#ভালবাসার_ঘর।
#বিন্দু_মালীনি।
#পর্ব_৬
আমি সকালেই বাসার সবাইকে বলে দেবো তোমার জন্য মেয়ে দেখতে।
_মগের মুল্লুক পেয়েছো নাকি?তুমি বলবে আর আমি বিয়ে করে নিবো তাইনা?
_তাহলে কি ধরে নিবো আমার চাওয়ার কোন দাম নেই তোমার কাছে?
_আছে,তবে এমন কোন চাওয়া আমি তোমার পূরণ করতে পারবোনা যে চাওয়ায় আমার আর তোমার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হবে।
_কিন্তু আমি যে তোমায় কোন দিন সন্তান দিতে পারবোনা কলিজা।
আমার ভুলের কারণে তুমি কেন সারাজীবন বাবা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত থাকবে?
_পৃথিবীতে অনেক দম্পতী আছে যাদের কোন সন্তান নেই।
তাই বলে কি তারা এক সাথে থাকেনা?
বা কেউ কাউকে ছেড়ে চলে গেছে?
আচ্ছা বলোতো,ওই এক্সিডেন্ট টা কি তুমি নিজে নিজেই করেছিলে?
নাকি ভুলবশত হয়ে গেছে?
আচ্ছা ওই ঘটনার পর সব থেকে বেশি সাফার কে করেছিলো বলো তো?
তুমি করেছিলে,তুমি।
আমরা সবাই একটা সন্তানের অপেক্ষায় ছিলাম মাত্র।আর তুমি তো ওকে নিজের গর্ভে রেখেছিলে।
আমাদের থেকে তোমার কষ্ট টা শত ভাগ বেশি।
মানলাম আমি বাবা হতে চাই।এটা আমার স্বপ্ন,
শুধু মাত্র আমার না,
সব পুরুষেরই স্বপ্ন থাকে বাবা হবার।
তাই বলে কি তোমার কোন স্বপ্ন নেই?
তুমি কি চাও না মা হতে?
চাও।অবশ্যই চাও।
আর আল্লাহ্ তায়ালা একদিন আমাদের স্বপ্ন টা ঠিক পূরণ করবেন।
আমি চাইনা অন্য কারো দ্বারা আমার স্বপ্ন পূরণ করতে।
যেখানে তুমি নেই।যেই সুখ তুমি অনুভব করতে পারবেনা,সেই সুখের প্রয়োজন নেই আমার।
আমার তুমি হলেই হবে।
৫বছর কেন,সারাজীবন আমি সন্তানহীন থাকতে রাজি কিন্তু তোমাকে হারাতে রাজি না।
চাইনা আমার ওমন সন্তান,
যার জন্য আমাকে আমার প্রিয়তমাকে হারাতে হবে।
আমি তোমাকে নিয়ে,তোমার সাথে বাকি জীবন টা কাটিয়ে দিতে চাই।
থাকবেনা আমার সাথে?রাখবেনা আমাকে সারাজীবন তোমার ওই বুকে?
আমি রণর কথা গুলো শুনে রণকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
কাঁদতে কাঁদতে বললাম,ভালবাসি কলিজা,খুব ভালবাসি।
সত্যি আমি ভাগ্যবতী।তোমাকে পেয়ে,তোমার মত স্বামী পেয়ে এ জীবন ধন্য আমার।
বাসার সবাই আমাকে আর রণকে শুভেচ্ছা জানালো।
রণ সেই প্রথম বারের মত এবারো সন্ধ্যায় একটা ফ্যামিলি পার্টি রাখলো।
ওকে না করলাম এসব করার জন্য।তবুও শুনলোনা।
মনে পড়ে যাচ্ছে সেদিনের কথা।যেদিন প্রথম বার আমি জানতে পেরেছিলাম আমি মা হতে চলেছি।আর রণ বাবা।
ইশ কতই না খুশি হয়েছিলাম আমরা সবাই।
কিন্তু হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো।
_কিরে কি ভাবছিস?
_না,কিছুনা মা।
_প্রথম বছরের কথা মনে নাড়া দিচ্ছে না?
আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
_হুম মা।
_কাঁদিস না।আল্লাহ্ চাইলে একদিন আবার সব হবে।
তাছাড়া তোর বড় ভাইয়ার আর মেঝো ভাইয়ার সন্তান রা কি তোদের সন্তান না?
কেন এভাবে ভেঙে পড়ছিস?রণ তোর মুখে হাসি দেখতে এত সব প্ল্যানিং করেছে।
ওর খুশিটা তোর চোখের জল দিয়ে মাটি করে দিস না।
যা রেডি হয়ে আয়।কেক কাটবি।
_মা,এবার না কাটি?
ভালো লাগছেনা।
_চুপ।কোন কথা না।যা রেডি হয়ে আয়।
আয়নায় আজ নিজেকে দেখছি।
৫ বছরে আমার মাঝে কতটা পরিবর্তন।
চোখ দুটো যেন শুকিয়ে গেছে,চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।
মুখটা যেন মলিনতায় গ্রাস করেছে।হাসি টা যেন কত শত দিন যাবত গায়েব।
কি এক অদ্ভুত আমি আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
নিজেকে নিজেরই চিনতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
হঠাৎ পেছন থেকে রণ এসে জড়িয়ে ধরলো।
_কি হয়েছে আমার বউটার?আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রুপ লাবণ্য নিজেই দেখছে?
_হা হা,রুপ লাবণ্য।কি বিচ্ছিরি হয়ে গেছি দেখতে আমি।
কখনো তো বলোনি,বিন্দু তুমি আর আগের সেই তুমি নেই।
_কেন বলবো?আমার কাছে তুমি আমার আগের সেই তুমিই আছো।
শুধু একটা জিনিষ মিসিং মুখটাতে।
_কি?
_এক মিনিট দেখাচ্ছি।
রণ আমার পেটে সুড়সুড়ি দেয়।আর আমি হাসতে থাকি,আর বলতে থাকি প্লিজ রণ আর সুড়সুড়ি দিওনা,হাসতে হাসতে মরে যাবো তো।
_মরতে দিলে তো।
_পাগল একটা।
_এই হাসি টাই মিসিং ছিলো বুঝলে?
চলো চলো কেক কাটবে চলো।
আর হ্যাঁ,তোমাকে দারুণ লাগছে আজ।
_হুম হুম বুঝলাম বুঝলাম,চলুন এবার।
রণ আর আমি কেক কাটবো এখন।
আম্মু আব্বু বেলাও এসেছে।সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
আমি আর রণ দুজন মিলে কেক কাটলাম।
যেই আমি রণর মুখে কেক তুলে দিতে যাবো তখনই আমি রণর উপর ঢলে পড়ে যাই।
মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে উঠে।
চোখ মুখ ঝাপসা হয়ে যায়।
রণ তাড়াতাড়ি করে আমাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।ডাক্তারকে ফোন করে আসতে বলে।
ডাক্তার এসে কিছু ক্ষণ পর বলেন_
মিঃ রণ।
আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট।কংগ্রাচুলেশনস!চিন্তার কোন কারণ নেই।
বাসায় খুশির ঢল নামে।
এত বছর পর আল্লাহ্ আবার আমাদের দিকে মুখ তুলে চান।
এবার আমি খুব সাবধানে থাকি।
রণ আমাকে ছাদে উঠা বারণ করে দিয়েছে।
বেশির ভাগ বেড রেস্টেই থাকা হচ্ছে আমার।
মা,ভাবীরা সবাই নানান রকম খাবার তৈরি করে এনে আমাকে খাওয়াচ্ছেন।
দেখতে দেখতে এখন আমার নয় মাস।
রণ আমার পেটে কান দিয়ে ওর সন্তানের সাথে কথা বলে।
_আম্মু,তুমি কেমন আছো হুম?এই তো আর কয়েকটা দিন।তারপরই তুমি আমার কোলে চলে আসবে আম্মু।
মন খারাপ করেনা।
বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
তারপর আমার পেটে আর কপালে চুমু দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে,
_আমাদের মেয়ের নাম কি হবে বলো তো?
_নাম টা এখন ঠিক না করি?
ও আসুক আগে তারপর না হয় নাম রাখা যাবে।
_উঁহু!নাম টা এখনই রাখতে হবে।
_পরে যদি ওই বারের মত নামটা..
কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই রণ আমার মুখ টা হাত দিয়ে আটকে ধরে।
_চুপ।
কিচ্ছু হবেনা।
_হুম।
_আমাদের মেয়ের নাম হবে নীরা।
_নীরা?
_হুম নীরা।
_আচ্ছা।
কয়েক দিন পর।
_রণ,এই রণ।উঠো তো।
_কি হয়েছে?
_আমার খুব খারাপ লাগছে।
ব্যথা হচ্ছে খুব।
আমাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলো।
রণ আমাকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যায়।
ডাক্তার বলেন এটা ডেলিভারি পেইন।আমাদের এক্ষুণি ওনাকে নিয়ে যেতে হবে।আপনি বাইরে থাকুন মিঃ রণ।
_রণ আমার খুব ভয় করছে।আমি যদি মারা যাই?আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইনা রণ।আমি তোমার সাথে অনেক বছর বাঁচতে চাই।
_কিচ্ছু হবেনা কলিজা,আল্লাহ্ ভরসা।
ভয় পেওনা।
ডাক্তার আমাকে রণর কাছ থেকে নিয়ে যায়।
রণ আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আমাকে বিদায় জানায়।
এক দিকে ব্যথা,আর অন্য দিকে ভয়,
আমার রণ কে ছেড়ে চিরতরে চলে যেতে হবে না তো?
চলবে…