Monday, October 6, 2025







চাহনি

শ্যাওলা পড়া ভবনটির বেলকোণিতে প্রায় ছেলেটাকে দেখতে পেতাম।সেই পথে রোজ স্কুলে যাওয়া হতো।সেক্ষেত্রে প্রায় দেখা যেতো ছেলেটাকে।বেতের চেয়ারে বসে হাতে পত্রিকা কিংবা চায়ের কাপে ব্যস্ত থাকতো সে।

টিন এজের একটা মেয়ে।চারপাশে সবকিছুই রঙিন।ভালোলাগাটাই হয়তো এই বয়সীদের চিন্তাজগতে অতিদ্রুত ভালবাসায় রূপ নেয়। এই রংচটা বয়সটাতে ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা খুব কম সংখ্যক মানুষের মধ্যে রয়েছে।

আমরা মানুষরা খুব কম সময়ে অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ি।সেটা ভালো কিংবা খারাপ দুটোই হতে পারে।টিন এজের মেয়েটারও নিয়ম করে ছেলেটাকে দেখার অভ্যাসটা নেশায় পরিণত হয়ে যায়।

সেদিন স্কুলে যাওয়ার পথেই ছেলেটাকে চায়ের কাপ নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো মিতু।মেয়েটার নাম ছিল মিতু।আড়চোখে এক নজর দেখে সে তার গন্তব্যপথে চলতে লাগলো।

আজ মিতুর স্কুলে শেষ ক্লাস।শুধু মিতু নয়,তার সহপাঠীদেরও শেষ ক্লাস।আগামী মাসেই তাদের মাধ্যমিক পরীক্ষা।

প্রায় বছরখানেকেরও বেশি হলো মিতু রোজ নিয়ম করে ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে দেখে।ছেলেটাকে কিছু বলার সুযোগ পায় না সে।
সময়টা এভাবেই চলতে থাকে।

মিতুর মাধ্যমিক শেষ।কিন্তু ছেলেটাকে দেখার সমাপ্তিটা মিতু করতে পারে না।স্কুল লাইফ ঠিকই শেষ কিন্তু স্কুলের পথটাতে রোজ কোন না কোন বাহানাতে তার যাওয়া হতো।

আজও মিতু সেই শ্যাওলা পড়া ভবনটার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।কোথাও ছেলেটাকে দেখতে পারছে না।ছেলেটাকে দেখার জন্য সে অপেক্ষা করছে আর
ভাবছে, এই চাহনিটার একটা নাম দেওয়া দরকার। এইসব ভাবছে আর অপেক্ষা করছে।প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে গেলো।কিন্তু ছেলেটা বারান্দায় আসলো না।

মিতু মন খারাপ করে বাড়িতে ফেরত আসলো।আজ আর ছেলেটাকে দেখা হয় নি।

পরের দিন আবার গেলো সে।কিন্তু আজও কাউকে সে বারান্দায় দেখলো না।এভাবে প্রায় তিন মাস চলে গেলো।মিতু আর ছেলেটাকে দেখতে পেলো না।তার সময়টা গিয়েও যাচ্ছে না।যেন সব থমকে গেলো।বয়সটাই তো এমন।

মিতুর মাধ্যমিক ফলাফল খুব ভালো হলো।উচ্চ শিক্ষার জন্য তাকে ঢাকায় চাচার বাসায় উঠতে হলো।চাচার বাসা থেকে কলেজ খুব কাছে। সারাদিনের ভ্রমনের ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম নিচ্ছে সে।

পরেরদিন সকালে মিতু বাসার ছাদে উঠলো।ছাদের এক কোণে টেবিলের উপর একটা পত্রিকা আর একটা চায়ের কাপ দেখতে পেলো সে।কিন্তু আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না। মিতু এগিয়ে গেলো টেবিলের দিকে।মিতুর মনে পড়তে লাগলো ঐ ছেলেটার কথা।হঠাৎ কারো আসার শব্দ শুনতে পেয়ে চোখ মুছে নিলো সে।

–কে আপনি ?

পেছন থেকে কারও গলার আওয়াজ পেয়ে ঘুরে তাকালো মিতু।এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো সে।বেশ অবাক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে।হ্যাঁ, সেই অজানায় ঘেরা পরিচিত মুখটা।

–আমি মিতু।

–আপনি মিহির চাচার মেয়ে না ?
ছেলেটা চোখে লেপ্টে থাকা চশমাটা ঠিক করতে করতে মিতুকে প্রশ্ন করলো।

–জ্বি। আপনি আমাকে চিনেন ?
বেশ উদগ্রীব হয়ে প্রশ্ন করলো মিতু।

–হু চিনি ।

কথাটা বলে টেবিলের উপর রাখা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে একটু চা পান করে ছেলেটা পত্রিকা পড়তে লাগলো। তার কোনো আগ্রহ নেই মিতুর সাথে কথা বলার সেটা মিতু ঠিক বুঝতে পারলো।তারপরেও মিতু আগ বাড়িয়ে বলতে লাগলো,

–আপনি এভাবে হুট করে হারিয়ে গেলেন কেন? তাছাড়া ঢাকায় কেন আসছেন ?
মিতুর প্রশ্ন শুনে ছেলেটা ভীষণ বিরক্ত স্বরে বললো,

–ঢাকায় কেন আসছি মানে?আর হুট করে হারিয়েছি মানে ? এগুলো কেমন প্রশ্ন ?

–না এমনিতে।
মিতু আর কথা না বাড়িয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো।

কলেজে আজ মিতুর প্রথম ক্লাস।সব কিছুই নতুন। পরিচিত কেউ নেই বললেই চলে।ক্লাসের শেষ বেঞ্চের এক কোণে বসে আছে সে।সব অপরিচিত মুখ তার সামনে।

কিছুক্ষণ পর স্যার ক্লাসে আসতেই সবাই দাঁড়িয়ে গেল।মিতু এবারও থমকে গেলো।আবারও সেই পরিচিত চেহারাটা।তার মানে উনি এই কলেজের একজন টিচার। বসে বসে নানান ভাবনা ভাবতে লাগলো সে।

ক্লাস শেষে বাসায় আসলো সে।বাহ্ , নতুন করে পরিচিত মুখটা আবার দেখতে পেলাম।কিন্তু ব্যাপারটা কেমন হলো ? উনি আমার টিচার !

পরেরদিন আবার ছাদে গেলো মিতু।উদ্দেশ্য স্যারকে এক নজর দেখার।উঁকি মারতেই দেখলো স্যার চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ছে আর সাথে সেই চিরাচরিত চায়ের কাপ।

–উঁকি মারছেন কেন ?
পত্রিকার আড়াল থেকে একটা প্রশ্ন উড়ে আসলো মিতুর কানে।

–না স্যার,উঁকি মারবো কেন ?
এগিয়ে গিয়ে স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে মিতু বললো।

–কিছু বলবেন ?
পত্রিকা পড়ার মাঝে আবারও প্রশ্ন করলো সে।

–স্যার আপনার নাম কি ?
হাতের নখ কামড়াতে কামড়াতে মিতু বললো।

–আপনি আমার নাম জানার জন্য ছাদে আসলেন ? স্ট্রেঞ্জ !
হাতের পত্রিকাটা রেখে মিতুর দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো।

–আসলে তা নয় স্যার।আমি তো এমনিতে ছাদে আসলাম।
মিতু নার্ভাস হয়ে উত্তর দিলো।

–অনিক। আর কিছু জানার আছে ?

–না স্যার।
মিতু চলে যাবে ঠিক তখনি অনিক বললো,

–এই যে শুনুন।

–জ্বি স্যার।

–ক্লাসে লাস্টা বেঞ্চের কোণায় না বসে ফার্স্ট বেঞ্চের কোণায় বসবেন।ওকে ?

–জ্বি স্যার।

–হু, যান এখন।

মিতু হনহন করে চলে আসলো।কিন্তু নামটা সুন্দর।অনিক । অনিক স্যার বলবো নাকি শুধু স্যার বলবো এসব বিড়বিড় করতে করতে মিতু নিজের রুমের এপাশ থেকে ওপাশে হাঁটছে।

তারপর থেকে রোজ ক্লাসের প্রথম বেঞ্চে বসা,ছাদে নিয়ম করে গিয়ে অনিকের ধমক হজম করা, উঁকি দিয়ে অনিককে দেখা সব নিয়ম করে করতে লাগলো মিতু।

এভাবে প্রায় আড়াই বছর শেষ হয়ে গেলো।মিতুর উচ্চ মাধ্যমিকও শেষ। কাল মিতু গ্রামে মা বাবার কাছে যাবে।তাকে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হবে।তাই সে ব্যাগ গুঁছিয়ে নিচ্ছে। ঠিক সেই সময় মিতুর একটা ফোন আসলো।

–হ্যালো..
–মিতু বলছো ?
–জ্বি। আপনি কে ?
–অনিক।
–স্যার আপনি ! মিতু অবাক হয়ে বললো !
–হু। কাল কখন যাবে বাড়িতে ?
–সকালে।কিন্তু স্যার আপনি কিভাবে জানেন?
–কাল যাওয়ার আগে একটু ছাদে এসো।কথা আছে।
এই কথা বলেই ফোনটা রেখে দিলো অনিক।

সারারাত বেশ দুশ্চিন্তায় কেটেছে মিতুর।কিসের কথা বলবে অনিক স্যার! এটা নিয়ে সে খুব চিন্তিত।

পরদিন সকালে ছাদে যেতেই অনিক বললো,

–চেয়ারটা টেনে বসো।

–কিন্তু স্যার..

–কোনো কিন্তু নয়।যা বলছি তাই করো।

–জ্বি।

–বাড়িতে যাচ্ছো যাও।
কিন্তু খবরদার গ্রামের অন্য কোনো শ্যাওলা পড়া বাড়িতে কিংবা ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কোনো ছেলের উপর যেন নজর না পড়ে।ওকে ?

–স্যার…

–আর কিছু বলতে হবেনা মিতু।তবে হ্যাঁ তুমি কিন্তু এখনো খুব ছোট। তাই কিছুই বুঝতে পারো নি।
আগে নিজেকে বুঝতে শিখতে হবে। বুঝলে ? প্রতিটা মেয়ের নিজের একটা অবস্থান তৈরি করা খুব জরুরী। তাই আমি তখন তোমার ইচ্ছা, ভালোলাগা বা ভালোবাসাটাকে প্রশ্রয় দেই নি।তুমি জানো, আমিও রোজ তোমার যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকতাম।তোমাকে দেখা মাত্রই চোখ সরিয়ে নিতাম যাতে তুমি কিছুই বুঝতে না পারো।কারণ আমি চেয়েছি,আগে তুমি বড় হও,স্বাবলম্বী হও।লেখাপড়া করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠো।সুতরাং লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে।তোমার বাবাকে আমিই বলেছি,তোমাকে যেন এই কলেজে ভর্তি করানো হয়।তিনি আমার কথা শুনে তোমাকে এখানে ভর্তি করিয়েছেন।বুঝলে ?
বাড়িতে যাও, তবে হ্যাঁ যা বলেছি তা যেন মনে থাকে।

কথাগুলো বলেই অনিক ছাদ থেকে চলে গেলো।আর মিতু মৃদু হেসে তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো।ঠিক যেমন করে ৪বছর আগে তাকিয়ে থাকতো ঝুলবারান্দার দিকে।

#উম্মে_রোকসানা

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ