Monday, October 6, 2025







বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৪৩

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৪৩
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
একটা আবছা অন্ধকার রুমে দুইটা চেয়ারে দুজন লোককে বেঁধে রাখা হতেছে। দুজনেই অত্যন্ত ভয়ের মধ্যে আছে। ওরা জানে যে আজ ওদের কী ভয়ংকর পরিণতি হতে পারে। ঐসময় এতোগুলো টাকা দেখে লোভ সামলাতে পারেনি কিন্তু এরপর ওদের সাথে কী হবে সেটাই মাথায় আসেনি ওদের। আর যখন বুঝতে পেরেছে যে কতোবড় ভুল করে ফেলেছে তখনি পালিয়ে এসছে ওখান থেকে। কিন্তু বেশিদূর পালাতে পারেনি তারআগেই ওদের ধরে ফেলেছে আর এখানে নিয়ে এসছে। ওদের চারপাশে অনেকগুলো লোক দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ ঐ রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো আদ্রিয়ান। অন্ধকার স্তব্ধ রুমে আদ্রিয়ানের পায়ের গম্ভীর আওয়াজ স্পষ্ট। আদ্রিয়ানের পায়ের আওয়াজে ঐ দুজনের বুকের ভেতরে আরো তীব্র কম্পন শুরু হলো। দুজনের ভেতরেই আফসোস হচ্ছে যে কেনো টাকার লোভে পরে এই চরম ভুলটা করলো? আদ্রিয়ান হালকা আওয়াজে সিটি বাজাতে বাজাতে ওদের দুজনের সামনে রাখা চেয়ারটায় বসলো। ওর পেছনে আদিব আর আশিস দাঁড়িয়ে আছে। সামনের দুজন ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে পায়ের ওপর পা তুলে বসে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তোদের তো আমার বাড়ির গেইটের কাছে থাকার কথা ছিলো? হঠাৎ রেইলস্টেশনে কেনো গেলি বলতো? তাও বিনা নোটিশে?”

লোকদুটো ভীত চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান নিজের হাত এগিয়ে এনে নখ দেখতে দেখতে বলল,

— ” দেখ কাজে ফাকি দেওয়া আমি মোটেও পছন্দ করিনা সেটাতো জানিস? তো হঠাৎ উধাও কেনো হলি?”

ওরা আর কী বলবে? আদ্রিয়ানের এই ঠান্ডা গলা ওদের রক্তও ঠান্ডা করে দিয়েছে। আদ্রিয়ান ওদের চুপ থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো তারপর আবারো ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” কতো টাকা দিয়েছিলো?”

লোকদুটো এবার ভয়ে কেঁদেই দিলো, একজন ভয়ে ভয়ে বলল,

— ” ভাই আমরা কিছু জানিনা, আমরা তো গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। আপনি ছিলেন না তাই..”

আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে সোজা হয়ে বসে বলল,

— ” তারজন্যে উইথ আউট এনি পার্মিশন তোরা পগার পার হয়ে গেলি তাইতো?”

লোকদুটো খুব ভালোভাবে বুঝে গেছে যে ওদের কোনো কথাতেই কোনো লাভ হবেনা। আদ্রিয়ান সবটাই জানে। আদ্রিয়ান পকেট থেকে গান বের করে কপালে স্লাইড করে স্হির দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” খাওয়ার থালায় ফুটো করলে নতুন থালা জোগাড় করা যায়। কিন্তু যেই ডালে বসে আছিস সেই ডালেই কুড়াল মারলে কী হয় জানিস? সোজা নিচে..আর তারওপর যদি নিচে লাভা থাকে, তাহলে?”

ওরা এবার খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে যে আজ ওদের কপালে ভয়ংকর রকম দুঃখ আছে। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,

— ” স্যার এবারের মতো মাফ করে দিন? এই ভুল আর কোনোদিন হবেনা।”

আদ্রিয়ান হেসে দিলো এবার। কিছুক্ষণ হাসার পর নিজেকে সামলে বলল,

— ” আরে আমি জানি সেটা। আর সুযোগ? হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমি সবাইকেই একটা সুযোগ দেই। কিন্তু ততোক্ষণ, যতক্ষণ ব্যাপারটা শুধু আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আফসোস তোরা যেই ভুলটা করেছিস সেটা এমন একজনকে ঘিরে যাকে নিয়ে কোনোপ্রকার কম্প্রমাইস করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে, আর ক্ষমা তো একেবারেই না।”

বলেই ওরা উঠে দাড়িয়ে বলল,

— ” ভেবেছিলাম তোদের ওপরেই পাঠিয়ে দেবো। কিন্তু পরে ভাবলাম তাতে কী লাভ হবে? শান্তিতে ওপরে চলে যাবি। তারচেয়ে তোদের বাঁচাটাই দুর্বিষহ করে দেই? সেটাই বেটার হবে। আজ তোদের সাথে সেটাই করবো যাতে তোদের দিকে কেউ তাকালে সে তার নিজেরই মালিকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার কথা চিন্তাও করতেই কয়েকবার। আমার জানপাখিকে ওই লোকটার কাছে পৌছে দিতে দুই হাত পেতে টাকা নিয়েছিলি না?”

এটুকু বলেই ওর লোকেদের ডেকে বলল ওদের দুটোকে কেমিক্যাল রুমে নিয়ে গিয়ে এসিড দিয়ে ধীরে ধীরে সময় নিয়ে যাতে ওদের হাত দুটোকে গলিয়ে দেয়। ওরা দুজন আদ্রিয়ানের কাছে অনেক আকুতি মিনতি করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ওদের অনুরোধকে উপেক্ষা করে বেড়িয়ে এসছে ওখান থেকে । আদ্রিয়ান অন্যকোনো ব্যাপার হলে এদের দ্বিতীয় সুযোগ ঠিকি দিতো কিন্তু ব্যাপারটা অনিমাকে নিয়ে তাই ও ক্ষমার কথা চিন্তাও করেনি। ও নিজেই করতো কাজটা কিন্তু ওর এখন অনিমাকে খুজে বের করতে হবে। প্রতিটা মুহূর্ত ওর কাছে খুব গুরত্বপূর্ণ।

____________________

সকালের সূর্যের আলো চোখে পরতেই অনিমা পিটপিট করে চোখ খুললো, মাথা ভীষণ ভার হয়ে আছে চিনচিন ব্যাথা করছে, খুব দুর্বল লাগছে ওর। দুবার উঠে বসতে গিয়েও পরে গেলো। অনেক কষ্টে বেড ধরে উঠে বসলো ও। খুব বেশিই খারাপ লাগছে ওর, মাথা চেপে ধরে চুপ করে বসে আছে। আস্তে আস্তে সব কিছুই মনে পরলো রিকের ওকে তুলে নিয়ে আসা, এরপর ওই ফার্মহাউজে ইনজেকশন দেওয়া এই অবধি মনে আছে ওর। কোনরকমে মাথা উঁচু করে চারপাশটা দেখলো। ওকে বড় একটা রুমে রাখা হয়েছে, পুরো রুমটাই হোয়াইট পেন্ট করা, সবকিছুই অন্যরকম, একটু বেশিই মর্ডান টাইপ। রিক ওকে আবার কোথায় নিয়ে এলো? এসব ভেবে মাথা ব্যাথা আরো বেড়ে যাচ্ছে ওর। আস্তে করে বেড থেকে নেমে ধীর পায়ে ব্যালকনিতে গিয়ে রেলিং ধরে চারপাশে তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে শুধু পানি আর পানি, দেখে মনে হচ্ছে সমুদ্র আর এটা যে বঙ্গোপসাগর নয় সেটা খুব ভালোকরেই বুঝতে পারছে। এটা একটা দ্বীপ সেটাও বেশ বুঝতে পারছে। কাঁদার শক্তির নেই ওর মধ্যে, দাঁড়িয়ে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে ওর জন্যে। কোনোমতে দেয়াল ধরে ভেতরে গিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো রিক দেয়ালে হেলাম দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে। অনিমা ওকে দেখে দাঁড়িয়ে যেতেই রিক সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” দেখা শেষ যে কোথায় আছো? পছন্দ হয়েছে তো জায়গাটা? ”

অনিমা মাথা নিচু করে ফেললো, চোখ দুটো ছলছল করছে যেনো এক্ষুনি জল গড়িয়ে পরবে। রিক অনিমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই অনিমা ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করে পেছাতে গিয়ে পরে যেতে নিলো, রিক ধরতে যাবে তার আগেই ও নিজেকে টেবিল ধরে সামলে নিলো। রিক হেসে বলল,

— ” আরে এতো ভয় কেনো পাচ্ছো বলোতো? মারছি আমি তোমাকে?”

বলে অনিমাকে ধরল। অনিমা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই রিক ওকে ধমক দিয়ে বলল,

— ” ঐ একদম তেজ দেখাবেনা আমাকে। আমি তোমার কী হাল করতে পারি সেটা খুব ভালো করেই জানো তুমি।”

অনিমা কেঁদে দিয়ে বলল,

— ” যেতে দিন আমাকে। ”

অনিমার কথা শুনে রিক চোখ বন্ধ একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে বলল,

— ” দেখো এই মুহূর্তে তোমার গায়ে হাত তোলার ইচ্ছে আমার একদমি নেই। তাই বাধ্য করোনা আমাকে।”

অনিমাকে ধরে বেডে বসিয়ে বলল,

— ” লম্বা সময় ধরে কিছু খাওয়া হয়নি তোমার তাই এতো দুর্বল লাগছে। আমি খাবার আনাচ্ছি চুপচাপ খেয়ে নেবে।”

বলেই কাউকে কল করে খাবার আনতে বলল। অনিমা কিছু না বলে হাটু গুটিয়ে চুপচাপ বসে আছে, খুব জোরে কাঁদোতে ইচ্ছে করছে ওর কিন্তু রিকের ভয়ে কাঁদতেও পারছেনা। কিছুক্ষণ পর অনিমা রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কোথায় আছি আমরা?”

রিক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে অনিমার দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল,

— ” সেটা তোমার জানার কোনো প্রয়োজন নেই। বেশি কথা বললে কথা বলার মতো অবস্হাতেই রাখবোনা। সো কোয়াইট।”

খাবার আসার পর রিক প্লেটটা অনিমার সামনে রেখে বলল,

— ” ফিনিস ইট।”

এই মুহূর্তে ভীষণ খিদে পেয়েছে অনিমার। কতোক্ষণ আগে কিছু খেয়েছে নিজেই জানেনা। কিন্তু তবুও এখন খাওয়ার ইচ্ছে নেই ওর। সবকিছুই বিষ মনে হচ্ছে ওর কাছে তাই নিচু কন্ঠে বলল,

— ” খিদে নেই আমার।”

রিক এবার অনিমার মুখ চেপে ধরে প্লেট থেকে খাবার নিয়ে ওর মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” একটা কথা জেনো দ্বিতীয়বার বলতে না হয় আমাকে। আমার প্রতিটা ওয়ার্ডকে ওর্ডার মনে করবে গট ইট?”

অনিমা মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কান্না করছে। মুখের খাবারটা গেলার শক্তিও নেই ওর মধ্যে। বারবার আদ্রিয়ানের কথা মনে পরছে। ও খেতে না চাইলে আদ্রিয়ানও জোর করেই খাওয়াতো ওকে কিন্তু দুজনের জোর করার পদ্ধতি কতোটা ভিন্ন। রিক ধমক দিয়ে বলল,

— ” মুখের টা শেষ করো।”

রিকের ধমকে কেঁপে উঠলো অনিমা কান্না চেপে রেখে অনেক কষ্টে গিললো খাবারটা। রিক প্লেটটা হাতে নিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল,

— ” পুরোটা শেষ করবে।”

অনিমাকে খাইয়ে রিক উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” একদম ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ বসে থাকবে এখানে। ঐ আদ্রিয়ানকে মারার আগে পর্যন্ত এখানেই থাকবে তুমি।”

আদ্রিয়ানকে মারার কথা শুনে শান্ত চোখে রিকের দিকে তাকালো অনিমা। তারপর ধীর কন্ঠে বলল,

— ” আদ্রিয়ানকে মারা আপনার সাধ্যের মধ্যে নেই।”

রিক বেশ রেগে গেলো অনিমার কথায়, ও রেগে অনিমার হাত মুচড়ে ধরে রাগী কন্ঠে বলল,

— ” এতো বিশ্বাস? কদিন আগেও তো ওর প্রাণের জন্যে আমার কাছে হাত জোর করছিলে? আজ কী হলো?”

অনিমা হাতে বেশ ব্যাথা লাগছে ঠোট কামড়ে ধরে সেই ব্যাথা সহ্য করছে ও। কান্নাজরিত কন্ঠেই রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যদি আপনার সত্যি ক্ষমতা থাকতো তো ওনার উপস্হিতিতেই আমাকে ওনার কাছ থেকে নিয়ে আসতেন। কিন্তু আপনি ওনার না থাকার সুযোগ নিয়ে মিথ্যে নাটক সাজিয়ে আমাকে নিয়ে এসছেন। আগে না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি যে ওনাকে মারা তো দূর সামান্য কোনো ক্ষতি করাও আপনার সাধ্যে নেই।”

রিক এবার মারাত্বক রেগে গেলো, রেগে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো অনিমাকে। খাটের কর্ণারে গিয়ে লাগার কারণে কপালের সাইড দিয়েও অনেকটা কেটে গেলো অনিমার । রিক সেদিকে খেয়াল করেনি ধাক্কা দিয়েই হনহন করে বেড়িয়ে গেছে রুম থেকে। অনিমার মাথা ধরে উঠে বসে হাটুতে মুখ গুজে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। এমনিতেই মাথা ব্যাথা করছে ওর তারওপর ব্যাথা পাওয়ায় আরো কষ্ট হচ্ছে।

___________________

রাতে আদ্রিয়ান টেবিলে ল্যাপটপ রেখে ওটাতে কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করছে। হঠাৎ আদিব এলো। আদিবের উপস্থিতি টের পেয়ে আদ্রিয়ান ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলল,

— ” কী খবর?”

আদিব চেয়ারে বসতে বসতে বললো,

— ” সবকটা এয়ারলাইন চেক করা হয়ে গেছে কিন্তু সবাই না করছে।”

আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।”

আদিব অবাক হয়ে বলল,

— ” এখন কী করবো? এতোগুলো এয়ার লাইনের সবাইকে তো আর চাপ দেওয়া যাবে না?”

আদ্রিয়ান ল্যাপটপ টা বন্ধ করে বলল,

— ” আগে এটা জানতে হবে যে কোনো এয়ারপোর্ট থেকে ওরা গেছে তারপর বাকিটা বার করা আমার বা হাতের কাজ।”

আদিব একটু ভেবে বললো,

— ” আচ্ছা কবির শেখ এর নাম্বার ট্রাক করলে কেমন হয়?”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” লাভ নেই। খুব চালাক মানুষ উনি। রিকের সাথে উনি ওনার ইউসিয়াল নাম্বার দিয়ে কথা বলবেন না। তুই চলে যা অনেক রাত হয়েছে।”

আদিব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে থেকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” একটা কথা বলবো?”

অাদ্রিয়ান একটা হাই তুলে বললো,

— ” হুম?”

আদিব ইতস্তত কন্ঠে বলল,

— ” আজকে একটু ঘুমিয়ে নে ভাই। টানা দুদিন ধরে চোখের পাতা এক করিস নি।”

আদ্রিয়ান আদিবের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ঘুম আসবেনা এখন।”

আদিব ভ্রু কুচকে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” কাম অন আদ্রিয়ান। তোর বডিটাও হিউম্যান বডি। এরকম করলে অসুস্হ হয়ে পরবি। যদি সুস্হই না থাকিস তো অনিকে খুজবি কীকরে?”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” আচ্ছা চেষ্টা করবো। তুই যা এখন। রাইমা একা আছে। এইসময় ওকে সময় দেওয়া উচিত তোর।”

আদিব চলে যেতেই আদ্রিয়ান উঠে ব্যালকনিতে চলে গেলো। রেলিং ধরে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। আর ওর ঐ শূণ্যদৃষ্টির চোখ থেকে এক ফোটা জল ধীর গতিতে গড়িয়ে পরলো। সবার সামনে স্ট্রং থাকলেও ভেতর দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছে ও। মেয়েটা কোথায় আছে, কীভাবে আছে, কী হচ্ছে ওর সাথে কিছুই বুঝতে পারছেনা ও। খুব বেশি মিস করছে ও ওর জানপাখিকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ান ভাঙা গলায় বলল,

— ” আ’ম সরি মিস্টার সিনিয়র। আমি জানি আমি তোমাকে দ্বিতীয়বার নিরাশ করেছি। তোমার মামনীকে ঠিকভাবে আগলে রাখতে পারিনি আমি। শুরুতে আমার একটা ভুলের কারণে চারটা বছর মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে।আজ আরেকটা ছোট্ট ভুলের কারণে ওকে আবারও বিপদে পরতে হলো। তুমি ঠিক মানুষকে দায়িত্ব দিয়ে যেতে পারোনি। কিন্তু কথা যখন দিয়েছি তখন আমি ঠিক তোমার মেয়েকে সুরক্ষিত অবস্হায় নিয়ে আসবো। সাত বছর আগে ও শুধু আমার দায়িত্ব ছিলো, কিন্তু আজ ও আমার ভালোবাসাও। আমি তোমার মেয়ের কিচ্ছু হতে দেবোনা, কিচ্ছু না। ”

____________________

অনিমা খাটে মাথা চেপে ধরে বসে আছে। মাথা ভিষণ ব্যাথা করছে ওর, ভার হয়ে আসছে সকাল থেকেই। সবকিছু অসহ্য লাগছে ওর কাছে। সবকিছু ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করছে ওর এই মুহূর্তে। রিক খাবার নিয়ে অনিমার রুমে এসে অনিমাকে ওভাবে মাথা চেপে ধরে ছটফট করতে দেখে। খাবারটা টি-টেবিলে রেখে ওর সামনে বসে ও মাথায় হাত রেখে বলল,

— ” এরকম করছো কেনো? মাথা ব্যাথা করছে?”

অনিমা হাত ঝারা দিয়ে সরিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বলল,

— ” জাস্ট লিভ মি এলোন।”

রিক অনেকটা অবাক হলো। যেই মেয়েটা ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও ভয় পায় সেই মেয়েটার হঠাৎ এইভাবে কথা বলা সত্যিই স্বাভাবিক নয়। তাছাড়া এখন এমন কিছুই করেনি ও যার জন্যে এরকম করবে। হঠাৎ এই ওভার রিয়াক্ট করা দেখে রিকের মনে প্রশ্ন উঠলেও ব্যবহারটা ওর ইগোতে লাগলো। রিক ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

— ” সাহস কীকরে হলো আমার সাথে এভাবে কথা বলার?”

অনিমা কিছু না বলে হাত সরিয়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। রিক ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো অনিমার দিকে। তারপর প্লেট হাতে নিয়ে বলল,

— ” হা করো।”

অনিমা রিকের দিকে না তাকিয়েই বলল,

—” খাবোনা।”

রিক অনিমার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” বেশি কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নাও।”

অনিমা এবার ধাক্কা দিয়ে প্লেট টাই ফেলে দিলো। এটুকুই যথেষ্ট ছিলো রিকের সেই ভয়ংকর রাগ ওঠানোর জন্যে। রিক রক্তবর্ণ চোখে অনিমার দিকে তাকালো অনিমা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। রিক ওর চুলের মুঠি ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো। অনিমা মুখ থুবড়ে বিছানায় পরে গেলো। ওর ঠোঁটের কোণ এমনিতেই কাটা ছিলো এই থাপ্পড়ে নতুন করে না কাটলেও পুরোনো ক্ষত থেকে রক্ত বেড়িয়ে গেলো। রিক ওর হাত ধরে টেনে তুলে গাল চেপে ধরে বলল,

— ” যতই ভাবি যে তোমার গায়ে হাত তুলবো না কিন্তু তুমি তো চড় থাপ্পড় ছাড়া শুধরাবার মেয়েই নও। কিছু না বললেই সাহস বেড়ে যায় তাইনা?”

অনিমা কান্নাজরিত চোখে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। রিক ওকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে বলল,

— ” তৈরী খাবার সামনে পাচ্ছিলে বলে মাথায় চড়ে গেছো রাইট? এবার তুমি তখনি খাবার পাবে যখন অামার কাছে খাবার ভীক্ষা চাইবে। তার আগে খাবার তো ছাড়ো একফোটা পানিও পাবেনা তুমি।”

এটুকু বলে রুম থেকে বেড়িয়ে শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে চলে গেলো রিক। অনিমা বালিশে মুখ গুজে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো। আশেপাশের বাতাসও ওর কাছে বিষাক্ত লাগছে । ও কী করছে নিজেই বুঝতে পারছেনা। মাথায় অসহ্য রকম যন্ত্রণা হচ্ছে। ও নিজেও জানেনা এই যন্ত্রণার শেষ কোথায়?

#চলবে…

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ