Monday, October 6, 2025







একগুচ্ছ রক্তজবা পর্ব-২+৩

#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ২+৩

“আমার খাওয়া শেষ হলে আপনি নিচে খেতে যাবেন,আপনার সাথে এক ঘরে থাকছি বলে যে এক টেবিলে বসে খাব সেটা হবে না।আমি আসলে তারপর নিচে খেতে যাবেন এর আগে নয়।”

সাবিহা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল তখন সাদাফ তার পিছনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলে।সাবিহা গাড় ঘুরিয়ে ফিরতে ফিরতে সাদাফ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আর সাবিহা সাদাফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

সকাল ৯.১০ মিনিট খাওয়ার টেবিলে সবাই বসে আছে শুধু সাদাফ আর সাবিহা বাদে।সাদাফের মা মিসেস রোজা কিচেন থেকে টেবিলে খাবার রাখছে আর আড়চোখে বারবার সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছে সাদাফ আর সাবিহা কেউ আসে কী না!

“সাফা যা ত একটু তোর ভাবি আর ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়।”

“যাচ্ছি মা।”

“কাউকে কোথাও যেতে হবে না,আমি এসে গেছি।”

সাদাফ চেয়ারে বসতে বসতে কথাটা বলে উঠে।

“সাবিহা কই?”

“রুমে আছে।”

“রুমে আছে মানে কী?সাবিহা কী খাবে না?”

“মা দেখো এত কথা বলতে ভালো লাগছে না।আমাকে খাবার দিলে দাও নয়ত আমি উঠলাম।”

“আরে এত রাগ কেন করছিস?মেয়েটা এই বাড়িতে নতুন আর সকালে উঠে একা হাতে রান্না করেছে।আমি বারন করেছি তারপরও এক হাতে সবকিছু করেছে।এখন মেয়েটাকে রেখে কীভাবে খাই বল ত!”

“মা তুমি ভাইয়াকে খাবার দাও আমি বউমনিকে ডেকে আনছি।”

“সুজন তোর খাওয়া তুই খা,কাউকে যেতে হবে না।অর খিদে পেলে অয় নিচে এসে নিজেই খেয়ে নিবে।”

“সরি ভাইয়া আমি তোর কথাটা রাখতে পারলাম না আমি গেলাম বউমনিকে ডাকতে।”

সুজন দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলে চলে যায় সাবিহাকে ডাকতে।আর সাদাফ রেগে তাকিয়ে আছে সুজনের যাওয়ার দিকে।

“আম্মু দেখলে তোমার ছোট ছেলের কান্ড,কীভাবে আমার মুখে মুখে কথা বলে চলে গেলো!”

“একদম ঠিক কাজ করেছে,এবার বেশি কথা না বলে চুপ করে থাক।”

সাদাফ আর কিছু না বলে চুপ করে যায়।আর এতক্ষন সবটাই সাদাফের বাবা আনোয়ার হোসেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছিলেন।সাদাফের এমন আচরনে উনার বুঝতে বাকি নেই যে উনার ছেলে সাবিহাকে মেনে নিতে পারে নি।তাই উনি অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে সাদাফের উপর।আনোয়ার হোসেনের এভাবে তাকানো দেখে সাদাফের ছোট বোন সাফা সাদাফকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে।

“ভাইয়া তুমি কী কিছু করেছো?”

সাফার কথাশুনে সাদাফ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।সেটা দেখে সাফা একইভাবে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে।

“আব্বু যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে মনে হচ্ছে তোমার উপর খুব রেগে আছে।যেকোন সময় তোমাকে ডিটারজেন্ট ছাড়া ধুয়ে দিতে পারে।তাই জিজ্ঞেস করছিলাম আর কী!”

সাফার কথাশুনে সাদাফ সাফার উপর থেকে চোখ সরিয়ে তার বাবার দিকে তাকায়।সাদাফ তাকানোর সাথে সাথেই তার বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে।

“সামনে থেকে একসাথে দুজন খেতে আসবে,দুজনকে একসাথেই খাওয়ার টেবিলে আমি দেখতে চাই।”

সাদাফ শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়,সাদাফ তার বাবাকে ভীষণ ভয় পায় তাই উনার মুখের উপর কিছু বলে নি।

“আম্মু বউমনিকে নিয়ে আমি এসে পড়েছি।”

সাবিহার হাত টেনে আনতে আনতে সুজন কথাটা বলে উঠে,সাবিহা মাথা নিচু করে রেখেছে।সুজনের গলার আওয়াজে সবাই সেদিকে তাকায় আর সাদাফ ভ্রু কুঁচকে তাকায় দুজনের হাতের দিকে।

“কী নির্লজ্জ মেয়েরে বাবা,লজ্জা সরম বলতে কী কিচ্ছু নাই নাকি এভাবে দেওরের হাত ধরে রেখেছে।যা করার করুক তাতে আমার কী!আমার এসব না দেখাই ভালো।”

সাদাফ মনে মনে বিরক্তি নিয়ে কথাটা বলে চোখ ফিরিয়ে নেয়।আর মিসেস রোজা সাবিহার কাছে গিয়ে সাবিহার গালে হাত রেখে বলে উঠে।

“সকাল সকাল নিজের হাতে রান্না করলে সবার জন্য আর এখন নিজের হাতে সার্ভ করে দাও সবাইকে।”

সাবিহা উনার কথায় মুচকি হেঁসে মাথায় উর্নাটা ভালো করে টেনে খাবার বেড়ে দেয়ার জন্য এগিয়ে যায়।একে একে সবাইকে খাবার দেয়া শেষ শুধু সাদাফের প্লেট খালি।সাবিহা বুঝতে পারছে না কী করবে!খাবার দিবে নাকি দিবে না!সে খাবার দিলে যদি আবার রাগ করে এসব ভেবে চলেছে সাবিহা।সাবিহার ভাবনার মাঝেই সাদাফ রেগে ধমকে বলে উঠে,,,

“এখানে কী আমি সবার খাওয়া দেখার জন্য বসে আছি নাকি আমাকেও কেউ খেতে দিবে?”

সাদাফের ধমকে সাবিহা কেঁপে উঠে আর কাঁপা কাঁপা হাতে সাদাফের প্লেটে খাবার দেয়।সাদাফ রেগে তাকিয়ে আছে সাবিহার দিকে কিন্তু সাবিহা সাদাফের দিকে তাকাচ্ছে না।সাবিহা খাবার দিয়ে যেই ঘুরতে যাবে ওমনি সাদাফের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসে।আর সাবিহার উদ্দেশ্যে বলে উঠে।

“হাত ধোঁয়ার পানি দাও।”

সাবিহা চমকে তাকায় সাদাফের দিকে,সাদাফ সেটা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।

“হাত ধোঁয়ার পানি দিতে বলেছি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে বলি নি।”

সাবিহা কিছু না বলে হাত ধোঁয়ার পানি এগিয়ে দেয় সাদাফের দিকে আর মনে মনে বলে উঠে।

“এ কেমন লোক রে বাবা গতরাতে তুই করে কথা বলল,আর সকালে রুমে আপনি করে বলল,আর এখন তুমি করে বলছে।লোকটা কী পাগল না মাথার তার ছিঁড়া!”

নিজ মনে কথাটা বলে সাবিহা আবার সাদাফের সামনে থেকে সরে আসতে নিলে সাদাফ আবারও বলে উঠে,,,

“নুনটা পাস করো এদিকে।”

সাবিহা কিছু না বলে মাথার কাপড়টা আরেকটু টেনে নেয় আর বিরক্তি নিয়ে নুনটা এগিয়ে দেয় সাদাফের দিকে।
নুন দেয়ার পর সাদাফ আবারও বলে উঠে,,,

“ডিম,,,

আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই সাবিহা রেগে সাদাফের মুখে আস্ত ডিম সিদ্ধ দিয়ে দেয়।সেটা দেখে সাদাফের চোখ বড়বড় হয়ে যায়।অন্যদিকে সাবিহার কান্ডে সাদাফের বাবা,মা,সুজন আর সাফা হেঁসে ফেলে।

” কথায় আছে অতি বাড় বেড়ো না ঝড়ে পড়ে যাবে।একদম ঠিক হয়েছে আজ বউমনিকে পেয়ে হুকুমের উপর হুকুম দিয়ে চলেছো।এখন একদম ঠিক কাজ হয়েছে।”

কথাটা বলেই সুজন আবারও হেঁসে ফেলে,এবার আনোয়ার হোসেন হাসি বন্ধ করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে।

“সাবিহা তুমি খেতে বসে পড়ো,আর কিছু করতে হবে না।আর এই যে তুমি(মিসেস রোজা) সাবিহাকে আর রান্নাঘরে ডুকতে দিবে না।সাফা যেমন এই বাড়ির মেয়ে তেমনি সাবিহাও।আর সাবিহা পরসু থেকে আবার কলেজে যাবে,সামনেই সাবিহার ফাইনাল পরীক্ষা।সাবিহার কাজ শুধু পড়াশোনা করা।ওকে যেন আমি আর কোন কাজ করতে না দেখি।”

কথাটা বলেই যেই না আনোয়ার হোসেন খাবার মুখে দিবে তখনই সাদাফ মুখের ডিমটা শেষ করে তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠে।

“কথা বলতে পারে না তার আবার কীসের পড়াশোনা?আর পড়াশোনা করেই বা কী মহান কাজ করবে?আর কেই বা কাজ দিবে এই বোবা মেয়েকে?তার চেয়ে ভালো এই মেয়েকে দিয়ে ঘর সংসারের কাজ করাও।”

সাদাফের কথাগুলো শুনে সাবিহা খুব কষ্ট পায়।গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে সাবিহার,আর সাদাফের বাবা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর রেগে চিৎকার করে বলে উঠে।

“মুখ সামলে কথা বলবে সাদাফ,আর একবার সাবিহাকে বোবা বললে তোমার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব আমি।”

আনোয়ার হোসেন এর চিৎকারে সবাই ভয়ে কেঁপে উঠে।সাদাফও উনার এমন কথায় ভয়+কষ্ট পায়।একটা বাইরের মেয়ের জন্য তার বাবা তাকে এভাবে বলবে সে ভাবতেও পারে নি।আর সাবিহা নিজের চোখের পানি মুছে সাদাফের সামনে দাঁড়িয়ে ইশারায় বলে উঠে।

“আমি বোবা হতে পারি কিন্তু আপনার মত নিচু মনের মানুষ নই।আমি কথা বলতে পারি না বলে কী আপনার আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না!আল্লাহ তায়া’লা আমার থেকে কথা বলার শক্তি কেড়ে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু আমার হাত,পা,চোখ,কান সব ঠিক আছে।আর আমি পড়াশোনা করে কী করি না করি সেটা সময়ই বলে দিবে,আপনার সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”

কথাগুলো ইশারায় বলে সাবিহা চোখে পানি নিয়ে সে স্থান ত্যাগ করে।আর সাবিহার বলা কথাগুলো সাদাফ বুঝতে না পেরে তার বাবা,মা,ভাই আর বোনের দিকে তাকায়।তখন সাদাফের বাবা দাঁতে দাঁত চেপে সাবিহার বলা কথাগুলো সাদাফকে বলে তিনিও চলে যান।আর সাদাফ কথাগুলো শুনে তার সামনে থাকা প্লেটটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়।সাদাফের বলা কথাগুলো শুনে সবাই সাদাফের দিকে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যায়।

#চলবে,,,
#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৩

“আমি কথা বলতে পারি না ঠিকই তাই বলে এভাবে বলবে উনি!কথা বলতে পারি না কানে ত ঠিকই শুনতে পাই।উনার এমন কথা শুনলে যে আমার কষ্ট হয় সেটা কী উনি একজন মানুষ হয়েও বুঝে না!
উনার বলা প্রতিটা কথা আমার কানে এখনও বাজছে।আমি কথা বলতে পারি না তার জন্য কম কথা শুনতে হয় নি গত ১০ বছরে!ক্লাসমেট,মামি,মামাত বোন,চাচি ওদের থেকে কম কটু কথা শুনি নি আমি!কিন্তু সেসবে আমি ততটাও কষ্ট পাই নি যতটা না উনার বলা কথায় পেয়েছি।সাদাফ উনি আমার স্বামী,সব থেকে কাছের মানুষ, যার সাথে সারাজীবন কাটাতে হবে আমাকে।আর সেই উনি যদি এভাবে বলে তবে আমি সারাজীবন কীভাবে কাটাব তার সাথে!
আল্লাহ কেন তুমি আমার থেকে কথা বলার ক্ষমতা কেড়ে নিলা?আমাকে ত সবই দিয়েছো তুমি,তবে কেন কথা বলার ক্ষমতাই কেড়ে নিলা।আজ যদি আমি কথা বলতে পারতাম তবে আর পাঁচটা মেয়ের মত আমিও স্বামীর সাথে সুখে সংসার করতাম।”

কথাগুলো ভেবেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি আমি,বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার।চোখের পানি কিছুতেই বাঁধ মানছে না।এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কাঁদার পর হেঁচকি উঠে যায় তার সাথে শ্বাস নিতেও বেশ সমস্যা শুরু হয়।আমি জোড়েজোড়ে শ্বাস ফেলে নিজের লাগেজের কাছে যাই।লাগেজটা খুলব তখন কোথা থেকে সাদাফ এসে লাগেজটা ছিনিয়ে নেয়।আমি লাগেজটা নিতে গেলে উনি লাগেজটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়।আমি সেদিকে যেতে চাইলে উনি আমার সামনে এসে রেগে চিৎকার করে বলে উঠে।

“তোমার সাহস হল কী করে আমাকে নিচু মনের মানুষ বলার।এই সাদাফ তাহসিনকে নিচু মনের মানুষ বলেছো তুমি।তোমাকে ত,,,

কথাটা বলেই আমাকে উনার দিকে ফিরিয়ে যেই না থাপ্পড় মারতে যাবে ওমনি উনি আমাকে এভাবে জোড়েজোড়ে শ্বাস নিতে দেখে উনার হাত দুটো আমার গালে ধরে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে।

“কী হয়েছে তোমার?এভাবে শ্বাস কেন নিচ্ছো?”

আমি এক পলক উনার দিকে তাকাই,আমি তাকালে উনি আবারও বলে উঠে।

“কী সমস্যা হচ্ছে বলো আমাকে?শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে?”

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝাই আর জোড়ে জোড়ো শ্বাস নিয়ে হাত দিয়ে লাগেজের দিকে ইশারা করি।উনি আমার হাতের দিকে একবার তাকিয়ে আবারও আমার দিকে তাকায় আর বলে উঠে,,,

“লাগেজ?”

আমি আবারও মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝাই,আর হাত দিয়ে ইশারায় বুঝাই ইনহেলারের কথাটা।উনি আমার ইশারা বুঝতে পেরে আমাকে ছেড়ে দৌড়ে লাগেজের কাছে যায়।আর লাগেজটা খুলে ইনহেলার খুঁজতে থাকে,একটু পরই উনার হাতে ইনহেলারটা এসে যায়।আর ছুটে আমার কাছে এসে হাঁটু গেড়ে ইনহেলারটা দেয়।আমি ততক্ষণে ফ্লোরে বসে পড়েছি,আমিও ইনহেলারটা নিয়ে মুখে পুড়ে নেই আর ইনহেলারে চাপ দেই।আর উনি আমার পিঠে হাত বুলাতে থাকে,বেশ কিছুক্ষন পর আমি স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে শুরু করি।সেটা দেখে উনি এবার বলে উঠে।

“Are you ok?”

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝাই,আর উনি কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায় আর আমাকেও নিচ থেকে উঠায়।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি,এই মানুষটা ততটাও খারাপ না।আমি উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি আর ইশারায় কিছু বলার আগেই উনি মুখে কিছুটা বিরক্ত ভাব ফুটিয়ে তুলে বলে উঠে।

“যত্তসব উটকো ঝামেলা আমার কপালে এসেই পড়ে।”

তারপর উনি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,আর আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসেই চলেছি।কিছুক্ষণ আগেও যার কথায় কাঁদছিলাম আর এখন তার কারনেই হাসছি।খুব অদ্ভুত তাই না!

______________________________________

বিকালে সাদাফ ড্রয়িং রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল।তখন তার সামনে Cappuccino Coffee ধরে কেউ।সাদাফ কফির দিকে তাকিয়ে দেখে তাতে Tnx লেখা,সাদাফ ভ্রু কুঁচকে হাতটা অনুসরন করে হাতের মালিকের দিকে তাকায়।সাদাফ তাকিয়ে দেখে সাবিহা কফি হাতে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে।সাদাফ এবার ল্যাপটপটা বন্ধ করে গম্ভীর কণ্ঠে সাবিহাকে বলে উঠে,,,

“এসবের মানে কী?Tnx কীসের জন্য?”

আমি এবার সাদাফকে চোখের ইশারায় বুঝাই কফিটা নিতে।উনিও কিছু না বলে কফিটা হাতে নেয়,আর আমি মুচকি হেঁসে হাতে ইশারায় বলি।

“সকালের সাহায্যর জন্য ধন্যবাদ।”

সাদাফ আমার কথা বুঝতে না পেরে এবার ধমকে উঠে,,,

“ঠিক করে বুঝিয়ে বলো।”

উনার ধমকে আমি কেঁপে উঠি,তারপরও নিজেকে সামলে ইশারায় ইনহেলারের কথাটা বুঝাই।তখন উনি সেটা বুঝতে পেরে একই ভাবে ধমকে বলে উঠে,,,

“তোমার ধন্যবাদ দিয়ে আমি কী করব?যাও এখান থেকে।”

এবার উনার ধমকে আমার খারাপ লাগে,তাই আবারও হাতের ইশারায় বলি।

“আপনি সবসময় এমন ভাবে কথা কেন বলেন আমার সাথে?একটু ভালো করেও ত কথা বলা যায়।”

উনি এবারও আমার কথা বুঝতে পারেন না সেটা উনার ভ্রু কুঁচকানোতেই বুঝে গেছি,তাই আমি উনাকে একটা ভেংচি কেটে সেখান থেকে চলে আসি।
অন্যদিকে সাদাফ সাবিহার এমন ভেংচি কাটাতে পিছন থেকে সাবিহাকে রেগে ডেকে উঠে।কিন্তু সাবিহা সেসবে পাত্তা না দিয়ে চলে যায়।সাদাফ এবার তার হাতে থাকা কফির দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠে,,,

“ডং করে ভেংচি কাটা হচ্ছে আবার কফি নিয়ে এসে ধন্যবাদও জানানো হচ্ছে।ধন্যবাদ কী খাব নাকি মাথায় ডালব!”

“কফিতেই ত ধন্যবাদ বলেছে,ত সেটা খেতেও পারিস আবার ইচ্ছে করলে মাথায়ও ডালতে পারিস।”

পাশ দিয়ে সুজন যাওয়ার সময় কথাটা বলে উঠে,সাদাফ রেগে সুজনের দিকে তাকালে সুজনও একটা ভেংচি কেটে চলে যায় সেখান থেকে।

“আজব ত আমাকে কী পাগল মনে হচ্ছে এদের? সবাই এমন আমাকে দেখে ভেংচি কাটছে কেন?”

_____________________________________

রাতে সবাই ডিনার করতে বসেছে তখন সুজন তার বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে।

“আব্বু বউমনি কোন কলেজে পড়ে?”

“কেন জানো না তুমি?”

“জানি না বলেই ত জিজ্ঞেস করলাম আব্বু।”

“একই কলেজে ত পড়ো কখনও সাবিহাকে দেখতে পাও নি নাকি?”

“মানেহ?বউমনি আমার কলেজেই পড়ে?”

অবাক হয়ে সুজন বেশ চিৎকার করেই কথাটা বলে।তখন সাদাফ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,,,

“আজব ত এত চিৎকার করার কী আছে?আস্তে কথা বলতে পারিস না!”

“তুই সেটা বুঝবি না,আমার ত খুব খুশি লাগছে যে বউমনি আমার কলেজেই পড়ে।উফফ বউমনি তুমি জানো না যে আমি কত খুশি হয়েছি।”

“এত খুশি হওয়ার কী আছে এতে?”

সাদাফ ভ্রু কুঁচকে বলে।

“খুশি হওয়ার কী আছে মানে বউমনি আর আমি এবার থেকে একই সাথে কলেজে যেতে পারব,খুব মজা হবে।”

সুজনের কথা শুনে সবাই মুচকি হেঁসে খাওয়ায় মনোযোগ দেয় আর সাদাফ মনে মনে বলে উঠে,,,

“ভাবখানা এমন যেন মঙ্গল গ্রহ ঘুরে এসেছে,গা জ্বলে যাচ্ছে এসব নাটক দেখে।”

খাওয়ার শেষে যে যার রুমে চলে যায়।আর সবাই রুমে যাওয়ার পর সাদাফ তার রুমে না গিয়ে অন্য একটা রুমে চলে যায়।সে আজ ঐ রুমে যাবে না,সাবিহার সাথে থাকার তার কোন শখ নেই।তাই সে অন্য রুমে থাকবে ঠিক করেছে,সাদাফ রুমে গিয়ে দেখে রুমের লাইট জ্বালানো।

“আজব ত এই রুমের লাইট জ্বালানো কেন?এই রুমে ত কেউ থাকে না তবে লাইট জ্বালালো কে?বেটা হান্না(কাজের লোক) কাল তরে মাথায় তুলে আছাড় মারব এভাবেই ত অপচয় করছিস তুই।আর কোন কোন রুমে যে লাইট জ্বলছে আল্লাহ মালুম।যা খুশি হোক আমি এবার ঘুমাই,কাল সকালে বেটাকে ধরব খুব ক্লান্ত লাগছে।”

কথাটা বলেই সাদাফ রুমের লাইট অফ করে বেডে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে।
বেশ কিছুক্ষণ পর সাদাফের চোখটা মাত্রই লেগেছে তখনই তার মনে হল পাশে কেউ আছে।সাদাফ বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে বালিশের নিচ থেকে ফোন নিয়ে লাইট জ্বালায়।আর তার পাশে কী আছে দেখার জন্য লাইট মারার সাথে সাথেই সাদাফ চিৎকার করে লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়ে।

#চলবে,,,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ