Sunday, October 5, 2025







উড়ো পার্সেল পর্ব -৮

গল্প:#উড়ো পার্সেল(পর্ব-৮)
লেখা:#নাজিফা_তাবাসসুম
ইকবাল হোসেন এত সকালে তার বাসায় পুলিশ অফিসারদের দেখে বিস্মিত হলেন। তাদের সাথে কথা বলার পর সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল। তাদের বিল্ডিংয়ের কোন একটি ফ্ল্যাটে গতকাল রাতে চুরি হয়েছে।তাদের কেয়ারটেকার পুলিশকে কল করেছে এবং গত কয়েক মাস ধরে একটি কালো হুডি পড়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে এলাকাবাসী অনেকেই লক্ষ্য করেছে। সে বিষয়েই ইকবাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য, কিছু পুলিশ অফিসার তাদের বাসায় এসেছে। তিনি সোজাসাপ্টা উত্তর দিয়ে দিলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবেন না।

কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ অফিসাররা ইকবাল হোসেনের বাসা থেকে চলে গেলেন। নিশাত এবং ঈশিতার দুজনেরই বুঝতে বাকি থাকলো না সবাই জায়ানকেই চোর ভাবছে!

নিশাত নিজের ঘরে বসে আছে। ঈশিতা তার পাশে এসে দাঁড়ালো। সে হাসতে হাসতে বলল, আপু… জায়ান ভাইকে সবাই চোর ভাবছে কি অদ্ভুত!

নিশাত মৃদু কন্ঠে বলল, তা তো বটেই। যেই মানুষটা এতদিন যাবত এত দামি গিফট পাঠিয়ে যাচ্ছে। সে যদি সবার চোখে চোর হয়; তাহলে আর কি বলবো বল?

-‌ এখানে কিন্তু অনেকগুলো অদ্ভুত বিষয় আছে।
আপু, একটা জিনিস খেয়াল করে দেখো। জায়ান ভাই তোমাকে বলেছিল, সে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দুটো পর্যন্ত এখানে থাকে। এটা কিন্তু সবচেয়ে বড় একটা অদ্ভুত বিষয়।সে যদি তোমাকে দেখার উদ্দেশ্যে থাকত তাহলে তো সারাদিনই থাকতে পারতো। কেন সে রাত দুটো পর্যন্ত থাকবে? কেন সে রাত দুটোর পরে এখান থেকে চলে যাবে? সবকিছুর মধ্যে একটু রহস্য লুকিয়ে আছে….

নিশাত তার ছোট বোনের কথা তেমন একটা পাত্তা দিল না। এসব নিয়ে ভেবে তার এখন কাজ নেই। আজকে তার ভার্সিটি যেতে হবে। ল্যাব ওয়ার্ক, ক্লাস টেস্ট; সবমিলিয়ে ভীষণ ব্যস্ত একটি দিন আজ তার পার করতে হবে। “অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি” খুব একটা সহজ বিষয় নয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রিতে এখন তার সেকেন্ড ইয়ার চলছে। নিশাতের মনে হচ্ছে সে আর পড়াশোনার চাপ নিতে পারছে না। দিনকে দিন চাপ যেন বেড়ে চলেছে। নিশাত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এখন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। না হলে বড্ড দেরি হয়ে যাবে।

নিশাত ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হতে গিয়ে একটা অবাক করা বিষয় লক্ষ্য করল। তার বাবা এখনো অফিসে যায়নি। এটা কখনোই সম্ভব না ; যে তার বাবা সকল দশটা বেজে গেছে বাসায় আছে। নিশাত তার জন্মের পরে কখনো তার বাবাকে অপ্রয়োজনে ছুটি নিতে দেখেনি। আর আজ বাবা অফিসে না চেয়ে থাকবে এটা হতেই পারে না। বাবা অসুস্থ নাকি!!

ইকবাল হোসেন লক্ষ্য করলেন, নিশাত দরজার বাইরে থেকে তাকে দেখছে কিন্তু ঘরের ভেতর প্রবেশ করছে না।
তিনি নিশাতের এরকম অস্বাভাবিক আচরণে অবাক হয়ে নিশাতকে ঘরে ডাকলেন।

– ‘নিশাত তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ঘরে আসো কিছু বলবে’?
– ‘ইয়ে… মানে.. না বাবা কিছু না’।
– ‘তাহলে’?
– ‘বাবা… আজ তুমি অফিসে গেলে না কেন’?
নিশাতের প্রশ্ন শুনে ইকবাল হোসেন কিছু বললেন না। তিনি চুপ করে থাকলেন। তিনি কিভাবে উত্তর দিবেন বুঝতে পারছেন না। সবাইকে কি জানানো উচিত হবে? এত কিছু চিন্তা ভাবনার মাঝে তিনি শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন তিনি জানিয়েই দেবেন…

– ‘নিশাত আসলে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি’।
নিশাত তার বাবার কথা শুনে চমকে উঠলো। সে বলল, ‘কেন বাবা? কোন কি সমস্যা হয়েছে’?
– ‘তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। আমি ধার দেনা শোধ করার জন্যই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। বড় আপার ঋণের বোঝার মাথায় চেপে রাখতে পারছি না। ‌তিনি এবার বড্ড বাড়াবাড়ি শুরু করেছেন। আমি চাইনা, তিনি তোমাদের জীবনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করুক। সেজন্যই এই কঠিন সিদ্ধান্তটি নিয়েছি’।

নিশাতের পাশে তার মা রাহেলা বেগম এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি ভয়ানক অবাক হলেন। তিনি তার স্বামীর এই সিদ্ধান্তে খুশি হবেন… নাকি কষ্ট পাবেন সেটাই বুঝতে পারলেন না! তিনি কি এইভেবে খুশি হবেন… যে অবশেষে নিশাতের বড় ফুপু তাদের পরিবারের কাছ থেকে দূরে সরছে!! নাকি এইভাবে কষ্ট পাবেন যে এখন তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দ্রুত ভঙ্গুরের দিকে যাবে।

নিশাত বিকেলের দিকে ভার্সিটি থেকে ফিরে দেখল, ঈশিতা তৈরি হয়ে তার জন্য বসে অপেক্ষা করছে। তার ধারণা ছিল ঈশিতা তার সাথে যাবে না। কিন্তু ঈশিতার অতি আগ্রহ দেখে নিশাত বিরক্ত হলেও মুখে প্রকাশ করলো না। কারণ এখন যদি সে ভুলেও কিছু বলে ফেলে তাহলে তার বোনের হাজারটা কথা শুরু হয়ে যাবে। এমনিতে বাচাল মেয়েটা কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে আছে। থাকুক না!!

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরে নিশাত এবং ঈশিতা দুজনেই বাসা থেকে বের হল, জায়ানের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে। জায়ানতো তাদেরকে বাসার সামনে দাঁড়াতে বলেছিলো। সে গাড়ি নিয়ে আসবে।
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাদের মা বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করছিল, ‘তারা কোথায় যাচ্ছে’? ঈশিতা ঝড়ের বেগে প্রত্যেকবারই উত্তর দিয়েছে, ‘মা আমরা মার্কেটে যাচ্ছি। ফিরতে রাত হবে। তুমি টেনশন করো না। বাবাকে বুঝিয়ে বলবে.. ঠিক আছে’!!
এসব ভাবতে ভাবতে নিশাত লক্ষ্য করল তাদের সামনে জায়ান এসে দাঁড়িয়েছে। আজকে জায়ান তার সেই চিরায়ত সার্বক্ষণিক পরিধান করা পোশাকটি পরে আছে, সেটা আর কিছু নয় “কালো হডি”।

ঈশিতা এই প্রথমবারে জায়ানকে দেখে সানন্দে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, ‘জায়ান ভাই কেমন আছেন? কি অবস্থা আপনার? আপনি নাকি চুরি করে পালিয়েছেন!!! আজকে আমাদের বাসায় পুলিশ এসেছিল.. আপনাকে নিয়ে কত কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলো। জানেন ভাইয়া… আমি কিচ্ছু বলি নাই’।

জায়ান ঈশিতার এসব অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে বেশ অবাক হল, সেটা তার মুখভঙ্গি দেখেই নিশাত আঁচ করতে পারলো।
জায়ান হাসিমুখে এই ঈশিতার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, নিশাতের কাছে শুনেছিলাম তুমি বেশি কথা বল। তাই বলে যে এত বেশি কথা বলো.. সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল!! ‌

গাড়িতে উঠে নিশাত জায়ানকে জিজ্ঞেসা করল, ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি’?

– ‘আমার খুবই পছন্দের একটা রেস্টুরেন্টে তোমাকে নিয়ে যাব’।

ঈশিতা গাড়ির পিছনের সিটে বসে ছিল। সেখান থেকেই সে বলল, ‘আচ্ছা ভাইয়া… আপনি যে সব সময় কলো হডি পড়ে থাকেন, আপনার কি গরম লাগে না? এই গরমে তার কিভাবে পড়ে আছেন?আর ভাইয়া আপনি মাঝরাতে রাস্তা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করেন কেন? সবাই তো আপনাকে চোর ভাবে’!!

জায়ান বিরক্তি ভরা কন্ঠস্বর বলল, ‘গাড়িতে এসি আছে… গরম লাগবে কেন? আর দয়া করে একটু কম কথা বলো! ড্রাইভিংটা কিন্তু আমি করছি। যে কোন মুহুর্তে এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে’!!
ঈশিতা জায়ানের কথার কোনো তোয়াক্কা না করে বকবক করে যেতে লাগলো।

বেশ কিছুক্ষণ পর‌, জায়ান ব্রেক কষে গাড়ি একটি বড় রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড় করালো। নিশাত গাড়ি থেকে নেমে দেখল রেস্টুরেন্টটি। এই রেস্টুরেন্টের কথা অনেক শুনলেও এখানে তো তার আগে কখনোই আসা হয়নি।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে নিশাত বেশ বড় একটি ধাক্কা খেলো। সেখানে একটি দেয়াল ও ফাঁকা নেই…. প্রত্যেকটি দেয়ালে নিশাতের বড় বড় করে ছবি জুড়ে আছে। তার জন্মদিন উপলক্ষে সম্পূর্ণ জায়গাটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। দেয়ালের একটি জায়গায় নিশাতের চোখ পড়ল, সেখানে বড় বড় করে “হ্যাপি বার্থডে নিশাত” লেখা।
জায়ান নিশাতকে বলল, ‘বসো নিশাত’।
নিশাত বসলো, তার ঈশিতা এসে তো বসলো। নিশাত বলল, ‘জায়ান আপনি আমার এই ছবিগুলো কোথা থেকে কালেক্ট করেছেন’??

– ‘ধরে নাও কোন একভাবে করেছি। এসব বিষয়ে পরে কথা বলি? আগে কেক কাটা, ডিনার সবকিছু হয়ে যাক তারপর বলি’!!
জায়ানের কথা শেষ হওয়ার পর মুহূর্তেই একজন ওয়েটার তাদেরকে টেবিলের ওপর সুন্দর একটি কেক এনে রাখলো। নিশাত কেকের দিকে তাকিয়ে আরো একটি ধাক্কা খেলো। কেকের উপর তার আর জায়ানের প্রথম দেখার সময়কার হাত মিলানোর একটি ছবি। সে বিস্মিত হয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাদের তো এখন পর্যন্ত একসাথে কোন ছবি তোলা হয়নি; একটা সেলফি পর্যন্ত তুলিনি!! তাহলে…. এটা..
জায়ান হাসিমাখা মুখে উত্তর দিল, এটা কিভাবে সম্ভব তাই তো?এসব বাদ দাও। আগে কেকটা কাটো… প্লিজ!
জায়ান কেকের চারদিকে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিল। সে নিশাতের হাতে কেক কাটার চাকু ধরিয়ে দিয়ে বলল, এখানে বাইশটা মোমবাতি জ্বালিয়েছি। মোমবাতিগুলো এক নিঃশ্বাসে ফু দিতে হবে।ফু দেয়ার সময় তুমি যেটা মনে মনে উইশ করবে, সেটাই পূরণ হবে। তবে এক নিঃশ্বাসে নিভাতে হবে কিন্তু!!
ঈশিতা জায়ানের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বলল, তাই নাকি জায়ান ভাই? এটা তো জানতাম না। সত্যি নাকি?
জায়ান স্বাভাবিক গলায় বলল, সত্যি বললেও ভুল হবে। মিথ্যা বললেও ভুল হবে। সত্যি মিথ্যার মাঝেমাঝে কোন একটা হতে পারে। এটা আমার মা বলতো, সেজন্য এটা আমি এখনো মেনে আসছি। তবে তোমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলে করতে পারো।

নিশাত তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,’ আচ্ছা ঠিক আছে আমি একবারই ফু দেয়ার চেষ্টা করব’!!’ঠিক আছে’?
নিশাত এক ফুতে মোমবাতি নিভানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে গেল। জায়ান নিশাতকে বলল, “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ নিশাত”!!

কিছুমুহূর্ত পর ঈশিতা জায়ান প্রশ্ন করলো, ভাইয়া আপনি এখন কি করছেন?গতকালকে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম; আপনার ব্যাপারে আপু তো কিছুই বলতে পারল না।
ছোট বোনের প্রশ্ন শুনে নিশাত ও জায়ানের দিকে ফিরে তাকালো, কারন এই প্রশ্নটা তার মনেও ঘুরপাক খাচ্ছিল।
জায়ান উত্তর দিল, তেমন কিছু করি না বললেই চলে, সোজা বাংলা ভাষায় বেকার। বাবার হোটেলে খাই। আর টুকটাক লেখালেখি করি এই আর কি!!
নিশাত জায়ানকে বলল, ‘আপনি বই লেখেন’?
– ‘হ্যাঁ… ওই আরকি’!
ঈশিতা জায়ানের কথা শুনে বলল, ও আচ্ছা। আপনি কি ধরনের বই লেখেন? তবে আমার মনে হয় না আপনি খুব একটা ভালো বই লিখতে পারবেন!!আপনি নাকি খুবই ডিপ্রেশনে ছিলেন…. আপুর কাছে শুনলাম সুইসাইডের চেষ্টা সহ আরও কি কি সব ঘটনা ঘটিয়েছেন! আপনার মতো এ ধরনের মানুষ আবার কিভাবে বই লিখে?

জায়ান ঈশিতার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, তোমার কি এটাই মনে হচ্ছে?

– হ্যাঁ…অবশ্যই। ভাইয়া শোনেন, আপনি যদি এখনো ডিপ্রেশনে থাকেন বা ডিপ্রেশন সম্পর্কে কিছু জানতে চান তাহলে আপনি জামশেদ হায়দারের “ডিপ্রেশন” বইটা পড়বেন। ডিপ্রেশন থেকে বের হওয়ার অনেক পরামর্শ ওনি দিয়েছেন।
জায়ান হাসিমুখে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ও আচ্ছা তাই নাকি? জামশেদ হায়দারের বই বুঝি তোমার অনেক পছন্দ’?
– ‘হ্যাঁ অবশ্যই। উনার বই ছাড়া আমি কারোর বই পড়ি না। ওনার লাস্ট দুই বছরের যতগুলো থ্রিলার বের হয়েছে, আমি সবগুলা পড়েছি। বর্তমানে একটা ভিন্ন টাইপের বই বের হয়েছে, বইয়ের নাম ডিপ্রেশন। তাও আমি পড়েছি। আমার ভালো লাগে উনার পরামর্শগুলো!! আপনার বইটা লাগলে বলবেন। আমার কাছে এখন বইটা আছে’।
কথাগুলো শেষ করেই ঈশিতা তার ব্যাগ থেকে জামশেদ হায়দারের বইটা বের করে জায়ানের হাতে ধরিয়ে দিতে যাবে, এমন সময় জায়ান তার উদ্দেশ্যে বলল, বইয়ের শেষ পাতাটা বোধহয় ভালো করে পড়োনি? সেখানে কিছু লেখা আছে… একবার পড়ে দেখতে পারো!
ঈশিতা অবাক হয়ে বলল, ‘সেটা আবার দেখার কি আছে? সেখানে তো লেখক পরিচিতি আছে। জামশেদ হায়দারের বইয়ে তার ডিটেলস কখনোই দেয়া থাকে না। সামান্য দুটো লাইন লেখা থাকে। তিনি যে কে… আজ পর্যন্ত তার কোন হদিশ মেলেনি। তার একটা ছবিও মিডিয়াতে নেই’।
তারপরও ঈশিতা জায়ানের কথা রাখতেই মূলত বইয়ের শেষ পাতায় গেলো। সে বড় ধরনের একটা চমক খেলো। বইয়ের শেষ পাতায় জামশেদ হায়দারের লেখক পরিচিতি জায়গায় আর কারো নয় তার সামনে বসে থাকা জায়ান আহমেদের ছবি!!
আর সেখানে গুটিগুটি হরফে লেখা গত তিন বছর ধরে জায়ান আহমেদ তার ছদ্মনাম জামশেদ হায়দার দিয়ে বই লিখে আসছে। তার বাবা ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী।

সেখানে জায়ানের সম্পর্কে আর কিছু লেখা ছিলো তবে সে আর পড়তে পারলো না। ঈশিতার কথা আটকে গেল, সে চোখ বড় বড় করে বইয়ের লাইন গুলোর দিকে তাকাচ্ছে…. আর একবার তার দিকে তাকাচ্ছে। তার মুখে কোন কথা আসছে না।

নিশাত ও ঈশিতার এরকম আচরণে বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রচন্ড অবাক হয়ে গেল। তার ছোট বোনের পছন্দের লেখকই কি তাহলে জায়ান? বিষয়টা খুবই অদ্ভুত!!

ঈশিতা দ্রুত নিজেকে সামলে নিল। তারপর আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল, ‘জায়ান ভাই সরি জামশেদ স্যার আপনি কি আমাকে একটা অটোগ্রাফ দিতে পারবেন’? আমি তো জানি, ‘আপনি ছাড়া আর এই বই কেউ লিখতে পারবে না’…। আপনি অনেক ট্যালেন্ট ব্যাক্তি….স্যার আপনি ব্রিলিয়ান্ট!!
জায়ান ঈশিতার এই ধরনের আচরণে বেশ অবাক হয়ে গেল। এত অল্প সময়ে এই মেয়ে নিজেকে পাল্টে ফেলল!! এতক্ষণ সে তাকে পরামর্শ দিচ্ছিল জামশেদ হায়দারের বই পড়ার জন্য। জামশেদ হায়দার আর কেউ নয় জায়ান নিজেই… এটা জানার পর এখন ঈশিতা তার কাছে অটোগ্রাফ চাচ্ছে!!
জায়ান কিছু না বলে ঈশিতার বের করে দেওয়া তার নতুন বইয়ে একটা অটোগ্রাফ দিল এবং নিচে লিখে দিল, “তোমার পৃথিবী সুন্দর হোক”।

নিশাত অপলক দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মানুষটির ভরাট ব্যাক্তিত্ব নিশাতকে তার প্রতি মুগ্ধ হতে যেন বাধ্য করছে।জায়ানের প্রতি এখন যেন তার মুগ্ধতা বেড়েই চলেছে।

ইকবাল হোসেন রাতে বাজার করার সময় লক্ষ্য করলেন, তাকে কেউ একজন অনুসরণ করছে। কিন্তু তিনি যতবারই পিছে ফিরছেন ততবারই কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না। বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার সময় একবার পিছন ফিরে কালো হুডি পড়া এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। তিনি বেশ ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি দ্রুত বাসায় যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু লক্ষ্য করলেন, অন্ধকার ভেদ করে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তিটি যেন তার কাছে এগিয়ে আসছে…!!

চলবে,,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ