Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"কলা পাতায় বাঁধিব ঘরকলা পাতায় বাঁধিব ঘর পর্ব-০৪+০৫

কলা পাতায় বাঁধিব ঘর পর্ব-০৪+০৫

#কলা পাতায় বাঁধিব ঘর
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৪+০৫

ক্লান্ত মধ্যাহ্ন,সূর্যের উত্তপ্ত দাপটে ঘেমে-নেয়ে একাকার। ভাদ্র মাসের প্রকৃতিতে ভ্যাপসা গরম। আবার মাঝেমাঝেই শহর তলিয়ে যায় ঝুমঝুম বৃষ্টির আগমনে। আজ বাড়িতে কিছু মেহমান আসার কথা। সেজন্যই বিশাল আয়োজন। সাথে নতুন আত্মীয়দের দাওয়াত করা হয়েছে। পুষ্পর শশুর বাড়ী থেকে তার শশুর আর ননদ রিশা আসলেও তার মা কিংবা রাউফুন আসেনি। রাউফুন না আসায় পুষ্পর মা, চাচা ফোন করেছেন। সে জানালো ব্যস্ত আছে। সে জন্য আসতে পারেনি। রিশা পুষ্পর সাথে বসেই সময় কাটিয়েছে। নাবিল এসে তাদের মাঝে উপস্থিত হয়েই পুষ্পকে জিজ্ঞেস করলো,

-“আপু দুলাভাইয়া কেনো আসেনি?”

পুষ্প আদুরে স্বরে বলল,
-“তুই বললেই চলে আসতো। তুই নাকি দাওয়াত দিসনি।”

রিশা পাশ থেকে নাবিলের গাল টিপে দিয়ে বলল,
-“ছোট্ট বেয়াই কেমন আছেন?”

নাবিল নাক ফুলিয়ে গাল ঘষে সরে দাঁড়ালো। রিশা যেনো মজা পেলো। সে আবার ও নাবিলের গাল টিপে ধরলো। নাবিল বিরক্ত হয়ে বলল,
-“এরকম গাল টিপে ধরলে আমাদের বাড়িতে আর ঢুকতে দেবোনা।”

পুষ্প চোখ রাঙিয়ে বলল,
-“এসব বলেনা।”

নাবিল গাল ফুলিয়ে রইলো। রিশা হেসে উঠে বলল,
-“ওকে বকছো কেনো?
আমিতো ঠিক করেছি ছোট্ট বেয়াইকে বিয়ে করে এই বাড়িতে এসে উঠবো। তখন দেখি বউকে কি করে ঢুকতে না দেয়?”

নাবিল বিয়ের কথা শুনে লজ্জা পেলো। মা বলেছে বিয়ের কথা বলতে নেই। তাই লজ্জা পেয়ে বলল,
-“আমি এখনো ছোট।”

রিশা মিটিমিটি হেসে বলল,
-“কিন্তু আমিতো আমার ছোট বেয়াইকেই পছন্দ করেছি। এখন কি হবে?”
কথা শেষ করে রিশা আবারও গাল টিপে দিলো। এবার নাবিল সত্যি সত্যি বিরক্ত হয়ে রেগে গেলো। গালে হাত দিয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল,
-“একেবারে খাটের নিচে বেঁধে রাখবো। কতগুলো তেলাপোকা ছেড়ে দেবো তোমার গায়ে। আর আমার গাল ধরবেনা। গাল টিপে দিলে গাল শক্ত হয়ে যায়।”

রিশা হাসতে হাসতে পুষ্পর খাটে শুয়ে পড়লো। সাথে পুষ্পও হাসছে। যে নিজেই তেলাপোকা ভয় পায় বলে তার মা বোতলে তেলাপোকা সংরক্ষণ করে তাকে ভয় দেখিয়ে ভাত খাওয়ায়। আর সে কিনা রিশার গায়ে তেলাপোকা ছাড়বে। নাবিল রাগ করেই বেরিয়ে গেলো।

মেহমানরা বিকেল সময়েই চলে গেলো। সবাই রিশাকে থাকার জন্য জোর করলেও সে থাকলোনা। ক্লাস মিস দিতে চায়না। তাই বাবার সাথেই ফিরে গেলো।
সন্ধ্যার পর পুষ্প রাউফুনকে কল দেবে কি দেবেনা ভেবে দোটানায় পড়ে রইলো। শেষে সমস্ত জড়তা কাটিয়ে রাউফুনের নাম্বারে ডায়াল করলো। কল করে সে একচোট হতাশ হলো। রাউফুন কল ধরলোনা। পরপর তিনবার কল দেওয়ার পরও কল ধরলোনা। পুষ্প ফোন রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। সবার সাথেই রাতের খাবার খেয়ে ঘরে আসলো।

হুট করেই আজ বিনা বার্তায় বৃষ্টি শুরু হলো। একেবারে ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টির সাথে যেনো রাউফুনের বেশ মিল পেলো পুষ্প। সেও তো হুটহাট উদয় হয়।
ঘরে ফিরেই দেখলো মুঠোফোন বেজে উঠলো তীব্র শব্দে। পুষ্প স্ক্রিন অন করে দেখলো ‘ডাক্তার’ শব্দটি ভেসে উঠেছে।
ফোন রিসিভ করেই দু’জনে সালাম বিনিময় করলো।
রাউফুন বেশ বিষ্ময়কর গলায় প্রশ্ন করলো,
-“কি আশ্চর্য! কি আশ্চর্য! তুমি আমায় কল দিয়েছো? কোনো সমস্যা হয়েছে?”

পুষ্প কিয়দংশ সময় চুপ রইলো। এরপরই ঠোঁট গোল করে লম্বা শ্বাস ফেলে জবাব দিলো,
-“আপনি আজ আসেননি কেনো?”

পুষ্প ফোনের বিপরীতে থাকা রাউফুনের অভিব্যক্তি দেখতে পেলোনা, তবে এবারও কন্ঠে একরাশ বিষ্ময় নিয়েই যে রাউফুন জবাব দিলো সেটা বুঝতে বাকি রইলোনা।
-“তুমি কি আমায় মিস করছিলে নাকি?”

পুষ্প রিনরিনে কন্ঠে বলল,
-“সবাই আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিলো। আপনি আসেনই নি বা কেনো?”

রাউফুন বলল,
-” সেকি পুষ্প, তোমার কি আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে? আমাকে দেখতে না পেয়ে তুমি কান্নাকাটি করোনা। আমি এক্ষুনি এসে তোমাকে দেখা দিয়ে যাচ্ছি।”

পুষ্প হাসি ধরে রাখতে পারলোনা। শব্দ করেই হেসে উঠলো। আজ আর রাউফুনকে মানসিক রোগী মনে হলোনা। ভালোলাগলো, একটু একটু নয়! অনেকটাই ভালোলাগার অনুভূতি হলো।
রাউফুন মন খারাপের ভান করে বলল,
-“তুমি তো দেখছি না কেঁদে বসে বসে হাসছো। ভাবলাম দেখা দিয়ে যাই, কিন্তু নাহ্ এখন যাওয়া ঠিক হবেনা।”

পুষ্প হাসি চেপে বলল,
-“আপনি কি সবার সাথেই এমন রসিকতা করেন?”

-“কি আশ্চর্য! তোমার চোখে রসিকতাই পড়লো? আর কিছু পড়লোনা?”

পুষ্প কথা খুঁজে পেলোনা। তাই চুপ করেই রইলো। কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর রাউফুন অস্থির কন্ঠে বলল,
-“পুষ্প, একটা সাংঘাতিক কান্ড ঘটে গিয়েছে। তুমি কি শুনবে কি হয়েছে? না শুনতে চাইলেও মনযোগ দাও, আমি বলছি।”

পুষ্প কৌতুহল দমাতে না পেরে চরম উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,
-“বলুন কি হয়েছে? আমি শুনছি।”

পুষ্পের জবাবে প্রসন্ন কন্ঠে বলে উঠলো রাউফুন,
-“তোমার সাথে কথা বলতে বলতে আমি বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু অবস্থা। গাড়ির কথা আমার মনেই নেই। ভেবেছিলাম তুমি আমাকে দেখতে না পেয়ে কান্নাকাটি করছো। আমার কাজ হলো একবার ছুটে গিয়ে তোমাকে দেখা দিয়ে আসা। কিন্তু তুমি সব কিছুতে পানি ঢেলে দিলে আর উপরওয়ালা উপর থেকে বৃষ্টি ঢেলে আমাকে গোসল করিয়ে দিয়েছেন। এখন আমি কি করি বলোতো?”

পুষ্প ভাবলো সিরিয়াস কিছু। কিন্তু নাহ্! এই লোক সব সময় মজা করার মুড নিয়ে থাকে। মনে মনে বলল ‘একবার মাটিতে গড়াগড়ি খান’
কিন্তু মুখে বলল,
-“আপনি কি আমাদের বাসায় আসবেন? নাবিল বারবার আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।”

রাউফুন বলল,
-“নাবিলের নাম কেনো দিচ্ছো? আমি বুঝতে পারছি তুমি আমাকে দেখতে চাইছো। ব্যাপারনা। তাছাড়া আজ রাতে আমার জ্বর আসতে পারে। জ্বরের ঔষধ খুঁজে রেখো।”

পুষ্প রাগ দেখাতে গিয়েও নিঃশব্দে হাসলো। এতটা গুরুত্ব পাওয়া কি তার ভাগ্যে ছিলো? গুরুত্বহীন জীবন পার করতে করতে এই গুরুত্ব দেওয়া মানুষটিকে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে হলো। সে নিশ্চিত রাউফুন এখানেই আসছে। লাইন কে’টে ঘরের এলোমেলো জিনিসগুলো গুছিয়ে নিলো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো রাউফুনের গাড়ির। বৃষ্টি একেবারে কমে এসেছে। নিচ থেকে ধপাস করে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনলো পুষ্প। অন্ধকারে কিছু ঠাওর করা যাচ্ছেনা। তখনই বিদ্যুৎ চমকালো। ক্ষণিকের জন্য চারপাশ দিনের আলোর মতো প্রভা ছড়িয়ে অন্ধকারে তলিয়ে গেলো। এর মাঝেই পুষ্প দেখে নিলো নিচে রেহানা খালা পড়ে আছে। সে ছুটে বাইরে গেলো রেহানা খালাকে তুলতে।

এই বাড়ির মানুষগুলো বৃষ্টির পানিতে চা খেতে খুব পছন্দ করে। রেহানা খালা একটা বালতি রেখেছেন বাইরে। বৃষ্টি কমে আসায় বের হলেন। যাতে পানিতে ময়লা না পড়ে সেজন্য ঢাকনা দিতেই বেরিয়েছেন। কে জানতো বাইরে এসে পা পিছলে পড়বেন? তা ও আবার পড়ার পরপরই বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। তাই রাগে দুঃখে বলে উঠলেন,
-“খোদা ফেলেও দেয়, আবার লাইট মে’রে ও চায়।”

পু্ষ্প এসেই রেহানা খালাকে টেনে তুললো।
-“খালা আপনি পড়লেন কিভাবে?”

রেহানা খালা প্রচন্ড রেগে বললেন,
-“এখন আবার পইড়া যাইয়া দেখাই? এই বাড়িতে আর কাম করুম না। এদের কাছে আমার গুরুত্ব নাই। রাতবিরেতে পানির জন্য বাইরে পাঠায়।”

মুখ ঝামটা মে’রেই রেহানা খালা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভেতরে চলে গেলেন। অথচ তিনি নিজ থেকেই সবার পছন্দ অপছন্দ খেয়াল রেখে পানিতে ঢাকনা দিতে এসেছেন। সকালে সবার সাথে একদফা রাগ দেখাবেন। আবার কে কি খাবে? সবার পছন্দমতো রান্নায় বসে যাবেন। হাসলো পুষ্প। মানুষটি উপরে কত রাগ দেখায়, অথচ ভেতরে ভেতরে সে আস্ত হাওয়াই মিঠাই। যেন মুখে দিলেই গলে গিয়ে নাই হয়ে যায়।

রাউফুন ফিরেই দরজায় বেল বাজালো। পুষ্প এসে দরজা খুলেই অবাক হলো। হতবিহ্বল চাহনিতে তাকিয়ে দেখলো রাউফুনের পুরো শরীর শুকনো। তাহলে ভিজলো কখন? রাউফুন হালকা হেসে বলল,
-“আসার পথেই জামাকাপড় শুকিয়ে গিয়েছে।”

পুষ্পর তীক্ষ্ণ চোখজোড়া বলে দিচ্ছে সে কথাটি বিশ্বাস করেনি। রাউফুন একবার আগাগোড়া পুষ্পকে দেখে নিয়ে বলল,
-“সে কি পুষ্প? আমি তোমায় জ্বরের জন্য নাপা টেবলেট খুঁজে রাখতে বলেছি। তুমি সেজেগুজে কোন ঔষধ তৈরী রেখেছো? যদি আজ রাতে আমার অসুখ হয়, তবে ঔষধ ছাড়া নিস্তার নেই বলে দিলাম।”

রাউফুনের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো পুষ্প। একটা নতুন জামাইতো পরেছে। এখানে সাজগোছের কি দেখলো এই ডাক্তার? এই লোক মানুষকে লজ্জায় ফেলতে ওস্তাদ। সে আর দাঁড়ালোনা। রাউফুনকে ফ্রেশ হতে বলে খাবার গরম করতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসেই রাউফুন আগে জিজ্ঞেস করলো,
-“তুমি খেয়েছো?”
পুষ্প মাথা দুলিয়ে জানালো সে খেয়েছে।

রাউফুন বলল,
-“মনে হয় অল্প খেয়েছো। আমার টেনশনে খেতে পারোনি। পাশে বসে পড়ো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

এবার ও রাউফুনের কথা শুনে হেসে ফেললো পুষ্প। বলল,
-“আচ্ছা আমাকে বিয়ে করে আপনার কি লাভ হয়েছে?”

রাউফুন খাবারে হাত চালাতে চালাতে বলল,
-“গোপন সূত্রে জানা গেছে তুমি নাকি খুবই ভালো আয়রন করতে জানো। আমার গাদাগাদা শার্ট আয়রন করার জন্যই তোমাকে বিয়ে করেছি।”

পুষ্প ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
-“আয়রন এর পাশাপাশি পোড়াতেও জানি।”

রাউফুন বুকে হাত দিয়ে কৌতুক করে বলল,
-“বুকে বুঝি ছ্যাকা লাগলো, কি সাংঘাতিক! কি সাংঘাতিক।”

#চলবে…..

#কলা_পাতায়_বাঁধিব_ঘর
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৫

তিমিরে তলিয়ে যাওয়া গাঢ় রজনী। মিষ্টি ছন্দে তুমুল বৃষ্টিপাত, দমকা অনিল প্রবাহে গাছের ডালে ডালে সংঘর্ষ। নিস্তব্ধ, শান্ত, শুনশান প্রকৃতি। ঘুমাতে যাওয়ার সময় রাউফুন বাঁধা দিয়ে বলল,
-“শোয়ার আগে নাকে স্প্রে করে নাও। নয়তো তোমার হাঁচির প্রবল আ’ঘাতে আমি আজ উড়ে যাবো।”

পুষ্প তেতে উঠে বলল,
-“জেনেশুনেই তো বিয়ে করেছেন। এখন না চাইলেও সহ্য করতে হবে।”

তারপরই নিরব রইলো। নিরবতা কাটাতে রাউফুনই বলল,
-“জানো, আজ আমার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।”

পুষ্প হালকা ঘাড় কাত করে রাউফুনের দিকে ফিরে শুলো। অতঃপর চোখ ছোট করে বলল,
-“তো আপনি কি বলেছিলেন?”

রাউফুন বলল,
-“আমিতো বলে দিয়েছি আমি বিবাহিত, কিছুদিন পর বাচ্চা কোলে করে নিয়ে আপনাকে দেখাবো।”

পুষ্প কাঁথা মুড়ে ওপাশ ফিরে গেলো। জীবনে সে এমন লজ্জার মুখোমুখি হয়নি, বিয়ের পর যতবার হয়েছে।
পুষ্পকে ভড়কে দিতে পেরে মিটিমিটি হাসলো রাউফুন। সে মাথা ঘোরালোনা। পুষ্পর দিকে চেয়েই শুয়ে রইলো। মাঝরাতে একটু বেশি ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায় দুজনই গা ঘেষে ঘুমালো। রাউফুনের ঘুম পাতলা। কাছাকাছি আসতেই সে টের পেলো। ইচ্ছে করেই আরেকটু গা ঘেষে পুষ্পর গায়ে একহাত রেখে দিলো। সুযোগ বুঝে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলো পুষ্পর গালে।
সকালে ঘুম ভেঙেই পুষ্প দেখলো রাউফুন তার গায়ের উপর একহাত তুলে আরামসে ঘুমাচ্ছে। হাত সরাতে গেলেই রাউফুন চোখ বুঁজে রেখেই বলল,
-“রাতে তুমি যা লাফালাফি করোনা? ভাগ্যিস আমি একহাতে ধরে রেখেছিলাম, নয়তো সকালে নিজেকে খাটের নিচে দেখতে পেতে।”

ঘুম থেকে উঠেই বেআক্কেল হয়ে নির্বোধের মতো তাকিয়ে রইলো পুষ্প। রাতে ঘুমের ঘোরে লাফালাফি করার রেকর্ড নেই বলে সবার কাছ থেকে এক বস্তা সুনাম কুড়িয়ে নিয়েছিলো পুষ্প। কিন্তু রাউফুন দুই সেকেন্ডে সব সুনাম মিথ্যে করে দিলো। সে বোকার মতো প্রশ্ন করলো,
-“আমি কখন রাতে লাফালাফি করলাম?”

রাউফুন বলল,
-“ওহ্! তাহলে বোধহয় আমি স্বপ্নে তোমাকে লাফাতে দেখে বাস্তবে গুলিয়ে ফেলেছি।”

পুষ্প ঠোঁট গোল করে লম্বা শ্বাস ফেলে মনে মনে বলল “আল্লাহ মাবুদ জানে এই ড্রামাবাজ ডাক্তারের সাথে কিভাবে সংসার করবো।”
মুখে বেশ তাড়া দিয়ে বলল,
-“উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন। আপনি হসপিটালে যাবেননা?”

রাউফুন বিছানা ছাড়লোনা। শুয়ে থেকেই বলল,
-“আমি শুক্রবারে রোগী দেখিনা। সপ্তাহে এই দিনটি পরিবারের সাথে কাটাই। তাছাড়া হসপিটালে আমি ছাড়াও আর চারজন ই এন টি স্পেশালিষ্ট আছেন।”

পুষ্প আর ঘাটালোনা। ফ্রেশ হতে চলে গেলো। রাউফুন বিছানা ছাড়লোনা।

★★★

সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরী করে রোকসানা ছেলের নাম্বারে ডায়াল করলেন। প্রথমবার রিং হওয়াতেই রিসিভ হয়ে গেলো।
রাউফুন প্রথমেই সালাম দিলো। এটা তার অভ্যেস। কাউকে কল দিলে বা কেউ কল দিলে প্রথমে অন্যকিছু দিয়ে কথা শুরু করতে পারেনা। প্রথমেই সালাম দিয়ে শুরু করে।

রোকসানা সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,
-“কেমন আছিস বাবা? আর গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে এখনো বিছানা ছাড়িসনি, ফ্রেশ ও হসনি।”

ওপাশ থেকে রাউফুন বলল,
-“শুক্রবারটা একটু অনিয়ম করতে ইচ্ছে করে। ডাক্তার হলেই কি ধরা বাঁধা নিয়মে থাকতে হবে নাকি? ডাক্তাররা ও তো মানুষ।”

রোকসানা বললেন,
-“ছেলে বিয়ে করিয়েছি বউ ঘরে তুলে তার সাথে সময় কাটাবো বলে। বউ নিয়ে কবে ফিরছিস?”

নিঃশব্দে হাসলো রাউফুন। একবার ওয়াশরুমের বন্ধ দরজার দিকে দৃষ্টি ফেলে বলল,
-“আর কয়েকটা দিন। বিয়ের মাস পেরোনোর আগেই তোমার বউমা শশুর বাড়ি চলে যাবে।”

রোকসানা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। পাশ থেকে রিশা ফোন টেনে বলল,
-“ভাইয়া শুধু নিজের বউ নিয়ে আসলে হবেনা। আমাকে ও বিয়ে দিয়ে দাও। তোমার ছোট্ট শালাবাবুকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

রাউফুন বলল,
-“সে কি রিশা! তুই দেখছি বিয়ে বিয়ে করে পাগল হয়ে যাচ্ছিস। যাহ্ তোকে বিয়ে দিলাম। তোর জন্য পঞ্চাশ বছরের এক ইয়াং যুবক পছন্দ করে রেখেছি। খুবই স্টাইলিস।”

রিশা মেকি রাগ দেখিয়ে নাকি সুরে বলল,
-“ভাইয়া!”

রাউফুন কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো।
রিশা আবার বলল,
-” আচ্ছা, বলোতো আমার বিয়েতে তুমি কি দিবে আমাকে?”

রাউফুন বলল,
-“আমার কাছে পাঁচ টাকার নোট নেই বুঝলি? থাকলে রিস্ক নিয়ে পাঁচ টাকা দিয়ে আজই একটা দামি গিফট কিনে নিতাম তোর বিয়ের উপহার দেওয়ার জন্য।”

রিশা মাকে শুনিয়ে বলল,
-“মা আমি কিপ্টে দেখেছি। কিন্তু তোমার ছেলের মতো হাড়কিপটে দেখিনি।”

-“কি সাংঘাতিক রিশা। তোর কাছে পাঁচ টাকা কম মনে হচ্ছে? তুই দেখছি বিয়ের পর স্টাইলিস ইয়াং ম্যানকে ফকির বানিয়ে ছাড়বি।”

তখনই পুষ্প ফ্রেশ হয়ে বের হলো। তাকে কথা বলতে দিয়ে রাউফুন উঠে পড়লো। নাস্তা করে রাউফুন বলল,
-“রেডি হয়ে নাও। আজ একটু রিকশায় চড়ে প্রেম করবো।”

পুষ্প কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নিলো। রাউফুনের সঙ্গ পেতে এখন বেশ ভালোই লাগে। রাউফুন সবাইকে বলে দিয়েছে,
-“ফিরতে রাত হবে।”

কেউই কিছু বলেনি। দুজনে বেরিয়ে পড়লো। পুষ্প আজ একটা শাড়ি পরে বেরিয়েছে। রাউফুন একটা রিকশা নিলো। পাশাপাশি হুডতোলা রিকশায় বসে পুষ্পর একহাত শক্ত করে চেপে ধরলো। পুষ্প কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই সে বলল,
-“যদি রিকশার ঝাঁকুনিতে পড়ে-টড়ে যাও, তাহলে তো আমাকে আরেকটা বিয়ে করতে হবে। আর বিয়েতে মেলা খরচ। আমি রিস্ক নিতে পারবোনা।”

পুষ্প খোঁচা মেরে বলল,
-“তো করুন না বিয়ে। একেবারে ডাক্তারি করা ছুটিয়ে দেবো।”

রাউফুন মিটিমিটি মিটিমিটি হেসে বলল,
-“তুমি কি জেলাস?”

পুষ্প মুখ ফিরিয়ে নিলো। রিকশা থেকে নেমে একইভাবে পুষ্পর হাত ধরে বলল,
-“চলোতো, আজ একটু ফুচকা-টুচকা খেয়ে আসি।”

পুষ্প চোখ বড় বড় করে রাউফুনকে নকল করে বলল,
-“কি সাংঘাতিক! কি সাংঘাতিক! ডাক্তার আবার পথের ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাবে?”

রাউফুন রগড় করে বলল,
-“প্রেমের টানে ভীনদেশী মানুষ বাংলাদেশে চলে আসে। আর বউয়ের টানে আমি একটু ফুচকা খেলেই দোষ।”

পুষ্প হেসে ফেললো রাউফুনের কথা শুনে। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে রাউফুন বলল,
-“চলোতো তোমায় এক জায়গায় নিয়ে যাবো।
একজনকে শাড়ি গিফট করার আছে। কিন্তু আমি ভালোমন্দ ঠিক চিনে উঠিনা।”

পুষ্পর পছন্দমতো দুটো শাড়ি কিনে বেরিয়ে পড়লো তারা। বেরোতে বেরোতে সন্ধ্যার পর। পুষ্পকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আবারও দুজনে রাউফুনের গাড়ি নিয়ে বের হলো। লং ড্রাইভ এ যাবে বলে।
সফট মিউজিক, পাশে পছন্দের মানুষ। পৃথিবীর কিছু সুখের মুহূর্তের মধ্যে একটি মুহূর্ত। পুষ্প মুহূর্তটি উপভোগ করতে ব্যস্ত। তখনই রাউফুন বলল,
-“সম্পর্কে গুরুত্ব দিতে হয়। অবহেলায় ফেলে রাখলে বিপরীত দিক থেকেও একসময় ভালোবাসার বদলে অবহেলাটাই আসে। অবহেলা করলে একসময় সম্পর্কটি ফিকে হয়ে যায়। বিশেষ করে বিয়ের পরবর্তী সম্পর্কটিতে দূরত্ব বাড়াতে নেই।”

পুষ্প মনযোগ দিয়ে কথাগুলো শ্রবণ করলো। মাঝে আর কেউই কথা বললোনা। পুষ্পদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে শাড়ির প্যাকেট দুটো পুষ্পর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-“এগুলো তোমার জন্যই নিয়েছি।”

পুষ্প প্রথমেই বুঝে গিয়েছিলো শাড়ি গুলো তারজন্যই কেনা। হাতে শাড়ি নিয়ে বসতেই শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে নিজের দিকে টেনে কপালে গাড় করে অধর ছুঁয়ে দিলো। অতঃপর হালকা হেসে বলল,
-“এবার এসো।”

পুষ্পর ইচ্ছে করলোনা যেতে। মনে হচ্ছে একটু আগেই তো দুজনে বেরিয়েছিলো। মিনমিন স্বরে বলল,
-“আসবো মানে? আপনি আসবেননা বাসায়?”

রাউফুন গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে বলল,
-“ডাকলেই আমায় কাছে পাবে।”

পুষ্প আর সাহস পেলোনা কথা বলার। শব্দগুচ্ছ গলার কাছে এসেই দলাপাকিয়ে রইলো। বেরিয়ে পড়লো গাড়ি থেকে। কিছুদূর সামনে এসেই ফের পেছনে তাকালো। রাউফুন গাড়ি নিয়ে এখনো যায়নি। তার দিকেই তাকিয়ে আছে। পুষ্প আর পিছু ফিরলোনা।

মাঝখানে কেটে গেলো ছয়দিন। রাউফুনের কোনো খোঁজ নেই। না কল, না মেসেজ আর না একবার ও এ বাড়িতে আসা। প্রথম দুদিন খারাপ না লাগলেও পুষ্প টের পেলো ভেতরের বিশাল অনুভূতিগুলো। সেদিনের রাউফের বলা কথাটি মনে পড়লো। আসলেই তো তার দিক থেকে সম্পর্কে কোনো গুরুত্ব নেই। আজ সাহস করে ফোন হাতে নিলো।

“ডাক্তার আমার সাংঘাতিক অসুখ হয়েছে। আপনি একবার আসবেন?”
টাইপ করে সেন্ড করে দিলো রাউফুনের নাম্বারে।

★★★

সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতেই ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো রাউফুন। মেসেজের টুংটাং শব্দে মস্তিষ্ক সজাগ হলো। স্ক্রিনে চোখ রাখতেই পুষ্পর মেসেজের অর্ধেক দেখে বাকিটুকু দেখার জন্য ট্যাপ করলো।
কাঙ্খিত মেসেজ পেয়ে অধরকোনে খেলে গেলো সূক্ষ্ম হাসি।

#চলবে…….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ