Monday, October 6, 2025







শক্তিময়ী পর্ব-১৪+১৫

#শক্তিময়ী
চতুর্দশ পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

অদিতির এসএসসির রেজাল্ট আউট হয়েছে। বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে সে। আগে মোটামুটি ফল করতো,ক্লাস এইট থেকে পড়াশোনায় অদিতির ভালোই উন্নতি হতে থাকে। আনন্দ ভাইয়াকে অবশ্যই কৃতিত্ব দেওয়া যায়। অদিতিকে ভালোবাসুন আর নাই বাসুন, আনন্দ ভাইয়া অদিতিকে লেখাপড়ায় ভালো গাইড দিয়েছেন। অংক-বিজ্ঞান অদিতি ভয় পেতো, খুব সহজ সরল করে আনন্দ ভাইয়া ওকে অংক বিজ্ঞানে তালিম দিয়েছেন। আমরা সব ভাই বোনই লেখাপড়ায় ভালো,তবে আনন্দ ভাইয়ের তুলনায় কিছু না।জীবনে তিনি সেকেন্ড হন নি। পড়াতেও ভালোবাসেন। ছোট বেলায় আমরা আনন্দ ভাইয়ার পড়ানোর ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে থাকতাম। অদিতিকে ভাইয়া প্রতিদিন সময় করে বেশ কিছুক্ষণ পড়াতেন। অদিতি দুই অংকে একশোতে একশো, ফিজিক্সে পঁচানব্বই,কেমিস্ট্রিতে আটানব্বই, বায়োলজিতে বিরানব্বই পেয়েছে। ইংরেজি,বাংলা,অন্যান্য বিষয় তিথি ভাবী পড়াতেন, আনন্দ ভাইয়া ইংরেজি না পড়ালেও মেয়ের সাথে প্রায় ইংরেজিতে কথাবার্তা বলতেন, প্রথম দিকে অদিতি ইংরেজি বলার সময় খুবই আড়ষ্ট, ভীত,লজ্জিত থাকতো, আনন্দ ভাইয়া ওর ভয়,লজ্জা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন। বললাম না,আমাদের পরিবারের সদস্যদের , সবার নয়, আনন্দ ভাইয়া আর ফুপুর,ফুপারও কিছুটা, একটাই অপরাধ _অদিতিকে আপন করতে না পারা। খুব অন্যায় নিঃসন্দেহে, কিন্তু এছাড়া তাঁরা মানুষ হিসাবে অনেক উঁচু মানের।

এরমধ্যে এক দারুণ ঘটনা ঘটলো। ফুপুর বাড়ি ঢাকা জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ বাড়ির সম্মান পেলো। সম্মান পাওয়ার কারণ বাড়িটার অসাধারণ স্থাপত্যশৈলি নয়, এর বাগান। সামনের পুরা লন, ছাদ, বারান্দাগুলো বড়ই নয়নাভিরাম। কতো রকমের ফুল আর পাতাবাহারের গাছ। অনেক দুষ্প্রাপ্য গাছও আছে। আর ইনডোর প্ল্যান্টের তো কথাই নেই। বিভিন্ন পেপার আর ম্যাগাজিনের সাংবাদিকরা এলেন।টিভিতেও প্রতিবেদন হলো। সবাই ভূয়সী প্রশংসা করলেন বাসা ও গাছপালার, বাসার মানুষদের। তিথি ভাবী সোজা অদিতিকে ঠেলে দিলেন সামনে, বললেন,”এর একক কৃতিত্ব আমার বড় মেয়ের। ওর গাছ লাগানোর নেশা। এই যে এতো এতো গাছ, বেশির ভাগই ওর লাগানো। ও-ই যত্ন করে। শুধু বাসায় না, স্কুলেও ও খুব সুন্দর বাগান করেছে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে অনেক গাছ লাগিয়েছে। হাইওয়ের পাশে ফাঁকা জায়গা দেখলেই মেয়ে আমার গাড়ি থামিয়ে নানান ফল,ফুলের বীজ ছড়িয়ে দেয়। ”

সদ্য এসএসসি পাশ করা এক মেয়ে, সে এতো সচেতন পরিবেশ সম্পর্কে। কোথাও ময়লা পড়ে থাকলে সে নিজেই সেগুলো ফেলে দেয়। তিথি ভাবী সাংবাদিকদের বললেন,”জানেন,একবার আমরা চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গেছি। ওখানকার লেকটা কতো সুন্দর হতে পারতো যদি আমরা এই বাংলাদেশিরা লেকের মধ্যে কলার খোসা, চিপসের প্যাকেট , পলিথিন আরও হাবিজাবি না ফেলতাম। আমার মেয়ে গাড়িতে সবসময় একটা বড় চটের ব্যাগ, বেলচা এসব রেখে দেয়। সে ওগুলো নিয়ে এসে লেকের মধ্যে নেমে সব ময়লা পরিস্কার করে তার ব্যাগে ভরলো।কিউরেটর সাহেবের অফিসে যেয়ে বললো,”কেন মাঠে, লেকে এতো ময়লা? যারা ময়লা ফেলে তাদের ধরে শাস্তি দেন না কেন আপনারা? ” এই হলো আমার মেয়ে।”

অদিতি আর বাড়ির ছবি, বাগান,ছাদ,বারান্দা, ইনডোর প্ল্যান্টের ছবি ছাপানো হলো নানা পত্রিকায় ও ম্যাগাজিনে। টিভিতেও ফুপুর বাড়িকে নিয়ে আধাঘন্টার প্রতিবেদন হলো বিভিন্ন চ্যানেলে। অদিতিকে নিয়ে ভালোই লেখালেখি হলো।

ভাবী মেয়েকে দেশের অন্যতম সেরা একটি কলেজে ভর্তি করে দিলেন। ভর্তি করে দিলেন বলাটা ঠিক হলো না, তীব্র প্রতিযোগিতায় অদিতি চান্স পেয়ে গেলো।

এরমধ্যে ফুপু স্ট্রোক করলেন। শরীরের বাম দিক পুরা অবশ। আনন্দ ভাইয়া নার্স রাখতে চাইলেন। ভাবী তীব্র আপত্তি জানালেন। ফুপুর কাজ তিনি নিজ হাতেই করবেন। যখন স্কুলে যাবেন, তখন মাজেদা খালার নেতৃত্বে মেইডরা দেখাশোনা করবে। আর আমরা কাজিন ননদেরাতো আছিই।

ভাবী খুব নিপুণ ভাবে মানুষের সেবাযত্ন করতে পারেন।উনার আব্বা-আম্মার খোঁজ খবর নেন নিয়মিত। তাঁদের খাওয়াদাওয়া, বাজার ঘাট,ওষুধ পত্র,ডাক্তার দেখানো, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া,বিনোদনের ব্যবস্থা করা, সব ব্যাপারেই ভাবী সবার আগে। ভাবীর বিয়ের ছয় মাসের মাথায় আমার খুব জন্ডিস হয়েছিল। কিছু খেতে পারতাম না,বমি আর বমি। নতুন বৌ তিথি ভাবী আমাদের বাসায় এসে উঠলেন। আম্মুকে সরিয়ে দিয়ে বললেন,”মামী,আপনি নিশ্চিন্তে রেস্ট নেন। ওকে নিয়ে আপনাদের এতোটুকু ভাবতে হবে না।”

তারপরে ভাবী যা করলেন আমার জন্য,সেই ঋণ কখনোই শোধ করা সম্ভব নয়। কতো রকম খাবার যে বানাতেন ভাবী,কোনটা আমার মুখে একটু ভালো লাগবে, আমার মাথা ধুইয়ে গা মুছিয়ে দিতেন, বাথরুমে ধরে ধরে নিয়ে যেতেন, আমার বমি দু’হাতে পরিস্কার করতেন,রাতে আমার কাছেই থাকতেন।বিশ দিন ছিলেন আমাদের বাসায়।

মাজেদা বু’র একবার পক্স হলো। সাথে আকাশ পাতাল জ্বর। মারাত্মক অবস্থা। ফুপু শুকনো মুখে বললেন,”ওর ভাইপো কে খবর দিই।গ্রামে নিয়ে সেবা যত্ন করুক। বেশি করে টাকা দিয়ে দিই। ভালো খাওয়াক,ভালো চিকিৎসা করুক। সুস্থ হলে চলে আসুক।”

ভাবী অবাক হয়ে বললেন,” কি বলছেন মা?মাজেদা বু সারাজীবন আপনাদের সাথে কাটালো,আজ তার এই অবস্থায় আমরা তার দেখাশোনা না করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো?আর বাড়িতে যেতে যেতেই তো তাঁর দম ফুরিয়ে যাবে।”

“তাহলে বরং এখানে হাসপাতালে ভর্তি করে দিই।”

“তার দরকার নেই। আমি মাজেদা বু’কে দেখাশোনা করবো।”

“পাগলের মতো কথা বলো না। সমুদ্র ছোট। ”

“আমি সেভাবেই ম্যানেজ করবো,মা।”

ভাবী কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। মাজেদা বু’র সেবা যত্ন। দিনের পর দিন। সুস্থ হয়ে মাজেদা বু বলেছিলেন, “আমাকে আমার মায়েও কোনোদিন এমন যত্ন করে নাই। ”

এই হলেন তিথি ভাবী। শাশুড়ির অসুস্থতার সময় ইনি যে সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে সেবা যত্ন করবেন,এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

কিন্তু এবারে খেল দেখালো ভাবীর মেয়ে, আমাদের অদিতি। দাদির কাছ থেকে তাকে নড়ানো যায় না।কলেজে ক্লাস ভালো করে শুরু হয় নি। মায়ের সব নিষেধ উপেক্ষা করে সে দাদির কাছে পড়ে রইলো। ব্যাপারটা ফুপুও ঠিক পছন্দ করতে পারছিলেন না। ঐ অবস্থায়ও আনন্দ ভাইয়াকে বললেন নার্স রাখতে। ফুপা বললেন,” নার্স থাকলে তো আমি সবসময় তোমার কাছে থাকতে পারবো না।”

“তুমি অন্য ঘরে থাকবে।”

“না,না, আমি তোমার কাছেই থাকবো।”

অদিতি ফুপুর, সেই সাথে ফুপার জন্য ওঁদের পছন্দের মজার মজার খাবার বানাতে লাগলো। ফুপুকে সে যত্ন করে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়, নিজের হাতে দাঁত ব্রাশ করিয়ে দেয়, ভাবী আর সে মিলে ফুপুকে গোসল করিয়ে দেয়, ফুপুর বেডপ্যানের দায়িত্ব সে কাউকে দেয় না, ফুপুর অস্বস্তি বা বিরক্তি দেখলে সে বলে,”দাদুমনি, আপনি না আপনার মা, নানী,শাশুড়ি তিনজনেরই যাবতীয় দেখাশোনা করেছেন, অন্য কাউকে কিছু করতে দেন নি,তাহলে আমাকে কেন বাধা দিচ্ছেন দাদুমনি? আমাকে লজ্জা করছেন কেন, আমি না আপনার নাতনি? আপনাকে অনেক ভালোবাসি,দাদুমনি।” অদিতি রাতে দাদির মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায়। তার সরু লম্বা আঙ্গুলের যাদুতে ফুপু আস্তে আস্তে বশীভূত হতে লাগলেন। পরী দিনে খুব বেশি হলে দু’বার আসে দাদা-দাদুর ঘরে, তাও আনন্দ ভাইয়া -তিথি ভাবীর চাপে। সে পড়াশোনা,গ্যাজেট, ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে মহাব্যস্ত। বাবা আর দাদা-দাদি, নানা-নানীর আশকারাতে মেয়েটা কেমন যেনো হয়ে গেছে। সমানে ফাস্ট ফুড খেতে খেতে সেই অতি সুন্দর পরী একটা হাতীতে পরিণত হয়েছে। ভাবী এবারে খুবই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ফুপা-ফুপু আর আনন্দ ভাইয়াকে কঠিন ভাবে বলেছেন, মেয়েকে তিনি এবারে একক চেষ্টায় মানুষ করবেন। এতে কারোর অসন্তুষ্ট হওয়া চলবে না। পরীর কাজ কারবার দেখে এখন সবাই মোটামুটি শংকিত। তাই ভাবীর কথা মেনে নিয়েছেন নির্বিবাদে। সমুদ্র ভিডিও কলে কথা বলে, তাও নিয়মিত না, বাপ-মাকে বলে ডেইলি ফোন করার কি দরকার, সপ্তাহে একবারের বেশি দাদা-দাদির সাথে কথা বলতে চায় না। তারও ছোট বোনের মতো হাল, পড়াশোনা, ইউনিভার্সিটি, বন্ধু বান্ধব, গ্যাজেটের লেটেস্ট ভার্সন, জামাকাপড়, হালফ্যাশনের সানগ্লাস, ঘড়ি। তিথি ভাবীর কঠিন নির্দেশে আনন্দ ভাইয়া এখন পরীর হাতখরচ একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন, সমুদ্রকেও কম টাকা পাঠাচ্ছেন। ছেলেমেয়ে মায়ের প্রতি তাই বেশ অসন্তুষ্ট।

চলবে।

শক্তিময়ী
১৫ তম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

আজ ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার ফল দিলো অদ্বিতীয়ার। এসএসসির চেয়েও বেশি ভালো। ইতিমধ্যে আরও কিছু সাফল্য অর্জিত হয়েছে তার ঝুলিতে।
“সারা বাংলাদেশ আচার প্রতিযোগিতায়” ভাবী অদিতিকে না জানিয়ে ওর বানানো তিন পদের আচার পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। একটা আচার মিষ্টি বিভাগে প্রথম, আরেকটি টক বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে। ও ছোট্ট থেকেই ভারি সুন্দর গান গায়। ভাবী একজন ওস্তাদের কাছে অদিতিকে গান শিখিয়েছিলেন। সে বিভিন্ন সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছে। টিভি ও রেডিওর অডিশনে একবারে পাশ করেছে। তরুণ পর্যায়ে সেরা বাগানীর মর্যাদা অর্জন করেছে। কলেজ জীবনে অনেকটা জোর করে সে বেশ কিছুর ব্যবসা শুরু করেছিলো, যেমন নিজের বানানো আচার, নিজের ব্লক,বাটিক,টাই-ডাই করা শাড়ি, নিজের তৈরি কেক ইত্যাদি। সব ব্যবসাতে সোনা ফলেছে। এখন সে পড়ালেখার পাশাপাশি আরও বড় পরিসরে ব্যবসা করতে চায়। হোম মেড খাবার সাপ্লাই করতে চায় বিভিন্ন প্রোগ্রামে, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। পোলাও,রোস্ট, চাইনিজ আইটেম,বার্গার,স্যান্ডউইচ, কেক ইত্যাদি। ভাবী নিষেধ করে দিয়েছেন। এখন এগুলো করতে গেলে পড়ালেখার ক্ষতি হবে।

আমার বিয়ে হয়েছে তিন বছর হলো। আমি মনেপ্রাণে অদিতির মতো একটা মেয়ে চাই। আমার হাসব্যান্ডও কথায় কথায় একদিন তেমন কথাই বলছিলেন। জয়া আপা তাঁর প্রেগন্যান্সির সময় অদিতির শিশুকালের একটা ফটো নিয়ে যেয়ে সেটাকে বিশাল বড় করে ফ্রেম বন্দী করে তার ঘরের দেওয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন এই আশায় যে তাঁর অদিতির মতো একটা মেয়ে হবে। হয় নি, ফুটফুটে দুই জমজ ছেলে হয়েছে। এখন ছবিটা জয়া আপার কাছ থেকে নিয়ে গেছেন ইতি ভাবী, আমাদের সঞ্জু ভাইয়ের বৌ। গত মাসে জানা গেছে তিনি প্রেগন্যান্ট।

আমি মুগ্ধ চোখে অদিতিকে দেখি। ছিপছিপে, লম্বা বা বেঁটে কোনোটাই বলা যাবে না, উজ্জ্বল শ্যামলা, লম্বা ঘন চুল, রেশমি আর ঝলমলে, অপূর্ব সুন্দর চোখ, মায়া মায়া,ছায়া ছায়া, একটু বোঁচা নাক। ভারি মিষ্টি, মায়াময় চেহারা। রূপসী তাকে বলা যায় না মোটেও, কিন্তু সোজা সাপটা কথাবার্তা, একই সাথে সারল্য ও বুদ্ধিমত্তা, গভীর আত্মবিশ্বাস ওকে আলাদা সৌন্দর্য দিয়েছে। মেয়েটা একদম সাধারণ পোশাকে সবসময় টিপটপ। ভাবীর মতোই। অনেক দামী জামাকাপড়, ব্যাগ, স্যান্ডেল, সাজগোজের জিনিস গিফট পায়, সেগুলো সেভাবেই পড়ে থাকে, উপহারের জিনিস বলে অদিতি সেগুলো খুব যত্ন করে রাখে, কিন্তু নিজে থাকে একেবারে সাধারণ।

সমুদ্রের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়েছে। যথারীতি খুবই ভালো করেছে সে। দেশে আসতে চায় না একদম। এতো বছরে মাত্র একবার এসেছিলো দেশে।এক মাসের জন্য। তাও পায়ে চাকা দিয়ে। সারাক্ষণ বাইরে। ঐ সময়ে তারা কয়েকজন বন্ধু বান্ধব যুক্তি করে একসাথে এসেছিলো, সারাক্ষণ বাইরে আড্ডা, বন্ধুরা মিলে দেশের নানা জায়গা ঘুরে বেড়ানো। ফুপা-ফুপু অবাক হয়ে বলতেন,”সমুদ্র, আমাদের সাথে তোর থাকতে ইচ্ছা করে না? মাত্র কটা দিনের জন্য এসেছিস, আমাদের সাথে থাকবি, একসাথে খাবো,একসাথে গল্প গুজব করবো,একসাথে বেড়াতে যাবো। ”

“বাসায় বড্ড বোর ফিল করি।”

“চল্,আমরা সবাই মিলে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাই। আমরা,তোর নানা-নানু, মামা-খালা-চাচা-ফুপুরা,কাজিনরা। সেই আগের মতো।খুব মজা হবে দাদু ভাই। ”

কিন্তু স্বজনদের প্রতি সমুদ্রের তেমন আগ্রহ নেই। ভাবসাব দেখে তিথি ভাবী একদিন ছেলেকে ধরলেন। যা বললেন, তার সারমর্ম হলো,নিঃসন্দেহে বন্ধু বান্ধব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু আত্মীয় স্বজন কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরিবার ফার্স্ট প্রায়োরিটি। দাদা দাদি,নানা নানি, বাবা-মা, দুই বোন, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে সমুদ্রের সময় দেওয়া উচিৎ। আর মাস্টার্স শেষ করে সমুদ্রকে দেশে ফিরে আসতে হবে, দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। বাইরে পাঠানোর আগে সমুদ্রকে এমনই শর্ত দেওয়া হয়েছিল। বন্ধুদের প্রতি সমুদ্রের টান যে একেবারেই নির্দোষ টান, তা নয়। এটা ভাবী বুঝেছেন। ছেলে হালকা পাতলা মদ্যপান করছে,এটা তিনি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন। আজ থেকে সমুদ্র কোনোভাবেই যেন মদ্যপান না করে। পরিবারের কাউকে সমুদ্র কখনো মদ খেতে দেখেনি। কেন তাহলে এহেন কু প্রবৃত্তি হলো তার?

সেবারে সমুদ্রের বিষয়ে বাপ-মা,শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী কারোর কোনো সুপারিশ শোনেন নি ভাবী। বলেছিলেন, “অন্যায় আহলাদ দিয়ে আর পরী -সমুদ্রের জীবন নষ্ট কোরো না।শুধু সমুদ্র আর পরী কেন, কোনো বাচ্চাকেই তোমরা এভাবে ডিরেইলড কোরো না। ”

পড়াশোনার পাশাপাশি সমুদ্রকে এখন কিছু কাজ করতে হয়। ভাবীর চাপে আনন্দ ভাইয়া টাকা পাঠানো একদম কমিয়ে দিয়েছেন। সমুদ্র এখন যখন তখন রেডিমেড খাবার খেতে পারে না, হোষ্টেলে নিজে রান্না করে খায়। প্রথম প্রথম মায়ের উপর ভীষণ গোস্বা ছিলো। এখন কাজ আর পড়ার চাপে,ফাস্ট ফুড আর অ্যালকোহলের অভাবে ছয় ফুট এক ইঞ্চি শরীরের ওজন একশো পনেরো হতে একশোতে এসে দাঁড়িয়েছে। অস্বাভাবিক ফিগার হয়ে গিয়েছিল সমুদ্রের, সেই সাথে এনার্জি লেভেলও কমে গিয়েছিল খুব। এখন শরীর আর মন আগের চেয়ে ফুরফুর করায় , বেঢপ শরীর একটু স্বাভাবিক হওয়ায় সমুদ্র দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছে। সে এখন সব্জি আর মাছ খায় বেশি, নিজে রান্না করে। ফল খায় অনেক।হাঁটে, সাইকেল চালায়, ইয়োগা করে। ভিডিও কলে ভাবী সমানে উৎসাহ দেন। আনন্দ ভাইয়া বলেন,”সব মায়েরা বাপের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে বাচ্চাদের আরও টাকা পাঠাতে আর তুমি হচ্ছো উল্টো। এখন থেকে আরেকটু বেশি টাকা পাঠাই। ছেলেটার কষ্ট হচ্ছে। ”

” একটা টাকাও বাড়তি পাঠাবে না যদি ছেলের মঙ্গল চাও। স্নেহ ভালো,স্নেহান্ধ হওয়া ঠিক না। প্লিজ,সমুদ্রকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে দাও।”

সমুদ্রের পাশাপাশি ভাবী পরীকেও ধরেছিলেন। মেয়েটা জাংক ফুড আর গ্যাজেটে অতি মাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়েছিল। ও লেভেলে ফাটাফাটি রেজাল্ট করার পরে তো কথাই নেই। বন্ধু মহলে নিজের স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্য এক বিরাট বড়লোকের আলট্রা মডার্ন ছেলেকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছিল। তখন ভাবীকেই তাঁর বাপ-মা,শ্বশুর-শাশুড়ি আর আনন্দ ভাইয়ার কথা হজম করতে হয়েছে, “পরের বাচ্চার পিছনে সারাদিন পড়ে থাকলে নিজের বাচ্চার খেয়াল করবে কখন? পরীর এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী। ”

এইসব কথা বলার সময় তাঁদের মনে পড়তো না যে ভাবীর হাজারো নিষেধ স্বত্বেও পরীর হাতে মোটা অংকের টাকা দিতেন আনন্দ ভাইয়া। নানা-নানি, দাদা-দাদি মেয়েটার সব অন্যায় আব্দার পূরণ করতেন, ভাবীকে এতোটুকু শাসন করতে দিতেন না। মেয়ের বেয়াদবি, স্বার্থপরতা আর বড়লোকি ভাব সহ্য করতে না পেরে তিথি ভাবী একদিন একটা চড় দিয়েছিলেন মেয়েকে, তাই নিয়ে অশান্তি বহুদূর গড়িয়েছিল। ফুপু টানা দুই বেলা না খেয়েছিলেন। আনন্দ ভাইয়া অফিস থেকে ফিরে চোদ্দটা কথা শুনিয়েছিলেন ভাবীকে। সবার তীর্যক কথাতেই অদিতির প্রসঙ্গ চলে আসতো অবধারিত ভাবে। ভাবীর বাবা-মা নাতনির মান ভাঙানোর জন্য রাজ্যের খাবার নিয়ে এসেছিলেন পরীর পছন্দ অনুযায়ী। পিৎজা, চিজ বার্গার, ক্লাব স্যান্ডউইচ, বিরিয়ানি, কাবাব,আরও কতো কি। ও লেভেল পড়ুয়া মেয়ের ওজন চুরাশি কেজি, সালোয়ার কামিজ পছন্দের নয়, টাইট গেঞ্জি, টাইট জিন্স। ভারি মেক আপ। দুদিন পরপর পার্লার। বাসার কাউকে সময় দেওয়া নেই, আত্মীয় স্বজনের বাসায় যাওয়ার বা বাসায় তাদের অ্যাটেন্ড করার সময় নেই, শুধু নিজের মতো চলা।

অনেক কষ্টে, বলতে গেলে একক চেষ্টায় মেয়েকে কিছুটা পথে এনেছেন ভাবী। পরীর শরীর আর স্বভাবের যে ভয়ংকর অবস্থা হয়েছিল, তা পরিবারের সবাইকে আতংকিত করেছিলো, দুশ্চিন্তার সাগরে ডুবিয়ে দিচ্ছিলো, তাই তিথি ভাবীর শাসনে এবারে আর বাগড়া মারতে আসেন নি কেউ।

তবে যাই করুক,এই দুই ভাই বোন লেখাপড়া আর ক্যারিয়ারের ব্যাপারে বড় সচেতন।

ফুপা মাঝেমধ্যে বলেন, “তিথি মা,রাগ কোরো না। যুগের সাথে সাথে কালচার পাল্টায়। এখনকার বাচ্চারা মোবাইল, ট্যাব, জাংক ফুড এগুলোর প্রতি অ্যাডিক্টেড। এটা শুধু তোমার বাড়িতে না,ঘরে ঘরে। শুধু বাংলাদেশের ঘরে ঘরে নয়,সারা পৃথিবীর ঘরে ঘরে। তাই এতো রাগ করার কিছু নেই। ”

“বাবা,যেটা খারাপ, তা সবসময়ের জন্য খারাপ। যা ভালো,সব যুগের জন্য ভালো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। এটা সব যুগের জন্য। মদ খাওয়া কোনো যুগের জন্য ভালো নয়। ফিগার শো করাও সব যুগের জন্য খারাপ। পরিবার-আত্মীয় স্বজনকে এড়িয়ে চলাও খুব খারাপ । কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দু’হাতে ওড়ানো ভালো নয়, বিশেষ করে নিজে উপার্জন না করে। বাড়ির অন্যদের ভালো-মন্দ চিন্তা না করে বাপের রক্ত পানি করা টাকা ইচ্ছা মতো খরচ করে চরম বিলাসিতা করা সব যুগের জন্য ই অপরাধ। ”

আন্টি মানে ভাবীর মা ফস করে বলে উঠলেন,”আমাদের সমুদ্র -পরীর খরচের জন্য কারোর উপরেই অর্থনৈতিক চাপ পড়ার কথা নয়।ওর বাপ,দাদা-দাদু,নানা-নানু সবারই যথেষ্টর উপরে সামর্থ্য আছে ওদেরকে ভালো রাখার।”

“ভালো রাখা আর নষ্ট করা এক নয়।”

“তুমি দত্তক নিয়ে অপচয় করো নি তিথি?এই যুগে একজন মানুষকে লালন পালন করা কম খরচের কথা নয়। তুই সমুদ্র -পরীর হক নষ্ট করিস নি? ঐ মেয়ে কিচেনে ঢুকে যখন খুশি এটা বানাচ্ছে, ওটা বানাচ্ছে, খাবার আর কাপড়ের ব্যবসা করছে, বিজনেস করতে টাকা লাগে না? ইচ্ছামতো গাছের চারা কিনছে,বীজ কিনছে,সেই অপচয় তোমার গায়ে লাগে না?”

“আম্মু,তুমি নিজেও বুঝছো তোমার কথাগুলো কতোটুকু হাস্যকর, অযৌক্তিক আর কুৎসিত। স্যরি আম্মু, এমন ভাষা ব্যবহার করছি বলে। তুমি এতো বছর ধরে অনেক জঘন্য কথা বলেছো আমার অদিতি সম্পর্কে। অদিতির সেন্টিমেন্টতো বহুদূরের কথা,আমার সেন্টিমেন্ট নিয়েও ভাবো নি।আমি দত্তক নিয়েছি,এটা আমার আর আনন্দের ব্যাপার।তোমার সমস্যা কোথায়?তুমি ঢাকা ভার্সিটি থেকে ইকোনোমিকসে মাস্টার্স, ক্যালগেরি থেকে পিএইচডি ,হিউম্যান রাইটস এও ডিগ্রি নেওয়া কিন্তু তোমার থেকে মাজেদা বু অনেক শিক্ষিত,অনেক উঁচু দরের মানুষ। ”

“তিথি! ” একসাথে ফুপা-ফুপু-ভাবীর বাবা, আনন্দ ভাইয়া চিৎকার করে উঠলেন। ভাবীর মা স্তব্ধ।

“তিথি, এতোজনের সামনে তুমি নিজের মা’কে অপমান করছো। এই তোমার বিবেক?”

“বিবেক কার কেমন,তা আমরা সবাই জানি। মাজেদা বু’র সাথে কম্পেয়ার করায় এতো রি অ্যাক্ট করছো কেন তোমরা? উনি হলেন খাঁটি সোনার মানুষ। লোভ,অহংকার, হিংসা,জিদ,স্বার্থপরতা ছিটেফোঁটাও নেই। কর্তব্য বোধের তুলনা নেই। চেনা জানা সব মানুষের জন্য ভালোবাসার অভাব নেই। আর তোমরা? একজন নবজাতক তোমাদের জন্মশত্রু। তার জন্য তোমাদের কারোর কিছু করতে হয় না, সে কাউকে এতোটুকু জ্বালায় না, কিন্তু সে তোমাদের পথের কাঁটা। তোমরা তাকে কিছু দাও নি, কিন্তু সে আমাদেরকে অঢেল দিয়েছে। সে পরীকে ডুবে মরা থেকে উদ্ধার করেছে আল্লাহর দয়ায়, সে তিন তলার ছাদ থেকে পড়া হতে বড় আপার বাচ্চাকে বাঁচিয়েছে, সে তার দাদুর সেবা যত্ন করেছে প্রাণ দিয়ে, সে আমাদের সবাইকে মজার মজার রান্না করে খাওয়ায়, তোমরা তার জন্য কে কি করেছো? আর আম্মু,তুমি হিউম্যান রাইটস নিয়ে কথা বলে নিজেকে আর ছোট কোরো না। মানবাধিকার নিয়ে মিটিং মিছিল করা তুমি আসলে একজন হিপোক্র্যাট। ”

ফুপা বললেন,”তিথি,তুমি আমাদের বাড়িতে আমাদের বেয়ানকে এতো অপমান করলে, তুমি তাঁর কাছে ক্ষমা চাও।”

” ক্ষমা চাওয়ার মতো কোনো কাজ আমি করিনি। এখন আপনাদের বাড়ি থেকে আমাকে যদি চলে যেতে বলেন, আমি চলে যাবো আমার মেয়েকে নিয়ে। ”

“সে কথা বলি নি মা। কিন্তু নিজের মা’কে তুমি অপমান করতে পারো না। মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেশত। ”

” নিজের মান নিজেকে রাখতে হয়। অদিতিকে নিয়ে এ যাবৎ সবচেয়ে খারাপ কথা বলেছেন আম্মু আর আপা। অদিতিকে সবচেয়ে কষ্ট দিয়েছেন এই দুজন। অদিতি কি অপরাধ করেছে সবার কাছে,স্পষ্ট করে বলুন। ”

ভাবীর মা উঠে দাঁড়িয়ে পরীকে একটু জড়িয়ে ধরে বললেন,”আসি বেয়াই-বেয়ান। আনন্দ, বাবা,আসি।তোমরা বাসায় এসো। আমি এখানে আর কখনো আসবো না।”

ভাবীর বাবা-মা রওনা হলেন। পিছনে হাঁ হাঁ করতে করতে একটা দল।

অদিতি নিজের ঘরে ছিলো। নানা-নানু বিশেষ করে নানু আর খালা তাকে একদম সহ্য করতে পারেন না,এটা সে জানে। তাই সালাম দিয়ে সে আর ওখানে দাঁড়ায় না, তবে সবসময় ভারি যত্ন করে নানা-নানির জন্য পছন্দের খাবার বানায়। যে আসে,তার জন্য ই অদিতি পছন্দের কিছু খাবার বানায়। রান্না তার নেশা। তাছাড়া মানুষকে ভালো মন্দ খাওয়াতে সে খুব ভালোবাসে। প্রায়ই সে তার প্রাক্তন স্কুল মানে ভাবীর স্কুলের দপ্তরি,আয়া,পিওন এদের জন্য ভালো ভালো খাবার বানিয়ে ভাবীর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। সে যখন বাইরে বের হয়, সাথে একটা ঝোলা নিয়ে বের হয়। ঝোলায় ডিমচপ, বিস্কিট, কেক, কলা,পাউরুটি জাতীয় জিনিস থাকে। এগুলো বয়স্ক, অসুস্থ ভিক্ষুকদের জন্য। ব্যবসা করে সে ভালোই আয় করে, একটা টিউশন করে, কাজেই নিজের পয়সাতেই সে এই কাজগুলো করে।আর তার মা তো আছেনই।

অদিতি আজকের তর্ক বিতর্কের কিছু শোনে নি। খুব ভালো হয়েছে। সে পরীকে ডাক দিয়ে বললো,” পরী, এখানে তোমার নাশতা। ” বোনের জন্য রিচ ফুড নিষিদ্ধ। তাই অদিতি পরীর জন্য লো ক্যালরির মুখরোচক খাবার বানায়। আজ করেছে ভারি মজার একটা সালাদ।সাথে স্যুপ।

চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ