Monday, October 6, 2025







“মেঘনাদ”পর্ব ১০

“মেঘনাদ”পর্ব ১০

আলিয়া সারারাত ছটফট করেছে। খাওয়া-দাওয়া সারার পর সে আবারও ঘুমায়। কারণ তার কখনও পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। তার চোখের নিচের কালচে অংশটাই এর দৃষ্টান্ত। সে রাতের বেলায় ঘুমে বেশি ছটফট করে। আমি সারাদিন হলে, রুমে থাকলেও রাতটা বেলকনিতেই রইলাম। আমি এপাশ থেকে তাকে দেখছি ছটফট করতে। সে কখনও ধস্তাধস্তি করছে। কখনও বা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অদ্ভুত তার এই রোগটা। এটা আদৌ মানসিক? সে একসময় কাল সন্ধ্যার মতো করেই সজোরে চিৎকার করে ওঠল। আমি তার রুমে যেতে বাধ্য হলাম। সে ঘুমন্ত অবস্থায়ই চিৎকারটা করেছে। এখন সে শান্ত। তার পাশে গিয়ে দেখলাম, এইমাত্র কয়েক ফোঁটা পানি তার দু’চোখ বেয়ে পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে। তার পাশে বসে পানিগুলো মুছে দিলাম। আমি ভুল ছিলাম। সে ঘুমে অচেতনই আছে। আমার গন্ধটা খেয়াল করার মতো সেন্স তার নেই। আমি একইভাবে বসে রইলাম। সে মাঝে মাঝে ঠোঁট কামড়াচ্ছে, ঈষৎ নাড়াচ্ছে, যেন কারও সাথে কথা বলছে। তার গন্ধটা এখনও আগের মতোই। এতোই তীব্র যে, ঘ্রাণ নিতে ইচ্ছে হয় না। এটা কোনো মানুষের গন্ধ হতে পারে না! আমি তার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে তার পাশে দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লাম। তার মুখটা আমার দিকে বাঁকালো। আলিয়া খুব সুন্দর। তার এই ভয়ংকর অবস্থায়ও তার চেহারার বিশেষত্বটা আমি দেখতে পাচ্ছি। যদিও ওর চোখের নিচে ছাইবর্ণের ডার্ক সার্কেল, যদিও লাল ঠোঁটদুটো শুকনো পাতার মতোই শুকনো এবং রঙহীন, যদিও ওর রঙটা ফ্যাকাসে, আমি স্পষ্ট আলিয়াকে দেখতে পাচ্ছি, খুব কাছ থেকে। সে যেভাবে পাশ ফিরে থেকেছে, যেভাবে নিচের ঠোঁট কামড়ে রেখেছে, কপাল কিছুটা কুঁচকিয়ে রেখেছে, সর্বোপরি ব্যথার সত্ত্বেও শান্তভাবে ঘুমাচ্ছে; তার মতো কেউই হতে পারে না। মাঝে মাঝে বোধ হয়, আমার কারণেও সে কষ্ট পাচ্ছে। সে তা বুঝতে দেয় না। আমি চলে যেতে চেয়েও পারি না। কেননা সে বুঝতে দেয় না মানেই সে চায় আমি যেন এখানে থাকি, তার খেয়াল রাখি। কেই বা আছে তার খেয়াল রাখার? আচ্ছা, সে কি এভাবেই থাকবে? তার স্বাস্থ্যের তো উন্নতি হচ্ছে না। বরং দিনদিন খারাপ হয়েই চলেছে। কিছু একটা তো করতে হবে। আঙ্কেলকে বলেছিলাম, ওকে ঠিক করারও চেষ্টা করব। তবে কেন কেবল তার দেখাশোনাই করে যাচ্ছি? কে জানে এই রোগের প্রতিকার? ওঝা? না, আমি সাবরিনাদের সাথে কথা বলে দেখতে পারি। ওহহো.. আদিল। তিনি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধিধারী। যাবজ্জীবনে আবিরের মতোই ছিলেন। যা তাঁর পরবর্তী জীবনে তাঁর বিশেষ শক্তি হিসেবে কাজ করছে। আমি শুনেছি, আমাদের জগতে তার আবির্ভাবের পর পৃথিবীর বৈচিত্র্য সম্বন্ধে অনেকেই অনেককিছু জানতে পেরেছে। আমাদের ক্রোমোজোম সংখ্যা বেশি হওয়ার অনুমানটা তিনিই তো সর্বপ্রথম করেছেন। মা জানিয়েছেন, তিনি অনুমান করেছেন, আমাদের শারীরিক কার্যকলাপ মানুষের মতো হুবহু না হলেও মানুষজাতিতে তাদের প্রক্রিয়াগুলো যেরূপ স্বাভাবিক, আমাদেরও তাই। আমাদের মাংস, প্রক্রিয়া একই না হলেও কিছু কার্যাদি তাদের সাথে একই হতে পারে। জানিয়েছেন, এমন আরও সম্ভাব্য তত্ত্ব। তাই তাঁর আমাদের মতো সূত্রীয় শক্তি না থাকলেও তাঁকে পূর্বপুরুষ বলে গণ্য করা হচ্ছে। আদিলদের আলিয়ার ব্যাপারটা আগেই জানানো উচিত ছিল। আদিল…
যখন চোখ খুললাম, তখন সামনের দেয়ালের ঘড়িটাই চোখে পড়ল। আমি বারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি! কবে ঘুমিয়ে পড়েছি? আমার গায়ে কম্বল। আলিয়ার বিছানায়ই ঘুমিয়ে পড়েছি!
আমি উঠে হলরুমে গেলাম, ‘সরি আলিয়া, তোমার পাশে ঘুমিয়ে পড়লাম।’

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

‘ইটস ওকে।’
‘তুমি মাইন্ড করোনি?’
‘কেন?’
‘না মানে মানুষ তো এভাবে ছেলে.. মেয়ে.. শোয়া..’
‘আমি মাইন্ড করি না। লজিক্যালি পাশে যেভাবে থাকো, সেভাবেই তো শুলে!’
‘জানো? তুমি.. কালরাত বেশি কষ্ট পেয়েছ। তোমাকে দেখতে দেখতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়লাম।’
‘তুমি এতটা দয়ালু কেন বলো তো?’
‘তুমিই একটা মানুষ, যে আমার সত্য জানে, যে আমার বন্ধুর চেয়ে কম নয়। শুনো, আদিল তো তীক্ষ্ণ ক্ষমতাধারী। সে বোধ হয় কিছু আঁচ করতে পারবে। আমি তাকে এখানে আনব। আর কতদিন এভাবে চলতে থাকবে!’
তার জন্য রান্না সেরে আমি বেরিয়ে জঙ্গলের বাসায় গেলাম। সাবিলা বাসায় ছিল। আমরা আমাদের জাতের মানুষের মস্তিষ্কে যেভাবে কমিউনিকেট করি, সেভাবেই সে আদিলকে আসতে বলল। আমি তাঁকে নিয়ে ফিরে এলাম।
আলিয়া নিশ্চুপভাবে শুয়েছিল। তার চোখেমুখে কোনো আশা নেই। তিনি তাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন। আমি তাঁরই সাথে কথাটা শোনার আগেই আতঙ্কিত হলাম। তিনি বললেন, ‘she has been possessed.’
কবে হলো? কীভাবে? আমি ধরতে পারিনি কেন? তার লক্ষণগুলো তো অনেক আগে থেকেই দেখেছি। এসবই কি তার মাঝে অন্যকিছু ভর করায় হয়েছিল? আলিয়ার অবস্থা আরও গুরুতর।
আমি সাহস করে তার পাশে বসলাম। অনেকদিন পর! আমি তার গালে বিকর্ষণ সত্ত্বেও হাত দিয়ে বললাম, ‘নিজেকে রোগী ভেবো না। সবই ঠিক হয়ে যাবে।’
আলিয়া কোনোকিছু করল না। মুখ চেপে বসে রইল। সে হঠাৎ মুখ ফুলিয়ে ফেলল, যেন বমি আসছে। আহ্! আমার পাশে বসার কারণেই হয়তো আনইজি ফিল করছে! নিজেকে আবারও ধিক্কার দিলাম।
আমি চোখকে বড় বড় করে বললাম, ‘কী হয়েছে আলিয়া?’
সে দাঁতের ফাঁক দিয়ে বলল, ‘বমি আসছে।’
সে তাড়াতাড়ি বাথরুমে চলে গেল। আমি আর ওর পাশে যাওয়ার সাহস পেলাম না। তবে খেয়াল করলাম, আদিল তার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর মাইন্ড পড়ারও ইচ্ছা নেই।
তবে তিনি নিজ মুখে আমাকে বললেন, ‘দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখ, যাতে আলিয়া পালাতে না পারে।’ সে পালাতে চাইবে কেন?
আমি সাত-পাঁচ না ভেবে তাই করলাম। আদিল আবিরদের ফোন করলেন। ভাগ্যিস, আজ শুক্রবার। আমরা বেলকনিতে বসে পড়লাম। কারণ সে এখন আমাদের তার পাশেই নয়, তার রুমেও সইতে পারছে না। আলিয়াকে দেখে স্পষ্ট বুঝছি, সে নিজেকে ভয় পেতে শুরু করেছে। কারণ, দেখছি সে বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে ওগলোকে হাত দিয়ে বাহুর সাথে জড়িয়ে ধরে রেখে মুখ মলিন করে গুঁজে বসে রয়েছে।
আদিল আমাকে বললেন, ‘ও কি এখন তোমাকে ছুঁতে পারে না?’
‘আমি পাশেও থাকতে পারি না। দেখলেনই তো, বমি এলো।’
‘সে তোমাকে বাঁচাচ্ছিল। তার মুখে রক্ত এসেছে। ওর ভেতরের ছায়াটা ওকে ব্যথা দিচ্ছে।’
সে এমনটা করেছে আমার জন্য? আমার সাথে যাতে খারাপ ব্যবহার না করতে হয়, তাই নিজেকেই কষ্ট দিয়েছে? তবে কি সে আমাকে কেবল পছন্দই করে না, ভালোবাসতে শুরু করেছে? কেয়ার করলাম না, আদিল কথাগুলো বুঝতে পারছেন। কথা হলো, আলিয়া আমাকে আগে বুঝতে দেয়নি কেন? সে এতোটা ভালো কেন? আমি আহতের মতো বললাম, ‘হয়তো আমাদের গন্ধটার কারণেই হয়েছে।’
‘ওর অবস্থা ক্রিটিক্যাল হচ্ছে। নিজেকে ও ক্ষতি করছে। তার পাশে সবসময় শক্তিশালী একজনকে থাকতে হবে, যে তাকে রক্ষা করবে।’
আবির বলল, ‘আমি কি পারব?’
‘না। তুমি ভুলো না, তোমার কাছ থেকেও আমার মতোই সুগন্ধ বেরুয়।’
সজীব, আলিয়ার আইসিটির টিউটর, আবিরের বন্ধু, তাদের বাসায় থাকে এবং যে কিনা শক্তিশালী একটা মানুষ। তার পেশিবহুল বাহু শার্টের ওপর থেকেই বুঝা যায়। আদিল তাকে আলিয়ার পাশে থাকতে বললেন। একথায় আমি বললাম, ‘তার গন্ধটা সজীব সইতে পারবে না।’
সজীব বলল, ‘আমি ম্যানেজ করব। একবার পরীক্ষা করে দেখা যাক।’
সজীব আর আদিল রুমে আলিয়ার সামনে গেল। আদিল পেছনে শিল্ডের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল সজীবকে ধরার জন্য। সজীব তার কাছে গিয়ে বলল, ‘আলিয়া, তুমি অনেক ভালো একটা স্টুডেন্ট। তুমি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। নিজেকে এভাবে শাস্তি দিও না।’
‘অন্য কাউকেও আঘাত করতে পারব না..’
কথাটা শেষ না হতেই সে সজীবকে ধাক্কা দিতে সে তার বাহু ধরল। সজীব তিন-চার সেকেন্ডের বেশি তাকে অধিক বল প্রয়োগ করেও ধরে রাখতে পারল না। সে ধাক্কাটা খেলই। তৎক্ষণাৎ আদিল গিয়ে তাকে ধরে ফেলল। সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল, ‘কেউই আমাকে বাঁচাতে পারবে না।’ প্লিজ বলিয়ো না একথা।
আদিল আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সজীবকে নিয়ে বেলকনিতে চলে এলেন। থাইগ্লাসের দরজা তিনি বেঁধে দিলেন। আমি মিনতি করলাম, ‘আলিয়া, প্লিজ কেঁদো না।’
সে মরিয়া হয়ে বুঝাল, ‘আমি আমার মায়ের মতো করেই মরে যাব।’
আদিল বলল, ‘তোমার মায়ের কী হয়েছিল?’
‘আমার এখন যে অবস্থাটি হচ্ছে, তা মায়েরও হয়েছিল। তিনি শেষের দিকে আমাকে তাঁর কাছেও ঘেঁষতে দিতেন না, যাতে তিনি আমাকে আঘাত করতে না পারেন। আমার লক্ষণগুলো তাঁর কাছেও দেখেছিলাম। তিনি কাউকে কিছু করতে না পেরে নিজেই সব আঘাত সইয়ে নিতেন। এভাবে শেষ পর্যায়ে ছটফট করে মারা গেলেন।’
‘তোমারগুলো কবে থেকে শুরু হয়েছে?’
‘যদি দুঃস্বপ্নকেও আমার অস্বাভাবিকতার লিস্টে রাখি, তবে মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই আমি দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করি।’
‘তাহলে তোমার মায়ের ওপরও খারাপ কিছু একটার ছায়া ছিল। আমার লাগছে, তাকে মারার পর ওটা তোমাকে ধরেছে।’ তিনি আগের প্রসঙ্গে আমাদের বললেন, ‘যেটুকু ভেবেছি, তারচেয়ে অধিক শক্তি আলিয়ার। আমি আর ধ্রুব তাকে হ্যান্ডেল করতে পারব। কিন্তু আমরা তার আশেপাশে থাকলে সে আমাদের স্থলে নিজেকেই ক্ষতি করবে। কারণ সে আমাদের ছুঁতে পারে না। যাদের ছুঁতে পারে, তাদের আক্রমণ করে। সজীব আর আবির মানুষ। আলিয়ার শক্তি, গন্ধ এসবের বিরুদ্ধে লড়তে পারবে না। কী করা যায়!’
সবাই আবারও চিন্তিত হলাম। হঠাৎ আদিল বললেন, ‘আলিয়া, তুমি কার নিকট বেশি ঠিক থাকো? এই যাবৎ কাকে তুমি আক্রমণ করতে চাওনি?’ তাঁর বুদ্ধি, চিন্তাধারা, কণ্ঠ এবং চেহারা আবিরেরই মতো; এক্সেপ্ট দেয়ার পারসোনালিটি।
তার তেমন কিছু মনে পড়ছে না, ‘নাদিয়া (আরিয়ান স্যারের স্ত্রী) আর নাঈমার (সজীব স্যারের স্ত্রী) সাথে তেমনটা থাকিনি। আরিয়ান স্যারও আমার নিকটে তেমন আসেননি। তবে… আমার লাগছে সাবরিনা আর সাবিলার মধ্যে যেকোনো একজনকে।’
‘গ্রেট,’ আদিল বললেন, ‘নাঈমাদের দেখার জন্য আরিয়ান বাসায় আছে। আমি সাবরিনা আর সাবিলাকে আসতে বলছি।’
আমি যেভাবে মায়ের সাথে যোগাযোগ করি, তিনি সেভাবেই সাবরিনাদের সাথে করলেন। পার্থক্য হলো, তাঁর হাতে সম্পূর্ণ একটা ব্যান্ড আছে, আমার কেবল মায়ের ব্যান্ডের সামান্য এক সুতা। তার পরিবর্তে তিনি তার হাতের কালো ব্যান্ডটি ধরলেন।
পাঁচ মিনিট পর ডানা ঝাপটিয়ে বেলকনিতে সাবরিনা আর সাবিলা নামল। সাবিলাকে এই প্রথম ওড়তে দেখেছি। আমার ধারণা মতোই তার ডানা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এসেছে। পরীদের মতো পায়ের শেষ অবধি নয়। আলিয়া আর সাবিলা একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিল, আদিল তাদেরকে থামতে নির্দেশ দিলেন। আলিয়া বুঝে আগের জায়গায় বসে পড়ল।
তারা দু’জনকে আমাদের মাইন্ডের দ্বারাই কথাগুলো জানালাম। সর্বপ্রথম সাবরিনা দরজা খুলে রুমে ঢুকলেন, ‘দেখি, নাকে শ্বাস নিয়ে দেখ।’
সে নাকে শ্বাস নিয়ে বিব্রত বোধ করতে শুরু করল। সে হিসহিস করে তেড়ে আক্রমণ করতে সাবরিনার কাছে চলে গেল। মুহূর্তেই সাবরিনা ডানাকে দৃশ্যমান করে আলিয়ার নাগাল থেকে উপরে ওঠে যান। তিনি নিজেকে রক্ষা করে উড়ন্ত অবস্থায় দরজা খুলে বেলকনিতে এসে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আলিয়া ওখান থেক তাকে ‘সরি’ বলল।
সাবরিনা হেসে ক্ষমা করে দেন। এইবার সাবিলা গেল। সে বলল, ‘যাস্ট পরীক্ষার জন্যই ভাবো, আমি অন্য কেউ, যে তোমার পাশে থাকার যোগ্য কিনা দেখতে এসেছি।’
সাহস করে সে শ্বাস নিল। কয়েকটা সেকেন্ড পার হলো। আলিয়া তার সুগন্ধটা উপভোগ করে চলেছে। আমরা বিস্ময়ে সকলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আলিয়া আর সাবিলা পরস্পরকে জড়িয়েও ধরল।
‘আই মিস ইউ সো মাচ সাবিলা।’
‘মিস ইউ টু। লাভ ইউ আলিয়া, আমার বোন।’ সে ততার কপালে চুমু খেল। আলিয়ার চোখের পানি মুছে দিলো। বিরস মুখে সে বলল, ‘তুমি তো দেখি সম্পূর্ণই পালটে গেছ। চোখ কোটরে ঢুকে গেল, মুখ শুকিয়ে গেল, চোখের নিচে কালি পড়ল। চোখ লালও হয়ে গেছে। ওহ্, আলিয়া।’ সে আবারও তাকে জড়িয়ে ধরল।
‘ব্যস, যতদিন সুস্থ হবি না ততদিন আমিই এখানে থেকে তোর দেখাশোনা করব। কিচ্ছু হবে না আমার আলিয়ার।’
‘কিন্তু কতদিন? কতদিন সবাই আমার দেখাশোনা করতে থাকবে?’
সকলে নিশ্চুপ রইল। আদিল বলে উঠলেন, ‘ও ঠিকই বলেছে। এভাবে তাকে কেবলই রক্ষা করার মানে হয় না। তাকে পুরোপুরি ঠিক করা উচিত। কারণ সাবিলা যতই থাকুক, তার ভেতরের জন চুপচাপ থাকবে না। সে অনেক খারাপ।’
আদিলরা চলে গেল। আমার আর আলিয়ার সাথে আবির আর সাবিলাই রয়ে গেছে। সাবিলা যেভাবে আলিয়ার পাশাপাশি থাকতে পারছে, আমি সেভাবে পারছি না। তবু অন্তত তার দেখাশোনা করে যাচ্ছি। সে সারারাত সাবিলাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে, তাকে হয়তো অনেক মিস করেছে। সে একটু কমই ছটফট করেছে। মানুষের মাঝে একটা বৈচিত্র্য হলো, তারা মনের মানুষের নিকট থাকলে অনেক বেদনাই প্রশম হয়ে যায়।
বিকেল পাঁচটায় আলিয়া উঠলে তার জন্য খাবার পাঠালাম। তার চাহিদা বাড়ছে। সে চারজন মানুষের খাবার একাই খায়। সে অভুক্তের ন্যায় গপাগপ খেয়ে গেল। আমি বেলকনিতে বসে চেয়ে রইলাম। যখন সন্ধ্যা গড়ায়, বাকিরা আলিয়াকে দেখতে চলে আসে।
সে আমাকে বলল, ‘একটু রেস্ট নাও না.. কতক্ষণ একভাবেই ওখানে বসে থাকবে?’
সাবিলা বলল, ‘সে হয়তো ছোট থেকেই এমন, নড়নচড়নহীন।’ হা হা.. এইজন্যই মা পৃথিবীতে রেখে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, আমি যাতে সবার কাছে নিজেকে ধ্রুব বলে পরিচয় দিই।
‘তবু… আচ্ছা, ধ্রুব, তুমি কি তোমার আঙুলের সুতাটি দ্বারা কারও সাথে যোগাযোগ কর? মানে বিজলি.. ‘ আলিয়া জানতে চাইল।
‘নাহ্, কেবল মায়ের সাথে করি। এটি তার ব্যান্ডেরই অংশ। আমি পাওয়ার পর থেকে এতে আমার হৃদস্পন্দনও জুড়েছে। তোমাকে পরানোর পর তুমিও বাবা-মা এবং… আমার সাথে কানেক্টেড ছিলে।’ আমি.. আকাশের তিনটি প্রাণীর সাথে কানেক্টেড? ভাবতেই পুলকিত হলাম। ‘সুতাটি ছোট হওয়ায় তুমি তাদের হৃদস্পন্দন অনুভব করনি। তবে তারা করেছে।’
‘কিহ্!’
‘মা’কে অনেক আগেই জানিয়েছিলাম, আমাদের বন্ধুত্বের কথা। এও জানিয়েছি, তুমি আমার সত্য ধীরে ধীরে জেনে ফেলছ। এরপর আমি তোমার নিকটে আসতে লাগলাম। তোমার চিন্তা শুরু হলো। পৃথিবীতে আসার পর আমার প্রথম লং লাস্টিং ফ্রেন্ড একমাত্র তুমিই। তাই আমার সুতাটি থেকে কিছু অংশ দিয়ে তোমার সাথে কানেক্টেড থাকতাম।’ আমার আচমকা মনে পড়ল, ‘আসিয়া এখানে আসে না কেন?’
‘সে আসলে মনে করে, আমি তাকে ধাক্কা দেবো। আমি শুরুতে ধাক্কা দেওয়ার পর সে আর কখনও আমার পাশে আসেনি। বাবার ওপর বারবার আক্রমণ করতে চাওয়ায় আর কখনও কথাও বলেনি। গতবার এসেছিল। তবে আমার রোগটা ধরতে না পারায় চলে গেছে।’
সাবিলা আর আলিয়াকে রুমে রেখে বাকিরা যখন বেলকনিতে ভিড় জমিয়ে কথাবার্তা বলছিলাম, তখন আচমকা সকলে একসাথে ঠান্ডা অনুভব করলাম। রাত বাড়ার কারণেই কি? কিন্তু আসিয়াকে দেখতে পেলাম। সে বাকিদের দেখে হতভম্ব হয়ে বলল, ‘আলিয়া, তুই কত লাকি! এতগুলো দেবদূত তুই জীবিত থাকতে একসাথে দেখছিস।’
আলিয়াও আমাদের সাথে হাসল। আহ্! তার হাসি। কতকাল পরই যেন দেখছি। সে সবার সাথে আলিয়ার পরিচয় করিয়ে দিলো। সে জিজ্ঞেস করল, ‘সাবিলার সাথে তুই থাকতে পারছিস?’
‘হ্যাঁ।’
‘তোর রোগটা কী তা নিয়ে অনেক ভেবেছি। কিন্তু পাইনি।’
আবির বলল, ‘এককথায়, তার শরীরে একটি খারাপ আত্মা বাস করছে।’
‘হোয়াট? আলিয়া, এটা আগে জানাসনি কেন?’
‘তুই ছিলিই না।’
‘ওকে… এখন আমায় তোর অসুস্থতার লক্ষণগুলো ফার্স্ট টু লাস্ট বল।’ তার উদ্বিগ্নতা দেখে আমরা বাকিরাও উদ্বিগ্নতা বোধ করলাম।
আলিয়া তাকে প্রতিটি কিছু বলল। কীভাবে লোকটি তাকে ইঙ্গিত দেয়, কী কী সে এযাবৎ আলিয়াকে নির্দেশ দিয়ে এসেছে, সে দেখতে কেমন, আলিয়ার দুর্গন্ধটাই তার দুর্গন্ধ কিছুই বাদ না দিয়ে জানাল। আসিয়া আমাদের অবাক করে দিয়ে আলিয়ার সামনে গেল। আসিয়াকে প্রটেক্ট করার জন্য তাকে ঘিরে সাবরিনা, আদিল, আবির এবং সজীব দাঁড়াল, যাতে তাকে আলিয়া ধাক্কা না দেয়। আসিয়ার কথায় আলিয়া উঠে দাঁড়াল। আমি তার পাশে রক্ষকের ন্যায় সতর্ক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, যাতে সে নিজেকে আঘাত করে না বসে। সাবিলা তাকে প্রস্তুতি নিয়ে ধরে রইল। আলিয়া ছটফট করতে লাগল, যেন সে উত্তপ্ত। সে প্রকাশ না করলেও আমি বুঝছি। সে আসিয়ার কাছ থেকে একহাত দূরে দাঁড়াল।
সারা ঘর বরফ ঠান্ডা হয়ে গেল। সবাই কাঁপতে লাগল। এমনকি আমিও। কিন্তু কেউ তাদের পজিশন থেকে একবিন্দুও নড়লাম না। আসিয়াই এটা করছে। আলিয়া চিৎকার করে কেঁদে উঠে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল। সাবিলা ডুকরে কেঁদে উঠল। আলিয়া কাতরাতে কাতরাতে একসময় নিস্তেজ হয়ে পড়ল। তার শরীর থেকে আত্মাটিকে বের করতে আসিয়া সক্ষম হয়েছে। আলিয়া যখন প্রায় বেহুঁশ, তখন সকলের মাঝখানে দাঁড়ানো নগ্ন লোকটা ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে হিসহিস করতে লাগল। আমি চোখ সরালাম। একসময় বীভৎস লোকটির দুর্গন্ধ নাকে আর লাগল না। দেখলাম, আসিয়ার চোখ সম্পূর্ণই কালো। তাহলে সে পেরেছে ওই ছায়াটিকে দূর করতে।
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ