Sunday, October 5, 2025







উড়ো পার্সেল পর্ব -৬

গল্প :#উড়ো পার্সেল[#প্রথম_দেখা](পর্ব -৬)
লেখা:#নাজিফা_তাবাসসুম।
আধা ঘন্টার বেশি সময় হবে নিশাত ক্যাফেতে বসে আছে। সে বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে।বার বার হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে‌। আটটা পাঁচ বাজে এখন। এখনো তার দেখা নেই। নিশাত অস্থির হয়ে ক্যাফের এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ঈশিতা তাকে সাহায্য না করলে হয়তো আজ আর আসাই হতো না। আজ তার বাবা অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছে তার আসতে দুদিন লাগতে পারে। সেজন্যেই বের হওয়াটা সহজ হয়েছে। তবে ঈশিতা তাকে বের করার সময় মাকে অনেকটা ব্যস্ত রেখেছিল সেজন্য তার বের হওয়াটা সহজ হয়েছে। না হলে মায়ের হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন তাকে হতে হতো এত রাতে বাসার বাইরে যাওয়ার কারণে। কিন্তু; অদ্ভুত বিষয় নিশাত জায়ানকে বারবার বলেছিলো সকালবেলা দেখা করার কথা কিন্তু জায়ান বারবারই এই সময়টির কথাই বলছিল। তাই নিশাতের আর করার কিছু ছিল না। সেও রাজি হয়ে গিয়েছে।
সে একটা বিষয় লক্ষ্য করল,
এ ক্যাফের ডেকোরেশনটা যেন অনেকটা বদলে গেছে। আশেপাশে দেয়াল মেঝের সবকিছুই মেরুন রঙের এবং বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে ক্যাফেটি সাজানো হয়েছে। বিষয়টি বেশ অবাক করার মতো। এই “আলো-ছায়া” ক্যাফেতে নিশাতের কলেজ জীবনে অনেক আসা-যাওয়া হতো। কলেজের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ছুটির পর এই ক্যাফেতে এসে এক কাপ এক্সপ্রেসো কফি না খেলে তার চলতোই না।
তবে বেশ অনেকদিন হয়ে গেছে, এখানে আসা হয় না।নিশাতের স্মৃতি পাতায় এই ক্যাফেটি একটা বড় স্থান জুড়ে আছে।
নিশাত আবারও তার হাত ঘড়ির দিকে অস্থির হয়ে তাকালো, আটটা দশ বাজে। ক্যাফেতে সে ছাড়া আর কেউ নেই। সাধারণত এমনটা হওয়ার কথা না। এই ক্যাফে রাত দশটা এগারোটা পর্যন্ত জমজমাট থাকে। এখানের কফির জুড়ি মেলা ভার।তাই এই ছোট্ট ক্যাফেটাতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ কফি খেতে এবং আড্ডা দিতেই আসে।

শূন্য ক্যাফেতে একা বসে থেকে তার হালকা ভয় লাগছে। তবে সে ভয় ভাবকে লুকিয়ে রেখে শক্ত মুখে বসে আছে।
এমন সময় তার সামনের টেবিলের ওপর একজন ওয়েটার এসে এক কাপ এক্সপ্রেসো কফি এবং নীল একটি খাম রেখে চলে যাচ্ছিল। নিশাত তাকে থামালো।

– আমি তো কফির অর্ডার করিনি। আসলে একজনের আমার সাথে দেখা করার কথা। সে আসলেই আমি অর্ডার করবো।

– ম্যাডাম, স্যার এগুলো আপনার জন্য পাঠিয়েছে।
নিশাত বেশ অবাক হয়ে ওয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কোন স্যার’?
– ‘জায়ান আহমেদ স্যার’।

নিশাত বিস্মিত হয়ে গেল। তারপরও সে বিস্ময় চাপা রেখে বলার চেষ্টা করল,’আজকে ক্যাফেতে কাউকে দেখছি না কেন’?

– ম্যাডাম… জায়ান স্যার একদিনের জন্য ব্যাক্তিগত ভাবে ক্যাফে বুক করে রেখেছেন। তাই ক্যাফেতে বাইরের মানুষ আজকে আসতে পারবে না।

– ঠিক আছে.. তাহলে আপনি এখন যান।

নিশাতের সামনে থেকে ওয়েটারটি চলে গেল। নিশাত প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে তার সামনে থাকে নীল খামটি খুলল। খামটি থেকে একটু চিরকুট বেরিয়ে তার হাতে আসলো। নিশাত তার পাশে থাকা এক্সপ্রেসো কফিটি খেতে খেতে চিরকুটটি পড়তে শুরু করলো।

“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”

লাইন দুটো দেখে নিশাত মুচকি হাসলো। রবি ঠাকুরের লেখা এই দুটি লাইন নিশাতের বেশ পছন্দের। সে কিভাবে জানলো এই দুটি লাইন নিশাতের এত পছন্দের!! নিশাত বেশ কয়েকবার লাইন দুটি পড়তে থাকলো।

হঠাৎ করেই লোডশেডিং হলো, চারিদিকে আকস্মিক ভাবে অন্ধকার হয়ে গেল। নিশাত প্রচন্ড অবাক হলো। কারণ এই ক্যাফেতে জেনারেটর আছে। কারেন্ট চলে যাওয়ার সাথে সাথেই জেনারেটর চালু হয়ে যায়।

তবে আজ কি হল? বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল আলোর কোন দিশা না দেখে নিশাত অবাক হয়ে গেল। সে সুদূরে জানালার পানে চেয়ে দেখলো রাস্তার দৃশ্যপট।
আশেপাশের সব জায়গায় আলো জ্বলছে। তার মানে কারেন্ট যায়নি। নিশাত টেবিলে রাখা তার মোবাইলটি হাতে তুলে নিয়ে ফ্লাশ অন করে সামনের দিকে ধরল।

নিশাত বেশ চমকে উঠলো তার সামনে একটি মানুষের অস্তিত্ব রয়েছে। ফ্লাশের আলোতে একটি মুখ তার সামনে ভেসে উঠলো। প্রায় সাথে সাথেই কারেন্ট চলে আসলো। নিশাত লক্ষ্য করল, তার সামনে একজন যুবক বসে আছে। তার পরনে মেরুন কালারের শার্ট এবং সাদা প্যান্ট। শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা , চোখে পুরু ফ্রেমের চশমা,বেশ ফর্সা ফ্যাকাশে গায়ের রং, সে সুদর্শন সেটি তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

নিশাত চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালো। তার আর বুঝতে বাকি থাকলো না, এই সেই ‘জায়ান আহমেদ’।

যুবকটি নিশাতকে হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো। নিজের হাতটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ভরাট কন্ঠ বললো,
– হ্যালো… ‘আমি জায়ান’।

নিশাত বেশ কিছুক্ষণ কিছু বলল না। তারপর সে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিল। নিশাত লক্ষ্য করল, জায়ানের হাতে কিছু কাটার ক্ষত দাগ। সে বিষয়টি উপেক্ষা করে বলল, ‘আমি নিশাত’। শব্দ দুটি বলতে গিয়ে নিশাতের গলা কেঁপে গেল।

-নিশাত, তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
নিশাত বিব্রত বোধ করল। সে বলল, না… আচ্ছা। আমি কি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি?

জায়ান হাসিমুখে উত্তর দিল, হ্যাঁ! অবশ্যই তুমি অবশ্যই প্রশ্ন করতে পারো। আমার সম্পর্কে তুমি অনেক কিছুই জানো না। প্রশ্ন করার অধিকার তোমার আছে।

– আপনাকে আমার বেশ চেনা চেনা লাগছে। মনে হচ্ছে আমি আপনাকে আগেও কখনো দেখেছি। আমাদেরকে আগে দেখা হয়েছিল?
– না, আমাদের আগে কখনোই দেখা হয়নি।

– আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি আমাকে কিভাবে চিনেন? এই প্রশ্নটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এতদিন ধরে আমি এটা ভাবছি। আশা করি উত্তর দিবেন…

জায়ান আহমেদ এবারে একটু গম্ভীর হয়ে গেল। তার মুখ থেকে হাসি মুছে গেল।
সে স্বাভাবিকভাবে বলল, সেটা একটা লম্বা গল্প। আজকে কি শোনার সময় হবে তোমার? তুমি কিন্তু গতকালকে রাতে আমাকে বলেছিলে, তুমি এক ঘন্টার বেশি সময় দিতে পারবে না।
নিশাত ঘড়ির দিকে তাকালো। আটটা চল্লিশ বাজে।
সে বলল, সমস্যা নেই। আপনি বলুন। সময়টা কোন ফ্যাক্ট না। আমি এটা জানতে চাই।

– ঠিক আছে। তুমি যখন জানতে চাইছো তাহলে বলছি।

– বলুন নিশাত বেশ আগ্রহ সহকারে জায়ান আহমেদের দিকে তাকালো। কিন্তু তার প্রতি ক্ষনে ক্ষনে মনে হতে লাগলো আগেও সে জায়ানকে কোথাও দেখেছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটা মনে করতে পারছে না।

জায়ান নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে আমি প্রথম থেকেই শুরু করি।

সময়টা আজ থেকে তিন বছর আগের। তখন আমি অনেক হতাশাচ্ছন্ন ছিলাম। জীবনের এমন একটা সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলাম, যেখান থেকে আমি আমার জীবনটাকে আর সহ্য করতে পারছিলাম না।

মৃত্যুই তখন আমার একমাত্র প্রশান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মানুষ বাঁচার জন্য কত কি করে! তুমি কি জানো নিশাত আমি মরে যাওয়ার জন্য কত কিছু করেছি। এ জীবনটা এতটা কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়াবে আমার জন্য, আমি কখনো ভাবিনি।
আমি প্রথম সুইসাইডের চেষ্টা করেছিলাম, কিভাবে জানো? আমি ৬২ টা ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলাম। তারপরও আমি মারা যাইনি। হয়তোবা সৃষ্টিকর্তাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। দ্বিতীয়বার আমি হাত কেটে ফেলেছিলাম। হাতের শিরা উপশিরা বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যুবরণ করতে চেয়েছিলাম। শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝরে ছিল। তারপরও আমি মারা যাইনি।
নিশাত, তুমি হয়তো এসব শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছ। ভাবছো আমি তোমাকে এসব কথা বলছি কেন?

নিশাত তার এই ধরনের অদ্ভুত কথাবার্তা শুনে অবাক হলেও সেটি প্রকাশ না করে বললো, না আমি অবাক হচ্ছি না। তবে আপনার কথা শুনে বেশ ভয় পাচ্ছি।

জায়ান নিশাতের কথা শুনে হাসলো। তোমার ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। তোমাকে যেগুলো বলছি সেগুলো আমার অতীত। এখন তুমি আমাকে যেভাবে দেখছ সেটা আমার বর্তমান।

নিশাত বলল, আপনি কেন এত বার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিলেন? আপনার ভিতরে কি এমন কষ্ট ছিল?

জায়ান উত্তর দিল, আমি এটার উত্তর দেব। আগে তুমি আমার গল্পটা শোনো। তোমাকে যেটা বললাম, সেটা.. আমার দ্বিতীয়বারের সুইসাইডের চেষ্টা ছিল। তৃতীয়বার আমি সুইসাইডের এটেম নিয়েছিলাম। আমি আবারও বিষ খেয়েছিলাম। কিন্তু সেবার , আমি আর মারা যাইনি সেবারও আমি বেঁচে গিয়েছি। প্রত্যেকটা বার আমি মৃত্যুর চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষবার আমি বাঁচার চেষ্টা করেছি।

– মানে?
তোমার মনে আছে কিনা জানিনা। এক বছর আগে তোমার মায়ের একটা অপারেশনের জন্য, তুমি তোমার মাকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছিলে। তখন আমি তোমাকে প্রথমবার দেখেছিলাম।
তোমার চিন্তিত মুখ, প্রিয়জনের কষ্টে ব্যথিত চেহারা আমার ভেতরে এক ধরনের অদ্ভুত পরিবর্তন এনেছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমার মৃত্যু কখনোই আমার জীবনের সমাধান হতে পারে না।
প্রিয়জন হারানোর কষ্ট… অনেক বড় কষ্ট। আমি যদি আত্মহত্যা করতাম; তাহলে শুধু আমি একা মারা যেতাম না, আমার বাবাও আমার সাথে মারা যেতেন। তিনি আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে হয়তোবা তিনি বাঁচতে পারতেন না।
আমি শুধু নিজেকেই হত্যা করতে চাচ্ছিলাম না। আমি নিজের সাথে সাথে আমার বাবাকেও কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারতে চাচ্ছিলাম। সেইবারের ঘটনা থেকে আমি বেঁচে ফিরি… নতুনভাবে বাঁচতে শিখি।
এর পিছনে সবচেয়ে বড় হাত তোমার রয়েছে।
ঘটনা শুধু এতোটুকুই নয়। আরো অনেক রয়েছে।তবে আজকে এতোটুকুই নাহয় থাকুক। আস্তে আস্তে তুমি আমার সম্পর্কে সবই জানতে পারবে। “নিশাত তোমাকে অনেক ধন্যবাদ”!!

নিশাত জায়ানের কথাগুলো শুনে চুপ করে থাকলো। তারপর মৃদুস্বরে বললো, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! অসংখ্য ধন্যবাদ।

– কেন? আমি আবার কি করলাম?

– ধন্যবাদ… যে আপনার প্রাপ্য। আমি দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। সেদিন আপনি অ্যাম্বুলেন্স না পাঠালে; আমার মাকে হয়তোবা আমি বাঁচাতে পারতাম না। আপনি আমাকে যে সাহায্যটি করেছেন তার জন্য আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো।

জায়ান মৃদু হাসলো। আচ্ছা ঠিক আছে। আন্টি এখন কেমন আছেন?
– জ্বি…অনেক ভালো আছেন।

-“নিশাত তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে”।

নিশাত বেশ লজ্জা পেল। আস্তে করে বললো, ধন্যবাদ। আপনাকেও ভালো লাগছে অনেক।

– তাতো লাগতেই হবে… তোমার ভালোর ফেভারিট কালারের শার্ট পড়ে এসেছি। মেরুন তো তোমার ফেভারিট কালার।

– আপনি কিভাবে জানলেন? মেরুন আমার ফেভারিট কালার? এজন্যই কি আপনি ক্যাফেটার ডেকোরেশন মেরুন রঙের করেছেন?

– হ্যাঁ।
নিশাত বিস্ময় ভরা মুখে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশাতকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জায়ান বললো, চলো, নিশাত কফি অর্ডার করি। তোমার কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
নিশাত কোন উত্তর দিল না।

জায়ান ওয়েটারকে ডেকে বলল, একটা এক্সপ্রেসো কফি আর একটা ব্ল্যাক কফি উইথআউট সুপার।

– আমি এক্সপ্রেসো কফি পছন্দ করি আপনি কিভাবে জানলেন?

– এটা যেন বেশ কঠিন কিছু ছিল না। ধরে নাও এভাবেই জেনে গেছি।

নিশাত জায়ানকে জিজ্ঞেস করল, আপনার বাবা কি করেন?
– ওনার বিজনেস আছে। ইমতিয়াজ কনস্ট্রাকশন হাউজের।

– ওয়েট.. ওয়েট, আপনার বাবার নাম কি ইমতিয়াজ আহমেদ?
হ্যাঁ।
– আপনি ওনার ছেলে জায়ান আহমেদ!!

– ইয়ে.. হ্যাঁ।

নিশাত এবারে বিস্ময়ের চূড়ান্তে পৌঁছে গেল। সে বিশ্বাস করতে পারছে না । তার সামনের মানুষটিকে হঠাৎ করেই সে চিনতে পেরে গেল। সে জায়ান কে চিনতে পেরেছে!!

জায়ান ও মনে হয় বিষয়টি বুঝতে পারল। সেটার দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ। তুমি যেটা ভাবছো সেটাই।

নিশাত বলল, এটা কিভাবে সম্ভব? আমি যেটা ভাবছি সেটাই যদি হয়! তবেতো আপনি মৃত!! আপনি বেঁচে আছেন কি করে? আট বছর আগে তো ইমতিয়াজ আহমেদের ছেলে মারা গিয়েছিল।

– সারা পৃথিবীর সামনে আমি মৃত। কিন্তু আমি বেঁচে আছি।

৮ বছর আগেই তো ইমতিয়াজ আহমেদের একমাত্র ছেলে এবং স্ত্রী অগ্নি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল। আপনার ছবিও তখন আমি টিভিতে নিউজে দেখেছিলাম। আট বছর আগের আপনার সাথে এখনকার আপনার মিল পাওয়াটা বেশ কষ্টকর। তারপর ও আমার কাছে চেনা চেনা লাগছিল।

– সারা পৃথিবীর কাছে আমি মৃত হলেও আমি বেঁচে আছি। আমি এভাবেই বেঁচে থাকতে চাই। আমি মানুষকে জানাতে চাই না যে আমি বেঁচে আছি।

– কিন্তু কেন?

জায়ান মোটামুটি প্রস্তুত হয়ে এসেছিলো। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার আগেই নিশাতের মোবাইলটি বেজে উঠলো। নিশাতার তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এক মিনিট মা ফোন করেছে’।

নিশাত জানে ফোনটি করেছে মূলত ঈশিতা। সে কল রিসিভ করল। কলের অপর প্রান্ত থেকে ঈশিতা বলল ,আপু তাড়াতাড়ি আসো।
বাবা বাসায় চলে আসছে। বাবার ট্রেনিং ক্যান্সেল হয়ে গেছে। মা কিন্তু ঘুমিয়ে গেছে। তবে বাবা আসার আগেই চলে আসো।
নিশাত অতি ব্যস্ত হয়ে তার ঘড়ি থেকে তাকিয়ে দেখল রাত দশটা বেজে গেছে। এত দ্রুত সময়টা কেটে যাওয়াতে নিশাত ভীষণ অবাক হয়ে গেল। সে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, আজকে আর থাকতে পারছি না। আমাকে এখন যেতে হবে। আপনার সাথে কথা বলে, অনেক ভালো লাগলো।

জায়ান হেসে বলল, “তোমার সাথে কাটানো দুটি ঘন্টা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দুটি ঘন্টা হয়ে থাকবে। চলো তোমাকে এগিয়ে দেই”।

– আপনার বাসা তো এখানে না। আপনি বলেছিলেন আপনি ঢাকার বাইরে গাজীপুরে থাকেন। তাহলে এখন আর আপনার দেরি হয়ে যাবে আপনি চলে যান।

নিশাত তাড়াহুড়া হ্যান্ড ব্যাগটি নিয়ে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে পড়ল। জায়ান নিশাতের নিষেধ অগ্রাহ্য করে তার পিছু পিছু আসতে থাকলো। রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে দুজনের মধ্যে বেশ কথাবার্তা হল।

নিশাত তাকে বলল, আপনি এখন চলে যান আমি বাসার কাছে চলে এসেছি।

এখানে তো আমারও বাসা, ওই যে পাশের বিল্ডিংটাতে আমি থাকি। আমি আমার বাসায় যাচ্ছি।
– বলেন কি?আপনি এখানে থাকেন এর মানে কি?

– আসলে প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দুটো পর্যন্ত আমি এই বাসাটাতে থাকি। রাত দুটোর সময় বাসা থেকে চলে যাই। সেদিন তো তোমাদের সেই কেয়ারটেকার আমাকে চোর বানিয়ে দিয়েছিল ভুলে গিয়েছিলে!!

– কিহহ্.. আপনি এখানে থাকেন!!

– হ্যাঁ…. বলে জায়ান পিছন ঘুরে পাশের বিল্ডিংটির দিকে যেতে লাগলো, একবার পিছন ঘুরে নিশাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

নিশাত হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। তার মানে জায়ান এতদিন ধরে তার আশেপাশেই থাকতো। সে সেটা এতদিন পর টের পেয়েছে। আর কি কি করেছে এই ছেলে!!সেটাই তো এখন সে বুঝতে পারছে না।

এমন সময় নিশাত অন্ধকারে দেখতে পেল, একটি পরিচিত মুখ তার এগিয়ে আসছে। বুঝতে পারলো এটিই তার বাবা। নিশাত তার বাবাকে দেখে অন্ধকারের মধ্যে সিঁড়ি ভেঙে বাসার দিকে দৌড়ে উঠতে লাগলো।

ইকবাল হোসেন নিশাতকে দেখতে পাননি। তিনি বেশ অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, কেউ তাকে দেখে ভয় পেয়ে দৌড়ে পালালো। তাকে দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে? তিনি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক!! অদ্ভুত ব্যাপার… বলেই ইকবাল হোসেন বাসার দিকে যেতে থাকলেন।

চলবে,,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ