Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহরশুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর পর্ব-১১ + বোনাস পর্ব

শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর পর্ব-১১ + বোনাস পর্ব

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১১

ঘড়ির কাটা ১২ টা ছুঁইছুঁই। নিস্তব্ধতায় ঘেরা রাতটার সময় যেন কিছুতেই এগুচ্ছে না। ক্লান্ত শরীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল ইভান। নিশব্দে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকেই এগিয়ে গেলো বেসিনের দিকে। নিকষ অন্ধকারের মাঝে ড্রইং রুমের জানালার পাশে দাঁড়ানো ল্যাম্পপোস্টটার সাদা আলোটা কাচ ভেদ করেই ঢুকে পড়েছে। তার বদৌলতেই অন্ধকার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে পিছনে ঘুরতেই চমকে গেলো। তার মা ঠিক পিছনেই দাড়িয়ে আছে। শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান একটু হকচকিয়ে গেলেও আবার নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–এখনও ঘুমাওনি তুমি?

ইভানের মা ছেলের কথার উত্তর না দিয়ে উলটা প্রশ্ন করে বসলো।
–তুই এতক্ষন কোথায় ছিলি?

ইভান নরম গলায় বলল
–আসিফের সাথে দেখা হয়েছিলো। কথা বলছিলাম। তাই দেরি হয়ে গেলো।

ইভানের মা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
–এতো রাত পর্যন্ত তুই তো বাইরে থাকিস না। আজ কেন?

ইভান একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–বললাম তো। বিশ্বাস হল না কেন তোমার?

ইভানের মা একটু নরম হল। হালকা গলায় বলল
–বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা নয় বাবু। তুই খুব জরুরি কাজ ছাড়া এতো রাত পর্যন্ত বাইরে থাকিস না। আর থাকলেও বলেই যাস। আজ না বলেই এতো রাত পর্যন্ত বাইরে ছিলি। আমি তো মা। চিন্তা হয় নাকি?

ইভান মায়ের হাত ধরল। অপরাধির সরে বলল
–বাড়ির নিচেই ছিলাম। একটু কথা বলতেই দেরি হয়েছে। আর হবে না।

ইভানের মা হালকা হেসে বলল
–খাবি চল। খাবার দেই।

ইভানের মা পা বাড়াতেই ইভান বলল
–ক্ষুধা পায়নি মা। তুমি ঘুমাও। পরে আমি নিজে নিয়ে খাবো।

ইভানের মা কথা বললেন না। ইভান দাঁড়ালো না। ভেজা মুখের পানি চুয়ে চুয়ে পড়ে টি শার্টটা ভিজে যাচ্ছে। সে ঘরের আলো জালিয়ে তোয়ালেটা নিয়ে মুখ মুছে ফেলল। ফোনটা বের করে একবার দেখে নিলো। ইভানের মা পিছন থেকে মৃদু আওয়াজে বলল
–দুধটা খেয়ে নে।

ইভান পিছনে ঘুরে ভ্রু কুচকে বলল
–আমি দুধ খাই?

ইভানের মা বিছানায় বসে পড়লেন। ছেলের দিকে না তাকিয়েই বললেন
–জানি খাস না। কিন্তু মাঝে মাঝে খেতে হয়। তুই যে পরে আর কিছু খাবিনা সেটা আমি জানি। তাই খালি পেটে ঘুমালে আমার যে শান্তিতে ঘুম হবে না। এই দুধ টুকু নিজে চোখে খেতে দেখলে তাও একটু শান্তি পাব।

মায়ের কথার বিপরিতে ইভান কিছু বলতে পারল না। আর কথা বাড়ান মানেই মাকে কষ্ট দেয়া। মুচকি হেসে বিছানায় মায়ের পাশে বসে দুধের গ্লাসটা হাতে নিলো। এক নিশ্বাসে সবটা শেষ করে মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
–এখন শান্তি?

ইভানের মা মৃদু হাসলেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
–কি হয়েছে? কিছু নিয়ে কি খুব বেশী চিন্তা করছিস?

ইভান মায়ের দিকে তাকাল। মায়ের ভালবাসা এমনি হয়। না বলতেই বুঝে যায় সব কিছু। ইভানের মা আবারো জিজ্ঞেস করলো
–ঈশার জন্য চিন্তা হচ্ছে?

ইভান চোখ নামিয়ে নিলো। কোন কথা বলল না। তার মা ছেলের মনের কথা বুঝতে পেরে আবারো বলল
–চিন্তা করিস না। মেয়েটা ঠিক হয়ে যাবে। ছোট মানুষ উলটা পাল্টা কিছু খেয়েছে হয়তো। তাই ফুড পয়জনিং হয়েছে। সকালেই দেখবি ঠিক হয়ে যাবে।

ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
–তোমার কথাই যেন ঠিক হয়।

ইভানের মা আর কিছু বলল না। গ্লাসটা হাতে নিয়ে উঠে চলে গেলো। দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার দাড়িয়ে বলল
–সারা রাত এখন মেয়েটার চিন্তায় আবার জেগে বসে থাকিস না। মেয়েটা নিজেও ঘুমাচ্ছে। তুইও শুয়ে পড়। বেশী চিন্তা হলে ঘুম থেকে উঠে একবার দেখে আসিস।

মায়ের এমন খোলামেলা কথা শুনে ইভান ভ্রু কুচকে তাকাল। একটু দুষ্টুমি করে বলল
–এতই যখন ছেলের ঘুম নিয়ে চিন্তা হচ্ছে তাহলে সেই চিন্তার কারণটাকেই এনে দাও। আমিও শান্তিতে ঘুমাই আর তুমিও ঘুমাও।

ইভানের মা কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
–আমি তোর মা। সেটা কি ভুলে যাচ্ছিস?

ইভান ঠোট চেপে হেসে বলল
–ভুলে যাইনি তো। তুমি মা বলেই তো তোমার টেনশনটা কমাতে চেষ্টা করছি। আমি ছেলে হিসেবে কর্তব্য আছে না?

ইভানের মা কঠিন দৃষ্টিতে তাকালেন। গম্ভির গলায় বললেন
–তুই দিন দিন লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছিস।

ইভান একটু হেসে বলল
–এখন তো সব আমার দোষ। তোমার টেনশন কমাতেই তো ভালো উপায় বলে দিলাম। সেটাও তোমার পছন্দ হলনা। এখন আর কি করার। তোমার বা আমার কারো যদি ঘুম না হয় তাহলে সে জন্য কিন্তু আমি কোনভাবেই দায়ি থাকব না।

ইভানের মা হালকা হেসে বের হয়ে গেলেন। ইভান দরজা বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বিছানায় বসে কিছুক্ষন ভাবল। এক রাশ চিন্তারা এলোমেলো ভাবে বিচরন করছে তার মস্তিষ্কে। আজ রাতে আর কোন ভাবেই ঘুম আসবে না। তার মা ছেলের মন ঠিকই বুঝেছেন। ইভানের কেন জানি মনে হচ্ছে ঈশা তার কাছ থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছে। ঈশার আচরন আজ বেশ অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। তার চোখের সেই অসহায় দৃষ্টি দেখেই ইভান বুঝতে পেরেছে ঈশা এমন কিছু লুকাচ্ছে যা সে কাউকেই জানতে দিতে চায় না। কিন্তু কেন? কি এমন গোপন বিষয় থাকতে পারে? কিছু জিজ্ঞেস করেও তো লাভ নেই। কোন ভাবেই বলবে না। নিজেকেই খুজে নিতে হবে। কিন্তু কিভাবে? বিছানায় মাথা ঠেকিয়ে ভাবতে লাগল সে। কেন ঈশা তার উপরে ভরসা করতে পারেনা। সে নিজেও জানে ইভান তাকে কতটা ভালবাসে। কিন্তু সেই ভালবাসার মুল্য ঈশা কখনই দেয়না। ঈশা তার প্রতি অনেক অন্যায় করে। সেটা ভাবতেই ইভানের মনে অভিমান বাসা বাধল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ঘুম না আসলেও চেষ্টা তো করতে পারে।

—————
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলো সাধারণত জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সুচনা করে। কখনও সেটা ভালো হয় আবার কখনও খারাপ। জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গুলোকে কেউ আঁকড়ে ধরে বেচে থাকার অবলম্বন হিসেবে নেয়। আর কেউ সেগুলোর চাপে পিষ্ট হয়ে জীবন থেমে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

অনেকটা দিন কেটে গেছে। বর্ষার মাঝামাঝি সময়। কবি সাহিত্যিকের ভাষায় বর্ষাকাল নাকি প্রেমের ঋতু। বৃষ্টি নাকি মানব মনে প্রেমের জন্ম দেয়। কিন্তু এই প্রেমের ঋতুতেই ঈশার জিবনে ঘটে গেলো কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। শুন্য মস্তিষ্কে কালো মেঘে ঢেকে যাওয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নিকষ কালো অন্ধকারে ঠিক কালো মেঘটা দেখা না গেলেও দূর আকাশের বিদ্যুতের ঝলকানি দেখে আন্দাজ করা সম্ভব। মাঝে মাঝেই আবার বেশ শব্দে কেপে উঠছে চারপাশ। কিন্তু ঈশার সেসবের কিছুই মনে ধরছে না। অনুভুতি শুন্য হয়ে পড়ে আছে মন। এলোমেলো ভাবনা। সব কিছুতেই বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে গেছে সে। আর সহ্য করতে পারছে না। এলোমেলো ভাবনার মাঝেই আচমকা কান ফাটানো আওয়াজে নামলো বৃষ্টির ধারা। কিন্তু সেই বৃষ্টি মনে আনন্দ দেয়ার বদলে জমে থাকা সমস্ত কষ্ট যেন বাধ ভেঙ্গে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে সাহায্য করছে। এক রাশ অভিমান। কিন্তু কার প্রতি এই অভিমান? ভাগ্যের? সে কি ভাগ্যের চরম নির্মমতার স্বীকার? বাধ ভাঙ্গা কান্না থামাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এক দৌড়ে চলে গেলো ওয়াশ রুমে। প্রকৃতির কান্না সে পৃথিবীর বুকে বিলিয়ে দিয়ে নিজেকে হালকা করতে পারে কিন্তু ঈশা তার কান্না কাউকে দেখাতে পারেনা। এই কষ্ট তার একান্ত। ঝর্নার নিচে বসে হাঁটু দুই হাতে ধরে অসহায়ের মতো কেদে চলেছে। মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছে। সাথে আর্তনাদও। সেটাকে আটকাতেই মুখে হাত চেপে ধরছে। মাঝ রাত হওয়ায় রুমে এখন কেউ আসবে না। তাই কোন চিন্তাও নেই। নিশ্চিন্তে ঝর্নার নিচে বসে কাদছে সে।

অনেকটা সময় পর বের হয়ে এলো ওয়াশ রুম থেকে। ঠিক কতটা সেটা হিসাব করে বলতে পারবে না সে। এতটা সময় ভেজার ফলে চোখ নাক লাল হয়ে গেছে। মাথাটাও ভারি হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। ভেজা কাপড় পরেই সারা ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। শুকনা কাপড় বের করে নিলো আলমারি থেকে। চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশ রুমের দিকে পা বাড়াতেই টেবিলের উপরে থাকা ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠল। এতো রাতে কেউ ফোন দিবে ভেবে একটু অবাক হয়েই সেদিকে তাকাল। ইভানের নামটা দেখে চোখ ছলছল করে উঠল তার। পাতা জোড়া বন্ধ করতেই গাল বেয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। ফোনটা হাতে নিলো ঠিকই। কিন্তু রিসিভ করতে নয়। কেটে বন্ধ করে দিতে। কিছুদিন ধরেই ঈশা ইভান কে ইগনোর করছে। ইভান বিষয়টা বেশ বুঝতে পারছে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলছে না। আবার হার মানতেও নারাজ সে। নিজের মতো করেই ঈশার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেই যাচ্ছে। কিন্তু ঈশা চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিচ্ছে। ঈশা ফোনটা কেটে বন্ধ করতে চাইলেও সেটা সম্ভব হল না। কারন ঐ যে কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তেমনি কিছু ঘটে গেলো। প্রচণ্ড রকমের শ্বাস কষ্ট শুরু হতেই হাত পা কাপতে লাগল তার। কথায় আছে বিপদের সময় মানুষ নাকি তাকেই মনে করে যাকে সব থেকে আপন মনে হয়। ঈশার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হল না। প্রবল বাচার আকুতি নিয়ে মনের সাথে যুদ্ধ করে ফোনটা ধরে অস্পষ্ট সরে বলল
–আমার খারাপ লাগছে। খুব খারাপ লাগছে।

কথাটা ইভানের কান পর্যন্ত পৌছালো কিনা সেটা বোঝার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেলো ফোনটা। ওপাশের মানুষটা আদৌ কিছু শুনতে পেয়েছে কিনা বা বিপদটা ঠিক ঠাক আন্দাজ করতে পেরেছে কিনা সেটা বোঝা সম্ভব হল না।

চলবে………

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক- এ রহমান
বোনাস পর্ব

চারিদিকে থম্থমে নিস্তব্ধতা। ঠিক কয়টা বাজে কারো খেয়াল নেই। থেমে থেমে চাপা কান্নার আওয়াজ আসছে কোথাও থেকে। হয়তো খুব আপনজনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বুকের ভিতরে লুকিয়ে রাখা আর্তনাদ বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। কিন্তু আবার পর মুহূর্তেই থেমে যাচ্ছে আশে পাশের পরিবেশের কথা ভেবে। এয়ারকন্ডিশনের বাতাসে ঠাণ্ডা ভাবটা জোরালো হয়ে উঠেছে। অনুভুতিশুন্য হয়ে সামনের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে ঈশার মা। অপারেশন থিয়েটারের সামনে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে ঈশার বাবা। আশে পাশে চেয়ারে ইলু, ইরিনা, ঈশান বসে আছে। ইফতি গেছে তার মাকে আনতে। ভিতরে ঈশার অপারেশন হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ভেজার পরে ঈশার গলার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। টনসিল বেড়ে যায়। শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। ডক্টর আগেই বলে দিয়েছিল যে খুব সাবধানে থাকতে। ঠাণ্ডা লেগে যদি টনসিল কোনভাবে বেড়ে যায় তাহলে অপারেশন ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। ঈশার বোকামির কারনে আজ সে নিজেই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন। খুব জটিল কোন অপারেশন না হলেও সেটা অপারেশন তো। আর তাছাড়াও ঈশার প্রচণ্ড শ্বাস কষ্ট শুরু হয়েছিলো। শ্বাস নিতে না পারায় সেন্স হারিয়ে ফেলেছিল। এতেই সবাই অনেক বেশী ভয় পায়। প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে সবাই অপেক্ষা করছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে। ডক্টর বলেছে খুব বেশী হলে ১ ঘণ্টাই লাগতে পারে। ঠিক তাই। সবার অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে অবশেষে ডক্টর বের হয়ে এলো। ঈশার বাবা বিচলিত হয়ে বললেন
–আমার মেয়ে কেমন আছেন ডক্টর?

ডক্টর মৃদু হেসে বললেন
–একদম ঠিক আছে। এখনও জ্ঞান ফেরেনি। তবে চিন্তার কোন কারন নেই। সন্ধ্যার মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।

বলেই ডক্টর এগিয়ে যেতেই ঈশার মা অসহায় কণ্ঠে বললেন
–আমার মেয়ে কথা বলতে পারবে তো?

ডক্টর মৃদু হাসলেন। ঈশার মায়ের সামনে দাড়িয়ে বললেন
–তিন দিন পর্যন্ত কথা বলতে একটু প্রব্লেম হবে। ব্যথা হবে। ধিরে ধিরে ঠিক হয়ে যাবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর জটিল কোন সমস্যা নেই। সব ঠিক আছে।

সবাই সস্তির নিশ্বাস ফেলল। ঈশা ঠিক আছে এটাই এই মুহূর্তে সব থেকে বড় খবর। ইভানের মা এসে দাঁড়ালো। সবার দিকে একবার তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–ঈশা এখন কেমন আছে?

ইরিনা তাকে বসাল চেয়ারে। শান্ত কণ্ঠে বলল
–ঠিক আছে বড় মা। জ্ঞান এখনও ফেরেনি। সন্ধ্যার মধ্যে ফিরবে নাকি। বড় কোন ঝামেলা নেই।

ইভানের মা সস্তির নিশ্বাস ফেললেন। ঈশার মায়ের ঘাড়ে হাত রাখতেই ডুকরে কেদে উঠলেন তিনি। আর যাই হোক সন্তানকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পাওয়া কোন মায়ের জন্য ভালো অনুভুতি হতে পারেনা। ইভানের মা তাকে যথেষ্ট শান্তনা দিলেন। তিনি বুঝে চুপ করে গেলেও মন তো অস্থির হয়েই আছে। এর মাঝেই ঈশাকে কেবিনে দেয়া হল। সবাই এক এক করে দেখে আসলো তাকে। সবার দেখা শেষ হতেই ইরিনা সবার উদ্দেশ্যে বলল
–ইভান ভাইয়া কোথায়? অনেক্ষন থেকেই দেখছি না।

সবাই বিচলিত হয়ে তাকাল। আসলেই তো। হসপিটালে ঈশাকে ভর্তি করানোর পর থেকেই ইভানের কোন খবর নেই। এতো টেনশনের মধ্যে কেউ তার খবর নিতেই ভুলে গেছে। অথচ সেই কাল রাতে ঈশার বাবাকে ফোন করে তার অসুস্থতার কথা জানায়। তারপর তাদের সাথেই ঈশাকে নিয়ে হসপিটালে চলে আসে। ঈশার অবস্থা তখন ভালো ছিল না। ধিরে ধিরে আরও খারাপের দিকে যায়। সবাই তখন ঈশাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু তারপর থেকে ইভানকে কেউ দেখেনি। এমন কি ঈশার অপারেশন হল তবুও ইভানের কোন খবর নেই। বিষয়টা আসলেই অবাক করার মতো। ঈশান বলল
–আমি ফোন দিচ্ছি।

ফোন বের করে ইভানের নাম্বারে ডায়াল করলো। কিন্তু ফোনটা বন্ধ। ঈশান অসহায় ভঙ্গিতে ফোনটা কেটে দিয়ে নিচে তাকিয়েই বলল
–বন্ধ।

এবার সবার মাথায় একটু চিন্তা খেলে গেলো। ঈশাকে এই অবস্থায় দেখে ইভান ঠিক কতটুকু ঠিক রাখতে পারবে নিজেকে সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠল। কারন ইভানের মনে ঈশার জন্য যে অনুভুতি সেটা কাররি অজানা নয়। আর সেটা ঠিক কোন পর্যায়ে সেটাও সবাই ভালভাবেই বুঝতে পারে। তাই এখন ইভান কে নিয়ে বেশ চিন্তা হচ্ছে সবার। কি অবস্থায় আছে। আবার ফোনটাও বন্ধ। ঈশান বেশ কয়েক জায়গায় ফোন দিলো ইভানের খোজ নিতে। কিন্তু কারো কাছেই কোন খোজ পেল না। ব্যর্থ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
–ইভান ভাইয়া কি বাসায় যায়নি বড় মা?

ইভানের মা না সুচক মাথা নাড়ল। হতাশ হয়ে বলল
–আমি তো ভেবেছিলাম এখানেই আছে। তাই আর ফোন দেইনি।

ইলু বুঝতে পারল এখন পরিস্থিতি অনুকুলে নয়। তাই সব কিছু সামলাতে বলল
–এতো চিন্তার কিছু নেই। ইভান ভাইয়া চলে আসবে। হয়তো কোন কাজে ব্যস্ত আছে।

তার কথাতেও কারো কোন ভাবান্তর হল না। তাই আশস্তের কণ্ঠে বলল
–ইভান ভাইয়া অনেক বোঝে। সে কোন ভুল করতে পারে সেটা আমি অন্তত মানি না। হয়তো এমন কোন পরিস্থিতি হয়েছে জার কারনে ফোনটা বন্ধ রেখেছে। কিন্তু ঠিক চলে আসবে। আমি জানি।

সবাই বেশ চুপচাপ। কেউ ইলুর কথার উত্তরে কোন কথা বলল না। সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন ইভান ঠিক আছে তো?

——————–
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে। হসপিটালে কোলাহল বেড়ে গেলো হঠাৎ করেই। কোন সিরিয়াস কন্ডিশনের রোগী এসেছে মনে হচ্ছে। ডক্টর নার্স সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। রোগীর আত্মীয় স্বজনরা বিচলিত হয়ে ঘুরছে। কেউ ঔষধ নিতে ছুটে চলেছে। আবার কেউ দরজায় দাড়িয়ে মুখে আচল চেপে কান্না আটকাতে ব্যস্ত। সেই দৃশ্যই চেয়ারে বসে দেখছে ঈশার মা। গত রাতে তার অবস্থাও এমন হয়েছিলো। মেয়ের অবস্থা দেখে তিনিও এভাবেই ভেঙ্গে পড়েছিলেন। কিন্তু এখন মেয়ে ভালো আছে শুনে কিছুটা আশস্ত হলেও পুরটা হতে পারেনি। কারন এখনও ঈশার জ্ঞান ফেরেনি। বুক চিরে লুকান দীর্ঘশ্বাস টা বেরিয়ে এলো তার। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন সামনে। এমন সময় ইভানের মা কোথা থেকে এসে বললেন
–ঈশার জ্ঞান ফিরেছে। তাড়াতাড়ি ভিতরে যাও।

ঈশার মায়ের খুশিটা চোখের পানির মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এলো। কয়েক ফোটা পানি ফেলে তারপর চোখ মুছে নিয়ে ছুটে গেলেন মেয়ের কাছে। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই দেখলেন ঈশার বাবা মেয়ের পাশে বসে আছেন। তার মা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
–এখন কেমন আছিস মা?

ঈশা অসহায় চোখে তাকাল। তিনি নিজের বোকামিটা বুঝতে পেরেই মন খারাপ হয়ে গেলো। ঈশা যে এখন কথা বলতে পারবে না সেটা তার মাথায় রাখা উচিৎ ছিল। তবুও তিনি বোকার মতো তাকে প্রশ্ন করলেন। পরিস্থিতি সামলাতেই বলল
–ডক্টর বলেছে তুই রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবি। আর কোন সমস্যা নেই। একদম আগের মতো হয়ে যাবি।

ঈশার চোখ ছলছল করে উঠল। সাথে সাথেই ইলু, ইরিনা ঢুকে পড়ল ভিতরে। রীতিমত তারা সেখানে আড্ডায় মেতে উঠল। তাদের এরকম করতে দেখে নার্স এসে ধমক দিয়ে গম্ভির গলায় বললেন
–এভাবে বাচ্চাদের মতো আচরন করবেন না। পেশেন্ট কে রেস্ট নিতে দিন। সবাই বাইরে যান।

নার্সের কথা শেষ হতেই ইভান ভিতরে ঢুকল। নার্স তাকে দেখে খুব বিরক্ত হয়ে বললেন
–এতজন কেন একসাথে ভিতরে ঢুকেছেন। বাইরে যান। পেশেন্ট এখন রেস্ট নিবে।

ইভান কোন কথা বলল না। তার আগেই একজন ডক্টর ভিতরে ঢুকে বলল
–প্রব্লেম নেই সিস্টার। আমি দেখছি। আপনি বাইরে যান।

ডক্টরের কথা শুনে নার্স আর কোন কথা বলল না। বাইরে চলে গেলো। ডক্টর ইভানের পাশে এসে দাঁড়ালো। কাধে হাত রেখে বলল
–বেশী সময় নিবি না। ঈশার রেস্ট দরকার।

ইভান একটা শ্বাস ছেড়ে ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–হুম। রেস্টই নিবে। এখন থেকে ওর সব দায়িত্ব শেষ।

সবাই ইভানের দিকে তাকাল। তার কথার মানে কেউ বুঝতে পারল না। ঈশার বাবা এগিয়ে এসে ডক্টরের সামনে দাড়িয়ে বলল
–আরে ইলহাম তুই এখানে? এখানে কি করছিস?

ইলহাম হালকা হেসে বলল
–আমি এখন এই হসপিটালেই জয়েন করেছি মামা। কিছুদিন হল। তোমাদেরকে জানানোর সুযোগ হয়নি। নতুন জব নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই। ভেবেছিলাম সময় করে যাব বাসায়। কিন্তু তার আগেই তো ঈশার এই অবস্থা।

ইলহাম এগিয়ে ঈশার কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল
–এখন ভালো লাগছে?

ঈশা মাথা নাড়াল। ইলহাম একটু গম্ভির হয়ে বলল
–তুই কিন্তু কাজটা একদম ঠিক ক……।

ইভান মাঝ পথেই তাকে থামিয়ে দিলো। গম্ভির সরে বলল
–ভাইয়া এখন এসব থাক। আমি আমার কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলি। ঈশার আবার রেস্ট দরকার।

ইলহাম আর কথা বাড়াল না। মুচকি হেসে ইভান কে সম্মতি দিলো। ইভান ঈশার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মাথা নামিয়ে নরম সুরে বলল
–মেজ বাবা আমি ঈশাকে বিয়ে করতে চাই।

চলবে…………

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ