এরপরে আশ্চর্য রকমের শান্ত। এই কয়দিনেই শরীর শুকিয়ে অর্ধেক, চোখের তলায় গাঢ় কালি। মুখে কোনো কথা নেই। নীরবে ভালোবাসা দিয়ে ঘিরে রেখেছে মা,দাদা,দাদী,ভাইবোন,ফুপুকে।

সমুদ্রের ছেলের বয়স দুই বছর। জ্যান্ত পুতুল। নিজেদের স্বান্তনা দেওয়ার জন্য ই হয়তো আমরা সবাই আয়মানের মধ্যে আনন্দ ভাইয়ের ছাপ প্রকট ভাবে পাচ্ছি। চুল সোনালী, পলিনের মতো, কিন্তু চোখ দুটো একেবারে আনন্দ ভাইয়ের মতো না? হাসি তো অবিকল এক রকম। আমার মা-চাচীরা ফুপুকে বলতে লাগলেন,”দেখো আপা, ছোট্ট আনন্দ এসেছে। ওঠো,কোলে নাও।”

ফুপু একটু তাকান,আয়মানের শরীর একটু স্পর্শ করেন, আবার চোখ বন্ধ করে ফেলেন,চোখের কোণ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।

বিদেশি মেয়ে পলিন আর মার্থা এই দুঃসময়ে যে ভাবে পাশে দাঁড়ালেন, ভালোবাসা ও মমতার বাঁধনে জড়িয়ে রাখলেন সবাইকে, এর বর্ণনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই।

অদিতি-সমুদ্র-পরী যখন গভীর আবেগ ও শোকে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলো,আমার হঠাৎ মনে হয়েছিলো আনন্দ ভাইয়া যেন ওদের দেখতে পাচ্ছেন, তাঁর আত্মা স্বস্তি পাচ্ছে, শান্তি পাচ্ছে। তাঁর পুত্র -কন্যাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। তিনি নিশ্চিন্ত।

প্রতিদিন বাড়ি উপচে পড়া লোক, তবু মনে হয় সব ফাঁকা। কোথাও কেউ নেই।

তিথি ভাবী সারাক্ষণ মরার মতো পড়ে থাকেন। কিছুতেই খেতে চান না, কারোর সাথে কথাও বলেন না। এই যে সমুদ্র, পরী এলো, মার্থা ও পলিন এলো,এলো দেবদূত আয়মান, ভাবীর কোনো বিকার নেই। অসুস্থ, শোকে জর্জরিত শরীর নিয়ে ফুপা-ফুপু পাশে এসে বসেন, মাথায় হাত বুলান, বাষ্প রুদ্ধ গলায় কিছু বলার চেষ্টা করেন,ভাবীর কোনো ভাবান্তর হয় না। ভাবীর আব্বা-আম্মা দিনরাত মেয়ের কাছে বসে থাকেন, আদরের কথা বলেন, আমরা কাজিনরা নানা কথা বলে ভাবীকে কাঁদানোর চেষ্টা করি,ভাবী নির্বিকার। যে মেয়ে হাজার কাজের চাপেও নামাজ কাজা করতেন না, সবসময় টিপটপ , পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতেন, তিনি দিনের পর দিন গোসল না করে বিছানায় পড়ে থাকেন।

ভাবী মানসিক রোগী হয়ে গেছেন, কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর চিকিৎসার দরকার। লাবণী আপা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে ফেলেছেন। সমস্যা হলো,ভাবীকে নেওয়া হবে কি করে? বাথরুমে যাওয়ার দরকার হলে কোনো ভাবে টলতে টলতে দেওয়াল ধরে ধরে তিনি যান, কেউ ধরতে চাইলে হাত সরিয়ে নেন, তাঁকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হবে কি করে?কাঁদলে মনের ভার একটু কমতো,কাঁদেনও না।

সেদিন সকালে অদিতি এসে দাঁড়ালো শয্যাশায়ী মায়ের পাশে।
“মা, আমি অফিস যাচ্ছি। আজ থেকে ডেইলি যাবো। তোমার জন্য একটু সব্জি স্যুপ আর তোমার ফেভারিট স্যান্ডউইচ করেছি,মা। আমার হাতে একটু খাও,মামনি। দেখো না, আমি সামলে উঠেছি।তোমাকেও উঠে দাঁড়াতে হবে মা। ”

ভাবীর আম্মা মেয়ের পাশে বসে গুণগুণ করে কাঁদছিলেন। তিনি তীব্র গলায় বললেন,” তোমার সামলে না ওঠারতো কোনো কারণ নেই। সত্যি বলতে কি, তোমার ভেঙে পড়ারইতো কোনো কারণ দেখি না। যাদের গেছে,তারা বুঝছে ব্যথাটা কেমন লাগে।”

অদিতি শুনলো। তারপর আগের মতোই শান্ত গলায় বললো,” মা, তুমি না আমাকে শিখিয়েছিলে, জীবনে যতো বড় কষ্ট, ঝামেলা,দুঃসময় আসুক,সেগুলোকে মেনে নিয়ে এগিয়ে চলাই হলো জীবন। আমি তো তোমার শিক্ষাটা গ্রহণ করেছি মা, কিন্তু তুমি কেন জীবনের এই মূলমন্ত্রকে গ্রহণ করতে পারছো না?”

রুবি খালাম্মা আবার নাক গলালেন,”আনন্দ নেই আজ দশদিন। মাত্র দশদিন। তুমি বেশ সেজেগুজে ব্যবসা করতে চললে যে?শোক ফুরিয়ে গেলো? নিজের না হয় শোক তাপ কিছু হচ্ছে না, কিন্তু যাদের খাও, যাদের পরো,তাদের পাশে তো একটু থাকতে পারো। টাকাটাই বড় হয়ে গেলো তোমার কাছে? ছিঃ! ”

অদিতি স্হির গলায় বললো,”আপনারা আমার মায়ের বাবা-মা। তাই কোনোদিন বেয়াদবি করিনি। কিন্তু আপনারা যখন নিজের সম্মান নিজেরাই নষ্ট করেন, তখন আর কি করা! আমার সাথে অনেক অভদ্র আচরণ করেছেন,আর করবেন না,কেমন?”

“একশো বার করবো। হোটেল রেস্টুরেন্ট দিয়ে শিং গজিয়ে গেছে? এসব তো বানিয়েছো আমার নাতি-নাতনির হক নষ্ট করে। যা সমুদ্র -পরীর পাওয়ার কথা, তা আনন্দ -তিথি সমানে ঢুকিয়েছে তোমার পেটে।”

ঘরে কোন সময় আনিলা আপা এসে দাঁড়িয়েছেন,কেউ খেয়াল করেনি। আপা কঠিন গলায় বললেন,”আপনি ভাবীর মা,এটা ভাবতে আমার অবাক লাগে। ভাবী আপনাদের কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে নাতো?নইলে আপনাদের কাজকর্ম, কথাবার্তা, চিন্তা ভাবনার সাথে ভাবীর আকাশ পাতাল পার্থক্য কেন? আর ঘরে তোরা এতোগুলো মানুষ, হাঁ করে নোংরা কথাগুলো শুনছিস, কেউ অদিতির অপমানের জবাব দিচ্ছিস না, লজ্জা করে না তোদের? কিসের আপনজন তোরা? ছিঃ! অদিতি,আম্মু, তোমার কাজে যাও। তোমার চারপাশে এইরকম মেরুদণ্ডহীন লোক থাকবে তোমার চাচা ফুপুদের মতো, এই ভদ্রমহিলার মতো জটিল,কটুভাষী মানুষও থাকবে অনেক,এদের গুরুত্ব না দিয়ে তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে। ”

“আনিলা, সেই ছোট বেলা থেকে তোমাকে এতো ভালোবেসেছি, নিজের পেটের মেয়ে মনে করেছি, তোমাদের সাথে আমাদের যে ঘনিষ্ঠতা তা আমার অন্য কোনো বেয়াই বাড়ির সাথে নেই, আর তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো?”

” ঐ যে,অদিতি যেটা বললো, নিজের সম্মান বজায় রাখার চেষ্টা নিজেকেই করতে হয়।”

এতো হৈচৈ এর মধ্যে আচমকা তিথি ভাবী বলে উঠলেন,” ও এমন করলো কেন?কেন কিছু না বলে বিদায় নিলো? একবার আমাদের কথা ভাবলো না? একবার বুড়ো বাপ-মা, তিনটা বাচ্চার কথা ভাবলো না? আমার কথা একটুও ভাবলো না? কেন এমন হলো, ও অদিতি, কেন এমন হলো, তোর আব্বু কেন এমন করলো? ”

ভাবী অদিতিকে জাপটে ধরে কাঁদতে লাগলেন। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে। আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করা কান্না।

ভাবীর কান্নায় তাঁর বাবা-মা কাঁদতে থাকলেন,অদিতি নিবিড় ভাবে মা’কে বুকে জড়িয়ে রইলো, আনিলা আপা অদিতি আর ভাবীকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকলেন, ফুপা ড্রইং রুমে বসেছিলেন, লাঠিতে ভর দিয়ে দ্রুত হেঁটে আসলেন, শোকে ও শরীরের ব্যথায় শুয়ে থাকা ফুপু মাজেদা বু ‘র হাত ধরে প্রায় ছুটে এলেন এ ঘরে, সমুদ্র -পরী-এমিলি- পলিন দৌড়ে এলো ভাবীর ঘরে, মার্থার কোলে থাকা ছোট্ট আয়মান ভয়ে কেঁদে উঠলো, তিথি ভাবীর আর্তনাদ সবাইকে আবার নতুন করে বেদনায় গুঁড়িয়ে দিলো,”কেন ও এমন করলো? আমি বলেছিলাম তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ কখনোই না,তাই কি ও রাগ করলো? কিভাবে তোমাকে ছাড়া আমি বেঁচে থাকবো? আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না, তুমি ফিরে এসো।”

চলবে

#শক্তিময়ী
২৭ তম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

“মা অদিতি,
তোমার কাছে আমি প্রায় ছোট ছোট চিঠি লিখি। চিরকুট, আর কি। কিন্তু সেগুলো কোনোভাবেই তোমার হাতে দিতে পারি না। এক অদৃশ্য বাধা।
মামনি,আমি বলে বুঝাতে পারবো না যে আমি কতোটা লজ্জিত, অনুতপ্ত। অনুশোচনার তাপ খুব বেশি। আমি তোমার প্রতি ভীষণ ভীষণ অন্যায় করেছি বহু বছর, সেই অপরাধবোধ থেকে কখনো আমার মুক্তি নেই। কিন্তু মা, তুমি বিশ্বাস করবে কি না জানি না, আমি তোমাকে সমুদ্র -পরীর মতোই ভালোবাসি, হয়তো ওদের তুলনায় একটু বেশি ভালোবাসি। অন্তর্যামী যখন আমার অন্তর চক্ষু খুলে দিলেন, তবে আরও অনেক আগে খুলে দিলেন না কেন? তাহলেতো আমার এই ছোট্ট মা’কে এতো যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হতো না। আমার খুব ইচ্ছা করে তুমি আমার আর দুই ছেলেমেয়ের মতো করে আমার কাছে নানা জিনিসের বায়না করো, আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ো, সবচেয়ে বড় কথা আমাকে আপনি ডেকো না। কিন্তু মামনি,তুমি আমাকে ” তুমি” বলে ডাকতেই পারলে না। কিছুতেই পারলে না। তোমার আর আমার মধ্যে তুমি একটা অদৃশ্য আড়াল রেখেছো, মা। হয়তো নিজের অজান্তে, কিংবা সচেতন ভাবে। আমার জীবদ্দশায় দেওয়ালটা বোধহয় ভাঙবে না। ”

অদিতি নিজের ঘরে অঝোরে কাঁদতে লাগলো, তবে নীরবে। দাদাভাই -দাদুমনি-মা কারোর অবস্হাই ভালো না। না শারীরিক, না মানসিক। এই সময়ে নিজের ভেঙে চুরে যাওয়া চেহারা তাঁদের দেখানো যাবেনা।

মা আজ এই বাক্সটা অদিতিকে দিয়েছেন। বাক্সের উপরে লেখা, “আমার অদিতি মায়ের জন্য। ” মা’কে নাকি আব্বু প্রায় বলতেন,” অদিতির জন্য একটা বক্স রাখা আছে। আমি প্রায় চিঠি লিখে বক্সটাতে রেখে দিই। আমি মারা যাবার পরে অদিতিকে বাক্সটা দিও। ”

তিথি ভাবিও আনন্দ ভাইয়ের পাগলামিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। কখনো কৌতূহলে বাক্স খুলতে যান নি। এখন সময় হয়েছে যার বাক্স তাকে দেবার।

কতো শতো চিঠি। ছোট ছোট। মেয়েকে লেখা। কতো আদরের কথা,ভালোবাসার কথা,মেয়েকে ঘিরে স্বপ্নের কথা, নিজের তীব্র অনুতাপের কথা।

“আম্মু, কি মিষ্টি মিষ্টি কথা যে তুমি বলতে। অতিদি পুলাও খাতিবে, ভাত খাতিবে না। তোমার এই কথাটা শুনে ও বলার ভঙ্গি দেখে আমার তখন কোনো মায়া হয় নি,তবে হাসি পেয়েছিল। বাবা, চা খাও। আল এই দেখো কতো বিস্কু। অতিদি নান্না কলিছে। তোমার মা’কে প্রায় বলতে, বাবা অতিদি পাখিকে পুতুই কিনে দেয় না, ফলক কিনে দেয় না, পলি বাবুকে পুতুই দেয়, অ্যাত্তোগুলো ফলক কিনে দেয়, দুতা কিনে দেয়, বিদুম কিনে দেয়।
তোমার মা বললেন,আমিও তোমাকে সুন্দর পুতুল,অনেক অনেক ফ্রক,জুতা,বেলুন কিনে দিবো। বাবা ভাইয়া আর পরীকে দিবে,আমি তোমাকে,কেমন? তখন তুমি জানতে চাইতে, বাবা অতিদি পাখিকে দেয় না কেন?
তোমার এই প্রশ্নটা আমার বুকে এখন রক্ত ঝরায়, ” বাবা দেয় না কেন?” এখন বাবা তোমাকে উজাড় করে সব দিতে চায়, কিন্তু অদিতি পাখি কিছুই নিতে চায় না,নেয় না। ”

রাত বারোটা। সবাই শুয়ে পড়েছে। অদিতি মায়ের কাছে ঘুমায়। চিঠি পড়ার জন্য নিজের ঘরে এসেছে।

বেড রুমের অদল বদল হয়েছে। তিথি ভাবী আর অদিতি ফুপা-ফুপুর রুমের একদম কাছাকাছি বেডরুমে ঘুমান। ঐ ঘর থেকে সামান্য শব্দ হলেও মা-মেয়ে ছুটে যান, দেখেন ফুপা-ফুপু ঠিকঠাক আছেন কিনা।

” বাবা,আমার বাবা। এমন ভাবে কেন চলে গেলে তুমি? তুমি কি দেখতে পাও তোমার অদিতি সবাইকে লুকিয়ে তোমার জন্য সবসময় কাঁদে? তুমি কি অনুভব করতে পারো তোমার মেয়ে কতোটা ভালোবাসে তোমাকে? আমার খুব হ্যালুসিনেশন হয় বাবা। প্রায়ই তোমার ডাক শুনতে পাই, “জ্বী আব্বু” বলতে যেয়ে থমকে যাই, আর তখন কষ্টে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না,বাবা। আমি তোমাকে খুব, খুব, খুব ভালোবাসি বাবা। তোমার পছন্দের খাবার একদম মুখে তুলতে পারি না, তোমার অতি প্রিয় “মিক্সড ফ্রুট জ্যুস ”
আমি আর বানাই না, বানাবোও না। তোমার কাপড়-চোপড় বুকে জাপটে ধরি, তাও বুকটা একেবারে শূন্য থেকে যায়। এমন অসীম শূন্যতা নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবো?”

অদিতি বিড়াল পায়ে দাদা-দাদির ঘরে গেলো। ডিম লাইট জ্বলছে। অদিতি দেখলো, দাদা-দাদি দু’জনেই চুপ করে সোজা হয়ে শুয়ে আছে, দু’জনেরই চোখ খোলা।

“দাদাভাই, দাদুমনি, রাত পৌণে একটা বাজে। এখনো ঘুমাও নি? জেগেই আছো যখন, তখন দু’জন মিলে গল্প করছো না কেন? দাঁড়াও, তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসি, খেয়েছো তো রাত আটটায়। মাথা নাড়লে হবে না,খেতে হবে। খালি পেটে ঘুম আসে?”

“কিছু খাবো না রে অদিতি। আর ক্ষিদে লাগলে ঘরে বিস্কিট তো রাখা আছেই। ”

“বিস্কিট বিস্কিটের জায়গায় থাকুক।আমি আসছি।”

“অদিতি…”

অদিতি মা’কে দেখতে যায়। মা ঘুমাচ্ছেন অঘোরে। মা কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খাচ্ছেন ইদানিং। এখান থেকে মা’কে ফেরাতে হবে।

মাজেদা বু” সহ সবাই ঘুমাচ্ছেন। অদিতি দাদা-দাদুর প্রিয় স্ন্যাকস বানায়। চটপট হাতে লাচ্ছি বানায়। তারপরে হাজির হয় দাদুদের রুমে।

“নাও,ওঠো। এটুকু খেয়ে নাও।”

“দূর পাগলি,কি যে করিস! এই মাঝরাতে কিছু খাওয়া যায়? তুই ঘুমাস না কেন? ওগুলো খেয়ে নিয়ে তুই ঘুমাতে যা।”

“কোনো কথা না। ওঠো।”

নাতনি আদর করে,শাসন করে, নানা রকম গল্প করে দাদা-দাদিকে খাওয়ায়। তারপরে শুয়ে থাকা দাদা-দাদির মাথায়, কপালে হাত বুলাতে থাকে, তাঁরা ঘুমালে নিজে ঘুমাতে যায়। প্রায় রাতের চিত্র এটা।

ফুপা-ফুপু খুব কান্নাকাটি করে অনুরোধ করেছিলেন আনিলা আপাকে, তিনি যেন এমিলিকে নিয়ে দেশে থেকে যান। আপা কিছুতেই রাজি হলেন না। হওয়া উচিত ছিলো। তাঁর যা যোগ্যতা,এ দেশে তিনি যে কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে বা কোম্পানিতে অনেক উঁচু পদে যোগ দিতে পারতেন। এমিলিও ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারতো। অস্ট্রেলিয়ায় আপার বিশেষ কেউ নেই। তাহলে কেন দেশ ছেড়ে থাকা? পুত্র হারা বাবা-মায়ের মানসিক শান্তির কথা ভেবে কি আনিলা আপা থেকে যেতে পারতেন না? বুঝলাম দেশে অনেক অসুবিধা, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ, মানুষের মনে ও কাজে দূষণ, অপরাজনীতি, নৈরাজ্য, দুঃসহ ট্রাফিক জ্যাম, আরও হাজার সমস্যা। তাতে কি? বিষাদগ্রস্ত বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য এটুকু স্যাকরিফাইস করা যায় না?

সমুদ্র -পরী সবাই বাইরে সেটল করবে। বাংলাদেশ বসবাসের অযোগ্য। আরে,তোরা যারা মেধাবী, সৃষ্টিশীল, তারা দেশে থেকে যেয়ে দেশের মঙ্গলের জন্য কিছু কর্। যেমন করেছেন আনন্দ ভাইয়া, ফুপা, ফুপু,আমার দাদা দাদী,চাচা ফুপুরা, তিথি ভাবী,অদিতির মতো মানুষেরা।

চার মাস কেটে গেলো আনন্দ ভাইয়া চলে যাওয়ার পরে। অদিতির ব্যবসা খুব ভালো চলছে। অল্প লাভ রেখে সৎ ভাবে ব্যবসা করে মেয়েটা। আর ওর পরিশ্রম করার ক্ষমতা দেখলে অবাক হয়ে যায় সবাই। আরেকটা দোকান নিয়েছে অদিতি, কেক-বিস্কিট-পেস্ট্রি-ক্রিমরোলের, দোকানের নাম দিয়েছে “আনন্দ বেকারি। ” এতোটুকু মেয়ে একাই সবকিছু হ্যান্ডেল করতে পারে, তবু আমরা অনেকেই ওর কাজ দেখাশোনা করি, সঞ্জু ভাই -রঞ্জু ভাই -মুকুল ভাইরা আনন্দ ভাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

ফুপা তাঁর সম্পত্তি ভাগ করে দিয়েছেন। অদিতির ড্রিম প্রজেক্টের জন্য আলাদা অনেকখানি জমি, টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। এতে পরীর নানার বাড়ির সদস্যরা খুবই অসন্তুষ্ট, পরীও । আনিলা আপা তাঁর সব সম্পত্তি দিয়ে দিয়েছেন ভাইয়ের তিন ছেলেমেয়েকে। সমুদ্র তার দাবী ছেড়ে দিয়েছে, সে অদিতির ওরফানেজের জন্য তার অংশ স্বেচ্ছায় সানন্দে অদিতির নামে করে দিয়েছে, এ বিষয়ে মার্থা আর পলিনের উৎসাহ ছিলো দেখার মতো। পরী আগে বলেছিলো ফুপুর সম্পত্তির ভাগ সে নেবে না, আপুর মানবতার কাজে সেটা ব্যয় হবে, কিন্তু পরী পরে মত পাল্টায়। সে আনিলা আপার দেওয়া সম্পত্তি নেয়। এটা খুব স্বাভাবিক, অন্যায় একেবারে নয়। কিন্তু বাবার সম্পত্তির ভাগ অদিতিকে দেওয়া যাবে না,এই দাবীতে সে মহা হৈ চৈ শুরু করে দেয়। দাদা কেন অদিতিকে বাড়তি জমি দিলেন, ফুপু শুধু সমুদ্র আর পরীকে না দিয়ে অদিতিকেও কেন সম্পত্তির ভাগ দিলেন, সমুদ্র কেন ফুপুর থেকে পাওয়া সম্পত্তি অদিতিকে দিয়ে দিলো, এগুলো নিয়ে পরীর প্রচন্ড রাগ। বাবা মারা যাওয়ার এক মাস যেতে না যেতেই সম্পত্তি সম্পত্তি করে পাগল হয়ে যেয়ে পরী সবাইকে হতবাক করে দিয়েছিলো। কে জানে কার বুদ্ধিতে পরী অমানুষ হয়ে গিয়েছিল। অথচ মাঝখানে কতো স্বাভাবিক, ভালো হয়ে গিয়েছিল মেয়েটা। শেষের কয়েকটা দিন নানার বাড়িতে থাকতো। দেশ ছাড়ার আগের দিন এই বাসায় এসে সমস্ত বিষ উগড়ে দিয়েছিলো অদিতির উপরে,” নির্লজ্জ, শয়তান , লোভী মেয়ে মানুষ। ভিখিরির মেয়ে, যে ভাবে পারছিস, যার কাছ থেকে পারছিস,সব হাতিয়ে নিচ্ছিস। তোর লজ্জা করে না এ বাড়ির কেউ না হয়েও সবার কাছ থেকে সবকিছু হাতিয়ে নিচ্ছিস। পা চেটে চেটে সবাইকে গলিয়ে ফেলছিস। ডাইনি। তুই মর্, তোর মরার খবর যেন খুব তাড়াতাড়ি পাই। রাস্তার কুকুর একটা।”

এতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সবাই পরীর মুখে এমন অশ্লীল কথা শুনে, পরীর এহেন কদর্য ভাবভঙ্গি দেখে। ফুপু শুধু কাঁপা কাঁপা গলায় বলেছিলেন, “এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও তুমি। আমার জীবদ্দশায় এই বাড়িতে তুমি ঢুকতে পারবে না।”

“একশো এক বার পারবো। এটা আমার বাবার বাড়ি। তুমি নিষেধ করার কে?”

“এটা তোমার বাবার একার বাড়ি নয়। আর বাবা বলছো কাকে? আমার আনন্দের মেয়ে এতো খারাপ হতে পারে না।”

” দ্য পুওর ওল্ড লেডি, দেন আস্ক ইওর ডটার ইন ল হু ইজ মাই ফাদার। তোমার আনন্দ আমার বাবা নয়, তাহলে আমার বাবাটা কে সেটা তোমার বৌমা বলুক। আমি পিতৃপরিচয় জানতে ইচ্ছুক।”

এমন অবস্থা হয়ে গেলো পরীর। বাপের জন্য দুঃখ বেদনা প্রথম পাঁচ সাত দিন যা একটু ছিল। তারপরে শোক উধাও। মায়ের প্রতিও টান নেই। তিথি ভাবীর তখন মুমূর্ষু অবস্থা। মেয়ের ভাষ্য হলো “নাটুকেপনা। ”

চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ