Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৯(লাষ্ট)

তোর শহরে ভালোবাসা পর্ব-২৯(লাষ্ট)

#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?

পর্ব-২৯(লাষ্ট)

#ফাবিহা_নওশীন

??

আদি!!!!
সামু রাগে,ক্ষোভে চিতকার করে উঠলো।

আদি কানে হাত দিয়ে বললো,
–ওকে,রিলেক্স আমি নিশিকে বলছি তোমাকে ড্রেস দিতে।আর আপাতত তুমি আমার একটা টিশার্ট পড়ে নেও।

আদি সামুকে নিজের একটা টিশার্ট দিলো।সামু সেটা ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে।তখনই আদি বললো,
–এই দাড়াও তোমার এই নতুন উদ্ভাবিত ড্রেসটার একটা পিক নিয়ে নেই।

সামু চোখ পাকিয়ে চাইতেই আদি মুখ চেপে হেসে বেরিয়ে গেলো নিশির কাছে।নিশিকে সব খোলে বলতেই নিশি নিজের কয়েকটা ড্রেস সামুর রুমে নিয়ে যায়।সামু আদির টিশার্ট পড়ে বসে আছে।নিশির দেওয়া ড্রেস থেকে একটা ড্রেস নিয়ে পড়ে রেডি হয়ে নিচে গেলো।

ডক্তর এসেছে বাবার রোজকার চেকাপ করতে।নার্স তো আছেই সবসময়ের জন্য।আর একজন স্পেশাল ডক্টর রাখা হয়েছে এক্সারসাইজ করানোর জন্য।রোজ হালকা পাতলা এক্সারসাইজ করানো হয়।এভাবে যত্ন নিলে তিনি খুব শীঘ্রই হাটতে পারবেন।সামু নিচে নামতে নামতে দেখছে।
সামু নিচে যেতেই আদি আদিবাকে কোলে নিয়ে বললো,
–চলো।

সামু সবার থেকে বিদায় নিয়ে আদিবার স্কুলে ভর্তি করার জন্য বেরিয়ে গেলো।স্কুলে ভর্তি করে আসার পথে সামু আর আদিবার জন্য কেনাকাটা করে এসেছে।

রাতের বেলা রুমে গিয়ে সামু দেখে বাপবেটি মিলে বিছানায় বসে খেলছে।বিছানার অবস্থা নাজেহাল।সামু আদিবাকে বললো,
–আদিবা দাদু ডাকছে।

আদি খেলা থামিয়ে আদিবাকে নামিয়ে দিলো।আদিবা চলে যাওয়ার পর সামু কোমড়ে হাত দিয়ে আদির সামনে গিয়ে দাড়ালো।আদি সামুকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভড়কে গেলো।

আদি থমথমে মুখে বললো,
–আমি আবার কি করেছি?তুমি এভাবে চেয়ে আছো কেন?

সামু মুখে বিরক্তি নিয়ে বললো,
–এটা কি গরুর ঘর না বিছানা?কি হাল করেছো?

আদি পুরো বিছানায় চোখ বুকিয়ে নিলো।
বিছানায় টেডিবিয়ার,ডল,গাড়ি, প্লেন আরো খেলনা এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে,কুশন ছড়ানো ছিটানো, বেড শিট এলোমেলো।সব মিলিয়ে জংগল।

সামু বললো,
–৫মিনিট সময় দিলাম তাড়াতাড়ি গুছাও।

–আমি!!!

–কেন তুমি আমাকে গোছাতে বলছো?তুমি এলোমেলো করেছো তুমি গোছাবে।

আদি দাতে দাত চেপে বিছানা গোছাতে লাগলো।মাঝেমধ্যে আড়চোখে সামুকে দেখছে সামু সোফায় আয়েশ করে বসে ফোন টিপছে।
সামু মনে মনে বলছে,
–সোনার চান,,কি ভেবেছো তোমাকে এত তাড়াতাড়ি মাফ করে দেবো?রোজ তোমাকে এভাবে ছোট খাটো টর্চার করবো।বড় টচার্র করলে তো আমারি লাগবে তাই ছোট ছোট টর্চার।

আদি কাজ শেষ করে সামুর সামনে এসে দাড়ালো।কিন্তু সেদিকে সামুর ভ্রুক্ষেপ নেই।আদি তাই নিজ থেকে বললো,
–বিছানা গুছিয়েছি।

সামু নড়েচড়ে ভাব নিয়ে না তাকিয়েই বললো, ইউ ক্যান গো নাও।

–মানে কি?আমি কি মেইড?

সামু এবার আদির দিকে চেয়ে বললো,
–তোমাকে আমি মেইড কখন বললাম?

–যেভাবে বললে ইউ ক্যান গো নাও।কেমন মেইড মেইড ফিলিং হলো।

–তোমার যদি মেইড ফিলিং হয় তবে সেটা তোমার প্রব্লেম।তোমার বাড়ি তোমার ঘর আর তোমাকেই মেইড বলবো?ইম্পসিবল!!
তুমি দাড়িয়ে ছিলে তাই বলেছি,তোমার তো নিজেরও কাজ থাকতে পারে।

–আমার কোনো কাজ নেই।আমি এখন শুয়ে থাকবো।

–এস ইউর উইশ।

আদি বিছানায় শুয়ে সামুর দিকে চেয়ে আছে। সামু ফোনের ভিতরে থাকলেও বুঝতে পারছে আদি ওকে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে।সামুর অস্বস্তি লাগছে।যতই ফোনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন না কেন পারছেনা।তাই ধাম করে উঠে বাইরে চলে গেলো।নিচে গিয়ে সবার সাথে বসে আড্ডা দিলো।

রাতের খাবার খেয়ে সামু আদিবাকে ঘরে নিয়ে এলো।আদি ল্যাপটপে কাজ করছে।আদিকে বিরক্ত করার আরেকটা বুদ্ধি মাথায় এসে গেলো।

–আদিবা পাপাকে বলো ব্রাশ করিয়ে দিতে।

আদিবা আদিকে গিয়ে বললো,
–পাপা,,মাম্মা বলছে তোমাকে দাত ব্রাশ করিয়ে দিতে।

আদি সামুর দিকে একবার চেয়ে আদিবাকে ব্রাশ করাতে নিয়ে গেলো।ব্রাশ করিয়ে বের হতেই সামু বললো,
আদিবা আমার ভালো লাগছে না পাপাকে বলো বেনী করিয়ে দিতে।

আদিবা আদির দিকে তাকাতেই আদি বলে উঠলো,
–সামু আমি বেনী করতে পারিনা।কিভাবে করে দেবো?

–কি আশ্চর্য,এখনকার যুগে কিছু পারা লাগেনা।ইউটিউব কেন আছে?ইউটিউব থেকে শিখে বানী করে দেও।

আদি ইউটিউবে কয়েকবার দেখেও বেনী করা আয়ত্তে আনতে পারছেনা।৫বার ট্রাই করার পর আদিবাকে বেনী করিয়ে দিতে পারলো।

সামু বেনি দেখে ফিক করে হেসে দিলো তারপর বললো,
–কি বেনী করেছো তুমি? মনে হচ্ছে চুলের উপর সাইক্লোন বয়ে গেছে।যাইহোক প্রথমবার তো ইটস ওকে।

সামু আদিবাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।আদি আদিবার পাশে এসে শুতেই সামু বলে উঠলো।
–এখানে কেন ঘুমাতে এসেছো?গতকাল ভাব দেখিয়ে না সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে ছিলে?একদিনেই ভাব চলে গেলো।যাও সোফায় যাও।

আদি ভেংচি কেটে বললো,যাবোনা।এই বেডের অর্ধেক মালিক আমি।

সামু চোখ বড়বড় করে বললো,
–এই এই কি করলে তুমি?

আদি অবাক হয়ে বললো,কি করলাম!!

–মেয়েদের মতো ভেংচি কাটলে!ছিঃ!

–কেন ভেংচি কি মেয়েদের পার্সোনাল প্রপার্টি?ছেলেদের ভেংচিতে অধিকার নেই?

–মাঝরাতে তোমার সাথে ঝগড়া করার মুডে নেই।

–ঝগড়া করতে পারলে তো ঝগড়া করবে?

–সেই!!তুমি তো ঝগড়া করার উপর পিএইচডি নিয়েছো।

–হুহ!

–হুহ!

এভাবেই কেটে গেছে একমাস।এই একমাসে সামু আদিকে নানাভাবে প্রচুর টর্চার করেছে।আদিও সামুকে নানান ভাবে রাগানোর চেষ্টা করেছে।প্রতিনিয়ত রুটিন মাফিক ক্ষমাও চেয়েছে কিন্তু সামু করে নি।সামু ওর সাথে আছে এতেই আদি খুশি।
এই একমাসে সামু আদির মাঝে অনেক পরিবর্তন খেয়াল করেছে।আগের আদি আর এই আদির মধ্যে অনেক তফাত।শুধু আগের মতো দুষ্ট আছে।সামুর সাথে না লাগলে ওর পেটের ভাত হজম হয়না।নিজে নিজেই ঘুম থেকে উঠে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নাস্তা করে আদিবাকে নিয়ে বের হয়ে যায়।আদিবাকে স্কুলে ড্রপ করে অফিসে যায়।অফিস থেকে ফিরে রাতের বেলা বাবার ঘরে যায়,রোজ বাবার খোজ নেয়।কিছুক্ষণ গল্প করে।আদিবার খেয়াল রাখে।কোনো কিছু নিয়ে রাগারাগি চেঁচামেচি,ভাংচুর করে না।যতটুকু রাগ একটা মানুষের মধ্যে থাকা উচিত ততটুকুই আছে অতিরিক্ত নয়।একদম ম্যাচুয়েড ড্যাশিং জেন্টেলম্যান।

রাতে সামু আদিবাকে ঘুম পারিয়ে চার্জে দেওয়ার জন্য চার্জার ছকেটে হাত বাড়াতেই আদি ওকে হেচকা টানে নিজের দিকে নেয়।সামু হটাৎ তাল সামলাতে না পেরে আদির বুকে হুমড়ি খেয়ে পরে।মাথা না তুলে,না সরে ওভাবেই আদির নিশ্বাসের শব্দ শুনছিলো হটাৎ হুশ হয় আদি ওর কোমড় জরিয়ে ধরায়।আদিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে রাগে চোখ মুখ লাল করে ফুসতে ফুসতে বলে,
—সমস্যা কি?কি করছিলে?একঘরে থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলে না?

আদি সামুর কথায় লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করলো।তারপর মুখ ভার করে জোরে শ্বাস ফেলে ছকেটের দিকে ইশারা করলো।
সামু ছকেটের দিকে চেয়ে দেখে একটু পর পর কেমন আগুন বের হচ্ছে আর শব্দ হচ্ছে।সামু স্তব্ধ হয়ে গেল।ঘুরে আদিকে কিছু বলতে যাবে তখনই
আদি বললো,
–অন্য জায়গায় চার্জ দেও।সকালে ঠিক করার ব্যবস্থা করবো।

সামুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদি বের হয়ে গেলো।সামুর কথায় আদি অনেক হার্ট হয়েছে।সামুও কথাটা বলে অনুতাপ করছে।কেন এমন একটা কথা বলতে গেলো।সামু শুয়ে শুয়ে আদির আসার অপেক্ষা করছে কিন্তু আদির আসার নাম নেই।রুমের লাইট অফ করে হালকা ব্লু শেডের লাইট অন করে আদিবার পাশে শুয়ে পড়ে।
অনেকক্ষণ পর আদি ঘরে এলো।সামু চোখ বন্ধ করে রাখলো।আদি এসে আদিবার কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।তারপর বারান্দায় চলে গেলো।অনেকক্ষণ যাওয়ার পর ও আদি ঘরে আসেনি।সামু উঠে বারান্দায় গেলো।আদি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে আছে।সামু ভয়ে ভয়ে পাশে গিয়ে বসে।আদি কারো উপস্থিতি আভাস পেয়ে মাথা তুলে বললো,
–আমি জানি তুমি কি বলতে এসেছো?বাট ইটস ওকে।প্লিজ লিভ মি এলোন।

–আদি প্লিজ আ’ম সরি।

–ইটস ওকে।আমি এটাই ডিজার্ভ করি।আ’ম ফাইন।

–আমি রাগের মাথায়,,

–রাগ!রাগ,,এই রাগ আমার পুরো জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।এই রাগের জন্য আমি অনেক ভুল করেছি।আর সবচেয়ে বড় ভুল তুমি তো জানোই।সে ভুলের ক্ষমা আজো পেলাম না।আর সেই রাগের জন্যই আজ তোমার মুখে,নিজের বউ,ভালোবাসার মানুষের কাছে এমন কথা শুনলাম।এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে।আমি তোমার কাছে রোজ ক্ষমা চাই আর বলি অপেক্ষা করে যাবো।একদিন তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিবে।কিন্তু সত্যি কি জানো আমি আর এই অপরাধের বোঝা বইতে পারছিনা।আমি বাইরে যতই স্টোং বিহেভ করিনা কেন ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছি।
জানো আমি যখন তোমাকে ছেড়ে যাই তখন কিছুদিন আমি ভালো ছিলাম কিন্তু তার পরেই আমি বুঝতে পারলাম কতবড় ভুল করেছি।তোমার কথাই ঠিক হয়েছিলো আমার রাগ আমার ভালোবাসার কাছে জিতে গেছে।আমার তখন রাগের উপর প্রচন্ড রাগ হলো।এই রাগকেই আর জীবনে রাখবোনা।ট্রিটমেন্ট নিলাম।কাউন্সিলিং করলাম।রাগ কমানোর জন্য যা যা করার দরকার করলাম।সিডনির ফ্যামাস সব ইউগা মাস্টারের শরণাপন্ন হয়েছি।মনের শান্তির জন্য অনেক অনেক কিছু করেছি যা কখনো করিনি।বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি।মনের শান্তির জন্য অদ্ভুৎ সব কাজ শিখেছি,রান্না শিখেছি।
আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।যখন তোমাকে বিয়ে করে আনি তখন আমি তোমার সাথে প্রথম অন্যায় করি।তোমাকে তোমার অধিকার না দিয়ে।তারপর তোমাকে দেখে তোমার প্রেমে পড়ি।কিন্তু তুমি আমাকে পাত্তা দেওনি।আমার ইগো হার্ট হয়।তোমাকে আমার করেই ছাটবো একটা জেদ আমার মাথায় জেকে বসে।আরো একটা অন্যায় করি।তারপর বিয়ে করি।কিন্তু বুঝতে পারি তোমাকে আমি ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া আমি কতটা অচল।কেমন একটা ভয় আমাকে পেয়ে বসে তাই আমি তোমার প্রতিটি পদক্ষেপের উপর নজর রাখি।এর মানে এই নয় আমি তোমাকে সন্দেহ করতাম।আমার তোমার উপর তোমার ভালোবাসার উপর যথেষ্ট বিশ্বাস ছিলো।আমি শুধু চাইতাম কেউ যেন তোমার কোনো ক্ষতি করতে না পারে।তারপর জানি না কেন আমি অমন একটা কাজ করলাম।
আদি নিজের হাত দিয়ে ওয়ালে ঘুষি মারে।

–আদি,,কি করছো?

–কেন করলাম আমি অমন কাজ?সেদিন অমন না করলে আজ সবার লাইফ অন্যরকম হত।তোমার আমার আদিবার সবার।এই পাচ বছরে আমি কতটা কষ্টে ছিলাম কতবার মরেছি সেটা আমিই জানি।তুমি কি বলেছিলে আমি ফূর্তি করে বেরিয়েছি।না সামু আমি ফূর্তি করে বেরাইনি।তিলেতিলে নিজেকে কষ্ট পেতে দেখেছি।ঘুম যেন চিরতরে বিদায় নিয়েছিল,কিছুতেই শান্তি পেতাম না।ছন্নছাড়া জীবন যাপন করছিলাম।ঠিকমতো ঘুম,খাওয়া হয়নি তাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।কেউ ছিলো না আমার পাশে।একা একাই ট্রিটমেন্ট করি।
অনেক একা হয়ে পড়েছিলাম।তুমি তো জানতে আমি তোমার উপর কতটা নির্ভরশীল ছিলাম।আমি কিভাবে পাচটা বছর কাটিয়েছি আমি জানি।তোমার কাছে আদিবা ছিলো আমার কি ছিলো?বেচে থাকার মতো কিছুই ছিলোনা।বেহায়া তাই মরিনি।আমার তো মরে যাওয়া উচিত ছিলো।

আদির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।

সামু বলে, আদি চুপ থাকো।

–না আমাকে বলতে দেও,,,সামু আমি আগে তোমাকে যতটা ভালোবাসতাম এখন তার চেয়ে বেশি ভালোবাসি।তুমি কি আমাকে একটুও ভালোবাসো না?তুমি কি সত্যিই আমাকে ঘৃণা করো।তুমি কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না?আমি কি এতটাই খারাপ এতটাই জঘন্য হয়ে গেছি?আমি এতটাই অপরাধ করে ফেলেছি যে ক্ষমা পাবোনা?
তাহলে এক কাজ করো আমাকে মেরে ফেলো সামু।তোমার এই হাতে আমাকে মেরে ফেলো।আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।
(কাদতে কাদতে)

সামুও আর পারছেনা।এই অভিমান পুষে রাখতে পারছেনা।ওর ও অনেক কষ্ট হচ্ছে।সামু আদির চোখের পানি মুছে দিলো।তারপর আদির মুখ সামুর দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,

–আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে!

–কি,,শর্ত?

–আমাকেও তোমার ক্ষমা করে দিতে হবে।

আদি কিছুক্ষণ সামুর দিকে চেয়ে থেকে সামুকে জড়িয়ে ধরে।দুজনের চোখেই পানি। দুজনেই কাদছে তবে তা সুখের কান্না।

সামু নিজের চোখের পানি মুছে আদির গাল ধরে ওর চোখের পানি মুছে দিলো।
–কান্না তোমাকে মানায়না মি.জিরাফ।

আদি নাক ফুলিয়ে বললো, তুমি আমাকে আবারো জিরাফ বলছো?

–জিরাফকে জিরাফ বলবো না তো কি বলবো?

আদি বাকা হেসে বলে,
–আচ্ছা,তুমি ভুলে গেছো এই জিরাফ কি করতে পারে?তুমি তো বলেছিলে এই জিরাফ রোমা,,,

সামু আদির মুখ চেপে ধরে চোখ বড়বড় করে চাইলো।আদি সামু চেপে ধরা হাতে কিস করলো।সামু হাত সরিয়ে নিলো।ওর হাতে যেন কারেন্টের শকড লেগেছে।সামু ভ্যাবলার মতো চেয়ে রইলো।
আদি সামুর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।দুজনের মধ্যেই উম্মাদনা কাজ করছে ৫বছরের জমানো উন্মাদনা।
.
.
.
.

সামু আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছে।আজ সামু শাড়ি পড়েছে।আদি পিছনে থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো।ওর চুল বেয়ে টিপটিপ করে পানি পড়ছে।

–আদি তোমার চুল দিয়ে পানি পড়ছে চুল মুছে নেও।ঠান্ডা লেগে যাবে।

–লাগুক।এখন আমার সামু আছে।

আদি সামুকে ছেড়ে আলমারি খোলে একটা বক্স এনে সামুর হাতে দিলো।সামুর বক্সটা চিনতে বাকি রইলো না।সামু আদির দিকে চেয়ে আছে।

–আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
আদি বক্স খোলে সামুকে নাকফুল,চেইন,চুরি,
কানের দুল,রিং পড়িয়ে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।
–পারফেক্ট।

সামু,আদিবাকে কোলে নিয়ে আদি নিচে নামছে।নাস্তার টেবিলে নাস্তা করছে।গল্প করছে।হাসিখুশি পারফেক্ট ফ্যামিলি।

.
.

৬মাস পর।আদির বাবা এখন হাটতে পারে।তবে আগের মতো স্পিডে নয়।তবে ধীরে ধীরে।আজ ওদের ফ্যামিলি ফটো তুলা হবে।মেয়েরা ব্লাক শাড়ি,ছেলেরা কালো রঙের স্যুট পড়বে।আদিবার জন্য ব্লাক লং প্রিন্সেস ড্রেস।নিহাদের জন্যও স্যুট নিয়েছে।নিশি খুব এক্সসাইটেড।
নিশি,আদিবা,সামু রেডি হয়ে নিচে নামছে।আদি কালো রঙের স্যুট পরেছে।চুল স্পাইক করা,হাতে ওয়াচ,ব্লাক সু।সব মিলিয়ে ড্যাশিং।সামু আদিকে দেখতে দেখতে নামছে।আদিও সামুকে দেখছে আর চোখ দিয়ে নানান কথা বলছে।সামুর দিকে এগিয়ে যাবে তখনই আদিবা এসে বললো,
–পাপা আমাকে কেমন লাগছে?

–ওরে আমার প্রিন্সেস একদম পরীর মতো লাগছে।

–মাম্মার চেয়ে বেশি সুন্দর?

আদি সামুকে চোখ মেরে বললো,
–মাম্মার চেয়ে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে আমার প্রিন্সেসকে।কারণ আমার প্রিন্সেস ওর মাম্মার চেয়ে সুন্দর।

অবশেষে ফ্যামিলি ফটো তুলা শেষ।ফটো বড় করে বাধিয়ে লিভিং রুমে রেখেছে।

আদিবাকে আদি ঘুম পাড়াচ্ছে কিন্তু আদিবা ঘুমাচ্ছেনা।কিছু একটা ভেবেই যাচ্ছে।সামু ফ্রেশ হয়ে আসতেই আদিবা বললো,
–মাম্মা আমার ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।

সামু আদিবার পাশে বসে।আদিও আগ্রহ নিয়ে আদিবার দিকে চেয়ে আছে। আদিবা সামুকে প্রশ্ন করলো।
–মাম্মা ফুপি বলেছে তোমার পেটে ছোট এইটুকুনি একটা বাবু আছে।সত্যিই কি তোমার পেটে বাবু আছে?
আদি ফিক করে হেসে দিলো।(সামু ৩মাসের প্রেগন্যান্ট)সামু ভ্রু কুচকে আদির দিকে তাকালো তারপর বললো,
–হ্যা মা।তোমার ছোট ভাই কিংবা বোন।

–কি মজা পিহুদের(ফ্রেন্ড) মতো আমাদেরও ছোট একটা বাবু হবে।আমি ওর সাথে খেলবো।ও কবে খেলবে আমার সাথে?

আদি বললো, এর জন্য তোমাকে আরেকটু বড় হতে হবে।তুমি কোলে নিবা না।তাই বড় হতে হবে।আর সেজন্য খেতে হবে।তোমাকে ভালোমতো পড়াশোনা করতে হবে।করবে তো?

–সব করবো।

–তবে এখন তোমাকে ঘুমাতে হবে।

–আচ্ছা।

আদিবা ঘুমিয়ে গেলো।আদি সামুর হাত ধরে বললো,
–তোর শহরের ভালোবাসা আর আমার শহরের ভালোবাসা আজ মিলে আমাদের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।

–আমাদের ভালোবাসা!!

??
“তোর শহরে,কোনো এক প্রহরে

ছুয়ে দিস আমায়

আমি ভালোবেসে রবো পাশে

তোর এক ইশারায়।”

–ফাবিহা_নওশীন

সমাপ্ত…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ